নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০৮ পিএম, ১৮ জুন, ২০২১
বিধানসভা ভোট পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে সরগরম পশ্চিমবঙ্গ। সহিংসতা ও তা নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ এখন রাজ্যের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে।
বিজেপি-র ছোট-বড় নেতা থেকে শুরু করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় পর্যন্ত সকলে এখন এই সহিংসতা এবং তার জন্য তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে নিয়মিত বিবৃতি দিচ্ছেন। তারা সমানে রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। তাদের দাবি, ভোটের ফলাফল বের হওয়ার পর থেকে তৃণমূলের আক্রমণে প্রচুর বিজেপি কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। অনেক কর্মী মারা গেছেন। অনেকে আহত। তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
রাজ্যপাল তো গতরাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও একঘণ্টার বৈঠক করেছেন। সূত্র জানাচ্ছে, সেই বৈঠকে ভোট পরবর্তী সহিংসতার প্রসঙ্গ নিয়ে বিস্তারে কথা হয়েছে। তার আগে তিনি মানবাধিকার কমিশনের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এমনকি দিল্লিতে তিনি প্রথা ভেঙে সোজা কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর বাড়িও গিয়েছিলেন। অধীর জানিয়েছেন, রাজ্যপাল তার বাড়িতে কফি খেতে চেয়েছিলেন। তিনি এসেছিলেন। সাধারণভাবে রাজ্য রাজনীতি ও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা হচ্ছে না। তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগে যখন প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ছিল, তখন কিছুটা হয়েছিল। এখন সব ঠিক আছে। মমতা বলেছেন, ``যারা এত সন্ত্রাস দেখতে পাচ্ছেন, তাদের চোখে ন্যাবা হয়েছে। অল্প কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। বাকিটা বিজেপি-র গিমিক।``
মমতার দাবি, তিনি সহিংসতা নিয়ে জিরো টলারেন্সের নীতি নিয়েছেন। পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, সহিংসতা নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে। সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেছেন মমতা, ``আপনারা কি হিংসা দেখতে পাচ্ছেন?``
রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে রাজ্যপাল বনাম মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি বনাম তৃণমূলের এই চরম পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যে কি আসল পরিস্থিতি হারিয়ে যাচ্ছে? প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, ``ভোটের পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিজেপি যতটা বলছে ততটা হয়নি।`` ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ``পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ২০১৬ সালেও এই সহিংসতা হয়েছিল। এবারও হয়েছে।``
শুভাশিস জানিয়েছেন, ``বিজেপি-র কিছু অভিযোগ ঠিক। যেমন উত্তরবঙ্গে কিছু মানুষ অসমে ঢুকে একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে তারা ফিরে আসেন। বিজেপি-র কয়েকজন মারা গেছেন। তৃণমূলেরও কিছু কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। সরকার যে সহিংসতা থামাতে একেবারে ব্যবস্থা নেয়নি সেটা বলা যাবে না। এখন প্রয়োজন, যারা সহিংসতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।``
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তও মনে করেন, সহিংসতা হয়েছে ঠিকই, তবে যতটা অভিযোগ করা হচ্ছে, সেরকম হয়নি। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ``বছর কয়েক আগে পঞ্চায়েত ভোটের পর এর থেকে অনেক বেশি সহিংসতা হয়েছিল। ঘটনা হলো, সহিংসতা একেবারেই হওয়া উচিত নয়। সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।``
আশিসের মতে, ``বিজেপি নেতারা এখন সমানে সহিংসতা নিয়ে অভিযোগ করছেন। প্রচারের সময় তারাই `মারব, ধরব, জ্বালিয়ে দেবো`-র মতো কথা হামেশা বলেছেন। এসব ক্ষেত্রে যে দুই তরফেই প্রতিক্রিয়া হয় তা কি তারা জানেন না?`` শুভাশিসও মনে করেন, ``প্রচারের সময় কারোরই সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার মতো কথা বলা উচিত নয়।``
বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি লাগামছাড়া অবস্থাতেই চলে। আগে ভোটের পর সিপিএম-কংগ্রেস সংঘর্ষ হতো, তারপর সিপিএম-তৃণমূল। এখন বিজেপি-তৃণমূল হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো বলে তারা মনে করছেন। আশিসের বক্তব্য, ``প্রথমে ঝড়, এখন প্রবল বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া, করোনা, ভ্যাকসিন এই সব নিয়েই মানুষ জেরবার। মানুষও চাইছেন, সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ হোক। সব পক্ষ শান্ত থাকুক।``
শুভাশিস মনে করেন, এখন যে কোনো সহিংসতা হলেই তাকে রাজনৈতিক সহিংসতা বলা হচ্ছে। আশিসের মতে, সহিংসতা নিয়ে দুই পক্ষই রাজনীতি করে যাচ্ছে।
বিজেপি অবশ্য আগামী সপ্তাহ থেকে সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজ্য নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সুত্র: ডয়চে ভেলে
মন্তব্য করুন
গাজা নীতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
ভারতের নির্বাচন: নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস বিজেপি ইন্ডিয়া জোট এনডিএ জোট লোকসভা ভোট
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা ইরান
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন