ইনসাইড থট

শেখ রাসেল: অকালে ঝরা এক লালগোলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:১৫ পিএম, ১২ নভেম্বর, ২০২১


Thumbnail

‘আমি মায়ের কাছে যাব’। শেখ রাসেলকে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর মায়ের লাশ দেখে অশ্রু সিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন- ‘আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন’।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রতুষ্যে হায়েনারুপী বিপদগামী একদল সেনা কর্মকর্তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য এবং তাঁর ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। হত্যার পূর্বে খুনীরা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত কর্মচারী আব্দুর রহমান রমাসহ শেখ রাসেলকে আটক করে। আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন, বাঁচার জন্য আকুলভাবে কাকুতি-মিনতি করছিলেন, কিন্তু পাষন্ড খুনীরা তাঁকে বাঁচতে দেয়নি।

পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারে একজন নতুন অতিথির আবির্ভাব হয়। শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিবের কোলে হেমন্তের প্রহরে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান, আনন্দে উদ্ভাসিত পুরো শেখ পরিবার, খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক ও দার্শনিক, নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে ছোট্ট শিশুটির নাম রাখা হয় রাসেল আর শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় তাঁর নাম হলো শেখ রাসেল। ১৮ অক্টোবর ২০২১, সরকারি উদ্যেগে প্রথমবারের মত ‘শেখ রাসেল দিবস’ উদযাপন করা হয় তাঁর আদর্শ, মানবিক গুণাবলি, মূল্যবোধ, আবেগ ও ভালোবাসা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য। দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ শেখ রাসেল, দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্ববিশ্বাস’ এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করাই ছিল উদ্দেশ্য।

শিশু শেখ রাসেলের গন্ডি ছিল বাবা মা, অর্থাৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম মুজিব। একই সাথে তাঁর সময় কাটাতো দুইবোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং দুইভাই শেখ জামাল ও শেখ কামালের সাথে। সেই আদরের শিশুটির জীবন খুব ছোট পরিক্রমার মধ্যে বেড়ে উঠছিলো। যে রাসেল ছোটবেলা থেকে খেলার সাথীদের নিয়ে প্যারেড করতো, স্বপ্ন দেখতো সে বড় ভাই শেখ জামালের মতো সেনা অফিসার হবে। আজ বেঁচে থাকলে হয়তো সে সেনাবাহিনীর বড় অফিসার হতো। বেঁচে থাকলে আজ ৮ নভেম্বর ২০২১ তাঁর বয়স ৫৭ পেরিয়ে আরো ২০ দিন হতো। কিন্তু সে চিরদিন ১১ বছরের শিশু শেখ রাসেল হয়েই বেঁচে থাকবেন ইতিহাসের পাতায় ।

১৯৭২ সালে জাপানী চলচ্চিত্রকার Nagisa Oshima নির্মিত `Rahman, Father of Bengal` স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে জাপানি সাংবাদিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় প্রশ্ন করেছিলেন-, ‘লক্ষ করছি একটি ছোট্ট ছেলে সবসময় আপনার চারপাশে ঘুরঘুর করে। ছেলেটি কে? কেন তিনি সবসময় আপনার চারপাশে থাকে?’

উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-,‘ছেলেটির বাবা সবসময়ই কারাগারে থাকতো। ফলে সে তার বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি তার বাবা, তাই সবসময় তাকে কাছে রাখি।’

শেখ রাসেল, এক অনন্ত বেদনার কাব্য আলেখ্য। জেলজীবনে বঙ্গবন্ধুর দৈনন্দিন স্মৃতিকথা ‘কারাগারের রোজনামচা’  গ্রন্থেও তাকে নিয়ে লেখা আছে অনেক দুঃখগাঁথা। ১৯৬৬ সালের ৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু লিখেছেন-, ‘বাচ্চারা দেখতে চায় কোথায় থাকি আমি। বললাম, বড় হও, মানুষ হও, দেখতে পারবা।’ মায়ের কোলে চড়ে মাত্র দেড় বছর বয়সে বাবাকে একনজর দেখার জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার যেতো শেখ রাসেল। তার কাছে জেলখানাটি ছিল আব্বার বাড়ি। ১৫ দিন পরপর বেগম মুজিব তার সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে তাদেও আব্বার বাড়ি অর্থাৎ জেলখানায় যেতেন। শেখ রাসেল বাবাকে রেখে আসতে চাইতো না। কিন্তু একবুক ব্যথা নিয়ে প্রতিবার তাকে ফিওে আসতে হতো, বাবা থেকে যেতেন তার বাড়িতে। একটি শিশু ও একটি পরিবারের ক্ষেত্রে এই গল্পগুলো অনেক কঠিন। এটি একটি পরিবারের হাসি কান্না, সুখ-দুঃখ এবং সেই পরিবারের মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন, প্রথমবারের মতো মুক্ত জীবনের স্বাদ পেলো শিশু শেখ রাসেল। ভর্তি হলো ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে। কচিকাঁচার দলের সঙ্গে ছিল তার অবাধ মেলামেশা। সুস¤পর্ক ছিল শিক্ষক থেকে গৃহকর্মী, সবার সঙ্গে। জাতির পিতার সন্তান হিসেবে তার মধ্যে কোনো অহংকার ছিল না। স্কুলের গেট থেকে খানিকটা দুরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে স্কুলে প্রবেশ করতেন যেন অন্য সতীর্থরা কষ্ট না পায়। বাড়ি থেকে দেওয়া টিফিন ভাগ করে খেতেন বন্ধুদের সঙ্গে।

শেখ রাসেলের জীবনকাল স্বল্প কিন্তু ঘটনাবহুল ও উদ্দীপনাময়। এ সময়ে তিনি কিছু লিখে যাননি বা বলে যাননি। কিন্তু তার দৈনন্দিন কর্মকান্ড ও আচার-আচরণ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বিশেষ করে শিশুদের। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে তিনি কোনো সুবিধা নেননি বা প্রকাশ করেননি। এ ব্যাপারে তাঁর প্রিয় ‘হাসু আপা’ অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক স্মৃতিচারণে তার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া তাঁর গৃহশিক্ষক গীতালি দাশগুপ্তাও অনেক স্মৃতি রোমন্থন করেছেন।

২০১৯ সালে শেখ রাসেলের জন্মদিনের আলোচনা সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বন্দিখানায় থাকা অবস্থায় যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেই যুদ্ধের সময় যখন আক্রমণ হতো, রাসেল পকেটে সব সময় একটু তুলা রাখতো। নিজের কানে দেওয়ার পাশাপাশি ছোট্ট জয়ের কানেও তুলা দিয়ে দিতো, যেন ওই আওয়াজে জয়ের কোনও ক্ষতি না হয়। রাসেল জয়ের প্রতি খুব খেয়াল রাখতো । সব সময়ই তার সেদিকে বিশেষ নজর ছিল।’ অপর এক আলোচনায় রাসেলের জীবনের ইচ্ছে এবং তার কোমল হৃদয়ের চাওয়া নিয়ে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাসেলের খুব শখ ছিল সে বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবে এবং সেভাবে কিন্তু সে নিজেকে তৈরি করতো। ছোট ছোট গরিব শিশুর প্রতি তার দরদ ছিল, যখন সে গ্রামে যেতো, গ্রামের অনেক শিশুকে সে জোগাড় করতো। সে কাঠের বন্দুক বানাতো। শিশুদের জন্য মাকে বলতো কাপড় কিনে দিতে হবে। মা ঠিকই কিনে দিতেন। বাচ্চাদের সে প্যারেড করাতো।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তি জীবনের অজানা-অদেখা গল্প নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’-এ ছোট্ট রাসেল সম্পর্কে বলেছেন-, ‘রাসেল হওয়ার পরে আমরা ভাইবোনেরা খুব খুশি হই। যেন খেলার পুতুল পেলাম হাতে। ও খুব আদরের ছিল আমাদের। একটা ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলতো। ওইটুকু একটা মানুষ, খুব স্ট্রং পার্সোনালিটি।’ শেখ হাসিনা রচিত আমাদের ছোট রাসেল সোনা বইয়ে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, ‘আমাদের পাঁচ-ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল। ছোট্ট রাসেল আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। মা রাসেলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সংসারের কাজ করতেন, স্কুল বন্ধ থাকলে তার পাশে শুয়ে আমি বই পড়তাম। আমার চুলের বেণি ধরে খেলতে খুব পছন্দ করতো ও। আমার লম্বা চুলের বেণিটা ওর হাতে ধরিয়ে দিতাম। ও হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হাসতো । কারণ, নাড়াচাড়ায় মুখে চুল লাগতো তাতে খুব মজা পেতো।’

অন্যদিকে শেখ রাসেলের গৃহশিক্ষক গীতালি দাশগুপ্তা তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন-, ‘পড়ানোর জন্য একটু নিরিবিলি জায়গা পাওয়া সহজ ছিল না। তদুপরি রাসেল ছিল দূরন্ত। পড়ানো শুরুর মাস খানেক পর শেখ হাসিনা একটি শাড়ি গৃহশিক্ষকের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, ‘রাসেলকে টানা এক মাস পড়াতে পারার জন্য এই নাও উপহার। এর আগে কোনো শিক্ষক এক মাস টেকে নাই।’

গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘একবার শেখ জামালের ঘরে পড়াচ্ছি। গৌতম বুদ্ধের একটি পিতলের মূর্তি দেখিয়ে তাঁর জীবনের নানা ঘটনা বলি। মহাপুরুষদের জীবনী খুব উৎসাহ নিয়ে শুনত। পরদিন পড়াতে গেলে বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেন, ‘মাস্টর, এত বড় সর্বনাশ করলি।’ স্বাভাবকিভাবেই শিক্ষক উদ্বিগ্ন হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর ছোট ছেলেকে কোনো ভুল শিক্ষা দিয়েছে কী? বঙ্গবন্ধু তাকে কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, তুই গৌতম বুদ্ধের জীবন কাহিনী রাসেলকে বলেছিস? ও গত রাতে একটা পর্যন্ত জেগেছিল। আমি কাজ শেষে ঘুমাতে গেলে বুদ্ধদেব সম্পর্কে আরও জানতে চায়।’ এমন অদম্য কৌতূহল ছিল শেখ রাসেলের।

১৯৭২ সালের জুলাই মাসে বঙ্গবন্ধু চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। সেখানে অস্ত্রোপচারের সময় পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিল। বঙ্গবন্ধু সুস্থ হলে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাজারে আসা নতুন সিনথেটিক শাড়ি কিনলে রাসেল বায়না ধরে তার শিক্ষকের জন্যও একটা কিনতে হবে। দুই বোন শাড়ি নিয়ে ফিরলে রাসেলের মনে হয় যে, তাঁর শিক্ষকের জন্য কেনা শাড়িটির চেয়ে দুই আপার শাড়ি সুন্দর। এ নিয়ে অভিমান করে, কান্নায় বুক ভাসায়। শিক্ষক শাড়ি পেয়ে খুব খুশি হয়েছে এটা জানানোর পরই কেবল রাসেলের মন ভাল হয়। শিক্ষকের প্রতি তার এই অগার শ্রদ্ধা ও  ভালোবাসা নতুন প্রজন্মের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।

শেখ রাসেলের হাসু আপু ১৫ আগস্টের ভয়াবহ কালরাতের মাত্র কয়েকদিন পূর্বেই সুদূর জার্মানে স্বামীগৃহে চলে যান, সাথে আরেক বোন শেখ রেহানাও। হাসু আপু জার্মান যাওয়ার সময়, ‘আমি হাসু আপুর সাথে যাবো, দেনা আপুর সাথে যাবো’ বলে খুব কেঁদেছিল রাসেল। শেখ রেহানাকে ‘দেনা আপু’ বলে ডাকতেন শেখ রাসেল। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও সেই হাসু আপুর কাছে যাওয়ার জন্যেই আকুতি-মিনতি করেছিল, মায়ের পর হাসু আপুকেই নিরাপদ আশ্রয় মনে করেছিলেন তিনি।

শেখ রাসেল দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘শেখ রাসেল এর হাসু আপু স্বামীর কর্মস্থল জার্মানে গিয়ে ছোট ভাই রাসেলের পছন্দের খেলনা কিনেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজও ঐসকল খেলা সামগ্রী আগলে রেখেছেন।’

বাঙালি জাতির জাগরণকালে সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে জন্মেছিল যে শিশু, জান্তাদের দানবীয় ষড়যন্ত্র তাকে নিয়ে গেছে ইতিহাসের ভাগ্যহত নক্ষত্রদের কাতারে। সেই দেবশিশুর নাম শেখ রাসেল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। বন্দি পিতার দীর্ঘ জেলজীবনের সময়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে মায়ের কোলে চড়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়মিত যেতো ছোট রাসেল। কিন্তু বেগম ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিবকে গোয়েন্দারা কোলের শিশু রাসেলকে নিয়ে জেরা করতেন। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেচ্ছা বিরুক্তি ও প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘বাপের পিছনে গোয়েন্দা লেগেছিল ২৮ বছর বয়সে, আর ছেলের পেছনে লাগলো দেড় বছর বয়সেই?`

ছোট্ট রাসেলের আর বড় হওয়া হয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে, বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মাত্র দশ বছর দশ মাস বয়সের এক নি¯পাপ শিশু, কী দোষ ছিল রাসেলের! সেই বিভিষীকাময় রাতে, ঘাতকরা যখন বিশ্ব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিলো, প্রাণে বাঁচার জন্য মিনতি জানিয়েছিল ছোট্ট রাসেল। মায়ের কাছে যাবে বলে যার আকুতি, গলা শুকিয়ে যাওয়া কান্না যার চোখেমুখে ছিল, ভয়ে থরথর করে যে কাঁপছিল তাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে নরপিশাচদের একজন। বাঁচতে দিল না রাসেলকে, সীমারদের মনে বিন্দুমাত্র দয়ামায়া ছিল না।

সকলের এতো আদরের ছোট্ট শেখ রাসেল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালো রাতের শেষ প্রহরে আতঙ্কিত হয়ে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করতে থাকলে নরপিশাচরা, মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে, গৃহকর্মী আব্দুর রহমান রমার হাত থেকে হেঁচকা টান দিয়ে শেখ রাসেলকে ছিনিয়ে নেয়। এরপর মৃত্যু পর্যন্ত পরবর্তি সময়টুকু তাঁর কেমন কেটেছিল, কতটুকু মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক হয়েছিল তা ঐ ঘাতকেরাই জানে। তবে মনের চোখ দিয়ে যদি দেখি বা অনুমান করি তবে হয়তো এভাবে বলা যায়-, ‘মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার পথে রাসেল দেখলো সিঁড়িতেই পড়ে আছে তাঁর পিতার লাশ । হতভম্ব সে। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না। এ কি করে হয়? স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বাঙালি জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ পরে আছে সিঁড়িতে? কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই হায়েনারা তাঁকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেল মায়ের কাছে। মায়ের লাশ দেখে, মায়ের নিথর বুকে আছড়ে পড়ে মা, মা বলে বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে আর্তনাদ করেছিল সে। না, মায়ের কোন সাড়া শব্দ নেই। মা তাঁকে বুকে জড়িয়ে আদর করে বলেনি, ‘ভয় নাই বাবা। কিচ্ছু হবে না। আমিতো আছি তোমার কাছে’। মা-বাবার পর ঐ ছোট্ট শিশু দেখলো তাঁর বড় ও মেঝ ভাই ও ভাবীদের লাশ।’

আমরা পরিবারের একজন নিকটাত্মীয়র মৃত্যুতে ভেঙ্গে পরি, চাপা ব্যথা অনুভব করি, সেই ব্যথা প্রশমনে আর্তনাদ করি, নীরবে অশ্রু ত্যাগ করি। তাহলে শিশু শেখ রাসেল অল্পক্ষণের মধ্যে বাবা-মা সহ নিজ পরিবারের এতজন সদস্যের মৃত্যু এবং তাঁদের সারিসারি লাশ দেখে কী অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করেছেন? হয়তো ভেবেছেন, হাসু আপু, দেনা আপুর সাথে জার্মানি বেড়াতে গেলেই ভালো হতো। হয়তো ভেবেছেন, হাসু আপু আমাকে নিয়ে গেল না কেন? এমনি অবস্থায়ই হঠাৎ গর্জে উঠে ঘাতকের আগ্নেয়াস্ত্র, ঝাঁঝড়া হয়ে যায় শেখ রাসেলের বুক, ঘাতক বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সাঙ্গ করে দেয় তাঁর জীবন প্রদীপ ।

 

স্বল্প ফুটেই সুরভী ছড়াতে শুরু করেছিল যে ফুল, সেটি অকালে ঝরে যাওয়ার শোকে আজও প্রতি ভোরে বাঙলার মাঠে-ঘাটে অজস্র বকুল ফুটে, ঝরে শেফালী-হাসনাহেনা। ঝরা বকুলের প্রতিবিম্বে বাংলার প্রতিটি শিশুর প্রাঞ্জল হাসির শব্দ ভেসে ওঠে- ভেসে ওঠে রাসেলের মায়াবী মুখখানি, শিশুদের ভেজা কপোল ছুঁয়ে নামে রাসেলের চোখের পানি। এ পানিতে পবিত্র হয়ে বর্তমান প্রজন্ম শহীদ শেখ রাসেলের আদর্শ, মানবিক গুণাবলী, মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করবে, ব্যক্তি জীবনে বয়ে আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন সেই প্রত্যাশা সকলের।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালো রাতের শেষ প্রহরে শেখ রাসেল আতঙ্কিত হয়ে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করেছিল, সে দৃশ্য কল্পনায় আমার নিবেদন নিচের কাব্য-কথা।

আমি মায়ের কাছে যাবো

তোমরা আমাকে মেরো না

আমি মায়ের কাছে যাবো

তোমরা আমার দুবাহু ছাড়ো

আমি নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো।

আমি ভোরের শিশির হবো

আগুনমুখার শুভ্র ঢেউ হবো

ধানের কচি ডগার বিন্দু হবো

স্নেহসুধায় বাংলাদেশকে ভরিয়ে দেবো।

তোমরা আমাকে মেরো না

আমি বন্ধুদের কাছে যাবো

নাড়ার আগুনে ছোলা পুড়িয়ে

বাংলার মাঠে বসে খাবো।

আজান দিয়েছে, ভোর হয়েছে

পড়াশোনার টাইম হয়েছে, স্কুলেতে যাবো

তোমরা আমাকে মেরো না

আমি আমার মায়ের কাছে যাবো।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক
সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আমরা কি চাই?

প্রকাশ: ০১:০০ পিএম, ২৭ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

মনে হচ্ছে আমরা ভাগ বাটারের খেলায় মেতে উঠেছি। একদল মনে করছেন “দাদা তুমি এতদিন খুব খেয়েছো, ভুঁড়ি মোটা করেছো, এখন আমার পালা!” আর একদল ভাবছেন লুটপাট এখনও শেষ হয়নি। সাধারণ জনগণ - সেটা আবার কি? 

আমরা দেখেছি ছেড়া গেঞ্জি পড়া রাষ্ট্রপতিকে অকেজো খাল খনন করতে, তারপর দেখেছি কবিতা লেখা রাষ্ট্রপতির চিনির দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর ছেলের হাওয়া ভবনের দুর্নীতি আর লীলা খেলা, তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান জেনারেলকে দেখেছি, দামি ছাগল কেনা ছেলের কোটি টাকার মালিক বাবাকে, বদলির না করার আদেশ দিতে। এখন দেখছি সাবেক পুলিশ প্রধানের কোটি কোটি টাকা কামাতে, সাবেক সেনা প্রধানকে কোটি টাকার মালিক হতে, প্রধানমন্ত্রীর পিয়নকেও নোংরা ধনী হতে। কিছু লোককে দেখছি শক্তিশালী এবং অহংকারী হয়ে উঠতে। 

মনে হচ্ছে সবাই যেন দেশ লুট করার সুযোগ খুঁজছে। অথচ গত ১৪ বছরে আমরা দেখেছি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, যমুনা রেল সেতু, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর বন্দর, চমৎকার সড়ক ও রেল যোগাযোগ এবং আরও অনেক কিছু ঘটতে। ঢাকা ৩য় টার্মিনাল, দেশে ব্যাপক ইন্টারনেট সংযোগ। নতুন কক্সবাজার রেল স্টেশন এবং রানওয়ে, নদীর তলদেশে প্রথম টানেল, মোটর পথ, দেখছি আপামর গরিব জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের, গরিবের ছেলে মেয়ে লেখা পড়া করে বড় পদে চাকরি করতে, দেখেছি বাংলাদেশি শুধুমাত্র মহিলা চালিত বোয়িং ৭৮৭ বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে। অনেক মেধাবী উচ্চ শিক্ষিত বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা এখন বিদেশে চমৎকার চাকরি করছে, যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি, ১৯৭১ সালের আগে তা প্রায় অসম্ভব ছিল। 

তাই ভাবি আমাদের জন্য কোনটি সেরা, কোনটা ভালো তা নিয়ে আমি কেন বিভ্রান্ত? আমরা কি চাই যারা আমাদের জনগণকে হত্যা করতে এবং আমাদের নারীদের ধর্ষণ করতে সাহায্য করেছিল, সে আবার মন্ত্রী হউক বা কেউ ফিরে এসে আরেকটা হাওয়া ভবন তৈরি করুক, বা আমরা কি চাই তেঁতুল আমির ক্ষমতায় আসুক বা চাই অনির্বাচিত সরকার? নাকি চাই এমন কেউ একজনকে, যিনি তার সর্বস্ব হারিয়ে দেশকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন, আমরা যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি তার চেষ্টা করছেন এবং যাকে এই ভালো কাজ করার জন্য প্রতিদিন ঐ সমস্ত খোলা ছুরি দিয়ে পিঠে ছুরিকাঘাত করার জন্য প্রস্তুত দুর্নীতিবাজদের মধ্যে বেঁচে থাকতে হচ্ছে? জানি না কোন টা মন্দের ভালো।

কেউ কখনও সম্পূর্ণরূপে নিখুঁত নয়, আমরা সবাই মানুষ, আমাদের পথ চলায় কোন কোন সময় আমরা ভুল করি, এমনকি ভালো উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও। তবে জানি এবং এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে আমি হাজার হাজার নারী ধর্ষকে আবার মন্ত্রী হতে দিতে চাই না, আবারও হাওয়া ভবন চাই না, তেঁতুল আমির চাই না, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা চাই না, আবারও অনির্বাচিত সরকার চাই না, লুটপাট চাই না। চাই স্বচ্ছ উন্নত বাংলাদেশ। গর্বিত বাঙালি হয়ে বাঁচতে চাই।


আমরা কি চাই   লুটপাট   দুর্নীতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি


Thumbnail

সম্প্রতি আমাদের দেশের ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেলো তা সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। যারা এ সহিংসতা করেছে তাদের জন্যও। কারণ তারা দেখলো, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সত্যিকারে কতটুকু শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। নাহলে এবার ষড়যন্ত্রকারীরা যে ধরনের পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছিলো তাতে যেকোন সরকারের পক্ষেই টিকে থাকা কষ্টসাধ্য ছিল। এতে আবারো প্রমাণিত হলো আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ' পোস্ট মর্টেম' হওয়া দরকার। আমি বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে বুঝেছি, প্রথম থেকেই তারেক রহমানের সাথে ড. ইউনূসের যোগাযোগ আছে এবং সেজন্য ড. ইউনূস তারেক জিয়াকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু বিশ্বে তারেক জিয়ার যে ইমেজ, তা নিয়ে তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। আর এজন্যই এবার রাগ-ঢাক না রেখে ড. ইউনূস বিশ্বকে যা বললেন, তার অর্থ দাঁড়ায়- বাংলাদেশকে উচিত শিক্ষা দাও।

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করায় যেসব ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলো তারাও এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িয়ে পড়লো। কিছু অসমর্থিত সূত্র আমাকে বলেছিল, বেনজীর আহমেদ তারেক জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। এখন মনে হচ্ছে তারেক জিয়ার সাথে আসলেই তার দেখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদে থাকার ফলে বেনজীরের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর লোক এখনও আছে। তারা ঘাপটি মেরে বসে আছে এবং তাদের মধ্যে কেউ যে প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশেই আছেন তাও কেউ হলফ করে বলতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের সংগঠন, অঙ্গ সংগঠনগুলো দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই দলটিকে আবার ঢেলে সাজানো দরকার। ঠিক তেমনিভাবে সরকারও দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে আর চলছে না। আর আমলাতন্ত্র যেভাবে চেপে বসেছে তাতে আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কারণ একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকতে হলে তাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শুধু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শই ধারণ করতে হয়। সেই আদর্শ যাতে মানুষের ভেতরে ছড়িয়ে দেয়া যায় সেজন্য সবসময় সজাগ থাকতে হয়।

কিন্তু একজন রাজাকার বা রাজাকারের পুত্র কিংবা নাতি-পুতিরা সংকটের সময় তাদের আসল জাত চেনাবেই। আর এটাই স্বাভাবিক। এবারের যাত্রায় ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে সেটা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃঢ়তা আর প্রজ্ঞারই প্রতীক। সুতরাং তার ‘জাজমেন্টে’র উপর আমি কিছু বলতে চাই না। কিন্তু আমার মতে, এ বিষয়টি তার আবারও দেখার দরকার আছে। তার পরিচালনায় গণভবন থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সমস্ত প্রশাসনে কোথায় কি হচ্ছে তা ভালোভাবে দেখার দরকার আছে।

ষড়যন্ত্রকারীদের সব পরিকল্পনা আগেই প্রস্তুত ছিলো। শুধুমাত্র কখন তারা এই আঘাতগুলো করবে তার অপেক্ষায় ছিল। যখন থেকে এই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তখন যদি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা যুবলীগ আগের মতো শক্তিশালী থাকতো তাহলে এ বিষয়টি এতো দূর পর্যন্ত আসতে পারতো না। তখন দেখা যেত, এই আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যেও ছাত্রলীগ আছে এবং এর মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সহিংসতার পথ থেকে অন্যদিকে ধাবিত করা যেতো। কিন্তু সেটা হয়নি।

গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ্য ছিলো চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়া। এমনকি তাদের সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনাও ছিলো। এর দু’টি কারণ ছিলো। এতে বহির্বিশ্বে এটি প্রমাণ করা সহজ হবে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ এবং এই সুযোগে ড. ইউনূস ক্ষমতা দখল করবে। তাছাড়া বিদেশে সেনাবাহিনীর যত সাবেক কর্মকর্তা আছেন যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন, অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না তারাও এবারের আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং এতে সমগ্র ঢাকায় চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় অন্তত ৫ লাখ প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী জড়ো করেছিলো শিবির। প্রয়োজন হলেই যাতে তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে পারে। তারা ঢাকা শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হামলা চালায়। এতে দেশে যে দগদগে ঘাঁ সৃষ্টি হয়েছে তা জাতি কখনোই ভুলবে না।

২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠন করে তখন বিডিআর বিদ্রোহ হয়। এতে অনেক মেধাবী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে সেনাবাহিনীকে সরকারের বিপক্ষে লেলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সময় তা প্রতিহত করে এগিয়ে গেছেন। কিন্তু ১৬ বছর পর আবারো ষড়যন্ত্র চেপে বসেছে। বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে সুশীলরা আর তারেক জিয়া মিলে চেষ্টা চালিয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর প্রশংসা করতেই হবে। এই সংকটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবার প্রমাণ করলো তারা শুধুমাত্র যুদ্ধের জন্যই প্রশিক্ষণ নেয়নি। তারা দেশ রক্ষায় ভেতর এবং বাইরের শত্রু দুটিকেই মোকাবেলা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ, আনসার এবং বিজিবি সবাই যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা রাজনীতির সাথে যুক্ত এদের আরও আদর্শপরায়ন হতে হবে। এরা আদর্শচ্যূত হয়ে গেছে। গত ১৬ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন তা সঠিক ছিল। কিন্তু এখন এই নতুন পরিস্থিতির আলোকে দেশ পরিচালনার নতুন পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে তার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমি মনে করছি।


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী 

সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট।



দিনান্তের কথা   নতুন পরিস্থিতি   নতুন দৃষ্টিভঙ্গি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

জন্মদিন সজীব ওয়াজেদ জয় : বাংলাদেশের সমান বয়সী

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৭ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

‘‘এরকম শান্তিপূর্ণ একটি আন্দোলন কীভাবে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, সহিংসতা এবং লুটপাটের আন্দোলনে পরিণত হল? কারণ যথারীতি বিএনপি ও জামায়াত জোট তাদের নিজস্ব একটি সহিংস আন্দোলন চালানোর জন্য মূলত একটি অরাজনৈতিক ও অহিংস আন্দোলনকে ব্যবহার করেছে। স্বার্থান্বেষী মহলের সম্পৃক্ততা উপলব্ধি করে, প্রতিবাদকারীরা নিজেরাই সহিংসতায় লিপ্ত থাকার কথা অস্বীকার করে বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যে, এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে একটি তৃতীয় পক্ষ জড়িত রয়েছে, যার সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের কোনও সম্পর্ক নেই।... 

দেশের শিক্ষার্থীরা মোটেও সন্ত্রাসী নয়। বিএনপি-জামায়াত চক্র তাদের বাংলাদেশ ভাঙার দলীয় এজেন্ডার আড়ালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে।’’

কোটা দাবি নিয়ে ঘটে যাওয়া নাশকতা ও সহিংসতা সম্পর্কে ২৫ জুলাই(২০২৪) প্রকাশিত সজীব ওয়াজেদ জয়ের মন্তব্যের সূত্র ধরে তাঁর জন্মদিন নিয়ে কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা করা হলো।  

২৭ জুলাই আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৪ তম জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের যে কোনো ঘটনায় সামনে এসেছেন, দিক-নির্দেশনামূলক কথা বলেছেন- দেশকে নিয়ে তাঁর অনুভূতি প্রকাশের ভাষাও অনন্য।তিনি বাংলাদেশের সমান বয়সী। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এবং সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।এদেশের অফিস-আদালত থেকে শুরু করে টেন্ডার কিংবা ব্যাংকের লেনদেনের যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে সেই ডিজিটালাইজেশনের নেপথ্যে তাঁর অবদান রয়েছে।এজন্য কোভিড-১৯ এর প্রভাবে মহামারি লকডাউনে যখন বিশ্বজুড়ে অনলাইন যোগাযোগ একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছিল তখন এদেশের কৃতি সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে বেশি করে মনে পড়েছে।ব্যাধির সংক্রমণ রোধে গৃহবন্দি থেকে অনলাইনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং-এ বেতন ও সহায়তা পাওয়ার দৃষ্টান্ত আমরা তখন ভালভাবে আত্মস্থ করে নিয়েছিলাম।কৃষিভিত্তিক সমাজ ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে পরিণত হয়েছে।কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিক-নির্দেশনায় কাজ করে প্রযুক্তির প্রসার ঘটেছে এদেশে। ফলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে।এজন্যই তাঁকে আমরা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশেরও অন্যতম কাণ্ডারী তিনি। 

জয় ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারে বিএসসি ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ জন তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক  উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তিনি অনেক আগে থেকেই রাজনীতিসচেতন ২০০৮ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনাকে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়ে থাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ হাসিনা আর তার সফল রূপকার হলেন সজীব ওয়াজেদ জয় 

জয়ের ভেতর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো প্রচণ্ডতা রয়েছে পরিশ্রমী তারুণ্যের প্রাণময়তা এজন্য আমেরিকা থেকে তাঁর ফিরে আসা, রাজনীতিতে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শুভ সূচনা ছিল দেশের মধ্যে যারা একসময় দুর্নীতি নাশকতার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের মসনদ কেঁপে উঠেছিল তাঁর দেশকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে তিনি মূলত বঙ্গবন্ধুর মতোই মানুষকে আশাবাদী করে জাগিয়ে তোলার জন্য কথা বলেন কাজ করেন একসময় তাঁর মতো বয়সে বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে জাগিয়েছিলেন; জয়ও তেমনি সরকারের সঙ্গে থেকে দেশের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান করে আওয়ামী লীগকেও গড়ে তুলতে চান ভাষণ দেবার সময় তাঁর ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতোই সম্মোহনী চেতনা স্ফুরিত হয় তিনি ২০০৯ সাল থেকে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা পেশাগত অভিজ্ঞতা দিয়ে এদেশের আইসিটি সেক্টরকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন তরুণদের উজ্জীবিত করছেন মৌলিক গবেষণায় বিএনপি-জামায়াতের গাত্রদাহের কারণ এজন্য যে জয় উচ্চশিক্ষিত এবং যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার পুরোভাগে তিনি আছেন শেখ হাসিনা যেমন নির্লোভ, মানুষকে ভালোবাসেন নিজের অন্তর থেকে, জয়ও তেমনিভাবে এগিয়ে চলেছেন বিরুদ্ধ মানুষের মন জয় করতে হয়েছে তাকে এজন্য তার সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা কাজ করেছেন সাধারণ মানুষকে শেখ হাসিনা সরকারের কর্মসূচি, সাফল্য বর্ণনা করতে হয়েছে ডিজিটালকরণের জন্য। অনেকে ভাবতে পারেন তিনি আমেরিকান সিটিজেন এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন যেহেতু জয়ের মা নিজে এই মাটি, মানুষের নিকটজন সেহেতু তিনিও তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন 

সজীব ওয়াজেদ জয় ভিশনারি লিডার তিনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে ২০০৯ সালে দেখতে পেয়েছিলেন বলেই আজ দেশে ১০ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন শিক্ষাখাতে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বেড়েছে বিশেষত করোনা মহামারিতে সকল প্রতিষ্ঠান এখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল পাঠসূচিতে যেমন শিশুরা আইসিটি অধ্যয়ন করছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার এমনকি দেশের বিপিও খাতে বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করা হচ্ছে; ৫০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ এই মুহূর্তে আইসিটি সেক্টরে চাকরি করছেন ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ মানুষের কাজ করার সুযোগ হবে এই খাতে আর এসবই সম্ভব হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে গেছে তেমনি তার পুত্রের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে এদেশ প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে

অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জয় বলেছেন, ভবিষ্যতের নেতা এদেশের তরুণরাই উল্লেখ্য, ঢাকার সাভারে শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তারুণ্যনির্ভর ৩০টি সংগঠনের হাতেজয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডতুলে দেওয়ার সময় তাদের এই অভিধা দেন তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে নিজেদের উদ্যোগে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসা তরুণ-তরুণীদের বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতা অভিহিত করার কারণ তার জনসম্পৃক্ততা।নিজে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে আর সেই কাজে তরুণ প্রজন্ম তাঁর অনিবার্য লক্ষ্য এর আগে তিনি দেশের ভেতর বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা, তরুণ জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক অর্জনের গল্প শুনিয়েছেন বিশ্বের মানুষকে তাঁর মতে, ‘আমাদের দেশের তরুণরা এখন দেশের জন্য কাজ করতে যেভাবে এগিয়ে এসেছে, আগে সেটা দেখা যেত না দেশের সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারব কি না, দেশকে এগিয়ে নিতে পারব কি না, সেই বিশ্বাস আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম কারণ স্বাধীনতার চেতনা আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’ কিন্তু ‘এখন আমাদেরকে শাইনিং স্টার বলা হচ্ছেনেক্সট ইলেভেন’-অর্থনীতির দেশের একটি আমরা।’ সজীব ওয়াজেদ জয় সেদিন যে কথা বলেছেন, তা একজন তরুণ নেতার আদর্শ বিশ্বাসের কথা তিনি নিজে নতুন প্রজন্মের নেতা, তাই যুবসমাজের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন  

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত অপর এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, ‘সৎ সাহস নিজের আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো কঠিন কাজ করা যায় আমরা কারও চেয়ে কম নই বিদেশের সঙ্গে আমরা সমানে সমান সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে বিদেশী সাটিফিকেট প্রয়োজন নেই।’ অর্থাৎ এই তরুণ নেতৃত্বের কাছে নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু তৈরির ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে সততা এবং আদর্শের কোনো বিকল্প নেই সৎ না থাকলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না আর মানুষের ভালোবাসা ছাড়া ক্ষমতায় আসা যায় না তিনি বিশ্বাস করেন, নিজের দেশকে টেনে উঠাতে দেশপ্রেম দেখাতে হবে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে টেনে তোলার মধ্যেই দেশপ্রেম নিহিত রয়েছে

প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা বহমান তা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় এই তৃতীয় প্রজন্মের নতুন নেতৃত্বের প্রতি আমাদের সকল আকর্ষণ এখন কেন্দ্রীভূত বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে নেতৃত্বের বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল উপমহাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য একটি ব্যাপক বিস্তারি প্রসঙ্গ ভারতের দিকে তাকালে বর্তমান রাজনীতির পারিবারিক ধারা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় জওহরলাল নেহেরু গান্ধীর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর সময় মোরালি দেশাইয়ের মতো অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও ইন্দিরা গান্ধীই হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, তাঁর কন্যা বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা যেমন সত্য তেমনি শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় লক্ষণীয় ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন পঁচাত্তর পরবর্তী তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ বড় বড় নেতারা দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনাকেই জনগণের সামনে দাঁড় করান  

খালেদা জিয়া যেভাবে তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে এনে দলের পদে সমাসীন করেছিলেন জয়ের জীবনে তেমনটি ঘটেনি বরং জয় রাজনীতিতে নামতে পারেন ধরে নিয়ে ২০০৪ সালে ‘হাওয়া ভবনে’র মালিক তারেক জিয়াকে বিএনপি লুফে নিয়েছিল 

জয় বাংলাদেশের মৃত্তিকার সন্তান তাঁর রাজনীতিতে আসাটা আকস্মিক হলেও দলকে সংগঠিত করা, দলের কোন্দল মেটানো, দলকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রধান কাজ হিসেবে গণ্য হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনের আগে মহাজোট সরকারের সময় পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের সামনে নতুন নেতৃত্বের দরকার ছিল তাই তাঁর মতো কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে সামনে আনা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক বলে গণ্য হয়েছিল ২০১০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের নিয়মিত সদস্য পদ গ্রহণ করেন

ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয় সবসময়ই বলেছেন, উন্নয়নের অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করতে হলে আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে হবে তাঁর মতে, নতুন আধুনিক একটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে বাংলাদেশের জন্য এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় মহামারি মোকাবেলায় প্রযুক্তি আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করে রেখেছে এজন্য বিরোধী দলের অপপ্রচার মোকাবেলা সরকারের সফলতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে ভিন্ন রকম কৌশল নিতে হবে কারণ জয়ের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে 

প্রকৃতপক্ষে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের উন্নয়নে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি আমাদের তরুণদের সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যাশায় উজ্জীবিত করেছে একাধিক বেসরকারি টেলিভিশন- প্রচারিত অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি নানা প্রসঙ্গে গঠনমূলক রাজনৈতিক কথা বলেছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘লেটস টক’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অনেকটা এগিয়েছে তিনি কেবল প্রযুক্তি নিয়ে ভাবেন না, তিনি মানুষকে মূল্য দেন মানুষের দুঃখে সমব্যথী হন আসলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পিতা-মাতা বিজ্ঞানী . ওয়াজেদ শেখ হাসিনার মতো আন্তরিক হৃদ্যতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অনেক ভাবেই- যুবলীগ, ছাত্রলীগ কিংবা বিশেষ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত বক্তৃতা দিয়ে দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দূর করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যেমন সক্রিয় উদ্যোগ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তেমনি জয়ের পরামর্শে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে ৯৪টি যন্ত্রাংশের ওপর থেকে উচ্চ আমদানি শুল্ক উঠিয়ে শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে জয় জানেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে সকল দুর্যোগ মোকাবেলা করে

জয়ের মতো নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আমাদের রাজনীতিতে যেমন ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়েছে তেমনি উন্নয়নে সার্বিক অগ্রগতি সম্পন্ন করেছে রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের পদচারণা আমাদের এগিয়ে চলার পথে বাড়তি প্রাপ্তি নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে প্রতিবছর ভোটার তালিকায় তরুণ ভোটার আসে প্রায় ২৩ লাখ কোটি ২১ লাখ ভোটারের মধ্যে কোটি ভোটারের বয়স ৪০ বছরের নিচে মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ নতুন প্রজন্মের তাদের জন্য নতুন প্রজন্মের নেতা অনিবার্য সজীব ওয়াজেদ জয় এসব নতুন ভোটারদের প্রত্যাশার ভাষাকে ঠিকই বুঝতে পারেন ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার কৌশলও তিনি জানেন কারণ আওয়ামী লীগ এদেশের যে উন্নয়ন করেছে বিগত জামায়াত-বিএনপি চারদলীয় জোট সরকার তা করেনিঅথচ বিএনপির মিথ্যা প্রচার প্রচারণা এখনও মোকাবেলা করতে হচ্ছে

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় রাজনীতিতে সক্রিয় অন্তরালে থেকেই নিজের প্রচারে বিশ্বাসী নন তিনি তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছেন কিন্তু প্রকাশ্যে বিচরণ তার কম বঙ্গবন্ধুর নাতি এবং শেখ হাসিনা . ওয়াজেদ মিয়ার পুত্র হিসেবে পারিবারিক সূত্র গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তিনি যে মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করতে এসেছেন তা বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে এদেশের মানুষের প্রকৃত দেশপ্রেমিকের পক্ষে দেশ জাতির কল্যাণ করাই স্বাভাবিক 

আওয়ামী লীগের যে গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে তা অন্য কোনো দলের নেই সজীব ওয়াজেদ জয় সেই গৌরবকে কাজে লাগিয়ে ২০০৯ সালে থেকে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন মধ্যবিত্তের সন্তান বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন পাকিস্তানি শাসকদের ফাঁসির ভয়কে উপেক্ষা করেছেন জেল খেটেছেন মাসের পর মাস সেই ত্যাগী নেতার নাতি হিসেবে জয়কে মনে রেখেছেন- এই সব মূঢ়, মূক মানুষের মুখে দিতে হবে ভাষা তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় নিয়েই জাতির পিতা নিজের সন্তানকে (শেখ মনি, শেখ কামাল) রাজনীতিতে এনেছিলেন আর তা ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য পারিবারিক পর্যায়ে তিনি যা করেছিলেন তা ছিল দেশের স্বার্থে, মানুষের মঙ্গল চিন্তা করে অনেকেই তাঁর বাকশাল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধাচারণ করেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দেশের জন্য মমত্ববোধকে ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না   

আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের কাজে এগিয়ে এসেছেন মানুষের আকর্ষণে মাতার সান্নিধ্য তাঁকে রাজনীতির শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী সমর্থক সকলেই খুশী হবেন কারণ তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন আওয়ামী লীগকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নেতৃত্ব উন্নয়নকে একইসঙ্গে আলিঙ্গন করতে হবে জয় হঠাৎ আবির্ভূত নেতা নন তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তাঁর আছে দৃঢ় চেতা অভিভাবক যিনি সকল বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারঙ্গম কখনও পথ চলতে ছিটকে পড়লে শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়ে ঠিক পথে আনতে পারবেন তাঁকে কারণ জয় একান্তই মাতৃ অনুগত সকলেই জানেন, জয় আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সদস্য এর বাইরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এই অর্থে তিনি দলের নীতি-নির্ধারক না হলেও বিভিন্নভাবে দল দলের নেতৃত্বকে অনেকরকম সহযোগিতা দিচ্ছেন এখন এগিয়ে যাচ্ছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে স্বাধীনতার চেতনায় মথিত সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবন তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জনের পরও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হওয়ার জন্য জাতির পিতাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত দিকে হাঁটা দায়ী তাঁর বক্তব্য হলো- ‘আমরা লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি বছরেই নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছিলাম সেই সময়ে আসে ৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এরপর স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি ক্ষমতায় আসে।’ সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণদের মূল্যবান কথা বলেছেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা কোনোদিন ভুলবেন না ভুলতে দেবেন না আর কাউকে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেবেন না এমন মিথ্যা প্রচারের সুযোগ দেবেন না, যাতে জাতি শহীদদের ভুলে যায়।’ তাঁর মতে, ‘যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা বাংলাদেশের উপর কী বিশ্বাস রাখবে?’ 

শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনায় সজীব ওয়াজেদ জয় যেমন তৎপর তেমনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে নিজের নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা নিয়ে জনসমক্ষে হাজির হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নতুন কাণ্ডারী সজীব ওয়াজেদ জয়কে জন্মদিনে অভিবাদন। মূলত বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে- একথা সজীব ওয়াজেদ জয় বারবার বলে এসেছেন এজন্য দরকার যুবসমাজের পরিশ্রম তরুণ নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে হবে আমাদের শেখ হাসিনা সরকার এক নাগাড়ে ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ উন্নীত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনীতি অভূতপূর্বভাবে এগিয়েছে বিশ্বে আমাদের অর্থনীতি এখন ভাল অবস্থানে কারণ তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করছে আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে (কোটা দাবিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত) সর্ব প্রকার ষড়যন্ত্র অপপ্রচার দূর করার জন্য সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনকারণ দেশপ্রেমিক জয়ের রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা।তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস। 

লেখক : . মিল্টন বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু গবেষক,  বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)


ইনসাইড থট   সাদা কালো   জন্মদিন   সজীব ওয়াজেদ জয়  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আরও একটি ১৫ আগস্টের ড্রেস রিহার্সাল?

প্রকাশ: ০৩:০৭ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

রাজধানী ঢাকা ও আশে পাশের এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাস ও তাণ্ডবের সাথে চলমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কি কোন সম্পর্ক ছিল? পুরো বিষয়টা সুষ্ঠুভাবে বিচার বিশ্লেষণ করলে ছিল তা মনে করার কোন কারণ নেই। তারা সরকারি চাকুরিতে কোটা প্রথা বিলুপ্তি চেয়ে শুধু মেধার ভিত্তিতে চাকুরি প্রাপ্তির যোগ্যতা হওয়া উচিত বলে যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা যে যৌক্তিক সেই ব্যাপারে কেউ কখনো দ্বিমত করেনি যদিও বিশ্বের সকল দেশে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থার প্রচলন আছে। ইউরোপের সকল দেশে সরকারি ও বেসরকারি সকল চাকুরিতে চল্লিশ শতাংশ চাকুরি মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা আট আর জাপানে পাঁচ। এই গুলো সব উন্নত বিশ্বের দেশ বা অঞ্চল। ভারতের কথা নাই বা বললাম।

বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সরকারি প্রজ্ঞাপনের দ্বারা ঘোষিত হয়। এরপর তা বাহাত্তর সালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। যে কোন দেশেই এই কোটা ব্যবস্থা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সংস্কার করা হয়। বাংলাদেশে তেমনটি না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পঁচাত্তর সালের পর বস্তুত পক্ষে পুরো কোটা ব্যবস্থাই অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল। বিশেষ টার্গেট ছিল ত্রিশ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা। ঐ সময় মুক্তিযোদ্ধা মানে একজন অপরাধী কারণ তারা ক্ষমতাসীনদের সাধের পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলা নামের একটা স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করেছিলেন। দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সূত্রে পান জিয়া এরশাদ জামানার ও তাদের ভাবধারার একটি সর্বনাশা আমলাতন্ত্র যাদের অধিকাংশ সদস্যই জন্মগত ভাবেই ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী। শেখ হাসিনার সেই আমলে ঘর গোছাতেই তিনি পুরো সময় ব্যয় করেন। তার সেই মেয়াদের প্রথম দেড় বছর বিএনপি-জামায়াত জোট তাঁকেতো কাজই করতে দেয় নি। আজ এই অজুহাতে শ্রমিক ধর্মঘটতো কাল আরেক অজুহাতে হরতাল বাব চট্টগ্রাম বন্দর অচল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠনের আগে কেউ এই কোটা নিয়ে কোন প্রশ্নই তুলেনি বা আন্দোলনের কথাও ভাবেনি। কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রথম রাস্তায় নামে ২০১৮ সালে। সেই সময় এই আন্দোলন কিছু দিনের মধ্যে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে রূপ নেয়। তবে সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অনেকটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও তার সংলগ্ন এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। এক সময় আক্রান্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তার পরিবার। উপাচার্যের বাসভবনে চালানো হয় এক ভয়াবহ তাণ্ডব যদিও কোটা রাখা না রাখার সাথে উপাচার্যের কোন সম্পর্ক ছিল না। ঢাকার জনজীবন হয়ে যায় বিপর্যস্ত। তখন প্রধানমন্ত্রী এক নির্বাহী আদেশ বলে পুরো কোটা ব্যবস্থাকেই বাতিল করে দেন। বলতে হয় বাতিল করাটা পদ্ধতিগতভাবে হয়তো ত্রুটিযুক্ত ছিল। তার পাশে থাকা আমলাকূল এই সম্পর্কে তাঁকে সঠিক পরামর্শ হয়তো দিতে পারতেন। দেননি কারণ এই দেশে এক শ্রেণীর আমলা আছেন যারা সরকারকে সময় মতো অনেক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হন বা দেন না। বলা হয় সব সময় আমলার পরবর্তী সরকারের জন্য কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ২০১৮ সালের থেকে সরকারি চাকুরিতে আর কোন কোটা ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না। সব সরকারি চাকুরিই হয়েছে মেধার ভিত্তিতে।

২০০৯ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট নানাভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছে। একাধিক পশ্চিমা শক্তি তাদের সরাসরি সহায়তা করেছে। এই কাজে তাদের পক্ষে কাজ করতে এই দেশে তারা সৃষ্টি করেছে নানা ছদ্মবেশে বেশ কয়েকটি সংগঠন যে গুলো সুশীল সমাজের সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালের মে মাসে মাঠে নেমেছিল হেফাজতে ইসলাম নামের একটি মাদ্রাসা ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন। তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট আর এক শ্রেণীর মিডিয়া। সেই সময় শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও সাহসের কারণে সরকার উৎখাতের তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি প্রধান বেগম জিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শুরু হয় দেশে আর এক ভয়াবহ অগ্নি সন্ত্রাস। প্রায় তিনশত নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয় পেট্রোল বোমা বা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। বাধ যায়নি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও। কয়েকশত কোটি টাকার সরকারি ও বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়। যখনই দেশে একটা নির্বাচন আসে অথবা দেশে অর্থনীতি সচল থাকে তখনই বর্তমান সরকার বিরোধী জোট এসব কর্মকাণ্ড শুরু করে। তাদের মদদ যোগাতে এগিয়ে আসে তাদের অর্থে লালিত এই দেশে ক্রিয়াশীল বর্ণিত সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো ও এক শ্রেণীর শিক্ষিত নাগরিক সমাজ। এবারের তাণ্ডবও পূর্বেও সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের এক ধরণের ধারাবাহিকতা। পার্থক্য শুধু এবার তা ছিল অনেকটা সুপরিকল্পিত।

সরকারি চাকুরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেশের উচ্চ আদালতে ২০২১ সালে একটি রিট মামলা দায়ের করলে আদালত ২০১৮ সালের নির্বাহী আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে সরকার তড়িৎ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিষয়টা পূনঃবিবেচনরার জন্য আপিল করে। কিন্তু এরই মধ্যে আবার একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সকল বিবেকবান মানুষ তাদের বুঝানোর চেষ্টা করে কোন মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সরকার এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে মহলটি অগণতান্ত্রিক উপায়ে বর্তমান সরকারের পতন চায় তাদের পোষা সুশীল সমাজের কিছু সদস্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা ও শক্তি নিয়োগ করে। এরই মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৭ আগস্ট মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করে। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার জন্য এই সুশীলরা বলেন এটি আদালতের কোন বিষয় নয়। সরকার প্রধান চাইলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে পারেন। এমন কপট ও স্বার্থান্বেষী শিক্ষিত নাগরিক সমাজের সদস্য এর আগে এই দেশে কখনো দেখা যায় নি। শেষ পর্যন্ত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সকল প্রথা ভেঙ্গে টিভিতে এক ভাষণ দিয়ে ছাত্রদের আশ্বস্ত করেন তিনিও তাদের দাবির সাথে একমত। দেশের প্রধান বিচারপতিও শিক্ষার্থীদের দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মামলা নিষ্পত্তির তারিখ ১৭ দিন এগিয়ে এনে ২১ জুলাই নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি। এটিও একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। কিন্তু মূল ষড়যন্ত্রকারীরা বসে থাকবে কেন? তাদের উদ্দেশ্যতো এই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে দেশে এক চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে উৎখাত করা আর সুযোগ পেলে দেশে আর একটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করা। এর আগেতো এদের শ্লোগানই ছিল ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আর একবার’।

যেহেতু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোন একক নেতৃত্ব ছিল না তাদের আন্দোলনকে পুঁজি করে সরকার উৎখাতের সকল ব্যবস্থা মোটামুটি করেই ফেলেছিল সরকার বিরোধীরা। আন্দোলনকারীদের অপরিপক্ব নেতৃত্ব বুঝতেই পারেনি কখন নীরবে তাদের আন্দোলন বেহাত হয়ে গেছে। মূল নেতৃত্ব চলে গেছে লন্ডনে। যেই আন্দোলন শুরু হতেই সুশৃঙ্খল ছিল সেই আন্দোলন হঠাৎ করে এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করলো। এই তাণ্ডবে শরিক করার জন্য নরসিংদী কারাগার ভেঙ্গে সকল জঙ্গিদের মুক্ত করে দিল যাদের মধ্যে ছিল নয়জন জঙ্গি। কারাগার থেকে লুট হলো ৮৫টি অস্ত্র আর হাজারের উপর গুলি। প্রাপ্ত তথ্য হতে দেখা যায় পুরো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ চলে গেল একাত্তরের পরাজিত শক্তির কাছে আর তাদের সকল প্রকারের নির্দেশনা আসছে লন্ডন থেকে।

২১ জুলাই দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাদের চূড়ান্ত রায়ে বস্তুত পক্ষে শিক্ষার্থীদের সব দাবিই যথার্থ বলে রায় দিয়েছেন। এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা ঢাকার সকল প্রবেশমুখ তাদের দখলে নিয়েছে। শুরু করে দেয় তাদের তাণ্ডব। রায় আসার পূর্বেই ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু ঢাকাতেই রাষ্ট্রের ৭৯টি স্থাপনা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছে। তাদের মূল টার্গেট ছিল বর্তমান সরকারের আমলে দেশে যত উন্নয়নমূলক স্থাপনা হয়েছে তাকে ধ্বংস করা। আর দু’একদিন সময় পেলে তারা হয়তো শাহ আমানত বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ধ্বংস করতো আর বিশ্বনন্দিত পদ্মা সেতুর ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। মারাত্মক ক্ষতি করতে পারতো কর্ণফুলি টানেল। তার আগেই ১৯ জুলাই দেশে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সরকার রাজধানী সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে তা বলবৎ করতে সেনাবাহিনী নামালো। এই যে এত ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ঢাকা ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে সন্ত্রাসীরা বোমা বিধ্বস্ত সিরীয় বা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মতো করে দিল তা আরো ভয়াবহ হতো সেনাবাহিনী যদি সময়মতো তাদের উপর ন্যস্ত জাতীয় দায়িত্ব পালন না করতো।

তাণ্ডবের ভয়াবহতা দেখে এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যারা এই সব কর্মকাণ্ড করেছে তারা প্রত্যেকেই বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জঙ্গি। যে সব স্থাপনার উপর সন্ত্রাসীরা হামলা করে তা ধ্বংস করেছে তা পূর্বে কখনো দেখা যায় নি। এই স্থাপনাগুলোর গুরুত্ব ও খুঁটিনাটি সম্পর্কে তারা আগে হতেই ওয়াকিবহাল ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন বা ডাটা সেন্টার তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই সব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে তিনজন পুলিশ সদস্য সহ নিহত হয়েছেন প্রায় দুইশত জন যাদের মধ্যে যেমন আছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তেমন আছে সরকারি দলীয় ছাত্র লীগের কর্মীরাও। একজন পুলিশ সদস্যকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে এই সন্ত্রাসীরা যা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কল্পনাও করতে পারে না। সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকাকে শুধু সারা দেশ থেকে নয় বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া যে কারণে বিটিভিতে আর ডাটা সেন্টারে অগ্নি সংযোগ। কোন এক পর্যায়ে তারা যে গণভবনে হামলা করে আর একটি ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটাতো তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। হয়তো দখল হতো বঙ্গভবন আর সংসদ ভবন। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিবতো রুহুল কবির রিজভি স্লোগান তুলেছিলেন আন্দোলনকারীরা কারাগারে আর তারা থাকবে সংসদে।

কোটা বিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে এই দেশদ্রোহিদের কর্মকাণ্ড সরকার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। ৭৬ বছর বয়সি দেশের প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কত চড়াই উৎরাই পার হয়ে এতদূর এসেছে তা হয়তো মৌসুমি আওয়ামী লীগাররা জানে না। যে দলটি এতদিনে একটি শত বছরে পুরানো বট বৃক্ষের মতো শক্ত হওয়ার দরকার ছিল তা যে গত চার মেয়াদে টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে কত নড়বড় হয়ে গিয়েছে তা অনেকে উপলব্ধি করে না। দলটি বট বৃক্ষের বদলে বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে হয়ে গিয়েছে একটি পুরানো ঘুণে ধরা মান্দার গাছের মতো। এই যে এত এত পরজীবী আওয়ামী লীগের রাতারাতি মুজিব কোট বানিয়ে গত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হলেন এই ক্রান্তিকালে তারা কোথায় ছিল? বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্র লীগ, নেতারা চলতে গেলে সামনে পিছনে ডজন ডজন মোটর সাইকেলের এসকর্ট থাকে সেই নেতাদের ভূমিকাই বা কি? হয়তো দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের একটি প্রশ্ন সহজে পোঁছাবে না। তাদের একটাই প্রশ্ন ‘আওয়ামী লীগে কি আর একজন সৈয়দ আসরাফ জন্ম নিবে না?’ ৭৯ বছরে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক ভাবে এত ভঙ্গুর এর আগে কখনো দেখা যায় নি। বর্তমান দুর্যোগ বা ক্রান্তিকাল হয়তো এক সময় কেটে যাবে তবে বুঝতে হতে দেশের বিরুদ্ধে যারা সর্বদা ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধে লিপ্ত তারা ক্লান্তিহীন ভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে। দলকে যদি দ্রুত সংস্কার করা না যায় তা হলে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই দলটি ভেঙ্গে পরতে বেশী সময় লাগবে না। একজন শেখ হাসিনা আর কতদিকে সামাল দিবেন?


সময়-অসময়   ড্রেস রিহার্সাল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াও


Thumbnail

একটি মিথ্যা অপবাদ কেমন করে সত্য করে তোলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান ‘রাজাকার’ আন্দোলন তার স্পষ্ট প্রমাণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সেদিন কাউকে রাজাকার বলেননি, যা বলেছিলেন তার মর্মার্থ ছিল- আর সকলের সাথে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারই কোটা সুবিধা পাবে, রাজাকার পরিবার কেন পাবে সে প্রশ্ন তিনি জাতির কাছে করেছিলেন। এই বক্তব্যকে ফু্লিয়ে ফাঁপিয়ে, সত্য বিকৃত করে ঘোষণা করে দেয়া হলো, তিনি বলেছেন সবাই রাজাকার! রাজাকার হলে এই দেশে আর চাকুরি পাওয়া যাবে না। সুতরাং সব ভাঙ্গো, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের জন্ম হলো। সাথে এসে যুক্ত হলো মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত বিরোধী শক্তি, তাদের ‘নাতিপুতি’ বা বংশধরেরা আর সে ভাবধারায় বিকশিত একটি জ্ঞানপাপী সম্প্রদায়।

আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগানগুলো ছিনতাই হয়ে গেছে! আমাদের অনুপ্রেরণাগুলো ইচ্ছামতো শব্দ বসিয়ে বিকৃত করে দেয়া হয়েছে। মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে মৌলবাদী চেতনায় তথাকথিত ‘সমৃদ্ধ’ গোষ্ঠী আন্দোলন নিয়ে গান গাইছে। একাত্তর আজ আবার ভূলুণ্ঠিত। নিহত শিবির কর্মীকে করা হয়েছে জাতির সহিংসতা উস্কে দেবার ‘আইকন’! নির্দয়ভাবে চাকুরিজীবী পুলিশ কর্মীদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে, গাড়ি পোড়ানো, দালান পোড়ানো, সরকারি সম্পত্তির ক্রমাগত ধ্বংসসাধন, রাজপথে নামিয়ে দেয়া মিথ্যার আন্দোলন, এসবের অর্থ কখনোই মানুষের ক্ষোভ নয়, এ সবই প্রতিশোধের স্পৃহা কারণ এরা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল। আর সেই একাত্তর যার নেতৃত্বে হয়েছিল সেই জাতির পিতাকে অসম্মান তাদের করতেই হবে। আর তাঁর কন্যা যদি এই রাষ্ট্রের সকল মিথ্যাকে ছাপিয়ে দেশটাকে দুনিয়ায় উজ্জ্বল করে তুলে ধরেন তাহলে তাদের থাকে কী? সুতরাং তাকেও মিশিয়ে দাও।

দুর্ভাগ্য এই যে, ‘বিচিত্র’ বাংলাদেশে ইতিহাস বারবার উল্টোদিকে চালনা করা হয়েছে। আর সৌভাগ্য যে, অনেক ত্যাগের মাধ্যমে ‘এই’ বাংলাদেশ আবার সত্য প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে। এই দোলাচলে আমাদের বঙ্গ ভূ-ভাগের ইতিহাস বারবার আবর্তিত হয়, আর জন-মানুষকে তার ঐতিহাসিক মূল্য দিতে হয়।

বাংলাদেশ নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াবে। এই দেশ রাজাকারের নয়, এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ! বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলায়’ কোন রাজাকারের ঠাঁই থাকবে না। এই দেশ সকলের জন্যে নয়, এই কথা আমাদের মনে মেনে নিতেই হবে। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।


সহিংসতা   বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াও  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন