নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৬ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
আধ ঘণ্টা হবে বৃষ্টি থেমেছে। রাস্তা-ঘাট এখনও আকাশ থেকে ঝরা পানিকে নিজের বুকের খানা-খন্দে আটকে রেখেছে। পিচ ঢালা রাস্তা চকচক করছে ভেজা শরীরে। সেদিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে সিফাত। হাতের তালুতে ভর দিয়ে কিছুটা পেছনে হেলে বসে রয়েছে ফুটপাতে শৈলীর পাশে। অনেক্ষণ ধরেই চুপচাপ হয়ে আছে দু’জন। কথা ফুরিয়ে গেছে নাকি বলার শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে কে জানে!
‘সিফাত, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?’ আচমকা নীরবতা ভেঙে কথা বলে উঠলো শৈলী।
‘বলো।’ ওর দিকে না তাকিয়েই বললো সিফাত।
‘রাগ করতে পারবে না না কিন্তু, বিরক্তও হতে পারবে না আগেই বললাম,’ ভারী গলায় স্বরে বললো শৈলী।
ভুরু কুঁচকে গেল সিফাতের নিজের অজান্তেই। এমন সময়ে আদিখ্যেতা ভালো লাগছে না। সোডিয়াম লাইটের মরা আলোতে শৈলীর চেহারাও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। ‘বল কী বলবে।’ কিছুটা অধৈর্যের সাথেই বললো সে।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো শৈলী সিফাতের চেহারার দিকে। বড় বড় চোখজোড়া ভেজা ভেজা, সিফাতকে দেখতে দিতে চায় না বলেই কিছুটা সরে এসে অন্ধকারের কোলে আশ্রয় নিয়েছে। ‘কতটা ভালোবাসো আমাকে?’ প্রায় ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো ও।
‘উ?’
‘বলো না!’ গলায় জোর এনে বললো শৈলী।
‘জানি না এখন। আগে জানতাম সবকিছু দিয়ে ভালোবাসি। এখন সত্যিটা বুঝতে পারছি না।’
‘কেন?’
‘কতটুকু ভালোবাসতে হবে, ভালোবেসেছি- সেটা ভেবে দেখিনি। মেপে দেখতে বললে তাও হত কিনা কে জানে।’
‘কেন? মেপে দেখতে নাকি?’ কিছুটা হেসে জিজ্ঞেস করলো শৈলী।
‘পাল্লার তোমার দিকটা নেমেই থাকতো। অন্যদিকটা তো খালিই থাকতো। খালি না থাকলে আজকে এই অবস্থায় পড়তে হয়?’
মোটে সাড়ে সাতটা বাজলেও রাস্তায় আজকে কিছুটা গাড়িঘোড়ার আনাগোনা কম। টুং-টাং করে বেল বাজিয়ে রিকশা ছুটে যাচ্ছে দুয়েকটা। মাঝেমধ্যে বেরসিকের মতো সগর্জনে মসৃণগতিতে বাইক চলছে। হুউশ শব্দ করে একটা সাদা টয়োটা চলে গেলো। হেডলাইট পূর্ণশক্তিতে জ্বলছে আধো-অন্ধকারে। রাস্তাটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য আলোকিত হয়ে উঠলো।
ফ্যাকাসে হয়ে আসা টি-শার্টের ভাঁজ টানতে টানতে শৈলীর তাকিয়ে কেমন যেন একটা কাঁপুনি অনুভব করল সিফাত। শরীরে না বুকে, আলাদা করে বুঝে উঠতে পারে না সে। যতবার এই চশমা পড়া মেয়েটার গজদাঁত বের করা হাসিটা দেখে ততবার কোথায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
‘কাল কখন আসবে ওরা?’ এবার সিফাতের কণ্ঠ কেঁপে ওঠে। শৈলীর প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলো না। সদ্য প্রেমে পড়া জুটির আলাপচারিতা ভেঙে বাস্তবে নেমে এলো সে।
শৈলীর হাসিটা কে যেন প্রচণ্ড একটা চড় মেরে থামিয়ে দেয় মুহূর্তের মধ্যেই। ‘বিকেলে। কাজী নিয়েই আসবে ওরা’ থেমে থেমে উত্তর দেয় ও।
জন্ডিসে আক্রান্ত আলোতে এবার চার বছরের পুরনো প্রেমিকার চিক চিক করতে থাকা ভেজা গাল দেখতে পায় সিফাত। গালে পানি চিক চিক করছে। বাঁধ ভেঙে গেছে শৈলীর নিজের অজান্তেই। মুছে দিতে গিয়েও দেয়না সে। কেমন যেন একটা বিষণ্ন সৌন্দর্য খেলা করছে শৈলীর চেহারায়।
সদ্য বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় আরো একটা মন খারাপ করা ভয়াবহ সুন্দর দৃশ্য।
তাকিয়েই আছে সিফাত। আর দেখতে পাবে না এই দৃশ্য। চেষ্টা করছে মনের ক্যানভাসে ছবিটা তুলে রাখতে। এরকম কোনো এক সন্ধ্যায় যখন মনে পড়বে মেয়েটার কথা, তখনই যত্ন করে তুলে রাখা ছবিটা বের করে দেখবে। আলতো করে স্পর্শ করবে ভেজা গাল।
না…হচ্ছে না, তুলতে পারছেই না শৈলীকে ক্যানভাসের সাদা পর্দায়। তুলির প্রথম টানটা দেয়ার সাথে সাথেই অদৃশ্য কে যেন মুছে দিচ্ছে সমস্ত রঙ বার বার। ক্যানভাসে কেবল তৈরি হচ্ছে লালাভ একটা দাগ। সাদা প্রান্তরে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ বলে ভুল হয় দেখলে।
চারুকলার ছাত্র হয়েও শূন্য ক্যানভাস ছাড়া আর কিছুই নেই সিফাতের কাছে শৈলীকে ধরে রাখার জন্য।
মন্তব্য করুন
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মরদেহ রাজধানীর ভাটারার বাসায় আনা হবে। এরপর জানাজা শেষে নেয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ড. মাহবুবুল হক প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
ড. মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।
তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে: বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, ইতিহাস ও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও লোক সংস্কৃতি এবং বাংলার লোক সাহিত্য: সমাজ ও সংস্কৃতি প্রভৃতি।
মন্তব্য করুন
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছোটকাগজ সম্পাদনায় বিশেষ অবদান রাখায় চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ ‘হৃদয়ে চলনথ এর সম্পাদক কবি হাদিউল হৃদয়। হাদিউল হৃদয় তাড়াশ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার তাড়াশ উপজেলা প্রতিনিধি।
শুক্রবার (১২ জুলাই') সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরীর হল রুমে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি কণ্ঠে কবিতা সংগঠন থেকে প্রধান অতিথি তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মনি এ পুরস্কার স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন।
সাবিনা ইয়াসমিন বিনুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মল্লিকী। আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক রাজুর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তাড়াশ পৌরসভার কাউন্সিলর রোখসানা খাতুন রুপা, পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মোজ্জামেল হক মাসুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসনেয়ারা নাসরিন দোলন, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সোহাগ, প্রভাষক আব্দুল কাদের, প্রভাষক আব্দুল মতিন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, হাদিউল হৃদয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের পল্লীর নিভূত অজোপাড়া পাড়িল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত্ব মুসলিম পরিবারে জন্ম। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্য কর্মী। মূলতঃ কবিতা দিয়ে শুরু করলেও প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও ছড়া লিখেন। তার লেখা লিটলম্যাগ ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার সম্পাদনা হৃদয়ে চলন ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে। সম্পাদনার স্বীকৃতিস্বরূপ এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার।'
মন্তব্য করুন