নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০২১
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই যে সহিংসতা আমরা দেখছি, মনোনয়ন বাণিজ্য দেখছি, এগুলো হলো রোগের উপসর্গ, রোগ নয়। আমার বিবেচনায় রোগ তিনটি। এর মধ্যে প্রথমটি হল আমাদের রাজনীতিতে সুবিধাবাদ। রাজনীতি হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণের জন্য, জনস্বার্থে। কিন্তু আমাদের রাজনীতিটা হয়ে গিয়েছে ব্যক্তির স্বার্থে, গোষ্ঠীর স্বার্থে, দলের স্বার্থে। অর্থাৎ রাজনীতিতে মানুষ এখন যুক্ত হয় কিছু পাওয়ার জন্য। তাই রাজনৈতিক দলের পদ-পদবী পেলে কিংবা এইসব নির্বাচিত পদ-পদবী পেলে তারা রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক হয়। বিভিন্ন রকম অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। এই পরিস্থিতি যতদিন থাকবে, অর্থাৎ রাজনীতি যদি আবারও জনকল্যাণমুখী না হয়, জনগণের স্বার্থে না হয়, ততদিন পর্যন্ত এই অসম প্রতিযোগিতা, মনোনয়ন বাণিজ্য, একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করার, ল্যাঙ মারার, সহিংস আচরণ বিরাজ করতেই থাকবে। এটি হলো প্রথম রোগ। রাজনীতিকে কলুষিত মুক্ত করতে হবে, কল্যাণমুখী করতে হবে এবং রাজনীতিটা করতে হবে জনস্বার্থে, কিছু পাওয়ার জন্য নয়।
স্থানীয় নির্বাচনে সহিংসতা, নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা সহ বিভিন্ন বিষয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পাঠকদের জন্য ড. বদিউল আলম মজুমদার এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দ্বিতীয় রোগটি হল আমাদের সবকিছু দলীয় হয়ে গেছে। প্রশাসন দলীয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলীয়, আমাদের নির্বাচন কমিশন দলীয়। এর ফলে এই যে দলীয় ভিত্তিক নির্বাচন হচ্ছে, যারাই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাচ্ছে, তাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। এবং এরই প্রতিফলন ঘটছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া কিন্তু নির্বাচন নয়। এটা হচ্ছে নির্বাচন-নির্বাচন খেলা। নির্বাচন হলো বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকা। কিন্তু আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন। আর তৃতীয় রোগটি হলো, আমাদের নির্বাচন কমিশন নির্বাসনে চলে গিয়েছে। বস্তুত নির্বাচন কমিশন তথা ইসি নির্বাচনকে `নির্বাসনে` নিয়ে গেছে। তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই নির্বাচনে সহিংসতা বাড়ছে। ভোটের মাঠে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে। অথচ ইসি সেখানে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল বুঝে গেছে- যত অন্যায়ই করুক না কেন, নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারবে না। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা মনে করছেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের পক্ষে। ফলে কেউ কোনো আইন বা রীতির তোয়াক্কা করছে না। তারা যে কোনো মূল্যে জয় পেতে চাইছে এবং সহিংসতায় জড়াতেও দ্বিধা করছে না।
ইসি মাহবুব তালুকদারের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ওনি তো সাহিত্যিক মানুষ। ওনি ওনার ভাষায় কথা বলেন এবং হয়তো পাঠকদের জন্য, শ্রোতাদের জন্য আকর্ষণীয় হবে ভেবে এই ভাষায় মন্তব্য করেছেন। আমি যে ভাষা ব্যবহার করেছি তা হল আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের অকর্মণ্যতা, অদক্ষতা এবং পক্ষপাতদুষ্টটার কারণে হয়েছে। তো ওনি ওনার ভাষার কথা বলেছেন। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা তো ভেঙ্গে পড়েছে। আমাদের মধ্যরাতে ভোট হয়। আমাদের অন্যায় করে পার পাওয়া যায়। পাশাপাশি আমাদের নিকৃষ্ট যন্ত্র ইভিএম, যা নিরীক্ষণ করা যায় না, তা ব্যবহার করা হয়।
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ওনার ভূমিকা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনাদের বিরুদ্ধে তো আমরা অভিযোগ করেছি। ওনারা চরমভাবে ব্যর্থই নয় শুধু, চরম অসদাচরণও করেছে। তারা মধ্যরাতে ভোট নিয়েছেন। বিভিন্ন রকমের অন্যায় বিশেষ করে টকা-পয়সা লোপাট, দুর্নীতি করেছেন এবং সাফাই গেয়েছেন। তারা ট্যাক্স পেয়ারের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছেন। বৈশাখী টেলিভিশনে সাত-আট পর্বের একটি প্রোগ্রামও করেছে তাদের দুর্নীতি নিয়ে। শুধু তাই নয়, তাদের অন্যতম দুর্নীতি হল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হওয়া এবং অন্যকে লাভবান করা। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মধ্যরাতে ভোট করেছে। বিভিন্নভাবে ক্ষমতাসীনদেরকে অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। সেটাই তো সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। সুতরাং তারা চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ এবং তারা চরমভাবে ব্যর্থ। তারা আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি মনে করি আমরা মহা সংকটের মধ্যে আছি এবং এই সংকটটি আরো ঘনীভূত হবে। যেহেতু ক্ষমতায় যাওয়া মানে হল সুযোগ সুবিধা পাওয়া, অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়া, তাই ক্ষমতা ছাড়ার আর কোনো রকম আগ্রহ কারোরই নাই এবং থাকবেও না। এটি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাসীনরা সবকিছুই করবে। যা আমাদের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান সবকিছু ধ্বংস করে দিবে। পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বন্যা পরিস্থিতি বন্যা বন্যার্ত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, আমরা একটা অপসংস্কৃতির দিকে চলে যাচ্ছি। আগে সমাজের সব ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আলাদা একটা মর্যাদার জায়গা ছিল। নানা কারণেই আমাদের সমাজের এখন অবক্ষয় হয়েছে। এখন শিক্ষকরা মর্যাদা তো পায় না বরং তারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বিভিন্নভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে সাভারে যে ঘটনাটি ঘটছে তা রীতিমতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। যে ছাত্র এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে তার নিজস্ব একটি কিশোর গ্যাং আছে। আমি মনে করি আমাদের ব্যর্থতার চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও একটা বড় ব্যর্থতা আছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের উৎসাহ আর উদ্দীপনা ব্যাপক। এটি শুধু এখন নয়, উদ্বোধনের আগেও ছিল। পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের যে আবেগ ও উৎসাহ, সেটা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ, অতি উৎসাহ এটি থাকবেই। কারণ সারাদেশের মানুষের আবেগ জড়িত আছে এই সেতুর সাথে। তবে কারো কারো উৎসাহের সাথে কোনো দুরভিসন্ধি আছে কিনা সেটা একটা প্রশ্নের বিষয় এবং সে বিষয়ে অবশ্যই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুসন্ধান করে দেখবেন। বিষয়টি নিয়ে আরও ভালোভাবে খোঁজ খবর এবং আরও নজরদারি করার দরকার বলে আমি মনে করি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, পদ্মা সেতুর আশেপাশের যে অঞ্চলগুলো আছে, আমরা যেগুলোকে পদ্মা সেতুর বিশেষ সুবিধাভোগী বলে থাকি, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওই ২১টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলা একেবারে দরিদ্র্য জেলা। বাংলাদেশের দরিদ্র্য জেলাগুলোর যে তালিকা সেখানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩টি জেলা আছে। সেখানকার মানুষ যারা চরাঞ্চলের অর্থাৎ যারা সুন্দরবনের আশেপাশে বাস করছেন, যারা প্রতিবছর আইলা বা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যারা মেনেই নিয়েছে যে, তাদের জীবনটা এ রকমই হবে।