নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৩ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
দিল্লির চাঁদবাগ এলাকার ড্রেন থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা অঙ্কিত শর্মার রক্তাক্ত, থেঁতলানো দেহটা যখন উদ্ধার হয়, সারা শরীরের একটা অংশও বাদ ছিল না যেখানে ধারালো অস্ত্রের দাগ নেই। ছেঁড়াফাটা চামড়া, রক্তে শুকিয়ে কালশিটে হয়ে গেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, সারা শরীরেই অন্তত ৪০০ বার ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল। বেরিয়ে এসেছিল অন্ত্র। তারপরেও কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। টানা দুই ঘণ্টা ধরে চলেছিল এই নিষ্ঠুর হত্যালীলা। এরপর দলা পাকানো শরীরটা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল নর্দমায়।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা নাগাদ বাইকে চেপে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অঙ্কিত। তার বাবা রবীন্দ্র জানান, কিছু জিনিসপত্র কিনে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে বলেছিল। এরপর থেকেই ছেলের কোনও খোঁজ মিলছিল না। সন্ধ্যার দিকে কাছাকাছি খাজুরি খাস থানায় নিখোঁজ ডায়রি করেন তিনি। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে বাড়ির কাছেই একটি ড্রেন থেকে অঙ্কিতের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। রবীন্দ্র শর্মা নিজেও গোয়েন্দা অফিসার। বলেছেন, “ছেলের মৃতদেহের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। সারা শরীর কালো হয়ে গিয়েছিল। চামড়া ফেটে বেরিয়ে এসেছিল দলাদলা মাংস। এত নির্মমভাবে কাউকে হত্যা করা যায়?”
শেষবার অঙ্কিতকে কাল্লু নামে একটি ছেলের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল, বলেছেন অঙ্কিতের বাবা। সেই ছেলেটির খোঁজ করতেই জানা যায় একটি মৃতদেহ পড়ে আছে চাঁদবাগের একটি ড্রেনের মধ্যে। রবীন্দ্র শর্মা বলেছেন, “খবর পেয়েই ছুটে যাই সেখানে। প্রথমে ভাল বোঝা যাচ্ছিল না। ড্রেনের মধ্য়ে উপুড় হয়ে পড়েছিল একটা দেহ। পরনে শুধু অন্তর্বাস। মুখটা দেখতেই হৃদস্পন্দন থেমে যায়। সারা শরীর অবশ হয়ে গিয়েছিল। গলা কাটা, রক্তাক্ত ওই দেহটা ছিল আমারই ছেলের।”
ছেলের মৃত্যুর জন্য আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা তাহির হুসেনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন অঙ্কিতের বাবা রবীন্দ্র শর্মা। তার অভিযোগ ছিল, বাড়িতে ঢোকার আগেই অঙ্কিতকে ঘিরে ধরেছিল একটি গোষ্ঠীর কিছু দুষ্কৃতীরা। বেধড়ক মেরে, গুলি করে খুন করা হয়েছিল তার ছেলেকে। আর সবটাই হয়েছিল তাহির হুসেনের অঙ্গুলিহেলনে। যদিও বৃহস্পতিবার একটি ভিডিওতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন আপ নেতা। তবে তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাহির হুসেনের বিরুদ্ধে অঙ্কিতকে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। এফআইআর-এ ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে তাহির হুসেনেরই নাম লিখেছিলেন অঙ্কিত শর্মার বাবা। এই এফআইআর দায়ের হওয়ার খানিকক্ষণের মধ্যেই আম আদমি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয় তাহির হুসেনকে।
বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র টুইটবার্তায় বলেন, “খবর পেয়েছি দুই থেকে চার ঘণ্টা ধরে শতাধিকবার কোপানো হয়েছিল গোয়েন্দা অফিসারকে। ছক কষেই এই খুন করে তাহির হুসেনের লোকজনেরা।” তার আরও দাবি, অঙ্কিতের বাড়ির কাছাকাছিই একটি মসজিদের ছাদে নিয়ে গিয়ে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। তারপর মসজিদের ছাদ থেকে ড্রেনের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় দেহ। সম্বিতের অভিযোগ, যে বাইকে চেপে অঙ্কিত যাচ্ছিলেন, সেই বাইকের পিছনে লেখা ছিল ‘জয় শ্রী রাম’, তাই তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে এমন নির্মমভাবে খুন করা হয়।
যদিও বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এসেছে একটি ভিডিও। যেখানে দেখা গিয়েছে, আম আদমি পার্টির কাউন্সিলর তাহির হুসেন নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছেন। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যে। কপিল মিশ্রর উস্কানিমূলক কথার পরেই এই গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। আমার বাড়ির এলাকাতেও পাথর ছোড়া, বোমাবাজি সব হয়েছে। বুধবার কয়েকজন আমার বাড়িতে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে। তারা ছাদে উঠে যায়। তখনই আমি পুলিশকে ডাকি। তাদের ছাদ থেকে নেমে যেতে বলি। তখনই হয়তো ছাদে ওই ভিডিওতে আমাকে দেখা গিয়েছে।” ওই ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, “পুলিশ এসে সবাইকে ছাদ থেকে নামিয়ে দেয়। আমি বলি বাড়ির বাইরে পাহারা বসাতে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরে ফের পুলিশ চলে যেতেই এক অবস্থার সৃষ্টি হয়। যা হয়েছে তাতে আমিই খুব দুঃখিত। আমি একজন শান্তিপ্রিয় মুসলিম। আমি সবসময় হিন্দু-মুসলিমের একতার জন্য কাজ করেছি।”
পুলিশ জানিয়েছে, তাহির হুসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৫, ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সূত্র: দ্য ওয়াল
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
মন্তব্য করুন
গাজা নীতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
ভারতের নির্বাচন: নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস বিজেপি ইন্ডিয়া জোট এনডিএ জোট লোকসভা ভোট
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা ইরান
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন