নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৮ পিএম, ২৭ অক্টোবর, ২০২১
একাত্তরের ক্ষতচিহ্ন স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও দগদগে ঘা হয়ে বিরাজ করছে। এবারে ২০২১ সালের দুর্গাপূজার সময় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী এবং তাদের অনুসারীদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের দিকে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আর সেসময় পাকিস্তানী সেনারা চীনের সরবরাহকৃত বুলেট দিয়ে বাঙালিদের হত্যা করেছে। এই পরিস্থিতিতে চীন যখন তার সব ঋতুর বন্ধু পাকিস্তানের উপর ভর করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বলয় বৃদ্ধি করতে চাইছে তখন এ ব্যাপারে দ্বিতীয়বার চিন্তা তথা বাংলাদেশের নিকট চীনের ক্ষমা চাওয়ার যৌক্তিকতা এই লেখায় তুলে ধরা হচ্ছে।
ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে চীনের নেক্ড়ে-যোদ্ধা কূটনীতি দক্ষিণ এশিয়ায় তার বন্ধু খুঁজে বেড়াচ্ছে। চীন এক্ষেত্রে তার সব ঋতুর বন্ধু পাকিস্তান, নতুন দোসর নেপাল, ঋণফাঁদে বন্দী শ্রীলঙ্কাকে পেয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে সেদেশও চীনের ক্ষমতার অধীনে চলে গিয়েছে। যদিও তালেবান শাসিত বর্তমান আফগানিস্তান সরকারি পর্যায়ে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চাইছে। দৃশ্যত বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চীন উদ্গ্রীব হয়ে আছে।
উন্নয়ন অংশীদার চীন
সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল হত্যাকারী এবং হত্যার শিকারে পরিণত হওয়া দু’টি রাজনৈতিক সত্ত্বার মধ্যকার মিথ্ষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। হত্যাকারী পাকিস্তান বাহিনী বাঙালিদের চীনা বুলেট দিয়েই হত্যা করেছিল। চীনের বিরোধীতা সত্ত্বেও ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি চীন। বঙ্গবন্ধু চীনের সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চীন তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরেই কেবল চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এবং ১৯৯১ সালে দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক পালাবদলের প্রেক্ষপটে বাংলাদেশ সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীনের সাথে অংশীদারিত্ব শুরু করে। খালেদা জিয়ার ইসলামপন্থী শাসনামলে ভারতীয় প্রভাবমুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে চীনের দ্বারস্থ হওয়া শুরু করে। যা উভয় দেশের জন্য সম্প্রসারিত কৌশলগত লাভ ছিল। চীন ও পাকিস্তান তখন (১৯৯১-১৯৯৬) বাংলাদেশে সর্বাধিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী ছিল। জতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের জন্য এগুলো প্রয়োজন হয়েছিল। চীন-পাকিস্তান অক্ষ শক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাব দেশের রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গভীরে প্রবেশ করেছিল।
২
পরবর্তী বছরগুলোতে, বাংলাদেশে মেগা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে চীন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসাবে আবির্ভূত হয়। এই সাথে আনন্দে বিগলিত হয়ে কিছু রাজনীতিক কিংকং-এর মত লাফাতে শুরু করে। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী পরপর চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে চীনের সাথে বহুকোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে। দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত তৃতীয় বিশে^র কয়েকটি দেশে ঋণ-ফাঁদে ধরা খাওয়া সম্পর্কে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোর প্রতি বাংলাদেশের নেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। যা ঘটেছে তা হলো মেগা প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগকৃত বিশাল অঙ্কের টাকা এসব দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ঋণের ফাঁদে বন্দী হওয়া সরকারগুলোকে ঋণমুক্ত করার জন্য চীন মেরিটাইম বন্দর এবং অন্যান্য ফ্যাসিলিটিজগুলো ৯৯ বছরের লিজ নিয়েছে। এভাবেই কাহিনীটির পরিসমাপ্তি ঘটে!
বাংলাদেশের গণহত্যায় চীনের সক্রিয় সহযোগিতা
১৯৭১ সালের পাকিস্তানের জল্লাদ সেনাবহিনী ও তাদের ইসলামী মিলিশিয়া যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে গণহত্যা ও ধর্ষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ঘনিষ্ঠ সহযোগী পাকিস্তান তখন বাঙালিদের দমনের জন্য সীমাহীন সামরিক সরঞ্জাম এবং রাজনৈতিক মদদ লাভ করেছে। পাকিস্তানী সংবাদ মাধ্যমের মত চীনা গণ মাধ্যমও তখন বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানী বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার ব্যাপারে নীরব থেকেছে। বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানীদের দ্বারা পরিচালিত গণহত্যার জন্য প্রয়োজনীয় গুলি-গোলা ও অস্ত্র সরবরাহের জন্য চীনের উচিৎ দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চাওয়া। গণহত্যার প্রতিটি শিকারের জন্য রাওয়ালপিন্ডির যুদ্ধবাজদের নিকট উপহার হিসাবে ’মেইড ইন চায়না’ লেখা বুলেট সরবরাহ করত চীন। এই বুলেটগুলো স্বাধীন বাংলাদেশ যারা চাইতেন তাদের হত্যার জন্য ব্যবহার করা হতো। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিশ্ব জনমত চীন উপেক্ষা করে চলত। জীবন বাঁচানোর জন্য যে এক কোটি বাঙালি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের কান্না এবং দুর্বিসহ অবস্থার কথা চীনের কানে তখন পৌঁছায় নাই। বিশে^র অনেক দেশে এক কোটি লোকসংখ্যাও নাই। অপরপক্ষে, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে চীনা-পন্থী বামপন্থী রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা মওলানা ভাসানী বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে অনুরোধ করলেও তারা এর কোন উত্তর দেয় নাই। এর পরিবর্তে, চীন অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে। স্বাধীনতা লাভের পর চীন সদ্যজাত স্বাধীন বাংলাদেশকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে হয়রানি করা অব্যাহত রেখেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদাতা সর্বশেষ দেশ চীন
১৯৭২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, গ্রেট ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও অনেক দেশ একটির পর একটি করে যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সমস্যা শুরু হয় যখন ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য বাংলাদেশ আবেদন করে তখন। বাংলাদেশের যখন আন্তর্জাতিক খাদ্য সাহায্য এবং পুনর্বাসনের জন্য বাজেট প্রয়োজন ছিল তখন চীন স্বতস্ফূর্তভাবে দুইবার জাতিসংঘে বাংলাদেশে সদস্যপদের বিরোধীতা করেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে চীন কর্তৃক বাংলাদেশের আবেদনের বিরোধীতা করার কারণ ভারতের হাতে পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী এবং বেসামরিক ব্যক্তিবর্গেও প্রত্যাবর্তণ বাস্তবায়ন না হওয়া। নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানকে ভালো রাখার উদ্দেশ্যেই চীন এই কাজটি করেছে। এশীয় মহীরুহ চীনা তৎপরতায় সামনে টিকে থাকা এবং দেশের কূটনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (এন এ এম), কমনওয়েলথ এবং ইসলামী সম্মেলন সংস্থা(ওআইসি)য় যোগদান করেন। যা বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করে।
৩
ওআইসি সম্মেলনের আগে ইসলামী নেতাদের চাপে ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি পাকিস্তান কর্তৃক স্বীকৃতি দেয়ার পরেও চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় নাই। সেসময় বাংলাদেশে সক্রিয় চীনাপন্থী কমিউনিস্ট পার্টিগুলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও আশীর্বাদ লাভ করত। কয়েকটি ভাগে বিভক্ত বামপন্থী দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল, স্বাধীন বাংলাদেশকে বাতিল করতে চেয়েছিল, ভারতপন্থী বলে নিন্দা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের বিরোধীতা করেছিল।চীনাপন্থী চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকত এবং তাদের দলগুলোর নামের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে “পূর্ব পাকিস্তান“ “পূর্ব বাংলা“ শব্দবন্ধগুলো ব্যবহার করত। অবাক করার কোন বিষয় নয় যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চরম বামপন্থী দলগুলো মাটির নীচ থেকে তাদের মাথা উঁচু করে এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মদতে সশস্ত্র যুদ্ধ বাতিল করে। বঙ্গবন্ধু তাঁর “আমার দেখা নয়াচীন“ এ লিখেছেন যে তিনি দু’বার চীন সফর করেছিলেন। প্রথম ১৯৫২ সালে এবং পরে ১৯৫৭ সালে। তাঁর এই সফরের সময় তিনি মাও জে দং, জৌ এন লাই প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তাঁর অনুরোধে চীন সম্মত হবে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থন আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক চ্যানেল উন্মুক্ত করেছিলেন। বেইজিংয়ে সেসময় পাকিস্তানের ঝানু কূটনীতিক (১৯৬৯-১৯৭২), পুরাতন ঢাকার নবাব বংশের সদস্য খাজা মোহাম্মদ কায়সারকে তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পর দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়েছিল।
রাষ্ট্রদূত কায়সারকে চীনা প্রধানমন্ত্রী জৌ এন লাই এই মর্মে অবহিত করেন যে তিনি তাঁর অসুবিধাটা বোঝেন। যা হোক, কায়সার ১৯৮৪ সালে দুই বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়ে বেইজিংয়ে ফিরে আসেন। সাংবাদিক ও কবি ফয়েজ আহমদকেও বঙ্গবন্ধু চীনে পাঠিয়েছিলেন। ১৯৬০এর দিকে রেডিও বেইজিং এর বাংলা সার্ভিসে ফয়েজ যখন কাজ করতেন তখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল। ১৯৬৬-১৯৬৯ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে ফয়েজ-এর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। তখনই চীনা রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ফয়েজএর ঘনিষ্ঠতার কথা বঙ্গবন্ধু জানতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমত ফয়েজ হংকং হয়ে বেইজিং যান এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও জ্যেষ্ঠ্য নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি বেইজিং থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসেন। চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মিশনগুলো একের পর এক ব্যর্থ হবার পরেও বঙ্গবন্ধু আশা ছাড়েন নাই। শেষ পর্যন্ত চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, তবে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু সরকার থাকতে নয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী অভ্যুত্থানের নেতাদের সরকারের শাসনকে চীন স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীন হবার চার বছর এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে খুনি সেনা কর্মকর্তারা ৮৪ দিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছে। এসময় তারা চার জাতীয় নেতাকেও কারা অভ্যন্তরে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশের রক্তাক্ত অভ্যুদয়ের সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গণ-বিরোধী নীতি, পাকিস্তান কর্তৃক গণহত্যা অভিযান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চীনা বুলেট ও সামরিক সরঞ্জাম যোগান দেয়ার জন্য চীনের উচিৎ ক্ষমা চাওয়া। বঙ্গবন্ধুকে হয়রানি করার জন্যও চীনের ক্ষমা চাওয়া যৌক্তিক।
লেখক: ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।