নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪৮ পিএম, ০৩ এপ্রিল, ২০২০
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তাবলীগ জামাতের সদর দফতরে হাজার হাজার লোকের সমাবেশ থেকে অসংখ্য মানুষের ভেতর করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার পর গোটা বিষয়টি নিয়ে তীব্র সাম্প্রদায়িক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া প্রায় শদেড়েক ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। সারা ভারতে করোনাভাইরাসে এখনও পর্যন্ত যে অন্তত মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত দশটির সঙ্গে ওই তাবলীগ জামাত সমাবেশের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
নরেন্দ্র মোদীর ক্যাবিনেটের একমাত্র মুসলিম সদস্য ও বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নাকভি পর্যন্ত মন্তব্য করেছেন, এই ধরনের সমাবেশ আয়োজন করে তাবলীগ জামাত একটি `তালেবানি মাপের অপরাধ` করেছে।
এটাকে একটা ‘ক্ষমার অযোগ্য পাপ’ বলে বর্ণনা করতেও তিনি দ্বিধা করেননি।
ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও তাবলীগ তথা মুসলিম সমাজকে আক্রমণ করে একের পর এক অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে।
তার কোনওটির নাম, "ধর্মের নামে এ কোন প্রাণঘাতী অধর্ম?"। কোনও টিভি অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে, "করোনা-জিহাদ থেকে দেশকে বাঁচাও!"
সেখানে ইঙ্গিতটা খুব স্পষ্ট, যে ইসলামী জিহাদের নামে একটা শ্রেণী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে ভারতকে বিপদে ফেলতে চাইছে।
মুসলমানরা চক্রান্ত করে ছড়িয়ে দিচ্ছে করোনা, পুরো ভারতজুড়ে এখন এই প্রচারণা চলছে। আসুন সত্যিটা দেখে নেওয়া যাক। কয়েকটা তারিখ দিয়ে বোঝা যাক এই বিষয়টা;
১২ মার্চ- রাহুল গান্ধী টুইট করেছিলেন, করোনা সাংঘাতিক রুপ নিতে পারে। কেন্দ্র সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিন।
১৩ মার্চ- ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানালো, করোনা ভাইরাস ভারতবর্ষের জন্য তেমন ভয়াণক কিছু না।
১৩ মার্চ- দিল্লীর নিজামুদ্দীন মার্কাজে ৪ হাজার মুসল্লি নিয়ে তাবলীগ জামায়াত শুরু হলো। এর মধ্যে ২৫০ জনের বেশি বিদেশি মুসলমানও ছিলেন। তাদের কতজন প্রচারক কতজন কেবল অংশ নিতে গিয়েছিলেন জানা নেই।
১৫ মার্চ- তাবলিগ জামাত শেষ হলো।
১৬ মার্চ- হিন্দু মহাসভা গো মূত্র খেলে করোনা কমবে, তার জন্য সভার আয়োজন করলো।
১৬- দিল্লী সরকার সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধের আদেশ দিলো।সব জায়গায় সেই আদেশ লিখিতভাবে গেল না। কেবল অরভিন্দ কেজরিওয়াল সংবাদ সম্মেলন করে এই কথা বললেন।
১৭ মার্চ- ভিরুপতি মন্দির কমিটির হিসেব মতে, ৪০ হাজার তীর্থ যাত্রীর জমায়েত হলো।
১৮ মার্চ- ভিরুপতি মন্দির কমিটির হিসেব মতে, ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ২৮ হাজার ৭১৬ জন তীর্থযাত্রী এসেছেন। ১.৫৩ কোটি টাকার প্রণামীও আদায় হয়েছে।
১৯ মার্চ- ভিরুপতি মন্দির কমিটির হিসেব মতে, ওই একই সময়ে তীর্থযাত্রী এসেছেন ৪২ হাজার ৮৪ জন। প্রণামী মিলেছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
১৯ মার্চ – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার প্রথম জনতা কারফিউ ঘোষণা করলেন। ওই ভিরুপতি, পুরির মতো মন্দির বন্ধ হলো।
২২ মার্চ- সকাল থেকে জনতা কারফিউ, আর বিকালে ঢোল, থালা বাসন পিটিয়ে মিছিল, করোনা যা করোনা যা।
২৩ মার্চ - পুনে, মুম্বাই স্টেশনের মতো বড় বড় শহরগুলোতে হাজার হাজার নানা পেশার মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য ভিড় করলো। যা সামাল দেওয়া প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
২৫ মার্চ- পুরো ভারতে ‘লক ডাউন’। ‘লক ডাউন’ হীন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কট্টর হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ৷ তিনি মুর্তি নিয়ে মিছিল বের করলেন।
৩০ মার্চ- দিল্লীসহ বড় শহর থেকে অন্তত ১৭ থেকে ১৮ লক্ষ্ মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায়। সরকারের কোন প্রস্তুতি ছিল না। ২৫ জন শ্রমিক মারা গেল।
৩০ মার্চ- ৫০০ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী বৈষ্ণদেবীতে আটকে গেছে। দিল্লীর রাস্তায় ৫০ হাজার শ্রমিক।
এই দিনই তাবলিগ জামায়েতের ৫ জনের মৃত্যু।
কিন্তু এরপর থেকে একটা শ্রেনীর ভারতের হিন্দুদ্ববাত সাংবাদিক নেমে পড়েছে কেবল তাবলিগ জমায়েতের জন্যই ভারতে ছড়িয়ে পড়লো করোনা। টুইটার ভরে গেছে মুসলমানদের প্রতি আক্রমানত্বক কথায়। আসলে কি তাই?
মন্তব্য করুন
গাজা নীতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
ভারতের নির্বাচন: নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস বিজেপি ইন্ডিয়া জোট এনডিএ জোট লোকসভা ভোট
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা ইরান
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন