যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের
মধ্য দিয়েই মূলত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। আর
সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে অপেক্ষায় রয়েছেন বেশ কিছু রাজনীতিবিদ।
রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের ক্ষেত্রে
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তিনি যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, সেই সুযোগ আবারও
পেতে পারেন।
কিন্তু এ সপ্তাহের মধ্যবর্তী নির্বাচনের
ফলাফল ট্রাম্পের জন্য খুব একটা সুখকর হয়নি। কারণ, তার সমর্থিত বেশ কয়েকজন প্রার্থী
হেরে গেছেন। এটি রিপাবলিকানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও সাবেক প্রেসিডেন্টের
ফের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
পরবর্তী নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের বয়স
হবে ৭৮ বছর। সম্ভবত তিনি দলের মধ্যেই মনোনয়নপ্রত্যাশী একটি অংশের চ্যালেঞ্জের মুখে
পড়বেন। আর এই মনোয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এমন নেতারাও রয়েছেন, যারা একসময় তার অনুসারী
ছিলেন।
রন ডিসান্টিস
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস নিজেকে
ট্রাম্পের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। গত ৮ নভেম্বরের
নির্বাচনে তিনি ১৫ লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
৪৪ বছর বয়সী ডিসান্টিস হার্ভার্ড ও
ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তিনি এখনো তুলনামূলক
নতুন।
একসময় নৌবাহিনীতে কাজ করেছেন ডিসান্টিস।
ইরাকেও গিয়েছিলেন। ২০১৩-১৮ সালের দিকে তিনি প্রতিনিধি পরিষদের স্বল্প পরিচিত সদস্য
ছিলেন। তবে ২০১৯ সালে গভর্নর হওয়ার পর থেকে ক্রমশ তারকা হয়ে ওঠেন এ নেতা। বিশেষ করে,
তার রক্ষণশীল অবস্থানের কারণে।
তার সময়েই প্রথমবারের মতো রাজ্যে রিপাবলিকান
ভোটার ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে তিনি মাস্ক ও ভ্যাকসিন
বিষয়ক বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছেন। দাঙ্গাবিরোধী আইন করেছেন এবং স্কুলে সমকামী শিক্ষা
সীমিত করতে আইনে সমর্থন জুগিয়েছেন।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডিসান্টিসের দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখছেন। এমনকি, ২০২৪ সালে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইলে
তার তথ্য ফাঁস করার হুমকিও দিয়েছেন।
মাইক পেন্স
গত বছরের শুরুতে মার্কিন পার্লামেন্টে
দাঙ্গার আগপর্যন্ত ট্রাম্পের খুবই অনুগত ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাইক পেন্স।
তার পিতা ছিলেন কোরিয়া যুদ্ধের একজন
নায়ক। তবে পেন্সের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো রেডিও উপস্থাপক হিসেবে।
কংগ্রেস সদস্য হিসেবে ২০০০ সাল থেকে
পরবর্তী ১৩ বছর তিনি নিজেকে একজন আদর্শ রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং টি পার্টি
মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী চার বছর ছিলেন
ইন্ডিয়ানার গভর্নর। সে সময় রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর ছাড় দিয়েছিলেন এবং গর্ভপাত
সীমিত করতে ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা বিলে সই করেছিলেন তিনি।
৬৩ বছর বয়সী এ নেতা তার ধর্মবিশ্বাসের
কারণে আলাদা সুবিধা পাবেন। কারণ খ্রিস্টানদের মধ্যে তিনি যে অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন,
তার আলাদা একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। তারা ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিল।
শান্ত ও স্থির প্রকৃতির পেন্সকে দেখা
হয় উচ্চকণ্ঠের ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকর প্রতিনিধি হিসেবে। যদিও গত নির্বাচনের ফলাফল
বাতিল করতে রাজি না হওয়ায় পেন্সের সাহসের অভাবকেই দায়ী করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পপন্থিরা
ক্যাপিটল হিলে হামলা করেছিল এবং পেন্সের ফাঁসি দাবি করেছিল। একপর্যায়ে তারা তৎকালীন
ভাইস-প্রেসিডেন্টের ৪০ ফুটের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল।
এরপর থেকেই ট্রাম্প ও পেন্সের মধ্যে
দূরত্ব তৈরি হয়। তাছাড়া, পেন্স এবারের নির্বাচনে এমন কয়েকজন প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন,
যার বিরোধীকে সমর্থন দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে পেন্স কখনো তার সাবেক বসের সরাসরি
সমালোচনা করেননি।
লিজ চেনি
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কন্যা
