নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৮ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
হিন্দু এক অজপাড়াগাঁয় ছোট্ট একটা গলি যা দিয়ে মাত্র একটা রিক্সা বা ঠেলাগাড়ি ঢোকে; সেই গলিটা এঁকে-বেঁকে গোবিন্দ মন্দিরের দিকে চলে গেছে। গলিতে ঢোকার শুরুতেই বাঁশের বেড়া দেয়া বর্গাকৃতির একটা জায়গা। ছোট একটা টিনের গেট, পাশেই একটা বাঁশঝাড়। গেটের ভিতর ঢুকতেই চোখে পড়ে ছোট্ট একটা ঘর, ঘুণে-ধরা গজারী কাঠের তৈরি দেয়াল আর অনেক বছরের পুরানো ফুটো টিনের চাল। ঘরের দরজার উপরে একটা ক্রুশ ঝোলানো আছে। বোঝা যায়, খ্রিস্টান পরিবারের আবাস। ঘরের খুঁটিগুলোও নড়-বড়ে, ঝড়ের সময় যা মনের মধ্যে একটা সংশয় সৃষ্টি করে। বর্ষাকালে ঘরের বেশির ভাগ অংশই ভেজা অবস্থায় থাকে। বৃষ্টির পানি পড়ার ফলে কিছু-কিছু জায়গায় ছোট-ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যেখানে জায়গা করে নিয়েছে উইপোকা আর কুনোব্যাঙ। ঘরের মাটি এমনই স্যাঁতস্যাতে যে শীতকালেও এর কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। ঘরের ভেতর একটা পুরানো চৌকি আর দু-খানা চেয়ার সযতনে রাখা। চৌকির ওজনে ঘরের মাটি ডেবে যাচ্ছে। বারান্দায় একটা লম্বা বেঞ্চি রাখা, যেটাতে চার-পাঁচজন বসে সুবাতাসে প্রাণ জুড়াতে পারে অনায়াসেই। পরিবেশটা বেশ নিরিবিলি এবং ছায়া-ঘেরা। উঠানের মাঝখানে পরিণত বৃষ্টিগাছটা তার শাখা-প্রশাখা এমনভাবে ছড়িয়ে রয়েছে যে এর ফাঁক-ফোকর দিয়ে নীলাম্বরটা সামান্যই চোখে পড়ে। বাড়িটার পরিবেশ দেখে মনে হয় বাড়িতে কোন প্রাণ নেই। বাড়িটিতে শুধু প্রাণ-জুড়ানো সমীরণ সারা দেহে উপলব্ধি করা যায়। সারাদিন এই নিস্তব্ধ বাড়িতে কোনো আওয়াজ শোনা না গেলে কাকের ডাক অবশ্যই শোনা যায়। তাই মানুষের অস্তিত্ব বোঝা না গেলেও গাছে-গাছে যে কাকের বাসা আছে তার প্রমাণ মেলে কা-কা ডাক শুনে।
সেই প্রাণহীন বাড়িতে তিনজন লোকের বাস, এক বিধবা মা আর তার দুই মেয়ে। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি স্বামীর সঙ্গে আড়াই বছরের বেশি সংসার করার সুযোগ পাননি। স্বামী মারা যাবার পর থেকেই সংসারটাকে কোনরকম করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। স্বামী মারা যাবার কিছুদিন পরেই ঢাকা থেকে কয়েকজন ব্রতধারিনী বোনের আগমন ঘটে তার বাড়িতে। তারা বাড়িতে আসার উদ্দেশ্য খুলে বলার পর তিনি জানতে পারলেন যে, তারা তার যে কোন এক সন্তানকে দত্তক নিতে আগ্রহী। যদিও সেসময় তিনি প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্যদিয়ে দিন যাপন করছিলেন, তারপরও তিনি তাদের খালিহাতে ফিরিয়ে দিলেন। তিনি তাদের জানালেন যে, ‘আমার দুই সন্তানই আমার কাছে সমান, কেউ কারো চেয়ে অধিক মূল্যবান নয়। তাই আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি কাউকেই আপনাদের কাছে তুলে দিতে পারবো না’। তিনি আরও বললেন, “আমি কিছু না পারলেও অন্তত দুবেলা দু’মুঠো ভাত তাদের মুখে তুলে দিতে পারবো।” তিনি চাইলেই কিন্তু তার যেকোন এক মেয়েকে দত্তক দিয়ে আরেক মেয়েকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারতেন। হয়তো এতে তার কষ্ট একটু হলেও কম হতো, কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি তার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকলেন। যাই হোক, মায়ের মনতো; মায়ের ভালোবাসা বোধহয় এমনই নিস্বার্থ হয়। তিনি যা করেছেন সেটা হয়তো মাতৃ¯েœহের কারণেই করেছেন। সেদিন হতে তার সন্তানদের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। সেদিন থেকে তার সংসার এবং পৃথিবী বলতে শুধু তার দুই মেয়ে এবং তাদেরকে ঘিরেই তার সব ভাবনা এবং স্বপ্ন-সাধনা। তার মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে মানুষের মতো মানুষ করা এবং খ্রিস্টীয় মূল্যবোধে তাদেরকে গড়ে তোলাই যেন তার একমাত্র লক্ষ্য।
কয়েক বছর পরে তিনি তার দুই মেয়েকে এক মিশন স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। বাড়ি থেকে স্কুলের দুরত্ব প্রায় দুই বা আড়াই মাইল হবে। দুই বোন গলা-গলি করে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতো। তা দেখে অন্যান্য সকলেই অনুপ্রাণিত হতো। তারা মাকে বলতেন, আপনার মেয়েদের মধ্যে ভালোই মেলবন্ধন যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। সেসময় বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক একটা চাকরীর প্রস্তাব পান মা। সেসময় আর্থিক অবস্থা অনুক‚লে না থাকায় একটা চাকরীর খুবই দরকার ছিলো, তাই তিনিও রাজি হয়ে গেলেন। চাকরীর সুবাদে মিশন স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেতে হতো প্রতিদিনই। তাই এতে তার সুবিধাই হয়েছিলো কারণ আসা-যাওয়ার পথে মেয়েদেরকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে নিজের কর্মস্থলে যেতে পারতেন। তিনি বয়স্কদের পড়ানোর সাথে-সাথে সেখানকার স্কুলপড়–য়া ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর সুযোগ পান। সকালবেলা শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য তিনি তাড়াতাড়ি গ্রামে যেতেন আর তার পিছন-পিছন চলতো দুই মেয়ে। পথ চলার সময় মাকে জিজ্ঞাসা করতো, মা এটা-ওটা কি, ওটা এমন কেন? রাস্তায় চলার সময় তিনি যে কতো রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতেন তার হিসেব কে রাখে! মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে-দিতে ক্লান্ত হয়ে যেতেন ও মাঝে-মাঝে বিরক্তবোধও করতেন। তবে জানার কৌতুহলকে তিনি সর্বদাই প্রশংসা করতেন ও উৎসাহিত করতেন।
সন্তানের শিক্ষাকে তিনি এতোটাই গুরুত্ব দিতেন যে, গন্তব্যস্থলে পৌঁছেও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে-সাথে তার দুই মেয়েকেও পড়াতেন। বাড়ি ফিরে রান্না করতেন কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও আহার করতেন না। তিনি তার মেয়েদের জন্য স্কুল থেকে ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকতেন। তারা স্কুল থেকে ফিরলে একসাথে আহার করতেন। তার কাছ থেকেই তার সন্তানেরা শিখেছে একসাথে আহার করা পারিবারিক ভালোবাসার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সন্ধ্যে হলেই বারান্দায় চাটাই বিছিয়ে, হারিকেন বা কুপি বাতি জ্বালিয়ে মেয়েদের পড়াতে বসতেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক বা শিক্ষিকা কি পড়িয়েছেন তার খোঁজ-খবর নেয়া যেন ছিলো তার প্রতিদিনকার রুটিন। তিনি তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে খুবই সচেতন ছিলেন। তার সন্তানেরা স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করলেও তাদের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষক ছিলেন মা নিজেই। তিনি তার সন্তানদের ইচ্ছে বা স্বপ্নকে নিজের মতো করেই সর্বদা মনে লালন করতেন, যদিও মাঝে-মধ্যে সাধ্য ও সামর্থ না থাকার ফলে তাদের স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন বলে মনে করতেন। তিনি ভাবতেন মাটির ঘরে বসে স্বপ্ন দেখা যে সত্যিই নিছক মরিচীকার খেলা ছাড়া আর কিছইু নয়।
বড় মেয়ে অনেক বড়-বড় স্বপ্নের কথা মায়ের সাথে সহভাগিতা করতো। মা শুধু মনে-মনে ভাবতেন আদৌ কি এই স্বপ্নগুলো শুধু সাদা মেঘমালার মতো আকাশে ভেসে বেড়াবে, নাকি কখনও বৃষ্টি হয়ে মাটিও স্পর্শ করবে! তিনি বলতেন, মা, তুমি যে এত বড়-বড় স্বপ্ন দেখো, তোমার মায়েরতো সেই স্বপ্ন পূরণের সাধ্য নেই। আমরা যে বড় অসহায় মা, আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো যে কেউ নেই। আমাদের জীবনের সব স্বপ্ন যে অভাব-অনটনের শক্ত শিকলে বাঁধা পড়ে আছে আর তা থেকে বেড়িয়ে আসার ক্ষমতা যে আমাদের নেই। সকলকে আড়াল করে চুপিসারে অশ্রু ঝরাতেন। সন্তানদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় মা মনে-মনে খুবই কষ্ট পেতেন। আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের সাধ্যমতো তাদের চাহিদা পূরণে কোন ত্রুটি রাখতেন না। যিনি উপর থেকে সব কিছু অবলোকন করেছেন তিনি হয়তো ভাবতেন যে, এই অতিসাধারণ জীবনও তাদের কাছে কতোই না গভীর, কতোইনা জটিল বলে মনে হয়।
তিনি এমনই একজন মা যিনি তার স্বর্বস্ব দিয়ে সকল প্রতিক‚লতার বিরুদ্ধে লড়াই করে সন্তানদেরকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করছিলেন। তিনি তাদের বাবার কোন অভাব বুঝতে দিতে চাননি। তিনি কারো সাহায্যের অপেক্ষায় দিন যাপন করেননি, তিনি নিজেই তার সংসারের সম্পূর্ণ ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে পড়াতে যেতেন। প্রয়োজনের চেয়েও বেশি খাটতেন তিনি। নিজের শরীরে না কুলালেও প্রচেষ্টার ঘাটতি কখনই ছিলো না। যা সর্বদাই তার সন্তানদের পরিশ্রমী হওয়ার নিরন্তর অনুপ্রেরণা যোগাতো। তিনি অসুস্থাবস্থায়ও দশ টাকা খরচ করে রিকসায় উঠতে দ্বিধাবোধ করতেন, যেন তার মেয়েদের জন্য দশটাকা জমিয়ে রাখতে পারে আর তা দিয়ে তারা একদিন বাসে চড়তে পারে। তার এই অসামান্য ত্যাগস্বীকারই তার সন্তানদের ধীরে-ধীরে জীবনের সাথে সংগ্রাম করতে শিক্ষা দিয়েছেন যা কোন প্রতিষ্ঠান হয়তো দেয়নি তাদের। তাদের কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করলে বা মনে-মনে কোন কিছু পছন্দ হলেও মায়ের কাছে আবদার করতো না; বরং মাকে বলতো, “মা, তোমার যখন টাকা হবে, তুমি আমাদের ওই জিনিসটা কিনে দিও।” এই কথা শুনে মা প্রায়শই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তেন। তার চোখজুড়ে বাঁধহীন জোয়ার বইতো, সন্তানদের কথা যেন মা’কে নির্বাক করে দিতো। মা অবাক হয়ে ভাবতেন যে, এইটুকু বয়সে তারা যে এধরণের কথা বলতে পারে, আর সেকথার ওজন যে কতোখানি তা হয়তো তারা বুঝেই না এখনও। যা অনেক সন্তানই বুঝতে পারে না, বুঝতে না পারারই কথা বলা চলে। তিনি সত্যিই অবাক হতেন, কারণ ছোট হলেও তার সন্তানদের এতোটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে যে, তাদের আকাক্সক্ষা ও আবদার পূরণের জন্য মায়ের কাছে এখন টাকা নেই। তিনি ভাবতেন, তিনি অসহায় বলেই হয়তো ঈশ্বরও তাকে এমন সন্তানই দিয়েছেন, যারা তার কষ্ট অনুভব করতে পারে।
আত্মীয়-স্বজন নিকটে না থাকায় মায়ের অন্তরালে লুকিয়ে রাখা কষ্টগুলো কারো সাথে সহভাগিতা করতেও পারতেন না। তিনি এই চিন্তায় নিবিষ্ট থাকতেন যে, তিনি যাদের এতো ভালোবেসে বুকে আগলে রেখেছেন এবং যাদের জন্য প্রতিনিয়ত ত্যাগস্বীকার করছেন, তারা নিশ্চয় তাকে পর করে দিবে না। শেষ বয়সে তাকে নিশ্চয় বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই নিতে হবে না। সন্তানদের ওপর তার আস্থা ছিলো অবিচল। বৈধব্যের একাকীত্বের জীবনে কখনও তিনি নিজের জন্য আর স্বপ্নের জাল বুনেন না এবং নতুন সংসার শুরু করার কথাও ভাবেন না; তিনি শুধু তার সন্তানদের জন্যই ভাবেন। তিনি তার সন্তানদের নিয়েই অবিরাম স্বপ্ন দেখেন। তিনি আজও বিশ্বাস করেন যে, তার আদরের মেয়েরা এই হতাশার ঘনঘটা কাটিয়ে একদিন আশার আলো দেখাবে তাকে, সেদিন এই ত্যাগস্বীকার এবং কষ্ট আর কিছুই মনে হবে না। সবকিছু স্বপ্নের মতই মনে হবে। আঁধার পেরিয়ে নতুন ভোরে তিনি আখি মেলে চাইবেন ও প্রাণভরে সন্তানদের আশীর্বাদ করবেন। সেই আশায় তিনি তার মনের ঘরে প্রতিনিয়ত দ¦ীপ জ্বেলে রাখেন।
তার প্রিয় সন্তানেরা যে মায়ের কষ্ট অনুভব করতে পারতো না, তা কিন্তু নয়। আঁচলের আড়ালে লুকিয়ে রাখা অশ্রæসজল চোখ তাদের কাছে কোনদিনই গোপন থাকতো না। তাদের গড়ে তুলতে মাকে যে কতো মানুষের অপমান-তুচ্ছ তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয়েছে তার নিরব সাক্ষীতো তার সন্তানেরাই। কেউ-কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন “দেখবো, কিভাবে তুমি তোমার সন্তানদের গড়ে তোল?”। মায়ের জীবনে এমনও দিন এসেছে, যখন কিছু সুযোগ-সন্ধানী লোক তার দারিদ্র্যের এবং অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। সে অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অপমান ও অপদস্তও করেছেন। কিন্তু তিনি মোটেই নিরাশ হোননি, দৃঢ় মনোবল নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনি সর্বদাই তার সন্তানদের যোগ্য করে তুলতে চেয়েছেন এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। তার সন্তানেরাও দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলো যে, মাকে তারা কখনই এই নির্মম সমাজ ও রুঢ় বাস্তবতার কাছে হেরে যেতে দিবে না। প্রতিটি মুহর্তেই তিনি এবং তার সন্তানেরা মনের অন্দরমহলে দ্বীপ জ্বেলে যায় শুধুমাত্র সেই সুদিনের আশায়, যেদিন তাদের দেখা সব অস্পষ্ট স্বপ্ন চোখের সামনে স্পষ্টরূপে বাস্তবায়িত হবে ও রূপান্তর ঘটবে নবায়িত জীবনের। সেই সুদিনের জন্য তারা দ্বীপ জ্বালে, যেদিন জীবন থেকে সব ব্যর্থতার গ্লানি, হতাশা এবং ভারাক্রান্ত মনের বোঝা পানিতে ভাসা বরফের মতোই হালকা হবে। এভাবেই জীবনের চরম অপ্রত্যাশিত মুহূর্তেও চিরদিনই তারা দীপ জ্বেলে যায় শুধুমাত্র সাফল্যময় আগামীর প্রত্যাশায়। এভাবেই সুখ-দুঃখের লীলাভ‚মিতে দিন গোনে যায় খোলা আকাশের নীচে সকল হতাশা, নিরাশা ও ব্যর্থতার সমাপ্তি ঘটিয়ে একদিন জীবনে সুদিন আসবেই, সেদিন আলো-ছায়ার মেলায় হয়তো হারিয়ে যাবে মা কিন্তু সন্তানেরা নতুন আলোয় নিজেদের প্রকাশ করবে।
মন্তব্য করুন
ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার (এফওএসডব্লিউএএল) বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার তিনটি বইয়ের জন্য ‘বিশেষ সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করেছে। সার্ক সাহিত্য পুরস্কার হল ২০০১ সাল থেকে ফাউন্ডেশন অফ সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার প্রদত্ত একটি বার্ষিক পুরস্কার। বঙ্গবন্ধুর তিনটি বই হলো- অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং আমার দেখা নয়াচীন ১৯৫২।
রোববার (২৬ মার্চ) প্রখ্যাত পাঞ্জাবি ঔপন্যাসিক এবং এফওএসডব্লিউএএল -এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অজিত কৌর আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনের আঞ্চলিক সম্মেলনে সফররত বাংলাদেশি লেখক ও গবেষক রামেন্দু মজুমদার এবং মফিদুল হকের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আজ রবিবার সকালে শুরু হয়েছে এফওএসডব্লিউএএল -এর তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক সাহিত্য সম্মেলন। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক বিশিষ্ট লেখক-সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে সম্মেলনের উদ্বোধনের তাৎপর্য বর্ণনা করে অজিত কাউর এর আগে এক বার্তায় লিখেছিলেন যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় কোনো ছোট ঘটনা ছিল না।
তিনি আরও লিখেন, বাংলা জাতির পিতার দৃঢ় প্রত্যয়ের সবচেয়ে অনন্য সাহসিকতার মাধ্যমে এটি একটি অনন্য কৃতিত্ব ছিল- যাকে ভালোবাসায় ‘বঙ্গবন্ধু’ বলা হয়। যিনি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষা রক্ষার জন্য সিংহের মতো লড়াই করেছিলেন। যে কোনো মানুষের জীবনের চেয়েও একটি দেশের মর্যাদা সংরক্ষণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ!
মিসেস কাউর লিখেন, বিশ্বজুড়ে মানুষ ভূমি ও অঞ্চলের জন্য, বিদেশি নিপীড়ক বা রাজা ও স্বৈরশাসকদের কাছ থেকে তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল ভিন্ন ও অনন্য। কারণ এটি ছিল ‘মানুষের প্রাণবন্ত আত্মা’ সংরক্ষণ যা- শুধুমাত্র তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং নিজস্ব ভাষায় স্পন্দিত এবং বিকাশ লাভ করে!
বার্তায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে না থাকলেও তিনি আমাদের জন্য তিনটি মূল্যবান ও চিন্তাশীল বই রেখে গেছেন। তাই এই মহান মানবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাকে (বঙ্গবন্ধু) এফওএসডব্লিউএএল সাহিত্য উৎসব-২০২৩-এর সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এফওএসডব্লিউএএল আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বিশিষ্ট লেখক সেলিনা হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, মহিদুল হক ও মোহিত কামাল। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) শাবান মাহমুদ এবং হাইকমিশনের পক্ষে কনস্যুলার (রাজনৈতিক) সফিউল আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনটি বই বিশেষ সাহিত্য পুরস্কার ভূষিত বঙ্গবন্ধু
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ওয়াসীম পলাশের গল্পগ্রন্থ জানালাবিহীন ঘর। বইটি প্রকাশ করেছে কাগজা প্রকাশন। ১০ টি গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে এই বইটি। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা। মূল্য ২৩০ টাকা।
ওয়াসীম পলাশ
বইটি সম্পর্কে বলেন, "আসলে আমরা তো একটা বদ্ধ সময়ের মধ্যে আছি। মাঝে মাঝে আমাদের
দম বন্ধ হয়ে আসে, নি:শ্বাস নিতে পারি না। এখানে মূলত রাজনৈতিক-সামাজিক যে সংকট আমাদের
রয়েছে, ভূবনবিহীন মানুষের সংকট, সর্বোপরি বৈশ্বিক সংকটই আমি উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছি।
এই যে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বা অগ্রগিত, এর কারণেই অনেক মানুষ প্রান্তিক হয়ে গেছে, বিপন্ন
হয়ে গেছে। পৃথিবীজুড়ে এই সংকটাপন্ন মানুষগুলো একই দুর্দশায় আবদ্ধ। সেই কথাগুলোই আমি
আমার গল্পে বলতে চেয়েছি।"
বইটির পাঠকপ্রিয়তা
নিয়ে লেখক বলেন, "আমার বইটি মেলায়ায় একটু দেরিতে এসেছে। গত সপ্তাহে এসেছে৷ বইটি।
এই এক সপ্তাহেই বইটিকে পাঠক যেভাবে গ্রহণ করেছে তাতে আমি আপ্লুত।"
লেখক ওয়াসীম পলাশ পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক। বর্তমানে তিনি সেপিয়েঞ্জা ইউনিভার্সিটি অফ রোমের রিসার্চ স্কলার।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বইমেলার
শেষ সময়ে বেচা-বিক্রিতে হাসি ফুটেছে প্রকাশকদের মুখে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি
পর্যন্ত ব্যাবসায়িক হিসেবে বইমেলা জমেনি বলে শোনা যাচ্ছিলো। তবে মেলার ২৬ তম দিনে
সার্বিক বেচা-বিক্রিতে সন্তুষ্ট প্রকাশকরা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩ এর শুরু থেকে ২১ এ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলায় বিকি-কিনি নিয়ে অসন্তোষ ছিলো প্রকাশকদের। বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে কাগজ থেকে শুরু করে প্রকাশনা খাতের সাথে যুক্ত সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গত বছরগুলোর তুলনায় এবছর বইয়ের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক শতাংশ। একইসাথে ক্রয়ক্ষমতা কমেছে জনসাধারণের। সব মিলয়ে এবছর বইমেলায় বইয়ের বাজার কিছুটা মন্দাই যাচ্ছিলো। তবে মেলা শেষের সময়ে সেই মন্দা কাটিয়ে বই কিনছেন পাঠকরা।
বইমেলার সার্বিক বিক্রি নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে ছাপাখানার ভূত প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত রেদওয়ানুল ইসলাম বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, "আমাদের বিক্রি এবার অনেক ভালো। শুরুর দিকে কিছুটা কম হলেও গত এক সপ্তাহে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমাদের একটি বই এর গত কয়েকদিন এতো চাহিদা ছিলো যে বই শেষ হয়ে যাওয়ায় পাঠককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।"
একই সুরে গলা মিলিয়ে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হায়দার হোসেন বলেন, "এবার বইমেলার অবস্থা গত বছরগুলোর তুলনায় ভালো। আমাদের বিক্রির যে প্রত্যাশা ছিলো তা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। আশা করি সামনের দুইদিনও অনেক ভালো যাবে।"
শুধু প্রকাশক নন, শেষ সপ্তাহে বইমেলার এ পালটে যাওয়া চিত্রে খুশী লেখকরাও। দেরিতে আসলেও বইয়ের আশানুরূপ বিক্রি হয়েছে বলেই জানিয়েছেন লেখক মহসিন পলাশ। তিনি বলেন, "আমার বইটা বইমেলায় একটু দেরিতেই এসেছে। গত সপ্তাহে এসেছে বইটি। তবে এই এক সপ্তাহেই যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি তাতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করি সামনের দুইদিনও একইভাবে সাড়া পাবো।"
বইমেলার শেষ দু'দিনের বিক্রি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যাবে এমনই আশা করছেন প্রকাশক ও বিক্রেতারা।
মন্তব্য করুন
ফাউন্ডেশন অব সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার (এফওএসডব্লিউএএল) বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার তিনটি বইয়ের জন্য ‘বিশেষ সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করেছে। সার্ক সাহিত্য পুরস্কার হল ২০০১ সাল থেকে ফাউন্ডেশন অফ সার্ক রাইটার্স অ্যান্ড লিটারেচার প্রদত্ত একটি বার্ষিক পুরস্কার। বঙ্গবন্ধুর তিনটি বই হলো- অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং আমার দেখা নয়াচীন ১৯৫২।
‘চেতনায় ঐতিহ্য’ শ্লোগানকে ধারণ করে ‘দেশ পাবলিকেশন্স’ পথ চলছে একযুগ ধরে। দেশ প্রতিবছর নির্বাচিত বই প্রকাশ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় অমর একুশে বইমেলায় (২০২৩) ‘দেশ পাবলিকেশন্স’ প্রকাশ করেছে ৫৭টি নতুন বই। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে বিক্রির শীর্ষে থাকা ‘দেশের সেরা ১০ বই’ শিরোনামে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স...
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩ এর শুরু থেকে ২১ এ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলায় বিকি-কিনি নিয়ে অসন্তোষ ছিলো প্রকাশকদের। বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে কাগজ থেকে শুরু করে প্রকাশনা খাতের সাথে যুক্ত সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গত বছরগুলোর তুলনায় এবছর বইয়ের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক শতাংশ। একইসাথে ক্রয়ক্ষমতা কমেছে জনসাধারণের। সব মিলয়ে এবছর বইমেলায় বইয়ের বাজার কিছুটা মন্দাই যাচ্ছিলো। তবে মেলা শেষের সময়ে সেই মন্দা কাটিয়ে বই কিনছেন পাঠকরা।