ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযান, গ্রেফতার ১১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:৫৫ এএম, ০৬ নভেম্বর, ২০২১


Thumbnail

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ১১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার (৫ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে 
আজ শনিবার (৬ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার এবং মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

শনিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এসব তথ্য জানান।

মো. ফারুক হোসেন বলেন, গ্রেফতার ১১৯ জনের কাছ থেকে ৯৬৭ গ্রাম ৮৭ পুরিয়া হেরোইন, সাত হাজার ৫৯৫ পিস ইয়াবা, ৪৬ কেজি ৫৩০ গ্রাম ৫০ পুরিয়া গাঁজা, ৫২৫ বোতল ফেনসিডিল ও এক বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৮৯টি মামলা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

পুত্রবধূকে নিয়ে শ্বশুরের কাটা মাথার সন্ধানে পুলিশ

প্রকাশ: ০৮:৫৩ পিএম, ০২ অক্টোবর, ২০২৩


Thumbnail

চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানার আকমল আলী রোড এলাকায় সম্পত্তির জন্য স্ত্রী-সন্তানের হাতে খণ্ডবিখণ্ড হওয়া হাসান আলীর মরদেহের সবকয়টি অংশ পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি মাথা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর মাথা ছাড়াই নিজ ঘরে দাফন করা হয় তাকে।

এদিকে, হাসানের সেই মাথার খোঁজে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার (১ অক্টোবর) হাসানের পুত্রবধূ আনারকলিকে নিয়ে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় তল্লাশি চালায় সংস্থাটি। 

এদিন আনারকলির দেখানো মতে সাগরপাড়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেলেনি সেই মাথার সন্ধান। ফলে সোমবার সকাল থেকে আবারও তল্লাশি অভিযানে নামে পিবিআই। তবে দুপুর পর্যন্ত হাসান আলীর মাথা খুঁজে পাননি পিবিআই কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বলেন, হাসান আলীর পুত্রবধূ আনারকলি এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত নন। তবে হত্যার আলামত গোপনে সহযোগিতা করেন তিনি। শনিবার কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে আনারকলিকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ডে আনা হয়। প্রথমে তাকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়। এরপর রোববার থেকে হাসান আলীর মাথার অংশ উদ্ধারে অভিযান শুরু করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেটি পাওয়া যায়নি।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, হাসান আলীর ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের বাসায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। এরপর মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড করে পুত্রবধূ আনারকলির লাগেজে ভরে ফেলে দেওয়া হয়। আরেকটি থলেতে করে কাটা মাথা ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া শরীরের কিছু অংশ আকমল আলী রোডের একটি খালে ফেলে দেওয়া হয়। হাসান আলী বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামের সাহাব মিয়ার ছেলে। গত ২১ সেপ্টেম্বর নগরের পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় সড়কের পাশে পড়ে থাকা একটি লাগেজ থেকে হাসান আলীর শরীরের আটটি খণ্ড উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি খণ্ড ছিল টেপ দিয়ে মোড়ানো। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করে পুলিশ। এরপর ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করে পিবিআই।

পরে ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে আকমল আলী রোড এলাকায় একটি বস্তা থেকে শরীরের আরও কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্তের পর সেদিনই হাসান আলীর স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তারা। এরপর দুইজনকে ঐ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করলে সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা।

জবানবন্দিতে তারা জানান- দীর্ঘ ২৭ বছর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না হাসান আলীর। এ সময় তিনি কোথায় ছিলেন তাও জানতেন না পরিবারের সদস্যরা। বছরখানেক আগে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন হাসান আলী। গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীতে তার নামে কিছু পৈতৃক সম্পত্তি ছিল। যেগুলো নিজেদের নামে লিখে নিতে হাসান আলীকে চাপ দিতে থাকেন তার স্ত্রী-সন্তানরা। কিন্তু এ বিষয়ে রাজি ছিলেন না হাসান আলী। এ নিয়ে বিরোধের জেরে মঙ্গলবার রাতে আকমল আলী রোডের পকেট গেট এলাকায় ছোট ছেলের বাসায় ডেকে নিয়ে হাসান আলীকে হত্যা করেন স্ত্রী-সন্তানরা। এরপর মরদেহ টুকরো টুকরো করে লাগেজ ও বস্তায় ভরে ফেলে দেন।

