ইনসাইড থট

"আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ পরস্পরের পরিপূরক"


Thumbnail "আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ পরস্পরের পরিপূরক"

ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গ থেকে পূর্ব বাংলা এবং পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশের দশকে পূর্ববাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তানে রুপান্তরিত হয় আমাদের এই ভূখন্ড। তবে পাকিস্তানের শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে 'বাংলাদেশ' নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ই বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৭৫৭-১৯৭১ দীর্ঘ ২১৪ বছর ধরে বাঙালীর আকাঙ্খা ছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড। যে আকাঙ্খার বাস্তবায়ন ঘটেছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ' এর নেতৃত্বে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন ভাগিরথী নদীর তীরবর্তী পলাশীর আম্রকাননে বাঙালির স্বাধীনতার যে লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, অলৌকিকভাবে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার দিনটিও মিলে গিয়েছিল সেই দিনটির সাথে। ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গণমানুষের সংগঠনটি।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্মের সাথে মুসলিম লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল হক নেতৃত্বাধীন ঢাকার ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগ কর্মি শিবির ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কর্মি শিবিরটি ছিল ঢাকার প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা শওকত আলীর মালিকানাধীন তিনতলা ভবনের নিচতলায়। কর্মি শিবিরের সকল খরচ চালাতেন শওকত আলি। তিনি ছিলেন '৪৮ এ শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের প্রথম সারির কর্মি এবং কর্মি শিবিরের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তবে কর্মি শিবির প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের কারিগর ছিলেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক প্রখ্যাত ইসলাম ধর্মীয় পন্ডিত আবুল হাশিম। এই কর্মি শিবির থেকেই ভাষা আন্দোলনের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হত।

১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর নাজিমুদ্দিন এবং মাওলানা আকরাম খাঁর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের রক্ষণশীল অংশের নেতারা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন দেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। নাজিমুদ্দিন সোহরাওয়ার্দীকে 'ভারতের এজেন্ট' এবং 'পাকিস্তানের শত্রু' হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য পদ থেকে বরখাস্ত করেন। ফলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিম নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে মুসলিম লীগের মনোনয়নে উপনির্বাচনে টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তবে মুসলিম লীগ সরকারের পূর্ব বঙ্গের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করতে থাকেন তিনি। এ কারনে তার নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করে তাকে হয়রানী করার হীন উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে মুসলিম লীগ সরকার। পূর্ব বঙ্গের গভর্ণর এক নির্বাহী আদেশ বলে তার নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে ব্যবস্থাপক সভার উক্ত আসন শূন্য ঘোষণা করেন। মাওলানা ভাসানী আসাম চলে যান। তাকে আটক করে ধুবড়ী কারাগারে রাখা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালের ২৬ শে এপ্রিল ঐ আসনে পুনরায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুসলিম লীগের ধনাঢ্য প্রার্থী জমিদার খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে ১৫০ মোগলটুলি কর্মি শিবিরের নেতাদের সিদ্ধান্তে প্রার্থী করা হয় শামসুল হককে। কর্মি শিবিরের নেতারা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে, কেউ হাতঘড়ি বিক্রি করে, কেউ বাইসাইকেল বিক্রি করে নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করেন। বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে এই নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন এবং নির্বাচনী ফান্ড গঠনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থীর কল্যাণে মানুষ প্রথম মাইকের ব্যবহার দেখেন। মুসলিম লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন সহ অসংখ্য মন্ত্রী এবং হেভিওয়েট নেতারা খুররম খান পন্নীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। অন্যদিকে শামসুল হকের পক্ষে ১৫০ মোগলটুলি কর্মি শিবিরের কয়েকজন কর্মি ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বড় নেতা ছিলেন না। নির্বাচনে শামসুল হক বিপুল ভোটের ব্যবধানে মুসলিম লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী খুররম খানকে পরাজিত করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। জমিদার খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে শামসুল হক কোন বিবেচনাযোগ্য প্রার্থী ছিলেন না বলে সবাই মনে করতেন। অথচ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন। এই রায় যতটা না ছিল খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে তার চেয়ে ছিল মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে। এই পরাজয়ে মুসলিম লীগ সরকারের ভীত কেঁপে যায়। ফলে ঐ উপনির্বাচনের পর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আর কোন উপনির্বাচন দেয়নি প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকার। তবে বিজয়ী শামসুল হকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। নির্বাচনে বিপুল বিজয় মোটেও সুখকর হয়নি তার জন্য। পূর্বের ন্যায় একই কায়দায় আবারো নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এভাবে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের একের পর এক জনবিরোধী কর্মকান্ডের ফলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শওকত আলী সহ মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের নেতাদের মনে মুসলিম লীগের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এমনি এক সময়ে পূর্ব বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ নেতা দবিরুল ইসলামের পক্ষে "হেবিয়াস কর্পাস" মামলা লড়তে ঢাকায় আসেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এ সময় সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার পূর্ব থেকে ঘনিষ্ঠ মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের ব্যবস্থাপক শওকত আলীর কথা হয়। সোহরাওয়ার্দী এ সময় তাকে মুসলিম লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠনের নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে শওকত আলী কর্মি শিবিরের নেতৃবৃন্দকে নতুন দল গঠনে উদ্বুদ্ধ করেন।মাওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকা আসেন। ঢাকায় এসে তিনি আলী আমজাদ খানের বাসায় অবস্থান করেন। মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরে তার পূর্বে আসা যাওয়া না থাকলেও ইয়ার মোহাম্মদ খানের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। শওকত আলী মাওলানা ভাসানীকে আলী আমজাদ খানের বাসায় আলোচনার সময় ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ কর্মি শিবির ও মুসলিম লীগ ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের রাজনৈতিক কার্যক্রমের কথা অবহিত করেন। পরবর্তীতে মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের উদ্যোগে মুসলিম লীগের বিকল্প একটি রাজনৈতিক দল গঠনে ঐকমত্য হয়।

মুসলিম লীগ সরকার এ ধরনের উদ্যোগের বিষয়ে টের পেয়ে কর্মি শিবিরের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে শামসুল হকের টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনের ঠিক দুইদিন পূর্বে ২৪ শে এপ্রিল গ্রেফতার করে নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। অনেককে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকারের এসব অপকর্ম কোন কাজে আসে নি। দল গঠনের প্রত্যয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এক কর্মি সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সরকারি বাধার মুখে উপযুক্ত জায়গা না পাওয়া গেলে অবশেষে কাজী হুমায়ুন বশীর এবং ইয়ার মোহাম্মদ খানের ইচ্ছায় ঢাকার কে এম দাস লেনের তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রাসাদতূল্য বাসভবন ঐতিহাসিক "রোজ গার্ডেন" এ প্রায় ৩০০ কর্মির উপস্থিতিতে ২৩ শে জুন বিকেল তিনটায় উক্ত কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত আইনজীবি আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে ঐ কর্মি সম্মেলনে "পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" নামক রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে করা হয় সাধারন সম্পাদক।



ঐ সময় ভারত উপমহাদেশের সমসাময়িক কোন রাজনৈতিক সংগঠনে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদ না থাকলেও কর্মি শিবিরের তরুণ জনপ্রিয় সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমানকে যথাযথ মূল্যায়ন করার প্রত্যয়ে সংগঠনে যুগ্ম সম্পাদক পদ সৃষ্টি করে ১ নং যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। কথিত আছে, শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক করার জন্য শওকত আলি মাওলানা ভাসানিকে অনুরোধ করেছিলেন। তবে শেখ মুজিবের চেয়ে বয়সে সিনিয়র হওয়ায় খন্দকার মোসতাক আহমদ চেয়েছিলেন ১ নং যুগ্ম সম্পাদকের পদ। এ নিয়ে তিনি মাওলানা ভাসানিকে অনেক অনুনয়, বিনয় করেছিলেন বলেও কথিত আছে। তবে শেখ মুজিবের সাংগঠনিক দক্ষতার কারনেই তাকে উক্ত পদে মনোনীত করেছিলেন মাওলানা ভাসানি এবং শামসুল হক। শেখ মুজিব এ সময় কারান্তরীণ ছিলেন। নতুন এ দলটির প্রতিষ্ঠার ৫-৬ দিন পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় '৫৩ সালের যে সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ঐ কমিটিতেও আওয়ামী মুসলিম লীগে কোন যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদ ছিল না। দলের কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছিল ঢাকার ঐ সময়ের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি ইয়ার মোহাম্মদ খানকে। দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তার অনেক অবদান ছিল এবং তিনি দলকে শক্তিশালী করতে অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের অনেক নেতার ঢাকায় থাকার সকল খরচ তিনি বহন করতেন।

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম কমিটির অধিকাংশ কর্মকর্তা এবং সদস্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন মাওলানা ভাসানী যাদের কারো কারো পূর্বে কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। দল গঠন এবং পরবর্তীতে সংগঠনটির বিকাশে তাদের অনেকের কোন ভূমিকা ছিল না। পরবর্তীতে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যান, অনেকে দল থেকে পদত্যাগ করেন। এই ঘটনায় আওয়ামী মুসলিম লীগের কমিটি গঠনে মাওলানা ভাসানীর সাংগঠনিক মুন্সিয়ানা সম্পর্কে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে দল গঠন পরবর্তীতে তিনি যোগ্যতার সাথে নেতৃত্ব দেন। ২৩ শে জুনের কর্মি সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক শামসুল হক পূর্ব বাংলা ও পাকিস্তানের সকল ইউনিটের আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার প্রদানের দাবিসহ নতুন এ সংগঠনটির জন্য একটি সময়োপযোগী খসড়া ম্যানিফেস্টো প্রণয়ন করেছিলেন। যার ফলে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষ জানতে পেরেছিল। তবে তিনি বেশিদূর দলকে অগ্রসর করতে পারেন নি। কারন শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি তিনি এবং দলের সভাপতি মাওলানা ভাসানী কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি গ্রেফতার হন। টানা প্রায় ২৬ মাস জেল খাটার পর ভগ্ন শরীর নিয়ে শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেলেও শামসুল হক তখনো জেলে ছিলেন।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শেখ মুজিবের শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে প্রায় দুই আড়াই মাস টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে থেকে চিকিৎসা ও বিশ্রাম নেন। অতঃপর ১৯৫৪ সালের ৩০ মে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই দুই বছর সময় তিনি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দলের সাধারন সম্পাদক শামসুল হক এ সময় কারাভ্যন্তরে থাকায় দলের ১ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শেখ মুজিব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দল গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে এই দুই বছরই ছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিস্তারকাল। যার পুরোভাগে নেতৃত্বে ছিলেন তরুণ  সংগঠক মুজিব। '৫৩ সালের সম্মেলনের কিছুদিন পূর্বে শামসুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও সরকারের নির্যাতন এবং সুন্দরী স্ত্রীর দুই ফুটফুটে কন্যা সন্তানসহ তাকে ছেড়ে যাওয়ার মানসিক চাপে তার মস্তিষ্ক বিভ্রাট ঘটে। ফলে তিনি দল থেকে বহিস্কার হন এবং সম্মেলনে নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েন। সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগকে শুধুমাত্র মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ১৯৫৫ সালে সকল ধর্ম, বর্নের মানুষের অংশগ্রহণে একটি অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ' করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে দলের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম খান, খন্দকার মোশতাক আহমদ সহ অনেকেই মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। তবে শেষমেশ বঙ্গবন্ধুর জোরালো প্রচেষ্টার কারনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতে সংগঠনের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালে দলের সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীত্ব গ্রহণ নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অলি আহাদের নেতৃত্বে একটি অংশ দলের মধ্যে বলয় সৃষ্টির অপচেষ্টা চালান।সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু সংগঠনকে শক্তিশালী করার স্বার্থে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে দলের সাধারন সম্পাদক পদে বহাল থাকেন। কারন বঙ্গবন্ধু জানতেন এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে শক্তিশালী সংগঠনের কোন বিকল্প নেই।

পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারন সম্পাদকের পদ ধরে রাখা বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক নৈপুণ্যেরই পরিচায়ক।সেদিন বঙ্গবন্ধু ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রটি আজও পেতাম কিনা সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্তটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকবে। ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি মাওলানা ভাসানীর পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল এবং পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রেক্ষিতে মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে ভূমিকা নেন। সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দলের বেশিরভাগ নেতা মাওলানা ভাসানীর প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ কারনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ইয়ার মোহাম্মদ খান, অলি আহাদ সহ অনেক নেতা আওয়ামী লীগ থেকে ১৮ ই মার্চ পদত্যাগ করেন।

আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে মাওলানা ভাসানী 'ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি' গঠন করলেও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ভাসানী সাহেবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নি। মাওলানা ভাসানীর পদত্যাগের পরও পরবর্তীতে ৫৭ সালের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায় তাকেই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশকে। সহ-সভাপতির তিনটি পদ এবং ইয়ার মোহাম্মদ খানের সম্মানে কোষাধ্যক্ষ পদটিও ফাঁকা রাখা হয়। রাজনীতিতে এ ধরনের নজীর বিরল। ৫৭-৬৪ দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়েই চলেছে আওয়ামীলীগ। এ সময় মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে থাকলেও মূলত সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন দলের সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধু। ৬৬ তে ৬ দফা দেওয়ার পর দলের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে,৬ দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা তর্কবাগীশ ৬ দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ৬৬'র সম্মেলনে নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েন। বঙ্গবন্ধু দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারন সম্পাদক হন তাজউদ্দিন আহমদ।

সেই সম্মেলনে সমাপনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-"৬ দফার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই। রাজনীতিতেও কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই। নেতৃবৃন্দের ঐক্যেও আওয়ামীলীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নে নিবেদিতপ্রাণ কর্মিদের ঐক্যেই আওয়ামীলীগ আস্থাশীল। আওয়ামী।লীগ নেতার দল নয়, এ প্রতিষ্ঠান কর্মিদের প্রতিষ্ঠান।"
বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন-"সাঁকো দিলাম, স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য। এই আন্দোলনে কেউ যদি নাও আসে আমরা একাই রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।ভবিষ্যত ইতিহাস প্রমাণ করবে আমাদের মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।" বস্তুত ৬ দফায় ছিল বাঙালীর স্বাধীনতার বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর।
৬ দফার আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বারবার কারাবরণ করেছেন। ৬ দফা দেওয়ার পর দাবি আদায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু ৩৫ দিনে ৩২ টি জনসভা করে ৮ বার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু ৬ দফার প্রশ্নে আপোষ করেন নি। ৬ দফা আন্দোলনে আটক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সহ রাজবন্দীদের মুক্তির আন্দোলন এক পর্যায়ে ৬৯'র গণঅভ্যুত্থানে রুপ নিয়েছিল। 
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়েছিলেন এবং তুমুল আন্দোলনে স্বৈরশাসক লৌহমানব আইয়ু্ব খানের পতন হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু জানতেন- জনরায় ছাড়া, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া বাঙালীর আকাঙ্খিত স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। এ কারনেই তিনি  নির্বাচনের দাবি করেছিলেন এবং ৭০'র নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। অথচ মাওলানা ভাসানী সহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সে  নির্বাচনে অংশগ্রহণে তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রমাণ হয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৭০'র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনতার বিপুল ম্যান্ডেট বাংলার মানুষের স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন যে যৌক্তিক ছিল সেটিই বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দেয়। তবে কেন্দ্র ও প্রদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ৭ ই মার্চ রেসকোর্সের ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে উপস্থিত মিলিয়ন জনতার মনের ঘোষণার সাথে সুর মিলিয়ে কবিতার ছন্দে ঘোষণা করেন তার অমর বাণী-

"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।" পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যাতে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত না করতে পারে সেজন্য কৌশলে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে পাকিস্তানি শাসকের জন্য মানার অযোগ্য চারটি শর্তে আলোচনার দ্বার খোলা রাখেন। স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ ঘোষণা না করে বঙ্গবন্ধু একদিকে যেমন হায়েনার মত সমাবেশে তাক করে রাখা লক্ষ বুলেটকে সুপ্তাবস্থায় অঙ্কুরে বিনষ্ট করেছিলেন, তেমনি
"তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।"
ভাষণের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ প্রস্তুতির সুস্পষ্ট  দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীত্বের শপথ না নিলেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মানতে শুরু করে। রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন জনতার অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী। ২৩ শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে সূর্যোদয়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এদিন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী জোরালো হয় অসহযোগ আন্দোলন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এমন অসহযোগ আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ২৫ শে মার্চের কালরাত্রের পৈশাচিক গণহত্যার পর নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালি ফুঁসে উঠে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের কালজয়ী ভাষণের অনুপ্রেরণায়।
"প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।" বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের মাধ্যমে নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালি সেদিন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে রুপান্তরিত হয়েছিল সশস্ত্রে।

২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-

"হয়ত এটাই আমার শেষ বার্তা।
আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।"

সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার অপরাধে বন্দি করে পাকিস্তানের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৭০'র নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে  গঠিত হয় মুজিব নগর সরকার। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মুজিব নগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী চার জাতীয় নেতা। প্রায় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহিদ এবং ২ লক্ষ মা, বোনের সম্ভ্রম, কোটি কোটি মানুষের ত্যাগ এবং পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ২৮৩ দিনের নির্মম, নিষ্ঠুর মানসিক নির্যাতন আর ঘুমহীন রাতের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের অসহায় আত্মসমর্পনের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কেবল মাত্র বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নয়, '৪৮ এবং ৫২'র ভাষা আন্দোলনে ও নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশের বিজয়ের ২৩ দিন পর ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পূনর্গঠনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতাকে কারা অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে জেল থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা এবং জেলহত্যার বিচার করা যাবে না মর্মে আইন পাশ করা হয়। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকে বন্দী করে নির্মম নির্যাতন করা হয়। দেশে আইনের শাসন ভুলুন্ঠিত হয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার সব রকম প্রচেষ্টা করা হয়। মানুষের ভোটাধিকার হরণ এবং গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে চালু করা হয় কারফিউ গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগ রাজপথে রুঁখে দাঁড়ায়। ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অবৈধ সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশে ফিরে এসে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশে রুপান্তরিত করেন।

রাষ্ট্র পরিচালনায় শুধু নয়, বরং বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটের রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবিলা এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শক্ত হাতে  প্রতিহত করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। নিজ দল ও সরকারের দূর্নীতিবাজ নেতা, এমপি, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি। ১৯৮১-২০২২ দীর্ঘ ৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। বারবার তার উপর গ্রেনেড, গুলি, বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালির আকাঙ্খিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশ ও জনগণের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যখন আর্টিকেলটি লিখছি, এর ঠিক দু'দিন পরেই ২৫ জুন, স্বাধীনতার পর বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সকল অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতিকে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে তেমনিভাবে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করবে ইনশাআল্লাহ্! আজ ২৩ জুন ২০২২, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সকলকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।

আওয়ামী লীগ   বঙ্গবন্ধু   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন