ইনসাইড থট

ফুলার থেকে সাহাবুদ্দিন, ছোটলাট থেকে রাষ্ট্রপতি!

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

"দিলখুশা" মানে "মনপ্রফল্লু"। ১৮৬৬ সাল। ঢাকার নওয়াব খাজা আবদুল গণি। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র খাজা আহসানউল্লাহ। পিতা পুত্রপ্রেমে এতটাই আবেগাপ্লুত ছিলেন যে, পুত্রের মনোরঞ্জনে একটি বাগানবাড়ি বানাতে চাইলেন। জনৈক স্মিথের কাছ থেকে কিনলেন ঢাকা শহরে ৫৪ একর ৫০ শতাংশ জমি। উর্দুভাষী নওয়াব পুত্রের মনপ্রফুল্ল রাখতে এলাকার নাম দিলেন "দিলখুশা বাগানবাড়ী"। আর সেটাই কালক্রমে হয়ে উঠলো বঙ্গভবন। "রঙমহল" বলেও এর পরিচিতি ছিল। ১৯০৬ নওয়াব সলিমুল্লাহর কাছ থেকে বার্ষিক ১১ হাজার টাকায় লীজ নিলেন ভারত ভাইসরয় বড়লাট লর্ড কার্জন। নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের শাসনকর্তার বাসভবন রূপে গড়ে তোলা হলো। নাম হলো "ছোটলাট ভবন"। ১৯৪৭ সালে "গভর্নর হাউজ"। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারী "বঙ্গভবন" নামকরণ করলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ওদিন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করেন এবং সয়ং প্রধানমন্ত্রী হলেন। "গণভবন"-কে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পরিণত করলেও অফিস হিসেবেই ব্যবহার করতেন বঙ্গবন্ধু। তা়ঁর বাসভবন ছিল বরাবর ধানমন্ডিস্থ বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়িটিই। অপরদিকে দেশের দ্বিতীয়  রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী পরিবারসহ বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন। সেই থেকে এটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন। আলংকারিক রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন হিসাবে বঙ্গভবনের যাত্রা শুরু হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুও ছিল লম্বা সময় ধরে। যখন দুই যুগেরও বেশি সময় দেশ পরিচালিত হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার অধীনে। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তিত হলে ক্ষমতা ও গুরুত্ব হারায় বঙ্গভবন। রাষ্ট্রপতি হয়ে যান নিয়মতান্ত্রিক রাষ্টৃপ্রধান মাত্র। ১৯৯১ সাল থেকে দেশ পরিচালিত হচ্ছে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে।

ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে লেফটেন্যান্ট গর্ভনর বা গর্ভনররাই ছিলেন এ দেশের ক্ষমতার প্রকৃত মালিক। সেই অর্থে ১৯০৬-২০২৩ সময়ের মধ্যে গভর্নর হাউজ বা  বঙ্গভবনই প্রায় নব্বই বছর ক্ষমতার উৎস ছিল। বিগত একশত ষোল বছরে বঙ্গভবনে যাঁরা বাসিন্দারা- তাঁরা ছিলেন বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও গোত্রের। যাদের মধ্যে অবশ্য বিস্ময়করভাবে একজনও নেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। অধিকাংশই খ্রীস্ট ধর্মালম্বী বিভিন্ন গোত্রীয় ইংরেজ। অবশিষ্টরা মুসলিম সূন্নী-ইসলাম ধর্মালম্বী। ১৯৪৭ দেশবিভাগপূর্ব বাংলা ব্রিটিশ শাসিত ভারতের সর্ববৃহত্তম প্রদেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাভাষী বাঙালী অথবা হিন্দি বা অসমীয় ভাষাভাষী কোন অবাঙালী-হিন্দু বাংলার গভর্নর বা রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। যে কারণে ঢাকার গভর্নর হাউজ তথা বঙ্গভবনের বাসিন্দা হননি কোন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বঙ্গভবনের যারা বাসিন্দা হয়েছেন, তারা কেউ ইংরেজ বিট্রনী, কেউ উর্দুভাষী পশ্চিম-পাকিস্তানী, কেউবা পূর্ব পাকিস্তানী বাংলাভাষী বাঙালী এবং স্বাধীনত্তোর যাঁরা হয়েছেন তাঁরা সকলেই বাংলাদেশী বাঙালী মুসলমান।

১৯০৫ সালে থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত  পূর্ববঙ্গ ও আসাম এবং বাংলা প্রাদেশিক সরকারের হয় লেফটেন্যান্ট গভর্নর, নয়তো পূর্ববঙ্গ- তথা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং নয়তো স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।

আজকের যে বঙ্গভবন তা রূপে-রঙে-নামে শুধু নয়, ক্ষমতার উত্থান-পতনের চরিত্রেও তার রঙ বদলেছে। রূপে ও রঙে পরিবর্ধিত হয়েছে অবকাঠামোগত স্থাপত্য। সর্বপ্রথম ১৯০৬ সালের ১৮ জানুয়ারি এই বাসভবনে বাসিন্দা হিসাবে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক সরকারের লেফটেন্যান্ট গভর্নর বামফিল্ড ফুলার সংবর্ধিত হন। সেই থেকে"দিলখুশা বাগানবাড়ি" লোকমুখে পরিচিতিলাভ করে "ছোটলাট ভবন" হিসেবে। এরপর লাটভবনের বাসিন্দা হন স্যার ল্যান্সলট হেয়ার ও চার্লস স্টুয়ার্ট বেইলি। তখন প্রবল আন্দোলন বঙ্গভঙ্গ এর বিরুদ্ধে। এই তিন শাসকের নামে ঢাকার তিনটি রোড এখনও রয়েছে। বৃটিশ পার্লামেন্ট ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করে দুই বাংলাকে আবার একীভূত করে দেয়। ফলে ঢাকা পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী রূপে যে মর্যাদা পেয়েছিল তা লুপ্ত হয়ে যায়। তবে বাংলার রাজধানী আবার কলকাতা হলেও ছোটলাট ঢাকায় এলে এখানেই থাকতেন। ১৯৪৭ সালে আবার বাংলা দ্বিখণ্ডিত হয় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গ নামে। স্বাধীন পাকিস্তানের প্রদেশ হিসেবে অঙ্গীভূত হয় পূর্ববঙ্গ। পশ্চিম বঙ্গ অন্তর্ভুক্ত হয় স্বাধীন ভারতে।

পূর্বপাকিস্তানের প্রথম গর্ভনর হয়ে আসেন স্যার ফ্রেডারিক চার্লমার বোর্ন। ছোটলাট ভবন পরিচিতি লাভ করতে থাকে গর্ভনর হাউজ রূপে। ১৯৫০ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্যার বোর্ন  দায়িত্ব পালন করেন। সেই থেকে গর্ভনর হাউজের বাসিন্দা হন বিচারপতি আবু সালেহ মোহাম্মদ আকরাম, মালিক ফিরোজ খান নুন (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী), চৌধুরী খালেকুজ্জামান, আব্দুর রহমান সিদ্দিকী (অস্থায়ী), মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা (পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি), বিচারপতি স্যার টমাস হার্বার্ট এলিস, বিচারপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন, বিচারপতি আমিরউদ্দিন, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মোহাম্মদ হামিদ আলী (অস্থায়ী), সুলতানউদ্দিন আহমদ, জাকির হোসেন, লেঃ জেনারেল আজম খান, সৈয়দ হাসিম রেজা, গোলাম ফারুক, আব্দুল মোনয়েম খান, ডঃ মীর্জা নূরুল হুদা, মেজর জেনারেল মোজাফফর উদ্দিন, ভাইস এডমিরাল এস এম আহসান, সাহেবজাদা এম ইয়াকুব খান, লেঃ জেনারেল টিক্কা খান ও ডাঃ এ এম মালিক। এ়ঁরা গভর্নর হাউজে বসেই পূর্বপাকিস্তান শাসন বা শোষণ করতেন।

১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর   গভর্নর পদটির অস্তিত্ব লুপ্ত হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের অনুগত  গভর্নর ছিলেন ডাঃ আব্দুল মোত্তালিব মালিক। তিনি গর্ভনর হাউজ থেকে পালিয়ে রেডক্রস ভুক্ত নিরাপদ জোন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং পরবর্তীতে দালাল আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথগ্রহণকারী অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর রাজধানী কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করে গভর্নর হাউজে ওঠেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হবার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হন এবং দেশে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

নতুন রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। কিন্তু তিনি নিজেকে ক্ষমতাহীন মনে করে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন স্পীকার মোহাম্মদ উল্লাহ। এই দুই রাষ্ট্রপতিই বঙ্গভবনে থেকেছেন সপরিবারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী সাংবিধানিক বিপ্লব সংঘটিত করে রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ উল্লাহ দু'জনই মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলেও বঙ্গভবন তাঁর আবাসভূমি হয়ে ওঠেনি। বরং তিনি অরক্ষিত ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কের বাসভবনেই ছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। 

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল অপরাহ্ন দেড়টায় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহাকুমার 'বৈদ্যনাথপুর" গ্রামের আম্রকুঞ্জে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ করে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি (কারাবন্দী) সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ রাষ্ট্রপতি  (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণকারী

সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত অস্থায়ী  রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালন করেন। ১৯২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী সৈয়দ নজরুল ২২ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারী পর্যন্ত বঙ্গভবনেই ছিলেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি থেকে শিল্পমন্ত্রী হন। বাকশাল হলে তিনি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯২১ সালে টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণকারী বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি করলেও তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করে পদত্যাগ করেন ১৯৭৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর। স্পীকার মোহাম্মদ উল্লাহকে তখন  রাষ্ট্রপতি করা হয়। ১৯২১ সালে নোয়াখালীতে  জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদউল্লাহর স্বাক্ষরেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী দেশে জারি করা হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্রপতি হন  ১৯১৯ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী খন্দকার মোশতাক আহমদ। সিজিএস বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন ব্যর্থসামরিক অভ্যুত্থানে ৮১ দিনের মাথায় খন্দকার মোশতাকের পতন ঘটে। এর আগেই খন্দকার মোশতাক তোপের মুখে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন খালেদ মোশাররফকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক সেনাপ্রধান হওয়া জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন গৃহবন্দী। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোশতাকের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনীরাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী, অন্যতম মন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের "চতুর্থস্তম্ভ" বলে অভিহিত এই জাতীয় চারনেতার হত্যার খবরে দৃশ্যপট পাল্টে যায় এবং নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফের পছন্দে ১৯১৬ সালে রংপুরে জন্মগ্রহণকারী দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। খন্দকার মোশতাককে করা হয় পদচ্যুত। ৭ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাস থেকে শুরু হয় আরেকটি পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান- "সিপাহী জনতা ভাই ভাই অফিসারদের রক্ত চাই" হত্যানীতির ভিত্তিতে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের গণবাহিনী এবং জাসদপন্থী কর্নেল (অবঃ) আবু তাহেরের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এ অভ্যুত্থান সংঘটিত করে। খালেদ মোশাররফকে তাঁর কয়েকজন সঙ্গীসহ হত্যা করে জেনারেল জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান জিয়াকে কাঁধে তুলে ট্যাংকবহর সহকারে রাজধানীতে মিছিল করে। তারা রাষ্ট্রপতি পদে বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমকে অধিষ্ঠিত রেখেই জেনারেল জিয়াকে দিয়ে ১২ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে জাসদীয় গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। কিন্তু ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারী বগুড়ায় জন্মনেয়া জেনারেল জিয়া অভ্যুত্থানকারীদের দাবী অগ্রাহ্য করে  উল্টো মুক্তিদাতা কর্নেল তাহেরকেই  ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেন এবং সামরিক আদালতের মাধ্যমে জাসদের প্রবক্তা সিরাজুল আলম খানসহ শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশ দেন। তন্মধ্যে জাসদ সভাপতি মেজর (অবঃ) এম এ জলিলকে যাবজ্জীবন, সাধারণ সম্পাদক আসম আব্দুর রবকে দশ বছর, গণবাহিনী প্রধান হাসানুল হক ইনুকে সাত বছর  দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এভাবেই জাসদের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারী বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি সায়েমকেও হটিয়ে প্রথমে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদটি দখল করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমকে পদচ্যুত করে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদেও আসীন হন। জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাপ্রধান তিন পদে থেকেই। সামরিক শাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীকে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জেনারেল জিয়া।

প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধু হত্যার সপ্তাহের ব্যবধানে সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহর আনুগত্য থাকা সত্ত্বেও খুনীদের পছন্দে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক জেনারেল জিয়াকে সেনাপ্রধান করেন। একই দিন ২৪ আগস্ট পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন জেনারেল ওসমানী। তিনি বঙ্গবন্ধু শাসনামলে নৌ চলাচল মন্ত্রীর পদ হারিয়ে ছিলেন এবং সংবিধান চতুর্থ সংশোধনীর প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বহুল আলোচিত ছিলেন। ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ডের খবরে কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বাধীন পদাতিক বাহিনী বঙ্গভবনে দরজা ভেঙে মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রবেশের পর রাষ্ট্রপতি মোশতাকের দিকে স্টেনগান তাক করে অকথ্য গালিগালাজ করে হত্যায় উদ্যত হলে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জেনারেল ওসমানী তাকে রক্ষা করেন এবং তার অনুরোধেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরও বঙ্গভবন থেকেই বিমানে করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন জেনারেল খালেদ মোশাররফ।

বলা বাহুল্য দ্বিধাবিভক্ত ও দিকভ্রান্ত আব্দুল মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন  আওয়ামী লীগ সেই জেনারেল ওসমানীকেই রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন দিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়ে দেয়। স্পীকার মালেক উকিল মোশতাক সরকারের প্রতি আস্থা রেখেই স্পীকারদের এক আন্তঃমহাদেশীয় সম্মেলনে যোগ দেন এবং যোগদান শেষে লন্ডনে সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রসঙ্গে তোপের মুখে পড়ে বলেন,"দেশ ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।"

বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি হয়ে

৬ নভেম্বর জাতীয় সংসদ বাতিল করেন। খালেদ মোশাররফের সামনে একটি সাংবিধানিক পদ খোলা ছিল - চাইলে তিনি স্পিকার মালেক উকিলকেই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারতেন। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলী ৩ নভেম্বর নিহত হওয়ার পর স্পীকারই ছিলেন রাষ্ট্রপতি পদের দাবিদার। প্রকৃতপক্ষে খালেদ মোশাররফ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফেরাতে চাননি। তার মা বরং জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রতিবাদে বের হওয়া মিছিলে শামিল হওয়ার খবর শুনে নিজের পতনের পদধ্বনিই শুনতে পেয়েছিলেন। 

জেনারেল জিয়া, জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধের তিন বীর উত্তমেরই লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা। তিনজনই পরিচালিত হচ্ছিলেন অবৈধ পন্থায়। জিয়া ক্ষমতার স্বাদ পেলেও ১৯৮১ সালের ৩০ মে মুক্তিযুদ্ধের আরেক বীর উত্তমের হাতেই নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন। ফিরে আসছি মূল বিষয়ে। জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি সায়েমেরই বিশেষ সহকারী বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে উপরাষ্ট্রপতি করেন। জিয়া নিহত হলে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন। জেনারেল জিয়া বঙ্গভবনকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করলেও পরিবার নিয়ে বাস করতেন ক্যান্টনমেন্টেই। ১৯০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে জন্ম নেয়া আব্দুস সাত্তার ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডঃ কামাল হোসেনকে হারিয়ে। তাঁরও সুখ সইলো না। তাঁকেও বঙ্গভবন ছাড়তে হয়। জেনারেল জিয়া কর্তৃক নিযুক্ত সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘুম হারাম করে দিয়ে বঙ্গভবনে নীরব সামরিক অভিযান চালালে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। জেনারেল এরশাদ সামরিক আইন জারি করে ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে দিলেন দূরসম্পর্কের আত্মীয় বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে। ১৯১৫ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী রাষ্ট্রপতি চৌধুরীরও বিদায় ঘটলো অসৌজন্যমূলকভাবে। বঙ্গভবন ত্যাগ করতে হলো তাঁকেও। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ নিজেই রাষ্ট্রপতির পদ দখলে নিলেন। ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী জন্মনেয়া এরশাদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও দিলেন। যে নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হয়। জেনারেল এরশাদও বঙ্গভবন ব্যবহার করলেও পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন ক্যান্টনমেন্টেই। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তা়ঁকে  পদত্যাগ করতে হয় তিনজোটের রূপকথার আলোকে। উপরাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতি এরশাদ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। তারপর এরশাদ পদত্যাগ করলে উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন  অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গভবনে থাকতেন পরিবার নিয়ে। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার পদ্ধতি নিয়ে তিনজোটের ঐতিহাসিক রূপরেখা নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বিএনপি, বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তিনজোটের রূপরেখার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোটদান করে  দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করে। অবসান ঘটে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৯১ সালের ৮ অক্টোবর সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি হন স্পীকার আব্দুর রহমান বিশ্বাস। ১৯২৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম আব্দুর রহমান বিশ্বাস প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করা দেশের রাষ্ট্রপতি। তবে ক্ষমতাসীন বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিল পাস করে আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নিতে হয় ক্ষমতাসীন বিএনপিকে। প্রতিরক্ষা এসময় রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রী) হন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ওই সময় সম্ভাব্য একটি সামরিক অভ্যুত্থান রাষ্ট্রপতি রহমান বিশ্বাস নস্যাৎ করে দেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমসহ কয়েকজন জিওসিকে জেনারেলকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে। প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের অধীনে অনুষ্ঠিত  ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করেন।  ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণকারী  বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তিনি সপরিবারে বঙ্গভবনেই থাকতেন। ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রয়ারি জন্মনেয়া সাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুরত্বের সৃষ্টি হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ "সালসা" নির্বাচন বলে অভিহিত করে। সা- মানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, ল-মানে প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান এবং সা- মানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ সাঈদ। বিএনপি-জামাত টু থার্ট মেজররিটি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি হন অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে কয়েকটি নীতিগত প্রশ্নে বিএনপির মতদ্বৈততার সৃষ্টি হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির মৃত্যুবার্ষিকীর  বানীতে জিয়াউর রহমানকে "স্বাধীনতার ঘোষক" না বলা, জিয়ার মাজার জিয়াররত করতে না যাওয়া  ইত্যাদি এ দ্বন্দ্বের কারণ। শেষ পর্যন্ত যে সংসদ কর্তৃক তিনি নির্বাচিত হন সেই সংসদের সরকারি দলই অভিশংসনের হুমকিপ্রদান করে এবং বিএনপি সংসদীয় দলের সভায় তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০২০ সালের ৬ জুন রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী এরপর বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। ফলে অস্থায়ী বা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন স্পীকার

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি তিনমাস দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গভবনে থাকেননি। বেইলীরোডে স্পিকারের বাসভবনেই থাকতেন।

২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি হন ডঃ ইয়াজউদ্দীন আহমেদকে।

১৯৩১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী মুন্সিগঞ্জে জন্মনেয়া ইয়াজউদ্দিন মহাবিতর্কের অবতারণা করেন। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদগ্রহণে বিচারপতি কেম হাসান অস্বীকৃতি জানালে ডঃ ইয়াজউদ্দিন নিজেই প্রধান উপদেষ্টা পদ গ্রহণ করেন। ২০০৬ সালের ২২ জুলাই একতরফা সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও মতলব আঁটলে মহাজোট তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী মানে ওয়ান ইলেভেন সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি ডঃ ইয়াজউদ্দিনকে বাধ্য করা হয় প্রধান উপদেষ্টা পদ ছাড়তে। সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে প্রধান উপদেষ্টা হন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমেদ। নির্বাচনও বাতিল করা হয়। নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। হঠাৎ করেই সামনে নিয়ে আসা হয় "টু মাইনাস থিউরি।" অর্থাৎ শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। পরে বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নেয়। খেলার মাঠের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের। সঙ্গে আস্থার সংকটে পড়ে সেনাবাহিনী প্রধান মইন ইউ আহমেদ ও  সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন সরকারের। শুরু হয় দুই নেত্রীর পৃথক  মুক্তির আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ একাই টুথার্ট মেজররিটি ছাড়িয়ে যায়।

বিএনপি পায় মোটে ২৯টি আসন।

 ইতিমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ও বাতিল ঘোষিত হয়েছিল, তার আলোকে সংসদে সংবিধান সংশোধন বিলও পাস হয়ে যায়। সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুযায়ী বাহাত্তরের মূলনীতিও পুনঃস্থাপিত হয় সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে দলের প্রবীন নেতা জিল্লুর রহমানকে। ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী জিল্লুর রহমান ২০১৩ সালের ২০ মার্চ লন্ডন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনিও বঙ্গভবনে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্পীকার অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জে  জন্ননেয়া আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি দুই মেয়াদই বঙ্গভবনের বাসিন্দা। তাঁর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নতুন রাষ্ট্রপতি  নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ  সাহাবুদ্দিন। তিনি আগামী ২৪ এপ্রিল তার শপথ নিবেন। ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণকারী সাহাবুদ্দিন দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন হিসাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হোক, আর নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের  আলংকারিক শোভাবর্ধনকারী হোক, বঙ্গভবন আমাদপর অনুভূতির স্থল। যার আষ্টেপৃষ্ঠে লেপ্টে আছে উত্থানপতনের স্মৃতিচিহ্ন আর  বঙ্গভবনের প্রাচীন ইতিহাস।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

জন্মদিন সজীব ওয়াজেদ জয় : বাংলাদেশের সমান বয়সী

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৭ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

‘‘এরকম শান্তিপূর্ণ একটি আন্দোলন কীভাবে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, সহিংসতা এবং লুটপাটের আন্দোলনে পরিণত হল? কারণ যথারীতি বিএনপি ও জামায়াত জোট তাদের নিজস্ব একটি সহিংস আন্দোলন চালানোর জন্য মূলত একটি অরাজনৈতিক ও অহিংস আন্দোলনকে ব্যবহার করেছে। স্বার্থান্বেষী মহলের সম্পৃক্ততা উপলব্ধি করে, প্রতিবাদকারীরা নিজেরাই সহিংসতায় লিপ্ত থাকার কথা অস্বীকার করে বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যে, এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে একটি তৃতীয় পক্ষ জড়িত রয়েছে, যার সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের কোনও সম্পর্ক নেই।... 

দেশের শিক্ষার্থীরা মোটেও সন্ত্রাসী নয়। বিএনপি-জামায়াত চক্র তাদের বাংলাদেশ ভাঙার দলীয় এজেন্ডার আড়ালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে।’’

কোটা দাবি নিয়ে ঘটে যাওয়া নাশকতা ও সহিংসতা সম্পর্কে ২৫ জুলাই(২০২৪) প্রকাশিত সজীব ওয়াজেদ জয়ের মন্তব্যের সূত্র ধরে তাঁর জন্মদিন নিয়ে কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা করা হলো।  

২৭ জুলাই আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৪ তম জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের যে কোনো ঘটনায় সামনে এসেছেন, দিক-নির্দেশনামূলক কথা বলেছেন- দেশকে নিয়ে তাঁর অনুভূতি প্রকাশের ভাষাও অনন্য।তিনি বাংলাদেশের সমান বয়সী। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এবং সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।এদেশের অফিস-আদালত থেকে শুরু করে টেন্ডার কিংবা ব্যাংকের লেনদেনের যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে সেই ডিজিটালাইজেশনের নেপথ্যে তাঁর অবদান রয়েছে।এজন্য কোভিড-১৯ এর প্রভাবে মহামারি লকডাউনে যখন বিশ্বজুড়ে অনলাইন যোগাযোগ একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছিল তখন এদেশের কৃতি সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে বেশি করে মনে পড়েছে।ব্যাধির সংক্রমণ রোধে গৃহবন্দি থেকে অনলাইনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং-এ বেতন ও সহায়তা পাওয়ার দৃষ্টান্ত আমরা তখন ভালভাবে আত্মস্থ করে নিয়েছিলাম।কৃষিভিত্তিক সমাজ ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে পরিণত হয়েছে।কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিক-নির্দেশনায় কাজ করে প্রযুক্তির প্রসার ঘটেছে এদেশে। ফলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে।এজন্যই তাঁকে আমরা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশেরও অন্যতম কাণ্ডারী তিনি। 

জয় ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারে বিএসসি ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ জন তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক  উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তিনি অনেক আগে থেকেই রাজনীতিসচেতন ২০০৮ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনাকে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়ে থাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ হাসিনা আর তার সফল রূপকার হলেন সজীব ওয়াজেদ জয় 

জয়ের ভেতর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো প্রচণ্ডতা রয়েছে পরিশ্রমী তারুণ্যের প্রাণময়তা এজন্য আমেরিকা থেকে তাঁর ফিরে আসা, রাজনীতিতে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শুভ সূচনা ছিল দেশের মধ্যে যারা একসময় দুর্নীতি নাশকতার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের মসনদ কেঁপে উঠেছিল তাঁর দেশকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে তিনি মূলত বঙ্গবন্ধুর মতোই মানুষকে আশাবাদী করে জাগিয়ে তোলার জন্য কথা বলেন কাজ করেন একসময় তাঁর মতো বয়সে বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে জাগিয়েছিলেন; জয়ও তেমনি সরকারের সঙ্গে থেকে দেশের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান করে আওয়ামী লীগকেও গড়ে তুলতে চান ভাষণ দেবার সময় তাঁর ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতোই সম্মোহনী চেতনা স্ফুরিত হয় তিনি ২০০৯ সাল থেকে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা পেশাগত অভিজ্ঞতা দিয়ে এদেশের আইসিটি সেক্টরকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন তরুণদের উজ্জীবিত করছেন মৌলিক গবেষণায় বিএনপি-জামায়াতের গাত্রদাহের কারণ এজন্য যে জয় উচ্চশিক্ষিত এবং যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার পুরোভাগে তিনি আছেন শেখ হাসিনা যেমন নির্লোভ, মানুষকে ভালোবাসেন নিজের অন্তর থেকে, জয়ও তেমনিভাবে এগিয়ে চলেছেন বিরুদ্ধ মানুষের মন জয় করতে হয়েছে তাকে এজন্য তার সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা কাজ করেছেন সাধারণ মানুষকে শেখ হাসিনা সরকারের কর্মসূচি, সাফল্য বর্ণনা করতে হয়েছে ডিজিটালকরণের জন্য। অনেকে ভাবতে পারেন তিনি আমেরিকান সিটিজেন এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন যেহেতু জয়ের মা নিজে এই মাটি, মানুষের নিকটজন সেহেতু তিনিও তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন 

সজীব ওয়াজেদ জয় ভিশনারি লিডার তিনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে ২০০৯ সালে দেখতে পেয়েছিলেন বলেই আজ দেশে ১০ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন শিক্ষাখাতে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বেড়েছে বিশেষত করোনা মহামারিতে সকল প্রতিষ্ঠান এখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল পাঠসূচিতে যেমন শিশুরা আইসিটি অধ্যয়ন করছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার এমনকি দেশের বিপিও খাতে বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করা হচ্ছে; ৫০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ এই মুহূর্তে আইসিটি সেক্টরে চাকরি করছেন ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ মানুষের কাজ করার সুযোগ হবে এই খাতে আর এসবই সম্ভব হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে গেছে তেমনি তার পুত্রের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে এদেশ প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে

অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জয় বলেছেন, ভবিষ্যতের নেতা এদেশের তরুণরাই উল্লেখ্য, ঢাকার সাভারে শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তারুণ্যনির্ভর ৩০টি সংগঠনের হাতেজয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডতুলে দেওয়ার সময় তাদের এই অভিধা দেন তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে নিজেদের উদ্যোগে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসা তরুণ-তরুণীদের বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতা অভিহিত করার কারণ তার জনসম্পৃক্ততা।নিজে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে আর সেই কাজে তরুণ প্রজন্ম তাঁর অনিবার্য লক্ষ্য এর আগে তিনি দেশের ভেতর বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা, তরুণ জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক অর্জনের গল্প শুনিয়েছেন বিশ্বের মানুষকে তাঁর মতে, ‘আমাদের দেশের তরুণরা এখন দেশের জন্য কাজ করতে যেভাবে এগিয়ে এসেছে, আগে সেটা দেখা যেত না দেশের সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারব কি না, দেশকে এগিয়ে নিতে পারব কি না, সেই বিশ্বাস আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম কারণ স্বাধীনতার চেতনা আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’ কিন্তু ‘এখন আমাদেরকে শাইনিং স্টার বলা হচ্ছেনেক্সট ইলেভেন’-অর্থনীতির দেশের একটি আমরা।’ সজীব ওয়াজেদ জয় সেদিন যে কথা বলেছেন, তা একজন তরুণ নেতার আদর্শ বিশ্বাসের কথা তিনি নিজে নতুন প্রজন্মের নেতা, তাই যুবসমাজের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন  

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত অপর এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, ‘সৎ সাহস নিজের আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো কঠিন কাজ করা যায় আমরা কারও চেয়ে কম নই বিদেশের সঙ্গে আমরা সমানে সমান সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে বিদেশী সাটিফিকেট প্রয়োজন নেই।’ অর্থাৎ এই তরুণ নেতৃত্বের কাছে নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু তৈরির ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে সততা এবং আদর্শের কোনো বিকল্প নেই সৎ না থাকলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না আর মানুষের ভালোবাসা ছাড়া ক্ষমতায় আসা যায় না তিনি বিশ্বাস করেন, নিজের দেশকে টেনে উঠাতে দেশপ্রেম দেখাতে হবে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে টেনে তোলার মধ্যেই দেশপ্রেম নিহিত রয়েছে

প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা বহমান তা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় এই তৃতীয় প্রজন্মের নতুন নেতৃত্বের প্রতি আমাদের সকল আকর্ষণ এখন কেন্দ্রীভূত বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে নেতৃত্বের বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল উপমহাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য একটি ব্যাপক বিস্তারি প্রসঙ্গ ভারতের দিকে তাকালে বর্তমান রাজনীতির পারিবারিক ধারা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় জওহরলাল নেহেরু গান্ধীর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর সময় মোরালি দেশাইয়ের মতো অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও ইন্দিরা গান্ধীই হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, তাঁর কন্যা বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা যেমন সত্য তেমনি শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় লক্ষণীয় ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন পঁচাত্তর পরবর্তী তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ বড় বড় নেতারা দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনাকেই জনগণের সামনে দাঁড় করান  

খালেদা জিয়া যেভাবে তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে এনে দলের পদে সমাসীন করেছিলেন জয়ের জীবনে তেমনটি ঘটেনি বরং জয় রাজনীতিতে নামতে পারেন ধরে নিয়ে ২০০৪ সালে ‘হাওয়া ভবনে’র মালিক তারেক জিয়াকে বিএনপি লুফে নিয়েছিল 

জয় বাংলাদেশের মৃত্তিকার সন্তান তাঁর রাজনীতিতে আসাটা আকস্মিক হলেও দলকে সংগঠিত করা, দলের কোন্দল মেটানো, দলকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রধান কাজ হিসেবে গণ্য হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনের আগে মহাজোট সরকারের সময় পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের সামনে নতুন নেতৃত্বের দরকার ছিল তাই তাঁর মতো কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে সামনে আনা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক বলে গণ্য হয়েছিল ২০১০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের নিয়মিত সদস্য পদ গ্রহণ করেন

ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয় সবসময়ই বলেছেন, উন্নয়নের অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করতে হলে আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে হবে তাঁর মতে, নতুন আধুনিক একটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে বাংলাদেশের জন্য এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় মহামারি মোকাবেলায় প্রযুক্তি আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করে রেখেছে এজন্য বিরোধী দলের অপপ্রচার মোকাবেলা সরকারের সফলতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে ভিন্ন রকম কৌশল নিতে হবে কারণ জয়ের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে 

প্রকৃতপক্ষে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের উন্নয়নে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি আমাদের তরুণদের সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যাশায় উজ্জীবিত করেছে একাধিক বেসরকারি টেলিভিশন- প্রচারিত অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি নানা প্রসঙ্গে গঠনমূলক রাজনৈতিক কথা বলেছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘লেটস টক’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অনেকটা এগিয়েছে তিনি কেবল প্রযুক্তি নিয়ে ভাবেন না, তিনি মানুষকে মূল্য দেন মানুষের দুঃখে সমব্যথী হন আসলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পিতা-মাতা বিজ্ঞানী . ওয়াজেদ শেখ হাসিনার মতো আন্তরিক হৃদ্যতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অনেক ভাবেই- যুবলীগ, ছাত্রলীগ কিংবা বিশেষ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত বক্তৃতা দিয়ে দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দূর করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যেমন সক্রিয় উদ্যোগ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তেমনি জয়ের পরামর্শে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে ৯৪টি যন্ত্রাংশের ওপর থেকে উচ্চ আমদানি শুল্ক উঠিয়ে শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে জয় জানেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে সকল দুর্যোগ মোকাবেলা করে

জয়ের মতো নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আমাদের রাজনীতিতে যেমন ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়েছে তেমনি উন্নয়নে সার্বিক অগ্রগতি সম্পন্ন করেছে রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের পদচারণা আমাদের এগিয়ে চলার পথে বাড়তি প্রাপ্তি নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে প্রতিবছর ভোটার তালিকায় তরুণ ভোটার আসে প্রায় ২৩ লাখ কোটি ২১ লাখ ভোটারের মধ্যে কোটি ভোটারের বয়স ৪০ বছরের নিচে মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ নতুন প্রজন্মের তাদের জন্য নতুন প্রজন্মের নেতা অনিবার্য সজীব ওয়াজেদ জয় এসব নতুন ভোটারদের প্রত্যাশার ভাষাকে ঠিকই বুঝতে পারেন ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার কৌশলও তিনি জানেন কারণ আওয়ামী লীগ এদেশের যে উন্নয়ন করেছে বিগত জামায়াত-বিএনপি চারদলীয় জোট সরকার তা করেনিঅথচ বিএনপির মিথ্যা প্রচার প্রচারণা এখনও মোকাবেলা করতে হচ্ছে

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় রাজনীতিতে সক্রিয় অন্তরালে থেকেই নিজের প্রচারে বিশ্বাসী নন তিনি তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছেন কিন্তু প্রকাশ্যে বিচরণ তার কম বঙ্গবন্ধুর নাতি এবং শেখ হাসিনা . ওয়াজেদ মিয়ার পুত্র হিসেবে পারিবারিক সূত্র গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তিনি যে মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করতে এসেছেন তা বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে এদেশের মানুষের প্রকৃত দেশপ্রেমিকের পক্ষে দেশ জাতির কল্যাণ করাই স্বাভাবিক 

আওয়ামী লীগের যে গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে তা অন্য কোনো দলের নেই সজীব ওয়াজেদ জয় সেই গৌরবকে কাজে লাগিয়ে ২০০৯ সালে থেকে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন মধ্যবিত্তের সন্তান বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন পাকিস্তানি শাসকদের ফাঁসির ভয়কে উপেক্ষা করেছেন জেল খেটেছেন মাসের পর মাস সেই ত্যাগী নেতার নাতি হিসেবে জয়কে মনে রেখেছেন- এই সব মূঢ়, মূক মানুষের মুখে দিতে হবে ভাষা তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় নিয়েই জাতির পিতা নিজের সন্তানকে (শেখ মনি, শেখ কামাল) রাজনীতিতে এনেছিলেন আর তা ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য পারিবারিক পর্যায়ে তিনি যা করেছিলেন তা ছিল দেশের স্বার্থে, মানুষের মঙ্গল চিন্তা করে অনেকেই তাঁর বাকশাল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধাচারণ করেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দেশের জন্য মমত্ববোধকে ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না   

আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের কাজে এগিয়ে এসেছেন মানুষের আকর্ষণে মাতার সান্নিধ্য তাঁকে রাজনীতির শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী সমর্থক সকলেই খুশী হবেন কারণ তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন আওয়ামী লীগকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নেতৃত্ব উন্নয়নকে একইসঙ্গে আলিঙ্গন করতে হবে জয় হঠাৎ আবির্ভূত নেতা নন তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তাঁর আছে দৃঢ় চেতা অভিভাবক যিনি সকল বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারঙ্গম কখনও পথ চলতে ছিটকে পড়লে শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়ে ঠিক পথে আনতে পারবেন তাঁকে কারণ জয় একান্তই মাতৃ অনুগত সকলেই জানেন, জয় আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সদস্য এর বাইরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এই অর্থে তিনি দলের নীতি-নির্ধারক না হলেও বিভিন্নভাবে দল দলের নেতৃত্বকে অনেকরকম সহযোগিতা দিচ্ছেন এখন এগিয়ে যাচ্ছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে স্বাধীনতার চেতনায় মথিত সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবন তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জনের পরও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হওয়ার জন্য জাতির পিতাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত দিকে হাঁটা দায়ী তাঁর বক্তব্য হলো- ‘আমরা লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি বছরেই নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছিলাম সেই সময়ে আসে ৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এরপর স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি ক্ষমতায় আসে।’ সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণদের মূল্যবান কথা বলেছেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা কোনোদিন ভুলবেন না ভুলতে দেবেন না আর কাউকে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেবেন না এমন মিথ্যা প্রচারের সুযোগ দেবেন না, যাতে জাতি শহীদদের ভুলে যায়।’ তাঁর মতে, ‘যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা বাংলাদেশের উপর কী বিশ্বাস রাখবে?’ 

শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনায় সজীব ওয়াজেদ জয় যেমন তৎপর তেমনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে নিজের নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা নিয়ে জনসমক্ষে হাজির হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নতুন কাণ্ডারী সজীব ওয়াজেদ জয়কে জন্মদিনে অভিবাদন। মূলত বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে- একথা সজীব ওয়াজেদ জয় বারবার বলে এসেছেন এজন্য দরকার যুবসমাজের পরিশ্রম তরুণ নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে হবে আমাদের শেখ হাসিনা সরকার এক নাগাড়ে ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ উন্নীত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনীতি অভূতপূর্বভাবে এগিয়েছে বিশ্বে আমাদের অর্থনীতি এখন ভাল অবস্থানে কারণ তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করছে আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে (কোটা দাবিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত) সর্ব প্রকার ষড়যন্ত্র অপপ্রচার দূর করার জন্য সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনকারণ দেশপ্রেমিক জয়ের রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা।তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস। 

লেখক : . মিল্টন বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু গবেষক,  বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)


ইনসাইড থট   সাদা কালো   জন্মদিন   সজীব ওয়াজেদ জয়  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আরও একটি ১৫ আগস্টের ড্রেস রিহার্সাল?

প্রকাশ: ০৩:০৭ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

রাজধানী ঢাকা ও আশে পাশের এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাস ও তাণ্ডবের সাথে চলমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কি কোন সম্পর্ক ছিল? পুরো বিষয়টা সুষ্ঠুভাবে বিচার বিশ্লেষণ করলে ছিল তা মনে করার কোন কারণ নেই। তারা সরকারি চাকুরিতে কোটা প্রথা বিলুপ্তি চেয়ে শুধু মেধার ভিত্তিতে চাকুরি প্রাপ্তির যোগ্যতা হওয়া উচিত বলে যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা যে যৌক্তিক সেই ব্যাপারে কেউ কখনো দ্বিমত করেনি যদিও বিশ্বের সকল দেশে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থার প্রচলন আছে। ইউরোপের সকল দেশে সরকারি ও বেসরকারি সকল চাকুরিতে চল্লিশ শতাংশ চাকুরি মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা আট আর জাপানে পাঁচ। এই গুলো সব উন্নত বিশ্বের দেশ বা অঞ্চল। ভারতের কথা নাই বা বললাম।

বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সরকারি প্রজ্ঞাপনের দ্বারা ঘোষিত হয়। এরপর তা বাহাত্তর সালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। যে কোন দেশেই এই কোটা ব্যবস্থা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সংস্কার করা হয়। বাংলাদেশে তেমনটি না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পঁচাত্তর সালের পর বস্তুত পক্ষে পুরো কোটা ব্যবস্থাই অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল। বিশেষ টার্গেট ছিল ত্রিশ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা। ঐ সময় মুক্তিযোদ্ধা মানে একজন অপরাধী কারণ তারা ক্ষমতাসীনদের সাধের পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলা নামের একটা স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করেছিলেন। দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সূত্রে পান জিয়া এরশাদ জামানার ও তাদের ভাবধারার একটি সর্বনাশা আমলাতন্ত্র যাদের অধিকাংশ সদস্যই জন্মগত ভাবেই ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী। শেখ হাসিনার সেই আমলে ঘর গোছাতেই তিনি পুরো সময় ব্যয় করেন। তার সেই মেয়াদের প্রথম দেড় বছর বিএনপি-জামায়াত জোট তাঁকেতো কাজই করতে দেয় নি। আজ এই অজুহাতে শ্রমিক ধর্মঘটতো কাল আরেক অজুহাতে হরতাল বাব চট্টগ্রাম বন্দর অচল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠনের আগে কেউ এই কোটা নিয়ে কোন প্রশ্নই তুলেনি বা আন্দোলনের কথাও ভাবেনি। কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রথম রাস্তায় নামে ২০১৮ সালে। সেই সময় এই আন্দোলন কিছু দিনের মধ্যে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে রূপ নেয়। তবে সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অনেকটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও তার সংলগ্ন এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। এক সময় আক্রান্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তার পরিবার। উপাচার্যের বাসভবনে চালানো হয় এক ভয়াবহ তাণ্ডব যদিও কোটা রাখা না রাখার সাথে উপাচার্যের কোন সম্পর্ক ছিল না। ঢাকার জনজীবন হয়ে যায় বিপর্যস্ত। তখন প্রধানমন্ত্রী এক নির্বাহী আদেশ বলে পুরো কোটা ব্যবস্থাকেই বাতিল করে দেন। বলতে হয় বাতিল করাটা পদ্ধতিগতভাবে হয়তো ত্রুটিযুক্ত ছিল। তার পাশে থাকা আমলাকূল এই সম্পর্কে তাঁকে সঠিক পরামর্শ হয়তো দিতে পারতেন। দেননি কারণ এই দেশে এক শ্রেণীর আমলা আছেন যারা সরকারকে সময় মতো অনেক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হন বা দেন না। বলা হয় সব সময় আমলার পরবর্তী সরকারের জন্য কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ২০১৮ সালের থেকে সরকারি চাকুরিতে আর কোন কোটা ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না। সব সরকারি চাকুরিই হয়েছে মেধার ভিত্তিতে।

২০০৯ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট নানাভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছে। একাধিক পশ্চিমা শক্তি তাদের সরাসরি সহায়তা করেছে। এই কাজে তাদের পক্ষে কাজ করতে এই দেশে তারা সৃষ্টি করেছে নানা ছদ্মবেশে বেশ কয়েকটি সংগঠন যে গুলো সুশীল সমাজের সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালের মে মাসে মাঠে নেমেছিল হেফাজতে ইসলাম নামের একটি মাদ্রাসা ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন। তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট আর এক শ্রেণীর মিডিয়া। সেই সময় শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও সাহসের কারণে সরকার উৎখাতের তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি প্রধান বেগম জিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শুরু হয় দেশে আর এক ভয়াবহ অগ্নি সন্ত্রাস। প্রায় তিনশত নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয় পেট্রোল বোমা বা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। বাধ যায়নি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও। কয়েকশত কোটি টাকার সরকারি ও বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়। যখনই দেশে একটা নির্বাচন আসে অথবা দেশে অর্থনীতি সচল থাকে তখনই বর্তমান সরকার বিরোধী জোট এসব কর্মকাণ্ড শুরু করে। তাদের মদদ যোগাতে এগিয়ে আসে তাদের অর্থে লালিত এই দেশে ক্রিয়াশীল বর্ণিত সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো ও এক শ্রেণীর শিক্ষিত নাগরিক সমাজ। এবারের তাণ্ডবও পূর্বেও সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের এক ধরণের ধারাবাহিকতা। পার্থক্য শুধু এবার তা ছিল অনেকটা সুপরিকল্পিত।

সরকারি চাকুরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেশের উচ্চ আদালতে ২০২১ সালে একটি রিট মামলা দায়ের করলে আদালত ২০১৮ সালের নির্বাহী আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে সরকার তড়িৎ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিষয়টা পূনঃবিবেচনরার জন্য আপিল করে। কিন্তু এরই মধ্যে আবার একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সকল বিবেকবান মানুষ তাদের বুঝানোর চেষ্টা করে কোন মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সরকার এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে মহলটি অগণতান্ত্রিক উপায়ে বর্তমান সরকারের পতন চায় তাদের পোষা সুশীল সমাজের কিছু সদস্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা ও শক্তি নিয়োগ করে। এরই মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৭ আগস্ট মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করে। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার জন্য এই সুশীলরা বলেন এটি আদালতের কোন বিষয় নয়। সরকার প্রধান চাইলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে পারেন। এমন কপট ও স্বার্থান্বেষী শিক্ষিত নাগরিক সমাজের সদস্য এর আগে এই দেশে কখনো দেখা যায় নি। শেষ পর্যন্ত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সকল প্রথা ভেঙ্গে টিভিতে এক ভাষণ দিয়ে ছাত্রদের আশ্বস্ত করেন তিনিও তাদের দাবির সাথে একমত। দেশের প্রধান বিচারপতিও শিক্ষার্থীদের দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মামলা নিষ্পত্তির তারিখ ১৭ দিন এগিয়ে এনে ২১ জুলাই নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি। এটিও একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। কিন্তু মূল ষড়যন্ত্রকারীরা বসে থাকবে কেন? তাদের উদ্দেশ্যতো এই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে দেশে এক চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে উৎখাত করা আর সুযোগ পেলে দেশে আর একটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করা। এর আগেতো এদের শ্লোগানই ছিল ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আর একবার’।

যেহেতু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোন একক নেতৃত্ব ছিল না তাদের আন্দোলনকে পুঁজি করে সরকার উৎখাতের সকল ব্যবস্থা মোটামুটি করেই ফেলেছিল সরকার বিরোধীরা। আন্দোলনকারীদের অপরিপক্ব নেতৃত্ব বুঝতেই পারেনি কখন নীরবে তাদের আন্দোলন বেহাত হয়ে গেছে। মূল নেতৃত্ব চলে গেছে লন্ডনে। যেই আন্দোলন শুরু হতেই সুশৃঙ্খল ছিল সেই আন্দোলন হঠাৎ করে এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করলো। এই তাণ্ডবে শরিক করার জন্য নরসিংদী কারাগার ভেঙ্গে সকল জঙ্গিদের মুক্ত করে দিল যাদের মধ্যে ছিল নয়জন জঙ্গি। কারাগার থেকে লুট হলো ৮৫টি অস্ত্র আর হাজারের উপর গুলি। প্রাপ্ত তথ্য হতে দেখা যায় পুরো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ চলে গেল একাত্তরের পরাজিত শক্তির কাছে আর তাদের সকল প্রকারের নির্দেশনা আসছে লন্ডন থেকে।

২১ জুলাই দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাদের চূড়ান্ত রায়ে বস্তুত পক্ষে শিক্ষার্থীদের সব দাবিই যথার্থ বলে রায় দিয়েছেন। এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা ঢাকার সকল প্রবেশমুখ তাদের দখলে নিয়েছে। শুরু করে দেয় তাদের তাণ্ডব। রায় আসার পূর্বেই ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু ঢাকাতেই রাষ্ট্রের ৭৯টি স্থাপনা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছে। তাদের মূল টার্গেট ছিল বর্তমান সরকারের আমলে দেশে যত উন্নয়নমূলক স্থাপনা হয়েছে তাকে ধ্বংস করা। আর দু’একদিন সময় পেলে তারা হয়তো শাহ আমানত বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ধ্বংস করতো আর বিশ্বনন্দিত পদ্মা সেতুর ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। মারাত্মক ক্ষতি করতে পারতো কর্ণফুলি টানেল। তার আগেই ১৯ জুলাই দেশে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সরকার রাজধানী সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে তা বলবৎ করতে সেনাবাহিনী নামালো। এই যে এত ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ঢাকা ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে সন্ত্রাসীরা বোমা বিধ্বস্ত সিরীয় বা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মতো করে দিল তা আরো ভয়াবহ হতো সেনাবাহিনী যদি সময়মতো তাদের উপর ন্যস্ত জাতীয় দায়িত্ব পালন না করতো।

তাণ্ডবের ভয়াবহতা দেখে এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যারা এই সব কর্মকাণ্ড করেছে তারা প্রত্যেকেই বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জঙ্গি। যে সব স্থাপনার উপর সন্ত্রাসীরা হামলা করে তা ধ্বংস করেছে তা পূর্বে কখনো দেখা যায় নি। এই স্থাপনাগুলোর গুরুত্ব ও খুঁটিনাটি সম্পর্কে তারা আগে হতেই ওয়াকিবহাল ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন বা ডাটা সেন্টার তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই সব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে তিনজন পুলিশ সদস্য সহ নিহত হয়েছেন প্রায় দুইশত জন যাদের মধ্যে যেমন আছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তেমন আছে সরকারি দলীয় ছাত্র লীগের কর্মীরাও। একজন পুলিশ সদস্যকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে এই সন্ত্রাসীরা যা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কল্পনাও করতে পারে না। সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকাকে শুধু সারা দেশ থেকে নয় বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া যে কারণে বিটিভিতে আর ডাটা সেন্টারে অগ্নি সংযোগ। কোন এক পর্যায়ে তারা যে গণভবনে হামলা করে আর একটি ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটাতো তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। হয়তো দখল হতো বঙ্গভবন আর সংসদ ভবন। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিবতো রুহুল কবির রিজভি স্লোগান তুলেছিলেন আন্দোলনকারীরা কারাগারে আর তারা থাকবে সংসদে।

কোটা বিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে এই দেশদ্রোহিদের কর্মকাণ্ড সরকার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। ৭৬ বছর বয়সি দেশের প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কত চড়াই উৎরাই পার হয়ে এতদূর এসেছে তা হয়তো মৌসুমি আওয়ামী লীগাররা জানে না। যে দলটি এতদিনে একটি শত বছরে পুরানো বট বৃক্ষের মতো শক্ত হওয়ার দরকার ছিল তা যে গত চার মেয়াদে টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে কত নড়বড় হয়ে গিয়েছে তা অনেকে উপলব্ধি করে না। দলটি বট বৃক্ষের বদলে বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে হয়ে গিয়েছে একটি পুরানো ঘুণে ধরা মান্দার গাছের মতো। এই যে এত এত পরজীবী আওয়ামী লীগের রাতারাতি মুজিব কোট বানিয়ে গত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হলেন এই ক্রান্তিকালে তারা কোথায় ছিল? বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্র লীগ, নেতারা চলতে গেলে সামনে পিছনে ডজন ডজন মোটর সাইকেলের এসকর্ট থাকে সেই নেতাদের ভূমিকাই বা কি? হয়তো দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের একটি প্রশ্ন সহজে পোঁছাবে না। তাদের একটাই প্রশ্ন ‘আওয়ামী লীগে কি আর একজন সৈয়দ আসরাফ জন্ম নিবে না?’ ৭৯ বছরে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক ভাবে এত ভঙ্গুর এর আগে কখনো দেখা যায় নি। বর্তমান দুর্যোগ বা ক্রান্তিকাল হয়তো এক সময় কেটে যাবে তবে বুঝতে হতে দেশের বিরুদ্ধে যারা সর্বদা ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধে লিপ্ত তারা ক্লান্তিহীন ভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে। দলকে যদি দ্রুত সংস্কার করা না যায় তা হলে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই দলটি ভেঙ্গে পরতে বেশী সময় লাগবে না। একজন শেখ হাসিনা আর কতদিকে সামাল দিবেন?


সময়-অসময়   ড্রেস রিহার্সাল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াও


Thumbnail

একটি মিথ্যা অপবাদ কেমন করে সত্য করে তোলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান ‘রাজাকার’ আন্দোলন তার স্পষ্ট প্রমাণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সেদিন কাউকে রাজাকার বলেননি, যা বলেছিলেন তার মর্মার্থ ছিল- আর সকলের সাথে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারই কোটা সুবিধা পাবে, রাজাকার পরিবার কেন পাবে সে প্রশ্ন তিনি জাতির কাছে করেছিলেন। এই বক্তব্যকে ফু্লিয়ে ফাঁপিয়ে, সত্য বিকৃত করে ঘোষণা করে দেয়া হলো, তিনি বলেছেন সবাই রাজাকার! রাজাকার হলে এই দেশে আর চাকুরি পাওয়া যাবে না। সুতরাং সব ভাঙ্গো, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের জন্ম হলো। সাথে এসে যুক্ত হলো মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত বিরোধী শক্তি, তাদের ‘নাতিপুতি’ বা বংশধরেরা আর সে ভাবধারায় বিকশিত একটি জ্ঞানপাপী সম্প্রদায়।

আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগানগুলো ছিনতাই হয়ে গেছে! আমাদের অনুপ্রেরণাগুলো ইচ্ছামতো শব্দ বসিয়ে বিকৃত করে দেয়া হয়েছে। মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে মৌলবাদী চেতনায় তথাকথিত ‘সমৃদ্ধ’ গোষ্ঠী আন্দোলন নিয়ে গান গাইছে। একাত্তর আজ আবার ভূলুণ্ঠিত। নিহত শিবির কর্মীকে করা হয়েছে জাতির সহিংসতা উস্কে দেবার ‘আইকন’! নির্দয়ভাবে চাকুরিজীবী পুলিশ কর্মীদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে, গাড়ি পোড়ানো, দালান পোড়ানো, সরকারি সম্পত্তির ক্রমাগত ধ্বংসসাধন, রাজপথে নামিয়ে দেয়া মিথ্যার আন্দোলন, এসবের অর্থ কখনোই মানুষের ক্ষোভ নয়, এ সবই প্রতিশোধের স্পৃহা কারণ এরা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল। আর সেই একাত্তর যার নেতৃত্বে হয়েছিল সেই জাতির পিতাকে অসম্মান তাদের করতেই হবে। আর তাঁর কন্যা যদি এই রাষ্ট্রের সকল মিথ্যাকে ছাপিয়ে দেশটাকে দুনিয়ায় উজ্জ্বল করে তুলে ধরেন তাহলে তাদের থাকে কী? সুতরাং তাকেও মিশিয়ে দাও।

দুর্ভাগ্য এই যে, ‘বিচিত্র’ বাংলাদেশে ইতিহাস বারবার উল্টোদিকে চালনা করা হয়েছে। আর সৌভাগ্য যে, অনেক ত্যাগের মাধ্যমে ‘এই’ বাংলাদেশ আবার সত্য প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে। এই দোলাচলে আমাদের বঙ্গ ভূ-ভাগের ইতিহাস বারবার আবর্তিত হয়, আর জন-মানুষকে তার ঐতিহাসিক মূল্য দিতে হয়।

বাংলাদেশ নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াবে। এই দেশ রাজাকারের নয়, এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ! বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলায়’ কোন রাজাকারের ঠাঁই থাকবে না। এই দেশ সকলের জন্যে নয়, এই কথা আমাদের মনে মেনে নিতেই হবে। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।


সহিংসতা   বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াও  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশে আবার শান্তি ফিরে আসবে


Thumbnail

১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। এই বক্তব্য শুনার সময় আমার ৭০’এর শেষের দিকের তৎকালীন ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথ জাতির উদ্দেশ্যে যে সমস্ত বক্তব্য দিতেন তা মনে পড়ে গেলো। রানী এলিজাবেথের বক্তব্য খুবই সংক্ষিপ্ত হতো। কিন্তু তিনি সবকিছুকে গুছিয়ে বলতেন। এর আগে সময় লক্ষ্য করেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দীর্ঘায়িত হয়। কিন্তু সেদিন খুব অল্প কথায় আসল যে বার্তা সেটি তিনি জনগণকে জানিয়ে দিলেন। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে খুব সংক্ষেপে তিনটি বিষয় তিনি স্পষ্ট করেছেন। প্রথমে তিনি এই আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেদিনই মহররম ছিলো তাই ভাষণে তিনি মহররমের কথাও বললেন। এসব বলার পর জাতির উদ্দেশ্যে তিনি যা বললেন সেটি হচ্ছে, এই আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শুধু দুঃখ জানানোর পাশাপাশি দল মত নির্বিশেষে তাদের পরিবারের যেসকল সাহায্য প্রয়োজন তা তিনি করবেন। এছাড়াও এসব হত্যার বিচারে বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। 

আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে কোন সরকার প্রধানই যখন ছাত্রদের সাথে বা অন্যকোন গন্ডগোলে কেউ বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথা নিজের থেকে বলেন নি। বরং জনগণের দাবির মুখে এটি বাস্তবায়ন করে। আর এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে। আর এতে যেই দোষী সাব্যস্ত হবে তাকেই বিচারের আওতায় আনা হবে এবং তাকে কোন ছাড়া দেয়া হবে না বলেও জানান। 

এরপর তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন, যেতেতু সাংবিধান অনুযায়ী দেশের তিনটি বিভাগ আছে। এর একটি হচ্ছে, পার্লামেন্ট, শাসন ব্যবস্থা এবং বিচার বিভাগ।  পার্লামেন্টে কোন পাশকৃত আইন নিয়ে যদি আলোচনা বা বিতর্ক থাকে তবে সে বিষয়টি বিচার বিভাগ দেখতে পারে। সুতরাং এর মনে এই দাড়াচ্ছে, বিচার বিভাগকে পাশ কাটানোর কোন সুযোগ নেয়।

কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্রটি যখন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেন তখন সরকারই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেল। পরবর্তীতে এই রায়ের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি ৭ আগস্ট দেয়া হবে জানিয়েছে। এক্ষেত্রে যারা সময় চেয়েছেন চেয়েছেন তারাই সময় চেয়েছিলেন। যার ফলে এই শুনানির তারিখ ৭ আগস্ট দেয়া হলো। নাহয় এই শুনানীটি আরও আগেই সেই কারণেই শুনানি হতে পারতো টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, এতে এমনভাবে বিচারবিভাগের সিদ্ধান্ত নিবে যাতে ছাত্ররা সন্তুষ্ট হবে। সুতরাং বক্তব্যগুলো খুবই স্পষ্ট।

কয়েকদিন আগে একটি লেখাতে লিখেছিলাম, দল এবং সরকারের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজর রাখতে হবে। এবং প্রয়োজনে এটিকে আবার পুনবিন্যাস করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি সেই পর্যায় এখন এসে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক যে এখন এতো দুর্বল হয়ে গেছে দেশে বর্তমানের ঘটনাগুলো না ঘটলে বুঝতে পারতাম না।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের অন্যান্য পেশাজীবি সংগঠনগুলোও এখন দুর্বলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। এর কারণ এই সংগঠনগুলোর ভাব এমন যে, ‘আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন’। অর্থাৎ তিনিই সবকিছু করে দেবেন। অর্থাৎ যদি মনে করা হয়, আমাদের দেশে যতো পাওয়ার জেনারেট হচ্ছে তা শেখ হাসিনাই জেনারেট করছে। এই পাওয়ার জেনারেট করতে হলে সেখানে জ্বালানী দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে এই জ্বালানী হচ্ছে কর্মীরা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ঠিক সেভাবেই আমরা নেত্রীকে যে সাহস দেবার আমাদের যে দায়িত্ব, সেই জায়গায় আমরা সবাই অকৃতকার্য হচ্ছি। 

যখন এনএসএফ ক্ষমতায় তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তখনতো আমাদের এনএসএফ এমনকি আইয়ুব খানের মতো একনায়কও আমাদের হল থেকে বের করতে পারেনি। আমরা সেখানে যুদ্ধ করে টিকে ছিলাম। আর গতকাল দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকদের হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। 

এই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেখা গেছে, মোটামুটি প্রায় ১৮ ঘণ্টা এ দেশটি তারেক জিয়া নিয়েই গেছিলো বলা চলে। কেননা তারেক জিয়া লন্ডনে বসে, ফোন করে বক্তৃতা দিয়ে যদি এতো জমায়াত বিএনপি একসাথে নামাতে পারে তাহলে তাকে অবশ্যই শক্তিশালী বলতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যারা বেনিফিমিয়ারী তাদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।  

বাংলাদেশে এখন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যার অপর নাম বাংলাদেশ সেজন্য টিকে আছে। এজন্যই শেখ হাসিনাকে আমাদের অবশ্যই সমর্থন দিতে হবে নাহলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে আবার এগোনোর যে ষড়যন্ত্র চলছে তাতে ষড়যন্ত্রকারীরাই সফলকাম হবে। 

বাংলাদেশের জনগণ এখন পর্যন্ত দার্শনিক শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে। কারণ তিনি ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর থেকে যে কথা বলেছেন তার প্রত্যেকটি কথা রেখেছেন। একটি ব্যতিক্রমও কেউ কোথাও খুজে পাবেনা। যে নেত্রী সবসময় সত্যের উপর প্রতিষ্ঠা করে এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশ চালান তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করার তো কোন কারণ থাকতে পারে না। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি দেশে আবার শান্তি ফিরে আসবে। আর তা নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আসবে। অতীতে তিনি যেমন সফল হয়েছেন আশা করি এবারও তিনি সফল হবেন।


দিনান্তের কথা   শান্তি   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

আমাদের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেনকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। কৃতিত্বের প্রমাণিত রেকর্ড সহ তিনি একজন সবচেয়ে সৎ এবং কর্মমুখী ব্যক্তি। প্রথম দিন থেকেই তিনি মন্ত্রণালয়কে একটি সৎ, ফলাফলভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক, জনমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরিত করতে শুরু করেছেন। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পরিবর্তিত মন্ত্রণালয়ের জন্য আমরা অবশ্যই গর্বিত। তার সামনে এখনও অনেক বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে, রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে আমাদের অবশ্যই কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে, উত্তর খুঁজতে হবে এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য কৌশল তৈরি করতে হবে। আর তা হল: ১) অতীতে আমরা কী অর্জন করেছি; ২) আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জনগণের স্বাস্থ্য উন্নতির দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে আমাদের কী শূন্যতা রয়েছে; এবং ৩) আগামী কয়েক দশকে স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন বজায় রাখা এবং সেই দৃষ্টি ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের আলাদাভাবে কী করতে হবে তা নিয়ে শুধু চিন্তাই নয়, একটি কার্যকরী লক্ষ্য অর্জনের কৌশল এবং কৌশল বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

গত দশকের আমাদের অর্জন: ১৯৭৮ সালে জনগণের গড় আয়ু (একটি দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং উন্নয়নের একটি সূচক) ছিল ৫১.৬ বছর, আজ এটি ৭৩.৮ বছর - একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। ১৯৭৮ সালে মোট টিএফআর ( Total Fertility Rate) ছিল ৬.৬ এবং এখন তা নিচে নেমে হয়েছে ১.৯ (জনসংখ্যা প্রতিস্থাপনের নীচে), আমরা পরোক্ষ ভাবে বলতে পারি এটা সম্ভব হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষার উন্নতি এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতায়নের কারণে। শিশুমৃত্যুর হার ২৫/১০০০ জীবিত জন্মে নেমে এসেছে, মাতৃমৃত্যু এখন ১২৩/১০০,০০০ জীবিত জন্মে। এটি সম্ভব হয়েছে সফল টিকাদান কর্মসূচি এবং স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলিতে সহজ অ্যাক্সেসের জন্য। ১৯৯১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্টান্টিং (দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টি সমস্যা) এর প্রবণতা ছিল ৭৩.৬% যা আজ ২৩% এ নেমে এসেছে। অন্যান্য অনেক সূচকের মধ্যে, আমি এখানে শুধুমাত্র কয়েকটি হাইলাইট করেছি। জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণের পাশাপাশি দূরদৃষ্টি, নেতৃত্ব, নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং কর্মক্ষেত্রে এগুলি উল্লেখযোগ্য অর্জন। আমাদের অর্জনের জন্য আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত কিন্তু আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয় কারণ আমাদের একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং একটি স্থিতিস্থাপক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

২১ শতকের চ্যালেঞ্জ: প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে যে বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে আমরা কিছু স্বাস্থ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ১) এপিডেমিওলজিকাল ট্রানজিশন, যেখানে রোগের ধরণটি সংক্রামক রোগ থেকে ব্যাপক হারে অসংক্রামক রোগে পরিবর্তিত হচ্ছে। বর্তমানে ৬৫% এরও বেশি মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগের জন্য, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, নানা ধরনের ক্যান্সার, সড়ক দুর্ঘটনা ইত্যাদি। এই অবস্থার দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল যত্ন প্রয়োজন। ২) স্থানান্তর জনসংখ্যা: আমাদের বয়স্ক লোক সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন। এবং একই সাথে আমাদের এখনও বিশাল বয়ঃসন্ধিকালের/তরুণ জনসংখ্যা রয়েছে যাদের সুস্থ এবং সক্রিয় রাখা দেশের সার্বিক জাতি গঠন ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। ৩) স্থানান্তরের স্থানান্তর/অভিবাসন: অভ্যন্তরীণ অভিবাসন যেখানে আমরা ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, বস্তির জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাদের সঠিক পানি, স্যানিটেশন, আবাসন এবং স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেসের অভাব মোকাবেলা করছি। এবং ভবিষ্যতের যেকোনো অশান্তি বন্ধ করতে আমাদের এই জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলিতে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন, যাতে তারা পিছিয়ে না থাকে। আমাদের বিপুল সংখ্যক অভিবাসী এবং অভিবাসী শ্রমশক্তি রয়েছে যারা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যক। তাদের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল একটি অগ্রাধিকার; ৪) জলবায়ু পরিবর্তন হল আরেকটি পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমানভাবে খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যার স্বাস্থ্য ও মঙ্গলের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং ফেলবে। স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবায় অ্যাক্সেসের অভাব বিশেষ করে নারী, শিশু এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে এবং করবে। ৫) COVID-19 আমাদের দেখিয়েছে যে এমনকি সবচেয়ে ধনী দেশগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেই মহামারি মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিল না। মহামারি আমাদের জীবন বাঁচাতে দুটি ফ্রন্টে কাজ করতে দেখিয়েছে: রোগের পাশাপাশি জীবিকা থেকেও জীবন বাঁচানো। তাই এই মহামারি মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নয় রাজনীতিবিদরা ড্রাইভিং সিটে ছিলেন। আমরা কি পরবর্তী মহামারির মুখোমুখি হওয়ার জন্য এখন প্রস্তুত?; ৬) ডিজিটাল রূপান্তর: আমরা পছন্দ করি বা না করি আজ সাধারণ জনগণ তাদের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন। বাংলাদেশের সকল জনগণের ডিজিটাল সুবিধা রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে একটি সুবিধা এবং সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করতে প্রস্তুত হতে হবে হুমকি নয়। ৭) এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে কারণ বাংলাদেশে লোকজন কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এন্টিবায়োটিক কিনছে মানুষ ও পশুর জন্য। আমাদের আরও দেরি হওয়ার আগেই কীভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার নীতি ও বাস্তবায়ন শুরু করা যায় তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ৮) মা, নবজাতক এবং শিশুদের স্বাস্থ্য এবং বেঁচে থাকা এখনও একটি অসমাপ্ত এজেন্ডা হয়ে রয়ে গেছে। ৯) নানা কারণে মানসিক স্বাস্থ্য একটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা যার জন্য জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

সিস্টেম চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বাজেটে আরও বেশি বরাদ্দ দাবি করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বরাদ্দকৃত বাজেট সময়মতো ব্যবহার করতে সক্ষম নয়, কেন প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ কোষাগারে ফেরত দিতে হচ্ছে? তাহলে কোন যুক্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তহবিল আরও বাড়ানোর কথা বিবেচনা করবে? আমরা কি বর্তমান নীতি এবং ব্যবস্থাপনা ক্ষমতা বিশ্লেষণ করেছি যা আমাদের প্রমাণ দিতে পারে কেন আমাদের এই সময়োপযোগী বাস্তবায়ন ক্ষমতার অভাব রয়েছে। আমরা কি আমলাতান্ত্রিক নীতি ও পদ্ধতি বিবেচনা করেছি যা সময়মতো বরাদ্দ এবং কাজ শেষ করতে বাধা দেয়। আমরা কি বিশ্লেষণ করেছি কি ভাবে অপচয় এবং দুর্নীতি বন্ধ করা যায়। আমরা কি পরিচালন ক্ষমতা মূল্যায়ন করেছি বা ফলাফল ভিত্তিক, জবাবদিহিতার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছি যার সাহায্যে আমরা স্বাস্থ্য সচিব থেকে মহাপরিচালক, প্রোগ্রাম বা হাসপাতাল সহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার থেকে সিভিল সার্জন পর্যন্ত কর্মকর্তাদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করতে পারি?

অন্যান্য চ্যালেঞ্জ: ১৯৭০ দশকে আমাদের যখন বিপুল ভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছিল তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে আমাদের জরুরি সময়সীমাবদ্ধ পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। তাই সময়মতো তা মোকাবেলা করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুটি সমান্তরাল স্বাধীন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে: স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। আজ জনসংখ্যা সচেতনতা, নারীর ক্ষমতায়ন, পারিবারিক অর্থনীতি বৃদ্ধি এবং সময় মত সঠিক সেবা পাওয়ার কারণে টিএফআর (total fertility rate) হ্রাস পেয়েছে এবং আরো নিচে যাবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এখন হয়ত কোনো বিরাট সমস্যা নয়, আগামী দশকে তা কমতে শুরু করবে। এবং জনসংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টার সময় এসেছে একটি কঠিন নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার- আমাদের কি এখনও দুটি অধিদপ্তর দরকার বা একটি সমন্বিত অধিদপ্তর দরকার? একটি মানসম্পন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি ব্যাপকভাবে জনগণকে উভয় পরিষেবা প্রদান করতে পারবে।

আরেকটি বিষয় হল নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব। বিভিন্ন বহিরাগত উত্স থেকে তহবিল দিয়ে এই ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়। বেশিরভাগ বেসরকারি সংস্থাগুলি পরিষেবা প্রদান করে। আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে স্বাস্থ্যের সর্বোত্তম মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকারগুলি কীভাবে জাতীয় স্বাস্থ্য লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য তাদের কাজগুলিকে সমন্বয় করে। আমাদের অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে যে বহিরাগত তহবিল অনন্তকালের জন্য নাও হতে পারে।

আমরা জানি যে বেশিরভাগ মানুষ অসংক্রামক রোগে ভুগছেন যা একটি জীবনধারার রোগ। এর প্রতিরোধ এবং দীর্ঘমেয়াদি যত্ন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এটি একটি বিশাল আর্থিক এবং পরিষেবার বোঝা হয়ে উঠছে। তথ্য ও পরিষেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করা উচিত: ব্যয়বহুল হাসপাতাল ভিত্তিক পরিষেবা বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ভিত্তিক পরিষেবা যা প্রয়োজনে হাসপাতালের সাথে যুক্ত হয়ে পরিষেবাগুলিকে জন সাধারণদের কাছে নিয়ে আসা এবং সম্প্রদায়কে নিজের গৃহ ভিত্তিক যত্ন পরিষেবাগুলি তৈরি করতে সহায়তা করা? আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি অনন্য কমিউনিটি সেন্টার ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা তৈরি করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কীভাবে তাদের পরিষেবাগুলি সমন্বয় করছে বা করতে পারে তা বিবেচনা করার সময় হয়ত এসেছে। আমাদের বিবেচনা করতে হবে আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিক ভিত্তিক পরিষেবাগুলিকে আরও মূল্যায়ন ও প্রসারিত করে একটি সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা যা সংযুক্ত প্রয়োজনীয় হাসপাতালের যত্ন সেবার ব্যবস্থা তৈরি করা যা হবে সবচেয়ে দক্ষ এবং খরচ কার্যকর সিস্টেম।

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মানব সম্পদের আমাদের নীতি এবং পরিকল্পনাগুলিকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশের কত চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, প্যারামেডিক এবং সহযোগী মানব সম্পদ প্রয়োজন তা বিশ্লেষণ করতে হবে। একের পর এক সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই ডাক্তারদের কি সরকারি, বেসরকারি বা অন্য দেশে পাঠানো যাবে? আমরা কীভাবে নিশ্চিত করব যে আমাদের মেডিকেল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিদেশি প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত এবং স্বীকৃত হচ্ছে যদি আমরা আমাদের ডাক্তারদের অন্য দেশে নিয়োগ করতে চাই? আমাদের কি পর্যাপ্ত নার্স, মিডওয়াইফ এবং প্যারামেডিকস আছে যারা বাংলাদেশের প্রয়োজন বা অন্য দেশগুলির প্রয়োজন মেটাতে পারে। কিভাবে আমরা স্বাস্থ্যের জন্য রপ্তানি মানের মানবসম্পদ বিকাশ করতে পারি। আমি শুনেছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিপুল সংখ্যক পদ এখনও শূন্য রয়েছে - আমাদের এর কারণগুলি খুঁজে বের করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা দরকার।

স্বাস্থ্য উন্নয়নে বেসরকারি খাত উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। আমাদের এখন প্রয়োজন নীতিমালা , এর বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণ কৌশল তৈরি করা বা বিদ্যমান নীতি পরিবর্তন করা যা তাদের পরিষেবা এবং কার্যগুলি উন্নত মানের যত্নের জন্য সহায়ক হয় এবং তাদের একটি সাধারণ জবাবদিহিতার কাঠামোর মধ্যে আনা যায়।

আরেকটি বিষয় হল একটি কার্যকর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার জন্য জেলা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পরিচালনার দক্ষতা তৈরি করা। প্রতি বছর আমাদের জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের সাথে বসতে হবে, তাদের অর্জন আর চ্যালেঞ্জগুলি বিশ্লেষণ করতে হবে, এবং সেই অনুযায়ী আগামী বছরের জন্য স্বাস্থ্য জেলা ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের কর্মক্ষমতা সূচক এবং একটি জবাবদিহিতার কাঠামো তৈরি করতে হবে, শাস্তির জন্য নয় বরং কার্যকর হওয়ার জন্য তাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য।

এগিয়ে যাওয়ার পথ: আমি বারবার শুনছি আমার মতো যারা জাতিসংঘের ব্যবস্থায় বা বিদেশে অন্যান্য পদে কাজ করেছেন তারা বাংলাদেশের বিরাজমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নন বা বোঝেন না এবং তাই তাদের কিছু বলার অধিকার নেই। আমি তাদের মতামতকে সম্মান করি, আমি স্বীকার করি যে এখানে বাংলাদেশে যা ঘটছে তার সবকিছু হয়তো আমি কভার করতে পারিনি। তবুও আমি বিবেচনার জন্য এগিয়ে যাওয়ার কয়েকটি উপায় নির্দেশ করার সাহস করেছি। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি সুস্থ জাতি গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তন এবং মানব উন্নয়নমুখী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আনার একটি অভূতপূর্ব সুযোগ। আমাদের অতীতের অর্জনগুলো তাৎপর্যপূর্ণ কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে ফলাফল ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে একটি ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশে এবং বিদেশে অনেক বাংলাদেশি আছে যাদের চমৎকার জনস্বাস্থ্য পটভূমি এবং দক্ষতা রয়েছে এবং তারা আর্থিক লাভ, প্রভাব বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়াই সহায়তা প্রদানের জন্য, আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, তারা প্রস্তুত। আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের একটি উপদেষ্টা দল গঠনের চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই দলটি বর্তমান অর্জন, চ্যালেঞ্জ, সুযোগ বিশ্লেষণ করবে, তারা আগামী কয়েক দশকের স্বাস্থ্য নীতি, কৌশল, বাস্তবায়ন পরিকল্পনা, এর খরচ এবং একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রণয়ন করবে এবং মন্ত্রীকে সম্ভাব্য পথের সুপারিশ করবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ও জবাবদিহিতার কাঠামো নির্ধারণ করতে পারবে, তারা পর্যায়ক্রমে বসে পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে এবং নির্ধারিত লক্ষ্য ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আরও পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ প্রদান করবে। ফলাফল ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে সংগঠনের প্রতিটি স্তরের জন্য লক্ষ্যগুলি তৈরি করবে এবং একটি জবাবদিহিতা কাঠামো তৈরি করে একটি স্বচ্ছ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করার সুপারিশ করবে। সুপারিশ এবং তার বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র দায়িত্ব হবে মন্ত্রণালয়ের। এই দলটি একটি উপদেষ্টা দল হবে, তত্ত্বাবধানকারী দল নয়। উপদেষ্টা দল গঠন করা সহজ সিদ্ধান্ত নয় কারণ আমি বিশ্বাস করি যে অনেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করতে পারেন এবং হুমকি বোধ করতে পারেন। কিন্তু যত সময় যাবে আমি বিশ্বাস করি তারা অনুভব করবে যে উপদেষ্টা গোষ্ঠী কোন হুমকি নয় বরং তাদের কাজ এবং ফলাফল অর্জনের সহায়ক।

হাসপাতাল পরিদর্শন বা এখানে এবং সেখানে কিছু দুর্নীতি বা কিছু শাস্তির ব্যবস্থা যথেষ্ট নাও হতে পারে। মন্ত্রীকে তার টেবিলে বসা হাতিটিকে চিহ্নিত/সম্বোধন করতে হবে। তার ভবিষ্যৎ দৃষ্টি, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বিস্তৃত করা প্রয়োজন। তার সময়কালে তিনি তার সক্ষম দলের সাথে কী অর্জন করতে চান এবং কিভাবে তিনি তা অর্জন করবেন এবং বাংলাদেশের মানুষ কেন তাকে মনে রাখবে তা বিস্তৃত করা। আমি বিশ্বাস করি তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, তিনি পরিবর্তন আনতে তার সক্ষমতায় বিশ্বাসী এবং তিনি তার দেশের মানুষের জন্য তার সক্ষমতার সেরাটা দিতে প্রস্তুত এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে তার সঠিক সিদ্ধান্তে গর্বিত করতে প্রস্তুত।

আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর শোনার এবং শেখার অনন্য ব্যক্তিত্ব রয়েছে। তার সততা, অতীতের অর্জন এবং ফলাফলের অতীত আমাদের সকলকে আশা দেয়। তার দক্ষ নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন সম্ভব এবং এটা একটি বাস্তবতা। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করতে চাই।


মতামত   স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন