দেশে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন চলছে। বিএনপি নির্বাচনে না আসা এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মাঠে তেমন সক্রিয় না থাকার কারণে এ নির্বাচনে বৃহৎ দল হিসেবে একমাত্র আওয়ামী লীগই অংশ নিয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকপ্রাপ্ত এবং আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে হচ্ছে এ নির্বাচন। ফলে অনেকেই এই নির্বাচনকে বলছেন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের নির্বাচন। ইউপি নির্বাচনের কারণে দুই দিন আগে যার সঙ্গে রাজপথে একসাথে আন্দোলন করেছিল, আজকে সে তার চরম শত্রু হয়ে গেছে। শত্রুতার মাত্রা এতটাই ছাড়িয়েছে যে, বিরোধী প্রার্থীসহ তার সমর্থকদের প্রাণ নিতেও দ্বিধা নেই তাদের। আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের এ নির্বাচনে বিগত দুই ধাপের ইউপি ভোটের আগে-পরে ও ভোটের দিনের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আহত হাজার হাজার। এর মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার চরম মাত্রার সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার মাধ্যমে শেষ হল তৃতীয় ধাপের নির্বাচন। চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচন যথাক্রমে ২৩ ডিসেম্বর ও ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এ দুই ধাপেও এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, তৃণমূলের এই ভোট উৎসব অনেকাংশেই আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে গত শুক্রবার সকাল থেকে নির্বাচনি মাঠে নেমেছিল পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের ৫০ হাজারের বেশি সদস্য। এছাড়াও নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও মাঠে ছিলেন। সহিংসতা বন্ধে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর অবস্থান নিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া নির্বাচন হচ্ছে এমন উপজেলাগুলোকে র্যাবের দুটি মোবাইল ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির দুই প্লাটুন মোবাইল ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং এবং উপকূলীয় জেলাগুলোয় দুই প্লাটুন মোবাইল ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে অবস্থান করেছিল। ভোট কেন্দ্রের পাহারায় ছিল পাঁচজন পুলিশ ও ১৭ জন আনসার সদস্য। এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও শুক্র ও শনিবার টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও ভোলার দৌলতখানে সহিংসতায় দুজনের মৃত্যু হয়। ভোটের প্রাক্কালে সহিংসতায় মেহেরপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। দেশের অন্যান্য এলাকায়ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর, পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, প্রার্থীর বাড়িতে গুলিবর্ষণসহ বেশকিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে। ভোটকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতার আশঙ্কার কথা নির্বাচন কমিশনকে আগেই জানিয়েছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তবুও সহিংসতা রোধে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আর অধিকাংশ সহিংসতাগুলো হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেই। বিদ্রোহ দমনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বারবার করে বলেও কোনোভাবেই থামাতে পারছে না। বিদ্রোহ দমনে আওয়ামী লীগ যে ব্যর্থ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না বলেই মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।
আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে হওয়া এসব সহিংসতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, আমি আগেও বলেছি এটা হলো রোগের উপসর্গ, রোগ নয়। রোগটি হলো অযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া, পদ-পদবি ব্যবহার করে বা অন্যায় করে সুযোগ সুবিধা নিয়ে পয়সা কামানো, প্রশাসনের উপর বিভিন্ন রকমের প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটানো, অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়া। যতদিন এইগুলো চলবে ততদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা চলবে, হানাহানি চলবে। একজন আরেক জনকে টেনে নিচে নামানোতে ব্যস্ত থাকবে। যেসব জায়গায় এ সমস্ত সহিংসতা হচ্ছে আর যারা করছে, তারা সবাই এসব স্থানে আসার যোগ্য ছিল না। অযোগ্য ব্যক্তিকে যদি আপনি উপরে নিয়ে আসেন, এমনটা হতে বাধ্য বলেই মনে করছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন, এ দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এ দুই প্রতিষ্ঠানই চলমান ইউপি নির্বাচনে তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। ফলে দেখা দিচ্ছে সংঘাত-সহিংসতা। ভোটারদের দায়িত্বও কম নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এ নিয়ে বসতে হবে এবং কঠোর অবস্থান নিতে হবে। শুধু বহিষ্কার করেই এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। সহিংসতায় যারা অংশ নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকেও ভূমিকা রাখতে হবে। ভালো লোককে যেন কোনো ভাবে ফাঁসাতে না পারে এ দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাজনৈতিক দল ও নির্বাচকমণ্ডলী তথা ভোটার শ্রেণি উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দিয়ে আগামী দিনগুলোয় নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর রাখার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
বিএনপি নির্বাচনের রোড ম্যাপ আওয়ামী লীগ ভিসা নীতি সরকার নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শেখ ফজলে নূর তাপস
মন্তব্য করুন
বিএনপির সমাবেশ নির্বাচন এক দফা আন্দোলন সরকার পতন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বিএনপি খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল এক দফা আন্দোলন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল মেয়র তাপস ইশরাক হোসেন
মন্তব্য করুন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে, সকল দল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেগুলো এখন রাজনীতিতে প্রধান আলোচনার বিষয়। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকার আপাতত বিএনপিকে বাদ দিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক উৎসবমুখর নির্বাচনের রোড ম্যাপ চূড়ান্ত করেছে। এই রোড ম্যাপ অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এই রোড ম্যাপের প্রধান লক্ষ্য হলো নির্বাচনে অন্তত ৬০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এই জন্য আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আর এই রোড ম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ যে কৌশল গ্রহণ করেছে তা হলো-
গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি পোস্ট দিচ্ছে। ‘লিডার আসছে’—এই শিরোনামে পোস্ট বিএনপি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে। বিএনপির একাধিক নেতাকে এই পোস্টের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো তারা রহস্যময় উত্তর দিয়েছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলছেন, তারেক জিয়ার দেশে আসার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনাটি বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছে বলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছেন।