ইনসাইড থট

"আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ পরস্পরের পরিপূরক"


Thumbnail "আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ পরস্পরের পরিপূরক"

ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গ থেকে পূর্ব বাংলা এবং পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশের দশকে পূর্ববাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তানে রুপান্তরিত হয় আমাদের এই ভূখন্ড। তবে পাকিস্তানের শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে 'বাংলাদেশ' নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ই বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৭৫৭-১৯৭১ দীর্ঘ ২১৪ বছর ধরে বাঙালীর আকাঙ্খা ছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড। যে আকাঙ্খার বাস্তবায়ন ঘটেছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ' এর নেতৃত্বে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন ভাগিরথী নদীর তীরবর্তী পলাশীর আম্রকাননে বাঙালির স্বাধীনতার যে লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, অলৌকিকভাবে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার দিনটিও মিলে গিয়েছিল সেই দিনটির সাথে। ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গণমানুষের সংগঠনটি।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্মের সাথে মুসলিম লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল হক নেতৃত্বাধীন ঢাকার ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগ কর্মি শিবির ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কর্মি শিবিরটি ছিল ঢাকার প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা শওকত আলীর মালিকানাধীন তিনতলা ভবনের নিচতলায়। কর্মি শিবিরের সকল খরচ চালাতেন শওকত আলি। তিনি ছিলেন '৪৮ এ শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের প্রথম সারির কর্মি এবং কর্মি শিবিরের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তবে কর্মি শিবির প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের কারিগর ছিলেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক প্রখ্যাত ইসলাম ধর্মীয় পন্ডিত আবুল হাশিম। এই কর্মি শিবির থেকেই ভাষা আন্দোলনের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হত।

১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর নাজিমুদ্দিন এবং মাওলানা আকরাম খাঁর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের রক্ষণশীল অংশের নেতারা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তাদের পরোক্ষভাবে সমর্থন দেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। নাজিমুদ্দিন সোহরাওয়ার্দীকে 'ভারতের এজেন্ট' এবং 'পাকিস্তানের শত্রু' হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য পদ থেকে বরখাস্ত করেন। ফলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিম নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে মুসলিম লীগের মনোনয়নে উপনির্বাচনে টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তবে মুসলিম লীগ সরকারের পূর্ব বঙ্গের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করতে থাকেন তিনি। এ কারনে তার নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করে তাকে হয়রানী করার হীন উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে মুসলিম লীগ সরকার। পূর্ব বঙ্গের গভর্ণর এক নির্বাহী আদেশ বলে তার নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে ব্যবস্থাপক সভার উক্ত আসন শূন্য ঘোষণা করেন। মাওলানা ভাসানী আসাম চলে যান। তাকে আটক করে ধুবড়ী কারাগারে রাখা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালের ২৬ শে এপ্রিল ঐ আসনে পুনরায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুসলিম লীগের ধনাঢ্য প্রার্থী জমিদার খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে ১৫০ মোগলটুলি কর্মি শিবিরের নেতাদের সিদ্ধান্তে প্রার্থী করা হয় শামসুল হককে। কর্মি শিবিরের নেতারা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে, কেউ হাতঘড়ি বিক্রি করে, কেউ বাইসাইকেল বিক্রি করে নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করেন। বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে এই নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন এবং নির্বাচনী ফান্ড গঠনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থীর কল্যাণে মানুষ প্রথম মাইকের ব্যবহার দেখেন। মুসলিম লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন সহ অসংখ্য মন্ত্রী এবং হেভিওয়েট নেতারা খুররম খান পন্নীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। অন্যদিকে শামসুল হকের পক্ষে ১৫০ মোগলটুলি কর্মি শিবিরের কয়েকজন কর্মি ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বড় নেতা ছিলেন না। নির্বাচনে শামসুল হক বিপুল ভোটের ব্যবধানে মুসলিম লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী খুররম খানকে পরাজিত করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। জমিদার খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে শামসুল হক কোন বিবেচনাযোগ্য প্রার্থী ছিলেন না বলে সবাই মনে করতেন। অথচ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন। এই রায় যতটা না ছিল খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে তার চেয়ে ছিল মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে। এই পরাজয়ে মুসলিম লীগ সরকারের ভীত কেঁপে যায়। ফলে ঐ উপনির্বাচনের পর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আর কোন উপনির্বাচন দেয়নি প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকার। তবে বিজয়ী শামসুল হকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। নির্বাচনে বিপুল বিজয় মোটেও সুখকর হয়নি তার জন্য। পূর্বের ন্যায় একই কায়দায় আবারো নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এভাবে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের একের পর এক জনবিরোধী কর্মকান্ডের ফলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শওকত আলী সহ মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের নেতাদের মনে মুসলিম লীগের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এমনি এক সময়ে পূর্ব বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ নেতা দবিরুল ইসলামের পক্ষে "হেবিয়াস কর্পাস" মামলা লড়তে ঢাকায় আসেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এ সময় সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার পূর্ব থেকে ঘনিষ্ঠ মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের ব্যবস্থাপক শওকত আলীর কথা হয়। সোহরাওয়ার্দী এ সময় তাকে মুসলিম লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠনের নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে শওকত আলী কর্মি শিবিরের নেতৃবৃন্দকে নতুন দল গঠনে উদ্বুদ্ধ করেন।মাওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকা আসেন। ঢাকায় এসে তিনি আলী আমজাদ খানের বাসায় অবস্থান করেন। মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরে তার পূর্বে আসা যাওয়া না থাকলেও ইয়ার মোহাম্মদ খানের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। শওকত আলী মাওলানা ভাসানীকে আলী আমজাদ খানের বাসায় আলোচনার সময় ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ কর্মি শিবির ও মুসলিম লীগ ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের রাজনৈতিক কার্যক্রমের কথা অবহিত করেন। পরবর্তীতে মুসলিম লীগ কর্মি শিবিরের উদ্যোগে মুসলিম লীগের বিকল্প একটি রাজনৈতিক দল গঠনে ঐকমত্য হয়।

মুসলিম লীগ সরকার এ ধরনের উদ্যোগের বিষয়ে টের পেয়ে কর্মি শিবিরের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে শামসুল হকের টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনের ঠিক দুইদিন পূর্বে ২৪ শে এপ্রিল গ্রেফতার করে নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। অনেককে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকারের এসব অপকর্ম কোন কাজে আসে নি। দল গঠনের প্রত্যয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এক কর্মি সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সরকারি বাধার মুখে উপযুক্ত জায়গা না পাওয়া গেলে অবশেষে কাজী হুমায়ুন বশীর এবং ইয়ার মোহাম্মদ খানের ইচ্ছায় ঢাকার কে এম দাস লেনের তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রাসাদতূল্য বাসভবন ঐতিহাসিক "রোজ গার্ডেন" এ প্রায় ৩০০ কর্মির উপস্থিতিতে ২৩ শে জুন বিকেল তিনটায় উক্ত কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত আইনজীবি আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে ঐ কর্মি সম্মেলনে "পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" নামক রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে করা হয় সাধারন সম্পাদক।



ঐ সময় ভারত উপমহাদেশের সমসাময়িক কোন রাজনৈতিক সংগঠনে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদ না থাকলেও কর্মি শিবিরের তরুণ জনপ্রিয় সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমানকে যথাযথ মূল্যায়ন করার প্রত্যয়ে সংগঠনে যুগ্ম সম্পাদক পদ সৃষ্টি করে ১ নং যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। কথিত আছে, শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক করার জন্য শওকত আলি মাওলানা ভাসানিকে অনুরোধ করেছিলেন। তবে শেখ মুজিবের চেয়ে বয়সে সিনিয়র হওয়ায় খন্দকার মোসতাক আহমদ চেয়েছিলেন ১ নং যুগ্ম সম্পাদকের পদ। এ নিয়ে তিনি মাওলানা ভাসানিকে অনেক অনুনয়, বিনয় করেছিলেন বলেও কথিত আছে। তবে শেখ মুজিবের সাংগঠনিক দক্ষতার কারনেই তাকে উক্ত পদে মনোনীত করেছিলেন মাওলানা ভাসানি এবং শামসুল হক। শেখ মুজিব এ সময় কারান্তরীণ ছিলেন। নতুন এ দলটির প্রতিষ্ঠার ৫-৬ দিন পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় '৫৩ সালের যে সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ঐ কমিটিতেও আওয়ামী মুসলিম লীগে কোন যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদ ছিল না। দলের কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছিল ঢাকার ঐ সময়ের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি ইয়ার মোহাম্মদ খানকে। দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তার অনেক অবদান ছিল এবং তিনি দলকে শক্তিশালী করতে অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের অনেক নেতার ঢাকায় থাকার সকল খরচ তিনি বহন করতেন।

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম কমিটির অধিকাংশ কর্মকর্তা এবং সদস্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন মাওলানা ভাসানী যাদের কারো কারো পূর্বে কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। দল গঠন এবং পরবর্তীতে সংগঠনটির বিকাশে তাদের অনেকের কোন ভূমিকা ছিল না। পরবর্তীতে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যান, অনেকে দল থেকে পদত্যাগ করেন। এই ঘটনায় আওয়ামী মুসলিম লীগের কমিটি গঠনে মাওলানা ভাসানীর সাংগঠনিক মুন্সিয়ানা সম্পর্কে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে দল গঠন পরবর্তীতে তিনি যোগ্যতার সাথে নেতৃত্ব দেন। ২৩ শে জুনের কর্মি সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক শামসুল হক পূর্ব বাংলা ও পাকিস্তানের সকল ইউনিটের আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার প্রদানের দাবিসহ নতুন এ সংগঠনটির জন্য একটি সময়োপযোগী খসড়া ম্যানিফেস্টো প্রণয়ন করেছিলেন। যার ফলে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষ জানতে পেরেছিল। তবে তিনি বেশিদূর দলকে অগ্রসর করতে পারেন নি। কারন শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি তিনি এবং দলের সভাপতি মাওলানা ভাসানী কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি গ্রেফতার হন। টানা প্রায় ২৬ মাস জেল খাটার পর ভগ্ন শরীর নিয়ে শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেলেও শামসুল হক তখনো জেলে ছিলেন।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শেখ মুজিবের শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে প্রায় দুই আড়াই মাস টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে থেকে চিকিৎসা ও বিশ্রাম নেন। অতঃপর ১৯৫৪ সালের ৩০ মে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই দুই বছর সময় তিনি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দলের সাধারন সম্পাদক শামসুল হক এ সময় কারাভ্যন্তরে থাকায় দলের ১ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শেখ মুজিব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দল গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে এই দুই বছরই ছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিস্তারকাল। যার পুরোভাগে নেতৃত্বে ছিলেন তরুণ  সংগঠক মুজিব। '৫৩ সালের সম্মেলনের কিছুদিন পূর্বে শামসুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও সরকারের নির্যাতন এবং সুন্দরী স্ত্রীর দুই ফুটফুটে কন্যা সন্তানসহ তাকে ছেড়ে যাওয়ার মানসিক চাপে তার মস্তিষ্ক বিভ্রাট ঘটে। ফলে তিনি দল থেকে বহিস্কার হন এবং সম্মেলনে নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েন। সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগকে শুধুমাত্র মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ১৯৫৫ সালে সকল ধর্ম, বর্নের মানুষের অংশগ্রহণে একটি অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ' করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে দলের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম খান, খন্দকার মোশতাক আহমদ সহ অনেকেই মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। তবে শেষমেশ বঙ্গবন্ধুর জোরালো প্রচেষ্টার কারনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতে সংগঠনের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালে দলের সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীত্ব গ্রহণ নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অলি আহাদের নেতৃত্বে একটি অংশ দলের মধ্যে বলয় সৃষ্টির অপচেষ্টা চালান।সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু সংগঠনকে শক্তিশালী করার স্বার্থে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে দলের সাধারন সম্পাদক পদে বহাল থাকেন। কারন বঙ্গবন্ধু জানতেন এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে শক্তিশালী সংগঠনের কোন বিকল্প নেই।

পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারন সম্পাদকের পদ ধরে রাখা বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক নৈপুণ্যেরই পরিচায়ক।সেদিন বঙ্গবন্ধু ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রটি আজও পেতাম কিনা সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্তটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকবে। ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি মাওলানা ভাসানীর পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল এবং পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রেক্ষিতে মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে ভূমিকা নেন। সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দলের বেশিরভাগ নেতা মাওলানা ভাসানীর প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ কারনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ইয়ার মোহাম্মদ খান, অলি আহাদ সহ অনেক নেতা আওয়ামী লীগ থেকে ১৮ ই মার্চ পদত্যাগ করেন।

আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে মাওলানা ভাসানী 'ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি' গঠন করলেও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ভাসানী সাহেবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নি। মাওলানা ভাসানীর পদত্যাগের পরও পরবর্তীতে ৫৭ সালের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায় তাকেই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশকে। সহ-সভাপতির তিনটি পদ এবং ইয়ার মোহাম্মদ খানের সম্মানে কোষাধ্যক্ষ পদটিও ফাঁকা রাখা হয়। রাজনীতিতে এ ধরনের নজীর বিরল। ৫৭-৬৪ দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়েই চলেছে আওয়ামীলীগ। এ সময় মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে থাকলেও মূলত সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন দলের সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধু। ৬৬ তে ৬ দফা দেওয়ার পর দলের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে,৬ দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা তর্কবাগীশ ৬ দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ৬৬'র সম্মেলনে নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েন। বঙ্গবন্ধু দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারন সম্পাদক হন তাজউদ্দিন আহমদ।

সেই সম্মেলনে সমাপনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-"৬ দফার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই। রাজনীতিতেও কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই। নেতৃবৃন্দের ঐক্যেও আওয়ামীলীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নে নিবেদিতপ্রাণ কর্মিদের ঐক্যেই আওয়ামীলীগ আস্থাশীল। আওয়ামী।লীগ নেতার দল নয়, এ প্রতিষ্ঠান কর্মিদের প্রতিষ্ঠান।"
বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন-"সাঁকো দিলাম, স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য। এই আন্দোলনে কেউ যদি নাও আসে আমরা একাই রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।ভবিষ্যত ইতিহাস প্রমাণ করবে আমাদের মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।" বস্তুত ৬ দফায় ছিল বাঙালীর স্বাধীনতার বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর।
৬ দফার আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বারবার কারাবরণ করেছেন। ৬ দফা দেওয়ার পর দাবি আদায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু ৩৫ দিনে ৩২ টি জনসভা করে ৮ বার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু ৬ দফার প্রশ্নে আপোষ করেন নি। ৬ দফা আন্দোলনে আটক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সহ রাজবন্দীদের মুক্তির আন্দোলন এক পর্যায়ে ৬৯'র গণঅভ্যুত্থানে রুপ নিয়েছিল। 
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়েছিলেন এবং তুমুল আন্দোলনে স্বৈরশাসক লৌহমানব আইয়ু্ব খানের পতন হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু জানতেন- জনরায় ছাড়া, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া বাঙালীর আকাঙ্খিত স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। এ কারনেই তিনি  নির্বাচনের দাবি করেছিলেন এবং ৭০'র নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। অথচ মাওলানা ভাসানী সহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সে  নির্বাচনে অংশগ্রহণে তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রমাণ হয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৭০'র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনতার বিপুল ম্যান্ডেট বাংলার মানুষের স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন যে যৌক্তিক ছিল সেটিই বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দেয়। তবে কেন্দ্র ও প্রদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ৭ ই মার্চ রেসকোর্সের ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে উপস্থিত মিলিয়ন জনতার মনের ঘোষণার সাথে সুর মিলিয়ে কবিতার ছন্দে ঘোষণা করেন তার অমর বাণী-

"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।" পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যাতে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত না করতে পারে সেজন্য কৌশলে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে পাকিস্তানি শাসকের জন্য মানার অযোগ্য চারটি শর্তে আলোচনার দ্বার খোলা রাখেন। স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ ঘোষণা না করে বঙ্গবন্ধু একদিকে যেমন হায়েনার মত সমাবেশে তাক করে রাখা লক্ষ বুলেটকে সুপ্তাবস্থায় অঙ্কুরে বিনষ্ট করেছিলেন, তেমনি
"তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।"
ভাষণের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ প্রস্তুতির সুস্পষ্ট  দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীত্বের শপথ না নিলেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মানতে শুরু করে। রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন জনতার অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী। ২৩ শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে সূর্যোদয়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এদিন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী জোরালো হয় অসহযোগ আন্দোলন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এমন অসহযোগ আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ২৫ শে মার্চের কালরাত্রের পৈশাচিক গণহত্যার পর নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালি ফুঁসে উঠে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের কালজয়ী ভাষণের অনুপ্রেরণায়।
"প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।" বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের মাধ্যমে নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালি সেদিন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে রুপান্তরিত হয়েছিল সশস্ত্রে।

২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-

"হয়ত এটাই আমার শেষ বার্তা।
আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।"

সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার অপরাধে বন্দি করে পাকিস্তানের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৭০'র নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে  গঠিত হয় মুজিব নগর সরকার। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মুজিব নগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী চার জাতীয় নেতা। প্রায় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহিদ এবং ২ লক্ষ মা, বোনের সম্ভ্রম, কোটি কোটি মানুষের ত্যাগ এবং পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ২৮৩ দিনের নির্মম, নিষ্ঠুর মানসিক নির্যাতন আর ঘুমহীন রাতের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের অসহায় আত্মসমর্পনের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কেবল মাত্র বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নয়, '৪৮ এবং ৫২'র ভাষা আন্দোলনে ও নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশের বিজয়ের ২৩ দিন পর ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পূনর্গঠনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতাকে কারা অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে জেল থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা এবং জেলহত্যার বিচার করা যাবে না মর্মে আইন পাশ করা হয়। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকে বন্দী করে নির্মম নির্যাতন করা হয়। দেশে আইনের শাসন ভুলুন্ঠিত হয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার সব রকম প্রচেষ্টা করা হয়। মানুষের ভোটাধিকার হরণ এবং গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে চালু করা হয় কারফিউ গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগ রাজপথে রুঁখে দাঁড়ায়। ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অবৈধ সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশে ফিরে এসে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশে রুপান্তরিত করেন।

রাষ্ট্র পরিচালনায় শুধু নয়, বরং বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটের রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবিলা এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শক্ত হাতে  প্রতিহত করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। নিজ দল ও সরকারের দূর্নীতিবাজ নেতা, এমপি, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি। ১৯৮১-২০২২ দীর্ঘ ৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। বারবার তার উপর গ্রেনেড, গুলি, বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালির আকাঙ্খিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশ ও জনগণের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যখন আর্টিকেলটি লিখছি, এর ঠিক দু'দিন পরেই ২৫ জুন, স্বাধীনতার পর বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সকল অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতিকে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে তেমনিভাবে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করবে ইনশাআল্লাহ্! আজ ২৩ জুন ২০২২, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সকলকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।

আওয়ামী লীগ   বঙ্গবন্ধু   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন