কবি সুফী মোতাহার হোসেন মূলত সনেট রচয়িতা হিসাবেই খ্যাত। কাজী নজরুল ইসলাম ও মোহিতলাল মজুমদারের সাথে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার ফলে তিনি কাব্যচর্চায় অনুপ্রেরণা লাভ করেন। মূলত সনেটেই তার কবি প্রতিভার স্বতঃস্ফূর্ততা প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পাদিত ‘বাংলাকাব্য পরিচয়’ নামক গ্রন্থে সুফী মোতাহার হোসেনের দিনান্তে সনেটটি সংকলিত করেন। তার সনেটের প্রধান উপজীব্য হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন প্রেম ও প্রকৃতি।
কবি সুফী মোতাহার হোসেন ১৯০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার ভবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ হাশিম ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর। মোতাহার হোসেন ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও জগন্নাথ কলেজ থেকে এফএ উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৩১ সালে বিএ পাস করেন। মেধাবী মোতাহার হোসেন সব পরীক্ষায়ই প্রথম বিভাগে পাস করেন। পড়াশোনা শেষ করে ফরিদপুর জজকোর্টে চাকরি নিয়েছিলেন। বছর দু-এক পরে নিউরেস্থিনিয়া ও ডিসপেপশিয়া রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় ১২ বছর শয্যাশায়ী থাকতে হয়। রোগমুক্তির পর তিনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন এবং ফরিদপুর ঈশান ইনস্টিটিউশনে ২০ বছর শিক্ষকতা করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম ও মোহিতলাল মজুমদারের সঙ্গে পরিচয় ও সম্পর্কের সূত্রে মোতাহার হোসেন সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য আদর্শে সনেট রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ নামক বইয়ে সুফী মোতাহার হোসেনের ‘দিগন্ত’ সনেটটি স্থান পেয়েছে। প্রকৃতি, প্রেম ও মানবতা তার সনেটে ধ্বনিত হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সনেট সংকলন’ (১৯৬৫)।
পরে সনেট সঞ্চয়ন (১৯৬৬) ও সনেটমালা (১৯৭০) নামে আরো দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে ‘আদমজী পুরস্কার’, ১৯৭০ সালে ‘প্রেসিডেন্ট পুরস্কার’ এবং ১৯৭৪ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ আগস্ট ঢাকায় মোতাহার হোসেন মারা যান।
সনেট কবি সুফী মোতাহার হোসেন ফরিদপুর জেলা ভবানন্দপুর গ্রাম
মন্তব্য করুন
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মরদেহ রাজধানীর ভাটারার বাসায় আনা হবে। এরপর জানাজা শেষে নেয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ড. মাহবুবুল হক প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
ড. মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।
তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে: বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, ইতিহাস ও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও লোক সংস্কৃতি এবং বাংলার লোক সাহিত্য: সমাজ ও সংস্কৃতি প্রভৃতি।
মন্তব্য করুন
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছোটকাগজ সম্পাদনায় বিশেষ অবদান রাখায় চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ ‘হৃদয়ে চলনথ এর সম্পাদক কবি হাদিউল হৃদয়। হাদিউল হৃদয় তাড়াশ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার তাড়াশ উপজেলা প্রতিনিধি।
শুক্রবার (১২ জুলাই') সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরীর হল রুমে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি কণ্ঠে কবিতা সংগঠন থেকে প্রধান অতিথি তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মনি এ পুরস্কার স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন।
সাবিনা ইয়াসমিন বিনুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মল্লিকী। আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক রাজুর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তাড়াশ পৌরসভার কাউন্সিলর রোখসানা খাতুন রুপা, পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মোজ্জামেল হক মাসুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসনেয়ারা নাসরিন দোলন, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সোহাগ, প্রভাষক আব্দুল কাদের, প্রভাষক আব্দুল মতিন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, হাদিউল হৃদয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের পল্লীর নিভূত অজোপাড়া পাড়িল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত্ব মুসলিম পরিবারে জন্ম। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্য কর্মী। মূলতঃ কবিতা দিয়ে শুরু করলেও প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও ছড়া লিখেন। তার লেখা লিটলম্যাগ ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার সম্পাদনা হৃদয়ে চলন ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে। সম্পাদনার স্বীকৃতিস্বরূপ এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার।'
মন্তব্য করুন