অন্য সবার মতো আড্ডা আমাকেও টানে। কখনো কখনো মন চায় তুলতে চায়ের কাপে ঝড়। সে আড্ডা হোক রাজনীতি, হোক সাহিত্য। কথা হচ্ছিল আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে। বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলাম। টেবিলে ছিলেন আমার আরেক সহকর্মী। আলোচনা জমে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে। চায়ের কাপে ঝড়ে শ্রীলঙ্কার বর্তমান হাল, ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ববাস্তবতা ও সরকারের সামনের চ্যালেঞ্জ বাদ পড়ে না। উঠে আসে আগামী ভোটে বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকা ও ভারতের ভূমিকা কী হবে এবং কূটনীতিকরা কেন এত তৎপর এখন বাংলাদেশ নিয়ে। প্রশ্ন আমাদের। জবাব দিচ্ছেন নেতা। আবার তিনি আমাদের কাছেও ছুড়ে দিচ্ছেন প্রশ্নের বাণ। নেতা বললেন, ‘বিএনপি কিংবা বিদেশি কেউই আমাদের জন্য ফ্যাক্টর নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি বিদেশনির্ভর নয়। অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত আর হাইকমিশনারের ইশারায় এ দেশে কিছু হবে না। লাভ হবে না ঘোলা পানিতে বিএনপির মাছ শিকারের চেষ্টা। সুশীল আর ডক্টরদের দেশ-বিদেশে নানামুখী তৎপরতা ভেস্তে যাবে যদি আমরা ঠিক থাকি।’ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলাম। বললাম, আমরা ঠিক থাকি বলতে কী বোঝাতে চাইছেন? আরেকটু খোলাসা করুন। জবাবে সেই নেতা বললেন, ‘আমরা মানে আওয়ামী লীগকে বুঝিয়েছি। আমাদের নেতা-কর্মীদের কর্মকান্ডের কথা বলছি। সাধারণ মানুষ সরকারি দলের কর্মকান্ড দেখে। কিন্তু কতিপয় অর্বাচীন বুঝে না বুঝে যা খুশি তা করে। নিজেরা নিজেরা মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত হয়। অকারণে বিতর্ক তৈরি করে। লাগামহীন আচরণের প্রকাশ ঘটায়। বাস্তবতা বুঝতে চায় না। এতে মানুষ হতাশ হয়। ক্ষুব্ধ হয়, ব্যথিত হন সরকারি দলের কর্মীরাই। আমাদের সমস্যা নিজেদের অভ্যন্তরের ঝামেলা নিয়ে। বাইরের চক্রান্ত আগেও ছিল, এখনো আছে। এগুলো সামাল দিয়েই আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে।’
কথাগুলো পছন্দ হলো। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী একটি অভিজ্ঞ পুরনো রাজনৈতিক দল। যুগে যুগে এ দলটি বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এ দল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। শেখ হাসিনা সারাটা জীবন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নিয়ে লড়েছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন মানুষের অধিকার। তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষার সুফল ভোগ করছে আজকের আওয়ামী লীগ। তিনি গড়েছেন টানা ক্ষমতার রেকর্ড। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ জানে কী করে আন্দোলন করতে হয়। কী করে আন্দোলন ব্যাহত করতে হয়। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে ও ভিতরে থাকার সমান অভিজ্ঞতা দলটির। এ দলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে কিছু করার শক্তি এখন বিএনপির নেই। টানা ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির ভিতরে ক্লান্তি তৈরি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তৈরি হয়েছে হতাশা। বিএনপি এখন আর আগের অবস্থানে নেই। তারা দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য কোনো আন্দোলন গড়তে পারেনি। দাঁড়াতে পারেনি নেত্রীর পাশে। এখনো দলের ভিতরে-বাইরে সমস্যার শেষ নেই। বেগম খালেদা জিয়া এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ। হাসপাতাল, মামলা-মোকদ্দমা আর জেল নিয়ে তিনি কাবু। সাধারণ নেতা-কর্মীরা তাঁর শারীরিক অবস্থান নিয়ে চিন্তিত। দলের আরেক শীর্ষ নেতার অবস্থান লন্ডনে। বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। কঠিন এ পরিবেশে দল সামাল দিতে লড়ছেন মির্জা ফখরুল। তিনি কতটা পারবেন তা বলার সময় আসেনি। তবু ভদ্রলোক হিসেবে মির্জা ফখরুল দেশ-বিদেশে একটা অবস্থান গড়েছেন। টিকে আছেন।
ক্ষমতা ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। সরকারি দলে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। বিরোধী দলে হামলা-মামলা আর কারাগার। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় বিরোধী দলে ছিল। হামলা-মামলাসহ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আজকের অবস্থানে। আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি দুঃসময় কেউ মোকাবিলা করেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এ দলটি দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ ছিল দলটির জন্য এক দুঃসহ পরিস্থিতি। তারপর পথপরিক্রম ও কঠিন বাস্তবতায় নেতারা সিদ্ধান্ত নিলেন দল টেকাতে নিয়ে আসবেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ কর্মী নেত্রীর আগমনের খবরকে স্বাগত জানালেন। দলে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হলো। এ কর্মীরাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভরসা। শেখ হাসিনাও টিকে আছেন তাঁদের ভালোবাসায়। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার পথ তৈরি ১৯৭৭ সালে। সে বছরের ৩ ও ৪ এপ্রিল ঢাকার ইডেন হোটেলে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনের দলাদলি কর্মীদের মধ্যে নীরব আলোচনায় নিয়ে আসেন শেখ হাসিনাকে। সম্মেলনে মিজানুর রহমান চৌধুরী দলের সভাপতির অন্যতম দাবিদার ছিলেন। মোল্লা জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলন উদ্বোধন করেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। সে সম্মেলনে ফণীভূষণ মজুমদার, জহিরুল কাইউমসহ অনেক নেতা সরাসরি বিরোধিতা করলেন মিজান চৌধুরীর। তরুণ নেতারা এতে সায় দিলেন। সে কাউন্সিলে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করা হয়েছিল অস্থায়ীভাবে। পরে আবদুল মালেক উকিল সভাপতির দায়িত্ব নেন। আবদুর রাজ্জাক হন সাধারণ সম্পাদক। তোফায়েল আহমেদ সাংগঠনিক সম্পাদক।
সেই সম্মেলনে মিজানুর রহমান চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘নেতা চলে গেলেও কর্মী রেখে গেছেন। যদি দেশে কোনো দিন বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের পক্ষেই সে সরকার গঠন সম্ভব।’ মিজান চৌধুরীর সেই বক্তৃতা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাহসী করেছিল। ভাবনা তৈরি করেছিল শেখ হাসিনাকে ঘিরে। আওয়ামী লীগের পরের সম্মেলন হয় ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি। সে সম্মেলনের এক বছর আগে থেকেই নেতারা দিল্লি আসা-যাওয়া শুরু করেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে অনুরোধ জানাতে থাকেন দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। অনুরোধ নিয়ে বারবার গিয়েছিলেন ডা. এস এ মালেক, জিল্লুর রহমান, আইভি রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, কোরবান আলী, আমির হোসেন আমু, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা। ১৯৮১ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনার নাম সভানেত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগকে এক রাখার জন্য, কর্মীদের উজ্জীবিত করতে এর কোনো বিকল্প ছিল না। সম্মেলনের পর আবার দিল্লি যান আবদুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আইভি রহমান, টাঙ্গাইলের আবদুল মান্নান, আবদুস সামাদ আজাদ, কোরবান আলী, জোহরা তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরী, গোলাম আকবর চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদসহ অনেক নেতা। আলাদাভাবে সবার আগে যান এস এ মালেক। তাঁরা নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন দেশে ফেরার তারিখ নিয়ে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সারা দেশে তখন একজনের জন্যই অপেক্ষা করতে থাকেন। সে অপেক্ষার অবসান ঘটে একই বছরের ১৭ মে।
শেখ হাসিনা হাল ধরার আগে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ছিল। টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা ছিল। এক কঠিন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৪। সে বয়সে এত বড় একটি দলের হাল ধরার বিষয়টি ছিল চ্যালেঞ্জের। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার কাছাকাছি নিয়ে যান। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হন। ১৯৮৬ সালের মতোই ১৯৯১ সালে ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে ক্ষমতায় আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ। অসীম ধৈর্য নিয়ে এক হাতে তিনি সব মোকাবিলা করেছেন। তাঁর একক কর্মতৎপরতায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। পাঁচ বছর না যেতেই ২০০১ সালে আবারও আওয়ামী লীগকে ঘিরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আওয়ামী লীগের পছন্দের সিইসি সেই চক্রান্তের জালে ছিলেন। সহায়তা পাওয়া যায়নি আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব শুরু হয়। সে তান্ডব থামাতে সেনাবাহিনী নামাতে হয়েছিল খালেদা জিয়ার সরকারকে। সারা দেশে চালানো হয় অপারেশন ক্লিনহার্ট। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সেনাবাহিনী ফিরে যায়। কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শেষ হয়নি। এবার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার প্রধান এ ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে এখন কারাগারে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর হাত থেকে আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ তাঁকে দিয়ে দেশের জন্য বড় কাজ করাতে চান বলে বাঁচিয়ে রেখেছেন মানুষের জন্য।
শুধু ২১ আগস্ট নয়, ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর ১৯৯৬ সালের আগে এবং ২০০১ সালের পর বারবার হামলার মুখে পড়েছিলেন শেখ হাসিনা। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। কারাবরণ করেছিলেন। কিন্তু চরম ধৈর্য ধরে তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। সামাল দিয়েছেন দলের ভিতর-বাইরের সব। সাদা চোখে অনেক বাস্তবতা এখন হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন। আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠন না হলে আওয়ামী লীগ ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালেই ক্ষমতায় আসত। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না। ড. কামাল হোসেন, মোস্তফা মহসীন মন্টুদের চ্যালেঞ্জ সামলিয়েছেন। আবদুর রাজ্জাককে ঘরে ফিরিয়ে এনেছেন। বিলুপ্ত করেছেন রাজ্জাকের বাকশাল। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় এবং পরে আমরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সারা দেশ সফর করেছি। মানুষের ভালোবাসা দেখেছি তাঁর জন্য। বাংলাদেশের মানুষের সেই ভালোবাসার জবাব দিচ্ছেন তিনি ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের চমক দিয়ে। তাঁর দর্শন, চিন্তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকে নতুন উচ্চতা দিয়েছে। নতুন মাত্রায় এনেছে। তৈরি করেছে আশার আলো। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে বেড়েছে প্রত্যাশা। পাকিস্তানের মতো দেশও এখন কথায় কথায় উপমা টানে বাংলাদেশের উন্নয়নের। প্রশংসা করে পদ্মা সেতুর। এ সাফল্য শেখ হাসিনার। এ সাফল্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক ধারার। বাংলাদেশের আগামী দিনের সুস্থ উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন স্বপ্ন। কতিপয় অর্বাচীনের বালখিল্য আচরণে এ অর্জন ব্যাহত হতে পারে না। শেখ হাসিনা নিজেও তা কাউকে করতে দেবেন বলে মনে করি না।
সব সময় অতি উৎসাহীরা সর্বনাশ করে আওয়ামী লীগের। দেশ-বিদেশে ক্ষুণ্ণ করে সুনাম। কতিপয় মন্ত্রী, এমপি, নেতা ও আমলার দায়ভার পুরো দল কেন নেবে? একজন এমপির কাজ মারধর করা নয়। দায়িত্বশীল সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দায়িত্ব কমিটি বাণিজ্য নয়। মাঠপর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীই দুঃখ করেন কমিটি বাণিজ্য নিয়ে। হতাশা ব্যক্ত করেন সম্মেলন না করা নিয়ে। আড়াই বছর ধরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কমিটি করার অনুরোধ রক্ষা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এ সংগঠন এখন যে লাউ, সেই কদু। ওমর ফারুক চৌধুরীর সমালোচনাকারীদের একজন বললেন, তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন ক্ষিপ্রগতিতে। বেলা শেষে সংগঠন করে ঘরে ফিরতেন। এখন ঠিক বিপরীতটা। সেদিন এক এমপি দুঃখ করলেন ছাত্রলীগ নিয়ে। বললেন, কমিটি নিয়ে দুই পক্ষ থেকেই টাকা নিচ্ছে তারা। এভাবে কমিটি বাণিজ্য আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়। গতিশীল নেতৃত্ব তৈরি না হলে, যোগ্য নেতা না এলে রাজনীতিতে সরকারি আমলাদের দাপট স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। চাকরিকালীন অনেক আমলাকে গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগার হতে দেখেছি। আবার বদলাতেও দেখেছি। অবসরে গিয়ে অনেকে নতুন হিসাব করেন। ভুলে যান চাকরিকালীন অতি আওয়ামী লীগ সাজার কথা। আবার কেউ সাজেন সুশীল। টক-শোয় কথা বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অথবা কোনো কমিশনে পাঁচ বছরের নতুন নিয়োগ না পেলে তারা ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। ভুলে যান চাকরিকালীন পাওয়ার কথা। আওয়ামী লীগ আমলানির্ভর হতে পারে না। আওয়ামী লীগ কামলানির্ভর রাজনৈতিক দল। এ দলে বারো রকমের মানুষের সমাবেশ আছে। কিন্তু মাঠের কর্মীদের বিষয়টি আলাদা। তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব নেই। তাঁরা কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধুর জন্য। কাজ করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য। কী পেয়েছেন কী পাননি সে হিসাব মেলান না। আর সে হিসাব মেলান না বলেই আওয়ামী লীগ টিকে আছে। টিকে থাকবে। শেখ হাসিনা যত দিন আছেন এ দলের চিন্তার কিছু দেখি না। তিনি এক হাতেই সামাল দিচ্ছেন সবকিছু। ভরসার কেন্দ্রবিন্দু একজনই।
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।