নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৮ পিএম, ১৬ অগাস্ট, ২০২০
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে স্পষ্টই বলা হয়েছে, জিয়াউর রহমান তখন উপ-সেনাপ্রধান ছিলেন। এ সময়ে যখন তাকে বলা হয় যে, রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছে। তখন জিয়া ছিলেন প্রতিক্রিয়াহীন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘সো হোয়াট? ভাইস প্রেসিডেন্ট উইল টেক ওভার।’
এছাড়াও বিবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে খুনী ফারুক ও খুনী রশীদ দাবি করেছিলেন যে, তারা এই হত্যা পরিকল্পনা নিয়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তিনি মৌন সম্মতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের যখন বিচার হয়, তখন জিয়া আসামি হন নাই। বাংলাদেশে দণ্ডবিধির আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা যায় না। এ কারণেই জিয়া পার পেয়ে গেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়ার সংশ্রবের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাড় করানো যায়নি। কিন্তু যদি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি পুর্নাঙ্গ কমিশন গঠন করা হতো এবং এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র রহস্য উন্মোচন করা হতো। তাহলে হয়তো জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে আরো বিশদ তথ্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তুলে ধরা যেত। কিন্তু সেটা হয়নি।
জিয়াউর রহমান মারা গিয়ে পার পেলেও খালেদা জিয়া না মৃত্যুবরণ করে পার পেয়েছেন একই রকম অপরাধ করে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ২০০৪ সালে। পার্থক্যটা ছিল শুধু এই যে, ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। আর ২০০৪ এ তার কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ছিলেন বিরোধী দলে।
২০০৪ এর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, আর ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। একই রকম ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। দুটির লক্ষ্য ছিল একই। সেটি হল বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান বানানো। বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনাকে চিরতরে ধূলিসাৎ করে দেওয়া। আর ’৭৫ এ জিয়াউর রহমান পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছিলেন। তিনি সবকিছু জানতেন এবং তার সবুজ সংকেতেই খুনী ফারুক রশীদ এই অপকর্ম করেছে। ঠিক তেমনি ২০০৪ এ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাতেও বেগম জিয়া সবকিছু জানতেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আর মদদে এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। বেগম জিয়া সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্তদের বিচার হয়েছে এবং নিম্ন আদালত তারেক জিয়াসহ বেশ কিছু আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। কিন্তু এই সময়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে যা যা করা দরকার সবকিছু তিনি করেছিলেন। সে সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া নিজে। এছাড়া এই ঘটনার পর তিনি যেভাবে এই ঘটনার আলামত এবং তথ্যপ্রমাণ ধ্বংসের চেষ্টা করেছিলেন, যেভাবে ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন তা ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে অপরাধ। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, যেভাবে কমিশন গঠন না করে ’৭৫ এ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা জাতির সামনে উন্মোচন করা হয়নি, ঠিক তেমনিভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারের বাইরে রাখা হয়েছে। কেন রাখা হয়েছে সেটা এক বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্যে, ইতিহাসের সত্য অনুসন্ধানের জন্যে যেমন ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের সত্য উদঘাটন জরুরী, তেমনি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রকৃত তথ্য খুঁজে বের করাটাও জরুরী। কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরণের গ্রেনেড বাংলাদেশে নিয়ে আসা, একটি দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই গ্রেনেড ছুড়ে মারা এবং এই হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা, জজ মিয়া নাটক সাজানো ইত্যাদি সম্ভব নয়। তাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারেও একটি কমিশন হওয়া উচিত এবং এই কমিশনে যারা থাকবেন তাদের প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান করা উচিত। একইসাথে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যখন আপিলের শুনানি হবে তখন এই মামলায় খালেদা জিয়ার ভূমিকা আপিল বিভাগে উত্থাপন করা উচিত এবং খালেদা জিয়ার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাকেও আইনের আওতায় আনা উচিত। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে এটা অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, আইনের নির্মোহ প্রয়োগ করতে হবে এবং যারা হত্যা ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন
কোটা আন্দোলন সরকার পতন বিটিভি বিমানবন্দর
মন্তব্য করুন
মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান দুর্নীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যুক্তরাজ্য লেবার পার্টি বিএনপি তারেক জিয়া অভিবাসী লেবার সরকার কিয়ার স্টারমার
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব তারেক জিয়া রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে আসলে সরকার পতনের একটি আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল এবং এই আন্দোলন দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে পরিকল্পিত হয়েছিল। সরকার পতনের জন্য সারা দেশে তাণ্ডব সৃষ্টি, নাশকতা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করার নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। আর এ কারণে ঢাকায় প্রায় পাঁচ লাখ ছাত্রশিবির, ছাত্রদল এবং পেশাদার সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
তার নাম মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাকর ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রধানমন্ত্রীর ফাই-ফরমাস করছেন। বাজার হাট করে দিতেন এবং জাহাঙ্গীরের (প্রধানমন্ত্রীর আরেক চাকর) চেয়ে এক ধাপ নিচের হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হতো। সেই মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানও এখন ১০০ কোটি টাকার মালিক। আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করছে। তবে কুমিল্লা নিবাসী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এখন দেশে নেই। তিনি বিদেশে আছেন।
যুক্তরাজ্যে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই সেই দেশের আভ্যন্তরীণ নীতি, পররাষ্ট্রনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে সরকার। স্টারমার সরকার অভিবাসী নীতির বিপক্ষে নয়। তবে অভিবাসীদের কিছু সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ থাকা উচিত বলে তারা মনে করছেন। স্টারমার সরকার মনে করছে যে, অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে যা খুশি তা করলে যেমন পররাষ্ট্রনীতির ওপর তার প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের স্থিতিশীলতা এবং ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ কারণেই লেবার সরকার তার প্রথম দিকে যে সমস্ত নীতি এবং উদ্যোগগুলো গ্রহণ করতে যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি হল অভিবাসীদের কার্যক্রম সীমিতকরণ।