নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৬ এএম, ০২ নভেম্বর, ২০২১
পাক্ষিক অন্যদিন ও এক্সিম ব্যাংক হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এ বছরে পুরষ্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও নবীন শাখায় ফাতেমা আবেদীন।
এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় পাক্ষিক ‘অন্যদিন’-এর উদ্যোগে সপ্তমবারের মতো এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে এবং দেশের নবীন-প্রবীণ কথাশিল্পীদের শিল্প সৃষ্টিতে প্রেরণা জোগাতে ২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয় পুরস্কারটি।
১২ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারটি দেওয়া হবে। সেলিনা হোসেন ও ফাতেমা আবেদীন পুরস্কার হিসেবে পাবেন যথাক্রমে পাঁচ লাখ ও এক লাখ টাকাসহ উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও সনদপত্র।
মন্তব্য করুন
বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি আসাদ চৌধুরী অসুস্থ হয়ে কানাডার ওসোয়ার শহরের লেকেরিজ হেলথ অশোয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা এখন কিছুটা ভালো বলে জানিয়েছেন কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমান।
মঙ্গলবার ড. খলিলুর রহমান কবিকে দেখতে এবং তার শারীরিক অবস্থার খবর নিতে হাসপাতালে যান। তিনি জানান, কবির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে; তবে এখনো আশংকা পুরোপুরি কাটেনি। তবে তিনি হাই কমিশানারের সাথে পুরোপুরি চোখ মেলে তাকিয়ে হাত তুলে তার সালামের উত্তর দিয়েছেন এবং করমর্দন করেছেন।
উল্লেখ্য, কবি আসাদ চৌধুরী বেশ কয়েক বছর ধরেই কানাডায় ছেলে ও মেয়ের সাথে বাস করছিলেন। তিনি গত বছর নভেম্বর থেকে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।
কবি আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান কবিদের অন্যতম। তিনি তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গী, টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অনুবাদকর্মে তার অবদান প্রণিধানযোগ্য। ১৯৮৩ সালে তার রচিত 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ “সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু”।
কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।। ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর চাকুরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানীর বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকুরীর পর এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশন কবির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তাঁর পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলে জানানো হয় কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের পক্ষ থেকে
মন্তব্য করুন
ত্বরিত গতির সুকন্যা
-শাহানা পরভীন
তুমি সিঁদুর রঙে ভিজে, কলেজের সেই র্যাগিং ছলে,
এক পলকে দোওয়াত কালি খুঁজে ফিরে, চটাস করে হারিয়ে দিলে।
আচ্ছা করে রাঙিয়ে দিলে ওদেরই বালতি ভরা রং ঢেলে।
ভুলে ভালে ক্লাস খুঁজে দিনটি হলো কাবার,
চায়ের কাপে ঝড় তুলে, আনন্দে মাতিয়ে সাবার।
প্রতিক্রিয়ার কী দারুণ ত্বরিত কোড তোমার !
বিধাতা দিয়েছেন বঙ্গমাতার গর্ভে, তোমার জন্মকালে।
সেই শিশুকালে মানবতার ত্বরিত গতিতে বলেছিলে-“আব্বা ,
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ,
রাজবন্দীদের মুক্তি চাই।”
সেই কৈশোরে সাহসিকতার বিদ্যুৎ গতির কোডে বলেছিলে-
“আমি করবো না সই ,
যদি না বাজেট বরাদ্দ পাই ।”
ইটের ‘পরে ইটে শহীদ মিনার গেঁথে,
ঘন্টার পর ঘন্টা বন্দি থেকে,
বুকের পাঁজরে অবিরত সুর তুলে বলেছিলে,
“এই কলেজে শহীদ মিনার চাই।”
তারুণ্যে মা বাবা ভাই সব প্রিয়জনকে হারিয়ে ,
বেদনার আগুনে পুড়ে-
সমস্ত শোককে শক্তি করে,
জন্ম -জন্মভূমি, বাংলা-বাঙালির উন্নয়নের তরে-নিত্য শুভার্থী তুমি।
প্রকাশ্যে সব সত্য জ্বেলে- ভয়হীন,আত্মমর্যাদার সুইফট কোডে -অতন্দ্র প্রহরী তুমি।
পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে-
স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ বির্নিমানে-
এই প্রৌঢ়েও-
শত সাধনা- সংগ্রাম -তারুণ্যের সুইফট কোডে,
বাংলাদেশকে নিয়ে আনখমস্তক ছুটে চলো ,
তুমি বাঙালির পরম আপনজনা, মুজিব সুকন্যা,
বিশ্ব সংসারে তুমিই একজনা, শেখ হাসিনা।
১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আজ রোববার (২৭ আগস্ট) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের শোকের মাসের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সেখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।
কাজী
নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক
পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন
একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক,
গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা।
তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি
করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
কবির
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন
বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক
অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল
এবং আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী
টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে
বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
নজরুলের
সৃষ্টিকর্ম প্রসঙ্গে নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন
মানুষ ছিলেন, যার প্রভাব তাঁর
লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ
বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তাঁর সাহিত্যে বিপুলভাবে
ধারণ করেছেন। সেই সময়ে ধর্মান্ধ
মুসলমানদের তিনি পুনর্জাগরণের ডাক
দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁর
ভূমিকা ছিল একজন বলিষ্ঠ
নেতার মতো।’
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ
ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও
কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য
কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক
চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয়
জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর
কবিতা ও গান মানুষকে
যুগে যুগে শোষণ ও
বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ
দেখিয়ে চলছে।
নজরুল
ছিলেন চির প্রেমের কবি।
তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম
নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী,
কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও
প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই
বলতে পারেন, ‘আমার আপনার চেয়ে
আপন যে জন খুঁজি
তারে আমি আপনায়।’
কাজী
নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১
জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম
ছিল ‘দুখু মিয়া’।
বাবার নাম কাজী ফকির
আহমেদ ও মা জাহেদা
খাতুন।
স্বাধীনতার
পরপরই কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা
করেন এবং ধানমণ্ডিতে কবির
জন্য একটি বাড়ি প্রদান
করেন।
জাতীয়
কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয়
মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়
দাফন করা হয়। সেখানেই
তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৭:৫৬ এএম, ২০ অগাস্ট, ২০২৩
চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের বিংশ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
ঢাকার একটি রেস্তোরাঁ। চা খেতে বসেছে দু বন্ধু। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলল যে কিছুদিনের মধ্যেই বর্তমান মহকুমাগুলোকে জেলায় পরিণত করা হবে। পুনর্গঠিত নতুন জেলায় নতুন প্রশাসক হবেন জেলা গভর্নর এবং তাঁর থাকবে নিরঙ্কুশ শাসনক্ষমতা। জেলা গভর্নরকে একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। নতুন জেলা গভর্নররা ক্ষমতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে অগণিত লোককে হত্যা করা হবে এবং বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা কেউ করলে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দেবে। সমবায়ের নামে ঘরবাড়ি আর জায়গা-সম্পত্তি কেড়ে নেয়া হবে। বন্ধুর মুখে এই ধরনের কথাবার্তা শোনার পর অপর বন্ধুটি জানায়, সেও এসব কথা আগেই শুনেছে।
আসলে এ ধরনের অপপ্রচার হাবিবুর রহমান গং তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সারা দেশেই ছড়াতে থাকে। সামান্য সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশিয়ে অপপ্রচার চালালে তা সহজেই লোকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। কথাটা মনে রেখেই ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের কাজে নেমেছিল। তারা ভাল করেই জানত একটা সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষ এ ধরনের অপপ্রচারের মুখে মিথ্যাকে সত্য থেকে আলাদা করতে পারে না। আর ক্ষমতার কাছাকাছি যারা থাকে, তারা নিজেরাই যখন ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে তাদের জানা কিছু কিছু সত্য ঘটনার সঙ্গে মিথ্যার রং মিশিয়ে অপপ্রচারে নামে, তখন জন্গণ অনায়াসে বিভ্রান্ত হবে। জেলা গভর্নরসংক্রান্ত প্রসঙ্গের ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম দেখা গেল না।
প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে ঔপনিবেশিক আমলের মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে গভর্নর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এসকল গর্ভনর হবেন জনগণের নির্বাচিত এবং তারা ক্ষমতাকে প্রয়োগ করবেন এমন এক কমিটির মাধ্যমে, যে কমিটিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন থাকবে। কমিটির এসকল সদস্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকবে। কমিটির এসকল সদস্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ইচ্ছেমতো কিছু করার সুযোগ পাবেন না। অন্যদিকে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রশাসনকে নিয়ে যেতে পারলে দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের সুরাহা করতে পারবে। জবাবদিহিমূলক বিকেন্দ্রীকরণ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তক করলে জনগণ তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের একটি সুযোগ পাবে। এই নতুন পদ্ধতিতে যেহেতু নিরঙ্কুশভাবে কারো হাতে ক্ষমতা থাকবে না, কাজেই ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ না কারণে ঔপনিবেশিক আমলের মতো শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তারা জনগণের শক্তি আর মালিকসুলভ ব্যবহারের সুযোগ পাবে না। কিন্তু দুভাগ্য যে এ সরল সত্য জনগণকে বোঝানোর মতো লোকের তখন অভাব ছিল।
পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছিল যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ধরা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছিল। এদিকে সহায়-সম্বলহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছিল। ধনী ও গরিবের মধ্যে বিরাট দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই সমবায়ের ধারণাকে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপে পরিণত করার চেষ্টা করলেন। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল যারা জমি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্পত্তির আরও উন্নতি ও উৎকর্ষসাধন করতে পারবে তেমনি যারা শ্রমিক তারা সম্পত্তির ভাগিদার হওয়ার ফলে নিজেদের শ্রম দিয়ে দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে তুলবে। তাদের অধিকারও নিশ্চিত হবে। এ কারণে সমবায়পদ্ধতি পরিচালনার জন্যে এ ধরনের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেখানে কারো নিজের ক্ষমতা অন্য কারোর উপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগই ছিল না।
বঙ্গবন্ধুর নতুন জেলা প্রশাসন ও সমবায়পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে ষড়যন্ত্রকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা এতদিন ধরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে এবং অপপ্রচার চালিয়ে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়, যার ফলে তাদের ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে শেষ করবার পূর্বে জনগণ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। কিন্তু তারা হিসেব করে দেখল যে, একবার যদি নতুন পদ্ধতি চালু হয়ে যায় এবং জনগণ যদি বঙ্গবন্ধুর মূল উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়, তা হলে তাঁকে শেষ করে কিছুতেই পার পাওয়া যাবে না। নতুন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ষড়যন্ত্রের পক্ষে কাজ করে যাওয়া এক লক্ষ লোককেও রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কাজেই নতুন পদ্ধতির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছানোর আগেই যা করার করতে হবে। আসলে ষড়যন্ত্রকারীরা আতঙ্কিত হলেও তা ছিল সাময়িক। তারা কুমিল্লায় বসে নতুন অবস্থার পর্যালোচনা করতে থাকে। তারা খুঁটিনাটি বিষয় পর্যালোচনা করে দেখল যে, তাদের ঘাবড়াবার কিছু নেই। শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যে একের পর এক গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা সম্ভব হয়। যেহেতু প্রশাসনযন্ত্র থেকে শুরু করে সর্বত্রই ষড়যন্ত্রকারীদের অবাধ গতি কাজটি করা তাদের পক্ষে তাই বেশি কঠিন হওয়ার কথা নয়।
বাস্তবেও ষড়যন্ত্রকারীদের কাজটি বেশি কঠিন হল না। অপপ্রচার বিশেষ করে একের পর এক গুজব এমনভাবে ছড়ানো হতে থাকল যে, জনগণ জেলা গভর্নর ও সমবায়পদ্ধতির আসল উদ্দেশ্যই বুঝতে সক্ষম হল না। গুজবে কান দিয়ে তারা হল বিভ্রান্ত। এ সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর উপর আঘাত হানার জন্যে তাদের সময় নির্দিষ্ট করল। ষড়যন্ত্রকারীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত হল যে, বঙ্গবন্ধুকে শেষ করতে হলে যে করেই হোক কাজটা করতে হবে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ার আগেই। সময়ের বিষয়টি তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। সকল ষড়যন্ত্রকারী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে এবং দেশের পরিস্থিতি সঠিকভাবে আঁচ করেই বঙ্গবন্ধুকে চূড়ান্তভাবে আঘাত হানার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেল। যাদের দায়িত্ব ছিল যড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করা, তাদের অনেকেই ষড়যন্ত্রে শরিক হওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগীরা আঘাত সম্পর্কে কিছুই আঁচ করতে পারলেন না।
মন্তব্য করুন
তসলিমা নাসরিন, অনেকেই আছে আপনার পাশে, অনেকেই আপনাকে ভালোও বাসে। এই যে কত ভক্ত অনুরাগী! কাঁটাতারের বেড়াকে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বময় ছড়ানো ফেসবুকের বিনাতারের সংযোগে আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনার লেখার প্রশংসা করছে। এই প্রাপ্যটুকুই ক'জনের ভাগ্যে জুটে? আসলে যে জন্য আপনি আফসোস করছেন, সেটা আপনার মনে পড়া অতীত, যেখানে এক সময় বসবাস করেছে আপনার দিন, রাত, সূর্য, চাঁদ আর আকাশ দেখা।
আজ রোববার (২৭ আগস্ট) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের শোকের মাসের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সেখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।