পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় গত ৪৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল
গতকাল সোমবার। এদিন তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা সারা দেশের মধ্যে
ছিল সর্বোচ্চ। এমনকি চলতি মৌসুমেও এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ১৯৮১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত
পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার তাপমাত্রার তথ্য–উপাত্ত ঘেঁটে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়াবিদ
মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী খেপুপাড়ায়
১৯৮১ সালের পর এপ্রিলে সাধারণত তাপমাত্রা ছিল ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাম্প্রতিক
বছরগুলোয় এই অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ছে। গত বছর ২০ ও ২১ এপ্রিল খেপুপাড়ায় তাপমাত্রা উঠেছিল
৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আজ সেই তাপমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেল।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যগুলোর
পরিবর্তন, ভারত থেকে আসা গরম বাতাস এবং দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ মেঘমুক্ত থাকার কারণে খেপুপাড়ায়
সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা।
দেশের অভ্যন্তরীণ কারণ ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম
মল্লিক বলেন, ‘দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল উত্তপ্ত অঞ্চল। ইদানীং দেখা যাচ্ছে তাপপ্রবাহ
আস্তে আস্তে উত্তর–পশ্চিমাঞ্চল থেকে কিছুটা মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। এর
মধ্যে এখন পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশায় তাপমাত্রা খুব বেশি। ভারতের এসব অঞ্চলের উত্তপ্ত বাতাস
যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা হয়ে বরিশাল বিভাগ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করছে। খেপুপাড়ায় আজ এত
তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে’।
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে কিছু মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে আকাশ একদম মেঘমুক্ত। এতে সূর্য বেশি সময় ধরে আলো দিচ্ছে। এটিও আরেকটি কারণ।
এদিকে এবারের পয়লা বৈশাখও উত্তপ্ত। গত ছয় বছরের মধ্যে এবারের পয়লা
বৈশাখ ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্তপ্ত। এবার পয়লা বৈশাখে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল
রাঙামাটিতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই দিনে গত বছর চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল
৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগের চার বছর এত তাপমাত্রা ছিল না পয়লা বৈশাখে। যেমন ২০২২ সালের পয়লা বৈশাখে সর্বোচ্চ
তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২১ সালে রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক
৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২০ সালে রাঙামাটিতে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৯ সালে
বাগেরহাটের মোংলায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল সোমবার (১৫ এপ্রিল) প্রায় সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশজুড়ে চলমান এই তাপপ্রবাহ এপ্রিল মাসের বাকি সময়জুড়েও থাকবে।
কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে। তবে এ মাসে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
পর্যন্ত ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে এপ্রিলে এক থেকে দুটি লঘুচাপ হতে পারে বলে এ মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে একটি লঘুচাপ নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলেও জানিয়েছিল তারা। অবশ্য এখন আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এপ্রিলে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের আভাস এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস
হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ,
৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।
গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা,
খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ
বয়ে যাচ্ছে। তা আজও অব্যাহত থাকবে। খেপুপাড়া ছাড়াও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আজ রাঙ্গামাটিতে
৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৩৯
দশমিক ৪ ডিগ্রি, বান্দরবানে ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, মোংলায়
৩৯ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৩৯ ডিগ্রি ও পটুয়াখালীতে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট ও নেত্রকোনার মতো কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা আজকেও বাড়তে পারে। তবে বুধবার (১ মে) থেকে বৃষ্টি হয়ে তাপমাত্রা কমার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোববার ( ২৮ এপ্রিল ) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোরে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ৩১ মার্চ থেকে দেশে টানা তাপপ্রবাহ চলছে। এরমধ্যে কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ অতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রচণ্ড তাপে পুড়ছে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল। বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রচণ্ড গরমে ঘটছে হিটস্ট্রোকের ঘটনা।
আবহাওয়াবিদ জানান, সোমবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি ভাব বিরাজমান থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
এ আবহাওয়াবিদ আরও জানান, যশোর ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও নীলফামারী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে বুধবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পরবর্তী পাঁচ দিনে সারাদেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে এবং তাপমাত্রা কমতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাজধানীসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ
পরিস্থিতিতে আরো ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন ধরে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে হিট অ্যালার্ট
জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোববার (২৮ এপ্রিল) আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক
বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশের উপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৮ এপ্রিল) হতে
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি
পেতে পারে।
এর আগে গত ১৯ এপ্রিল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর
থেকে প্রথমবার তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। এরপর কয়েক ধাপে তা বাড়ানো হয়।
হিট অ্যালার্ট আবহাওয়া অধিদপ্তর
মন্তব্য করুন