মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গতকাল বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে সে দেশের ইমিগ্রেশনের আইনের ২১২ ধারা প্রয়োগের কথা বলেছেন। ২১২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো রাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি যেই হোন না কেন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করেন তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই ব্যক্তিকে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে এবং তাকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে ২১২ ধারা প্রয়োগ করেছে। এটি শুধুমাত্র যে সরকারের জন্য প্রযোজ্য হবে তা নয়, যে কোনো ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, এমনকি বিরোধী দলের জন্যও এই নীতি প্রযোজ্য হবে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি মনে করে কোনো ব্যক্তি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন, বাধাগ্রস্ত করেছেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে এবং তার পরিবারকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাবে। এমনকি যাদের ভিসা রয়েছে তাদেরকেও এবং তাদের পরিবারের জন্য ভিসা বাতিলের ক্ষমতা আইনে রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে এ ধরনের একটি নতুন ভিসানীতি কেন ঘোষণা করল এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে যে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে হয়তো এটি করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কূটনীতিকদের সাথে আলোচনা করে দেখা যায় যে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আনতে রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে এই নতুন ভিসানীতি করা হয়েছে। বিএনপি বলছে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে এটাও বলা হচ্ছে যে তারা মনে করে না যে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরকম পরিস্থিতিতে দলীয় সরকারের অধীনে কিভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়- এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরে কাজ করছে, অংশীজনের সাথে আলাপ-আলোচনা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে যে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে সবচেয়ে বড় বাধা হলো প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা ক্ষমতাসীন দলকে সন্তুষ্ট করার জন্য নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে। ক্ষমতাসীন দলকে বিজয়ী করার জন্য নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া করে। যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত মানবাধিকার রিপোর্ট-২০১৮, নির্বাচন সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন প্রভাবমুক্তভাবে হয়- সেটি নিশ্চিত করার জন্যই এটি করা হয়েছে।
বিএনপি যেহেতু চাচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেটি দলীয় সরকারের অধীনেও করা সম্ভব যদি না প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। আর তাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করার জন্য নতুন ভিসা নীতি করা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। এর ফলে প্রশাসনের অতি উৎসাহীরা দমে যাবেন এবং তারা নির্বাচনে পক্ষপাত করা থেকে বিরত থাকবেন। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটা পথ তৈরি হবে।
এরকম একটি পরিস্থিতিতে বিএনপির জন্য নির্বাচন বর্জন করা কঠিন হবে। কারণ আগামী নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা যা দরকার তা তা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ভিসানীতি তার একটি উদাহরণ মাত্র। এই বাস্তবতায় এটি স্পষ্ট হচ্ছে যে পর্দার আড়ালে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য নানামুখী চাপ প্রয়োগ করছে। তার একটি অংশ হিসেবে এই নতুন ভিসানীতি তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে বিএনপির নির্বাচনে আসার পথ সুগম হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
বিএনপি নির্বাচন মার্কিন ভিসানীতি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
সাইবার যুদ্ধ আওয়ামী লীগ কোটা আন্দোলন তথ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গ্রেপ্তার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলামগীর
মন্তব্য করুন
কোটা আন্দোলন গ্রেপ্তার তারেক জিয়া নাশকতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি
মন্তব্য করুন
কোটা আন্দোলন আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
এখন ষড়যন্ত্র এবং আন্দোলনের দু’টি অংশ হচ্ছে। একটি দৃশ্যমান অংশ যেটি মাঠে হচ্ছে। সরকার পতনের লক্ষ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ওপর ভর করে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, পেশাদার সন্ত্রাসীরা এক জোট হয়ে দেশে নাশকতা সৃষ্টি করেছে। একটি ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টির চেষ্টা করে সরকারকে হটানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলো। অন্যটি সাইবার জগতে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বিএনপির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান চলছে। নির্বাচনের আগে ২৮ অক্টোবর বিএনপির তাণ্ডবের পর যেভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করেছিল সরকার ঠিক একইভাবে এবারও ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে যে সন্ত্রাস, সহিংসতা হচ্ছে তার হোতাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এই সময় নাশকতায় ছাত্রশিবির এবং জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদল এবং বিএনপি নেতারা সরকার পতনের একটা নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন। সেই চেষ্টা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা আন্দোলনকে সহিংস এবং নাশকতার পথে নিয়ে যান। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো যেমন বিটিভি, সেতু ভবন ইত্যাদি হামলার পিছনে বিএনপির সরাসরি সম্পৃক্ততার খবর পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এই কারণেই যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
টানা তিন বারের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। দলে তার কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতির পরপরই। সারাদিনই দলীয় কার্যালয়ে কিছু না কিছু বলেন। সংবাদ সম্মেলন করে নানা বিষয়ে বক্তব্য রাখাকে তিনি রীতিমতো একটি রেওয়াজে পরিণত করেছেন। কিন্তু সেই ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগে এখন নানা রকম অস্বস্তি এবং প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে।