ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

প্রকাশ: ০৮:০৬ এএম, ১৭ মে, ২০২২


Thumbnail শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

কবি আসাদ মান্নান ‘চাই তাঁর দীর্ঘ আয়ু’ কবিতায় শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে লিখেছেন- ‘মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মহান পিতার স্বপ্নবুকে/নিরন্তর যিনি আজ এ জাতির মুক্তির দিশারী/ঘূর্ণিঝড়ে হালভাঙা নৌকাখানি শক্ত হাতে বৈঠা ধরে টেনে/অসীম মমতা দিয়ে পৌঁছুচ্ছেন আমাদের স্বপ্নের মঞ্জিলে,…’

কবির মতে, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের  অনুসারী, তিনি মুক্তির দিশারি, মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন নির্ভীকভাবে, আর গভীর মমতা দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট। কবির এই কথাগুলো সত্য হতো না, যদি না ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা নিজ দেশে ফিরে আসতেন। আসলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এদেশের শাসনকার্যে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় আসীন থেকে মহিমান্বিত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মহাকালকে স্পর্শ করতে সক্ষম। এর কারণ আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি রবীন্দ্রনাথের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। তিনি লিখেছেন ‘আমাদের অধিকাংশেরই সুখদুঃখের পরিধি সীমাবদ্ধ; আমাদের জীবনের তরঙ্গক্ষোভ কয়েকজন আত্মীয় বন্ধুবান্ধবের মধ্যেই অবসান হয়।...কিন্তু পৃথিবীতে অল্পসংখ্যক লোকের অভ্যুদয় হয় যাঁহাদের সুখদুঃখ জগতের বৃহৎব্যাপারের সহিত বদ্ধ। রাজ্যের উত্থানপতন, মহাকালের সুদূর কার্যপরম্পরা যে সমুদ্রগর্জনের সহিত উঠিতেছে পড়িতেছে, সেই মহান্ কলসংগীতের সুরে তাঁহাদের ব্যক্তিগত বিরাগ-অনুরাগ বাজিয়া উঠিতে থাকে। তাঁহাদের কাহিনী যখন গীত হইতে থাকে তখন রুদ্রবীণার একটা তারে মূলরাগিণী বাজে এবং বাদকের অবশিষ্ট চার আঙুল পশ্চাতের সরু মোটা সমস্ত তারগুলিতে অবিশ্রাম একটা বিচিত্র গম্ভীর, একটা সুদূরবিস্তৃত ঝংকার জাগ্রত করিয়া রাখে।’

অর্থাৎ শেখ হাসিনার ‘সুখদুঃখ জগতের বৃহৎব্যাপারের সঙ্গে বদ্ধ’। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু-কন্যা। অন্যদিকে বিশ্বকবির ভাবনাসূত্রে বলা যায়, শেখ হাসিনাকে কেবল ব্যক্তিবিশেষ বলে নয়, বরং মহাকালের অঙ্গস্বরূপ দেখতে হলে, দূরে দাঁড়াতে হয়, অতীতের মধ্যে তাঁকে স্থাপন করতে হয়, তিনি যে সুবৃহৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে ৪০ বছর প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে আছেন সেটা-সুদ্ধ তাঁকে এক করে দেখতে হয়। এদিক থেকে তিনি ‘ইতিহাসস্র্রষ্টা মহান ব্যক্তিত্ব’। খণ্ড ক্ষুদ্র বর্তমান কালে তাঁর কৃতিত্ব মূল্যায়ন করতে হলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সংগ্রামকে একীভূত করে দেখতে হবে।

২.

২০২২ সালের ১৭ মে করোনা-মহামারি পরবর্তী একটি বিশেষ দিন বলে আমাদের কাছে গণ্য হচ্ছে। কারণ অধিকারবঞ্চিত মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ হাসিনার ৪১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ভারত থেকে ফিরে এসেছিলেন প্রিয় জন্মভূমিতে। বাংলাদেশ তারপর থেকে নতুন করে পথ চলা শুরু করে। তাঁর প্রত্যাবর্তনের পর এদেশ পুনরায় ‘জয়বাংলা’র বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। ৪১ বছর পূর্বের সেই দিনটি এখনকার মতো ছিল না। সেদিন ছিল ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ার এক অপরাহ্ণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করেছিল। শেখ হাসিনার পদস্পর্শে সেই জল্লাদের দেশ পুনরায় সোনার বাংলা হয়ে ওঠার প্রত্যাশায় মুখরিত হয়েছিল। আজ তার প্রমাণ পাচ্ছি আমরা।

চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবেলা করে আজ বিশ্বে অভিনন্দিত। সবসময় সংকট মোকাবেলা করা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এজন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অবশ্য ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল আমেরিকার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ফোর্বসে’ প্রকাশিত কানাডিয়ান লেখক অভিভাহ ভিটেনবারগ-কক্স রচিত Ô8 (More) Women Leaders Facing The Coronavirus CrisisÕ শীর্ষক প্রবন্ধে করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবেলায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়। নারী নেতৃত্বাধীন সিঙ্গাপুর, হংকং, জর্জিয়া, নামিবিয়া, নেপাল, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কদের ওপর আলোকপাত করার সময় বলা হয়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৬ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষের দেশ বাংলাদেশের মহামারির সংকট মোকাবেলায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, যাকে প্রশংসনীয় বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। কলামে বলা হয়েছে, এদেশের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেগুলো এক অর্থে যুক্তরাজ্যও করতে পারেনি। তবে একথা সত্য, বিশ্ব মিডিয়ায় প্রশংসা পাবার জন্য শেখ হাসিনা কাজ করেন না। তাঁর দিনপঞ্জি জুড়ে আছে মানুষের জন্য কাজে ব্যস্ত সময়ের কর্মকাণ্ড। আর তাঁর এই বর্তমান নেতৃত্ব সম্ভব হয়েছে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ফলে।

তিনি ধনিদের বলেছেন গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে।আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই তিনি গরিবের পক্ষে কল্যাণকর রাজনীতি শুরু করেন। এজন্য নিজের দলের নেতাকর্মীদের মানুষের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণ একটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে কাজ করতেন। তখনকার ভয়াবহ বন্যার সময় তাঁকে সেসময়ের আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একটা চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে মানুষের পাশে থাকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে। চিঠিটি নিম্নরূপ

‘‘বন্ধুবরেষু গুণ, আপনার অনুরোধে কিছু ছবি পাঠালাম। তবে আমার একটা অনুরোধ রাখবেন। ‘ত্রাণ বিতরণ করছি’ এ ধরনের কোনো ছবি ছাপাবেন না। মানুষের দুর্দশার ছবি যত পারেন ছাপান। আমার ধারণা এ ধরনের অর্থাৎ ত্রাণ বিতরণের ছবি টেলিভিশন ও খবরের কাগজে দেখে দেখে মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে।

ওরা গরিব, কিন্তু সেটা কি ওদের অপরাধ? একশ্রেণি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ না করত তাহলে এরা কি গরিব হতো? কার ধন কাকে বিলাচ্ছে? যা কিছু আছে সকলে মিলে ভাগ করে ভোগ করলে একের কাছে অপরের হাত পাতার প্রয়োজন হতো না। ওদেরই সম্পদ লুট করে সম্পদশালী হয়ে আবার ওদেরই দুর্দশার সুযোগ নিয়ে সাহায্য দানের নামে হাতে তুলে দিয়ে ছবি ছাপিয়ে ব্যক্তিগত ইমেজ অথবা প্রতিষ্ঠা লাভের প্রয়াস আমি মানসিকভাবে কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। আমার বিবেকে বাধে। তবুও অনেক সময় পারিপার্শ্বিক চাপে পড়ে অনেক কিছুই করতে হয়। আমিও করি। বিবেকের টুঁটি চেপে ধরে অনেক সময় সমাজরক্ষার তাগিদে, সঙ্গীদের অনুরোধ বা অপরের মান রক্ষার জন্য এ ধরনের কাজ বা ছবি তুলতে হয় বৈকি। তবে যে যাই দান করুক না কেন, বিলি করুক না কেন, এটা তো ওই গরিব মানুষগুলোর অধিকার, তাদেরই প্রাপ্য। ক্ষমতার দাপটে কেড়ে নেওয়া ওদেরই সম্পদ অথবা ওদের পেটের ক্ষুধা দেখিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে ভিক্ষে এনে এদের দান করা। এখানে ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার সুযোগ কোথায়? এই ক্রেডিট নিতে যাওয়াটা কি দুর্বলতা নয়? আত্মপ্রবঞ্চনা নয়? কতকাল আর বিবেককে ফাঁকি দিবে? এই গরিব মানুষগুলোর মুখের গ্রাস কেড়ে খেয়ে আবার এদেরই হাতে ভিক্ষে তুলে দিয়ে ছবি ছাপিয়ে ইমেজ তৈরির পদ্ধতি আমি পছন্দ করি না।

আমি মনে করি, যা দান করব তা নীরবে করব, গোপনে করব। কারণ এটা লজ্জার ব্যাপার, গর্ব করার ব্যাপার মোটেই নয়। গর্ব করার মতো কাজ হতো যদি এই সমাজটাকে ভেঙে নতুন সমাজ গড়া যেত। গর্ব করার মতো হতো যদি একখানা কাঙালের হাতও সাহায্যের জন্য বাড়িয়ে না দিত। ফুটপাথে কঙ্কালসার দেহ নিয়ে ভিক্ষের হাত না বাড়াতে সেটাই গর্ব করার মতো হতো। যে স্বপ্ন আমার বাবা দেখেছিলেন, সেদিন কবে আসবে? আমার অনুরোধ আপনার কাছে, সেই ছবি ছাপাবেন না যে ছবি হাত বাড়িয়েছে সাহায্য চেয়ে, আর সেই হাতে কিছু তুলে দিচ্ছি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে। অনেকেই তুলে থাকেন। আমার বড় অপরাধী মনে হয় নিজেকে। লজ্জা হয় গরিব মানুষদের কাছে মুখ দেখাতে। আমরা সমাজে বাস করি। দুবেলা পেট পুরে খেতে পারি। ভালোভাবে বাঁচতে পারি। কিন্তু ওরা কি পাচ্ছে? ওদের নিয়ে এ ধরনের উপহাস করা কেন? ওরা বরদাশত করবে না, একদিন জেগে উঠবেই সেদিন কেউ রেহাই পাবে না। আমার অনুরোধ আশা করি রাখবেন। শুভেচ্ছান্তে, শেখ হাসিনা, ৯. ১০. ৮৮’’

স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে, ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ এই ৭ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় শেখ হাসিনা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছের মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। অথচ ১৭ মে তাঁর দেশে ফেরা ছিল অতি সাধারণ, কারণ সেভাবেই তিনি দেশের জনগণের সামনে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। সেদিন তিনি এক বৃহৎ শূন্যতার মাঝে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। এদেশে তাঁর ঘর নেই; ঘরের আপনজনও কেউ নেই। তাই সারা দেশের মানুষ তাঁর আপন হয়ে উঠল। তিনি ফিরে আসার আগে ছয় বছর স্বৈর-শাসকরা বোঝাতে চেয়েছিল তারাই জনগণের মুক্তিদাতা। কিন্তু সাধারণ মানুষ ক্ষণে ক্ষণে জেগে উঠছিল, বিচার দাবি করছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের। সেনা শাসকের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকায় জনগণের শাসনের দাবি নিয়ে রাজনীতির মাঠে রাতদিনের এক অক্লান্ত কর্মী হয়ে উঠেছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি নেতা কিন্তু তারও বেশি তিনি কর্মী। কারণ দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শাসনকাল সম্পর্কে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেওয়া, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা তাঁর প্রাত্যহিক কর্মে পরিণত হলো। দেশে ফেরার প্রতিক্রিয়ায় আবেগসিক্ত বর্ণনা আছে তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থগুলোতে। কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, শেখ হাসিনা যখনই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেছিলেন তখনই বুঝে নিয়েছিলেন ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু পথ।’ তাঁর ‘পথে পথে গ্রেনেড ছড়ানো’। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের (১৯৮১ সালের ১৭ মে) আগে ৫ মে বিশ্বখ্যাত নিউজউইক পত্রিকায় বক্স আইটেমে তাঁর সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জেনেও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চের সামরিক শাসন জারির দুইদিন পর স্বাধীনতা দিবসে একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি সামরিক শাসন মানি না, মানবো না। বাংলাদেশে সংসদীয় ধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবোই করবো।’ তাই তো কবি ত্রিদিব দস্তিদার শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘আপনিই তো বাংলাদেশ’।

৩.

প্রকৃতপক্ষে ১৭ মে এদেশের ইতিহাসের মাইলফলক। সেদিন থেকেই দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে দ্রুত দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে বঙ্গবন্ধু ও জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। সেদিন থেকেই সেই স্লোগান প্রকম্পিত হয়ে উঠল আকাশে-বাতাসে; রাজপথ জনগণের দখলে চলে গেল। সেনাশাসক জিয়া এতোদিন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের পূর্বে সেই বছরই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং জিয়ার অভিসন্ধি ভেস্তে যায়। সেদিনের ঢাকায় লক্ষ মানুষের বাঁধ ভাঙা স্রোত তাঁকে কেন্দ্র করে সমবেত হয়েছিল। তাদের কণ্ঠে ছিল বিচিত্র ধ্বনি ও প্রতিধ্বনি। শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ আরো ছিলÑ শেখ হাসিনা আসছে, জিয়ার গদি কাঁপছে, গদি ধরে দিব টান জিয়া হবে খান খান। আবালবৃদ্ধ জনতা আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়ে উচ্চারণ করেছিলেনÑ মাগো তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব।

সেদিনের প্রত্যয় শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারই বাস্তব করে তুলেছেন। জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের কয়েকজন খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বাকি পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে এনে শীঘ্রই ফাঁসি দেয়া হবে বলে আমরা মনে করি। ১৭ মে সম্পর্কে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সংবাদ ছিল এরকমÑ ‘ঐদিন কালবোশেখির ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ৬৫ মাইল। এবং এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে লাখো মানুষ শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় ছিল।’ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমান থেকে নেমেই তিনি দেশের মাটিতে চুমু খান। এ সময় বিপুল জনতার বিচিত্র স্লোগান মুখরিত করে তুলেছিল ঢাকার রাজপথ। যেন সূর্যোদয় হয়েছে, নতুন দিনের পথ চলা শুরু হলো। অশ্রুসজল সেই দিনের কথা আছে নানাজনের স্মৃতিচারণে। ঢাকা শহর তখন মিছিলের নগরী। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে বিকাল ৩.৩০ মিনিটের পর বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি মাটি স্পর্শ করার আগেই হাজার হাজার উৎসাহী জনতা সকল নিয়ন্ত্রণের সীমা, নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে ফেলে। নিরাপত্তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় অবশেষে তিনি নেমে আসেন; হাত নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু তাঁর অন্তরে ততক্ষণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। বিকাল ৪.৩২ মিনিটে শেখ হাসিনা একটি ট্রাকে ওঠেন। এ সময় বজ্র নিনাদে জনতার স্লোগান চলছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক যখন ফুলের মালা পরিয়ে অভিবাদন জানান তখন বাঁধ ভাঙা কান্নার জোয়ার এসে ভাসিয়ে দেয় শেখ হাসিনাকে; কেঁদে ওঠেন তিনি। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি কেবল পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গেই তুলনীয়।

শেখ হাসিনার ফিরে আসা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল দেশ ও জনতার স্বার্থে। পূর্বেই উল্লেখ করেছি তাঁর প্রত্যাবর্তনের আগে নৈরাজ্যের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছিল মানুষ। পাকিস্তানি শাসক, দালাল-রাজাকার ও আন্তর্জাতিকভাবে কয়েকটি দেশের বাধা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং আপামর জনগণের অংশগ্রহণে ৯ মাসের মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার প্রচেষ্টা সফল হতে দেয় নি খুনিরা। ফলে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী সামরিক শাসকদের অভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে। দেশ অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়। দেশের প্রতিকূল এক সময়ে জননেত্রীকে আমরা রাজনীতির মঞ্চে পেলাম। তিনি দায়িত্ব নিলেন এবং লাখো জনতার সমাবেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেনÑ ‘আজকের জনসভায় লাখো লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরো অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোন দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। ...বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ গত চার দশক ধরে দেশি-বিদেশী চক্রান্ত ও হাজারো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তিনি জনগণের পাশেই আছেন; ভবিষ্যতে থাকবেনও। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল পর্যন্ত একাধিক বার বন্দি অবস্থায় নিঃসঙ্গ মুহূর্ত কাটাতে হয়েছে তাঁকে।

৪.

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশ ও জনগণের কাছে প্রত্যাবর্তনের মতো শেখ হাসিনার দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তনও ছিল আমাদের জন্য মঙ্গলকর। ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারির পর তাঁর দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু ১৬ জুলাই যৌথবাহিনী তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে ৩৩১ দিন কারাগারে বন্দি করে রাখে। সেসময় গণমানুষ তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। তাঁর সাবজেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেফতারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে স্পর্শ করেছিল। কারণ সে সময় আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সত্যকথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ ও লুটপাটের মাধ্যমে এদেশকে নরকে পরিণত করেছিল। নেত্রীকে গ্রেনেড, বুলেট, বোমায় শেষ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন নির্ভীক; এখনো তেমনটাই আছেন। নতুন প্রজন্মকে যথার্থ ইতিহাসের পথ দেখিয়েছেন তিনি নিজের রাজনৈতিক সততার মধ্য দিয়ে।  

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে একাধিকবার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮৩ সালের ১৬ আগস্ট জননেত্রীর ওপর ঢাকায় গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর বাসভবন আক্রান্ত হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে একটি বিরাট মিছিল নগরীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ৪০ জন নিহত হন। ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টির ক্যাডাররা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ে। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনের সময় ধানমন্ডিতে তাঁর ওপর বন্দুকধারীরা রাসেল স্কোয়ারে আক্রমণ চালায়। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর- ট্রেনে ভ্রমণকালে ঈশ্বরদী ও নাটোরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা জননেত্রীর ওপর গুলিবর্ষণ করেছিল। এভাবেই দেশ-বিদেশে কখনো গোপনে কখনো বা প্রকাশ্যে চলেছে হত্যার ষড়যন্ত্র। ২০০০ সালের ২০ জুলাই পূর্ব নির্ধারিত জনসভাস্থল কোটালিপাড়া থেকে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি বিস্ফোরকের বোমা উদ্ধার করা হয়। ২০০৪ সালের ৫ জুলাই তুরস্কে সফরের সময় জননেত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ছিল ভয়াবহতম দিন। অজস্র গ্রেনেড নিক্ষেপের পরও নেতাকর্মীদের মানবঢালের বেষ্টনীর কারণে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। তবে নিহত হন অনেক আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী। এছাড়া অনলাইন, ব্লগ এবং ফেসবুকে জননেত্রীকে কটাক্ষ করে খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে বারবার। হত্যার প্রচেষ্টা ও হুমকির মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে শীঘ্রই মহামারি অতিক্রম করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবেÑ এটা নিশ্চিত। তাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অশুভ শক্তির মোকাবেলা করতে হবে।

৫.

মূলত ১৯৮১ সানের ১৭ মে’র সেকাল আর ২০২২ সালের একালের মধ্যে অনেক পার্থক্য। কিন্তু সীমাবদ্ধ কালকে অতিক্রম করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রেখেছেন সাফল্যের সুদীর্ঘ স্বাক্ষর। তিনি ২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০ নারীর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন। এছাড়া ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থানে, ফোর্বসের করা ২০১৬ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ৩৬তম স্থানে ছিলেন। ফোর্বসের তালিকায় ২০১৮ সালে ২৬ এবং ২০১৯ সালে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর মধ্যে তিনি ছিলেন ২৯তম। ২০১০ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেই তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা।

একটানা ১৩ বছর ক্ষমতা থাকাকালীন তাঁর আরো অনেক অর্জন রয়েছে। যেমন, ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা জয়ের জন্য তিনি সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ৭০তম অধিবেশনে পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ লাভ করেনÑ এই তালিকা আরো দীর্ঘ। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার লাভ করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরিসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, নারীর অধিকার, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রক্ষায় তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত। আর বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে তিনি জনগণের কাছে আজ নন্দিত। তাঁর প্রত্যাবর্তন আজও শেষ হয়নি। এজন্য ১৭ মে ঐতিহাসিক দিবসে ইয়াফেস ওসমান রচিত ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ১৭ মে ১৯৮১’ কবিতাটির একটি অংশ স্মরণ করছি-‘মনে কি পড়ে মনে কি পড়ে/বেদনার তরী বেয়ে একদিন/ছুঁয়ে ছিলে স্বদেশের মাটি।/চারিদিকে নাগিনীর বিষাক্ত নিশ্বাস/পিতার পতাকা হাতে তবু অবিচল,/খরস্রোতা নদী হয়ে অবিরাম বয়ে চলা/মানুষের মুক্তিটা গড়ে দেবে বলে।’


শেখ হাসিনার   স্বদেশ   প্রত্যাবর্তন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন