ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় না নিয়ে বাংলাদেশের সাফল্যের কোন ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩:০৪ পিএম, ২৬ নভেম্বর, ২০২১


Thumbnail

২০১৮ সালে ফোর্বসের বিশ্বের ১০০ জন সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীর তালিকায় ২৬ তম স্থানে থাকা বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাশালী মহিলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন হাসিনা। বর্তমান দশকের ১০০ জন গ্লোবাল থিষ্কার্সের তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফরেন পলিসি জার্নালের তালিকায় ও রয়েছে হাসিনা। ২০১৪ সালে, মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং মেয়ের শিক্ষার প্রতি তার প্রতিশ্রুতির জন্য তাকে ইউনেস্কো পিস ট্রি পুরষ্কার প্রদান করা হয়।

শেখ হাসিনার উপর অনেক হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। মুহাম্মদ এশাদ শাসনকালে দুটি হত্যার চেষ্টা হয়েছিল; ১৯৯১-১৯৯৬ সালের বিএনপি শাসনামলে চারটি, ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ আমলে চারটি, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত সরকারের সময় চারটি, সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়াদে চারজন তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। শেখ হাসিনার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা ছিল ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। এ দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তার সমাবেশে এক ডজন আর্জেস গ্রেনেড রে অভিযোগ আনা হয়। যদিও শেখ হাসিনা অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন, কিন্তু এই হামলার ফলে তার শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (১৯৯৬-২০০১, ২০০৯-২০১৩, ২০১৪-২০১৮, ২০১৮ থেকে বর্তমান) শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সংস্কারের জন্য ব্যাপক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি এবং সবার জন্য সাম্যের প্রতি তার অক্লান্ত মনোযোগের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক সম্মানিত হন। এডিবি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশকে স্থান দিয়েছে, যা চীন, ভিয়েতনাম এবং ভারতকে একত্রিত করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য বোঝার চেষ্টা করার সময় বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন। তবে এই সাফল্যগুলির কোনওটিই সহজ ছিল না। শেখ হাসিনার সরকার যখন তার নীতি প্রবর্তন ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, তখন প্রায়শই এটি বিশাল রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং প্রভাবের সম্মুখীন হয়। উদাহরণস্বরূপ বিদ্যুতের সংকটের কথাই ধরুন। এক দশক আগে যখন আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন দেশটি দমবন্ধ করা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সাথে লড়াই করছিল। কিন্তু আজকাল আমরা আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করি এবং যে কোনও ধরণের বিদ্যুতের ঘাটতি চিরতরে নির্মূল করার কাছাকাছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস (ডিআরআর) এবং জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে অন্যতম সক্রিয় নেতা এবং জলবায়ু আলোচনায় অগ্রণী কণ্ঠস্বর। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ পুরস্কার লাভ করেন তার "জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারিতে অসামান্য নেতৃত্বের” জন্য। 

প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অন্যান্য পুরস্কারও পেয়েছেন:

-নারী শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মাদার টেরেসা পুরস্কার।

-জাতিসংঘ চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ পুরস্কার

- জাতিসংঘ-নারীদের দ্বারা প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন

- গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরামের এজেন্ট অফ চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড।

তিনি কৃষকদের জন্য উপকারী কর্মসূচি এবং দুঃস্থ, ভূমিহীন এবং বঞ্চিত মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা জাল (social safety nets) চালু করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে দুঃস্থ নারী, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভাতা; গৃহহীনদের জন্য আশরিয়ান এবং "এক বাড়ি এক খামার" প্রকল্প।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হাসিনা শাসনামলে বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে খালেদা সরকারের সাথে তুলনা করুন। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মানব উন্নয়ন সূচক এবং সমস্ত ধরণের সূচক যা একটি দেশের উন্নয়ন পরিমাপ করে তা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শাসনামলে উন্নত করা হয়েছে। অনেক সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও পদ্মা সেতু ঢাকা মেট্রো রেল ইত্যাদি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সম্প্রতি (সেপ্টেম্বর ২০২১) নিউইয়র্ক জাতিসংঘ কার্যালয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন। তিনি একে অলৌকিক ঘটনা` বলে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন ও মানবতার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।

পর্যবেক্ষকরা হয়তো প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়, সাহসী, নির্ভীক এবং বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিউপেক্ষা করেছেন, কিন্তু শেখ হাসিনা ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় না নিয়ে বাংলাদেশের সাফল্যের কোন ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ বা ব্যাপক হবে না। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) মর্যাদা থেকে স্নাতক হওয়ার সীমা পূরণ করে, যা দেশের উন্নয়নে একটি মাইলফলক চিহ্নিত করে। এটি প্রথম দেশ যারা অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নে তিনটি মানদণ্ড পূরণের উপর ভিত্তি করে স্নাতক হয়েছে স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

বাংলাদেশ আর সন্ত্রাস ও দুর্নীতির যুগে ফিরে যেতে চায় না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দৃশ্যপটকে দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থা থেকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত মর্যাদায় পরিবর্তন করেছেন। তিনি একটি দীর্ঘ সাফল্যের গল্প তৈরি করেছেন। তিনি তার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন এবং তার জীবনের হুমকি সহ অসংখ্য বাধা উপেক্ষা করে মানুষের খাদ্য, আশ্রয় এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকারনিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রয়েছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। গতিশীল এবং দূরদর্শী হিসেবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এমন মহিলা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন যাদের মহামারীর সময় তাদের দেশের পরিচালনা বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল।কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. জেন অ্যালান বিবিসিকে বলেন, "বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো ব্যক্তিরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মানবিক মাত্রাকে সংযুক্ত করে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যে কেমন দেখায় তা বিশ্ব নেতাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে।"

এই জটিল বিশ্ব রাজনীতি, বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের যুগে আমাদের নেতা সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি তার দেশের সমস্যার পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিকে নেভিগেট করেছেন, এবং সফলভাবে করেছেন, তাই তিনি "অন্যতম শক্তিশালী বিশ্ব নেতা" হিসাবে স্বীকৃত হয়েছেন।

লেখক: প্রাক্তন জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, জাতীয় কোভিড ১৯ জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি


Thumbnail

সম্প্রতি আমাদের দেশের ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেলো তা সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। যারা এ সহিংসতা করেছে তাদের জন্যও। কারণ তারা দেখলো, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সত্যিকারে কতটুকু শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। নাহলে এবার ষড়যন্ত্রকারীরা যে ধরনের পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছিলো তাতে যেকোন সরকারের পক্ষেই টিকে থাকা কষ্টসাধ্য ছিল। এতে আবারো প্রমাণিত হলো আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ' পোস্ট মর্টেম' হওয়া দরকার। আমি বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে বুঝেছি, প্রথম থেকেই তারেক রহমানের সাথে ড. ইউনূসের যোগাযোগ আছে এবং সেজন্য ড. ইউনূস তারেক জিয়াকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু বিশ্বে তারেক জিয়ার যে ইমেজ, তা নিয়ে তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। আর এজন্যই এবার রাগ-ঢাক না রেখে ড. ইউনূস বিশ্বকে যা বললেন, তার অর্থ দাঁড়ায়- বাংলাদেশকে উচিত শিক্ষা দাও।

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করায় যেসব ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলো তারাও এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িয়ে পড়লো। কিছু অসমর্থিত সূত্র আমাকে বলেছিল, বেনজীর আহমেদ তারেক জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। এখন মনে হচ্ছে তারেক জিয়ার সাথে আসলেই তার দেখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদে থাকার ফলে বেনজীরের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর লোক এখনও আছে। তারা ঘাপটি মেরে বসে আছে এবং তাদের মধ্যে কেউ যে প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশেই আছেন তাও কেউ হলফ করে বলতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের সংগঠন, অঙ্গ সংগঠনগুলো দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই দলটিকে আবার ঢেলে সাজানো দরকার। ঠিক তেমনিভাবে সরকারও দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে আর চলছে না। আর আমলাতন্ত্র যেভাবে চেপে বসেছে তাতে আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কারণ একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকতে হলে তাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শুধু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শই ধারণ করতে হয়। সেই আদর্শ যাতে মানুষের ভেতরে ছড়িয়ে দেয়া যায় সেজন্য সবসময় সজাগ থাকতে হয়।

কিন্তু একজন রাজাকার বা রাজাকারের পুত্র কিংবা নাতি-পুতিরা সংকটের সময় তাদের আসল জাত চেনাবেই। আর এটাই স্বাভাবিক। এবারের যাত্রায় ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে সেটা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃঢ়তা আর প্রজ্ঞারই প্রতীক। সুতরাং তার ‘জাজমেন্টে’র উপর আমি কিছু বলতে চাই না। কিন্তু আমার মতে, এ বিষয়টি তার আবারও দেখার দরকার আছে। তার পরিচালনায় গণভবন থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সমস্ত প্রশাসনে কোথায় কি হচ্ছে তা ভালোভাবে দেখার দরকার আছে।

ষড়যন্ত্রকারীদের সব পরিকল্পনা আগেই প্রস্তুত ছিলো। শুধুমাত্র কখন তারা এই আঘাতগুলো করবে তার অপেক্ষায় ছিল। যখন থেকে এই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তখন যদি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা যুবলীগ আগের মতো শক্তিশালী থাকতো তাহলে এ বিষয়টি এতো দূর পর্যন্ত আসতে পারতো না। তখন দেখা যেত, এই আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যেও ছাত্রলীগ আছে এবং এর মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সহিংসতার পথ থেকে অন্যদিকে ধাবিত করা যেতো। কিন্তু সেটা হয়নি।

গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ্য ছিলো চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়া। এমনকি তাদের সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনাও ছিলো। এর দু’টি কারণ ছিলো। এতে বহির্বিশ্বে এটি প্রমাণ করা সহজ হবে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ এবং এই সুযোগে ড. ইউনূস ক্ষমতা দখল করবে। তাছাড়া বিদেশে সেনাবাহিনীর যত সাবেক কর্মকর্তা আছেন যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন, অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না তারাও এবারের আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং এতে সমগ্র ঢাকায় চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় অন্তত ৫ লাখ প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী জড়ো করেছিলো শিবির। প্রয়োজন হলেই যাতে তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে পারে। তারা ঢাকা শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হামলা চালায়। এতে দেশে যে দগদগে ঘাঁ সৃষ্টি হয়েছে তা জাতি কখনোই ভুলবে না।

২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠন করে তখন বিডিআর বিদ্রোহ হয়। এতে অনেক মেধাবী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে সেনাবাহিনীকে সরকারের বিপক্ষে লেলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সময় তা প্রতিহত করে এগিয়ে গেছেন। কিন্তু ১৬ বছর পর আবারো ষড়যন্ত্র চেপে বসেছে। বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে সুশীলরা আর তারেক জিয়া মিলে চেষ্টা চালিয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর প্রশংসা করতেই হবে। এই সংকটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবার প্রমাণ করলো তারা শুধুমাত্র যুদ্ধের জন্যই প্রশিক্ষণ নেয়নি। তারা দেশ রক্ষায় ভেতর এবং বাইরের শত্রু দুটিকেই মোকাবেলা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ, আনসার এবং বিজিবি সবাই যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা রাজনীতির সাথে যুক্ত এদের আরও আদর্শপরায়ন হতে হবে। এরা আদর্শচ্যূত হয়ে গেছে। গত ১৬ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন তা সঠিক ছিল। কিন্তু এখন এই নতুন পরিস্থিতির আলোকে দেশ পরিচালনার নতুন পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে তার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমি মনে করছি।


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী 

সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট।



দিনান্তের কথা   নতুন পরিস্থিতি   নতুন দৃষ্টিভঙ্গি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

জন্মদিন সজীব ওয়াজেদ জয় : বাংলাদেশের সমান বয়সী

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৭ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

‘‘এরকম শান্তিপূর্ণ একটি আন্দোলন কীভাবে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, সহিংসতা এবং লুটপাটের আন্দোলনে পরিণত হল? কারণ যথারীতি বিএনপি ও জামায়াত জোট তাদের নিজস্ব একটি সহিংস আন্দোলন চালানোর জন্য মূলত একটি অরাজনৈতিক ও অহিংস আন্দোলনকে ব্যবহার করেছে। স্বার্থান্বেষী মহলের সম্পৃক্ততা উপলব্ধি করে, প্রতিবাদকারীরা নিজেরাই সহিংসতায় লিপ্ত থাকার কথা অস্বীকার করে বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যে, এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে একটি তৃতীয় পক্ষ জড়িত রয়েছে, যার সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের কোনও সম্পর্ক নেই।... 

দেশের শিক্ষার্থীরা মোটেও সন্ত্রাসী নয়। বিএনপি-জামায়াত চক্র তাদের বাংলাদেশ ভাঙার দলীয় এজেন্ডার আড়ালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে।’’

কোটা দাবি নিয়ে ঘটে যাওয়া নাশকতা ও সহিংসতা সম্পর্কে ২৫ জুলাই(২০২৪) প্রকাশিত সজীব ওয়াজেদ জয়ের মন্তব্যের সূত্র ধরে তাঁর জন্মদিন নিয়ে কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা করা হলো।  

২৭ জুলাই আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৪ তম জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের যে কোনো ঘটনায় সামনে এসেছেন, দিক-নির্দেশনামূলক কথা বলেছেন- দেশকে নিয়ে তাঁর অনুভূতি প্রকাশের ভাষাও অনন্য।তিনি বাংলাদেশের সমান বয়সী। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এবং সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।এদেশের অফিস-আদালত থেকে শুরু করে টেন্ডার কিংবা ব্যাংকের লেনদেনের যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে সেই ডিজিটালাইজেশনের নেপথ্যে তাঁর অবদান রয়েছে।এজন্য কোভিড-১৯ এর প্রভাবে মহামারি লকডাউনে যখন বিশ্বজুড়ে অনলাইন যোগাযোগ একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছিল তখন এদেশের কৃতি সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে বেশি করে মনে পড়েছে।ব্যাধির সংক্রমণ রোধে গৃহবন্দি থেকে অনলাইনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং-এ বেতন ও সহায়তা পাওয়ার দৃষ্টান্ত আমরা তখন ভালভাবে আত্মস্থ করে নিয়েছিলাম।কৃষিভিত্তিক সমাজ ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে পরিণত হয়েছে।কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিক-নির্দেশনায় কাজ করে প্রযুক্তির প্রসার ঘটেছে এদেশে। ফলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে।এজন্যই তাঁকে আমরা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশেরও অন্যতম কাণ্ডারী তিনি। 

জয় ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারে বিএসসি ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ জন তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক  উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তিনি অনেক আগে থেকেই রাজনীতিসচেতন ২০০৮ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনাকে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়ে থাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ হাসিনা আর তার সফল রূপকার হলেন সজীব ওয়াজেদ জয় 

জয়ের ভেতর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো প্রচণ্ডতা রয়েছে পরিশ্রমী তারুণ্যের প্রাণময়তা এজন্য আমেরিকা থেকে তাঁর ফিরে আসা, রাজনীতিতে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শুভ সূচনা ছিল দেশের মধ্যে যারা একসময় দুর্নীতি নাশকতার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের মসনদ কেঁপে উঠেছিল তাঁর দেশকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে তিনি মূলত বঙ্গবন্ধুর মতোই মানুষকে আশাবাদী করে জাগিয়ে তোলার জন্য কথা বলেন কাজ করেন একসময় তাঁর মতো বয়সে বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে জাগিয়েছিলেন; জয়ও তেমনি সরকারের সঙ্গে থেকে দেশের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান করে আওয়ামী লীগকেও গড়ে তুলতে চান ভাষণ দেবার সময় তাঁর ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতোই সম্মোহনী চেতনা স্ফুরিত হয় তিনি ২০০৯ সাল থেকে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা পেশাগত অভিজ্ঞতা দিয়ে এদেশের আইসিটি সেক্টরকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন তরুণদের উজ্জীবিত করছেন মৌলিক গবেষণায় বিএনপি-জামায়াতের গাত্রদাহের কারণ এজন্য যে জয় উচ্চশিক্ষিত এবং যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার পুরোভাগে তিনি আছেন শেখ হাসিনা যেমন নির্লোভ, মানুষকে ভালোবাসেন নিজের অন্তর থেকে, জয়ও তেমনিভাবে এগিয়ে চলেছেন বিরুদ্ধ মানুষের মন জয় করতে হয়েছে তাকে এজন্য তার সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা কাজ করেছেন সাধারণ মানুষকে শেখ হাসিনা সরকারের কর্মসূচি, সাফল্য বর্ণনা করতে হয়েছে ডিজিটালকরণের জন্য। অনেকে ভাবতে পারেন তিনি আমেরিকান সিটিজেন এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন যেহেতু জয়ের মা নিজে এই মাটি, মানুষের নিকটজন সেহেতু তিনিও তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন 

সজীব ওয়াজেদ জয় ভিশনারি লিডার তিনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে ২০০৯ সালে দেখতে পেয়েছিলেন বলেই আজ দেশে ১০ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন শিক্ষাখাতে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বেড়েছে বিশেষত করোনা মহামারিতে সকল প্রতিষ্ঠান এখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল পাঠসূচিতে যেমন শিশুরা আইসিটি অধ্যয়ন করছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার এমনকি দেশের বিপিও খাতে বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করা হচ্ছে; ৫০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ এই মুহূর্তে আইসিটি সেক্টরে চাকরি করছেন ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ মানুষের কাজ করার সুযোগ হবে এই খাতে আর এসবই সম্ভব হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে গেছে তেমনি তার পুত্রের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে এদেশ প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে

অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জয় বলেছেন, ভবিষ্যতের নেতা এদেশের তরুণরাই উল্লেখ্য, ঢাকার সাভারে শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তারুণ্যনির্ভর ৩০টি সংগঠনের হাতেজয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডতুলে দেওয়ার সময় তাদের এই অভিধা দেন তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে নিজেদের উদ্যোগে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসা তরুণ-তরুণীদের বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতা অভিহিত করার কারণ তার জনসম্পৃক্ততা।নিজে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে আর সেই কাজে তরুণ প্রজন্ম তাঁর অনিবার্য লক্ষ্য এর আগে তিনি দেশের ভেতর বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা, তরুণ জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক অর্জনের গল্প শুনিয়েছেন বিশ্বের মানুষকে তাঁর মতে, ‘আমাদের দেশের তরুণরা এখন দেশের জন্য কাজ করতে যেভাবে এগিয়ে এসেছে, আগে সেটা দেখা যেত না দেশের সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারব কি না, দেশকে এগিয়ে নিতে পারব কি না, সেই বিশ্বাস আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম কারণ স্বাধীনতার চেতনা আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’ কিন্তু ‘এখন আমাদেরকে শাইনিং স্টার বলা হচ্ছেনেক্সট ইলেভেন’-অর্থনীতির দেশের একটি আমরা।’ সজীব ওয়াজেদ জয় সেদিন যে কথা বলেছেন, তা একজন তরুণ নেতার আদর্শ বিশ্বাসের কথা তিনি নিজে নতুন প্রজন্মের নেতা, তাই যুবসমাজের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন  

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত অপর এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, ‘সৎ সাহস নিজের আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো কঠিন কাজ করা যায় আমরা কারও চেয়ে কম নই বিদেশের সঙ্গে আমরা সমানে সমান সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে বিদেশী সাটিফিকেট প্রয়োজন নেই।’ অর্থাৎ এই তরুণ নেতৃত্বের কাছে নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু তৈরির ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে সততা এবং আদর্শের কোনো বিকল্প নেই সৎ না থাকলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না আর মানুষের ভালোবাসা ছাড়া ক্ষমতায় আসা যায় না তিনি বিশ্বাস করেন, নিজের দেশকে টেনে উঠাতে দেশপ্রেম দেখাতে হবে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে টেনে তোলার মধ্যেই দেশপ্রেম নিহিত রয়েছে

প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা বহমান তা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় এই তৃতীয় প্রজন্মের নতুন নেতৃত্বের প্রতি আমাদের সকল আকর্ষণ এখন কেন্দ্রীভূত বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে নেতৃত্বের বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল উপমহাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য একটি ব্যাপক বিস্তারি প্রসঙ্গ ভারতের দিকে তাকালে বর্তমান রাজনীতির পারিবারিক ধারা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় জওহরলাল নেহেরু গান্ধীর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর সময় মোরালি দেশাইয়ের মতো অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও ইন্দিরা গান্ধীই হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, তাঁর কন্যা বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা যেমন সত্য তেমনি শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় লক্ষণীয় ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন পঁচাত্তর পরবর্তী তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ বড় বড় নেতারা দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনাকেই জনগণের সামনে দাঁড় করান  

খালেদা জিয়া যেভাবে তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে এনে দলের পদে সমাসীন করেছিলেন জয়ের জীবনে তেমনটি ঘটেনি বরং জয় রাজনীতিতে নামতে পারেন ধরে নিয়ে ২০০৪ সালে ‘হাওয়া ভবনে’র মালিক তারেক জিয়াকে বিএনপি লুফে নিয়েছিল 

জয় বাংলাদেশের মৃত্তিকার সন্তান তাঁর রাজনীতিতে আসাটা আকস্মিক হলেও দলকে সংগঠিত করা, দলের কোন্দল মেটানো, দলকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রধান কাজ হিসেবে গণ্য হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনের আগে মহাজোট সরকারের সময় পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের সামনে নতুন নেতৃত্বের দরকার ছিল তাই তাঁর মতো কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে সামনে আনা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক বলে গণ্য হয়েছিল ২০১০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের নিয়মিত সদস্য পদ গ্রহণ করেন

ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয় সবসময়ই বলেছেন, উন্নয়নের অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করতে হলে আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে হবে তাঁর মতে, নতুন আধুনিক একটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে বাংলাদেশের জন্য এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় মহামারি মোকাবেলায় প্রযুক্তি আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করে রেখেছে এজন্য বিরোধী দলের অপপ্রচার মোকাবেলা সরকারের সফলতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে ভিন্ন রকম কৌশল নিতে হবে কারণ জয়ের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে 

প্রকৃতপক্ষে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের উন্নয়নে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি আমাদের তরুণদের সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যাশায় উজ্জীবিত করেছে একাধিক বেসরকারি টেলিভিশন- প্রচারিত অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি নানা প্রসঙ্গে গঠনমূলক রাজনৈতিক কথা বলেছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘লেটস টক’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অনেকটা এগিয়েছে তিনি কেবল প্রযুক্তি নিয়ে ভাবেন না, তিনি মানুষকে মূল্য দেন মানুষের দুঃখে সমব্যথী হন আসলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পিতা-মাতা বিজ্ঞানী . ওয়াজেদ শেখ হাসিনার মতো আন্তরিক হৃদ্যতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অনেক ভাবেই- যুবলীগ, ছাত্রলীগ কিংবা বিশেষ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত বক্তৃতা দিয়ে দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দূর করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যেমন সক্রিয় উদ্যোগ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তেমনি জয়ের পরামর্শে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে ৯৪টি যন্ত্রাংশের ওপর থেকে উচ্চ আমদানি শুল্ক উঠিয়ে শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে জয় জানেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে সকল দুর্যোগ মোকাবেলা করে

জয়ের মতো নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আমাদের রাজনীতিতে যেমন ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়েছে তেমনি উন্নয়নে সার্বিক অগ্রগতি সম্পন্ন করেছে রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের পদচারণা আমাদের এগিয়ে চলার পথে বাড়তি প্রাপ্তি নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে প্রতিবছর ভোটার তালিকায় তরুণ ভোটার আসে প্রায় ২৩ লাখ কোটি ২১ লাখ ভোটারের মধ্যে কোটি ভোটারের বয়স ৪০ বছরের নিচে মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ নতুন প্রজন্মের তাদের জন্য নতুন প্রজন্মের নেতা অনিবার্য সজীব ওয়াজেদ জয় এসব নতুন ভোটারদের প্রত্যাশার ভাষাকে ঠিকই বুঝতে পারেন ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার কৌশলও তিনি জানেন কারণ আওয়ামী লীগ এদেশের যে উন্নয়ন করেছে বিগত জামায়াত-বিএনপি চারদলীয় জোট সরকার তা করেনিঅথচ বিএনপির মিথ্যা প্রচার প্রচারণা এখনও মোকাবেলা করতে হচ্ছে

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় রাজনীতিতে সক্রিয় অন্তরালে থেকেই নিজের প্রচারে বিশ্বাসী নন তিনি তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছেন কিন্তু প্রকাশ্যে বিচরণ তার কম বঙ্গবন্ধুর নাতি এবং শেখ হাসিনা . ওয়াজেদ মিয়ার পুত্র হিসেবে পারিবারিক সূত্র গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তিনি যে মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করতে এসেছেন তা বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে এদেশের মানুষের প্রকৃত দেশপ্রেমিকের পক্ষে দেশ জাতির কল্যাণ করাই স্বাভাবিক 

আওয়ামী লীগের যে গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে তা অন্য কোনো দলের নেই সজীব ওয়াজেদ জয় সেই গৌরবকে কাজে লাগিয়ে ২০০৯ সালে থেকে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন মধ্যবিত্তের সন্তান বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন পাকিস্তানি শাসকদের ফাঁসির ভয়কে উপেক্ষা করেছেন জেল খেটেছেন মাসের পর মাস সেই ত্যাগী নেতার নাতি হিসেবে জয়কে মনে রেখেছেন- এই সব মূঢ়, মূক মানুষের মুখে দিতে হবে ভাষা তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় নিয়েই জাতির পিতা নিজের সন্তানকে (শেখ মনি, শেখ কামাল) রাজনীতিতে এনেছিলেন আর তা ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য পারিবারিক পর্যায়ে তিনি যা করেছিলেন তা ছিল দেশের স্বার্থে, মানুষের মঙ্গল চিন্তা করে অনেকেই তাঁর বাকশাল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধাচারণ করেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দেশের জন্য মমত্ববোধকে ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না   

আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের কাজে এগিয়ে এসেছেন মানুষের আকর্ষণে মাতার সান্নিধ্য তাঁকে রাজনীতির শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী সমর্থক সকলেই খুশী হবেন কারণ তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন আওয়ামী লীগকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নেতৃত্ব উন্নয়নকে একইসঙ্গে আলিঙ্গন করতে হবে জয় হঠাৎ আবির্ভূত নেতা নন তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তাঁর আছে দৃঢ় চেতা অভিভাবক যিনি সকল বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারঙ্গম কখনও পথ চলতে ছিটকে পড়লে শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়ে ঠিক পথে আনতে পারবেন তাঁকে কারণ জয় একান্তই মাতৃ অনুগত সকলেই জানেন, জয় আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সদস্য এর বাইরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এই অর্থে তিনি দলের নীতি-নির্ধারক না হলেও বিভিন্নভাবে দল দলের নেতৃত্বকে অনেকরকম সহযোগিতা দিচ্ছেন এখন এগিয়ে যাচ্ছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে স্বাধীনতার চেতনায় মথিত সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবন তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জনের পরও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হওয়ার জন্য জাতির পিতাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত দিকে হাঁটা দায়ী তাঁর বক্তব্য হলো- ‘আমরা লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি বছরেই নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছিলাম সেই সময়ে আসে ৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এরপর স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি ক্ষমতায় আসে।’ সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণদের মূল্যবান কথা বলেছেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা কোনোদিন ভুলবেন না ভুলতে দেবেন না আর কাউকে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেবেন না এমন মিথ্যা প্রচারের সুযোগ দেবেন না, যাতে জাতি শহীদদের ভুলে যায়।’ তাঁর মতে, ‘যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা বাংলাদেশের উপর কী বিশ্বাস রাখবে?’ 

শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনায় সজীব ওয়াজেদ জয় যেমন তৎপর তেমনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে নিজের নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা নিয়ে জনসমক্ষে হাজির হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নতুন কাণ্ডারী সজীব ওয়াজেদ জয়কে জন্মদিনে অভিবাদন। মূলত বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে- একথা সজীব ওয়াজেদ জয় বারবার বলে এসেছেন এজন্য দরকার যুবসমাজের পরিশ্রম তরুণ নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে হবে আমাদের শেখ হাসিনা সরকার এক নাগাড়ে ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ উন্নীত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনীতি অভূতপূর্বভাবে এগিয়েছে বিশ্বে আমাদের অর্থনীতি এখন ভাল অবস্থানে কারণ তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করছে আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে (কোটা দাবিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত) সর্ব প্রকার ষড়যন্ত্র অপপ্রচার দূর করার জন্য সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনকারণ দেশপ্রেমিক জয়ের রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা।তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস। 

লেখক : . মিল্টন বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু গবেষক,  বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)


ইনসাইড থট   সাদা কালো   জন্মদিন   সজীব ওয়াজেদ জয়  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আরও একটি ১৫ আগস্টের ড্রেস রিহার্সাল?

প্রকাশ: ০৩:০৭ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

রাজধানী ঢাকা ও আশে পাশের এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাস ও তাণ্ডবের সাথে চলমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কি কোন সম্পর্ক ছিল? পুরো বিষয়টা সুষ্ঠুভাবে বিচার বিশ্লেষণ করলে ছিল তা মনে করার কোন কারণ নেই। তারা সরকারি চাকুরিতে কোটা প্রথা বিলুপ্তি চেয়ে শুধু মেধার ভিত্তিতে চাকুরি প্রাপ্তির যোগ্যতা হওয়া উচিত বলে যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা যে যৌক্তিক সেই ব্যাপারে কেউ কখনো দ্বিমত করেনি যদিও বিশ্বের সকল দেশে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থার প্রচলন আছে। ইউরোপের সকল দেশে সরকারি ও বেসরকারি সকল চাকুরিতে চল্লিশ শতাংশ চাকুরি মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা আট আর জাপানে পাঁচ। এই গুলো সব উন্নত বিশ্বের দেশ বা অঞ্চল। ভারতের কথা নাই বা বললাম।

বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সরকারি প্রজ্ঞাপনের দ্বারা ঘোষিত হয়। এরপর তা বাহাত্তর সালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। যে কোন দেশেই এই কোটা ব্যবস্থা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সংস্কার করা হয়। বাংলাদেশে তেমনটি না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পঁচাত্তর সালের পর বস্তুত পক্ষে পুরো কোটা ব্যবস্থাই অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল। বিশেষ টার্গেট ছিল ত্রিশ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা। ঐ সময় মুক্তিযোদ্ধা মানে একজন অপরাধী কারণ তারা ক্ষমতাসীনদের সাধের পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলা নামের একটা স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করেছিলেন। দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সূত্রে পান জিয়া এরশাদ জামানার ও তাদের ভাবধারার একটি সর্বনাশা আমলাতন্ত্র যাদের অধিকাংশ সদস্যই জন্মগত ভাবেই ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী। শেখ হাসিনার সেই আমলে ঘর গোছাতেই তিনি পুরো সময় ব্যয় করেন। তার সেই মেয়াদের প্রথম দেড় বছর বিএনপি-জামায়াত জোট তাঁকেতো কাজই করতে দেয় নি। আজ এই অজুহাতে শ্রমিক ধর্মঘটতো কাল আরেক অজুহাতে হরতাল বাব চট্টগ্রাম বন্দর অচল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠনের আগে কেউ এই কোটা নিয়ে কোন প্রশ্নই তুলেনি বা আন্দোলনের কথাও ভাবেনি। কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রথম রাস্তায় নামে ২০১৮ সালে। সেই সময় এই আন্দোলন কিছু দিনের মধ্যে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে রূপ নেয়। তবে সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অনেকটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও তার সংলগ্ন এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। এক সময় আক্রান্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তার পরিবার। উপাচার্যের বাসভবনে চালানো হয় এক ভয়াবহ তাণ্ডব যদিও কোটা রাখা না রাখার সাথে উপাচার্যের কোন সম্পর্ক ছিল না। ঢাকার জনজীবন হয়ে যায় বিপর্যস্ত। তখন প্রধানমন্ত্রী এক নির্বাহী আদেশ বলে পুরো কোটা ব্যবস্থাকেই বাতিল করে দেন। বলতে হয় বাতিল করাটা পদ্ধতিগতভাবে হয়তো ত্রুটিযুক্ত ছিল। তার পাশে থাকা আমলাকূল এই সম্পর্কে তাঁকে সঠিক পরামর্শ হয়তো দিতে পারতেন। দেননি কারণ এই দেশে এক শ্রেণীর আমলা আছেন যারা সরকারকে সময় মতো অনেক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হন বা দেন না। বলা হয় সব সময় আমলার পরবর্তী সরকারের জন্য কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ২০১৮ সালের থেকে সরকারি চাকুরিতে আর কোন কোটা ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না। সব সরকারি চাকুরিই হয়েছে মেধার ভিত্তিতে।

২০০৯ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট নানাভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছে। একাধিক পশ্চিমা শক্তি তাদের সরাসরি সহায়তা করেছে। এই কাজে তাদের পক্ষে কাজ করতে এই দেশে তারা সৃষ্টি করেছে নানা ছদ্মবেশে বেশ কয়েকটি সংগঠন যে গুলো সুশীল সমাজের সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালের মে মাসে মাঠে নেমেছিল হেফাজতে ইসলাম নামের একটি মাদ্রাসা ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন। তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট আর এক শ্রেণীর মিডিয়া। সেই সময় শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও সাহসের কারণে সরকার উৎখাতের তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি প্রধান বেগম জিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শুরু হয় দেশে আর এক ভয়াবহ অগ্নি সন্ত্রাস। প্রায় তিনশত নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয় পেট্রোল বোমা বা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। বাধ যায়নি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও। কয়েকশত কোটি টাকার সরকারি ও বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়। যখনই দেশে একটা নির্বাচন আসে অথবা দেশে অর্থনীতি সচল থাকে তখনই বর্তমান সরকার বিরোধী জোট এসব কর্মকাণ্ড শুরু করে। তাদের মদদ যোগাতে এগিয়ে আসে তাদের অর্থে লালিত এই দেশে ক্রিয়াশীল বর্ণিত সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো ও এক শ্রেণীর শিক্ষিত নাগরিক সমাজ। এবারের তাণ্ডবও পূর্বেও সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের এক ধরণের ধারাবাহিকতা। পার্থক্য শুধু এবার তা ছিল অনেকটা সুপরিকল্পিত।

সরকারি চাকুরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেশের উচ্চ আদালতে ২০২১ সালে একটি রিট মামলা দায়ের করলে আদালত ২০১৮ সালের নির্বাহী আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে সরকার তড়িৎ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিষয়টা পূনঃবিবেচনরার জন্য আপিল করে। কিন্তু এরই মধ্যে আবার একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সকল বিবেকবান মানুষ তাদের বুঝানোর চেষ্টা করে কোন মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সরকার এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে মহলটি অগণতান্ত্রিক উপায়ে বর্তমান সরকারের পতন চায় তাদের পোষা সুশীল সমাজের কিছু সদস্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা ও শক্তি নিয়োগ করে। এরই মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৭ আগস্ট মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করে। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার জন্য এই সুশীলরা বলেন এটি আদালতের কোন বিষয় নয়। সরকার প্রধান চাইলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে পারেন। এমন কপট ও স্বার্থান্বেষী শিক্ষিত নাগরিক সমাজের সদস্য এর আগে এই দেশে কখনো দেখা যায় নি। শেষ পর্যন্ত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সকল প্রথা ভেঙ্গে টিভিতে এক ভাষণ দিয়ে ছাত্রদের আশ্বস্ত করেন তিনিও তাদের দাবির সাথে একমত। দেশের প্রধান বিচারপতিও শিক্ষার্থীদের দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মামলা নিষ্পত্তির তারিখ ১৭ দিন এগিয়ে এনে ২১ জুলাই নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি। এটিও একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। কিন্তু মূল ষড়যন্ত্রকারীরা বসে থাকবে কেন? তাদের উদ্দেশ্যতো এই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে দেশে এক চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে উৎখাত করা আর সুযোগ পেলে দেশে আর একটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করা। এর আগেতো এদের শ্লোগানই ছিল ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আর একবার’।

যেহেতু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোন একক নেতৃত্ব ছিল না তাদের আন্দোলনকে পুঁজি করে সরকার উৎখাতের সকল ব্যবস্থা মোটামুটি করেই ফেলেছিল সরকার বিরোধীরা। আন্দোলনকারীদের অপরিপক্ব নেতৃত্ব বুঝতেই পারেনি কখন নীরবে তাদের আন্দোলন বেহাত হয়ে গেছে। মূল নেতৃত্ব চলে গেছে লন্ডনে। যেই আন্দোলন শুরু হতেই সুশৃঙ্খল ছিল সেই আন্দোলন হঠাৎ করে এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করলো। এই তাণ্ডবে শরিক করার জন্য নরসিংদী কারাগার ভেঙ্গে সকল জঙ্গিদের মুক্ত করে দিল যাদের মধ্যে ছিল নয়জন জঙ্গি। কারাগার থেকে লুট হলো ৮৫টি অস্ত্র আর হাজারের উপর গুলি। প্রাপ্ত তথ্য হতে দেখা যায় পুরো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ চলে গেল একাত্তরের পরাজিত শক্তির কাছে আর তাদের সকল প্রকারের নির্দেশনা আসছে লন্ডন থেকে।

২১ জুলাই দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাদের চূড়ান্ত রায়ে বস্তুত পক্ষে শিক্ষার্থীদের সব দাবিই যথার্থ বলে রায় দিয়েছেন। এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা ঢাকার সকল প্রবেশমুখ তাদের দখলে নিয়েছে। শুরু করে দেয় তাদের তাণ্ডব। রায় আসার পূর্বেই ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু ঢাকাতেই রাষ্ট্রের ৭৯টি স্থাপনা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছে। তাদের মূল টার্গেট ছিল বর্তমান সরকারের আমলে দেশে যত উন্নয়নমূলক স্থাপনা হয়েছে তাকে ধ্বংস করা। আর দু’একদিন সময় পেলে তারা হয়তো শাহ আমানত বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ধ্বংস করতো আর বিশ্বনন্দিত পদ্মা সেতুর ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। মারাত্মক ক্ষতি করতে পারতো কর্ণফুলি টানেল। তার আগেই ১৯ জুলাই দেশে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সরকার রাজধানী সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে তা বলবৎ করতে সেনাবাহিনী নামালো। এই যে এত ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ঢাকা ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে সন্ত্রাসীরা বোমা বিধ্বস্ত সিরীয় বা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মতো করে দিল তা আরো ভয়াবহ হতো সেনাবাহিনী যদি সময়মতো তাদের উপর ন্যস্ত জাতীয় দায়িত্ব পালন না করতো।

তাণ্ডবের ভয়াবহতা দেখে এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যারা এই সব কর্মকাণ্ড করেছে তারা প্রত্যেকেই বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জঙ্গি। যে সব স্থাপনার উপর সন্ত্রাসীরা হামলা করে তা ধ্বংস করেছে তা পূর্বে কখনো দেখা যায় নি। এই স্থাপনাগুলোর গুরুত্ব ও খুঁটিনাটি সম্পর্কে তারা আগে হতেই ওয়াকিবহাল ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন বা ডাটা সেন্টার তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই সব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে তিনজন পুলিশ সদস্য সহ নিহত হয়েছেন প্রায় দুইশত জন যাদের মধ্যে যেমন আছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তেমন আছে সরকারি দলীয় ছাত্র লীগের কর্মীরাও। একজন পুলিশ সদস্যকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে এই সন্ত্রাসীরা যা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কল্পনাও করতে পারে না। সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকাকে শুধু সারা দেশ থেকে নয় বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া যে কারণে বিটিভিতে আর ডাটা সেন্টারে অগ্নি সংযোগ। কোন এক পর্যায়ে তারা যে গণভবনে হামলা করে আর একটি ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটাতো তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। হয়তো দখল হতো বঙ্গভবন আর সংসদ ভবন। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিবতো রুহুল কবির রিজভি স্লোগান তুলেছিলেন আন্দোলনকারীরা কারাগারে আর তারা থাকবে সংসদে।

কোটা বিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে এই দেশদ্রোহিদের কর্মকাণ্ড সরকার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। ৭৬ বছর বয়সি দেশের প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কত চড়াই উৎরাই পার হয়ে এতদূর এসেছে তা হয়তো মৌসুমি আওয়ামী লীগাররা জানে না। যে দলটি এতদিনে একটি শত বছরে পুরানো বট বৃক্ষের মতো শক্ত হওয়ার দরকার ছিল তা যে গত চার মেয়াদে টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে কত নড়বড় হয়ে গিয়েছে তা অনেকে উপলব্ধি করে না। দলটি বট বৃক্ষের বদলে বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে হয়ে গিয়েছে একটি পুরানো ঘুণে ধরা মান্দার গাছের মতো। এই যে এত এত পরজীবী আওয়ামী লীগের রাতারাতি মুজিব কোট বানিয়ে গত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হলেন এই ক্রান্তিকালে তারা কোথায় ছিল? বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্র লীগ, নেতারা চলতে গেলে সামনে পিছনে ডজন ডজন মোটর সাইকেলের এসকর্ট থাকে সেই নেতাদের ভূমিকাই বা কি? হয়তো দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের একটি প্রশ্ন সহজে পোঁছাবে না। তাদের একটাই প্রশ্ন ‘আওয়ামী লীগে কি আর একজন সৈয়দ আসরাফ জন্ম নিবে না?’ ৭৯ বছরে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক ভাবে এত ভঙ্গুর এর আগে কখনো দেখা যায় নি। বর্তমান দুর্যোগ বা ক্রান্তিকাল হয়তো এক সময় কেটে যাবে তবে বুঝতে হতে দেশের বিরুদ্ধে যারা সর্বদা ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধে লিপ্ত তারা ক্লান্তিহীন ভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে। দলকে যদি দ্রুত সংস্কার করা না যায় তা হলে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই দলটি ভেঙ্গে পরতে বেশী সময় লাগবে না। একজন শেখ হাসিনা আর কতদিকে সামাল দিবেন?


সময়-অসময়   ড্রেস রিহার্সাল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াও


Thumbnail

একটি মিথ্যা অপবাদ কেমন করে সত্য করে তোলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান ‘রাজাকার’ আন্দোলন তার স্পষ্ট প্রমাণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সেদিন কাউকে রাজাকার বলেননি, যা বলেছিলেন তার মর্মার্থ ছিল- আর সকলের সাথে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারই কোটা সুবিধা পাবে, রাজাকার পরিবার কেন পাবে সে প্রশ্ন তিনি জাতির কাছে করেছিলেন। এই বক্তব্যকে ফু্লিয়ে ফাঁপিয়ে, সত্য বিকৃত করে ঘোষণা করে দেয়া হলো, তিনি বলেছেন সবাই রাজাকার! রাজাকার হলে এই দেশে আর চাকুরি পাওয়া যাবে না। সুতরাং সব ভাঙ্গো, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের জন্ম হলো। সাথে এসে যুক্ত হলো মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত বিরোধী শক্তি, তাদের ‘নাতিপুতি’ বা বংশধরেরা আর সে ভাবধারায় বিকশিত একটি জ্ঞানপাপী সম্প্রদায়।

আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগানগুলো ছিনতাই হয়ে গেছে! আমাদের অনুপ্রেরণাগুলো ইচ্ছামতো শব্দ বসিয়ে বিকৃত করে দেয়া হয়েছে। মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে মৌলবাদী চেতনায় তথাকথিত ‘সমৃদ্ধ’ গোষ্ঠী আন্দোলন নিয়ে গান গাইছে। একাত্তর আজ আবার ভূলুণ্ঠিত। নিহত শিবির কর্মীকে করা হয়েছে জাতির সহিংসতা উস্কে দেবার ‘আইকন’! নির্দয়ভাবে চাকুরিজীবী পুলিশ কর্মীদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে, গাড়ি পোড়ানো, দালান পোড়ানো, সরকারি সম্পত্তির ক্রমাগত ধ্বংসসাধন, রাজপথে নামিয়ে দেয়া মিথ্যার আন্দোলন, এসবের অর্থ কখনোই মানুষের ক্ষোভ নয়, এ সবই প্রতিশোধের স্পৃহা কারণ এরা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল। আর সেই একাত্তর যার নেতৃত্বে হয়েছিল সেই জাতির পিতাকে অসম্মান তাদের করতেই হবে। আর তাঁর কন্যা যদি এই রাষ্ট্রের সকল মিথ্যাকে ছাপিয়ে দেশটাকে দুনিয়ায় উজ্জ্বল করে তুলে ধরেন তাহলে তাদের থাকে কী? সুতরাং তাকেও মিশিয়ে দাও।

দুর্ভাগ্য এই যে, ‘বিচিত্র’ বাংলাদেশে ইতিহাস বারবার উল্টোদিকে চালনা করা হয়েছে। আর সৌভাগ্য যে, অনেক ত্যাগের মাধ্যমে ‘এই’ বাংলাদেশ আবার সত্য প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে। এই দোলাচলে আমাদের বঙ্গ ভূ-ভাগের ইতিহাস বারবার আবর্তিত হয়, আর জন-মানুষকে তার ঐতিহাসিক মূল্য দিতে হয়।

বাংলাদেশ নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াবে। এই দেশ রাজাকারের নয়, এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ! বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলায়’ কোন রাজাকারের ঠাঁই থাকবে না। এই দেশ সকলের জন্যে নয়, এই কথা আমাদের মনে মেনে নিতেই হবে। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।


সহিংসতা   বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াও  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশে আবার শান্তি ফিরে আসবে


Thumbnail

১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। এই বক্তব্য শুনার সময় আমার ৭০’এর শেষের দিকের তৎকালীন ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথ জাতির উদ্দেশ্যে যে সমস্ত বক্তব্য দিতেন তা মনে পড়ে গেলো। রানী এলিজাবেথের বক্তব্য খুবই সংক্ষিপ্ত হতো। কিন্তু তিনি সবকিছুকে গুছিয়ে বলতেন। এর আগে সময় লক্ষ্য করেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দীর্ঘায়িত হয়। কিন্তু সেদিন খুব অল্প কথায় আসল যে বার্তা সেটি তিনি জনগণকে জানিয়ে দিলেন। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে খুব সংক্ষেপে তিনটি বিষয় তিনি স্পষ্ট করেছেন। প্রথমে তিনি এই আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেদিনই মহররম ছিলো তাই ভাষণে তিনি মহররমের কথাও বললেন। এসব বলার পর জাতির উদ্দেশ্যে তিনি যা বললেন সেটি হচ্ছে, এই আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শুধু দুঃখ জানানোর পাশাপাশি দল মত নির্বিশেষে তাদের পরিবারের যেসকল সাহায্য প্রয়োজন তা তিনি করবেন। এছাড়াও এসব হত্যার বিচারে বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। 

আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে কোন সরকার প্রধানই যখন ছাত্রদের সাথে বা অন্যকোন গন্ডগোলে কেউ বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথা নিজের থেকে বলেন নি। বরং জনগণের দাবির মুখে এটি বাস্তবায়ন করে। আর এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে। আর এতে যেই দোষী সাব্যস্ত হবে তাকেই বিচারের আওতায় আনা হবে এবং তাকে কোন ছাড়া দেয়া হবে না বলেও জানান। 

এরপর তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন, যেতেতু সাংবিধান অনুযায়ী দেশের তিনটি বিভাগ আছে। এর একটি হচ্ছে, পার্লামেন্ট, শাসন ব্যবস্থা এবং বিচার বিভাগ।  পার্লামেন্টে কোন পাশকৃত আইন নিয়ে যদি আলোচনা বা বিতর্ক থাকে তবে সে বিষয়টি বিচার বিভাগ দেখতে পারে। সুতরাং এর মনে এই দাড়াচ্ছে, বিচার বিভাগকে পাশ কাটানোর কোন সুযোগ নেয়।

কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্রটি যখন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেন তখন সরকারই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেল। পরবর্তীতে এই রায়ের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি ৭ আগস্ট দেয়া হবে জানিয়েছে। এক্ষেত্রে যারা সময় চেয়েছেন চেয়েছেন তারাই সময় চেয়েছিলেন। যার ফলে এই শুনানির তারিখ ৭ আগস্ট দেয়া হলো। নাহয় এই শুনানীটি আরও আগেই সেই কারণেই শুনানি হতে পারতো টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, এতে এমনভাবে বিচারবিভাগের সিদ্ধান্ত নিবে যাতে ছাত্ররা সন্তুষ্ট হবে। সুতরাং বক্তব্যগুলো খুবই স্পষ্ট।

কয়েকদিন আগে একটি লেখাতে লিখেছিলাম, দল এবং সরকারের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজর রাখতে হবে। এবং প্রয়োজনে এটিকে আবার পুনবিন্যাস করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি সেই পর্যায় এখন এসে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক যে এখন এতো দুর্বল হয়ে গেছে দেশে বর্তমানের ঘটনাগুলো না ঘটলে বুঝতে পারতাম না।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের অন্যান্য পেশাজীবি সংগঠনগুলোও এখন দুর্বলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। এর কারণ এই সংগঠনগুলোর ভাব এমন যে, ‘আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন’। অর্থাৎ তিনিই সবকিছু করে দেবেন। অর্থাৎ যদি মনে করা হয়, আমাদের দেশে যতো পাওয়ার জেনারেট হচ্ছে তা শেখ হাসিনাই জেনারেট করছে। এই পাওয়ার জেনারেট করতে হলে সেখানে জ্বালানী দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে এই জ্বালানী হচ্ছে কর্মীরা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ঠিক সেভাবেই আমরা নেত্রীকে যে সাহস দেবার আমাদের যে দায়িত্ব, সেই জায়গায় আমরা সবাই অকৃতকার্য হচ্ছি। 

যখন এনএসএফ ক্ষমতায় তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তখনতো আমাদের এনএসএফ এমনকি আইয়ুব খানের মতো একনায়কও আমাদের হল থেকে বের করতে পারেনি। আমরা সেখানে যুদ্ধ করে টিকে ছিলাম। আর গতকাল দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকদের হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। 

এই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেখা গেছে, মোটামুটি প্রায় ১৮ ঘণ্টা এ দেশটি তারেক জিয়া নিয়েই গেছিলো বলা চলে। কেননা তারেক জিয়া লন্ডনে বসে, ফোন করে বক্তৃতা দিয়ে যদি এতো জমায়াত বিএনপি একসাথে নামাতে পারে তাহলে তাকে অবশ্যই শক্তিশালী বলতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যারা বেনিফিমিয়ারী তাদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।  

বাংলাদেশে এখন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যার অপর নাম বাংলাদেশ সেজন্য টিকে আছে। এজন্যই শেখ হাসিনাকে আমাদের অবশ্যই সমর্থন দিতে হবে নাহলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে আবার এগোনোর যে ষড়যন্ত্র চলছে তাতে ষড়যন্ত্রকারীরাই সফলকাম হবে। 

বাংলাদেশের জনগণ এখন পর্যন্ত দার্শনিক শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে। কারণ তিনি ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর থেকে যে কথা বলেছেন তার প্রত্যেকটি কথা রেখেছেন। একটি ব্যতিক্রমও কেউ কোথাও খুজে পাবেনা। যে নেত্রী সবসময় সত্যের উপর প্রতিষ্ঠা করে এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশ চালান তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করার তো কোন কারণ থাকতে পারে না। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি দেশে আবার শান্তি ফিরে আসবে। আর তা নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আসবে। অতীতে তিনি যেমন সফল হয়েছেন আশা করি এবারও তিনি সফল হবেন।


দিনান্তের কথা   শান্তি   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন