দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে প্ররোচনা এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের ১৬ এমপির বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ১৬ এমপির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রমাণিত হলে এই ১৬ এমপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আজ তৃতীয় দফা ভোট গ্রহণ হয়ে গেল। এবারের এই নির্বাচনগুলোতে বিএনপি দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করছে না। তারা স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করছে। ফলে এই নির্বাচন অনেকটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনেও চমক সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই।
আওয়ামী লীগের বিপুল পরিমাণ বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এবং এই বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকা প্রতীককে মোটামুটি কোণঠাসা করে ফেলেছে। আর এই প্রেক্ষাপটে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন এবং নেপথ্যে যারা কলকাঠি নেড়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবশ্য ইউপি নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নির্বাচনে যেন কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী না দেয় সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, যাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হোক না কেন, দলের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। যারাই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আর কোনদিন তারা নৌকা প্রতীক পাবেন না।
কিন্তু এরকম নিষেধাজ্ঞার পরও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপট লক্ষ্য করা যায় এবং শুধু দাপট নয় দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই প্রাধান্য বিস্তার করেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় যারা দলের প্রতীকের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু ১৯ নভেম্বরের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, যারা দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই হবে না, যারা দলীয় প্রতীক এর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে মূল মদদ দিয়েছেন তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের বোধোদয় তৈরি হয়েছে এবং তারা মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের শৃঙ্খলার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। আর এই কঠোর অবস্থানে থাকার কারণে তিনি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যে কারা কারা বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে মদদ দিয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়নের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তালিকার মধ্যে রয়েছেন ১৬ জন এমপি। এ ব্যাপারে সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিশদ তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং তদন্তে যদি দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের কঠিন পরিণতি হবে বলে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। প্রথমত তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে এবং কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব যদি সন্তোষজনক না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে যে রকম শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল একই শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি রাষ্ট্রপতি আদালত সরকার ফৌজদারি সংবিধান
মন্তব্য করুন
সরকার খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া রাজনীতির খবর বিএনপি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
মন্তব্য করুন
আগামী
এক মাস বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অক্টোবর মাসে অনেককিছু ঘটতে
পারে। আবার অক্টোবর মাস
পার করতে পারলে নির্বাচনের
রোড ম্যাপ চূড়ান্ত হবে। নির্বাচনের তফসিল
ঘোষণা করা হবে। এরকম
একটি সমীকরণে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ অক্টোবর মাসে
সবকিছু ঠিকঠাক মতো সামাল দিতে
চাইছে। আর এ কারণে
গোটা অক্টোবর মাস জুড়ে আওয়ামী
লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচি
ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল
আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেছেন এবং
সেখানে একাধিক বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে
রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে আওয়ামী লীগের জন্য অক্টোবর মাসে
৫টি শঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগের যে প্রধান লক্ষ্য,
সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারীর মধ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু
নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা, সেই লক্ষ্য
বাধাগ্রস্ত হতে পারে ৫টি
ঘটনায়। আর এই শঙ্কাগুলোর
মধ্যে রয়েছে:
১. অর্থনৈতিক সংকট: আওয়ামী লীগের জন্য এখন সবচেয়ে
বড় সংকট হিসেবে উপস্থিত হয়েছে
অর্থনৈতিক সংকট। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। গত
৪১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয়
এসেছে সেপ্টেম্বরে। রপ্তানি আয়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত
হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে অর্থনীতিতে একটি শঙ্কার কালো
মেঘ দানা বেঁধে উঠেছে।
এটি আওয়ামী লীগের জন্য উদ্বেগের।
পাশাপাশি
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মুদ্রাস্ফীতি জনজীবনে অস্বস্তি ফেলেছে।
এই সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগ মনে করে
যে আগামী এক মাস অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার
ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যথেষ্ট তৎপর হতে হবে
এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগ মনে করে
যে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং দলের ভেতরে
নানামুখী সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ
করে ছাত্রলীগের বেপরোয়া হয়ে ওঠা ও কিছু কিছু স্থানীয়
পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিপদসীমা অতিক্রম করা আওয়ামী লীগের
জন্য একটি বড় ধরনের
শঙ্কার কারণ।
আওয়ামী
লীগের নেতারা মনে করেন যদি
দল ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে কোন
সমস্যাই আওয়ামী লীগকে কাবু করতে পারে
না। আর কারণে দলকে
ঐক্যবদ্ধ রাখাটা আগামী একমাস আওয়ামী লীগের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
৩. ব্যর্থ
মন্ত্রীদের দায়: আওয়ামী লীগের জন্য আগামী এক
মাস ব্যর্থ মন্ত্রীদের দায় বহন করা
একই বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।
এই মন্ত্রীদের ব্যর্থতার কারণেও আওয়ামী লীগের লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে
অনেকে মনে করেন।
অর্থনৈতিক
সংকট ছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে বিপর্যয় দেখা
দিয়েছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার পেরিয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছেন
না। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও সংকট দেখা দিচ্ছে।
যে সমস্ত মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালনে অক্ষম তাদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
৪. বেগম খালেদা জিয়ার
শারীরিক অসুস্থতা: বেগম খালেদা জিয়ার
শারীরিক অসুস্থতা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড়
চ্যালেঞ্জিং বিষয়
হয়ে দাঁড়াতে পারে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। কারণ
বেগম খালেদা জিয়ার যদি শেষ মুহুর্তে
কোনো কিছু হয়ে যায়
সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।
যদিও
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন তেমন
কিছুই হবে না। এর
আগেও বেগম খালেদা জিয়ার
গ্রেফতারের সময় এই ধরনের
শঙ্কার কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই
হয়নি। এবারও কিছুই হবে না।
৫। আন্তর্জাতিক চাপ: এই সময়ের
মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ, বিশেষ করে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী লীগের জন্য শঙ্কার কারণ বলে রাজনৈতিক
বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকে
মনে করছেন যে এই সময়ের
মধ্যে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে
সামাল না দেওয়া যায়
তাহলে তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের কোন
পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারে।
এই ৫ শঙ্কা কাটিয়েই
আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচন মোকাবিলা করতে হবে। আওয়ামী
লীগের নেতারা বলছেন যে এই মাসটা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেই সব
সংকট কেটে যাবে।
মন্তব্য করুন
বেশকিছু দিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি নিয়ে রাজনীতি সরগরম। বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। মতামতের জন্য সেই আবেদন পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। তবে আইন মন্ত্রণালয় সেটি নাকচ করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুর্কির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদুলু এজেন্সি।
আইন মন্ত্রণালয় যখন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন, তখন ধারণা করা হচ্ছে যে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার সব পথ হয়তো বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সব পথ বন্ধ হয়নি। এখনও তার বিদেশে যাওয়ার একটি সহজ সুযোগ রয়েছে এবং সেই সহজ সুযোগটি হল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।