ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু ও অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে গঠিত ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ নিয়ে আগামীতে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে চান নুরু।
নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘নৌকা বা ধানের শীষের বাইরে কেউ কেউ বিকল্প নতুন শক্তির কথা বলছেন। সাধারণ মানুষেরও প্রত্যাশা, আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির বাইরে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে উঠুক। তাই আমরা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে জোটের রাজনীতি করতে চাই না। আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে থাকতে চাই। ২০২৩ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী দিতে চাই।’
আলাপচারিতায় নূর বলেন, ‘নতুন দলের ঘোষণার আগে ও পরে আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। ঘোষণা দেওয়ার আগে থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। আমাদের চারটি অঙ্গসংগঠন। ছাত্র অধিকার, যুব অধিকার, শ্রমিক অধিকার ও প্রবাসী পেশাজীবী অধিকার পরিষদ আগেই গঠন করা হয়েছে। দল ঘোষণার আগে বিভিন্ন ব্যক্তি বলেছিলেন আত্মপ্রকাশের পর তারা নতুন দলে যোগ দেবেন। সেই সাড়াও পাচ্ছি। বিভিন্ন দল থেকেও আমাদের দলে আসার ব্যাপারে অনেকেই যোগাযোগ করছেন। সেদিক থেকে বলা যায়, এ রকম একটি প্রতিকূল পরিবেশে যখন রাজনৈতিক ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন চলছে, সেই সময় সর্বসাধারণের বিপুল সাড়া পাচ্ছি।’
কোন কোন রাজনৈতিক নেতা যোগাযোগ করছেন জানতে চাইলে ডাকসুর এই সাবেক ভিপি বলেন, ‘এটা সারপ্রাইজ হিসেবেই থাক। যোগদানের পরই সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব। এখন বললে তো আকর্ষণ থাকবে না।’ সাংগঠনিক কাঠামো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের চার অঙ্গসংগঠন এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কমিটি হচ্ছে। এখন জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে সব কমিটি গঠনের কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা কমিটি করতে চাই। আমাদের টার্গেট ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নিজেদের সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করা। এখন আমরা আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিচ্ছি। সেভাবেই দল সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
গণঅধিকার পরিষদের লক্ষ্য কী জানতে চাইলে দলটির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা মনে করি সব সময় সংকটেই সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়। যেহেতু জাতীয়ভাবে রাজনীতিতে একটা সংকট চলছে, দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে সে মুহূর্তে আমরা তরুণরা কিন্তু একটি পরীক্ষা দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। এ সময়ে আমাদের আপসহীন ভূমিকা ও কথা বলা বা পাশে থাকার ব্যাপারে দৃঢ়তা মানুষের মধ্যে আশার জন্ম দিয়েছে। আজকের এ সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের একটি ভূমিকা আছে।’
নুরুল হক নূর বলেন, ‘সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা বা আকাক্সক্ষা- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র তা স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সম্ভব হয়নি। বিচার বিভাগ স্বাধীন এ কথা আমরা বলতে পারি না। সেদিক থেকে ন্যায়বিচার আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। গণমাধ্যম বিশেষ করে ব্যক্তির বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। পাকিস্তানিরা যেমন আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, ঠিক তেমনি সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে কালো আইন করে আমাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায়। সে ক্ষেত্রে মানুষ আমাদের কাছে যে প্রত্যাশা করছে এ সংকট থেকে জাতিকে আমরা উদ্ধার করতে পারব।’
দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে যাবেন কি না জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রতারণামূলক নির্বাচন করেছে। সে কারণে তাদের বিশ্বাস করা যায় না। আমরা দেখেছি দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। সে ক্ষেত্রে আমাদের দাবি থাকবে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা অথবা সব দল ও সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা। আমাদের স্পষ্ট কথা- এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন। এজন্য যদি আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে নামতে হয় তা হলেও আমরা রাজপথে থেকেই দাবি আদায় করব।’
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ বা জোটগত আন্দোলনে যাবেন কি না জানতে চাইলে নূর বলেন, ‘মৌলিক দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে কারও আহ্বানের দরকার নেই। আমাদের প্রত্যেকেরই বর্তমানে মৌলিক দাবি একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট। তা আমার জন্য, বিএনপির জন্য, জাতীয় পার্টি, চরমোনাই পীরের জন্য, সিপিবি বা বাসদের জন্যও প্রয়োজন। এজন্য কারও আহ্বানের প্রয়োজন নেই। যার যার জায়গা থেকে আন্দোলন শুরু করলেই হয়। এতেই সরকার চাপে পড়বে। কারও ব্যানারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মৌলিক ইস্যুতে যার যার ব্যানার নিয়ে মাঠে নামলেই কার্যকর আন্দোলন গড়ে উঠবে, দাবি আদায় হবে। এ ক্ষেত্রে জোট বা যুগপৎ আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। সব দলের জন্যই নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন, কারও একক প্রয়োজন নয়।’
নেতৃত্বে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৯৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে অনেক অভিজ্ঞ ও নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটেছে। তবে আমাদের নেতৃত্বের বড় একটি অংশই তরুণ। কারণ তারা এ প্রতিকূল পরিবেশে নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষের অধিকার আদায়ে রাজপথে অটল থাকে। হামলা-মামলাসহ নানা কারণে তাদের অদম্য শক্তি দমে যায়নি। এই কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে আন্দোলন সংগ্রামের বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে তরুণরাই সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তরুণদের আমরা নেতৃত্বে রেখেছি, ভবিষ্যতেও রাখব। পাশাপাশি সিনিয়ররাও আমাদের পাশে থেকে পরামর্শ দেবেন। আমাদের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
দেশবাসী বা নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান কী জানতে চাইলে নুরুল হক নূর বলেন, ‘দেশটা আমাদের সবার। দেশটা গড়ার জন্য যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবেই। তাই বলে একটি মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে আরেকটি মতকে দমিয়ে রাখব, অন্য ধর্মের ওপর আক্রমণ করব, মানুষের ওপর হামলা করব, অসহিষ্ণু আচরণ করব তা হতে পারে না। রাজনীতি যার যার জায়গা থেকে করব, কিন্তু আমরা সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখব। আগামীতে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়া। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মানুষের ভোটাধিকার নেই। তা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নইলে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ভূলুণ্ঠিত হবে।’
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।