পিবিআই জানায়, ঘটনার দিন রাতে চিকিৎসার নামে আকমল আলী সড়কের পকেট গেট এলাকায় ছোট ছেলের বাসায় যান হাসান আলীর স্ত্রী। সেদিন বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানও সেই বাসায় যান। পরবর্তীতে হাসান আলীকেও ডেকে নেন তারা। রাতে তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে স্ত্রী, দুই ছেলে ও ছোট ছেলের স্ত্রী মিলে পরিকল্পিতভাবে হাসান আলীকে হত্যা করেন। হত্যার পর ঠাণ্ডা মাথায় লাশ টুকরো টুকরো করেন তারা। এরপর লাগেজে ভরে আটটি টুকরো ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় খালে নিয়ে ফেলে দেন। মাথা-বুকসহ শরীরের আরো কিছু অংশ বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেন। এ কাজটি করেন ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

প্যারাডাইস-পানামা পেপারসে নাম আসাদের নিয়ে অনুসন্ধানে সিআইডি

প্রকাশ: ১১:২০ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে প্যারাডাইস ও পানামা পেপারসে নাম আসা বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টকে এ কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

তিনি বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের সংক্রান্ত নথি সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে ছয়টি যৌথ অুনসন্ধান টিম এই কাজ করছে।

এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ৬৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে দাখিল করা হয়। এর মধ্যে পানামা পেপারসে ৪৩ ও প্যারাডাইস পেপারসে ২৬ জনের নাম রয়েছে।

এর আগে গত বছর ৪৩ ব্যক্তি–ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে ওই তালিকার ওপর শুনানি করে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে গত ৬ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

পানামা পেপারসে ৪৩ জন

পানামা পেপারসে নাম আসাদের মধ্যে কাজী জাফরুল্লাহ পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও রয়েছেন–ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্সের ক্যাপ্টেন সোহাইল হোসাইন, স্পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইফতেখারুল ইসলাম, বাংলা ট্র্যাক লি. এর আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক ও তারিক ইকরামুল হক, বিএপিআই–এর সাবেক সভাপতি ড. এ এম এম খান, মমিন টি এর পরিচালক আজমত মঈন, সি পার্লের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সিরাজুল হক, ইউনাইটেডে গ্রুপের হাসান মাহমুদ রেজা, খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম, আহমেদ ইসমাইল হোসেন, আখতার মাহমুদ ও এফএফ জোবায়দুল হক, সিক্স সিজনসের দিলীপ কুমার মোদী, অনন্ত গ্রুপের শরীফ জহির, মার্কেন্টাইল করপোরেশনের আজীজ খান, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আজীজ খান, মেয়ে আয়েশা আজীজ খন, ভাই জাফের উমায়েদ খান ও ভাগনে ফয়সাল করিম খান, সেতু করপোরেশনের মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী উম্মে রাব্বানা, ক্যাপ্টেন এম এ জাইল, এফএম জোবায়দুল হক, সালমা হক, খাজা শাহাদাৎ উল্লাহ, মীর্জা এম ইয়াহিয়া, সৈয়দা সামিনা মীর্জা, আমিনুল হক, তারেক একরামুল হক, জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ শহীদ, মোহাম্মদ ফয়সল করিম খান, নজরুল ইমলাম, সৈয়দ সিরাজুল হক, জুলফিকার হায়দার এবং বিবিটিএল। 

প্যারাডাইস পেপারস

প্যারাডাইস পেপারসে মিন্টু পরিবারের ৫ সদস্য ছাড়াও রয়েছে–মেঘনাঘাট পাওয়ার লি. এর ফয়সাল চৌধুরী, ওয়াই ফরিদা মোগল, শহীদ উল্লাহ, সামির আহমেদ, সেভেন সিজ অ্যসেটস লি. , সোয়েন ইনভেস্টমেন্টস লি. , ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স লি. , ইউনোকল বাংলাদেশ লি. , ইউনোকল বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন লি. , ইউনোকল শাহবাজপুর পাওয়ার লি. , ইউনোকল শাহবাজপুর পাইপলাইন লি. , ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক সেভেন লি. , ইউনোকল শাহবাজপুর লি. , ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক ফাইভ লি. , ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টেন লি. , এনএফএম এনার্জি পিটিই লি. , বারলিংটন রিসোর্সেস বাংলাদেশ লি. , ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লকস থারটিন অ্যান্ড ফরটিন লি. , ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টুয়েলভ লি. , ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ (বারমুডা) লি. এবং টেরা বাংলাদেশ ফান্ড লি.।


প্যারাডাইস পেপারস   পানামা পেপারস   অনুসন্ধান   সিআইডি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া সেই ওসি প্রত্যাহার

প্রকাশ: ০৩:৪৮ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া সেই ওসি প্রত্যাহার।

মাদক ব্যবসা করতে দেওয়ার জন্য সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া রাজশাহী চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে এক আদেশে চারঘাট থানা থেকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এক গৃহবধূর কাছ থেকে সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ফাঁস হয়। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অভিযোগসহ পেনড্রাইভে করে সেই অডিও রেকর্ড পুলিশ সুপারে কাছে দাখিল করা হয়। পরে ওসি মাহবুবুল আলমকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

তিনি জানান, এই ঘটনায় তদন্ত জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: ৫ লাখ টাকা দিলেই চলবে মাদক ব্যবসা, ওসির কথোপকথনের অডিও ফাঁস! 

এর আগে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসির বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছয় মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের ওই অডিও রেকর্ড সরাসরি ও ডাকযোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছেও পাঠানো হয়েছে। ওই নারীর নাম সাহারা খাতুন (২৮)। তিনি চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের চামটা গ্রামের আবদুল আলিম ওরফে কালুর স্ত্রী। কালু ডিবি পুলিশের একটি মামলায় ছয় মাস ধরে কারাগারে আটক আছেন।

সাহারা খাতুনের অভিযোগ, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র‍্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। চারঘাট উপজেলায় তার স্বামীর দেওয়া তথ্যে অনেক মাদক কারবারিকে র‍্যাব ও পুলিশ আটক করেছে। এতে তার স্বামী ও পরিবারের ওপরে চারঘাটের মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন। তার স্বামীকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন।  

১২ সেপ্টেম্বর ওসিকে ফোন দিয়ে তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ওসি তাকে পরদিন থানায় আসতে বলেন। থানায় গেলে ওসি পাশেই তার কোয়ার্টারে ডেকে নেন তাকে। এ সময় ওসি তার সঙ্গে ওইসব কথা বলেন। তিনি তা কৌশলে রেকর্ড করে রাখেন।

ছয় মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে ওই নারীর উদ্দেশে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’

আরও পড়ুন: নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে এখানে এনেছেন: চারঘাটের ওসি

চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেবো।’

এরপর গৃহবধূ সাহারাকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছেন (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’

এরপর ওসি বলেন, ‘এখনও তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। সাত লাখ টাকা লাগবে, কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’

ওসি আরও বলেন, ‘মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবেন না। তোমরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেবো। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করবো। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’ 

রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’

ওসি মাহবুবুল আরও বলেন, ‘ পাঁচ লাখ আর দুই লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেবো। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে। ’ 

অডিওতে গৃহবধূ সাহারার ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় চারঘাট থানার সদ্য সাবেক ওসিকে।


চারঘাট   ওসি   ঘুষ   অডিও   ফাঁস   প্রত্যাহার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে এখানে এনেছেন: চারঘাটের ওসি

প্রকাশ: ০৩:২১ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে আসামির স্ত্রীর কাছে রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের সাত লাখ টাকা ঘুস দাবির অডিও ফাঁস হয়েছে। অডিওতে অর্থ দাবির পাশাপাশি তাকে মাদক ব্যবসা করার পরামর্শও দেন তিনি।

সেখানে তিনি বলেছেন, নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) আমাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাট থানায় নিয়ে এসেছেন। শুধু তাই নয়, ৫ লাখ টাকায় মাদক ব্যবসার অনুমতি এবং দুই লাখ টাকা দিলে জেলা ডিবির দুই কর্মকর্তাকে বদলির ব্যবস্থা করবেন বলেও শোনা গেছে তাকে।

ওসির অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনায় রাজশাহী জেলা পুলিশে তোলপাড় চলছে। যে নারীর সঙ্গে ওসি বসে এসব খোশ আলাপ জমিয়েছিলেন, সেই নারী শনিবার দুপুরে ওসি মাহবুব, ডিবির পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত একটি অভিযোগও দিয়েছেন। 

অভিযোগে ওই নারী দাবি করেছেন, ডিবি পুলিশ তার স্বামীকে সাজানো মাদক মামলা জড়িয়ে গ্রেপ্তার করেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওসি মাহবুব মাদক কারবারির স্ত্রীর সঙ্গে যেসব আলাপ করেন তা গোপন রেকর্ডিং যন্ত্রে রেকর্ড করা হয় বলে জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা। মোট ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের অডিওতে ওসির কথোপকথনে উঠে এসেছে পুলিশের ভেতরের চাঞ্চল্যকর অনেক অজানা কাহিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসি থানা কম্পাউন্ডে তার শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামে ওই নারীর কাছে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। শনিবার সকালে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করার পর অভিযোগকারী সাহারা বেগম ভয়ে আত্মগোপনে আছেন।

জানা গেছে, গৃহবধূ সাহারা বেগম রাজশাহীর চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কালু কিছু দিন ধরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। 

সাহারা বেগমের অভিযোগ, স্থানীয় প্রতিপক্ষের দ্বারা ম্যানেজ হয়ে জেলা ডিবির পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারের টিম তার স্বামীকে মাদক উদ্ধারের সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করেন কিছু দিন আগে। এই মামলার তদন্তের বিষয়ে সহায়তা চাইতে সাহারা বেগম ও তার ছেলে রাব্বী ওই দিন চারঘাট থানার ওসির কাছে যান। 

এসপিকে দেওয়া অভিযোগে সাহারা বেগম বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে চারঘাটের শলুয়া ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য পদে ভোট করেছিলেন। এই নির্বাচন কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি পক্ষের সঙ্গে সাহারার স্বামী কালুর বিরোধ হয়। ওই প্রতিপক্ষ ডিবি পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারকে ম্যানেজ করে তার স্বামীকে মাদকের সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করান। নারীর দাবি, তার স্বামীকে ডিবি পুলিশ ফাঁসিয়েছে। 

এদিকে ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) আমাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাট থানায় নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া আর কারও কথা শুনি না। 

চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একজন পরিদর্শকের সমালোচনা করেন ওসি। তিনি বলেন, আমাকে দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির আতিককে বদলি করে দেব।

এর পর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে জেলে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন কালু)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়তে পারব না।

এর পর ওসি বলেন, এখনো তোমার গায়ে আমি আঁচড় দিইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া টাকার আর কোনো উৎস নেই।

ওসি আরও বলেন, ‘মুক্তার বিরুদ্ধে (চারঘাটের মাদকসম্রাট ও নারীর প্রতিপক্ষ) এখন অ্যাকশন নিতে পারব না, শুভর বিরুদ্ধেও (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারব না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব আমি। তোমরা এলাকার বাইরে থেকে মাদক ব্যবসা করবে। কোনো সমস্যা নেই।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার আতিকের সমালোচনা করে ওসি মাহবুবকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। সব কথা  ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও আরও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।

ওসি মাহবুবকে আরও বলতে শোনা যায়, ৫ লাখ আর ২ লাখ মিলে মোট ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর মন্ত্রীকে বলে ওই দুজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।

অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করেন। চারঘাট এলাকায় তার সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক উদ্ধার করেছে র্যাব-পুলিশ। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি সদস্যপদে ভোট করেন। এর পর থেকে এলাকার মুক্তা, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা। ডিবিকে তারা ম্যানেজ করে। 

সাহারা আরও বলেন, চারঘাটের চামটা গ্রামের মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একইসঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানায় গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাহবুবুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আমার কাছেও অডিওটা এসেছে। কিন্তু কীভাবে হয়েছে আমি জানি না। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। 

এদিকে ভুক্তভোগীরা আরও জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চারঘাট, বাঘাসহ কয়েকটি মাদকপ্রবণ এলাকায় জেলা ডিবির মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ডিবি পুলিশ বড় মাদক কারবারিদের টাকা নিয়ে একদিকে যেমন মুক্ত পরিবেশে মাদক ব্যবসা করাচ্ছেন, তেমনি কারও কাছে টাকা না পেলেই ফিটিং মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করছেন। কোনো কোনো মাদক ব্যবসায়ীর কাছে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। 

চারঘাটের ওসি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

৫ লাখ টাকা দিলেই চলবে মাদক ব্যবসা, ওসির কথোপকথনের অডিও ফাঁস!

প্রকাশ: ০৮:৪৬ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলম।

পাঁচ লাখ টাকা দিলেই মাদক ব্যবসা করতে দেবেন রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলম। শুধু তাই নয়, আরও ২ লাখ টাকা দিলে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসিকে বদলির ব্যবস্থা করবেন তিনি। এক ‘মাদক ব্যবসায়ীর’ স্ত্রীর সঙ্গে আলাপের এমন অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। 

এ ঘটনায় শনিবার রাজশাহীর এসপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। অভিযোগের অনুলিপির সঙ্গে ৬ মিনিটি ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও পেনড্রাইভে সরবরাহ করেছেন। 

এ বিষয়ে জানতে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত অভিযোগ ও অডিও রেকর্ড পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এসপি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবেন। গুরুতর কিছু হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসি তার কোয়ার্টারের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামে ওই নারীর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাড়ি ছাড়া ওই গৃহবধূ। 

গৃহবধূ সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কালু বেশ কিছুদিন ধরে কারাগারে। জেলা ডিবি পুলিশের ওসি তাকে গ্রেফতার করেছিলেন। কালু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সাহারা বেগম।

লিখিত অভিযোগে সাহারা বলেছেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গেলে গৃহবধূ সাহারা বেগম ও তার ছেলে রাব্বিকে নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেন ওসি মাহবুবুল আলম। প্রথমে ওসি তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। এরপর কথা বলতে শুরু করেন। 

ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ 

চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’

এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’

এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’

ওসি আরও বলেন, ‘মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’ 

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’

চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আরও বলেন, ‘৫ লাখ আর ২ লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।’ 

অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহারা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করেন। চারঘাট এলাকায় তার সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক র‌্যাব-পুলিশ জব্দ করেছে। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তিনি সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এরপর থেকে এলাকার মুক্তা, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাঁধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা।’

সাহারা আরও বলেন, ‘চারঘাটের চামটা গ্রামের মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একইসঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানায় গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুস দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাহবুবুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার কাছেও অডিওটা এসেছে। কিন্তু কীভাবে হয়েছে আমি জানি না। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারব না।’ 

এ বিষয়ে রাজশাহীর এসপি সাইফুর রহমান বলেন, ‘অডিওটা আমি পেয়েছি। এখনই বিষয়টি নিয়ে কথা বলব না। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। গুরুতর কিছু পাওয়া গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


রাজশাহী   চারঘাট থানা   ওসি   মাহবুবুল আলম  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন