সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগে ‘রাজাকার’ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই এখন একে অন্যের দিকে রাজাকারের তকমা লাগানোর চেষ্টা করছেন।’ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যার সঙ্গে বনবে না তাকে বলবে রাজাকারের ছেলে অথবা বলবে রাজাকারের নাতি বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল তারা।’ জনাব ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, ‘এসব অভিযোগের স্তুপ হয়েছে আওয়ামী লীগে।’ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য সময়ের প্রেক্ষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যত প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাজাকারের অভিযোগ উঠেছে তা যদি সত্যি হয় এবং সকলের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে তা লোম বাছতে কম্বল উজাড়ের মতো ঘটনা হবে। অভিযোগের সবই যে মিথ্যা তা নয়। কারণ ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড বেশ কিছু মনোনয়ন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় আওয়ামী লীগে ‘রাজাকার’ গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের মূল সুর অনূধাবন করলে বোঝা যায়, অনেক অভিযোগই অসত্য, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে করা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার একটা সস্তা কৌশল। রাজাকার, বিএনপি বা জামায়াত বলে কাউকে কোণঠাসা করার কৌশলটি আওয়ামী লীগের কারও কারও পুরনো অভ্যাস।
তবে বিষয়টি বেশ জটিল এবং উভয় সংকট। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। এই সুযোগে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীগণ নির্বাচনে বিরোধীতাকারীদের নামের সাথে পরবর্তি নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন সব নেতাদের এবং ঐ নেতাদের সমর্থকদের নামও অভিযোগের তালিকাভুক্ত করলেন। পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে অভিযোগপত্র জমা হয়েছিল। অভিযোগসমূহ কোনপ্রকার তদন্ত না করে অভিযোগপত্রে তালিকাভুক্ত সকল নেতাকর্মীদের বহিস্কার করার সুপারিশ করা হয়েছিল এবং বহিস্কার করা হয়েছিলো। তন্মধ্যে কিছু দোষী থাকলেও সবাই যে বহিস্কার হওয়ার মত অপরাধী তাদের নয়। বেশীরভাগ অভিযোগই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নিধন করার জন্য করা হয়েছিল। ঐ ঘটনায় অসংখ্য নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী বিনাদোষে সংগঠনের কর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত হয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, সাবেক ডেমরা থানা (বর্তমান যাত্রাবাড়ী, ডেমরা) আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব সফর আলী। তিনি ডেমরা থানাধীন সাবেক দনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এর পর সাবেক ডেমরা থানা এলাকায় যখন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির রাজনীতির দুর্দিন। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করার সুযোগ ছিল না। তখন দোলাইরপাড় ব্রিজের ঢালে সফর আলী সাহেবের বাড়িতে এক কক্ষ বিশিষ্ট ছাপাখানা (প্রেস) ছিল। সাথেই ছোট একটি টেবিল ও একটি চেয়ার বসানো যায় এমনি ছোট্ট কক্ষে প্রেসের অফিস। সফর আলী সাহেব ভিতরে বসতেন। গ্রাহক বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতেন। আমরা ছাত্রলীগ কর্মীরা বিকালে ওখানেই ভীড় করতাম। কন্ডেন্সমিল্কের কৌটায় চা এনে স্টিলের কাপে করে সকলেই চা খেতাম। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির এভাবেই পুনর্জাগরণ শুরু হয়। হাটি হাটি পা পা করে ডেমরা থানা এলাকায় আওয়ামী লীগ সংগঠিত হতে থাকে। সাংগঠনিক আলোচনা করার জন্য দলিল ভাই এর ছবি তোলার স্টুডিও এর গ্রীনরুম ব্যবহার করা হতো। ১৯৯৩ সালে জনাব হাবিবুর রহমান মোল্লাকে সভাপতি ও জনাব সফর আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ডেমরা থানা আওয়ামীলীগ কমিটি গঠিত হয়। ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচনে উনারা দুজনেই প্রার্থী হয়েছিলেন। হাবিবুর রহমান মোল্লা সাহেব মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের সূসূক্ষ্ম কারচুপির কারনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে প্রতিদ্বন্ধী নেতা সফর আলী সাহেবের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দেওয়া হয়। নিবেদিতপ্রাণ তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা চিরদিনের জন্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে বিদায় হয়ে গেলেন।
এর উল্টো পিঠও রয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের গ্রুপিং এর সুবাদে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীরাও সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেছে। ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররাই ১৯৭৫ এ আঘাত করেছে। ওরা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব হাতে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য আওয়ামীলীগকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। ষড়যন্ত্রকারীরাও বসে থাকেনি। ওরা বিভিন্ন সুযোগে সুকৌশলে আওয়ামী লীগে যোগদান করে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে গ্রুপিং এর কারণে থানা কমিটি ও ওয়ার্ড-ইউনিয়ন কমিটি গঠন কার্যক্রম বিলম্বিত হয়েছিল। স্বাধীনতা বিরোধী ও ৭৫ এর বেনিফিশিয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশে কমিটি গঠনে সময়ের সংক্ষিপ্ততায় সকল কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে না পারলেও, কোন যাচাই বাছাই না করে পদ ভাগাভাগি করে কয়েকটি কমিটি গঠন করেন। প্রবাদে আছে ‘ভাগের মা গঙ্গা পায় না’। পদ ভাগাভাগি করতে গিয়ে নিজ গ্রুপে যোগ্য নেতা না থাকলেও নিজের ভাগে পাওয়া পদে প্রতিদ্বন্দ্বির পক্ষের যোগ্য আওয়ামীলীগ নেতাদের না দিয়ে প্রয়োজনে ভিন্ন দলের লোককে সেই পদ দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। এই পদ ভাগাভাগির সুযোগে স্বাধীনতাবিরোধী, ১৯৭৫ এর বেনিফিশিয়ারিরা, সুবিধাবাদীরা সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেছে। ৭১ ও ৭৫ এর ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের মিশন সম্পন্ন করার জন্য, স্বাধীনতার মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার জন্য ছাত্রজীবনে ও কর্মজীবনে জিয়ার সৈনিক এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি দলীয় জনপ্রতিনিধি হয়েও সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। পরবর্তিতে এই অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের আওয়ামীলীগার বানিয়ে নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করেছে। ওরা আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য পদ ছাড়াও দলীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এখানেই ক্ষ্যান্ত হননি, বিএনপি জামাত থেকে অনুপ্রবেশকৃত তাদের নিজস্ব লোকদের তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু কী পরিকল্পনায় বা কোন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য তারা বিএনপি সরকারের আমলে বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করলেন এবং সুকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হলেন, এটাই রহস্যজনক! এমনি অসংখ্য অনুপ্রবেশকারীর উদাহরণ রয়েছে।
মির্জা আজম এমপি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তৃণমূল পর্যায় থেকে গড়ে উঠা গণমানুষের নেতা, ছয় বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সারাদেশে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মনের কথা বুঝতে শিখেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগ এর এক কর্মীসভায় বলেছেন, বিএনপি ঘরানার এক শিল্পপতির দুই ছেলে (বয়স ১৯ ও ২১ বছর) মহানগর আওয়ামীলীগের দুইটি থানা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দুইজন কোনদিন কোথায়ও আওয়ামীলীগ বা অংগ-সহযোগী সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না এবং বর্তমান সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে ভালভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এই সকল অনুপ্রবেশকারীরা দেশের সেবা করার উদ্দেশ্যে সংগঠন করতে আসেন নাই। তারা সরকারী দলের পদ ব্যবহার করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেই সংগঠনের পদ ক্রয় করেছেন।
দলের দুঃসময়ে অবদান রেখেছেন এমন সাবেক ছাত্রনেতাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি দলকে সংগঠিত রাখতেই আওয়ামীলীগ এর সাংগঠনিক কাঠামোতে উপ-কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নির্মম সত্য হলো বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন ধরনের লোকেরা পায় উপ কমিটির পদ। অতীতে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও সাবেক ছাত্রনেতা পরিচয়ে অনেকেই কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দলের উপ-কমিটিতে থেকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন শাহেদ, হেলেনার মতো ব্যক্তিরা। আর এসব কারণে শুরু থেকেই কম-বেশি বিতর্কে পড়েছে আওয়ামী লীগের বিষয়ভিত্তিক এসব উপ-কমিটি। ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে সুবিধাবাদীরা সরকার ও সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। কোন যোগ্যতা না থাকলেও উপকমিটির কর্তাব্যক্তিদের পরিচিত, তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকার লোক হিসেবে জায়গা পেয়েছে অনেকে। এইসব উপ কমিটিগুলোতে এমন অনেককেই রাখা হয়েছে, অতীতে যাদের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না। তাদের জীবনের প্রথম রাজনৈতিক পদ এই উপকমিটির সদস্য। এরই ফলে উপ কমিটি গঠনে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী না হয়ে বরং দুর্বল হয়েছে। সংগঠন ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
প্রশাসনে কোন একজন মেধাবী সরকারি কর্মকর্তা, কারও সাতেপাঁচে নেই। প্রতিপক্ষ তাকে রাজাকারের আত্মীয় বানিয়ে দিল। ব্যস, তার পদোন্নতি বন্ধ হয়ে গেল। কিন্ত এটাওতো ঠিক, বিসিএস অতিক্রম করে যারা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে চাকুরী পায়, তারা সকলেই মেধাবী। উনিশ-বিশ হতে পারে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করা একজন নেতা বা কর্মী চাকুরীজীবনে তার দলীয় নির্বাচনী মেন্যুফেস্টো বাস্তবায়নে সোচ্চার থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে এই মুহূর্তে চাকুরীজীবনে তারাই সাতেপাঁচে নেই, যারা ছাত্রজীবনে বর্তমান সরকার বিরোধী নীতি ও আদর্শের অনুসারী ছিলেন। এখন ঐ সকল শান্তশিষ্ট, সাতেপাঁচে নেই কর্মকর্তারা সরকারকে ভাল কোন পরামর্শ দিবে না, কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না। শুধু জ্বী স্যার, জ্বী স্যার করবে এবং গোপনে নিজের মতাদর্শের লোকদের খুঁজে বেড়াবে, সংগবদ্ধ হবে। সুযোগ পেলেই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবে- এমন লোকদের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করা হচ্ছে। ওরাই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব করে সরকারকে বিব্রত করছে, রাজপথে আইনের মারপ্যাঁচে সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের হেনস্তা করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। এই নীতিমালা রাজনৈতিক সরকারের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। রাজনৈতিক সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই নীতি আদর্শের অনুসারী হতে হবে। তবেই সরকার দ্বিধাহীনভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবে, যেটা করা হচ্ছে আমেরিকায়।
কদমতলী থানা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ নাছিম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মিলে যাচাই বাছাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। উভয়ের স্বাক্ষরিত পুর্নাঙ্গ কমিটি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগ এর দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত অনুমোদিত কমিটি ছিল ভিন্নরুপ। প্রস্তাবিত কমিটি থেকে ৩৩ জনের বাদ দিয়ে নতুন নাম সংযোজন করে কমিটি অনুমোদন করেছে। এই ৩৩ জনের মধ্যে বিএনপি জামাতের অনেক লোক অনুপ্রবেশ করেছে। মির্জা আজম সাহেব একথাই মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় উল্লেখ করেছেন। এব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
এমন ঘটনা তৃণমূল পর্যায়ে অহরহ ঘটছে। হাইব্রিড নেতারা সংগঠনের মধ্যে নিজস্ব বলয় তৈরী করার জন্য বিএনপি-জামাতের লোকদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করিয়েছে। তৃণমূলের অবস্থা কান পেতে শুনলে বুঝা যায় হাইব্রিডদের জয়জয়কার। কাজেই ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই এখন একে অন্যের দিকে রাজাকারের তকমা লাগানোর চেষ্টা করছেন’-এই কথা বলে বিষয়টি হালকা না করে সংগঠনের স্বার্থে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি জামাত রাজাকারদের সংগঠন থেকে বের করে দেওয়া জরুরি। এছাড়া যেসকল কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি, মন্ত্রী এই প্রক্রিয়ায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সময় থাকতে সাধু সাবধান!
মন্তব্য করুন
আমদের দেশে এখন গ্রীষ্মকাল, প্রচন্ড গরম, তার সাথে মাঝে মাঝে বর্ষাকালের বৃষ্টি যার ফলে কিছু জেলার বাসিন্দারা বিধ্বংসী বন্যা পরিস্থিতিতে দারুন অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন! সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং বাধা সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দময় মুহূর্ত অনেক আশা এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, ঠিক তখন কোভিডের কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হাতে গুনা অল্প কিছু লোক সংক্রামিত হওয়া এবং কোনো মৃত্যু না দেখে, ভাবতে শুরু করেছিলাম যে হয়ত আমরা কোভিড-১৯, মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দারুন ভোগান্তির পর কোভিডকে আমাদের পিছনে ফেলে আসতে পেরেছি। আর বার বার কোভিডের "নতুন তরঙ্গের" কারনে কোভিড সংক্রামিত মানুষের এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কথা সম্ভবত কেউ আর শুনতে চায়নি। কি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল সাম্প্রতিক বাংলাদেশের তথ্য ইঙ্গিত করছে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট, BA.4 এবং BA.5-এর সাবলাইনেজ, সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে অন্যান্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও একটি নতুন তরঙ্গ শুরু করেছে।
আজকাল এখন আর কোভিডের তথ্য সংবাদপত্র বা টেলিভিশন সংবাদের বড় শিরোনাম নয়, মহামারীটি আর সংবাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করছে না যেভাবে কিছুদিন আগেও তা করেছিল, তবুও আমরা কোভিড নিয়ে কোথায় আছি এবং আমাদের কী করা দরকার তা নিয়ে জরুরিভাবে আলোচনা আর মূল্যবান সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমাদের আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয় বরং নতুন তরঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের জাতীয় কৌশল কী হওয়া উচিত সবাই বসে তা নিয়ে আলোচনা করা আর জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আজ ২৮শে জুন সরকার ২০৮৭ জনের সংক্রামিত হওয়ার এবং ৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। তাই বলে আতঙ্কে, আমাদের তাড়াতাড়ি এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
সুসংবাদ, ওমিক্রনের এই বৈচিত্রগুলি খুব একটা গুরুতর নয়, তবে সমস্যা হল ওমিক্রনের এই বৈচিত্রগুলির লোকেদের পুনরায় সংক্রামিত করার সক্ষমতা রয়েছে, এমনকি যারা পূর্বে ওমিক্রনের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, বা যারা সম্পূর্ণ টিকা পেয়েছেন বা যারা বুস্টার ডোজও পেয়েছেন তারাও সংক্রামিত হতে পারেন। ফাইজার ভ্যাকসিনের পর পর তিনটি ডোজ পাওয়ার পরেও আমি খুবই হালকা দুই দিনের লক্ষণগুলি সহ ওমিক্রনে সংক্রামিত হয়েছি এবং পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছি। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে "হার্ড ইমিউনিটি" (যেখানে পর্যাপ্ত লোকদের টিকা দেওয়া হয়েছে বা যারা ইতিমধ্যে সংক্রামিত হয়েছে সেখানে আরও সঞ্চালন বন্ধ করা জন্য প্রাকৃতিক অনাক্রম্যতা) পৌঁছানো সম্ভবত অসম্ভব। সাংহাই এবং বেইজিং শহরে চীনা কর্তৃপক্ষের অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত লকডাউনের পরেও ওমিক্রনের বিস্তার বন্ধ করতে সেখানে অসুবিধার কথা আমাদের ভবিষ্যতের কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য বিবেচনা করতে হবে।
যদিও ইদানিং বাংলাদেশে কোভিড রোগের দ্রুত সঞ্চালন উদ্বেগের কারন হতে পারে, কিন্তু সবচেয়ে আশ্বাসের বিষয় হল কোভিডের মুখোমুখি এবং যুদ্ধ জয়ে আজ আমাদের কাছে মোতায়েন করার জন্য প্রচুর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং সরঞ্জাম রয়েছে। এছাড়াও, গবেষণা বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করে যে ওমিক্রন প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে ডেল্টার চেয়ে হালকা। বেশিরভাগ মানুষের জন্য, কোভিড-১৯ মৌসুমী ফ্লু থেকে, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলিতে, কম প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনের তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে, কারণ সফল টিকা দেওয়ার পরে বেশিরভাগ মানুষ উচ্চ মাত্রার অনাক্রম্যতা অর্জন করেছে। তবে, বিপুল সংখ্যক লোক সংক্রামিত হওয়ার কারণে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ পরিণতি হওয়ার পরিনিতি, সফল আর সময় মত এর পরিচালনা, চিকিত্সা যত্নের প্রাপ্যতা এবং বিশাল ব্যয় সম্পর্কে আমাদের এখনি নজর দেওয়া দরকার।
অবশ্যই, এই রোগের সাথে সম্পর্কিত দীর্ঘকালের নেতিবাচক স্বাস্থ্যের ফলাফলের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার কথা বিবেচনা করে আমাদের সকলের এবং সরকারের উচিত হবে বারবার কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এড়ানোর কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। বড় চ্যালেঞ্জ হল জীবন ও জীবিকার মধ্যে আমরা কতটা বা কিভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি এবং কি ভাবে কোভিডকে সম্পূর্ণরূপে এড়াতে পারি? মজার বিষয় হল, এই রোগের বাহক আর সংক্রমণের কারন হল আমাদের চেনা জানা অন্যান্য লক্ষণহীন সংক্রামক মানুষ, যাদেরকে আমরা দেখতে, যাদের কাছাকাছি থাকতে, কোলাকুলি করতে, সমাজিকতা বজায় রাখতে বা কাজের কারণে তাদের সম্পর্কে আসাটা আমরা উপভোগ করি। মানুষ হল সামাজিক প্রাণী, এবং তাই অনেক লোকের জন্য আমাদের জীবনের মানের একটি বড় অংশ হল অন্যদের সাথে স্বাধীন ভাবে মেশা - যেমনটি উত্সব, উদযাপন এবং সামাজিক ইভেন্টগুলিতে দ্রুত ফিরে আসা এবং সেই সময় গুলো উপভোগ করা। আর এই কারণেই ভাইরাসটি শীঘ্রই আমাদের ছেড়ে চলে যাবে না, অদূর ভবিষ্যতেও নয়। আমরা ভাইরাসটির সাথে কীভাবে ভালো ভাবে বাঁচতে পারি তা আমাদের শিখতে হবে। কারন একই সাথে আমরা বেঁচে থাকতে এবং আমাদের জীবিকা বজায় রাখতে চাই।
মুখোশ এবং বায়ুচলাচল এখনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা যা আমরা মেনে চলতে পারি। একটি মেডিকেল-গ্রেড মাস্ক পরা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার একটি কার্যকর উপায়, বিশেষ করে জনাকীর্ণ সমাবেশ গুলোয়। আপনি যদি এমন একটি জায়গায় যান, বা চলাচল করেন বা যাএি হন যেখানে অনেক লোক একসাথে আপনার সাথে থাকবে, যা আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপুর্ন সেখানে যাবার আগে হয় আপনার পকেটে বা হ্যান্ডব্যাগে বা ব্রিফকেসে মাস্ক রাখবেন এবং সেখানে থাকাকালিন মুখোশ পরে থাকবেন। এখন থেকে আমরা ভবিষ্যতের বাঙ্গালী সামাজিক আদর্শ হিসাবে এটি গ্রহণ করা শিখতে পারি। আর আমাদের সঠিক এবং পর্যাপ্ত ইনডোর বায়ুচলাচল নিশ্চিত করতে হবে। যাদিও, একমাএ উপযুক্ত বায়ুচলাচল ব্যাবস্থা দ্বারা সংক্রমণের একটি তরঙ্গ বন্ধ করার সম্ভাবনা কম, তবুও আমাদের ইনডোর এবং বদ্ধ পরিবেশে উপযুক্ত পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা দরকার।
বাংলাদেশের চমৎকার প্রচেষ্টা এবং বিপুল ব্যয়ের জন্য ধন্যবাদ, দেশটি তার বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে কার্যকর কোভিড ভ্যাকসিনের দুই ডোজ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশ সমান সংখ্যক লোককে বুস্টার ডোজ প্রদানের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্যভাবে ভাল করছে। ভবিষ্যতে বিশেষ করে শুধু মাএ জনসংখ্যার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মানুষকে আবারও বুস্টার ডোজ (বার্ষিক হতে পারে) প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সব রকম পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি থাকতে হবে।
কোভিড টিকা দেওয়ার প্রাথমিক অসাধারণ সাফল্য পর, ভবিষ্যতে আবারও কোভিড ভ্যাকসিনের গণ টিকা প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি আরও আলোচনার এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ করব। ধনী দেশ এবং কোম্পানিগুলোর মেধা সম্পত্তি অধিকার (intellectual Property Right) মওকুফ করতে সম্মত হওয়ার অপেক্ষায় থাকাকালীন পুনরায় এই জাতীয় সমস্ত জাতি প্রশস্ত টিকা প্রদানের বহুল ব্যয়ের কৌশলের কার্যকারিতা বিবেচনা করতে হবে। অন্যান্য অবকাঠামোগত বিকাশ অবশ্যই আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার হতে হবে। আমি পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি আমঅবকাঠামোগত বিকাশে বিনিয়োগ আমাদের জীবিকা নির্বাহ এবং শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে। আজ সমৃদ্ধ পশ্চিমা দেশগুলো ধার নিতে এবং প্রচুর পরিমাণে অর্থ কোভিড প্রোগ্রামে ব্যয় করতে পারে কারণ তারা তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমঅবকাঠামো শক্ত ভাবে তৈরি করেছে। মনে রাখতে হবে, বিদ্যমান সক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশের সেই ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা আছে এবং তারা সল্প ব্যায়ে তা উৎপাদন করতে পারে, এবং তার ফলে টিকা প্রদানের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব। আসুন সেই ধনী দেশগুলি এবং সংস্থাগুলিকে দরিদ্র দেশ এবং তাদের নাগরিকদের জীবন আর জীবিকার ব্যয়ে প্রচুর মুনাফা করার বিরুদ্ধে সজাগ হই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং গাভিকে অবশ্যই মেধা সম্পত্তির অধিকার মওকুফ করা নিশ্চিত করতে কঠোর হতে হবে এবং একসাথে কাজ করতে হবে এবং অপ্রাকৃত মুনাফা অর্জনের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলতে হবে।
যখন আমরা আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি সে সময়ে আমাদের কৌশল কী হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমি আমার পূর্ববর্তী নিবন্ধে "পরীক্ষা এবং চিকিত্সা" কৌশল গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সমস্ত ফার্মেসি, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার জায়গা গুলোতে ফাইজার এবং মার্কের অ্যান্টিভাইরাল সরবরাহ করা উচিত, যাতে একটি "চিকিৎসা করার জন্য পরীক্ষা" স্কিম চালু করা যায়, যেখানে কোভিড পজিটিভ পরীক্ষার পরেই, সবাই বিশেষ করে যারা দুর্বল এবং বয়স্ক গোষ্ঠী, যাদের ভ্যাকসিনগুলি কম কার্যকর হতে পারে, তারা কার্যকর চিকিত্সার সেই ওষুধগুলি আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছাড়া পান। এটি কেবল হাসপাতালে ভর্তি হ্রাস করবে না তবে জীবন বাঁচাবে এবং জীবিকা নির্বাহ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বজায় রাখবে।
জনস্বাস্থ্য হল এমন সমস্ত বিষয় যা জনগনকে সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। জীবন এবং জীবিকার সুষম কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দেয়। যখন আমাদের "কোভিডের সাথে বাঁচতে পারি" বা “ বাঁচতে পারবো কিনা” সে বিষয়ে জোরালো মতামত প্রকাশ করা অব্যাহত রয়েছে, বাস্তবতা হল এই গ্রহের প্রায় প্রতিটি দেশই, ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ এই মহামারী দ্বারা সমানভাবে প্রভাবিত হয়েছে। মানুষ বা দেশ হিসাবে আমরা প্রতিদিন যে সমস্ত সমস্যাগুলির মুখোমুখি হই, অন্যান্য সমস্ত সমস্যাগুলির মধ্যেও এই ভাইরাস বিষয়ে আমরা প্রতিদিন আরও শিখছি এবং এই সংক্রমণ দ্বারা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া বিশাল সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে কার্যকর শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের একমত হতে হবে, কোভিড পরিস্থিতি জটিল, এর কোনও দ্রুত এবং সহজ প্রতিকার নেই। না, আমরা এখনও কোভিড-১৯ সমাধান করি নি, তবে আমরা এই রোগটি পরিচালনা করতে আরও চৌকস এবং আরও ভাল হয়ে উঠছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ দূত ডাঃ ডেভিড নাভারো কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে বলেছেন: “এখন আমাদের অনেকের জন্য, কোভিড-১৯ এর অসুস্থতা জীবন হুমকির পরিবর্তে একটি সাধারন অসুবিধার কারণ হবে, তবে মনে রাখবেন, কিছু লোক বিশেষত দুর্বল, যারা অন্যান্য সহ-অসুস্থতার সাথে বসবাস করছেন এবং এখনও টিকা নিতে অস্বীকার করছেন বা কোন কোভিড ভ্যাকসিন পাননি, কোভিড এখনও তাদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।”
আসুন কোভিড নিয়ে বাঁচতে শিখি, মাস্ক ব্যবহার করি, যত সম্ভব ভিড়ের পরিবেশ এড়িয়ে চলি, যখন আমাদের কোভিডের লক্ষণ থাকে, অবিলম্বে পরীক্ষা করি এবং যদি আমাদের ইতিবাচক পরীক্ষা করা হয় তবে নিজেকে আলাদা করি, মানুষকে আমাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করি। আসুন জাতীর আর আমাদের প্রজন্মের উন্নত ভবিষ্যৎ আর জীবন আর জীবিকার উন্নতির জন্য এক সাথে কাজ করি। আমরা একটি গর্বিত জাতি এবং আমরা বারবার প্রমাণ করেছি যে আমরা এটি করতে পারি।
(এই নিবন্ধটি অন্যান্য প্রকাশনাগুলির সহায়তায় প্রস্তুত করা)
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আমদের দেশে এখন গ্রীষ্মকাল, প্রচন্ড গরম, তার সাথে মাঝে মাঝে বর্ষাকালের বৃষ্টি যার ফলে কিছু জেলার বাসিন্দারা বিধ্বংসী বন্যা পরিস্থিতিতে দারুন অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন! সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং বাধা সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দময় মুহূর্ত অনেক আশা এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, ঠিক তখন কোভিডের কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হাতে গুনা অল্প কিছু লোক সংক্রামিত হওয়া এবং কোনো মৃত্যু না দেখে, ভাবতে শুরু করেছিলাম যে হয়ত আমরা কোভিড-১৯, মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দারুন ভোগান্তির পর কোভিডকে আমাদের পিছনে ফেলে আসতে পেরেছি।
সীতাকুণ্ড ট্রাজেডির পরদিন সন্ধ্যায় ফেসবুকে আমি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। '২৫ জুন পর্যন্ত হরতাল বা নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না!' দেশের সমসাময়িক রাজনীতির ধারা হিসাব করলে এমন সম্ভাবনা আসলেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। তারপর কি হলো? ৫ জুন পাবনার বেড়ার কিউলিন ইন্ডাস্ট্রি। ৬ জুন রাজধানীর বছিলার জুতার কারখানা। ১০ জুন রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায়...
অনেকেই বলেছিলেন- সম্ভব না। ভাঙা শব্দ দুটি জোড়া লাগিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন- সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনা আজ জাতির সামনে উপস্থিত। এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যার জন্যে অধীর আকুল আগ্রহে গোটা জাতি। বহুল প্রতীক্ষা, কাঙ্ক্ষিত, অনেক সাধনার পরে- ঠিক কোন বিশেষণে জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণটিকে উপস্থাপন করা সম্ভব বুঝতে পারছি না। নিজস্ব অর্থায়নে...