গল্পটি বেশ পুরনো।
সোহেল ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠেছে মাত্র। নব্বই দশকের মাঝের ওই সময়টাতে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের বেশ শক্ত একটা অবস্থান হয়েছে। মফস্বল শহরের বাজারটার দুইটি ক্যাসেটের দোকানেই পাল্লা দিয়ে বাজছিলো সদ্য মুক্তি পাওয়া “দুঃখিনী দুঃখ কোরোনা” অ্যালবামের ঈশ্বর, সুলতানা বিবিয়ানা আর বিবাগী। টিফিনের টাকা থেকে অল্প অল্প করে জমানো কিছু টাকা পকেটে নিয়েই সোহেল ছুটলো বাজারে। নতুন ক্যাসেট পকেটে নিয়ে বাড়িতে ফিরেই শুরু হয়ে গেলো সোহেলের হেঁড়ে গলার সংগীত সাধনা।
জেমসের গলার সাথে পাল্লা দিয়ে উচ্চস্বরের সেই চিৎকারে হয়তো বিরক্ত হতো পাশের বাড়ির বৃদ্ধ কলিম জোয়ারদার থেকে শুরু করে আশেপাশের কয়েক ঘর। অবশ্য সোহেলের এই ফুল ভলিউমে গান ছাড়ার আরো একটা উদ্দেশ্য ছিলো যেটা কেবলমাত্র একজন মানুষই জানতো। পাশের বাড়িতেই থাকতো একই সাথে ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া নিশাত। যদিও নিশাতের গন্ডি ছিলো গার্লস স্কুলের চার দেয়াল আর মায়ের হাত ধরে অংকের কোচিং শেষে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যা নামার পরেই পরার টেবিলে বসা। তবে রাস্তায়, গলিতে নিশাতের দিকে তাকিয়ে সোহেলের সেই ভালোবাসার চাহুনি নিশাত ঠিকই বুঝতো। তাই ফুল ভলিউমের গানগুলো যে নিশাতকে শোনানোর জন্যই সেটা বুঝতে নিশাতের বেশি দেরী হয়নি।
বছর কয়েক পরে ডিসেম্বরের এক শীতের সকালে নিপুন স্যারের ইংরেজী কোচিং শেষে হাটতে হাটতেই নিশাতকে প্রেম নিবেদন করেছিলো সোহেল। যদিওবা সেই প্রেম নিবেদনে কোনো জাঁকজমক আয়োজন ছিলো না, তাই মনে মনে কিছুটা দ্বিধায় ছিলো সোহেল। তবে শান্ত স্বভাবের সোহেলকে আগে থেকেই বেশ ভালো লাগায় সেদিন প্রেমের প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলো নিশাত।
রমজানের রোজার দিনগুলো বেশ অন্যরকম ছিলো সোহেলের কাছে, কারন এই সময়টাতেই ইফতারির বাহারি পদে প্লেট সাজিয়ে মাথায় ওড়না টেনে শেষ বিকালে সোহেলের বাড়ির দরজায় হাজির হতো নিশাত। পরে অবশ্য সোহেল স্বীকার করেছে ওই সময়টাতে নাকি নিশাতকে সবথেকে সুন্দর লাগতো দেখতে।
এভাবে দূর থেকে অল্প অল্প দেখা, স্কুল ছুটির পরে পিছুপিছু বাড়ি পর্যন্ত আসা আর ঈদ কার্ডের ভাজে ঈদ শুভেচ্ছার ছলে চার বর্ণের ভালোবাসি লেখার সময়গুলো পাড়ি দিয়ে কলেজের গন্ডিও পেরুলো দুজন।
উচ্চমাধ্যমিক শেষে দুজনে ভর্তি হলো আলাদা দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২৭৪ কিলোমিটার দূরের পথ পাড়ি দিয়ে মাসে একবার কয়েক ঘন্টার জন্য নিশাতকে দেখতে পাওয়ার সুখস্মৃতি এখনো বেশ নস্টালজিক করে দেয় সোহেলকে।
গ্রাজুয়েশনের পরে ঢাকার একটি বেসরকারী কোম্পানীতে ভালো বেতনেই একটা চাকরী পায় সোহেল। সোহেলের এখনো মনে আছে চাকরী ফাইনাল ভাইভা শেষে নিশাতকে ফোন দিয়ে অঞ্জনের “চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি নিশাত শুনছো” গেয়ে শুনিয়েছিলো সোহেল। মাত্র ৬ মাসের মাথায় ছোট্টবেলার প্রেমকে চূড়ান্ত পরিণতি দিয়ে নিশাতকে নিজের ঘরে নিয়ে আসার সময়টা এখনো মাঝে মাঝে সোহেলকে রোমাঞ্চিত করে।
বিয়ের ২ বছরের মাথায় সোহেল নিশাতের ঘর আলোকিত করে এসেছিলো ফুটফুটে নিকিতা। সারাদিন পরে অফিস শেষে বাসায় ফিরে নিকিতাকে কোলে তুলে নিলেই ওর মিষ্টি হাসিটাই সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতো সোহেলের। ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো নিকিতা। জীবনের লম্বা একটা সময় পার করে এসে বর্তমান সময়কে বেশ উপভোগ করে সোহেল। ছোট্ট নিকিতা এখন ক্লাস সেভেনে উঠেছে। নিকিতার বড় হয়ে ওঠার সাথে যুগের পরিবর্তনটাও একদম কাছ থেকে দেখেছে সোহেল নিশাত দম্পতি।
মাঝে মাঝে নিকিতাদের এই জেনারেশনকে ওদের থেকে বেশি এগিয়ে থাকা প্রজন্ম মনে হয় ওদের কাছে। আবার যখন সোহেল দেখে যে মেয়ের দিনের অর্ধেক সময় কাটছে টিকটক লাইকীতে ভিডিও বানিয়ে, এই পার্টি সেই পার্টি আর অদ্ভুতুড়ে আচরনের ছেলে বন্ধুদের তখন বেশ আফসোসে ভোগে তারা দুজনেই। জাস্টফ্রেন্ড, ক্লোজফ্রেন্ড আর বেস্টবফ্রেন্ডের এই জটিল ধাঁধায় মাথা তলিয়ে যায় মাঝে মাঝে।
ওদের এই জেনারেশনে সুর তাল ছাড়াই গান গেয়ে ভাইরাল হয় হিরো আলম। নানান রকমের বই পড়ার অভ্যাস বা ইচ্ছা কোনোটাই যেন নেই তাদের। ওদের এই সময়ে সেরা গানের ট্যাগ লাগে ইউটিউবের ভিউ কাউন্টের পরিপ্রেক্ষিতে। ভার্চুয়াল জগতটাতে শোঅফ আর লিংক লবিংয়ের জানান দেওয়াটাই ওদের কাছে জীবনের উদ্দেশ্য মনে হয় হয়তোবা। সকল ধরণের নেশা দ্রব্য সেবন করার অভিজ্ঞতা থাকলেই সে ওদের বন্ধুমহলের কাছে হয়ে যায় আইকন আর এই বাজে অভ্যাসগুলোই নাকি ওদের ভাষায় কুলনেস।
সেদিনের এক ঘটনা নিকিতার এক বন্ধুকে নাকি পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো নাম না জানা এক মাদক বিক্রি আর সেবনের দায়ে। ভয় ধরিয়ে দেয় চারপাশের অনেক ঘটনায়। প্রেমের সংজ্ঞাই যেন পাল্টে দিয়েছে এই জেনারেশন।
নিশাত জানে একই ক্লাসে পড়া ফাহিম তার মেয়ে নিকিতার তৃতীয় বয়ফ্রেন্ড। এর আগে দুটো ব্রেকআপের পরেও কোনোরকম আক্ষেপ বা হতাশা চোখে পড়েনি নিশাতের। বয়ফ্রেন্ডটা ওরা হয়তো মুড়িমুড়কির মতোই পাল্টে ফেলে। গতমাসেই নিকিতার এক মেয়ে ফ্রেন্ডকে কেন্দ্র করে তুলকালাম যুদ্ধ বাধিয়েছিলো পাশাপাশি দুই এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা। নিশাত সোহেল দম্পতির মনে ভয় ধরেছিলো কলাবাগানে বন্ধুর বাসায় রেপ হয়ে এক মেয়ের মৃত্যুর খবরে।
ঈদের সময়টা এই জেনারেশন আর উপভোগ করেনা হয়তো। অথচ সোহেলের মনে পড়ে যায় ঈদের আগের রাতে পটকা বাজি ফুটানো বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ানোতেই মজা খুঁজে পেতো ওরা। এখন নাকি আর ঈদকার্ডে শুভেচ্ছা জানানোর দরকার পড়ে না। সোশ্যাল মিডিয়াতে ঈদ এসেছে ঝড় তুলতে তুলতে ঠিক পরদিনই সেটা “অন দিস ডে” এর অতীতে হারিয়ে যায়।
এই সময়টা কেমন যেন লাগে তাদের দুজনের, একটা জেনারেশনের মধ্যে এতো এতো হতাশা, এতো অজ্ঞতা, নিজের প্রতি নিজের এতো কনফিডেন্সহীনতা বেশ মন খারাপ করিয়ে দেয় ওদের। মাঝে মাঝে স্মৃতি রোমন্থন করে নিজেদের অতীতে ফিরে নিশাত আর সোহেল। অস্থিরতা ভর করা এই সময়ের জেনারেশনকে তাই ওদের কাছে মনে হয় ব্যাড ব্রান্ডেড জেনারেশন।
মন্তব্য করুন
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি ২০২২’র সদস্যদের সম্মতিক্রমে এবং বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনক্রমে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর ১৫ জনকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
২৫ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেবেন।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রাপ্তরা হলেন, কবিতায় ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত, কথাসাহিত্যে তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ বা গবেষণায় মাসুদুজ্জামান, অনুবাদে আলম খোরশেদ, নাটকে মিলন কান্তি দে ও ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশুসাহিত্যে ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান বা কল্পবিজ্ঞান বা পরিবেশ বিজ্ঞানে মোকারম হোসেন, আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা বা ভ্রমণকাহিনিতে ইকতিয়ার চৌধুরী, ফোকলোরে আবদুল খালেক ও মুহম্মদ আবদুল জলিল।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ বইমেলা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৪ তম জন্মদিন আজ। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। টিভিতে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। চ্যানেল আই আয়োজন করেছে হিমু মেলার।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর লেখকের
ধানমন্ডির ‘দখিন হাওয়া’ জন্মদিনের কেক ফ্ল্যাটে কাটা হয়েছে। হুমায়ূনকে স্মরণ
করে দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে কেক কেটেছেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। অন্যদিকে,
রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশ পল্লীতে মোমবাতি জ্বালানো হয়। রবিবার ভোরে শাওন তার দুই ছেলেকে
নিয়ে যাবেন হুমায়ূনের স্মৃতিধন্য গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নূহাশ পল্লীতে। সেখানে
লেখকের সমাধিতে নিবেদন করবেন ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি। এছাড়া কেকও কাটবেন।
১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ
করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান
আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার
বড়। খ্যাতিমান কম্পিউটারবিজ্ঞানী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা
কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ
তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি
পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩),
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নাগরিক কবি জন্মদিন শ্রদ্ধা স্মরণ
মন্তব্য করুন
শামসুর রাহমান আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা পঞ্চাশের দশকে তিনি আধুনিক কবি হিসেবে বাংলা কবিতায় আবির্ভূত হন। কবি শামসুর রাহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলি এলাকায় নানাবাড়িতে।