উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয়
ধাপেও কেন্দ্রের নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী
বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এ ধাপেও প্রার্থিতা বহাল
রেখে ভোটের মাঠে রয়েছেন মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা। কেন্দ্র থেকে দেওয়া কঠোর হুঁশিয়ারি
তাদের ভোটের মাঠ থেকে সরাতে পারেনি। অন্যদিকে হাইকমান্ডের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্বাচনে
লড়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন বিএনপির অন্তত দুই ডজন নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের প্রার্থীদের
বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্তও তাদের পিছু হটাতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দ্বিতীয়
ধাপের ১৬০টি উপজেলা ভোটে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের অন্তত ৩০ জন আত্মীয়-স্বজন মনোনয়ন
জমা দেন। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে মাত্র কয়েকজন তাদের
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচনী মাঠে বহাল রয়েছেন অন্যরা। অন্যদিকে, এ ধাপে
বিএনপির অন্তত ৩০ জন স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে
কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে গতকাল তাদের কয়েকজন ভোটের মাঠ থেকে সরে যান। বাকিরা প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।
সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা
ভোটে মোট দুই হাজার ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে
৭৩০, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৬৩ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৬২ জন মনোনয়ন দাখিল করেন।
যাচাই-বাছাই শেষে ১ হাজার ৯১৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান
পদে ৬৭৭, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭০১ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩৮ জন রয়েছেন।
এর মধ্যে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন
জমা দেওয়ায় ইতোমধ্যে তিনজন চেয়ারম্যান, তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও পাঁচজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। গতকাল নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে পড়েন অনেকে। বাকি
প্রার্থীদের মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর পরই আনুষ্ঠানিক
প্রচারে নেমে পড়বেন প্রার্থীরা। আগামী ২১ মে এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে। আগামী ৮ মে
প্রথম ধাপের ভোটের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচন শুরু হচ্ছে। ২৯ মে তৃতীয়
এবং ৫ জুন সর্বশেষ চতুর্থ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
প্রত্যাহার করেননি মন্ত্রী-এমপিদের
স্বজনরা
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান
পদে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক। নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন মনোনয়ন প্রত্যাহার না করে মাঠে রয়েছেন। মনোননয়নপত্র
প্রত্যাহার না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করব বলেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি
এবং জমা দিয়েছি। মন্ত্রীর ভাই হিসেবে নয়, নিজের পরিচয়ে রাজনীতি করি। আমি ছাত্রলীগ,
যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। মন্ত্রীর ভাই হয়েছি বলে নির্বাচন করতে পারব না।
নির্বাচন করা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। তা ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্ত আমি পাইনি। একেক সময়
একেক সিদ্ধান্তের কথা বলে। আমি দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত লিখিতভাবেও পাইনি। আমি সুষ্ঠু নির্বাচন
চাই’।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান
পদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী)
আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ ও ভাই মাহবুবুজ্জামান
আহমেদ। এর মধ্যে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান এবং রাকিবুজ্জামান
আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বগুড়ায় আদমদীঘি চেয়ারম্যান প্রার্থী
হিসেবে বহাল রয়েছেন সিরাজুল আলম খান রাজু। তিনি বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের
সংসদ সদস্য খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদীর বাবা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি ভোলার বোরহানউদ্দিন
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুলের আপন বড় ভগ্নিপতি,
বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপির ভায়রা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অবুল
কালাম আজাদ।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় পাবনা-৩ আসনের
সংসদ সদস্য মো. মকবুল হোসেনের বড় ছেলে ও সাবেক মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল মনোনয়ন প্রত্যাহার
করেননি। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে ভোটের মাঠে থাকছেন
সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপির ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ ও তার ভাই
মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।
মাঠে রয়েছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে
রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের চাচাতো ভাই ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
এহসানুল হাকিম সাধন।
শরীয়তপুর সদরে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ
সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন দীপু মিয়া প্রার্থিতা প্রত্যাহার
করেননি। বিল্লাল হোসেন দীপু মিয়া বলেন, ‘আমি ইকবাল হোসেন অপু মিয়ার চাচাতো ভাই। তা
ছাড়া আমি ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি, আমি ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। আমি বর্তমানে
শরীয়তপুর সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি; তাই মানুষকে সেবা
দিতেই আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি’।
চুয়াডাঙ্গা সদরে মনোনয়ন প্রত্যাহার
করেননি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ভাতিজা নঈম হাসান
জোয়ার্দ্দার এবং দুমুড়হুদায় চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগর টগরের ভাই আলী মনসুর
বাবু।
এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়
স্থানীয় এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভগ্নিপতি আওয়ামী লীগ নেতা মামুনুর রশিদ, জামালপুরের
বকশীগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামালপুর-১
আসনের সংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদের ছোট ভাই মো. নজরুল ইসলাম সাত্তার বলেন, ‘এমপির সংসার
এমপির, আমার সংসার আমার। এমপির খাবার এমপি খান, আমার খাবার আমি খাই। তাহলে আমি নির্বাচন
কেন করতে পারব না? তা ছাড়া আমি দলের কেউ নই’।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার চেয়ারম্যান
পদে মাঠে রয়ে গেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আপন ফুফাতো ভাই সায়েদুর রহমান স্বপন। এ
বিষয়ে সায়েদুর রহমান স্বপন বলেন, ‘আমি মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই। মন্ত্রীর পরিবারের আত্মীয়
নই। আমি দলীয় প্রতীক নিয়েও নির্বাচন করছি না। আমি আমার অবস্থান থেকেই উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছি। তা ছাড়া নির্বাচন না করার ব্যাপারে দলীয় কোনো
লিখিত নির্দেশনা পাইনি। তাই নির্বাচন করতে আমার কোনো বাধা নেই’। ভোটের মাঠ থেকে সরেননি
হবিগঞ্জের বাহুবলের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর বড় ভাই রাজন চৌধুরী।
প্রার্থিতা থেকে সরে গেলেন যেসব স্বজন
নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার
করে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক)
ছেলে গোলাম মূর্তজা পাপ্পা। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং গাজী গ্রুপ
ও বিসিবির পরিচালক। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা মেনে নিজের মনোনয়ন
প্রত্যাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন পাপ্পা গাজী।
বর্জনের পরও মাঠে বিএনপির প্রার্থী:
দলের কঠোর নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা
বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। এ ব্যাপারে কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘আমার ওপরে
দলের কোনো চাপ নেই। তা ছাড়া আমি ১০ বছর আগেই দলের পদপদবি থেকে সরে এসেছি। আমি দল করি
না। একজন সমর্থক মাত্র। এলাকার জনগণ আমার সঙ্গে রয়েছেন।’
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় জেলা বিএনপির
সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী, খুলনার ফুলতলা উপজেলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক
সম্পাদক সাব্বির হোসেন, দিঘলিয়ায় জেলা বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ এনামুল
হাচান মাসুম ও বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, পাবনার ফরিদপুরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফরিদপুর
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিয়াউর রহমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম
সম্পাদক নাসরিন পারভীন মুক্তি প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। জিয়াউর রহমান দীর্ঘদিন
বিএনপির স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এর আগে তিনি ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির
যুগ্ম সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে নাসরিন পারভীন মুক্তি
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ১০ বছর ধরে উপজেলা মহিলা
ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগেও মুক্তি দল থেকে দুবার বহিষ্কার
হয়েছেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ চেয়ারম্যান পদে
হাজীগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।
মাঠে রয়েছেন বিশ্বম্ভপুর বিএনপির সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ ও বিএনপি নেতা মোহন মিয়া
বাচ্চু, ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম চৌধুরী,
জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল হক আফিন্দি, তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির নেতা আবুল
কাশেমসহ আরও অনেকে।
বিএনপির সরে গেছেন যারা
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় উপজেলা বিএনপির
সহসভাপতি নুরুল ইসলাম খান হিরু ও রাজবাড়ী সদরে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট
নেকবর হোসেন মনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান
পদে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী উপজেলা যুবদলের সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুট ও ভাইস-চেয়ারম্যান
পদে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আহসান উল্লাহর দলীয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও যারা জয়ী
এদিকে ২১ এপ্রিল শেষ দিনে একক প্রার্থী
হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করায় তিনজন চেয়ারম্যান (কুমিল্লা আদর্শ সদর, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া),
তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ( কুমিল্লা আদর্শ সদর, রাউজান ও রাজস্থলী) এবং পাঁচজন মহিলা
ভাইস চেয়ারম্যান (কুমিল্লা আদর্শ সদর, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া আড়াইহাজার ও মৌলভীবাজার
সদর) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে রূপগঞ্জে
ভাইস চেয়ারম্যান পদে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান ও মহিলা ভাইস
চেয়ারম্যান পদে রূপগঞ্জ উপজেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি ফেরদৌসী আক্তার রিয়া ও চাঁদপুরের
হাজীগঞ্জ উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-এমপির স্বজন বিএনপি প্রার্থী আওয়ামীলীগ
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
আজিজ আহমেদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আম আদমি পার্টির জামিনে মুক্তি পাওয়া এই নেতার একটি বক্তব্য বিএনপি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি রাশিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। রাশিয়া নির্বাচনে পুতিন একচ্ছত্রভাবে বিরোধী দল দমন করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন। তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে তার দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল আসলে সমালোচনার তীর ছুড়েছেন নরেন্দ্র মোদীর দিকে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে অনুসরণ করে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চান বলেও আম আদমি পার্টির এই নেতা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। আর এই বক্তব্য নিয়েই বিএনপির মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপির নেতারা শুধু ইউটিউবেই এটি রিপোস্ট করেনি, তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং টুইটারেও এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে এক ধরনের ভারত বিরোধী প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ভারতের সমালোচনা করা এবং ভারত এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে এমন বক্তব্য বিএনপি নেতাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল। যদিও ইন্ডিয়া জোটের প্রধান শরিক কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন এবং সম্পর্ক আরও গভীর করার বার্তা দিয়েছেন। ভারতের অন্য একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসও আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকারের সমর্থক। বিজেপি গত এক দশকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় ভারতের নির্বাচনে যে ফলাফলই হোক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোন ব্যত্যয় হবে না বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এর মধ্যে আম আদমি পার্টির বক্তব্য নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস নিয়ে অনেকেই নানারকম টীকা-টিপ্পনি কেটেছেন। কেউ কেউ মনে করেন যে, এর আগে যখন কংগ্রেসকে হারিয়ে নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন তখনও বিএনপির মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি নেতারা মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল যে, কংগ্রেস চলে গেলেই আওয়ামী লীগের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিজেপির সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এখন কেজরিওয়ালের নির্বাচনের মাঠের বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপি আশায় বুক বেঁধে আছে। মুখে মুখে ভারত বিরোধীতা করলেও ভারতের অনুগত এবং ভারতের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য বিএনপি কম চেষ্টা করেনি।
আর এখনও বিএনপি যে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায় তার প্রমাণ পাওয়া গেল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বক্তব্যকে নিজেদের দলের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে। কিন্তু বিএনপি নেতারা ভুলে গেলেন যে, একজন রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক বক্তব্য, আর ক্ষমতায় এসে তার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড- দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেউলিয়া রাজনীতির কারণে বিএনপি সবসময় অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে কেজরিওয়ালের বক্তব্য বিএনপির ইউটিউবে ছাড়ার মধ্য দিয়ে সেই দেউলিয়াত্ব আরেকবার প্রকাশিত হল বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অরবিন্দ কেজরিওয়াল রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
কিছুদিন আগেও বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র বলতে অন্ধ থাকত। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে ফোন আসলে বিএনপির নেতারা নাওয়া খাওয়া ভুলে ছুটে যেতেন। এমনকি কোনদিন সকালে মার্কিন দূতাবাসে প্রাতরাশ, রাতে নৈশভোজেও দেখা গেছে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা অবতার হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দেবে, যুক্তরাষ্ট্রই এই সরকারের পতন ঘটাবে এমন একটা স্থির বিশ্বাস ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু বিএনপির মধ্যে সেই মোহভঙ্গ ঘটেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনাগ্রহী বিএনপি। এটা যেন অনেকটা আঙুল ফল টকের মতো ঘটনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে তিনি একটি হ্যাটট্রিক করেছেন। টানা তিন তিনবার আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র যিনি আওয়ামী লীগের তিনবার বা তার বেশি সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এখন ওবায়দুল কাদেরও আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক। এবার তিনি আরেক রকম হ্যাটট্রিক করলেন।
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আম আদমি পার্টির জামিনে মুক্তি পাওয়া এই নেতার একটি বক্তব্য বিএনপি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি রাশিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। রাশিয়া নির্বাচনে পুতিন একচ্ছত্রভাবে বিরোধী দল দমন করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন। তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে তার দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।