লিজ চেনিকে একসময় রিপাবলিকান পার্টির উঠতি তারকা মনে করা হতো। ২০১৭ সালে পিতার আসনে
দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করায় দলের ভেতর সমর্থন
হারান লিজ।
কংগ্রেস ভবনে হামলার পর ট্রাম্পের অভিশংসন
প্রস্তাবের পক্ষেও ভোট দিয়েছিলেন তিনি। তবে এই ভূমিকার জন্যেও মূল্য দিতে হয়েছে তাকে।
উওমিং প্রাইমারিতে লিজ ট্রাম্প-সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে ৪০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে
হেরে যান।
ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় কংগ্রেস
যে তদন্ত করছে, সেখানে রিপাবলিকান দলের দুজন সদস্যের মধ্যে লিজ একজন। কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান
হিসেবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
তবে লিজ চেনি এখনো নিজেকে রিপাবলিকান
ভাবেন ও দলের পুনরুজ্জীবনের জন্য যা দরকার তাই করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
মাইক পম্পেও
কানসাস থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য
মাইক পম্পেও ২০১৬ সালেই সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্প কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন
এবং সংবিধানকে উপেক্ষা করবেন।
মর্যাদাপূর্ণ ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি
একাডেমিতে গ্রাজুয়েশন করেছেন তিনি। হার্ভাডে পড়ালেখা করা এই আইনজীবী সিআইএ পরিচালক
হিসেবে কাজ করেছেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের
পুরোনো নীতি থেকে সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছেন পম্পেও। তবে তাকে ঘিরে বিতর্ক রয়েছে। তিক্ততায়
জড়িয়েছেন সংবাদকর্মীদের সঙ্গেও।
গ্লেন ইয়াংকিন
গত বছর ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে জিতে
রিপাবলিকানদের রীতিমতো বিস্মিত করেছিলেন গ্লেন। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের এক প্রভাবশালী
প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন তিনি। তার রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ডেমোক্র্যাটদের ভোট বাড়ছিল।
বিভাজনের রাজনীতিকে ‘খুবই তিক্ত’ বলে
সমালোচনা করেছেন গ্লেন। তবে ৫৫ বছর বয়সী এই নেতা আলোচনায় আসেন দায়িত্ব গ্রহণের দিনই
কোভিড বিধিনিষেধ তুলে ফেলা ও স্কুলে ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি শেখানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা
দেওয়ার পর।
এবার মধ্যবর্তী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের
সমর্থনে তিনি কাজ করেছেন। তবে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর ওপর হামলার বিষয়ে মন্তব্য
করে সমালোচিত হয়ে পরে ক্ষমা চেয়েছেন গ্লেন।
নিক্কি হ্যালি
একসময় তাকে রিপাবলিকান পার্টির সবচেয়ে
উজ্জ্বল তারকা মনে করা হতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিক্কির অবস্থা কিছুটা মলিন হয়েছে।
সাউথ ক্যারোলাইনায় পাঞ্জাবি শিখ অভিবাসী
পরিবারে জন্ম নেওয়া নিক্কি ২০০৯ সালে সর্বকনিষ্ঠ গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নিজেকে ট্রাম্পের ভক্ত নন বললেও ট্রাম্প প্রশাসনের তিনি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী
প্রতিনিধির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধির বক্তব্যের সময়
তিনি বিতর্কিতভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
অনেক সমালোচনাও কুড়িয়েছেন ৫০ বছর বয়সী
এই নেতা। ট্রাম্প গত বছর নিক্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন বলে খবর
ছড়িয়েছিল।
রিক স্কট
ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতা
রিক স্কট। এবার সিনেটে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। দেশজুড়ে প্রার্থীদের
তহবিল সংগ্রহে কাজ করেছেন।
এর বাইরে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে
সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে টেক্সাসের সিনেটর ট্রেড ক্রুজ, ম্যারিল্যান্ডের
সাবেক গভর্নর ল্যারি হোগান, টেক্সাসের সাবেক গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট ও সাউথ ডাকোটার প্রথম
নারী গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েমের নামও শোনা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ডোনাল্ড ট্রাম্প
মন্তব্য করুন
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং।
টানা ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তার এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে আক্ষরিক অর্থে শেষ হতে চলেছে 'লি সেইন যুগ'।
বুধবার রাতে সব ঠিক থাকলে, উপপ্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওয়ংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরকারপ্রধানের পদ থেকে বিদায় নেবেন তিনি।
১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়া থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র তিনজন প্রধানমন্ত্রী দেখেছে সিঙ্গাপুর। এরা সবাই দেশটির ক্ষমতাসীন দল পিপল'স অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) সদস্য। প্রথমজন লি কিউয়ান ইয়িউকে বলা হয় সিঙ্গাপুরের স্থপতি। বর্তমান বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুংয়ের পিতা লি কিউয়ান ইয়িউ টানা ২৫ বছর দেশটির সরকারপ্রধান ছিলেন। সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম গোহ চোক তং।
৭২ বছর বয়সী লি সেইন লুং অবশ্য এখনই রাজনীতি পুরোপুরি বিদায় নিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতির পর একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় মন্ত্রিসভার সদস্য থাকবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত শনিবার সিঙ্গাপুরের সাংবাদিকদের শেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন লি সেইন। সেই সাক্ষাৎকারে এত বছর ধরে তাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য সিঙ্গাপুরের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও অন্যদের চেয়ে বেশি গতিতে দৌড়ানোর চেষ্টা করিনি; বরং চেষ্টা করেছি, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে চলতে।’
‘এবং আমি মনে করি, গত ২০ বছরে জাতিগতভাবে আমরা কিছু সাফল্য অর্জন করেছি। তবে এটা আমি স্বীকার করব যে, দুই পূর্বসূরি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে আমার কাজের ধরন কিছুটা ভিন্ন ছিল।’
১৯৮৪ সালে তরুণ বয়সে সাধারণ কর্মী হিসেবে পিএপিতে যোগ দেন তিনি। সে সময় তার বাবা লি কিউয়ান ইয়িউ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে বাবা প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকলেও সে সময় দল থেকে তেমন কোনো আনুকূল্য পাননি তিনি। আর দশজন সাধারণ কর্মীর মতোই ছিলেন।
লি সেইনের উত্থান ঘটা শুরু হয় দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক তং’য়ের সময়। গোহ চোক তং’য়ের একজন বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে নিজেকে দলের ভেতর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন তিনি এবং তার ধারবাহিকতাতেই ২০০৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন।
প্রথম দিকে অবশ্য লি সেইনকে ব্যাপক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। এসব সমালোচনার প্রায় সবই ছিল স্বজনপ্রীতিমূলক (নেপোটিজম)। বলা হতো, সিঙ্গাপুর লি পরিবারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে আর সেই পরিবারের সংরক্ষক হলেন গোহ চোক তং।
তবে পরবর্তী ২০ বছরে বহুবার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেছেন তিনি। তার নেতৃত্ব সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি বহুমুখী এবং বিকশিত হয়েছে, একটি সাধারণ দ্বীপরাষ্ট্র থেকে দেশটি পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র এবং ট্যুরিস্টদের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে; মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এছাড়া তার শাসনামলের ২০ বছরে কখনও মূল্যস্ফীতি বা অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়নি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে। এমনকি করোনা মহামারির মধ্যেও নয়।
ভূরাজনীতিতেও সাফল্য দেখিয়েছেন লি সেইন। পরস্পরের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন দুই শক্তিমান দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সঙ্গে সবসময় ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে গেছেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতেও নিজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছেন তিনি।
তবে অন্য সব রাজনীতিবিদের মতো লি সেইনও সমালোচনার ঊর্ধে নন। বিভিন্ন আইনী প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের বাক স্বাধীনতা সীমিত রাখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া দেশের শ্রমিক সংকট লাঘবের জন্য বিপুল সংখ্যক অভিবাসীকে বসবাসের অনুমতি দিয়েছেন তিনি। এ কারণেও তিনি বিরোধীদের চক্ষুশূল। মূলত তার শাসনামলেই ২০১১ এবং ২০২০ সালের ভোটে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছিল পিএপি।
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সুশাসন বিশেষজ্ঞ ডোনাল্ড ল’ বিবিসিকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কিছু সমস্যা থাকলেও লি সেইনই আসলে সিঙ্গাপুরের জনগণের প্রকৃত নেতা। তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো এই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা।’
ক্ষমতা সিঙ্গাপুর প্রধানমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
ইন্দোনেশিয়ায় সপ্তাহব্যাপী চলা ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে একটি আগ্নেয়গিরির শীতল লাভা এবং আকস্মিক বন্যার কারণে এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার অভিযান এখনও চলমান। বন্যার কারণে রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, মসজিদ প্লাবিত হয়েছে। খবর এএফপির।
স্থানীয় সময় শনিবার মুষলধারে বৃষ্টির কারণে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর একটি থেকে শীতল লাভা নির্গত হয়েছে। ফলে এর কাছাকাছি অবস্থিত বিভিন্ন জেলার বাড়ি-ঘর, রাস্তা এবং মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগ্নেয়গিরির শীতল লাভা লাহার নামেও পরিচিত। আগ্নেয়গিরির প্রধান উপাদান যেমন ছাই, বালি এবং নুড়ি পাথর বৃষ্টির কারণে আগ্নেয়গিরির ঢালে নেমে আসে। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে।
বুধবার এক বিবৃতিতে জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার প্রধান সুহরিয়ানতো বলেন, সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে মৃতের সংখ্যা ৫৮ জন। তিনি জানিয়েছেন, এখনো ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া আরও ৩৩ জন বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে ইতোমধ্যেই ভারী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ৩ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
বারবার বলে দেওয়া সত্ত্বেও কুরকুরে চিপস আনতে ভুলে গেলেন স্বামী। আর এতে রেগে গিয়ে স্ত্রী চেয়ে বসলেন ডিভোর্স। অভিযোগ জানাতে ছুটলেন পুলিশের কাছেও।
ব্যতিক্রমী এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের আগ্রায়। মঙ্গলবার (১৪ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, উত্তর প্রদেশের আগ্রায় এক যুবতী তার স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স চেয়েছেন। তাদের ঝগড়ার কারণ, বাড়ি ফেরার পথে কুরকুরে আনেননি স্বামী। আর সেটি নিয়েই তুমুল ঝগড়া বাঁধে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। একপর্যায়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই যুবতী। তিনি বলেন, তিনি স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স চান।
এদিকে স্বামীর অভিযোগ, স্ত্রী কুরকুরে-তে অস্বাভাবিক রকমের আসক্ত। রোজ তার ৫ রুপির এক প্যাকেট কুরকুরে চাই-ই চাই। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিত্যদিন মনোমালিন্য লেগেই থাকত। সম্প্রতিই চিপসের প্যাকেট নিয়ে ফের ঝগড়া হয়।
আর এরপরই রেগে বাপের বাড়ি চলে যান ওই যুবতী। পরে পুলিশের কাছে গিয়ে স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স চান। যদিও যুবতীর দাবি, স্বামী তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, গত বছরই বিয়ে হয়েছে ওই দম্পতির। তবে যুবতীর ডিভোর্সের দাবির বিপরীতে তাদের মতভেদ মেটানোর এবং সংসার রক্ষা করার প্রচেষ্টায় পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের ফ্যামিলি কাউন্সেলিংয়ে পাঠানো হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের শাহগঞ্জ থানা এলাকার ওই তরুণীর বিয়ে হয় সদর থানা এলাকার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে। ২০২৩ সালে হিন্দু রীতি অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর বেশ সুখেই সংসার করছিলেন তারা। কিন্তু স্ত্রীর অতিরিক্ত কুরকুরে খাওয়ার অভ্যাসই দুজনের মধ্যে বিবাদ তৈরি করে বলে অভিযোগ স্বামীর।
এদিকে ৫ রুপির কুরকুরের জন্য স্ত্রী যে বিবাহবিচ্ছেদের পথে যেতে পারেন এমনটা ভাবতেও পারেননি ওই যুবক। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বাপের বাড়িতেই রয়েছেন স্ত্রী। যুবকের অভিযোগ, 'আমার স্ত্রী প্রতিদিন কুরকুরে খেতে চায়। প্রতিদিন কুরকুরে আনতে আনতে আমি ক্লান্ত।'
সংবাদমাধ্যম বলছে, স্বামী-স্ত্রী ইতোমধ্যেই মনোরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু এখনও কোনও সমাধান আসেনি। চিকিৎসক তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
পেরুতে পাহাড়ী আয়াকুচো অঞ্চলে বাস উল্টে একটি ঢালে গড়িয়ে পরে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার(১৫ মে) এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। বাসটি ৪০ জন আরোহী নিয়ে আন্দিজ পর্বতের দিকে যাচ্ছিল। সেখানে প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। খবর এএফপির।
আয়াকুচোর কর্মকর্তা ওয়াইবার ভেগা সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যেই ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আরও তিনজনের মরদেহ বাসের নিচে আটকা পড়ে আছে। তিনি ওই দুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওয়াইবার ভেগা জানিয়েছেন, শিলাবৃষ্টিসহ খারাপ আবহাওয়ার কারণে বাকি তিনজনের মরদেহ উদ্ধারে সময় লাগছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে লিমা থেকে আয়াকুচো শহরের যাওয়ার সময় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে পেরুতে ট্রাফিক দুর্ঘটনায় মোট তিন হাজার ১৩৮ জন প্রাণ হারায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা চালকের দক্ষতার অভাব, ক্লান্তি বা সাধারণ কিছু কারণে হয়ে থাকে।
মন্তব্য করুন
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। গত ১৭ এপ্রিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর দাবানলের মত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থামাতে মারমুখী অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক ক্যাম্পাসে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী তাঁবু। শুধু তাই নয়, তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রাণঘাতী নয়, এমন গ্রেনেড ও গুলিও ব্যবহার করেছে পুলিশ। এছাড়াও গ্রেপ্তার করেছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে। এ ঘটনায়, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও পিছপা হয়নি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা এখনও অটুট।
মূলত, দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ইতিহাস বহু পুরনো। যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র আন্দোলন এটাই প্রথম নয়। প্রায় প্রতি বছরই মার্কিন শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন বিক্ষোভ বা আন্দোলন করতে দেখা যায়। আর এই আন্দোলন গুলো সব সবসময় তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য করে না। বরং বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নানা তারা আন্দোলন করে।
এর আগেও, ১৯৬৮ সালে ভিয়েতনামে যুদ্ধের সময় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের দেশের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন শুরু করেছিল। আর এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় মাত্র ৭ দিনে ৭০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছিল নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি)। কিন্তু তারপরেও দমিয়ে রাখতে পারেনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তারা কমান্ড দিয়ে গেছে।
সেসময় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলেও চলমান আন্দোলনের কোনো দাবি এখনও পর্যন্ত মেনে নেয়নি মার্কিন সরকার।
দীর্ঘ ৫৬ বছর পর আবারও যখন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্ষতির কথা না ভেবে আন্দোলনের জড়ালো তখন শুধু একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, কেন বারবার যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনায় থাকে মানবতাবাদ। যেখানে ধর্ম,বর্ণ বা জাতি কোনটাই ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে না। এখন যে আন্দোলনটা চলমান সেখানেও সবাই মুসলমান বা সবাই ইহুদি নয়। সব ধর্মের ছেলেমেয়েরাই রয়েছে আন্দোলনে। এমনকি অনেক ইহুদি ছেলেমেয়েরাও এ আন্দোলনে রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনায় যে মানবতাবাদ সেটা স্পষ্ট হয়েছে।
আর এই মানবতাবাদী চিন্তা থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ছাত্র আন্দোলন মার্কিন শিক্ষার্থী ফিলিস্তিন ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ
মন্তব্য করুন
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং। টানা ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তার এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে আক্ষরিক অর্থে শেষ হতে চলেছে 'লি সেইন যুগ'। বুধবার রাতে সব ঠিক থাকলে, উপপ্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওয়ংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরকারপ্রধানের পদ থেকে বিদায় নেবেন তিনি।