নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৩ পিএম, ১৭ অগাস্ট, ২০১৭
পশ্চিমাদের কাছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ভাঁড় বলেই মনে হয়। মার্কিন প্রশাসন ও সামরিক কর্মকর্তারা প্রায়ই তাঁকে ‘মোটা ছেলে’, ‘তরুণ প্লেবয়’ এবং হাসির পাত্র হিসেবেই দেখেন। এমনকি জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধি নিক্কি হালেও সবার সামনে কিমকে পাগল বলতেও দ্বিধাবোধ করেননি। কিন্তু কিম কি সত্যিই হাসির পাত্র। এতোটা অসম্মান পাওয়ার যোগ্য?
একজন যোগ্য নেতা হিসেবে কিম তাঁর দেশ উত্তর কোরিয়াকে সামলে যাচ্ছেন। বলতে পারেন, উত্তর কোরিয়া ইনকরপোরেশনের সে প্রধান নির্বাহী। একজন প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব তাঁর অধস্তনদের কাছে কোম্পানির লক্ষ্য স্পষ্ট করে দেওয়া। এ লক্ষ্য অর্জনে কর্মীদের কী কী দায়িত্ব পালন করতে হবে তা বুঝিয়ে দেওয়া। কোম্পানির প্রধান নির্বাহীকে নিশ্চিত হতে হয় যে লক্ষ্য অর্জনে সকল কর্মী একই পথে হাঁটছেন।
কিম যে মার্কিনবিরোধী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছেন তা হয়তো পশ্চিমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া কিম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধও করেছেন যা কখনই প্রশংসার যোগ্য না। তিনি যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তা সারাবিশ্বকে শঙ্কিত করে দিচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু তাঁর মানে এই না যে তিনি অসম্মানের পাত্র।
বাবা কিম জং ইল যখন মৃত্যুবরণ করলেন তখন উত্তর কোরিয়া চিন্তিত ছিল উনকে নিয়ে। উন কি পারবে বাবার মতো সব কিছু সামলাতে? সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইল কম সংগ্রাম করেননি। ১৯৯১ সালের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করতে মাত্র দুইবেলা খাবার খেতো উত্তর কোরীয়রা। বাকি সময় তারা অক্লান্ত খাটতো। ১৯৫০ সালে দেশটির অবকাঠামো উন্নয়ন ও নির্মাণের জন্য জনগণ আঠারো ঘণ্টা করে খাটতো। এভাবেই উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন ইল।
তবে উন দেশবাসীকে দিলেন ভিন্ন বার্তা, কোনো উত্তর কোরীয়রা না খেয়ে থাকবে না। উনের সময় দেশটি অর্থনীতির চাকাও যেমন ঘুরতে শুরু করল তেমনি পরমাণু কর্মসূচীতেও সাফল্য পেতে থাকল। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ফ্যাক্টরির সংখ্যা বাড়ানোয় উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়তে থাকল। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে উত্তর কোরিয়ার কৃষকদের সরকারের কাছে নির্ধারিত ফসল বিক্রির পরও উদ্বৃত্ত থাকতে শুরু করল।
একজন প্রধান নির্বাহী হিসেবে কিম প্রমাণ করেছেন কর্মী ব্যবস্থাপনাতেও তিনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তিনি নীতিমালা তৈরি করেছেন এবং কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিবেন তা নির্ধারণ করে রেখেছেন। যাদেরকে তিনি অযোগ্য মনে করেন সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্ত করেন। যাদের কাজে তিনি খুশি তাদেরকে পুরস্কৃত করেন। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যদি উনের অধীনে কাজ করে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারলে আপনার পদোন্নতি নিশ্চিত। সকল কর্মীকেই তিনি সক্রিয় রাখেন। এভাবেই কিম তাঁর দেশের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি লক্ষ্য অর্জন করে যাচ্ছে।
কিম কখন যে কি ভাবেন তা বোঝা মুশকিল। তাঁর সকল সিদ্ধান্তই অপ্রত্যাশিত। তাইতো পশ্চিমারা কিম সম্পর্কে কোনো কিছু আগে থেকে বুঝতে পারে না। তাঁর কোন কর্মী কি কাজ করছে, তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা কি সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের কাছে নেই। সম্পূর্ণটাই ধূম্রজালের মতো। ২০১৫ সালে ভাইস মার্শাল কো রিয়ং হাইকে নিয়ে পশ্চিমারা ভেবেছিলেন তাঁকে বরখাস্ত করা হবে। কিন্তু ২০১৬ সালে তাঁর অফিসিয়াল ছবি দেখে পশ্চিমারা এক রকম চমকেই যান।
উত্তর কোরিয়ার ওপর বিভিন্ন অবরোধ থাকা সত্ত্বেও দেশটির ব্যাংক অব কোরিয়া জানায়, ২০১৬ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৯ শতাংশ যা ১৯৯৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি। উত্তর কোরীয়রা বাজার থেকে ৭৫ শতাংশ আয় করছে। বৈদেশিক বাণিজ্যও বাড়ছে তাদের। ভারত এখন দেশটির তৃতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক লেনদেন বেড়েছে ৭৩ শতাংশ।
কিম জং উন আসলে কোনো কৌতুকের নাম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবসময় হুমকি পেয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া। সমাজতন্ত্রকে নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে নেওয়ায় পশ্চিমারা তাদের ভালো চোখে কখনও দেখেনি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসার পর তার স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলেছে। ট্রাম্প যতই মুখে মুখে হুশিয়ার করুক, আসলে দেশটি এখন ভালোই আছে। বরং অন্যান্য দেশ উত্তর কোরিয়া ও উনের সঙ্গে বাণিজ্যে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
সূত্র-ফরেন অ্যাফেয়ার্স
বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি
মন্তব্য করুন
গাজা নীতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
ভারতের নির্বাচন: নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস বিজেপি ইন্ডিয়া জোট এনডিএ জোট লোকসভা ভোট
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা ইরান
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন