সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগে ‘রাজাকার’ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই এখন একে অন্যের দিকে রাজাকারের তকমা লাগানোর চেষ্টা করছেন।’ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যার সঙ্গে বনবে না তাকে বলবে রাজাকারের ছেলে অথবা বলবে রাজাকারের নাতি বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল তারা।’ জনাব ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, ‘এসব অভিযোগের স্তুপ হয়েছে আওয়ামী লীগে।’ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য সময়ের প্রেক্ষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যত প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাজাকারের অভিযোগ উঠেছে তা যদি সত্যি হয় এবং সকলের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে তা লোম বাছতে কম্বল উজাড়ের মতো ঘটনা হবে। অভিযোগের সবই যে মিথ্যা তা নয়। কারণ ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড বেশ কিছু মনোনয়ন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় আওয়ামী লীগে ‘রাজাকার’ গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের মূল সুর অনূধাবন করলে বোঝা যায়, অনেক অভিযোগই অসত্য, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে করা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার একটা সস্তা কৌশল। রাজাকার, বিএনপি বা জামায়াত বলে কাউকে কোণঠাসা করার কৌশলটি আওয়ামী লীগের কারও কারও পুরনো অভ্যাস।
তবে বিষয়টি বেশ জটিল এবং উভয় সংকট। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। এই সুযোগে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীগণ নির্বাচনে বিরোধীতাকারীদের নামের সাথে পরবর্তি নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন সব নেতাদের এবং ঐ নেতাদের সমর্থকদের নামও অভিযোগের তালিকাভুক্ত করলেন। পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে অভিযোগপত্র জমা হয়েছিল। অভিযোগসমূহ কোনপ্রকার তদন্ত না করে অভিযোগপত্রে তালিকাভুক্ত সকল নেতাকর্মীদের বহিস্কার করার সুপারিশ করা হয়েছিল এবং বহিস্কার করা হয়েছিলো। তন্মধ্যে কিছু দোষী থাকলেও সবাই যে বহিস্কার হওয়ার মত অপরাধী তাদের নয়। বেশীরভাগ অভিযোগই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নিধন করার জন্য করা হয়েছিল। ঐ ঘটনায় অসংখ্য নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী বিনাদোষে সংগঠনের কর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত হয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, সাবেক ডেমরা থানা (বর্তমান যাত্রাবাড়ী, ডেমরা) আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব সফর আলী। তিনি ডেমরা থানাধীন সাবেক দনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এর পর সাবেক ডেমরা থানা এলাকায় যখন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির রাজনীতির দুর্দিন। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করার সুযোগ ছিল না। তখন দোলাইরপাড় ব্রিজের ঢালে সফর আলী সাহেবের বাড়িতে এক কক্ষ বিশিষ্ট ছাপাখানা (প্রেস) ছিল। সাথেই ছোট একটি টেবিল ও একটি চেয়ার বসানো যায় এমনি ছোট্ট কক্ষে প্রেসের অফিস। সফর আলী সাহেব ভিতরে বসতেন। গ্রাহক বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতেন। আমরা ছাত্রলীগ কর্মীরা বিকালে ওখানেই ভীড় করতাম। কন্ডেন্সমিল্কের কৌটায় চা এনে স্টিলের কাপে করে সকলেই চা খেতাম। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির এভাবেই পুনর্জাগরণ শুরু হয়। হাটি হাটি পা পা করে ডেমরা থানা এলাকায় আওয়ামী লীগ সংগঠিত হতে থাকে। সাংগঠনিক আলোচনা করার জন্য দলিল ভাই এর ছবি তোলার স্টুডিও এর গ্রীনরুম ব্যবহার করা হতো। ১৯৯৩ সালে জনাব হাবিবুর রহমান মোল্লাকে সভাপতি ও জনাব সফর আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ডেমরা থানা আওয়ামীলীগ কমিটি গঠিত হয়। ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচনে উনারা দুজনেই প্রার্থী হয়েছিলেন। হাবিবুর রহমান মোল্লা সাহেব মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের সূসূক্ষ্ম কারচুপির কারনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে প্রতিদ্বন্ধী নেতা সফর আলী সাহেবের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দেওয়া হয়। নিবেদিতপ্রাণ তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা চিরদিনের জন্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে বিদায় হয়ে গেলেন।
এর উল্টো পিঠও রয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের গ্রুপিং এর সুবাদে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীরাও সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেছে। ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররাই ১৯৭৫ এ আঘাত করেছে। ওরা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব হাতে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য আওয়ামীলীগকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। ষড়যন্ত্রকারীরাও বসে থাকেনি। ওরা বিভিন্ন সুযোগে সুকৌশলে আওয়ামী লীগে যোগদান করে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে গ্রুপিং এর কারণে থানা কমিটি ও ওয়ার্ড-ইউনিয়ন কমিটি গঠন কার্যক্রম বিলম্বিত হয়েছিল। স্বাধীনতা বিরোধী ও ৭৫ এর বেনিফিশিয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশে কমিটি গঠনে সময়ের সংক্ষিপ্ততায় সকল কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে না পারলেও, কোন যাচাই বাছাই না করে পদ ভাগাভাগি করে কয়েকটি কমিটি গঠন করেন। প্রবাদে আছে ‘ভাগের মা গঙ্গা পায় না’। পদ ভাগাভাগি করতে গিয়ে নিজ গ্রুপে যোগ্য নেতা না থাকলেও নিজের ভাগে পাওয়া পদে প্রতিদ্বন্দ্বির পক্ষের যোগ্য আওয়ামীলীগ নেতাদের না দিয়ে প্রয়োজনে ভিন্ন দলের লোককে সেই পদ দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। এই পদ ভাগাভাগির সুযোগে স্বাধীনতাবিরোধী, ১৯৭৫ এর বেনিফিশিয়ারিরা, সুবিধাবাদীরা সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেছে। ৭১ ও ৭৫ এর ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের মিশন সম্পন্ন করার জন্য, স্বাধীনতার মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার জন্য ছাত্রজীবনে ও কর্মজীবনে জিয়ার সৈনিক এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি দলীয় জনপ্রতিনিধি হয়েও সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। পরবর্তিতে এই অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের আওয়ামীলীগার বানিয়ে নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করেছে। ওরা আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য পদ ছাড়াও দলীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এখানেই ক্ষ্যান্ত হননি, বিএনপি জামাত থেকে অনুপ্রবেশকৃত তাদের নিজস্ব লোকদের তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু কী পরিকল্পনায় বা কোন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য তারা বিএনপি সরকারের আমলে বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করলেন এবং সুকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হলেন, এটাই রহস্যজনক! এমনি অসংখ্য অনুপ্রবেশকারীর উদাহরণ রয়েছে।
মির্জা আজম এমপি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তৃণমূল পর্যায় থেকে গড়ে উঠা গণমানুষের নেতা, ছয় বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সারাদেশে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মনের কথা বুঝতে শিখেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগ এর এক কর্মীসভায় বলেছেন, বিএনপি ঘরানার এক শিল্পপতির দুই ছেলে (বয়স ১৯ ও ২১ বছর) মহানগর আওয়ামীলীগের দুইটি থানা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দুইজন কোনদিন কোথায়ও আওয়ামীলীগ বা অংগ-সহযোগী সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না এবং বর্তমান সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে ভালভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এই সকল অনুপ্রবেশকারীরা দেশের সেবা করার উদ্দেশ্যে সংগঠন করতে আসেন নাই। তারা সরকারী দলের পদ ব্যবহার করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেই সংগঠনের পদ ক্রয় করেছেন।
দলের দুঃসময়ে অবদান রেখেছেন এমন সাবেক ছাত্রনেতাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি দলকে সংগঠিত রাখতেই আওয়ামীলীগ এর সাংগঠনিক কাঠামোতে উপ-কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নির্মম সত্য হলো বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন ধরনের লোকেরা পায় উপ কমিটির পদ। অতীতে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও সাবেক ছাত্রনেতা পরিচয়ে অনেকেই কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দলের উপ-কমিটিতে থেকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন শাহেদ, হেলেনার মতো ব্যক্তিরা। আর এসব কারণে শুরু থেকেই কম-বেশি বিতর্কে পড়েছে আওয়ামী লীগের বিষয়ভিত্তিক এসব উপ-কমিটি। ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে সুবিধাবাদীরা সরকার ও সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। কোন যোগ্যতা না থাকলেও উপকমিটির কর্তাব্যক্তিদের পরিচিত, তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকার লোক হিসেবে জায়গা পেয়েছে অনেকে। এইসব উপ কমিটিগুলোতে এমন অনেককেই রাখা হয়েছে, অতীতে যাদের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না। তাদের জীবনের প্রথম রাজনৈতিক পদ এই উপকমিটির সদস্য। এরই ফলে উপ কমিটি গঠনে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী না হয়ে বরং দুর্বল হয়েছে। সংগঠন ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
প্রশাসনে কোন একজন মেধাবী সরকারি কর্মকর্তা, কারও সাতেপাঁচে নেই। প্রতিপক্ষ তাকে রাজাকারের আত্মীয় বানিয়ে দিল। ব্যস, তার পদোন্নতি বন্ধ হয়ে গেল। কিন্ত এটাওতো ঠিক, বিসিএস অতিক্রম করে যারা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে চাকুরী পায়, তারা সকলেই মেধাবী। উনিশ-বিশ হতে পারে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করা একজন নেতা বা কর্মী চাকুরীজীবনে তার দলীয় নির্বাচনী মেন্যুফেস্টো বাস্তবায়নে সোচ্চার থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে এই মুহূর্তে চাকুরীজীবনে তারাই সাতেপাঁচে নেই, যারা ছাত্রজীবনে বর্তমান সরকার বিরোধী নীতি ও আদর্শের অনুসারী ছিলেন। এখন ঐ সকল শান্তশিষ্ট, সাতেপাঁচে নেই কর্মকর্তারা সরকারকে ভাল কোন পরামর্শ দিবে না, কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না। শুধু জ্বী স্যার, জ্বী স্যার করবে এবং গোপনে নিজের মতাদর্শের লোকদের খুঁজে বেড়াবে, সংগবদ্ধ হবে। সুযোগ পেলেই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবে- এমন লোকদের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করা হচ্ছে। ওরাই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব করে সরকারকে বিব্রত করছে, রাজপথে আইনের মারপ্যাঁচে সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের হেনস্তা করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। এই নীতিমালা রাজনৈতিক সরকারের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। রাজনৈতিক সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই নীতি আদর্শের অনুসারী হতে হবে। তবেই সরকার দ্বিধাহীনভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবে, যেটা করা হচ্ছে আমেরিকায়।
কদমতলী থানা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ নাছিম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মিলে যাচাই বাছাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। উভয়ের স্বাক্ষরিত পুর্নাঙ্গ কমিটি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগ এর দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত অনুমোদিত কমিটি ছিল ভিন্নরুপ। প্রস্তাবিত কমিটি থেকে ৩৩ জনের বাদ দিয়ে নতুন নাম সংযোজন করে কমিটি অনুমোদন করেছে। এই ৩৩ জনের মধ্যে বিএনপি জামাতের অনেক লোক অনুপ্রবেশ করেছে। মির্জা আজম সাহেব একথাই মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় উল্লেখ করেছেন। এব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
এমন ঘটনা তৃণমূল পর্যায়ে অহরহ ঘটছে। হাইব্রিড নেতারা সংগঠনের মধ্যে নিজস্ব বলয় তৈরী করার জন্য বিএনপি-জামাতের লোকদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করিয়েছে। তৃণমূলের অবস্থা কান পেতে শুনলে বুঝা যায় হাইব্রিডদের জয়জয়কার। কাজেই ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই এখন একে অন্যের দিকে রাজাকারের তকমা লাগানোর চেষ্টা করছেন’-এই কথা বলে বিষয়টি হালকা না করে সংগঠনের স্বার্থে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি জামাত রাজাকারদের সংগঠন থেকে বের করে দেওয়া জরুরি। এছাড়া যেসকল কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি, মন্ত্রী এই প্রক্রিয়ায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সময় থাকতে সাধু সাবধান!
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।