দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি নানা 'চড়াই-উতরাই' পাড়ি দিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে আজ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার নেতৃত্বে রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার প্রত্যয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। এর পেছনে রয়েছে দলের অসংখ্য নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ।
আগামী ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর—‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ উদযাপন করতে যাচ্ছে দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম রাজনৈতিক এই সংগঠনটি। দীর্ঘ ৭৫ বছরের এ যাত্রায় দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মতামত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা ইনসাইডার। আজ আমরা জানব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, ফরিদপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো: আব্দুর রহমানের আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেড়ে ওঠা এবং তার অভিজ্ঞতার কথা।
দেশের প্রাচীন এই দলের সাথে নিজের বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ আব্দুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার জন্ম লগ্ন থেকে স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরে সকল সংকটে সম্ভাবনায় অত্যন্ত যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। এ দলের সঙ্গে আমার নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি মনে করি যথার্থভাবে নিজেকে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন একটি বড় ধরনের মাইল ফলক। এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সাঁকো হলো এই ৬ দফা আন্দোলন। সেই সাঁকো পার হয়েই আজকে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে দুঃখ হয়, কষ্ট হয় যখন শুনি ওমুক স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে, তমুক স্বাধীনতা পাঠ করছে। স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা এক জিনিস আর ঘোষক হওয়া আরেক জিনিস। এখন আমরা মনে করি ইতিহাস যখন তার নিজের ইতিহাস লিখে সেই ইতিহাসেই এই ধরনের দাবি দাওয়ার কোন ভিত্তি নাই। এ ইতিহাস জুড়ে কবেলই বঙ্গবন্ধু আছেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজের বেড়ে ওঠার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেড়ে ওঠার অভিব্যক্তি চমৎকার। নির্যাতন, স্বৈরাচার বিরোধী আনোদালনে একটা বড় ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। গ্রেনেড হামলার মত এক নিষ্ঠুরতম ভয়ংকর হত্যাকান্ড পরিচালনা করেছিল তারেক জিয়া। এবং এর একমাত্র লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করা। সেই জায়গাটিও আমাদের জীবনে একটি মোকাবিলার জায়গা ছিল।
৭৫ পরবর্তী কালে বাংলাদেশ খাদের কিনারায় গিয়েছিল উল্লেখ্য করে আব্দুর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে আবার সেই খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে একমাত্র শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে। ১৯৮১ সালের পর আওয়ামী লীগের সবগুলো কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এবং এ ব্যাপারে কোন কাউন্সিলে কোন দ্বিমত ছিল না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায়। আমি মনে করি যে, এই দল বা এই সংগঠন যদি না থাকতো তাহলে এটি কোন অবস্থাতেই সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৃণমূল পর্যায়ে যে আওয়ামী লীগ আছে সে আওয়ামী লীগের চেহারার মধ্যেই ফুটে উঠে একটি সংগ্রামের ইতিহাস, একটি প্রতিশ্রুতির ইতিহাস। সেই সংগ্রাম এবং প্রতিশ্রুতিকে বুকে ধারণ করেই আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে এখানে এসেছি।
আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট এই নেতা বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরেই বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি করবে এবং সেটির নাম হবে ‘বাংলাদেশ’। সেই সঙ্গে তিনি আরও চিন্তা করেছিলেন দেশ স্বাধীন করে ঐ নতুন রাষ্ট্রকে কিভাবে পরিচালিত করা হবে, কিভাবে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা হবে। যে কারণে আজকে সর্বক্ষেত্রে কোন উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া হলে বঙ্গবন্ধুর কথা সামনে আসে। যেমন সমুদ্র সীমা নির্ধারণ, ছিট মহল, প্রাণি সম্পদ এগুলো বঙ্গবন্ধুরই চিন্তা।
১৯৭৩ সালে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলেছিলেন, ‘আমার মাটি আছে, আমার মানুষ আছে, আমার পাট আছে, আমার মাছ আছে।’ ঐ সময় এরকম কিছু চিন্তা করা কেবলমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত, এবং তার পছন্দের না হলে অভাবনীয় বুদ্ধিদীপ্ত এবং তার হৃদয় জুড়ে যে মানব প্রেম ছিল, মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য যে অঙ্গীকার ছিলো তারই বহিঃপ্রকাশ এরকম কথাবার্তা।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমি মনে করি, সবকিছু মিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই নেতা আমাদের দাঁড়াবার ঠিকানা, জাতির স্বপ্নের ঠিকানা, স্বপ্ন বাস্তবায়নের ঠিকানা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিস্ময়কর যে উন্নয়ন তিনি দেশবাসীকে দিয়েছেন সে উন্নয়ন আজকে শুধু বাংলাদেশে না, সমগ্র বিশ্বে তার নেতৃত্বের প্রশংসা হচ্ছে। সুতরাং আজকের এই দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর উদযাপন পালনে আমাদের দলের থেকে যে কর্মসূচি দিয়েছে সে কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে এ দলের ইতিহাস, অতীত ঐতিহ্য এবং আগামী দিনের যাত্রা, আগামী দিনের পরিকল্পনা এসব নিয়ে আমরা মনে করি এ দেশবাসী দলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন স্বাধীনতার পূর্বে যেমন দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলো। আর ৭৫’র ষড়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে যে চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্রের নীল নকশা একেঁ দেশটাকে পাকিস্তানের আদলে তৈরি করার একটা নোংরা ইচ্ছা ছিল সেটাকে বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৮১ সালে এই চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করেছেন। আর এর মধ্যে দিয়েই তিনি আজ টানা ৪র্থ বারের মতো এবং মোট ৫ বারের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের মানুষ তার প্রতি বিশ্বাস করে সবকিছু উজাড় করে তার সাথে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।
৭৫ বছরে এসেও আওয়ামী লীগ এখনও কীভাবে আগের মতোই সংগঠিত এবং সাংগঠনিক ভাবেও শক্তিশালী আছে এবং এর রহস্য কী জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের দল, এই দল মানুষকে নিয়ে ভাবে, মানুষের উন্নয়ন নিয়ে ভাবে, মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে ভাবে। এটি একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। সুতরাং যে দলটি মানুষ নির্ভর সে দলের ক্ষয় নাই। এবং যে দলের নেতা হলেন বঙ্গবন্ধুর মতো একজন ব্যক্তিত্ব এবং যার সুযোগ্য কন্যা আজকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে জনগণ মোট ৫ বার এবং টানা ৪র্থ বারের মতো তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। এ দল যেহেতু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাটি, মানুষ এবং মানুষের কল্যাণে পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং এটিই কেবল মাত্র সম্বল এত বাধা-বিপত্তি, এতো অত্যাচার নির্যাতন এবং ২১ আগস্টের মতো একটি নৃশংসতম হত্যাকন্ডকে মোকাবেলা করেও আজকে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। এবং মানুষ এখনো এ দলের প্রতি নিবেদিত। সুতরাং এ দলের কোন ক্ষয় হবে না, এ দলের মৃত্যু হবে না।