ইনসাইড থট

ইউক্রেন, আমাদের অসুবিধা এবং আমরা

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১৯ অগাস্ট, ২০২২


Thumbnail ইউক্রেন, আমাদের অসুবিধা এবং আমরা

ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৯৪৪, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের সাথে তার বৈঠকে বলেছিলেন, "পার্সিয়ান তেল আপনার। ইরাক ও কুয়েতের তেল আমরা শেয়ার করবো, আর সৌদি আরবের তেল, সেটা শুধু আমাদের”। এভাবেই পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য নিশ্চিত করে আসছে। জ্বালানি এবং গ্যাসের উপর তাদের সম্পূর্ণ আধিপত্য পশ্চিমা দেশগুলিকে আরও ধনী হতে সাহায্য করেছে এবং তারা দরিদ্র দেশগুলির উপর তাদের ইচ্ছা আরোপ করতে পারছে। অস্ত্র, গোপন কর্মকাণ্ড বা তাদের নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (যেমন বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ) মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের আধিপত্য নিশ্চিত করছে। যারাই তাদের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস করেছিল তাদের নির্মমভাবে নিষ্পত্তি করেছে এবং তাদের নির্বাচিত স্বৈরশাসক বা পুতুল শাসক চাপিয়ে দিয়েছে। অন্য অনেকের মধ্যে, আমি আপনাকে শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিচ্ছি: MI6 এবং CIA ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করে, যিনি তার দেশের জনগণের স্বার্থে তেল কোম্পানিগুলোকে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করেছিলেন। আজও গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার নামে এসব করা হচ্ছে। নৃশংসতা এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাপ্রাপ্ত দেশগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা জাতিসংঘের নেই। কে বা কোন ক্ষমতাশালীদেশ আমাদের মিত্র এবং বন্ধু হওয়া উচিত, কাকে আমরা সত্যিই বিশ্বাস করতে পারি, সে বিবেচনা করার আগে আমাদের অতীত ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে, আমাদের স্বাধীন ইচ্ছায় তা আলোচনা করতে হবে এবং বিজ্ঞতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

রাশিয়ার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে কিন্তু রাশিয়া প্রতিশোধ হিসেবে যখন ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে, তখন জোর গলায় অভিযুক্ত করে বলছে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। মজার ব্যাপার হল, মনে হচ্ছে পশ্চিম রাশিয়াকে শাস্তি দিতে পারে কিন্তু রাশিয়ার উচিত নীরব থাকা এবং তাদের পারস্পরিক কিছু করা উচিত নয়। যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমাগত গ্যাস এবং জ্বালানি সরবরাহের দাবি করছে এবং ক্রয় করছে, তখন একই সময় হুমকি এবং শাস্তি সহ নিশ্চিত করছে যেন কোনো উন্নয়নশীল দেশ তাদের অর্থনীতি ও নাগরিকদের বাঁচিয়ে রাখতে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস, জ্বালানি এবং খাদ্য না কিনে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে জাতিসংঘ কি কিছু করতে পারে বা পারছে?
 
আসুন আমরা তাদের ভন্ডামী দেখি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে ভারত বছরের শুরু থেকে রাশিয়ার উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ভাঙছে। তা নিয়ে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর মাইকেল পাত্র আমেরিকার ভন্ডামীর কথা বলছিলেন সম্প্রতি ঘটা রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানির উচ্চ-সমুদ্র স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করে। খোলা সাগরে একটি রাশিয়ান ট্যাঙ্কার একটি ভারতীয় জাহাজের কাছে তেল হস্তান্তর করে বলে জানা গেছে, যা পরে ভারতের ওড়িশা রাজ্যে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং অবশেষে সেই প্রক্রিয়াজাত তেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। তিনি বলেন “আপনি জানেন যারা রাশিয়ান তেল কেনেন তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট আমাদের তাই বলেছেন। মজার ব্যাপার হল, একটি ভারতীয় জাহাজ খোলা সমুদ্রে একটি রাশিয়ান ট্যাঙ্কার থেকে তেল তুলে নিয়ে গুজরাট রাজ্যের একটি বন্দরে নিয়ে আসে। তেল এই বন্দরে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত পাতনে পরিণত করা হয়। ভারতীয় জাহাজটি আবার মালবাহী বন্দর ত্যাগ করে এবং খোলা সমুদ্রে তার গন্তব্য নিউইয়র্কের দিকে চলে যায়। এভাবে যুদ্ধ কাজ করে আর এইভাবেই তারা নিজেরা নিষেধাজ্ঞা পালন করছে। মজার কথা হল বিদ্রূপাত্মকভাবে আমাদেরকে নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করতে বলছে”। তিনি জাহাজের নাম বলেননি। মার্কিন দূতাবাস কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
 
পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আমরা বিশাল আর্তনাদ শুনেছি যে কীভাবে রাশিয়ান যুদ্ধ আফ্রিকা ও এশিয়ার দরিদ্র মানুষকে হত্যা করছে খাদ্য ঘাটতি এবং দাম বৃদ্ধির কারণে। ইউক্রেনকে অবশ্যই আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলিতে খাদ্য রপ্তানি করার অনুমতি দিতে হবে যেখানে তাদের এটি অত্যন্ত প্রয়োজন। নিউইয়র্ক টাইমস তার পত্রিকায় লিখেছে “এখন পর্যন্ত প্রথম ১৪টি শস্য বোঝাই জাহাজ যেগুলি ইউক্রেন ছেড়ে গেছে তার একটিও খাদ্য সংকটের সম্মুখীন দেশগুলিতে যাচ্ছে না। এর মূলত কারণ তারা বাণিজ্যিক চুক্তির অধীনে কেনা শস্য বহন করছে।” সেসব শস্য, প্রধানত পশু খাদ্য ইউরোপের দেশগুলোতে গিয়েছে।
 
যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ১০% এর উপরে বেড়েছে, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম বেতন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবারগুলি জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের কারণে দারুন চাপের মধ্যে রয়েছে৷ এর আগে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে এই সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি ছিল। বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনুরূপ চিত্র উঠে আসছে। প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সে দেশগুলোতে নিম্ন আয়ের এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ভুগছে। কর দিয়ে সরকারের আয় বাড়াতে, মানুষকে বেশি মদ পানে উৎসাহিত করছে জাপান সরকার! একটি টাইম বোমা আগুনে ফেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি লক্ষ্য করেছি যে অনেক বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা নিয়ে কথা বলছেন। দুঃখজনকভাবে আতঙ্ক ও অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। হ্যাঁ আমাদের এই অনিশ্চয়তা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং সবাই মিলে একসাথে এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। তবে আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে, বাংলাদেশ কি বিশ্বব্যাপী নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে নিজেকে কোনো কষ্ট ছাড়াই দূরে রাখতে পারবে? আমাদেরকে, বিশ্বের অন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের মতো, সেই অসুবিধাগুলিকে মেনে নিতে হবে এবং একে অপরকে অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং বেচে থাকতে সাহায্য করতে হবে। আমরা কোভিডের সময় এটি করেছি, আমাদের এখনও কিছু সময়ের জন্য একই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
 
দেখা যাক সম্প্রতি আইএমএফের কর্মীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কী বলেছেন। গভীর বিশ্লেষণের পর তারা বলেছেন "বাংলাদেশ কোনো সংকটের মধ্যে নেই। বাংলাদেশ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। যদিও রিজার্ভ কমে গেছে, তবুও সে রিজার্ভ ৪-৫ মাসের সম্ভাব্য আমদানি মেটাতে যথেষ্ট বেশি। চলতি হিসাব অনুযায় ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ তুলনামূলকভাবে কম এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, সাম্প্রতিকতম আর্টিকেল IV পরামর্শে মূল্যায়ন করা হয়েছে যে বাংলাদেশের ঋণের দৃষ্টিভঙ্গি টেকসই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে; দেশে ঋণ সংকটের ঝুঁকি কম: সরকারি খাতের ঋণ থেকে জিডিপি অনুপাত প্রায় ৬ শতাংশ, বহিরাগত ঋণের সঙ্গে জিডিপি অনুপাত ১৪ শতাংশ। মহামারী থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ ভালো করেছে। পুনরুদ্ধার অনেক শক্তিশালী ছিল এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত ছিল। তবে, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে তা কিছু কঠিন হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত এবং বাংলাদেশ একটি আমদানি নির্ভর অর্থনীতি। যদিও দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করেছে, তবুও সেগুলি উচ্চতর এবং অস্থির থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার প্রভাব আমদানিতে পড়বে। বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে, অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের উপর চাপ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই এটি একটি উপযুক্ত মুহূর্ত যে বাংলাদেশ সরকার আগে থেকেই আইএমএফের সহায়তা চেয়েছে।" এর পর আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা কী বলবেন আমি শুনতে চাই।
 
কোভিড এবং ইউক্রেন দ্বন্দ্ব বিশ্বের অনেক দেশেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করছে - ধনী বা দরিদ্র। বাংলাদেশ এর থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেনি এবং পারবে না। কিন্তু দেশকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোড শেডিং, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, সবই মুদ্রাস্ফীতি ঘটাচ্ছে। কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারে, বাংলাদেশ এবং এর কর্তাব্যক্তিদের উচিত ছিল ভবিষ্যদ্বাণী করা যে এই সমস্যাটি আসছে এবং যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল যেমন বাংলাদেশ গ্যাস ও জ্বালানি অন্বেষণে বিনিয়োগ করা কারন বাংলাদেশে এটি খুঁজে পাওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে। যখন ধনী দেশগুলি উদীয়মান ক্রমবর্ধমান সমস্যা, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের সাথে মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে তার সীমাবদ্ধতা এবং ধনী দেশগুলির বহিরাগত হুমকির সাথে তার জনসংখ্যার কিছু কষ্ট না করে এ জাতীয় সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারে?

ইউরোপ এখনও রাশিয়া থেকে গ্যাস, জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে, তুরস্ক (একটি ন্যাটো দেশ), ভারত এবং চীন তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করে রাশিয়ার সাথে তাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে। রাশিয়ার জ্বালানি কেনার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার। পশ্চিমী ধনী দেশগুলো তা বন্ধ করতে কিছুই করতে পারছে না। কিন্তু গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার নামে সেই শক্তিগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশকে হুমকি দিচ্ছে এবং কষ্ট ও দুর্দশা সৃষ্টি করছে। জোসেপ বোরেল, ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে তাদের প্রভাব বজায় রাখার জন্য পশ্চিমা দেশগুলির একটি দ্বৈত নৈতিকতা এবং দ্বৈত ব্যবস্থা থাকা দরকার। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন উচ্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আধিকারিক তার সফর কালে আফ্রিকান দেশগুলিকে রাশিয়ার সাথে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বাণিজ্য করার সাহস না করার জন্য হুমকি দিয়েছেন। বাংলাদেশে আমরা দেখছি চাপ বাড়ছে এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কথা হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অফিস ও রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই এ নিয়ে কথা বলছে এবং চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশের সকল অসুবিধার এবং ঘাটতির সাথে সবাইকে বিবেচনা করতে হবে, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে, চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং জনসংখ্যার জীবন ও জীবিকা উন্নত করার সব চেষ্টা করছে। এমনকি অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যেও বাংলাদেশ এখনো লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সমর্থন করে।
 
পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে আঙুল তোলার আগে আমি আমাদের নিজেদের কিছু সুবিধাবাদি নাগরিকের দিকে আঙুল তুলতে চাই। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ সফর করছেন (আমি জানি না তিনি ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, মিশর, সৌদি আরব, মায়ানমার বা থাইল্যান্ড সফর করেছেন কি না) এবং আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতারা তার কাছে ছুটে যাচ্ছেন এবং গর্ব করে বলছেন বাংলাদেশ সরকার ও দেশ খারাপ। দেশে গণতন্ত্র বা কোনো ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। জাতিসংঘকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু আমি সেই লোকদের জিজ্ঞাসা করতে চাই যদি স্বাধীনতা না থাকে তাহলে তারা কীভাবে তার কাছে ছুটে যেতে পারল এবং গ্রেপ্তার বা জেলে না গিয়ে নির্দ্বিধায় যা বলতে চায় তা বলার সুযোগ পেল! আমি জানি না মিশর বা সৌদি আরব বা পাকিস্তানে তারা তা করতে পারত কিনা। হ্যাঁ, আমি একমত যে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার থাকা উচিত, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে হবে, আমাদের কিছু ঘাটতি আছে এবং আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। তবে আমি বলবো, অনেক ইউরোপীয় এবং আমেরিকায় একই উন্নতি ঘটতে হবে, তাদের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।
 
আমি একটি সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের সাথে প্রথম আলো প্রতিবেদকের সঙ্গে। কোন পরিবর্তন ছাড়াই তিনি যা বলেছেন ঠিক তাই লিখছি: “হাফিজ উদ্দিন: বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে। কিন্তু যারা এই সাংগঠনিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মাঠ গরম করতে পারে, তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তারা সেই শক্তি প্রয়োগ করতে পারছে না। পরিস্থিতির কারণে তারা শক্তিমান হবে—এখন যাদের দুর্বল মনে হচ্ছে, রাস্তায় নামতে কম্পমান মনে হচ্ছে। এই সরকার সবই করতে পারে, কিন্তু অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে পারবে না—যদি আইএমএফ টাকা না দেয়। বৈশ্বিক কারণে দ্রব্যমূল্য যদি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন আর বিএনপিকে মোটিভেট করতে হবে না। সাধারণ মানুষ নিজের গরজে মাঠে নামবে হতাশা থেকে। যখন মানুষের পেটে ভাত থাকবে না, তখন সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তখন বিএনপি কী বলল, ওটার কোনো দরকার হবে না। সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি মানুষ নেমে যাবে। সে সময়ে সাধারণ মানুষের রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে সরকারের পতন হতে পারে। তখন এর বেনিফিশিয়ারি তো বিএনপিই হবে।”

এই সাক্ষাৎকারটি প্রতিফলিত করে যে কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধিজীবী কী ভাবছেন এবং কীভাবে তারা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন এবং একটি কর্দমাক্ত মাঠে তারা খেলার চেষ্টা করছেন। সরকার পতনের জন্য এই মানুষগুলো কি ভাবছে বা করবে। তারা, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, দেবপ্রিয়রা, প্রথম আলো এবং গ্যাং কি সত্যিই দেশ এবং এর জনগণের কথা ভাবেন নাকি তারা কেবল ক্ষমতা, প্রভাব এবং পদের লোভী? মনে হচ্ছে বহিরাগত শক্তি দেশের অগ্রগতি ঠেকাতে তাদের সাহায্য করা, দেশের উপর মঞ্জুরি আরোপ করা এবং আইএমএফ যেন ঋণ না দেয় তা নিশ্চিত করার জন্য তারা সবকিছুই করবে।
 
তবুও আমি খুব আশাবাদী কারণ আমাদের একজন দূরদর্শী নেত্রী, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলে। আমাদের উন্নতি এবং এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তার রাজনৈতিক দক্ষতা এবং সততাকে কখনই অবমূল্যায়ন করবেন না। তিনি অতীতের অনেক উত্থান এবং সমস্যা থেকে বেঁচে ছিলেন, এমনকি তার জীবন হুমকির মুখ থেকেও। তবুও তিনি কখনো হাল ছাড়েনি। আসুন তার উপর বিশ্বাস রাখি। তিনি আমাদের এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে নেতৃত্ব দেবেন এবং আমরা এগিয়ে যাব। অনেক মির্জাফর অতীতে চেষ্টা করেছে, এখনও চেষ্টা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তাদের আত্মসম্মান নেই, তাদের দেশের মঙ্গল নিয়ে চিন্তা নেই, তারা আমরা কে বা কী হতে পারি তা নিয়ে গর্বিত নন। তারা শুধু বিশ্বাস করে ক্ষমতায়, আর তা উপভগের। অতীতে আমরা তাদের বন্ধ করেছি, এবং আমরা এখনও করব। আমি অন্য সকলের সাথে বরাবর দাঁড়িয়ে বলবো আমি আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি, ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে একজন গর্বিত বাঙালি এবং বাংলাদেশী। অতীতের মতো আমরা বর্তমানের সমস্ত অসুবিধা কাটিয়ে উঠব এবং সফল হব।

ইউক্রেন   রাশিয়া   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন