ইনসাইড থট

জাতিসংঘে জাতির জনক

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২


Thumbnail জাতিসংঘে জাতির জনক

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৪৮ বছর পূর্ণ হয়েছে এ বছর। এই উপলক্ষে মনে পড়ছে, ১৯৭৪-এর ২৫ সেপ্টেম্বরের কথা। যেদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক অনন্য ও মহত্তর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। জাতির জনকের সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে যোগদানের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। বছর ঘুরে দিনটি এলে অনুপম সেই স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা মানসপটে ভেসে ওঠে। আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতির জনকের দৃষ্টান্ত অনুসরণে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা প্রদান করেছেন, এবারও ২৩ সেপ্টেম্বর ৭৭তম অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। প্রিয় মাতৃভাষার প্রতি আমাদের এই প্রগাঢ় ভালোবাসার ফলেই ১৯৫২-এ সংঘটিত মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ দিবস ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ রূপে উদযাপিত হয়। এর শুভ উদ্বোধনটি হয়েছিল মূলত মানব জাতির সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণের মধ্য দিয়ে।

আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭৪-এর ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার, ঐতিহাসিক এই দিনটির সূচনা হয়েছিল বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্ররূপে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়। এই ঘোষণাটি শোনার অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘আমি সুখী হয়েছি যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘে তার ন্যায্য আসন লাভ করেছে। জাতি আজ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তাদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। সেই শহীদদের কথা জাতি আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।’ স্বাধীন বাংলাদেশের এই অর্জন মূলত বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্যেরই প্রতিশ্রুতি। এই শুভসন্ধিক্ষণকে সামনে রেখেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানে বঙ্গবন্ধুর সফরসূচি ঠিক করা হয়। সেই হিসেবে ২৩ সেপ্টেম্বর, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে আমরা ঢাকা ত্যাগ করি। সর্বমোট ২৪ সদস্যের সফরসঙ্গীর মধ্যে ছিলেন- পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. নূরুল ইসলাম, গ্যাস ও ওয়েল ডেভলপমেন্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. হাবিবুর রহমান, এম আর সিদ্দিকী এমপি, আসাদুজ্জামান খান এমপি, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অনেকে। লন্ডনে যাত্রাবিরতির পর ঐদিন রাতে প্যান অ্যামের নিউইয়র্ক ফ্লাইটে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায় আমরা কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করি। বিমানবন্দর থেকে আমাদের হোটেল ‘ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া’য় নিয়ে যাওয়া হয়।

ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হোটেল কক্ষে দর্শনার্থীদের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিবেশনে আগত প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ লোকজনও বঙ্গবন্ধুর দর্শনপ্রার্থী ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার হোটেল কক্ষে এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর আসে প্রতীক্ষিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সদ্য সদস্যপদপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা। বক্তৃতা প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম যখন ঘোষিত হয়, তখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মুহুর্মুহু করতালিতে চারদিক মুখরিত। মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে চতুর্দিকে তাকিয়ে পরিষদে সমাগত বিশ্বনেতৃবৃন্দকে সম্বোধন করে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সর্বোচ্চ সংস্থা জাতিসংঘকে ‘মানব জাতির মহান পার্লামেন্ট’ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুই প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘শান্তি ও ন্যায়ের জন্য পৃথিবীর সব মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বিমূর্ত হয়ে উঠবে এমন এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ আজ পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের সনদে যেসব মহান আদর্শ উৎকীর্ণ রয়েছে তারই জন্য আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ চরম ত্যাগ স্বীকার করেছে।’ সে দিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন, আলজেরিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল আজিজ বুতাফ্লিকা। তাঁকে আমি ইতোপূর্বেই কাছ থেকে দেখেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে ওআইসি সম্মেলনে নেওয়ার জন্য ১৯৭৪-এর ২২ ফেব্রুয়ারি আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ারে বুমেদিনের বিশেষ বিমান নিয়ে যে পাঁচজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছিলেন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। বক্তা হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পরিষদের সভাপতি স্বীয় আসন থেকে উঠে এসে বঙ্গবন্ধুকে মঞ্চে তুলে নিয়েছিলেন। পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৪৫ মিনিট বক্তৃতার শেষে সভাপতি নিজেই যখন দাঁড়িয়ে করতালি দিচ্ছেন, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ বিপুলভাবে করতালি দিয়ে আলিঙ্গন করে অভিনন্দিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। অভাবনীয় সেই দৃশ্য। নিজ চোখে না দেখলে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিশ্ব নেতাদের ছিল গভীর শ্রদ্ধা। আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিমালয়সম উচ্চতায় আসীন ছিলেন তিনি। আমার মনে পড়ে, অধিবেশনে আগত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যগণ আমাদের কাছে এসে বলেছিলেন, ‘সত্যিই তোমরা গর্বিত জাতি। তোমরা এমন এক নেতার জন্ম দিয়েছ, যিনি শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, এশিয়ার নেতা নন; তিনি সমগ্র বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা।’

বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই অনুরোধ করা হয়েছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইংরেজিতে বক্তৃতা করবেন।’ কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই।’ সিদ্ধান্তটি তিনি আগেই নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলা বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করার গুরু দায়িত্বটি অর্পিত হয়েছিল ফারুক চৌধুরীর (প্রয়াত) ওপর। তিনি ছিলেন লন্ডনে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার। পরবর্তীকালে পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন। ছুটিতে তিনি দেশে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ, ‘ফারুক, তোমার ছুটি নাই। তোমাকে এখানে কাজ করতে হবে।’ কাজগুলো হচ্ছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ; বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করতে প্রতিনিধিদল নিয়ে বার্মায় গমন। বার্মা থেকে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু ফারুক চৌধুরীকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তোমার লন্ডন যাওয়া চলবে না। তুমি আমার সঙ্গে নিউইয়র্ক যাবে এবং জাতিসংঘে আমি বাংলায় যে বক্তৃতাটি করব, তাৎক্ষণিকভাবে তুমি সেই বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করবে।’ ফারুক ভাই সুন্দর ইংরেজি বলেন ও লিখেন। প্রথমে ফারুক ভাই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তখন পরিস্থিতি সহজ করতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রিহার্সেল দাও। বক্তৃতা ভাষান্তরের সময় ভাববে যেন তুমিই প্রধানমন্ত্রী। তবে, পরে কিন্তু তা ভুলে যেও।’

মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা প্রদানের বঙ্গবন্ধুর এই সিদ্ধান্তটি ছিল তাঁর সমগ্র জীবনের স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক পরিণতি। সে দিন বক্তৃতারত বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকিয়ে কেবলই মনে হয়েছে, তিনি যেন বহুযুগ ধরে এমন একটি দিনের অপেক্ষায় নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ, ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু মুজিব ছিলেন সর্বাগ্রে। তাঁর নেতৃত্বেই সেদিন অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী ছাত্রসমাজ সফল ধর্মঘট পালন করেছিল। এরপর ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি, মহান ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তিনি কারাগারে বন্দী অবস্থাতেই আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বায়ান্নের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘১৯৪৮ সালে ছাত্ররাই এককভাবে বাংলা ভাষার দাবির জন্য সংগ্রাম করেছিল। এবার আমার বিশ্বাস ছিল, জনগণ এগিয়ে আসবে। কারণ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করতে পারলে তাদের দাসত্বের শৃঙ্খল আবার পরতে হবে’ (পৃষ্ঠা-১৯৭)। সংগ্রামী এই বোধ থেকে প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিব মাতৃভাষার শৃঙ্খল মোচনে অনশনরত অবস্থায় দৃপ্ত অঙ্গীকারে স্বীয় অভিপ্রায় ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘ঠিক করেছি জেলের বাইরে যাব, হয় আমি জ্যান্ত অবস্থায় না হয় মৃত অবস্থায় যাব। Either I will go out of the jail or my dead body will go.’ (পৃষ্ঠা-১৯৭)। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় এমনি মরণপণ অঙ্গীকার ছিল তাঁর। এই প্রতিজ্ঞার বলে বলিয়ান হয়েই জাতিসংঘের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন নিজ ইচ্ছার কথা; তথা মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা প্রদানের কথা।

মাতৃভাষায় বঙ্গবন্ধু মুজিবের এই ঐতিহাসিক বক্তৃতার পর অধিবেশনে আগত পাঁচটি মহাদেশের প্রতিনিধি এবং সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে বহুল পঠিত জাতিসংঘের ‘ডেলিগেট বুলেটিন’ বঙ্গবন্ধুকে ‘কিংবদন্তির নায়ক মুজিব’ বলে আখ্যায়িত করে। বুলেটিনটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিক্রিয়া পত্রস্থ করা হয়। বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, ‘এ যাবৎ আমরা কিংবদন্তির নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শুনেছি। এখন আমরা তাঁকে কাজের মধ্যে দেখতে পাব।’ জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পর্কে বলা হয়, ‘বক্তৃতায় ধ্বনিত হয়েছে মুজিবের মহৎকণ্ঠ।’ জাতিসংঘের মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়াল্ডহেইম তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আমি আনন্দিত ও গর্বিত। বক্তৃতাটি ছিল সহজ, গঠনমূলক এবং অর্থবহ।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভূয়সী প্রশংসা করে বুলেটিনটির ভাষ্য ছিল, ‘অতীতের অনগ্রসরতা, যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রতিকূল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ ফলশ্রুতি হিসেবে যে অসুবিধাজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে তা বাংলাদেশের নেতা মুজিব তাঁর বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।’ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস কালাহান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব তাকে মুগ্ধ করেছে। বাস্তবিকই তিনি এক শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব।’ বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যান এল সেøন্ড বলেন, ‘শেখ মুজিবের মহৎকণ্ঠ আমি গভীর আবেগ ভরে শুনেছি।’ যুগোশ্লাভিয়ার উপ-রাষ্ট্রপতি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. মিনিক জাতির জনকের বক্তৃতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘অতীতের অনগ্রসরতা, যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রতিকূল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ ফলশ্রুতি হিসেবে যে অসুবিধাজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে তা বিশেষ গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে।’

এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতিজনিত সমস্যা এবং বাংলাদেশে সর্বনাশা বন্যার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনায় আমার সৌভাগ্য হয়েছিল অংশগ্রহণের। কাছ থেকে দেখেছি অসাধারণ রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞায় জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে স্বদেশের প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার পর জাতিসংঘ বাংলাদেশের ত্রাণকার্যে ৭০ লাখ ডলার সহায়তা প্রদান করেছিল এবং উপ-মহাসচিব ড. ভিক্টর উমব্রাইখটকে বাংলাদেশের সমস্যার প্রতি বিশেষ নজর রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সম্মানে নিউইয়র্ক সিটি হলে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় নিউইয়র্ক মেয়র বঙ্গবন্ধুকে নগরীর চাবি উপহার দেন এবং বলেন, ‘এই উপহার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণের প্রতি আমেরিকার জনগণের শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্বের নিদর্শন।’ প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা আত্মদান করেছেন সেই সব শহীদের আর সাড়ে সাত কোটি বাঙালির পক্ষ থেকে এই চাবি গ্রহণ করে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন।’ বক্তৃতায় তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমেরিকার জনগণ যেভাবে সমর্থন জুগিয়েছিল আমি চিরকাল তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করব।’ নিউইয়র্ক নগরীর মেয়রের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘নিউইর্য়ক নগরীতে জাতিসংঘের সদর দফতর অবস্থিত বিধায় এই নগরীর বিশ্বের সব দেশের প্রতি এক বিশেষ দায়িত্ব আছে।’

তারপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে অংশগ্রহণের উদ্দেশে অক্টোবরের ১ তারিখ সকাল ১০টায় আমরা নিউইয়র্ক থেকে ওয়শিংটনের অ্যান্ড্রুজ বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করি। ওয়াশিংটনে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতির অতিথিশালা ব্লেয়ার হাউসে। বেলা ১১টায় ব্লেয়ার হাউসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম স্যাক্সবি। বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী উভয়পক্ষের সফল বৈঠকের পর বিকাল সাড়ে ৪টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে মিলিত হন। বিকাল ৫টায় সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা। পরদিন অক্টোবরের ২ তারিখ সকালে সিনেটর কেনেডি ও জর্জ ম্যাকভার্ন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধুর সম্মানে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির পক্ষে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর এই সফর ছিল অসংখ্য কর্মসূচিতে ঠাসা। সদ্য-স্বাধীন একটি দেশের জাতির জনকের আগমনকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্ক নগরীর বিদ্ব্যৎ সমাজে বিশেষ ঔৎসুক্যের সৃষ্টি হয়েছিল। মনে পড়ে, হোটেল ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়ার রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছি। আমার সামনেই উপবিষ্ট একটি পরিবার। পরিচয়ের শুরুতেই তারা আমায় জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ?’ আমি বললাম, বাংলাদেশ থেকে। আমাকে অবাক করে দিয়ে তখন তাদের মুখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি কথাই উচ্চারিত হয়, ‘ও, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব! তিনি একজন মহান নেতা।’ পরিচয় দিয়ে বললাম, আমি তাঁর পলিটিক্যাল সেক্রেটারি। কিন্তু তারা বিশ্বাস করতে পারলেন না। আমার মতো অল্পবয়সী একজন কী করে বিশ্বখ্যাত নেতা শেখ মুজিবের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি হতে পারে! কেবল বললেন, ‘আর ইউ শিওর?’ আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম। তখন তারা বলেছিলেন, ‘আমরা মুজিবকে শ্রদ্ধা করি।’ তারপর যখন বঙ্গবন্ধুকে আমি ঘটনাটি ব্যক্ত করি তিনি বললেন, ‘তাদের নিয়ে এসো।’ তাদের বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে এলাম। অপার বিস্ময়ে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে আমাকে অভিবাদন জানিয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপে মগ্ন হলেন। শুধু বাঙালির কাছে নয়, বিদেশিদের কাছেও বঙ্গবন্ধু পরম শ্রদ্ধার আসনে আসীন। যে নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না; সব রকমের ভয়-ভীতি লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে জীবনের-যৌবনের ১৩টি বছর যিনি কারান্তরালে কাটিয়েছেন; বাঙালির জাতীয় মুক্তির প্রশ্নে যিনি কোনো দিন আপস করেননি; ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন; বারবার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি আমার মানুষের অধিকার চাই’; যিনি সমগ্র বিশ্বের নির্যাতিত-শোষিত মানুষের মহান নেতা, তাঁকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখবেন-এটাই স্বাভাবিক। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৪৮ বছরপূর্তির এই বছরটিতে পেছন পানে চাইলে দেখি- কেবল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই নয়, সেই সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যস্বাধীন একটি দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, শতাধিক দেশের স্বীকৃতি আদায় এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে তথা জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন, কমনওয়েলথ, ওআইসি এবং মানবজাতির সর্বোচ্চ পার্লামেন্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ও সদস্যপদ অর্জনে বঙ্গবন্ধুর নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতিসংঘে   জাতির জনক   তোফায়েল আহমেদ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মা জীবনের প্রথম এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক


Thumbnail

একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা। হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত, ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।

আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবস। দিনটি কীভাবে, কবে...

কোথা থেকে এলো, কেন পালন করা হয়, এর গুরুত্ব কী, তা হয়তো অনেকের অজানা। দিনটি পালনে রয়েছে এক ইতিহাস। ১৯০৭ সালের ১২ মে আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরে প্রথমবার ‘মাদার্স ডে’ বা মা দিবস পালিত হয়। ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন এবং ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা এবং তাদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করতেন। অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। একদিন মেয়ের সামনেই প্রার্থনা করেছিলেন, “যেন কেউ একটা দিন মায়েদের জন্য উৎসর্গ করেন”। মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় তার মেয়েটির। অ্যানের মৃত্যুর পর সেই দিনটিকে সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তার মেয়ে। আর এভাবেই মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে মা দিবস। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। এর পর থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।

‘মা’ কথাটি সবচেয়ে ছোট, অথচ সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। মায়ের মতো এত মধুর আর আবেগী শব্দ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। যে শব্দটিতে জড়িয়ে আছে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, প্রতিটি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও প্রেম স্বার্থহীন, সীমাহীন। সন্তানের জন্য মা বরাবরই নিঃস্বার্থ একজন মানুষ। মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। জীবনে সবচেয়ে বড় শ্রমজীবী হচ্ছেন মা, যার কর্মবিরতি নাই, মজুরি নাই, দাবি নাই, শর্ত নাই, স্বার্থ নাই, তিনি শুধু শ্রম দিয়েই যাচ্ছেন। তারই নাম মা। নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন, সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন। মা সব রোগের চিকিৎসক। মায়ের কাছে সবকিছু চাওয়া যায়। ‘মা’ই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর কাছে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায়। মা সবচেয়ে সেরা রাঁধুনি। মায়ের হাতের রান্না পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার। মা হলো সন্তানের প্রথম বন্ধু, সেরা বন্ধু, চিরকালের বন্ধু। মায়ের মতো পরম বন্ধু এ জীবনে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব মা দিবস

গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকেই সন্তানের সঙ্গে একজন মায়ের নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়। বন্ধনটি আরও গভীর হয় যখন তিনি সন্তানকে তাঁর জঠরে মধ্যে বহন, উষ্ণতা, পুষ্টি এবং সুরক্ষা প্রদান করতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় একজন মা তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন, যা তুলনাহীন। এই গভীরতা অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এরপর শিশুটি যখন ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীতে আসে, তখন মা হয়ে যান তার প্রথম এবং সাবর্ক্ষণিক পরিচর্যাকারী। সন্তানের জন্য অগণিত রাতজাগা, সারাক্ষণ যত্ন নেওয়া, খাওয়ানো এবং আদরের আলিঙ্গনের মাধ্যমে তিনি সীমাহীন ধৈর্য প্রদর্শন করেন।

প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন একজন মা। এজন্য শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী। এই ঋণ শোধ করার কোনো বিকল্প নাই। মা হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে পারেন কিন্তু তাঁর স্থান অন্য কেউ নিতে পারে না। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।

মাকে নিয়ে কিছু অসাধারণ উক্তি: মাকে নিয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাজারো অসাধারণ উক্তি করেছেন।

(১) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”

(২) রবীন্দ্রনাথের গানে, “মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে ..., সে যে জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায়, সেই যে আমার মা, বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা..., প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয়

দুঃখের ঘরে, সেই যে আমার মা সেই যে আমার মা। বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা, সেই যে আমার মা”।

(৩) আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়”।

(৪) বিখ্যাত ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন, “আমার মা মনে করেন আমিই সেরা, আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি”।

(৫) জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন আমার মা”। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তাঁরই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল।

(৬) মাইকেল জ্যাকসন বলেছেন, “আমার মা বিস্ময়কর, আর আমার কাছে উৎকৃষ্টের আরেক নাম”।

(৭) কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা”।

(৮) কবি কাদের নেওয়াজ বলেছেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর, তিন ভুবনে নাই...”।

(৯) কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “যেখানেতে দেখি যাহা, মা এর মত আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই, মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সেতো, আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই”।

(১০) শিল্পী “ফকির আলমগীর এর ভাষায়, “মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো”।

ইসলামে মায়ের সম্মান ও অধিকার : ইসলাম মাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম করা হয়েছে মাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তাই জান্নাত পাওয়ার আকাক্সক্ষাকারী কোনো সন্তানই মাকে এড়িয়ে যেতে পারে না।

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমার পরওয়ারদেগার আদেশ করিয়াছেন, তোমরা তাহাকে ব্যতীত অন্য কাহারও এবাদত করিও না এবং তুমি মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও, যদি তোমার সম্মুখে তাঁহাদের একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাহাদিগকে উহ পর্যন্তও বলিও না, আর তাঁহাদিগকে ধমক দিও না এবং তাঁহাদের সঙ্গে খুব আদবের সহিত কথা বলিও। এবং তাঁহাদের সম্মুখে করুণভাবে বিনয়ের সহিত নত থাকিবে, আর এইরূপ দোয়া করিতে থাকিবে, হে আমার পরওয়ারদেগার! তাঁহাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেরূপ তাহারা আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন শৈশবকালে” (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪)।

আল্লাহ আরও বলেন, “আমি মানুষকে তাহার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়াছি, তাহার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করিয়া তাহাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছে এবং তাহার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, যেন তুমি শোকর কর আমার” (সুরা লোকমান-১৪)।

অন্য এক আয়াতে আছে, “আর তোমরা আল্লাহতায়ালারই এবাদত কর, এবং তাঁহার সহিত কাহাকেও শরিক করিও না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও” (সুরা-নিসা-৩৬)। পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে হাদিসেও বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক, মা-বাবার দোয়া তাঁর সন্তানের জন্য; দুই, মুসাফিরের দোয়া ও তিন, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে” (আবু দাউদ)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম” (ইবনে মাজাহ-মিশকাত)।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, “যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন” (বায়হাকি-মিশকাত)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন তোমার মা; সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা (বুখারি ও মুসলিম)।

একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রসুল (সা.) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরেই মা-বাবার অধিকার।

রসুল (সা.)-এর জমানায় বিখ্যাত এক আশেকে রসুল ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীজির কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.), আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ। এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি ও বেশি ফজিলতের কাজ।’

মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব : সন্তানের সব সময় মনে রাখা উচিত, মায়ের ত্যাগের কারণেই সে আজ সে এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছে। যদি সে মাকে ভুলে যায়, কষ্ট দেয় বা অবহেলা করে- তাহলে সবই মিছে। সন্তানের পর্বত সমান সফলতা তখন মূল্যহীন। কিন্তু অতি দুঃখের সঙ্গে লিখতে হচ্ছে, সেই মহান মায়ের প্রতি অনেক সন্তান আজকাল উদাসীন, অনেকে বেপরোয়া। এমনও শোনা যায়, সন্তান তার মাকে প্রহার করছেন, ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন, জঙ্গলে মাকে ফেলে এসেছেন, নিজে সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে মাকে রেখেছেন রান্নাঘরে।

এমনও দেখা যায়, পিতা-মাতাকে সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। তারা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ স্ত্রী-সংসার নিয়ে নিজেরা বেশ আরাম-আয়েশে থাকছে। তাদের পরিবারে বাবা-মা যেন বোঝা। যে সন্তানকে আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করলেন, সেই সন্তান কীভাবে তার মায়ের অবদানকে ভুলে যায়? নাড়িছেঁড়া ধন একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই এসব কাম্য নয়। এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে; জমিন অভিশাপ দেয়। নিশ্চয় কঠিন কেয়ামতের দিন সেই সন্তানকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কী উপায় হবে সেদিন?

মা শ্রদ্ধার আধার, স্নেহের কান্ডারি। সব ধর্মেই মা আশীর্বাদস্বরূপ। তাই সন্তানের সর্ব প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাকে অভিষিক্ত করা। সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মায়ের সঙ্গে সর্বদা সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করতে হবে। তাঁর সঙ্গে কখনো কর্কশ ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। মায়ের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ। মায়ের আদেশ পালন করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা সন্তানের পবিত্র কর্তব্য। মায়ের ঋণ কোনো দিন কখনো কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হলো মা। তাই আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা আমাদের কোনো আচরণে যেন মাকে কষ্ট না দিই। যাদের মা এখনো বেঁচে আছেন, সেই মায়ের জন্য জীবনের সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করি। মা-বাবার সেবা-যত্ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইর পিতা-মাতাকে ভালো রাখুন। তাদের উত্তম সেবা করার তৌফিক দান করুন।

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই


Thumbnail

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। শতভাগ বাম আদর্শে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আমরা কখনোই এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু সেই ৬০ এর দশক থেকে রণ ভাইকে আমি চিনি। এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য।

বর্তমান যুগে বাম আদর্শের বা যেকোন আদর্শে শতভাগ বিশ্বাসী নির্ভেজাল লোক পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেখানে আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই। তিনি যে লেখাগুলো লিখতেন তার অধিকাংশ লেখাগুলো আমি পড়েছি। তার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, লেখার ধরণ প্রত্যেকটা জিনিসে বাম রাজনীতি এবং বাম আদর্শ ফুটে উঠতো। 

তিনি এমন একটি সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যখন বাংলাদেশে বাম দল কবরে যাওয়ার পথে। অথচ আমাদের দেশে এখনই বামদলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা, চরম ডানপন্থি দলগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য তারা চ্যালেঞ্জ। আবার ডান দলগুলোর মধ্যে যাদের মডারেট ডান বলা যায়, তারাও আজ শক্তিহীন। 

একমাত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যম পন্থায় চলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, আর মডারেট ডান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনপির মতো যে দলগুলো আছে তারাও আজ নেই বললেই চলে। এমন একটা ক্রান্তিকাল যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলকে সামনে নানা যারা চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী হবে না। ঠিক সেই সময় একজন আদর্শবান রনো ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রনোভাইদের মতো যারা সত্যিকার বাম আদর্শে বিশ্বাস করতেন এমন ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। রনো ভাই ছিলেন রাজনৈতিক লড়াকু সৈনিক এবং পদ পদবীর কোন লোভ তার মধ্যে ছিল না। সবসময় আত্ম প্রচার থেকে দূরে থাকতেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আদর্শবান বাম সৈনিকের চলে যাওয়া। 

যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদেরকে আমি বলবো, আপনারা রনো ভাইয়ের বিকল্প হতে পারবেন না, কিন্তু সকলে আপনারা এক হয়ে, রনো ভাইয়ের মতো আদর্শিক হয়ে এখনই যদি বাম দলকে সংগঠিত না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবে তালেবানরা। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগকে কি তালেবানের সাথে যুদ্ধে নামাবেন নাকি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিজ দায়িত্বে বাম দলকে সুসংগঠিত করবেন।


সিপিবি   হায়দার আকবর খান রনো  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দেশের গণতন্ত্রকে অনুসরণ করবে অন্যরা


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।

কদিন আগে স্টিভেন লেফেস্কি এবং ডেনিয়েল জিব্লাটের লেখা ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ বইটি পড়ছিলাম। বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এবং দেশে দেশে বহুল পঠিত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলার হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কীভাবে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।

প্রথমেই যেটি বলা হয়েছে তা হলো, সংবিধানকে গণতন্ত্রবিরোধী সরকার মানে না সংবিধানকে কীভাবে দূরে সরিয়ে দেশ শাসন করা যায়, সেই চেষ্টা করে।

বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন হওয়ার ফলে সংবিধানবহির্ভূত ঘটনা শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটেনি। বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন, সেদিনই কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সূচনা শুরু হয়। সেদিনকে বলা চলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুভ যাত্রার দিন’। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন এবং সর্বশেষ তিনিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। তার আশার পরেই কারফিউ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন সামরিক একনায়ক জিয়া।

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক

গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য যেসব কাজ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনকে যে কোনো প্রকারে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিয়মিত নির্বাচন করে চলেছেন। একনায়কতন্ত্র যে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তার কোনো চিহ্ন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বিরোধী দল যত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন, শেখ হাসিনা ততই গণতন্ত্র সুরক্ষার চেষ্টা করেছেন।

বইটিতে বলা হয়েছে, এসব একনায়ক সরকার কিছু কিছু সংগঠনকে বন্ধ করে দেয়। যেমন—মানবাধিকার কমিশন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ মানবাধিকারকে আরও উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন তারই সৃষ্টি। এ ছাড়া এসব একনায়ক রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা যায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করেননি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বইটিতে আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে, সরকার দুর্বল হতে থাকলে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানকে বাতিল করে অথবা স্থগিত করে দেশ চালায়। সে হিসেবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা খুব সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী এবং পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এখানে কোনো ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে না, আজ পর্যন্ত ঘটেনি এবং ঘটারও সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন শেখ হাসিনার আরেকটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর ফলে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ

এ বইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, যে কোনো নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হৈচৈ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে হৈচৈ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয় সবাই এ নির্বাচন গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে তাদের জন্য এ উদাহরণগুলো দিয়ে বলা যায় দুর্বল নয় বরং বাংলাদেশে দিন দিন গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। বলা যায়, দেশ এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারগুলো সরকার পূরণ করে চলেছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকার তা পূরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পথশিশু এবং বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে করা হচ্ছে আত্মনির্ভর। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। আর এ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ গত বছর ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রচার করে তারাই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে তার সূচক দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সূচক নেই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। আর এতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র এ আন্দোলনের বিষয়টি অন্যভাবে দমন করছে। শিক্ষার্থীদের অমানবিক কায়দায় নিপীড়ন করা হচ্ছে।

আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এবং র‌্যাবের প্রতি আমার একটি আবেদন থাকবে, তারা যেন আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্টাইল অনুসরণ না করে। কেননা তাদের এ স্টাইল যদি আমরা ফলো করি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বাসী এবং আপনাদের কাছে শ্রদ্ধায় মাথানত করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, আমাদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জীবন দিচ্ছেন। আমি জানি যে, আপনাদের জীবন অমূল্য, অনেকে এর জন্য তাদের সংসার ত্যাগ করছেন। আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর দায়িত্ব হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপনাদের দেখছেন। তাই কষ্ট হলেও আপনারা আপনাদের পথে থাকেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে অনেকের। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে না। আমরা তাদের কিছুতেই অনুসরণ করতে পারি না এবং অনুসরণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারি না। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে এবং আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বে মডেল হব। যেমনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাক্সিনেশনে আমরা মডেল হয়েছি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও বিশ্বে মডেল হবেন। এজন্য আমাদের কাউকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।

লেখক: সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী   গণতন্ত্র   মানবাধিকার   কমিউনিটি ক্লিনিক   দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক


Thumbnail

আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ করছেন বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতিও শেখ হাসিনার দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা দর্শন। এবং এর লম্বা প্রভাব রয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আসলে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। এই যে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তাকে হত্যার করার হুমকি থাকলেও তিনি দেশে এসেছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আমি সেটা মোকাবিলা করার জন্য দেশে যাব এবং তিনি দেশে এসেছেন। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে আবার পিছিয়ে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। তবে আল্লাহ একটা রহমত আছে তাঁর প্রতি। আল্লাহ মনে হয় তাকে সব সময় চাঁদর দিয়ে ঢেকে রক্ষা করেন অত্যন্ত বাংলাদেশের জন্য। না হলে বারবার তার ওপর যে রকম আঘাত এসেছে তাতে উনার বাঁচার কথা নয়। 

বাংলাদেশে বিরোধী দল বলতে এখনো জনগণ বিএনপিকেই বুঝে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ জাতীয় পার্টি এবং বাম দল তো এখন নাই। জাতীয় পার্টি মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সেখানে হয়তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেউ কেউ থাকবেন। কিন্তু যারাই হোক না কেন তারা আর কেউ বিএনপির থাকবে না। বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জন করার ফলে দল হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পথে। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব শঙ্কিত অনুভব করছি উপজেলা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর। কারণ বিএনপি যে ধ্বংস হয়ে গেল তাতে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়ে যাবে এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। কারণ একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আমাদের দেশে থাকা দরকার। যেহেতু বাম রাজনীতি যারা করেন তারা একেবারে ক্ষমতাহীন। নিজেরা দাঁড়ালে এক হাজার ভোটও তারা পায় না। আর জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন একই রকম। আর এদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি আর চলবে না। সেটার মূল উৎপাটন করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সেটাও তাঁর দার্শন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনি দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিন্তু ইসলামকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি সব সময় বলেন যে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি সেভাবে কাজও করছেন। সুতরাং আমাদের দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতির কোন সুযোগ নাই। 

বাংলাদেশে এই যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী আমেরিকা। কারণ আমেরিকা যেভাবে এবার তাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন প্রতিহত করছে তাতে যে উদারহণ তারা সৃষ্টি করলো এটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব রাখবে সারা বিশ্বে। তারা আর কাউকে বলতে পারবে না যে, তোমার দেশে মানবাধিকার নাই। মানবাধিকার এখন শুধু বাংলাদেশেই আছে বলে আমার মনে হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বাকশাল গঠন করার জন্য একটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এটা আমরা চাই না। বাকশাল যখন করা হয় তখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। সুতরাং এখন গণতন্ত্রের মধ্যে জনগণকে থাকতে হবে। কিন্তু এই যে বিএনপি গণতন্ত্রের ক্ষতি করলো এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে আমার জানা নেই। এজন্যই আমার মনে হয় বিএনপি শুধু নিজের ক্ষতি করলো তা না, দল হিসেবে তারা তো শেষ হয়ে গেলো। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে আঘাত তারা করলো সেটা মারাত্মক আঘাত এবং আমরা কেউই এই আঘাত চাইনি। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের বাস্তব উপস্থিতি থাকলো না। বাকি দলগুলো তো নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাম দল তারা সাহস দেখাতে পারলো না। তারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলো না। এজন্য শেষ হয়ে গেলো। অন্যদিকে যারা সন্ত্রাস করে রাজনীতি করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলোরেন্স নীতিতে তারা এখন ধ্বংস প্রায়। বিএনপি ঠিকে থাকতে পারতো কিন্তু তারা সেটা চেষ্টাও করলো না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি ঠিক কিন্তু তারা যদি শুধু প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলেও এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি থাকতো। ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক দলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জনগণের সাথে যদি থাকেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এক সময় নিশ্চিত ক্ষমতায় যাবেন। অনেক দেশে এমন অনেক দল আছে যারা ক্ষমতায় নেই তবে তারা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যায় না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় তারেদর কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই আমি বলবো শুধু লন্ডনের বুদ্ধিতে বিএনপি তাদের কফিনের শেষ পেরেকটাও মারলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও তারা এই পেরেক বিদ্ধ করলো। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপি তো আর পারবেই না। আমি আশা করি বাম দলগুলো যেন সেই উদ্যোগ নেয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন