ইনসাইড ইকোনমি

‘অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার সম্পর্ক নেই’

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

কোনো সন্দেহ নেই, পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের মতো আমাদের এখানেও একটা অর্থনৈতিক সংকট চলছে। তেমনই কোনো সন্দেহ নেই, এই সংকটের সময় কিছু মানুষ খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যাংকের টাকা তুলে নেওয়ার বার্তা দিচ্ছে কিংবা হিসাব দিচ্ছে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে আপনি আপনার আমানতের কতটুকু খোয়াবেন।

আমার এ লেখা দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে অস্বীকার করার জন্য নয়। সেই সংকটের সমাধান যদি জানতে চান, তাহলেও এটা পড়ে আপনার লাভ নেই। কিন্তু ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেওয়ার মতো কোনো যৌক্তিক পরিস্থিতি মোটেই সৃষ্টি হয়েছে কি না, সে বোঝাবুঝিটা যেন আপনি করে নিতে পারেন, সেই কারণেই এই লেখা।

‘দেশ শ্রীলঙ্কা হচ্ছে’ গুজব ছড়িয়ে যাঁরা দেখলেন কোনোকিছুই শ্রীলঙ্কা হয়নি, তারাই এখন ‘ব্যাংকে টাকা নেই, আমানত তুলে নিন’ বলা শুরু করেছেন। দেশের গভর্নর এ অবস্থায় জানিয়ে দিয়েছেন ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নেই বরং অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, যে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে, তা আগামী জানুয়ারি থেকে আর থাকবে না। তারপরও ব্যাংকে নতুন আমানত আসছে না, পুরোনো আমানত বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

সমস্যা কোথায়? দেশের গভর্নরের দেওয়া তারল্যের হিসাবে মানুষ আশ্বস্ত হতে পারছে না? না কি ব্যাংকে ডলার নেই কিংবা ব্যাংক এলসি খুলছে না জাতীয় কথার ব্যাখ্যা তারা করেছে যে ব্যাংকে টাকাই নেই? আমার ধারণা, কোন গুজবের কান এবং চিল দুটোই যখন দৃশ্যমান থাকে না, তখন অসুস্থ আলোচনার মধ্য দিয়ে সাধারণ জনমানসে ছড়ায় শুধু আতঙ্ক। সুস্থ আলোচনায় এ মুহূর্তে প্রশ্নটা আসলে আসা উচিৎ ছিল এমন যে- এই সংকট কি দীর্ঘমেয়াদি? 

তার বদলে প্রশ্ন আসছে: দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ, অতএব আমার টাকা কি এখন ব্যাংকে নিরাপদ? ভুল প্রশ্ন নিয়ে আমরা বিচলিত হচ্ছি। প্রশ্নটা ভুল, কারণ এ প্রশ্নের সঙ্গে বর্তমান সংকটের সম্পর্ক অনেক দূরের। আমার এ লেখার তাগিদ সে ভুল ভাঙানোর তাগিদ। দুটো বিষয় যে আসলে সম্পর্কিত নয়, তা আপনাকে জানানোর তাগিদ।

প্রশ্ন হলো, মানুষ ব্যাংকে টাকা কেন রাখে? মোটা দাগে মানুষ কাজটা করে তিন কারণে। এক. ব্যাংকে টাকার নিরাপত্তা মেলে; দুই. চাহিবামাত্র সেই টাকা তোলা যায়; তিন. কিছু মুনাফা বা সুদ পাওয়া যায়। বুঝলাম দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমছে, ডলার মার্কেটের তারল্য কমছে, বুঝলাম টাকা দিয়ে ডলার কিনতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু টাকার তারল্য কি কমেছে? সোজা উত্তর, না। এ মুহূর্তে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় যে পরিমাণ তারল্য থাকার কথা, তার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে আরও এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার। এই পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য জমা আছে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে, ব্যাংকে নগদ আকারে। সে বিষয়ে বিস্তারিত বলার আগে জানাই তারল্য বিষয়টা কী?

এ মুহূর্তে দেশের ব্যাংকগুলোতে জমা থাকা মোট আমানত বা ডিপোজিটের পরিমাণ ১৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। আমানতকারীদের ওই টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা পরিমাপের অন্য নাম- ব্যাংকের তারল্য। আমাদের এই তারল্যের পরিমাণ বর্তমানে চার লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। 

কিন্তু হিসাবমতে, আমাদের এই তারল্য থাকা লাগত আড়াই লাখ কোটি টাকার মতো। অন্যকথায়, নিয়মমাফিক দেশের মোট আমানতের ১৭ শতাংশ টাকা নিরাপদে তুলে রাখার জায়গায় আমরা রেখেছি ২৮ শতাংশ টাকা। এ রকম উদ্বৃত্ত তারল্য বিদ্যমান থাকতে আপনি লোকের কথা শুনে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রাখবেন কোথায়? বাসা কি ব্যাংকের চেয়ে নিরাপদ? সত্য একটা ঘটনা বলি। এই সে দিন আমাদের এক জেলা শহরের শাখা ব্যবস্থাপক জানালেন, তার এক গ্রাহক ১৩ লাখ টাকা বাসায় নিয়ে গেছেন, কারণ তার ইতালিপ্রবাসী ভাই বলেছেন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ না। দুই সপ্তাহ পরে তিনি ব্যাংকে ফিরে এসেছেন নয় লাখ টাকা নিয়ে। বাকি চার লাখ টাকা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না, সেটা চুরি হয়ে গেছে।

ওই শাখা ব্যবস্থাপকের মতো শিকড় পর্যায়ে কাজ করা ব্যাংকারদের থেকেই আমি জেনেছি, যারা দেশের বাইরে থাকেন, তাদের মধ্যে এ উৎকণ্ঠা তুলনামূলক বেশি। প্রবাসীরা দূরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাংকে টাকা রাখা বা না রাখা নিয়ে ‘জ্ঞানগর্ভ’ আলোচনা শোনেন, আর এক সময় দুশ্চিন্তার কাছে হার মেনে দেশে আত্মীয়কে ফোন দেন টাকা তুলে ঘরে রেখে দেওয়ার জন্য। এ পুরো ব্যাপারটা আমাদের অর্থনীতির মৌলিক কাঠামোগত শক্তিটাকে বুঝতে না পারার ব্যাপার। সিকি সত্য বা অপ্রাসঙ্গিক সত্যকে অকাট্য ও প্রাসঙ্গিক সত্য ধরে নিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলার ব্যাপার। সত্য-মিথ্যার এই উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চে যা মঞ্চস্থ হচ্ছে তার ফলাফল যদি হয় বাস্তবতাবর্জিত আতঙ্ক, তাহলে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।

ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনার একটা বড় তত্ত্ব হলো, সব আমানতকারীর একসঙ্গে সব টাকা নগদ করার কোনো দিন দরকার পড়ে না। এটা চিরন্তন এক সত্য। গ্রাহকদের ব্যাংকে রাখা সঞ্চয় যদি সবার একসঙ্গে দরকার পড়ত, তাহলে পৃথিবীতে ব্যাংকিং বলে কোনো কিছুর আবিষ্কারই হতো না। ব্যাংক আপনার আমানত নিয়ে অন্যকে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দেয় বলেই মানুষ ঋণ নিয়ে তার ব্যবসার আকার বড় করে বা বাসস্থানের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে গৃহঋণ নেয়। এখন সব আমানতকারী যদি এসে বলেন যে, ‘সব টাকা ফেরত দাও,’ তাহলে ব্যাংকগুলোকে সব ঋণগ্রহীতার কাছে গিয়ে বলতে হবে, আপনার ফ্যাক্টরি বা বাড়ি বিক্রি করে সব টাকা ফেরত দিন। সেটা অবাস্তব। 

এখন প্রশ্ন আসে, পুরো টাকাটা ব্যাংক থেকে মানুষ একযোগে তুলে নিতে চাইলে কতটা নিতে পারে? ইতিহাস এ ব্যাপারে কী বলে? সামগ্রিক অর্থনীতির সমূহ পতন কিংবা বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে এমন কোন উদাহরণ নেই যে ব্যাংক খাত থেকে মোট আমানতের ১০-১২ ভাগের বেশি টাকা একযোগে বা এক মৌসুমে বেরিয়ে গেছে। সেখানে আমরা এ দেশের গ্রাহকদের মোট আমানতের ১৭ ভাগ টাকা রক্ষিত রাখার বদলে রেখেছি ২৮ ভাগ।

মোদ্দা কথা, পৃথিবীর কোন দেশই তার ব্যাংকিং ব্যবস্থায় জনগণের রাখা মোট আমানত নিয়ে চিন্তিত থাকে না। আমরাও ১৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার মোট আমানত নিয়ে চিন্তিত নই। আমাদের দেশের ‘রিজার্ভ মানি’-র পরিমাণ তিন লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা থেকেই কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে ওই ১৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার আমানত। ১৪ লাখ ৮২ হাজার কোটিকে এখন তিন লাখ ৪১ হাজার দিয়ে ভাগ দিন, দেখবেন ফল এসেছে ৪ দশমিক ৩৫। এটাই ‘মানি মাল্টিপ্লায়ার ইফেক্ট’। অর্থাৎ রিজার্ভ মানির চার দশমিক ৩৫ গুণ টাকার আমানত তৈরি হয়েছে এ দেশে। 

তত্ত্বে বলে, আমাদের আদর্শ মাল্টিপ্লায়ার ইফেক্ট হওয়া উচিৎ পাঁচ দশমিক ৮৮ গুণ। আবার তত্ত্বেই বলে, চার দশমিক ৩৫ গুণ যথেষ্ট ভালো এক অঙ্ক। কথা হচ্ছে, অর্থনৈতিক গতিশীলতা যত বাড়বে, তত এটা আদর্শের (পাঁচ দশমিক ৮৮ গুণ) বেশি কাছে যাবে। তার মানে আপনার ১০০ টাকা আপনি ব্যাংকে জমা রাখলেন, ব্যাংক সেখান থেকে ১৭ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা করে বাকি ৮৩ টাকা ঋণ হিসেবে আপনাকে দিয়ে দিল। আবার আপনাকে দেওয়া ঋণের ওই ৮৩ টাকা ঘুরে ডিপোজিট হিসেবে ব্যাংকেই ফিরে এলো; আবার সেখান থেকে ১৭ শতাংশ জমা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে; আর এ দফায় বাকি ৬৮ দশমিক ৮৯ টাকা গেল নতুন অন্য কোন ঋণে; আবার...আর এভাবে চার দশমিক ৩৫ বার হাত ঘুরে সেই প্রথমবারের কেবল ১০০ টাকা শেষে গিয়ে সৃষ্টি করল ৪৩৫ টাকার আমানত।

এ কথা বললাম এই জন্য যে, আমরা মোট আমানতের ১৭ ভাগের বদলে ২৮ ভাগ নিরাপদে তুলে রেখে আপনার টাকাকে ‘বাড়তি ‘নিরাপত্তা দিতে গিয়ে এমনকি অর্থনৈতিক গতিশীলতাও কিছুটা কমিয়ে ফেলেছি। তা-ও আপনার টাকা নিরাপদে থাকুক, সেটাই বড় কথা। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোয় টাকা রাখার নিরাপত্তা নিঃসন্দেহে তাই বৈশ্বিক হিসেবেই শীর্ষ মানের, কারণ তারল্য এতটা বেশি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ‘লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও’ (তারল্য সংরক্ষণ অনুপাত) থাকা লাগে ১০০ শতাংশ, আর সেখানে আমাদের দেশে এ বছর জুনের শেষের এই রেশিও ছিল ১৬৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

এবার ‘কারেন্সি আউটসাইড ব্যাংক’ নামের একটা বিষয়ে কিছু কথা বলি। অর্থাৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরের টাকা। আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১০০ টাকা তুলে নিলে এই ১০০ টাকাকে বলা হয় ‘কারেন্সি আউটসাইড ব্যাংক’ যে টাকার অর্থনীতিতে গভীর অবদান রাখার ক্ষমতা তুলনামূলক কম। এটাই আপনার দৈনন্দিন লেনদেনের টাকা। এ মুহূর্তে লেনদেনে ব্যবহৃত আমাদের এই টাকার পরিমাণ ২ লাখ ৪১ হাজার কোটি। এবার আপনি ব্যাংক থেকে টাকা অহেতুক তুলে নেবেন, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন দেখবে এর ফলে দৈনন্দিন লেনদেনে ব্যবহৃত টাকার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, তখন মুদ্রানীতিতে আগের বলা রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে তাদের মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতেই হবে। আর সেই সঙ্গে কিন্তু বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি, যে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়বে আমার-আপনার মতো সাধারণ জনগণের ওপরে। ব্যাংক থেকে অকারণে টাকা তুলে নেওয়ার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বাড়িটা তাহলে কোথায় গিয়ে পড়ছে? সেটা ঘুরে গিয়ে পড়ছে জনগণেরই ঘাড়ে।

এই কথাটার ওপর এবার অন্যদিক থেকে আরেকটু আলো ফেলি। আগেই দেখিয়েছি এ দেশের ব্যাংকগুলোর তরল সম্পদের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়েও বেশি আছে। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে চাহিবামাত্র টাকা পাওয়ার গ্যারান্টি এখানে বিদ্যমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে আসলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টাটা করতে পারছে, যেহেতু আপনার টাকা আপনি বাসায় না নিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় রাখছেন। এ জন্যই দেখবেন আমেরিকা, ইউরোপ সবখানে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’-এর কথা বলা হয়। আমাদের এখানেও এখন তা হচ্ছে। আপনি ক্রেডিট কার্ডে টাকা খরচ করলে টাকাটা মানি মাল্টিপ্লায়ার ইফেক্টের কাজেই লাগছে, মানে অর্থনৈতিক গতিশীলতায় সেটা ভূমিকা রাখছে। আর আপনি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নগদ টাকা বালিশের নিচে রেখে দিলে কিংবা লেনদেনে ব্যবহার করলে মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ উপযোগিতাটার দেখাটা আমাদের মিলছে না। মানি মাল্টিপ্লায়ার যত বেশি, সেই অর্থনীতি তত দক্ষ। ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিয়ে সেই অর্থনৈতিক দক্ষতার ক্ষতি করাটা আমাদের কারোরই উচিত না।

এবার আসি যারা ভুল বার্তা ছড়াচ্ছেন, তাঁদের কিছু উটকো যুক্তি প্রসঙ্গে। প্রথমে বলি বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের রিজার্ভ ছিল তিন হাজার ২৭১ কোটি ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এটা গিয়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৬০৩ কোটি ডলারে। এরপর করোনার মধ্যে অবৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ানোয় বৈধ চ্যানেলে বিপুল রেমিট্যান্স আসতে থাকে, আর তা ছাড়া ব্যাংকগুলো অনেক আমদানি ব্যয় পরিশোধকে ‘ডেফার্ড’ বা প্রলম্বিত করায় ২০২০-২১ সময়ে এই রিজার্ভ উঠে যায় চার হাজার ৬৩৯ কোটি ডলারে। কিন্তু করোনা শেষে অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে থাকলে আমদানি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমতে শুরু করে এবং একই সঙ্গে ‘ডেফার্ড ‘আমদানি পরিশোধের দায় মেটাতে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়া শুরু হয়। 

কিন্তু এর অর্থ এই না যে দেশের রিজার্ভ শেষ হয়ে গেছে বা আগামী কয়েক মাস আমদানি ব্যয় ও বিদেশি লোনের কিস্তি মেটানোর মতো ডলার দেশে নেই। মনে রাখবেন, ২০২১ সালে জার্মানি, কানাডার মতো দেশেরও রিজার্ভ এসে ঠেকেছিল তাদের মাত্র দুই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর পর্যায়ে। আসলে অত দূর যাওয়া লাগবে না। ১৯৯১ সালে বাড়ির পাশের ভারতই এর চেয়ে কত তীব্র এক সংকটের মুখে পড়েছিল। সে বছরের জানুয়ারি থেকে জুন, মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে, ভারতের রিজার্ভ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। সংকট এতটাই প্রকট ছিল যে তখন আমদানি ব্যয় পরিশোধের সামান্য সক্ষমতাটুকুও ভারতের ছিল না। সেবার আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে প্রায় ২২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ভারত সে সংকট কাটিয়ে উঠেছিল খুব চমৎকার ভাবেই।

উল্লেখ্য, ভারত সে দিন যে ঋণটা পেয়েছিল, তা ছিল স্বর্ণের বিপরীতে পাওয়া ‘সিকিউরড’ ঋণ। আর আমরা আইএমএফ থেকে যে ঋণ পাচ্ছি, সেটা কিন্তু অমন কিছু বন্ধক রেখে পাওয়া কোন ঋণ না।

রিজার্ভের পর আসি জিডিপির বিপরীতে ঋণের (সরকারের স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া মোট ঋণের) অনুপাতে, যাকে বলা হয় ‘ডেট টু জিডিপি রেশিও’। এই রেশিও বা অনুপাত দিয়ে মাপা যায় একটা দেশের অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী। এ অনুপাত যত কম হবে, তত বেশি কোনো দেশ ঋণ নেওয়া ছাড়াই উন্নতি করতে পারবে। বিশ্বব্যাংকের মতে, জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত যদি ৭৭ শতাংশ বা তার চেয়ে কম হয়, তাহলে সে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী বলা যাবে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, আমাদের এই অনুপাত ৩৬ শতাংশের কম। 

অথচ ২০২১ সালের হিসাবমতে, একই অনুপাত ভারতের বেলায় ৯১ শতাংশ, কানাডার ১১০ শতাংশ আর যুক্তরাষ্ট্রের ১৩৩ শতাংশ। এই পরিমাপক থেকেও বলা যায়, আমরা আইএমএফের ঋণ পরিশোধ করতে এবং একই সঙ্গে বিদেশি গ্রাহকদের কাছে আমাদের পণ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম।

এবার বিদেশি ঋণ প্রসঙ্গে। কিছু মানুষ বলতে শুরু করেছেন, দেশ না কি বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবে না। আমাদের বিদেশি ঋণ জিডিপির মাত্র ২০ দশমিক ৪ শতাংশ, যেখানে ভারতের ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ দশমিক দুই শতাংশ, জাপানের ৯৭ দশমিক নয় শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরের ৪১৮ দশমিক তিন শতাংশ। বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় আমাদের ঋণের অনুপাত অনেক কম। তবে এটা ঠিক যে গত কয়েক বছরে আমাদের এই ঋণ বেড়ে গেছে।

এখানেও আইএমএফের প্রসঙ্গটা চলে আসে। একজন ব্যাংকার হিসেবে বলতে পারি, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আপনার না থাকলে আমি আপনাকে ঋণ দেব না। তাহলে আইএমএফ আপনাকে কেন দেবে? আবার আমরা শুধু আইএমএফের ঋণই পাচ্ছি না। বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপান, সবাই আমাদের ঋণ দিতে আসছে। এদের ঋণ অনুমোদন এটাই প্রমাণ করে যে বিদেশিরা বাংলাদেশকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে না। আর আপনি কি না আপনার নিজের দেশের বাড়তি তারল্যসম্পন্ন ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন?

আমাদের বর্তমান সংকট মূলত একটা স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির সংকট। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার মাধ্যমে সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত থাকুন ঠিক আছে, কিন্তু সেই সুস্থ চিন্তার বদলে গুজবে ভর করে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কোন কারণ দেখি না। 

আসলে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী হতে আপনি বাধ্য, যেহেতু ক্রমবর্ধমান রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের পাশাপাশি উৎপাদনশীল খাতে আমাদের আমদানি বৃদ্ধিই পাচ্ছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বেড়ে এটা যে বড় একটা অর্থনীতিতে রূপ নিয়ে ফেলেছে, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের যে বিশাল অর্থনীতি আমরা তৈরি করেছি, তা আপনি মনে করেন উধাও হয়ে যাবে? রেমিট্যান্স আয় কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে দেশের অন্য সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে? ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে? মনে রাখবেন, নতুন লাখো রেমিট্যান্স যোদ্ধা পুরোদমে বিদেশে যাওয়া শুরু করেছেন। অতএব প্রবাসী আয় সামনের দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার ওপরে ভরসা রাখুন। আর প্রবাসী আয় যেই বাড়বে, ডলার সংকট সেই শেষ। আবার অন্যদিকে সামনে রপ্তানিও বাড়বে, নিশ্চিত।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য আমাদের তৈরি পোশাক, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ। আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি ডেনিমের প্রবৃদ্ধি চীন বা ভিয়েতনামের চেয়েও বেশি। ইদানীংকালে আমেরিকা-চীন বাণিজ্যিক বিরোধের জের ধরে আমেরিকার বাজারমুখী পণ্যের রপ্তানি আদেশ চীন থেকে সরতে শুরু করেছে। এসব আদেশের পছন্দের তালিকায় এখন প্রথম দেশ হবে বাংলাদেশ। বিশ্ব যেই না বর্তমানের এই অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠবে, সেই দেখবেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়ে গেছে। সে কারণেই বিজিএমইএ ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ১০০ বিলিয়ন ডলার।

এখন এ সময়ের খুব বাজার-চলতি একটা প্রসঙ্গে আসি। কারও কারও দাবি এমন যে ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক বাণিজ্যের দায় মেটানোর মতো ডলার নেই। কিন্তু দেখুন, আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স- এ তিন সেক্টরেই গত বছর থেকে এই বছর অগ্রগতি বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর- এ তিন মাসে রপ্তানি ছিল এক হাজার ১০২ কোটি ডলার, আমদানি এক হাজার ৭৩২ কোটি ডলার ও রেমিট্যান্স আয় ৫৪১ কোটি ডলার, যা এ অর্থবছরের তিন মাসে যথাক্রমেঈক হাজার ২৫০ কোটি ডলার, এক হাজার ৯৩৫ কোটি এবং ৫৬৭ কোটি ডলার। 

কিন্তু সমস্যা আছে একটা। দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি ১০৬ কোটি ডলার বেড়ে গেছে। তার মানে হচ্ছে, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স আয় যে হারে বেড়েছে, আমদানি বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। একই জিনিস যা আগে বিদেশ থেকে কিনতাম ধরুন ১০০ ডলারে, সেটাই বৈশ্বিক বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আপনাকে কিনতে হচ্ছে ১৩০-১৪০ ডলারে। মজা করে বললে, এই বাইরে থেকে ‘আমদানি’ হয়ে আসা ঘাটতির কারণেই ব্যাংকগুলো এখন কিছুটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু টাকা দিয়ে ডলার না কিনতে পারার সংকট, আর দায় মেটানোর ডলার তারল্য না থাকার সংকট এক জিনিস না। বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য এক জিনিস আর বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়ম আরেক। আমরা ব্যাংকাররা আমদানি দায় মেটাতে দুটো পদ্ধতিরই আশ্রয় নিয়ে থাকি। সে ক্ষেত্রে আমাদের টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হয়। আবার তা যদি না পারা যায়, তখন আমরা আমাদের যাঁর যাঁর ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য দিয়ে সেই দায় পরিশোধ করি, আবার পরে সুযোগমতো টাকা দিয়ে ডলার কিনে ব্যাপারটার শোধবোধ করি বা ব্যাংকিং পরিভাষায় আমাদের ‘পজিশন স্কয়ার’ করি।

ডলার নেই কথাটা একটা ভুল কথা। আমরা ডলার থাকার সক্ষমতা থেকেই আমাদের আমদানি দায় মেটাচ্ছি এবং এর ফলে কখনো কখনো আমাদের পজিশন ‘শর্ট’ (ঘাটতি) হয়ে যাচ্ছে, সত্য। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার পজিশন ‘শর্ট’ হওয়া দিয়ে কোন ভাবেই কোনো ব্যাংকের অক্ষমতাকে বোঝায় না। এটা চলমান অর্থনীতির উঠতি-পড়তির এক ধারা। এই যেমন এখন আমদানি শেষমেশ কমতে শুরু করেছে। অন্য কথায়, হুন্ডির ফাঁদ এড়িয়ে আসল দরে বিদেশের সঙ্গে মালের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বেচে আমাদের ওই ঘাটতি উপশমের চেষ্টাও করে যাচ্ছে। সামনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া নানা ধরনের পদক্ষেপের ফলে ২-৩ মাসের মধ্যে এই সাময়িক সমস্যার সুরাহা হয়ে যাবে, সেটা দেশের গভর্নরেরই স্পষ্ট আশাবাদ।

এই সার্বিক শক্তিশালী অবস্থায় ব্যাংকের আমানতকারীদের এত চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ দেখছি না। এলসি খোলার বেলায় ব্যাংকগুলো যে সাময়িক কড়াকড়ি করছে, তাতে ব্যাংকের একজন আমানতকারী হিসেবে আপনার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। এলসি হলো ব্যাংকের বৈদেশিক ব্যবসা, আর আমানতকারীদের টাকা আমরা বিনিয়োগ করেছি মূলত লোন হিসেবে। এলসি খুলতে না পারার কারণে ব্যাংক কখনো দেউলিয়া হয় না। এতে ব্যাংকের মুনাফা কিছুটা কমে, ওই যা।

সবমিলে, হঠাৎ দেশের এই সর্বাধিক নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখ থুবড়ে পড়ার কোন কারণ নেই। পাশাপাশি এটাও বলে রাখি, এই নভেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে এলসি খোলা হয়েছে ১২৬ কোটি মার্কিন ডলারের, যা গত মাসের এ সময়ে ছিল ১২৩ কোটি ডলার। তার মানে প্রয়োজনীয় এলসি যে আমরা খুলছি না, সেটাও আরেক গুজব।

শেষ কথা

বাংলাদেশ মজবুত এক অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর দাঁড়ানো ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের বড় অর্থনীতির দেশ। সমস্যা যে নেই, তা না। কোন কোন ব্যাংকে মন্দ ঋণের সমস্যা আছে, কোথাও সুশাসনের সমস্যা আছে। তাই বলে আপনার টাকা তুলে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরির প্রশ্নই ওঠে না। উঠলে এত দিনে এ দেশে দু-একটা ব্যাংক ধসে যেত। যায়নি, কারণ আপনার সব সমালোচনার পরেও ব্যাংক ব্যবস্থায় রয়েছে ওই তারল্য ও উদ্বৃত্ত তারল্যের উপস্থিতি, আর রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত কড়া চোখ। এ সময়ে কিছু স্বল্প স্থায়ী সমস্যাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে আপনার ব্যাংক হিসাবের টাকা যারা অকারণে আপনাকে ব্যাংক থেকে তুলে নিতে বলছে, তারা আপনার ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করছে না। সে ক্ষতিটার শিকার যাতে আপনি না হন, তাই ওপরের এতগুলো তথ্য-উপাত্ত-অঙ্ক। অঙ্কই কথা বলুক, আর কথা বলুক আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইতিহাস।

লেখক: দি সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কথাসাহিত্যিক, মাসরুর আরেফিন।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

মূল্যস্ফীতি ফের ১০ শতাংশ ছাড়াল

প্রকাশ: ০৭:১৬ পিএম, ১৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিলে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ শতাংশের ঘরে উঠেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে এখন ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। অর্থাৎ ৪ মাস পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার দশ শতাংশ ছাড়াল। আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। যা এপ্রিলে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়ায়। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে সাত বেসিস পয়েন্ট কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। মার্চে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।

অন্যদিকে, গ্রামে শহরের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। গত এপ্রিলে গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। শহরে এই হার ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পাশাপাশি গ্রামে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে এই হার ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি   বিবিএস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

মে মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে

প্রকাশ: ০৬:২২ পিএম, ১৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে দেশে এসেছে ৮১ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৮ কোটি ১৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স; যা আগের মাসের তুলনায় বেশি।

সোমবার (১২ মে) এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তথ্য অনুযায়ী, ঈদের মাস এপ্রিলে প্রতিদিনে এসেছিল ৬ কোটি ৮১ লাখ ২ লাখ ডলার। আর আগের বছরের মে মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৬ ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসের প্রথম ১০ দিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৭১ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৮ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার।

দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম ১০দিনে একক ব্যাংক হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এ সময় ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে আট কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ছয় কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এ ছাড়া প্রবাসী আয় সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে তিন কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তিন কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার এসেছে।

এদিকে গত এপ্রিল মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। গত মার্চে দেশে এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে চলতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২১৬ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর গত জানুয়ারি মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১০ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

রেমিট্যান্স   প্রবাসী আয়   বাংলাদেশ ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

রিজার্ভ কমে আবার ১৮ বিলিয়ন ডলারে

প্রকাশ: ১০:৪৫ পিএম, ১২ মে, ২০২৪


Thumbnail

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১৬৩ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ নামছে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

আগামীকাল সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ানোর পর আর কখনও নিচে নামেনি। আগামীকাল নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আকু একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে প্রতি দুই মাস অন্তর বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়।

একসময় শ্রীলঙ্কা আকুতে থাকলেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত বছর তারা নিজ থেকেই বেরিয়ে যায়।

আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্ত মানতে হচ্ছে। আইএমএফ আগামী জুনে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সময় অবশ্য শর্ত ছিল আগামী জুনে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রাখতে হবে। গত মার্চে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার।


রিজার্ভ   বাংলাদেশ ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হল বিডিবিএল

প্রকাশ: ০৪:১৬ পিএম, ১২ মে, ২০২৪


Thumbnail

পদ্মা-এক্সিম ব্যাংকের পর একীভূত হতে এবার কার্যক্রম শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল)।

রোববার (১২ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকে সোনালী ও বিডিবিএলের মধ্যে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। চুক্তিতে সই করেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম ও বিডিবিএলের এমডি হাবিবুর রহমান গাজী। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাছের, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
সমঝোতা স্মারক সই শেষে বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস সাংবাদিকদের বলেন, বিডিবিএল ব্যাংকের চার সূচকের মধ্যে শুধু খেলাপি ঋণ আদায়ে দুর্বলতা রয়েছে। সময় পাওয়া গেলে এই সমস্যাও কাটিয়ে ওঠা যেত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে একীভূত হতে হচ্ছে।
   
সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম সাংবাদিকদের বলেন, একীভূতকরণের কারণে বিডিবিএল ব্যাংকের কর্মীদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই। বরং ব্যাংকটি আরও সবল হবে। এমওইউ সইয়ের ফলে অডিট ফার্ম নিয়োগ নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
 
এসময় সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, আমরা অনেক চিন্তাভাবনা করেই মার্জারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা কোনো চাপের মুখে নয়, নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দুই ব্যাংকের দুই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলা কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো। আজকে বিডিবিএলের চেয়ারম্যানও ছিলেন এখানে। তার কিছু প্রশ্ন ছিল। গভর্নর সেগুলোর সন্তোষজনক জবাব দিয়েছেন।
 
এর আগে গত ১৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংক একীভূতকরণে সমঝোতা স্মারক সই করে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক। এর মাধ্যমে সবল এক্সিম ব্যাংক দ্বায়িত্ব নিয়েছে দুর্বল পদ্মা ব্যাংকের। ফলে পদ্মা ব্যাংক নামে থাকবে না আর কিছু, কার্যক্রম পরিচালিত হবে এক্সিম ব্যাংকের নামে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা একীভূত হয়ে গঠিত হয়েছিল বিডিবিএল।

সোনালী ব্যাংক   বিডিবিএল   একীভূত   বাংলাদেশ ব্যাংক   আব্দুর রউফ তালুকদার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা

প্রকাশ: ০১:০৫ পিএম, ১২ মে, ২০২৪


Thumbnail

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে লেনদেন চলছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রবিবার (১২ মে) লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসই শরীয়াহ্ সূচক ৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১২৪৮ ও ২০২৬ পয়েন্টে রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে লেনদেন হয়েছে ১৫৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।

রবিবার (১২ মে) এ সময়ে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২২১টির, কমেছে ৭০টির এবং অপরির্বতিত রয়েছে ৪৫টি কোম্পানির শেয়ার।

এরআগে, আজ লেনদেন শুরুর প্রথম ৫ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচক বাড়ে ২০ পয়েন্ট। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সূচক আগের অবস্থান থেকে আরও ১২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়। লেনদেন শুরুর ২০ মিনিট পর অর্থাৎ সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করে।

অপরদিকে, লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১৬ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করে। এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়।

এদিন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এ সময়ে ২৭টি কোম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ১৪টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টি কোম্পানি শেয়ারের দর।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন