লিট ইনসাইড

ব্যাড ব্রান্ডেড জেনারেশন আখ্যান

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২০ জুলাই, ২০২১


Thumbnail

গল্পটি বেশ পুরনো।
সোহেল ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠেছে মাত্র। নব্বই দশকের মাঝের ওই সময়টাতে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের বেশ শক্ত একটা অবস্থান হয়েছে। মফস্বল শহরের বাজারটার দুইটি ক্যাসেটের দোকানেই পাল্লা দিয়ে বাজছিলো সদ্য মুক্তি পাওয়া “দুঃখিনী দুঃখ কোরোনা” অ্যালবামের ঈশ্বর, সুলতানা বিবিয়ানা আর বিবাগী। টিফিনের টাকা থেকে অল্প অল্প করে জমানো কিছু টাকা পকেটে নিয়েই সোহেল ছুটলো বাজারে। নতুন ক্যাসেট পকেটে নিয়ে বাড়িতে ফিরেই শুরু হয়ে গেলো সোহেলের হেঁড়ে গলার সংগীত সাধনা। 

জেমসের গলার সাথে পাল্লা দিয়ে উচ্চস্বরের সেই চিৎকারে হয়তো বিরক্ত হতো পাশের বাড়ির বৃদ্ধ কলিম জোয়ারদার থেকে শুরু করে আশেপাশের কয়েক ঘর। অবশ্য সোহেলের এই ফুল ভলিউমে গান ছাড়ার আরো একটা উদ্দেশ্য ছিলো যেটা কেবলমাত্র একজন মানুষই জানতো। পাশের বাড়িতেই থাকতো একই সাথে ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া নিশাত। যদিও নিশাতের গন্ডি ছিলো গার্লস স্কুলের চার দেয়াল আর মায়ের হাত ধরে অংকের কোচিং শেষে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যা নামার পরেই পরার টেবিলে বসা। তবে রাস্তায়, গলিতে নিশাতের দিকে তাকিয়ে সোহেলের সেই ভালোবাসার চাহুনি নিশাত ঠিকই বুঝতো। তাই ফুল ভলিউমের গানগুলো যে নিশাতকে শোনানোর জন্যই সেটা বুঝতে নিশাতের বেশি দেরী হয়নি।

বছর কয়েক পরে ডিসেম্বরের এক শীতের সকালে নিপুন স্যারের ইংরেজী কোচিং শেষে হাটতে হাটতেই নিশাতকে প্রেম নিবেদন করেছিলো সোহেল। যদিওবা সেই প্রেম নিবেদনে কোনো জাঁকজমক আয়োজন ছিলো না, তাই মনে মনে কিছুটা দ্বিধায় ছিলো সোহেল। তবে শান্ত স্বভাবের সোহেলকে আগে থেকেই বেশ ভালো লাগায় সেদিন প্রেমের প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলো নিশাত। 

রমজানের রোজার দিনগুলো বেশ অন্যরকম ছিলো সোহেলের কাছে, কারন এই সময়টাতেই ইফতারির বাহারি পদে প্লেট সাজিয়ে মাথায় ওড়না টেনে শেষ বিকালে সোহেলের বাড়ির দরজায় হাজির হতো নিশাত। পরে অবশ্য সোহেল স্বীকার করেছে ওই সময়টাতে নাকি নিশাতকে সবথেকে সুন্দর লাগতো দেখতে। 

এভাবে দূর থেকে অল্প অল্প দেখা, স্কুল ছুটির পরে পিছুপিছু বাড়ি পর্যন্ত আসা আর ঈদ কার্ডের ভাজে ঈদ শুভেচ্ছার ছলে চার বর্ণের ভালোবাসি লেখার সময়গুলো পাড়ি দিয়ে কলেজের গন্ডিও পেরুলো দুজন। 
উচ্চমাধ্যমিক শেষে দুজনে ভর্তি হলো আলাদা দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২৭৪ কিলোমিটার দূরের পথ পাড়ি দিয়ে মাসে একবার কয়েক ঘন্টার জন্য নিশাতকে দেখতে পাওয়ার সুখস্মৃতি এখনো বেশ নস্টালজিক করে দেয় সোহেলকে।

গ্রাজুয়েশনের পরে ঢাকার একটি বেসরকারী কোম্পানীতে ভালো বেতনেই একটা চাকরী পায় সোহেল। সোহেলের এখনো মনে আছে চাকরী ফাইনাল ভাইভা শেষে নিশাতকে ফোন দিয়ে অঞ্জনের “চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি নিশাত শুনছো” গেয়ে শুনিয়েছিলো সোহেল। মাত্র ৬ মাসের মাথায় ছোট্টবেলার প্রেমকে চূড়ান্ত পরিণতি দিয়ে নিশাতকে নিজের ঘরে নিয়ে আসার সময়টা এখনো মাঝে মাঝে সোহেলকে রোমাঞ্চিত করে।

বিয়ের ২ বছরের মাথায় সোহেল নিশাতের ঘর আলোকিত করে এসেছিলো ফুটফুটে নিকিতা। সারাদিন পরে অফিস শেষে বাসায় ফিরে নিকিতাকে কোলে তুলে নিলেই ওর মিষ্টি হাসিটাই সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতো সোহেলের। ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো নিকিতা। জীবনের লম্বা একটা সময় পার করে এসে বর্তমান সময়কে বেশ উপভোগ করে সোহেল। ছোট্ট নিকিতা এখন ক্লাস সেভেনে উঠেছে। নিকিতার বড় হয়ে ওঠার সাথে যুগের পরিবর্তনটাও একদম কাছ থেকে দেখেছে সোহেল নিশাত দম্পতি। 

মাঝে মাঝে নিকিতাদের এই জেনারেশনকে ওদের থেকে বেশি এগিয়ে থাকা প্রজন্ম মনে হয় ওদের কাছে। আবার যখন সোহেল দেখে যে মেয়ের দিনের অর্ধেক সময় কাটছে টিকটক লাইকীতে ভিডিও বানিয়ে, এই পার্টি সেই পার্টি আর অদ্ভুতুড়ে আচরনের ছেলে বন্ধুদের তখন বেশ আফসোসে ভোগে তারা দুজনেই। জাস্টফ্রেন্ড, ক্লোজফ্রেন্ড আর বেস্টবফ্রেন্ডের এই জটিল ধাঁধায় মাথা তলিয়ে যায় মাঝে মাঝে।

ওদের এই জেনারেশনে সুর তাল ছাড়াই গান গেয়ে ভাইরাল হয় হিরো আলম। নানান রকমের বই পড়ার অভ্যাস বা ইচ্ছা কোনোটাই যেন নেই তাদের। ওদের এই সময়ে সেরা গানের ট্যাগ লাগে ইউটিউবের ভিউ কাউন্টের পরিপ্রেক্ষিতে। ভার্চুয়াল জগতটাতে শোঅফ আর লিংক লবিংয়ের জানান দেওয়াটাই ওদের কাছে জীবনের উদ্দেশ্য মনে হয় হয়তোবা। সকল ধরণের নেশা দ্রব্য সেবন করার অভিজ্ঞতা থাকলেই সে ওদের বন্ধুমহলের কাছে হয়ে যায় আইকন আর এই বাজে অভ্যাসগুলোই নাকি ওদের ভাষায় কুলনেস। 

সেদিনের এক ঘটনা নিকিতার এক বন্ধুকে নাকি পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো নাম না জানা এক মাদক বিক্রি আর সেবনের দায়ে। ভয় ধরিয়ে দেয় চারপাশের অনেক ঘটনায়। প্রেমের সংজ্ঞাই যেন পাল্টে দিয়েছে এই জেনারেশন। 

নিশাত জানে একই ক্লাসে পড়া ফাহিম তার মেয়ে নিকিতার তৃতীয় বয়ফ্রেন্ড। এর আগে দুটো ব্রেকআপের পরেও কোনোরকম আক্ষেপ বা হতাশা চোখে পড়েনি নিশাতের। বয়ফ্রেন্ডটা ওরা হয়তো মুড়িমুড়কির মতোই পাল্টে ফেলে। গতমাসেই নিকিতার এক মেয়ে ফ্রেন্ডকে কেন্দ্র করে তুলকালাম যুদ্ধ বাধিয়েছিলো পাশাপাশি দুই এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা। নিশাত সোহেল দম্পতির মনে ভয় ধরেছিলো কলাবাগানে বন্ধুর বাসায় রেপ হয়ে এক মেয়ের মৃত্যুর খবরে। 

ঈদের সময়টা এই জেনারেশন আর উপভোগ করেনা হয়তো। অথচ সোহেলের মনে পড়ে যায় ঈদের আগের রাতে পটকা বাজি ফুটানো বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ানোতেই মজা খুঁজে পেতো ওরা। এখন নাকি আর ঈদকার্ডে শুভেচ্ছা জানানোর দরকার পড়ে না। সোশ্যাল মিডিয়াতে ঈদ এসেছে ঝড় তুলতে তুলতে ঠিক পরদিনই সেটা “অন দিস ডে” এর অতীতে হারিয়ে যায়। 

এই সময়টা কেমন যেন লাগে তাদের দুজনের, একটা জেনারেশনের মধ্যে এতো এতো হতাশা, এতো অজ্ঞতা, নিজের প্রতি নিজের এতো কনফিডেন্সহীনতা বেশ মন খারাপ করিয়ে দেয় ওদের। মাঝে মাঝে স্মৃতি রোমন্থন করে নিজেদের অতীতে ফিরে নিশাত আর সোহেল। অস্থিরতা ভর করা এই সময়ের জেনারেশনকে তাই ওদের কাছে মনে হয় ব্যাড ব্রান্ডেড জেনারেশন।  


জেনারেশন   সাহিত্য   ব্রান্ড  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক আর নেই

প্রকাশ: ১১:৩৫ এএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

একুশে পদক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক প্রাবন্ধিক অধ্যাপক . মাহবুবুল হক মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হৃদরোগ কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।

বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মরদেহ রাজধানীর ভাটারার বাসায় আনা হবে। এরপর জানাজা শেষে নেয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

. মাহবুবুল হক প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ছাড়া গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

. মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে: বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, ইতিহাস সাহিত্য, সংস্কৃতি লোক সংস্কৃতি এবং বাংলার লোক সাহিত্য: সমাজ সংস্কৃতি প্রভৃতি।


ভাষাবিদ   অধ্যাপক   মাহবুবুল হক  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা

প্রকাশ: ১১:৫০ এএম, ১৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছোটকাগজ সম্পাদনায় বিশেষ অবদান রাখায় চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ ‘হৃদয়ে চলনথ এর সম্পাদক কবি হাদিউল হৃদয়। হাদিউল হৃদয় তাড়াশ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার তাড়াশ উপজেলা প্রতিনিধি। 

 

শুক্রবার (১২ জুলাই') সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬টায় উপ‌জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রীর হল রু‌মে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি কণ্ঠে কবিতা সংগঠন থেকে প্রধান অতিথি তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মনি এ পুরস্কার স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন।

 

সা‌বিনা ইয়াস‌মিন বিনুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সংগঠ‌নের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হো‌সেন মল্লিকী। আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক রাজুর সভাপ‌তিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তাড়াশ পৌরসভার কাউ‌ন্সিলর রোখসানা খাতুন রুপা, পাব‌লিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মোজ্জামেল হক মাসুদ, সা‌বেক সাধারণ সম্পাদক হোস‌নেয়ারা নাসরিন দোলন, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান, উপ‌জেলা প্রেসক্লা‌বের সাধারণ সম্পাদক ‌সোহেল রানা সোহাগ, প্রভাষক আব্দুল কাদের, প্রভাষক আব্দুল মতিন প্রমূখ।

উল্লেখ্য, হাদিউল হৃদয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের পল্লীর নিভূত অজোপাড়া পাড়িল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত্ব মুসলিম পরিবারে জন্ম। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্য কর্মী। মূলতঃ কবিতা দিয়ে শুরু করলেও প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও ছড়া লিখেন। তার লেখা লিটলম্যাগ ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার সম্পাদনা হৃদয়ে চলন ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে। সম্পাদনার স্বীকৃতিস্বরূপ এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার।'


চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন