ইনসাইড থট

কোভিড-১৯, ওমিক্রন এবং ভবিষ্যৎ

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২


Thumbnail কোভিড-১৯, ওমিক্রন এবং ভবিষ্যৎ

আমার মনে হয় স্বাভাবিক কারণে বর্তমানে সংক্রমণের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে বাংলাদেশে আমরা অনেকেই এখন খুব চিন্তিত। খুশি যে আমরা আমাদের লকডাউনের অতীতের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি করিনি। তবে দুঃখজনকভাবে স্কুল আবার বন্ধ। কিন্তু আমি মনে করি বিশ্বের অনেক ধনী বা উন্নতশীল দেশ গুলির চেয়ে আমরা এখনো অনেক ভালো অবস্থায় আছি। আরও দ্রুত টিকা এবং বুস্টার ডোজ দেওয়ার জন্য আমাদের সমস্ত উদ্যোগ এবং শক্তি নিযুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে টিকাদান কর্মসূচিতে আমাদের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা উচিত।

আজ (২৫ জানুয়ারি) সংক্রমণের হার এখন ৩২.৪০%। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পরীক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছেন এবং সেই অনুযায়ী ১৬,০৩৩ জন ইতিবাচক সংক্রামিত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রামিত হওয়া লোকের সংখ্যা দেখে আমি চিন্তিত নই, কারণ আমরা যদি আজ ১০০,০০০ জনকে পরীক্ষা করতাম তবে আমরা প্রায় ৩০,০০০ জন সংক্রামিত লোককে খুঁজে পেতাম। অনেকেই পরীক্ষার জন্য আসছেন না, কারণ তাদের অধিকাংশই হয় উপসর্গবিহীন বা তাদের হয়তো খুব হালকা ফ্লুর মতো উপসর্গ রয়েছে বা তাদের পরীক্ষা করার সামর্থ্য নেই বা পজিটিভ হবার ভয়ে তারা হয়ত আসছেন না। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলাতেই সংক্রমণের হার ২৩% এর উপরে বলে মনে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে ওমিক্রন সমগ্র বাংলাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু করেছে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ মানুষ যদি স্বাস্থ্য উপদেশে প্রবাহিত না হয়, বা না মানতে পারে এবং গণসমাবেশ চলতে থাকে, তাহলে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রামণ শুরু হবার পর সংক্রামণের হার বাড়বে এটাই স্বাভাবিক, এতে নতুন কিছু নেই। তাই সংক্রমণের হার দ্রুত বৃদ্ধি নিয়েও আমি তেমন উদ্বিগ্ন নই। আমি বিশ্বাস করি সম্ভবত কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ কমে আসবে, কারন আমি মনে করি বেশীর ভাগ লোক ইতিমধ্যে সংক্রামিত হয়েছেন বা হবেন। যেমন ডেল্টা তরঙ্গের সময়, যা অনেক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সংক্রামিত হবার ফলে গত বৎসর আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে সংক্রামণের হার কমতে শুরু করে। সুইজারল্যান্ডে, জনস্বাস্থ্যের লোকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে সেখানে ৫০% এরও বেশি লোক ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত হবে, কোন কঠোর লকডাউন বা বিধিনিষেধ দিয়ে এটি তারা বন্ধ করতে সক্ষম হবে না। শুধুমাত্র সেখানে যেকোনো কেনাকাটা, ইনডোর, ভোজনশালা বা অনুষ্ঠানের স্থানে কঠোরভাবে মাস্ক পরা এবং কোভিড ভ্যাকসিন পাস ব্যবহার করা নিশ্চিত করছে। WHO ইউরোপীয় আঞ্চলিক অফিসও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে বেশিরভাগ মানুষ ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়েছে বা শীঘ্রই সংক্রমিত হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সংক্রমণ কমবে বা কিছু দেশে ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। ডব্লিউএইচওর ইউরোপীয় আঞ্চলিক পরিচালক বলেছেন যে তিনি আশা করছেন আমরা মহামারীটির শেষের কাছাকাছি।

বাংলাদেশে ১৬.৬ কোটি মানুষের মধ্যে আজ ১৬,০০০ জনেরও কিছু বেশি লোক সংক্রমিত হয়েছে দেখে আমরা আতঙ্কিত। কিন্তু হল্যান্ডে মাত্র ১.৭ কোটি লোকের মধ্য কিছুদিন প্রতিদিনের মত গতকালও তারা ৬৫,০০০ সংক্রামিত লোক নিবন্ধন করেছে, তবুও তারা সবকিছু খুলে রাখার সিদ্ধান্তে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যে ৭.৭ কোটি লোকের মধ্যে আজ ৯৪,০০০ সংক্রামিত লোক নিবন্ধন করে, ৪৩৯ জন কোভিডের কারণে মারা গেছেন। তবুও তারা মুখোশের ম্যান্ডেট সহ সবকিছু খুলে দিয়েছে (মুখোশ ম্যান্ডেট বাদ দেওয়া আমি একটি ভুল সিদ্ধান্ত মনে করি)। কেন তাহলে আমেরিকা সহ পশ্চিমা দেশগুলো তাদের বিধিনিষেধের নিয়ম শিথিল করছে? কারণ ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত বেশিরভাগ লোকই উপসর্গবিহীন বা ফ্লুর মতো হালকা লক্ষণ রয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি কম হচ্ছে এবং গুরুতর যত্নের প্রয়োজনও খুব কম। মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, খুব কম লোক মারা যাচ্ছে। টিকা দেওয়ার কভারেজও অনেক বেশি। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল (JAMA) নীচের হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনামূলক ফলাফল প্রকাশ করেছে:

দক্ষিণ আফ্রিকাডেল্টাওমিক্রন
রোগীদের গড় বয়স৫৯৩৮
তীব্র শ্বাসযন্ত্রের উপসর্গ৯১%৩১%
হাসপাতালে ভর্তির সময়কাল৭দিন৩দিন
রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন৭৪%১৭%
হাসপাতালে ভর্তি৬৯%৪১%
আইসিইউ ভর্তি৩০%১৮%
যান্ত্রিক বায়ুচলাচল (ventilation)১২%১.৮%
মৃত্যুহার২৯%৩%
JAMA ৩০শে ডিসেম্বর ২০২১


ডেল্টার কারণে ২০২১ সালের জুলাই থেকে দ্রুত সংক্রমণ শুরু হয় এবং আমরা দ্রুত ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ এবং মৃত্যু দেখতে শুরু করি। ২৮শে জুলাই সবচেয়ে বেশি ১৬,২৩০ জনের মধ্যে সংক্রমণ রিপোর্ট করা হয়েছিল এবং ২৭শে জুলাই আমরা মৃত্যুর সংখ্যা ২৫৮ হিসাবে দেখেছি। ৫ই আগস্টে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৬৪ জন মারা গিয়েছিল। হ্যাঁ, এখন আবার সংক্রমণ বাড়ছে, সারা বাংলাদেশে দ্রুত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা আগের মত বাড়ছে না। আজ স্বাস্থ্য দফতর ১৭জন কোভিডের সাথে মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও ছয়জন নারী। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে দুইজন ও ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের দুইজন, খুলনা বিভাগের দুইজন, বরিশাল বিভাগের একজন ও ময়মনসিংহ বিভাগের একজন রয়েছেন। বাংলাদেশের মতো, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে ৯০% ভাগের মত হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু যারা টিকা পাননি তাদের মধ্যে রয়েছে। ভারতের দিল্লিতে নতুন সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ১৩ই জানুয়ারি ২৮,৮৬৭ -এর সর্বোচ্চ সংখ্যা থেকে নেমে এখন অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে এবং সরকারী তথ্য অনুসারে শহরের হাসপাতাল জুড়ে ৮০% এরও বেশি কোভিড শয্যা খালি রয়েছে।

আইসিডিডিআরবি, রিপোর্ট অনুসারে প্রায় ৭০% সংক্রমণ ওমিক্রনের জন্য। আমি বিশ্বাস করি যে এই সংখ্যা এখন তার চেয়ে বেশি। এখন বাংলাদেশে আমরা ওমিক্রনের সাথে ভালভাবে মোকাবিলা করছি কারণ রোগটি হালকা, আমরা লোকেদের টিকা দিচ্ছি এবং উপরন্তু উন্নত হাসপাতালের যত্ন সহ আমাদের মুখে খাওয়া কোভিড ওষুধ মানুষ ব্যাপকভাবে পেতে পাচ্ছে।

আমরা যাই করি না কেন, স্কুল বন্ধ হোক বা না হোক, এখন বাংলাদেশে এই সংক্রমণ বন্ধ করা যাবে না, বা প্রায় অসম্ভব। পশ্চিমা দেশগুলির মানুষ এই সমস্ত বিধিনিষেধে ক্লান্ত এবং বিরক্ত হয়ে পড়ছে এবং আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এর বিরুদ্ধে সহিংসভাবে প্রতিবাদ করছে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের সরকাররা বুঝতে পেরেছে ওমিক্রন ট্রান্সমিশন বন্ধ করা যাবে না। যেহেতু রোগটি মৃদু, হাসপাতালে ভর্তি বিশেষ করে গুরুতর যত্নের প্রয়োজন বাড়ছে না এবং মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম, রাজনৈতিক কারণে তারা প্রকাশ্যে না বললেও মনে হচ্ছে, সরকার সমস্ত বিধিনিষেধ শিথিল করছে, মানুষকে সংক্রামিত হতে দিচ্ছে এবং এর থেকে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাতে ওমিক্রন এবং ডেল্টার বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা অর্জন পারে সেই কৌশলের পথ নিয়েছে। অন্য কথায় ভাইরাসের সাথে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে এবং সে দেশগুলো মানুষের জীবিকা এবং সামগ্রিক অর্থনীতির আরও ক্ষতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমা দেশের অর্থনীতি আর বেশী ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করতে পারবে না। সরকারি ঋণ বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, নিত্যপণ্যের দামও বাড়ছে। শুধুমাত্র একটি জিনিস তারা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে তা হল টিকা এবং বুস্টার ডোজ। যেহেতু আরও কম বয়সী মানুষ সংক্রামিত হচ্ছে, ডব্লিওএইচওর জন্য অপেক্ষা না করে, তারা ৫ বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের টিকা দেওয়া শুরু করেছে। সিঙ্গাপুরও তাই করছে। জনস্বাস্থ্য পরিমাপের লক্ষ্য হল জনগণের দুর্ভোগ ও মৃত্যু কমিয়ে আনা এবং যে কোন ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকা।
 
আমি জানি অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন না বা মনে করবেন আমি বোধগম্য কথা বলছি না, তবুও আমি বলব বাংলাদেশ এখনও ভালো অবস্থানে আছে এবং জীবন ও জীবিকার আর বেশী ক্ষতি হবে না। আমি নিশ্চিত যে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইতিমধ্যেই ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে বা শীঘ্রই সংক্রমণের প্রান্তিক স্তরে (threshold) পৌঁছে যাবে, ওমিক্রন সবচেয়ে বিপজ্জনক রূপ ডেল্টাকে মুছে ফেলবে এবং শীঘ্রই কয়েক দিনের মধ্যে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করবে।

বাংলাদেশের মানুষ এপর্যন্ত যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করেছে, তারা তাদের জীবন ফিরে পেতে চায়। আমরা আগেও পারিনি, এবং আমরা এখনও তাদের আরও বিধিনিষেধ অনুসরণ করতে বাধ্য করতে পারব না (এটি দুঃখজনক কিন্তু একটি সত্য)। আমাদের মাটির বাস্তবতা মেনে নিতে হবে, বালিতে মাথা লুকিয়ে অন্ধ হতে হবে না। সুতরাং, আসুন আমরা ন্যূনতম যা করতে পারি তা করার চেষ্টা করি যা সর্বোচ্চ সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাব আনবে:

১। টিকা এবং বুস্টার। আমাদের স্টকে ৯ কোটি ভ্যাকসিন রয়েছে এবং আরও ভ্যাকসিন আসছে। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সমস্ত উপলব্ধ ভ্যাকসিন যাতে তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ব্যবহৃত হয়। আমাদের এখন J&J ভ্যাকসিন আছে, যা এক ডোজ ভ্যাকসিন। সমস্ত জেলা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে, আমাদের অবশ্যই টিকা এবং বুস্টার ডোজ দেওয়া আরও গতিশীল করতে হবে। প্রয়োজনে টিকাদান কর্মসূচিতে আমাদের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা উচিত।
২। দয়া করে WHO-এর জন্য অপেক্ষা করবেন না। আমরা যদি আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ স্টক সম্পর্কে নিশ্চিত হই, তাহলে সিঙ্গাপুরের মতো ৫ বছর এবং তার বেশি বাচ্চাদের টিকা দেওয়া শুরু করুন।
৩। আরও বেশি শিল্প, ব্যবসায়িক প্রাঙ্গণ, বেসরকারি ও সরকারি অফিস সহ বাড়ির বাইরে মাস্কের যথাযথ ব্যবহার আরো জোরদার করুন
৪। কিছু সময়ের জন্য, আরও কিছু মাস রাজনৈতিক, ধর্মীয়, বিবাহ প্রভৃতি গণসমাবেশ আটকে রাখুন/বন্ধ করুন। শক্ত ভাবে কোভিড পাস প্রয়োগ করুন।
 
আশা করি নিশ্চিত করবেন যে সাধারণ জনগণ সময়মত এবং ক্রমাগত অবহিত হয়। আমরা পরীক্ষার সুবিধা বাড়িয়েছি, আমাদের ভ্যাকসিন আছে, আরো আসছে এবং টিকাদান কার্যক্রম ভালোভাবে চলছে এবং আমাদের কাছে সহজলভ্য কোভিড ওষুধ রয়েছে। তাই ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কিন্তু ডেল্টার মত বিপর্যয় সৃষ্টি করছে না। অন্য দেশের মত বাংলাদেশের মানুষও ডেল্টার পরে ওমিক্রনের এই বৈকল্পিকটির সাথে জীবনযাপন করা শিখতে শুরু করেছে এবং সম্ভবত এটি স্থানীয় রোগ হয়ে উঠবে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই প্রতি বছর একবার মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যের করুণার উপর নির্ভর না করে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা ভাল করছি এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা খুব বেশি জীবন এবং অর্থনৈতিক দুর্ভোগ বা ক্ষতি ছাড়াই এই তরঙ্গকেও কাটিয়ে উঠবো। তাই আসুন ভাইরাসের সাথে বাঁচতে শিখি। আসুন সম্মত হই মাস্ক পরা একটা সুন্দর অভ্যাস এবং ভ্যাকসিনগুলি জীবন এবং জীবিকা রক্ষা করবে।

কোভিড-১৯   ওমিক্রন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন