নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২৯ এএম, ২৩ নভেম্বর, ২০২১
গত ৬ বছরে বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এ লেনদেন হয়েছে কি না, এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দারা।
একজন শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে এত টাকা কোথা থেকে এলোা? সেই অর্থের সন্ধান করতে গিয়ে গোয়েন্দারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে এই শিক্ষকের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। এমনকি গ্রেফতারকৃত একজনের স্বীকারোক্তিতেও এসেছে নিখিল রঞ্জন ধরের শিক্ষকের নাম।
ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার এক আসামির জবানবন্দিতে বুয়েট শিক্ষকের নাম এসেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের টাকা তার ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে কি না, সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেব। তবে ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে যে, অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এ লেনদেন হয়েছে কি না, তদন্তে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।
বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় নাম আসায় গতকাল সোমবার (২২ নভেম্বর) তাকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও করেছে বুয়েট।
প্রসঙ্গত, ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের ১ হাজার ৫১১টি ‘অফিসার ক্যাশ’ পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে এক ঘণ্টার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০০টি প্রশ্নের প্রিন্ট করা উত্তরপত্র ফেসবুকে পাওয়া গেছে। ওই পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে ছিল আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর পরীক্ষাটি বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি। এ ঘটনায় আহ্ছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মচারীসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের নাম এসেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে নিখিল রঞ্জন ধর বলেন, আমি ১৯৮৬ সাল থেকে বুয়েটের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অর্থ আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। সেখানে ১০ কোটি টাকা জমেছে। এটা আমার উপার্জনের টাকা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত নই। বলা হচ্ছে, আমি ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে আসতাম। ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এক কর্মচারীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, আহ্ছানিয়া মিশন ছাপাখানায় সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়। প্রশ্নপত্র ছাপার দিন (২ নভেম্বর ২০২১) সকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর ওই ছাপাখানায় ছিলেন। আসার সময় প্রশ্নের দুটি কপি তিনি সঙ্গে নিয়ে বের হন।
মন্তব্য করুন
মাদক ব্যবসা করতে দেওয়ার জন্য সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া রাজশাহী চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে এক আদেশে চারঘাট থানা থেকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এক গৃহবধূর কাছ থেকে সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ফাঁস হয়। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অভিযোগসহ পেনড্রাইভে করে সেই অডিও রেকর্ড পুলিশ সুপারে কাছে দাখিল করা হয়। পরে ওসি মাহবুবুল আলমকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এই ঘটনায় তদন্ত জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ৫ লাখ টাকা দিলেই চলবে মাদক ব্যবসা, ওসির কথোপকথনের অডিও ফাঁস!
এর আগে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসির বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছয় মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের ওই অডিও রেকর্ড সরাসরি ও ডাকযোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছেও পাঠানো হয়েছে। ওই নারীর নাম সাহারা খাতুন (২৮)। তিনি চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের চামটা গ্রামের আবদুল আলিম ওরফে কালুর স্ত্রী। কালু ডিবি পুলিশের একটি মামলায় ছয় মাস ধরে কারাগারে আটক আছেন।
সাহারা খাতুনের অভিযোগ, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। চারঘাট উপজেলায় তার স্বামীর দেওয়া তথ্যে অনেক মাদক কারবারিকে র্যাব ও পুলিশ আটক করেছে। এতে তার স্বামী ও পরিবারের ওপরে চারঘাটের মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন। তার স্বামীকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন।
১২ সেপ্টেম্বর ওসিকে ফোন দিয়ে তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ওসি তাকে পরদিন থানায় আসতে বলেন। থানায় গেলে ওসি পাশেই তার কোয়ার্টারে ডেকে নেন তাকে। এ সময় ওসি তার সঙ্গে ওইসব কথা বলেন। তিনি তা কৌশলে রেকর্ড করে রাখেন।
ছয় মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে ওই নারীর উদ্দেশে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’
আরও পড়ুন: নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে এখানে এনেছেন: চারঘাটের ওসি
চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেবো।’
এরপর গৃহবধূ সাহারাকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছেন (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’
এরপর ওসি বলেন, ‘এখনও তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। সাত লাখ টাকা লাগবে, কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’
ওসি আরও বলেন, ‘মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবেন না। তোমরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেবো। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করবো। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’
রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’
ওসি মাহবুবুল আরও বলেন, ‘ পাঁচ লাখ আর দুই লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেবো। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে। ’
অডিওতে গৃহবধূ সাহারার ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় চারঘাট থানার সদ্য সাবেক ওসিকে।
চারঘাট ওসি ঘুষ অডিও ফাঁস প্রত্যাহার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পাঁচ লাখ টাকা দিলেই মাদক ব্যবসা করতে দেবেন রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলম। শুধু তাই নয়, আরও ২ লাখ টাকা দিলে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসিকে বদলির ব্যবস্থা করবেন তিনি। এক ‘মাদক ব্যবসায়ীর’ স্ত্রীর সঙ্গে আলাপের এমন অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
এ ঘটনায় শনিবার রাজশাহীর এসপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। অভিযোগের অনুলিপির সঙ্গে ৬ মিনিটি ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও পেনড্রাইভে সরবরাহ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত অভিযোগ ও অডিও রেকর্ড পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এসপি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবেন। গুরুতর কিছু হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসি তার কোয়ার্টারের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামে ওই নারীর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাড়ি ছাড়া ওই গৃহবধূ।
গৃহবধূ সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কালু বেশ কিছুদিন ধরে কারাগারে। জেলা ডিবি পুলিশের ওসি তাকে গ্রেফতার করেছিলেন। কালু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সাহারা বেগম।
লিখিত অভিযোগে সাহারা বলেছেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গেলে গৃহবধূ সাহারা বেগম ও তার ছেলে রাব্বিকে নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেন ওসি মাহবুবুল আলম। প্রথমে ওসি তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। এরপর কথা বলতে শুরু করেন।
ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’
চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’
এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’
এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’
ওসি আরও বলেন, ‘মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’
চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আরও বলেন, ‘৫ লাখ আর ২ লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।’
অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহারা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করেন। চারঘাট এলাকায় তার সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক র্যাব-পুলিশ জব্দ করেছে। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তিনি সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এরপর থেকে এলাকার মুক্তা, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাঁধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা।’
সাহারা আরও বলেন, ‘চারঘাটের চামটা গ্রামের মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একইসঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানায় গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুস দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাহবুবুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার কাছেও অডিওটা এসেছে। কিন্তু কীভাবে হয়েছে আমি জানি না। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারব না।’
এ বিষয়ে রাজশাহীর এসপি সাইফুর রহমান বলেন, ‘অডিওটা আমি পেয়েছি। এখনই বিষয়টি নিয়ে কথা বলব না। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। গুরুতর কিছু পাওয়া গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহী চারঘাট থানা ওসি মাহবুবুল আলম
মন্তব্য করুন
ছাত্রলীগের তিন নেতাকে শাহবাগ থানায় মারধরের ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ ও সানজিদা আফরিনের বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি। বক্তব্য নেওয়া হয়েছে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতাদেরও। এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের সঙ্গেও কথা বলবে তদন্ত কমিটি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক, নিরাপত্তাকর্মী ও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বক্তব্যগুলো যাচাই-বাছাই করে এই ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল, সেটা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পর শাহবাগ থানার ওসির কক্ষে আটকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধর করে পুলিশ। এডিসি হারুনের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েক পুলিশ সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করেন। তবে ঠিক কতজন পুলিশ মারধরে অংশ নিয়েছিলেন, সেটা নিশ্চিত হতে পারেনি কমিটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা আজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবাবের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’
রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হকের সঙ্গে ডিএমপির রমনা বিভাগের এডিসি (ঘটনার পরে বরখাস্ত) হারুন অর রশিদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে থানায় নিয়ে মারধর করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শাহবাগ থানায় ওসির কক্ষে এই মারধরে নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন। তবে ঘটনার সূত্রপাত হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে মারধর ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে আজিজুল হকের স্ত্রী ডিএমপির এডিসি সানজিদা আফরিন বলেন, তিনি চিকিৎসা নিতে ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে তিনি সহকর্মী হিসেবে এডিসি হারুন অর রশিদের সহায়তা নেন। এ সময় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসে এডিসি হারুনকে মারধর করেন তাঁর স্বামী আজিজুল।
এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর এক দিন পর শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফাকেও বদলি করা হয়। এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর ডিএমপি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এডিসি হারুন সানজিদা ছাত্রলীগ নেতা বক্তব্য তদন্ত কমিটি
মন্তব্য করুন
শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন নিপা। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত এবং ৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা। তিনি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী।
সানজিদা আফরিনের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের নাগদা শিমলা ইউনিয়নে। এম হোসেন আলীর মেয়ে সানজিদা ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তার বড় বোন পেশায় একজন ডাক্তার। ২০১৬ সালের ৫ মে থেকে ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে ছিলেন সানজিদা। এর পর ২০২১ সালের ৬ মে থেকে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত গাজীপুর সদর সার্কেলে এএসপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন সানজিদা। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি ডিএমপিতে যোগদান করেন।
উল্লেখ্য, শাহবাগ থানায় নিয়ে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন এডিসি সানজিদা আফরিন। এ ঘটনায় তাকে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিসি) বদলি করা হতে পারে। আজ (বুধবার) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনের দায় খুঁজছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে— রাষ্ট্রপতির এপিএস ও ছাত্রলীগ নেতারাই প্রথমে এডিসি হারুনকে মারধর করেছিলেন। এপিএস মামুনের দায় বের করতে যেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়, সেই বারডেম হাসপাতালে কী ঘটেছিল, সেটি তদন্ত করে বের করা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদ।
তিনি বলেন, এপিএস মামুন এবং ছাত্রলীগ নেতারাই বারডেম হাসপাতালে আগে এডিসি হারুনকে মারধর করেছেন। একই ধরনের তথ্য তুলে ধরে এডিসি হারুনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এপিএসের স্ত্রী পুলিশের এডিসি সানজিদা আফরিনও।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত সেই নারী এডিসি সানজিদার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। সর্বশেষ হারুনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কে জড়ান বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি বেশ কয়েক মাস ধরে তার স্বামী ও রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল গোপনে নজরদারি করছিলেন। সব বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত হচ্ছে।
ছাত্রলীগ এডিসি সানজিদা এডিসি হারুণ পুলিশ
মন্তব্য করুন
শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন নিপা। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত এবং ৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা। তিনি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী।