প্রকাশ: ০৭:৫৬ এএম, ২০ অগাস্ট, ২০২৩
চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের বিংশ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
ঢাকার একটি রেস্তোরাঁ। চা খেতে বসেছে দু বন্ধু। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলল যে কিছুদিনের মধ্যেই বর্তমান মহকুমাগুলোকে জেলায় পরিণত করা হবে। পুনর্গঠিত নতুন জেলায় নতুন প্রশাসক হবেন জেলা গভর্নর এবং তাঁর থাকবে নিরঙ্কুশ শাসনক্ষমতা। জেলা গভর্নরকে একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। নতুন জেলা গভর্নররা ক্ষমতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে অগণিত লোককে হত্যা করা হবে এবং বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা কেউ করলে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দেবে। সমবায়ের নামে ঘরবাড়ি আর জায়গা-সম্পত্তি কেড়ে নেয়া হবে। বন্ধুর মুখে এই ধরনের কথাবার্তা শোনার পর অপর বন্ধুটি জানায়, সেও এসব কথা আগেই শুনেছে।
আসলে এ ধরনের অপপ্রচার হাবিবুর রহমান গং তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সারা দেশেই ছড়াতে থাকে। সামান্য সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশিয়ে অপপ্রচার চালালে তা সহজেই লোকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। কথাটা মনে রেখেই ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের কাজে নেমেছিল। তারা ভাল করেই জানত একটা সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষ এ ধরনের অপপ্রচারের মুখে মিথ্যাকে সত্য থেকে আলাদা করতে পারে না। আর ক্ষমতার কাছাকাছি যারা থাকে, তারা নিজেরাই যখন ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে তাদের জানা কিছু কিছু সত্য ঘটনার সঙ্গে মিথ্যার রং মিশিয়ে অপপ্রচারে নামে, তখন জন্গণ অনায়াসে বিভ্রান্ত হবে। জেলা গভর্নরসংক্রান্ত প্রসঙ্গের ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম দেখা গেল না।
প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে ঔপনিবেশিক আমলের মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে গভর্নর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এসকল গর্ভনর হবেন জনগণের নির্বাচিত এবং তারা ক্ষমতাকে প্রয়োগ করবেন এমন এক কমিটির মাধ্যমে, যে কমিটিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন থাকবে। কমিটির এসকল সদস্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকবে। কমিটির এসকল সদস্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ইচ্ছেমতো কিছু করার সুযোগ পাবেন না। অন্যদিকে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রশাসনকে নিয়ে যেতে পারলে দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের সুরাহা করতে পারবে। জবাবদিহিমূলক বিকেন্দ্রীকরণ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তক করলে জনগণ তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের একটি সুযোগ পাবে। এই নতুন পদ্ধতিতে যেহেতু নিরঙ্কুশভাবে কারো হাতে ক্ষমতা থাকবে না, কাজেই ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ না কারণে ঔপনিবেশিক আমলের মতো শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তারা জনগণের শক্তি আর মালিকসুলভ ব্যবহারের সুযোগ পাবে না। কিন্তু দুভাগ্য যে এ সরল সত্য জনগণকে বোঝানোর মতো লোকের তখন অভাব ছিল।
পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছিল যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ধরা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছিল। এদিকে সহায়-সম্বলহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছিল। ধনী ও গরিবের মধ্যে বিরাট দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই সমবায়ের ধারণাকে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপে পরিণত করার চেষ্টা করলেন। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল যারা জমি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্পত্তির আরও উন্নতি ও উৎকর্ষসাধন করতে পারবে তেমনি যারা শ্রমিক তারা সম্পত্তির ভাগিদার হওয়ার ফলে নিজেদের শ্রম দিয়ে দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে তুলবে। তাদের অধিকারও নিশ্চিত হবে। এ কারণে সমবায়পদ্ধতি পরিচালনার জন্যে এ ধরনের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেখানে কারো নিজের ক্ষমতা অন্য কারোর উপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগই ছিল না।
বঙ্গবন্ধুর নতুন জেলা প্রশাসন ও সমবায়পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে ষড়যন্ত্রকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা এতদিন ধরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে এবং অপপ্রচার চালিয়ে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়, যার ফলে তাদের ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে শেষ করবার পূর্বে জনগণ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। কিন্তু তারা হিসেব করে দেখল যে, একবার যদি নতুন পদ্ধতি চালু হয়ে যায় এবং জনগণ যদি বঙ্গবন্ধুর মূল উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়, তা হলে তাঁকে শেষ করে কিছুতেই পার পাওয়া যাবে না। নতুন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ষড়যন্ত্রের পক্ষে কাজ করে যাওয়া এক লক্ষ লোককেও রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কাজেই নতুন পদ্ধতির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছানোর আগেই যা করার করতে হবে। আসলে ষড়যন্ত্রকারীরা আতঙ্কিত হলেও তা ছিল সাময়িক। তারা কুমিল্লায় বসে নতুন অবস্থার পর্যালোচনা করতে থাকে। তারা খুঁটিনাটি বিষয় পর্যালোচনা করে দেখল যে, তাদের ঘাবড়াবার কিছু নেই। শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যে একের পর এক গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা সম্ভব হয়। যেহেতু প্রশাসনযন্ত্র থেকে শুরু করে সর্বত্রই ষড়যন্ত্রকারীদের অবাধ গতি কাজটি করা তাদের পক্ষে তাই বেশি কঠিন হওয়ার কথা নয়।
বাস্তবেও ষড়যন্ত্রকারীদের কাজটি বেশি কঠিন হল না। অপপ্রচার বিশেষ করে একের পর এক গুজব এমনভাবে ছড়ানো হতে থাকল যে, জনগণ জেলা গভর্নর ও সমবায়পদ্ধতির আসল উদ্দেশ্যই বুঝতে সক্ষম হল না। গুজবে কান দিয়ে তারা হল বিভ্রান্ত। এ সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর উপর আঘাত হানার জন্যে তাদের সময় নির্দিষ্ট করল। ষড়যন্ত্রকারীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত হল যে, বঙ্গবন্ধুকে শেষ করতে হলে যে করেই হোক কাজটা করতে হবে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ার আগেই। সময়ের বিষয়টি তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। সকল ষড়যন্ত্রকারী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে এবং দেশের পরিস্থিতি সঠিকভাবে আঁচ করেই বঙ্গবন্ধুকে চূড়ান্তভাবে আঘাত হানার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেল। যাদের দায়িত্ব ছিল যড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করা, তাদের অনেকেই ষড়যন্ত্রে শরিক হওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগীরা আঘাত সম্পর্কে কিছুই আঁচ করতে পারলেন না।
মন্তব্য করুন
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মরদেহ রাজধানীর ভাটারার বাসায় আনা হবে। এরপর জানাজা শেষে নেয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ড. মাহবুবুল হক প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
ড. মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।
তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে: বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, ইতিহাস ও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও লোক সংস্কৃতি এবং বাংলার লোক সাহিত্য: সমাজ ও সংস্কৃতি প্রভৃতি।
মন্তব্য করুন
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছোটকাগজ সম্পাদনায় বিশেষ অবদান রাখায় চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ ‘হৃদয়ে চলনথ এর সম্পাদক কবি হাদিউল হৃদয়। হাদিউল হৃদয় তাড়াশ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার তাড়াশ উপজেলা প্রতিনিধি।
শুক্রবার (১২ জুলাই') সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরীর হল রুমে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি কণ্ঠে কবিতা সংগঠন থেকে প্রধান অতিথি তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মনি এ পুরস্কার স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন।
সাবিনা ইয়াসমিন বিনুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মল্লিকী। আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক রাজুর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তাড়াশ পৌরসভার কাউন্সিলর রোখসানা খাতুন রুপা, পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মোজ্জামেল হক মাসুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসনেয়ারা নাসরিন দোলন, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সোহাগ, প্রভাষক আব্দুল কাদের, প্রভাষক আব্দুল মতিন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, হাদিউল হৃদয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের পল্লীর নিভূত অজোপাড়া পাড়িল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত্ব মুসলিম পরিবারে জন্ম। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্য কর্মী। মূলতঃ কবিতা দিয়ে শুরু করলেও প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও ছড়া লিখেন। তার লেখা লিটলম্যাগ ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার সম্পাদনা হৃদয়ে চলন ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে। সম্পাদনার স্বীকৃতিস্বরূপ এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার।'
মন্তব্য করুন