ইচ্ছে
ছিল এবারকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের দিনে বিভাগ/হল /বিশ্বিদ্যালয়ে যাবো। আমাদের
কপালে সমাবর্তন জোটে নি- কারণ স্বৈরাচারী এরশাদ ছিলেন আচার্য। উনার
কাছ থেকে আমরা যেমন সনদ নিতে চাইনি, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিতে চায় নি। সেই সাহসী হিমালয়ের মতো সুউচ্চ নৈতিকতার অধিকারী শিক্ষকের অভাব আজ সমাজকে ভাবিয়ে
তুলেছে। মহামান্য
রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের সমাবর্তন
ভাষণে সেটাই ফুটে উঠেছে।
এবার সতর্ক বার্তা ছিল অজানা প্রান্তের অজানা কণ্ঠ থেকে - আগামী এক মাস যেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাই! সুতরাং,
ঘরে বসে স্মৃতি রোমন্থন করছিলামবন্ধুদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপচারিতায়। ১৯৮২
সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৯১ সালে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হওয়া পর্যন্ত আমার সময়গুলো কেটেছে কবি জসীমউদ্দীন হলে। চারতলায় আমার রুম ছিল। একান্ত আমার একটি সিট যা আমার মেধার
স্বীকৃতি। রুমমেট হিসেবে যাদের পেয়েছিলাম তাদের মধ্য থেকে করোনায় হারিয়েছি স্কুলজীবনের বন্ধু আহসানুল ইসলাম ডিককে। ডিক ফিন্যান্সের ছাত্র ছিল। খুবই পরোপকারী বন্ধু। নিজের ক্ষতি করে বন্ধুর উপকার করা ছিলো ডিকের স্বভাব। স্বৈরাচারী এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ তাকে কিছুদিনের জন্য হল ছাড়তে বাধ্য
করেছিল। বিষয় হলে সিট দখল নিয়ে নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের অন্যায়কে প্রতিবাদ করেছিল ডিক। নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের নেতারা তাদের মতো করে হল চালাতে ছাত্রদল,
ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রলীগ/সমাজকে তখন প্ৰতিপক্ষ হিসেবে নিয়ে নিপীড়ন করতো। মারধোর ছাড়া ফ্লোরে থুথু ফেলে সেটা চেটে খেতে বাধ্য করতো! সেই বীভৎস নিপীড়ণের স্বীকার ছাত্রনেতারা দেশের উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন।
আমার
আরেক রুম মেট ছিলেন স ম আলাউদ্দিন।
খুবই হাসিখুশি একজন মানুষ। ইতিহাসের এই ছাত্র সচিবালয়
ঘেরাও করতে চলে যেতেন। এরশাদবিরোধী এমন কোনো আন্দোলন নেই যে আন্দোলনে আলাউদ্দিন
ভাই থাকেননি। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান এই সেদিন সমাবর্তন
উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি
স্বীকার করলেন। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মহামান্য বেশ কিছু কথা বলেছেন যা জাতির বিবেককে
নাড়া দিয়েছে। ১৯৯০ সালের ১১ নভেম্বর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এরশাদের আদেশ অমান্য করে যে আন্দোলন শুরু
করেছিল সেকথা আমি আগের লেখায় বলেছি।
মুক্তির
সংগ্রামে, স্বাধীনতার সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন শিক্ষকরা। সেই জাতির বিবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এরশাদের জরুরি আইন অমান্য করে ৬ডিসেম্বর রাজপথে নামে এবং একযোগে সকলে পদত্যাগ করেন। গণতন্ত্রের প্রতি এই শ্রদ্ধা দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল- আজ মহামান্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আক্ষেপ করে বলছেন শিক্ষকদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার কথা।
মহামান্য বিনয়ের সঙ্গে আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে পারি কি?
আপনি কি ভেবেছেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে
কেন এমন হলো? গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র
-ছাত্রী ২০০৭ সালে কি ঝুঁকি নিয়েছিলেন,
কিভাবে তারা জেল খেটেছেন,
কিভাবে তাদেরকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেগুলোকি আমরা মনে রেখেছি?
পাঠকদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে মন জানতে চায়,আমাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রের সুফল ভোগ কারা করছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কোনায় ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ডাক্তার মিলনকে হত্যা করা হয়েছিল খুবই ঠান্ডা মাথায়।সবচে মেধাবী সেই ডাক্তাররা কি কখনো প্রথম গ্রেড পায়?
সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র
-ছাত্রী, শিক্ষক -কর্মচারী -কর্মকর্তা গুলির তান্ডবে ছিল দিশেহারা। প্রাণভয়ে সকলে ছুটেছিল।কোথা থেকে গুলি আসছিলো কেউ বুঝতে পারছিলাম না।সেদিন যারা রুখে দিয়েছিলো তারা কিভাবে অবহেলিত তা কি আমাদের অজানা
!
আমাদের সকল সুযোগ সুবিধা পান যারা তাদের সম্পর্কে আজনা-ই বললাম, কিন্তু শিক্ষকদের জীবন কিভাবে কাটছে সেটাও যেন আমরা দেখি। সমাজ
দেখেও না দেখার ভান
করে-ট্যাক্স, ভ্যাট সবই কিন্তু শিক্ষকরা দেন। আর
কারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় , বিদেশে অর্থ পাচার করে সেটাও আজ অজানা নয়। কিন্তু শিক্ষকদের কষ্টকে বিবেচনায় না রেখে রসালো ভাবে বলা হয়
"ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগ বাটোয়ারা
" করে খায় শিক্ষকরা।
সবচে মেধাবী যে ছাত্রটি শিক্ষক হয়েছেন তাকে ধুলো মাখিয়ে কাদের সন্তানেরা রাজবেশে চলে যান সমাজ কি তা জানেনা? অপেক্ষা করতে করতে যখন আর কোনো উপায় বা সম্ভাবনা দেখেন না,তখন তারা যাচ্ছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা সান্ধ্যকালীন ক্লাসে। এভাবে শিক্ষকদেরকে তাদের আদর্শর পথ থেকে নিয়ে গেলো যে বাজার অর্থনীতি তার দায় কি কেবল শিক্ষকদের?
সেটা অনুসন্ধান করা প্ৰয়োজন।
১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ডাক্তার মিলন শহীদি মৃত্যুবরণ করেন। এই
বিষয়ে এক লেখক লিখেছেন
"তার মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন দাবানলে রূপ নেয়।ডাক্তাররা শুরু করেন অবিরাম কর্মবিরতি। গণপদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। জরুরি অবস্থা জারি করে স্বৈরসরকার।কিন্তু সেই জরুরি অবস্থা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসে ছাত্রছাত্রীদের মিছিল। নয় বছরের রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে মুক্তবাতাসে নিঃশ্বাস নিতে ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে আসেন নাগরিকরা।সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ দেন আরও অনেকে। এভাবেই মিলনের মৃত্যুর ভিতর দিয়ে এরশাদের পতনের শেষ অধ্যায় রচিত হয়। ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এরশাদ
(জহিরুলহকমজুমদার,
https://bangla.bdnews24.com/opinion_bn/archives/58785)।" আজ আমাদের সবচে জরুরি কাজ কেন শহীদ ডাক্তার মিলনের সতীর্থরা মনোনয়ন পেয়ে কাদের কাছে নির্বাচনে হেরে যায় তা
অনুসন্ধান করা! পেশাজীবীরা কি এমনিতেই তাদের শপথ ভুলে সরল সঠিক পথ থেকে সরে গেছেন নাকি
নির্লিপ্ত সমাজ জনপ্রিয়তা দিয়ে তাদেরকে বিতাড়ন করেছে?
আজ আমরা সেই আগেরই মতো বড়ো বড়ো জনসভা দেখছি। সে বিষয়ে আজ
(২৪নভেম্বর ) মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন,
"রাজ পথে শক্তি দেখিয়ে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবেনা
( প্রথমআলোhttps://www.prothomalo.com/bangladesh/ixn8glxg52)।" তার বক্তব্য থেকে এ কথা বলা যায় -আমরা সঠিক পথ থেকে যোজন যোজন দূরে সরে গেছি। আমাদের এখন থামতে হবে। এবং সেই কাজটি বিশ্ববিদ্যালয় তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে জাতি আশা করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে যে বিচারহীনতার সংষ্কৃতি চালু হয়েছিল সেই গভীর নর্দমা থেকে জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাতিঘর হিসেবে কাজ করেছিল
- আজ আবার সেই মহান দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে সেই আহবান মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণে আছে।
আজ হুমকির রাজনীতিতে জনগণ ভীত! আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষক সমাজকে আলোর পথ দেখাতে হবে। শহীদ মিলনের স্মৃতিস্তম্ভে কেবল একতোড়া ফুল কিংবা একটি আলোচনা সভা নয়
- জাতীয় সমস্যার আরও গভীরে গিয়ে জাতিকে পথ দেখাতে হবে।
মহামান্য শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয়ের কথা বলেছেন যাতে আমরা জেগে উঠি-
দেশের সুনাগরিক হিসেবে যে মহান দায়িত্ব শিক্ষকরা পেয়েছেন সেটা যেন পালন করি।মহামান্য আপনার আবেদনে আমরা সাড়া দেব। তবে যুগের পর যুগ যেভাবে শিক্ষকদেরকে অবহেলা করা হয়েছে তারও অবসানে আপনার সমর্থন চাই।শিক্ষকরা যাতে সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে সেই দাবিটি কি আমি আপনার কাছে বিনীতভাবে সীমিত পরিসরে করতে পারি?
মহামান্যর আরেকটি আক্ষেপ
- শিক্ষক নিয়োগে যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ
সকল বিশ্ববিদ্যালয় মেধাকে মূল্যায়ন করে।আমার জানা মতে, আপনার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কিভাবে মেধাকে অবমূল্যায়ন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। মহামান্য আপনি জানেন কোন কোন শিক্ষক বা উপাচার্য/প্রো-উপাচার্য দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তো জনগণের নেই-
কেবল আপনার আছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপনি অবিলম্বে তাদেরকে অপসারনের ব্যবস্থা নেবেনকি?
শিক্ষকদের বিবেক জাগরণের পাশাপাশি জাতি আপনার কাছে উপাচার্য অপসারণের মতো কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে- সরকার যেভাবে বাধ্যতামূলক অবসর দিচ্ছে ঠিক একই ভাবে।দুর্নীতিবাজ উপাচার্যদের সরিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে কালিমা মুক্ত করতে আপনার কাছে আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষকদের আকুল আবেদন আদেও পৌঁছাবে কি?মহামান্য ক্ষমা করবেন; আমাদের অপারগতার জন্য- ক্ষমা করবেন আমার অবোধ প্রশ্নগুলোর জন্য-কারণ আমি তো এখনও ছাত্র -শিক্ষক হতে পারিনি!
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।