বুধবার বিকাল। অফিসে বসে বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে দেখছি। মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ আমি। উল্লসিত তো বটেই। এর
মধ্যে মোবাইলে ফোনের পর ফোন আসছে।
খেলার উত্তেজনায় খেয়াল করিনি। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার পর ফোন ধরলাম।
একজন উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছেন। ভাই খবর শুনছেন। নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নাকি বহু লোক মারা গেছেন। বেশ কজন নেতাও গ্রেফতার। আমি বিরক্ত হয়েই একটা নিউজ চ্যানেলে রিমোট কন্ট্রোল চেপে চোখ রাখলাম। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। তিনি একজন নিরীহ নাগরিক। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নন। বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত নিয়ে যারা ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন তারা জানেন, এ ধরনের সহিংসতা
অনেক পুরনো সংস্কৃতি। স্বাধীনতার আগে ও পরে বিভিন্ন
সময়ে আন্দোলনে পুলিশ-বনাম রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের নানা আন্দোলনে পুলিশ আন্দোলনকারীদের প্রধান প্রতিপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস’ কিংবা গর্ভপাতবিরোধী আইন নিয়ে আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। সম্প্রতি চীনে করোনার বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলো। কয়েক দিন ধরে জার্মানিতে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ২৫ জন। সেসব
আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা
নিতান্তই নস্যি। বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায়
মহাসমাবেশ ডেকেছে। দুই মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে দলটি সমাবেশ করেছিল। কিন্তু ঢাকায় সমাবেশের আগে বিএনপি নিজেরাই পরিস্থিতি উসকে দেয়। একজন বিএনপি নেতা ঘোষণা করেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে
দেশ বেগম খালেদা জিয়ার কথায় চলবে। আরেক নেতা বলেন, বেগম জিয়াকে নয়াপল্টনের সমাবেশে নিয়ে আসা হবে। কেউ বললেন, ওই দিন থেকে
সরকারের পতন ছাড়া রাজপথ ছাড়া হবে না। একজন তো সরকারকে লালকার্ড
দেখিয়েই দিলেন। পুলিশ জানাল, নয়াপল্টনে নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা কোনো মাঠে
সমাবেশ করুন। বিএনপি বলল সম্ভব না। এর মধ্যে ৭
ডিসেম্বর বিকাল থেকে বিএনপি কর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এক নিরীহ মানুষের
প্রাণ যায়। এটাই কি বিএনপি চেয়েছিল।
রাজনীতিতে কি জীবনের চেয়ে
মৃত্যু আনন্দের। পুলিশ বিএনপি অফিসে অভিযান চালায়। ১৬০ বস্তা চাল উদ্ধার করে। সম্প্রতি বিএনপি কোনো ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে বলে আমার জানা নেই। তাহলে এত চাল কেন?
তার মানে বিএনপি ঢাকার এক ব্যস্ত সড়ক
অবরুদ্ধ করে ‘খিচুড়ি উৎসব’ করতে চেয়েছিল। বোমা উদ্ধারের কথা বাদই দিলাম। কিন্তু রাতেই দেখলাম, গুজবে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ১৬০ বস্তা চাল হয়ে গেল ১৬টি লাশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখলাম বহু মানুষের মৃত্যুর গুজব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ বিবৃতি দিল! শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপে উদ্বেগ জানাল। মনে হলো বাংলাদেশে যেন এই প্রথম এমন
ঘটনা ঘটল। কী আশ্চর্য! কী
বিস্ময়কর! অপপ্রচারের কোনো সীমারেখা নেই। কোনো বিচারেই এই আন্দোলনকে সরকার
পতনের তীব্র গণআন্দোলন বলা যাবে না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যমে এটিকে এমনভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন মনে হচ্ছে দেশে একটা তুলকালাম কা- ঘটছে। এই কথিত আন্দোলনের
প্রধান অনুষঙ্গ হলো ‘গুজব’। প্রতিনিয়ত নানা
রকম গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গত কয়েক মাসে
আন্দোলন না সরকারের পতনের
প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘গুজব’। রাজনীতি, অর্থনীতি,
মানবাধিকার, পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সব খানে পরিকল্পিত
গুজবে সরকারকে বিপর্যস্ত করার এক বহুমাত্রিক চেষ্টা।
সরকার হটানোর চেষ্টায় ‘গুজব’ এখন প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গুজব ছড়িয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে প্রায় দেউলিয়া। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেই। ব্যাংকে টাকা নেই। ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো- আগে গুজব ছড়ানো হতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, ফেসবুকে, ইউটিউবে। বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসে কিছু দন্ডিত এবং পলাতক ব্যক্তি একটি বিষয়ের ওপর নানাভাবে ও ভঙ্গিতে কথা
বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করত। এখন এই গুজব ছড়ানোর
বিষয়টি শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সীমাবদ্ধ নয়। বরং গুজব সৃষ্টি এবং গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম ও কয়েকজন বিশিষ্ট
সুশীল মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। একটি উদাহরণ দিতে চাই। গত মঙ্গলবার একটি
খ্যাতনামা ইংরেজি দৈনিকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঋণসংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হলো। ওই খবরে প্রধানমন্ত্রীর
সদ্য বিদায়ী মুখ্য সচিব এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককেও জড়ানো হলো। খবরটি এমনভাবে পরিবেশিত হলো যে একজন পাঠক
সহজেই মনে করবেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর মুখ্য সচিব চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে ঋণসংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তের জন্য বলেছেন। কিন্তু ওই দিনই মুখ্য
সচিব গণমাধ্যমে এ অসত্য সংবাদে
বিস্ময় প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন, ‘আমি সারপ্রাইজ’। অন্য সময়
হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কেবল একটি প্রতিবাদপত্র ওই পত্রিকায় পাঠানো
হতো। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব গণমাধ্যমে এই পত্রিকার অসত্যতা
অকপটে বললেন। দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় এবং প্রভাবশালী দৈনিক যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং একজন জেলা প্রশাসককে নিয়ে কল্পিত কাহিনি ছাপাতে পারে, তাহলে ‘গুজব’ কী ভয়াবহ রূপ
নিয়েছে তা সহজেই অনুমান
করা যায়। পাঠক একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ঋণসংক্রান্ত বিষয় তদন্তের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। অথচ রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে জড়িয়ে ফেলা হলো।
এই গুজব সন্ত্রাস শুরু হয় আরও আগে থেকেই। শ্রীলঙ্কায় যখন অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হলো। ঠিক সেই সময় আমাদের পরিচিত সুশীলরা প্রথম গুজবের ঢোল বাজাতে শুরু করলেন। বললেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হওয়ার পথে। এটি বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম লুফে নিল। সুশীল নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি পত্রিকায় বাংলাদেশ কীভাবে শ্রীলঙ্কা হচ্ছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। একটি প্রভাবশালী দৈনিকে লেখা হলো ‘অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে।’ নভেম্বর শেষ হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি। বরং বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সমীক্ষা পরিচালনা করেছে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ‘বোস্টন কনসালটিং গ্রুপ’ (বিসিজি)। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি নানাভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’ অথচ এ দেশের পন্ডিতরা বাংলাদেশকে প্রায় দেউলিয়া বানিয়ে ফেলেছেন। পন্ডিত এবং মূলধারার গণমাধ্যমের এই পরিকল্পিত ‘গুজব’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে চিৎকার-চেঁচামেচি। ‘শ্রীলঙ্কা’ গুজব চাপা পড়ল মানবাধিকার ইস্যুতে। ৭৬ জনের গুম নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী নিয়ন্ত্রিত একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই সরব ছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামের এ সংগঠনটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুজব শুরু করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর সময় থেকে। এ সংগঠনটিকে সে সময় বিত্তে টইটম্বুর যুদ্ধাপরাধী পরিবারগুলো লবিস্ট ফার্ম হিসেবে নিয়োগ করে। লবিস্ট ফার্ম হিসেবে এ সংস্থাটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে উপস্থাপন শুরু করে। তাদের দাবিকে যৌক্তিক এবং জোরালো করতে ছদ্মবেশী ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের রাজাকার’ ভাড়া করা হয়। ভাড়া করা হয় বাংলাদেশে যোগাযোগ আছে এরকম বিদেশিদের। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা কাছে টেনে নেয় ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যানকে। বিভিন্ন পেশায় আলোচিত স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্যদের যুক্ত করে। যেমন ‘অধিকার’-এর আদিলুর রহমান খান, বেলার সৈয়দ রেজওয়ানা হাসান, দৃকের শহীদুল আলম। ডেভিড বার্গম্যান যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন। অন্য তিনজন মুখোশধারী। বাইরে সুশীল ভিতরে রাজাকার। মানবাধিকার ইস্যুকে তারা কৌশলে সামনে নিয়ে আসেন। এদেরও প্রধান অস্ত্র ‘গুজব’। আদিলুর রহমান খান প্রথম ‘গুজব’র বটিকা প্রয়োগ শুরু করেন। ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতের তা-বের সময় তার প্রতিষ্ঠান ‘অধিকার’ ৬১ জনের মৃত্যুর খবর প্রচার করে। এসব খবর পশ্চিমাদের জন্য উপাদেয়। তারা এটি লুফে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, যাদের আদিলুর রহমান মেরে ফেলেছেন তারা সবাই জীবিত। দিব্যি মাদরাসায় পড়াশোনা করছেন। সৈয়দ রেজওয়ানা হাসান বাংলাদেশে গুম অধ্যায়ের সূচনা করেন। নিজের স্বামীকে গুম করে তিনি এক অসাধারণ এক্সপেরিমেন্ট করেন। ভাগ্যিস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত তাকে উদ্ধারে সক্ষম হয়। মূলত এই পরিবেশ আইনজীবীর গুমবিষয়ক নিরীক্ষার পর বাংলাদেশে গুম পর্বের সূচনা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের ভাড়া করা লবিস্ট ফার্ম বাংলাদেশে গুমের তালিকা প্রকাশ করে। এ তালিকা যাচাই-বাছাই না করেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন গ্রহণ করে। পরে দেখা গেল গুম হওয়াদের কেউ ভারতের জেলে। কেউ বাড়িতে বহাল তবিয়তে। কেউ ফিরে এসে গুমের রূপকথা বলছেন। বাংলাদেশই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে গুম হওয়া ব্যক্তি আবার ফিরে আসে। কী জাদু। এখন গুম নিয়ে প্রচারণা বন্ধ। কিন্তু বাংলাদেশের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। গত বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তাদের নিজস্ব একটি প্রক্রিয়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সহস্রাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপরও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আবার সেই মোদিই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাকে নজিরবিহীন সংবর্ধনা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরণ করে। যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব স্বার্থে এবং আন্তর্জাতিক কৌশলে বিভিন্ন দেশের ওপর নানা ধরনের চাপ দেয়। এর সঙ্গে মানবাধিকার বা গণতন্ত্রের সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের ‘কোয়াডে’ যোগদান না করা, চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক, রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক, ড. ইউনূসসহ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চায়। এ জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য এবং প্রতিবেদন তাদের বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের একটি সুযোগ করে দেয়। এ কারণেই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর এই নিষেধাজ্ঞার খবর আসে মানবাধিকার দিবসের দিনে। সঙ্গে সঙ্গে সুশীল সমাজ, কয়েকটি গণমাধ্যম যেন উল্লাসে ফেটে পড়ে। এ যেন তাদের বিজয়। শুরু হয় গুম নিয়ে গুজবের বন্যা। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় নানা প্রচারণা। ‘আয়না ঘরের’ গল্প যেন থ্রিলারকেও হার মানায়। এবার ১০ ডিসেম্বরের অনেক আগেই নিষেধাজ্ঞার নানা গুজব নানা মাধ্যমে ছড়ানো শুরু হয়েছে। কার কবে নিষেধাজ্ঞা হবে জ্যোতিষীর মতো কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন। এমনকি বিএনপি নির্বাচনে না এলে বাংলাদেশের ওপর কী কী নিষেধাজ্ঞা আসবে তার তালিকাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। যখন সরকার ‘গুম হওয়া’ একাধিক ব্যক্তির অবস্থান জানাল, তখন গুম নিয়ে গুজব বন্ধ হলো বটে, কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে গুজব বন্ধ হয়নি। মানবাধিকার দিবসের ঠিক আগে ৬ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১৫টি দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এক দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৫ দেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু আমার প্রশ্ন- ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট কি কোয়াডভুক্ত এ দেশগুলো এই বীভৎস এবং জঘন্য হত্যাকান্ডের নিন্দা করেছিল? না। এ দেশগুলো কি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো কালো আইন বাতিলের জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছিল? না করেনি। এ দেশগুলো কি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার নিন্দা করেছিল? এ বর্বর হামলার জন্য কারও ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল? তাহলে এখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, আইনের শাসন, সুশাসন ন্যায়বিচার নিয়ে এত কথা কেন? কেন এত মানবাধিকার নিয়ে মায়াকান্না। এর কারণ দুটি- প্রথমত, বাংলাদেশ যেন তার স্বাধীন, স্বতন্ত্র এবং স্বকীয় অবস্থান থেকে সরে এসে তাদের একান্ত অনুগত হয়। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর দ্বিতীয় প্রজন্মের গুজব মিশন তাদের বিভ্রান্ত করেছে। ’৭১-এ যারা সবচেয়ে বেশি এবং ইতিহাসের জঘন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তারাই এখন মানবাধিকারের ঠিকাদার। রাজাকারদের উত্তরাধিকাররাই এখন যেন বাংলাদেশে মানবাধিকারের পাহারাদার। এরা যে গুজব ছড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়, তার তৃতীয় উদাহরণ হলো দৃকের শহীদুল আলম। এ রাজাকার সন্তান নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যে মিথ্যাচারের গুজব ছড়াল তা গোয়েবলসকেও হার মানায়। আবার আধা রাজাকার সুশীল নিয়ন্ত্রিত পত্রিকাগুলো তাকে এক বিরল ব্যক্তিত্ব বানানোর কসরত করে সারাক্ষণ। মানবাধিকার ইস্যুকে পশ্চিমাদের খাদ্য বানিয়ে আমাদের সুশীল এবং মূলধারার গণমাধ্যম এবার ব্যাংকিং সেক্টরের মেরুদ- ভাঙার মিশনে নেমেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এখন চারদিক থেকে গুজবগুলো ছোড়া হচ্ছে। মূলধারার গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু গুজববিলাসী জনগণ প্রতিদিন ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসের গল্প শোনাচ্ছে। সকালে উঠে শুনি ১০টি ব্যাংক নাকি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দুপুরে শুনি, ব্যাংক নাকি টাকা দিতে পারছে না। রাতে বাসায় এলে সহধর্মিণী কার কাছ থেকে শুনে এসে আতঙ্কিত হয়ে বলেন, সব ইসলামী ব্যাংক নাকি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কত গুজব আপনি শুনবেন। কিন্তু একটু গভীরে গিয়ে খোঁজ নেবেন ব্যাংক আগে যেভাবে চলছিল এখনো সেভাবেই চলছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির পরও সোনালী ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা খোয়া যায়নি। বেসিক ব্যাংকের ভয়াবহ ঋণ জালিয়াতির পরও ব্যাংকটি টিকে আছে। ফারমার্স ব্যাংক নানা সংকটের পরও একজন গ্রাহকের একটি টাকাও মার যায়নি। তাহলে ইসলামী ব্যাংকের মতো একটি শক্তিশালী ব্যাংক ঋণ দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে? এসব গুজব কতটা অযৌক্তিক। গুজব গুজবই। গুজব কখনো সত্য হবে না। তাই গুজব টেকসই হয় না। কিন্তু গুজবে যে কী ভয়ংকর ক্ষতি হয় তার একটা উদাহরণ দিতে চাই। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল। বেলা ১টা ৭ মিনিট। পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক টুইট বার্তা প্রচার করে। এতে বলা হয়, ‘হোয়াইট হাউসে বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আহত হয়েছেন।’ বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। মুহূর্তেই এই সংবাদ ভাইরাল হয় এবং সরাসরি প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। তিন মিনিটে শেয়ারবাজার থেকে ১৩৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে যায়। গুজবের মুখে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কারনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, এরকম কিছুই হয়নি। বারাক ওবামা সুস্থ আছেন। এরপর এপি জানায়, তাদের টুইট আইডি হ্যাক করে গুজবটি ছড়ানো হয়েছে। গুজবে কী ভয়ংকর ক্ষতি হতে পারে এটি তার একটি উদাহরণ মাত্র। বাংলাদেশে এখন গুজবের প্লাবন। ফেসবুক, ইউটিউব থেকে শুরু করে মূলধারার গণমাধ্যম। সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ এখন গুজব গুজব খেলছেন।
গুজবে উপদ্রুত হচ্ছেন এ দেশের সাধারণ
জনগণ। আন্দোলন বা সমাবেশ নয়,
গুজব দিয়েই সরকারকে হটানোর সম্মিলিত চেষ্টা এখন দৃশ্যমান। প্রশ্ন হলো, আপনি গুজব রুখবেন কীভাবে। বিশ্বাসযোগ্যভাবে সত্য উপস্থাপনের মাধ্যমে। যেমনটি করেছিলেন হোয়াইট হাউসের প্রতিনিধি জে কারনি। তার
কথা জনগণ বিশ্বাস করেছিল। তিনি প্রথমেই গুজবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে গুজবের ব্যাপারে সরকার প্রথম নিস্পৃহ এবং উদাসীন থাকে। এসবকে পাত্তাই দেয় না। গুজব পল্লবিত হওয়ার পর সরকারের লোকজন
নড়েচড়ে বসেন। গুজবকে অসত্য বলেন। আবার নানা কারণে সরকারের অধিকাংশ লোকের কথায় সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। সরকারি বক্তব্য অবিশ্বাসের সংস্কৃতি এ দেশে দীর্ঘদিনের
পুরনো। এরকম পরিস্থিতিতে গুজবের বন্যায় ভাসছে দেশ। দ্রুত জনগণকে উদ্ধারের পথ খুঁজে বের
করতে হবে সরকারকেই। না হলে গুজবের
প্লাবনে সবকিছু ভেসে যাবে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
সুশীল ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বদিউল আলম মজুমদার আদিলুর রহমান খান
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো গত ৭ মে। আজ (১৩ মে) চতুর্থ দফায় ৯৬টি আসনে ভোট হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে কারও কোনো সংশয় ছিল না। বিশেষ করে এই নির্বাচনে বিজেপি এবার রেকর্ডসংখ্যক চারশ আসনের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন, এবার বিজেপির লক্ষ্য লোকসভায় ৪০০ আসন পাওয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এখন চারশ আসন তো দূরের কথা, শেষ পর্যন্ত ২৭২ আসনের ‘ম্যাজিক ফিগার’ বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট অর্জন করতে পারবে কি না, তা নিয়েই চিন্তা দেখা দিয়েছে। ভোটার উপস্থিতি কম, মোদির মুসলিম বিদ্বেষনীতি, চাকরির বাজারে হাহাকারের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ক্ষমতাসীনদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভারতের নির্বাচনের ফল কী হবে, সেটি জানা যাবে ৪ জুন। তবে এ নির্বাচন যে মোদির জন্য বা বিজেপির জন্য স্বস্তিদায়ক হচ্ছে না, সেটি এখন থেকেই বলা যায়।
গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে। তার আগে একটা রিহার্সাল অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে। এই নির্বাচনে ২ হাজার ৬০০ কাউন্সিলরের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থাকা কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি পেয়েছে ১ হাজার ৬১টি পদ। অন্যদিকে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি মাত্র ৫০৪টি কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়ে দলগতভাবে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। ৪০ বছরের ইতিহাসে এটি কনজারভেটিভ পার্টির সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টির অবস্থা যে ভীষণ নড়বড়ে, তা এই নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে। নির্বাচনের পর পার্লামেন্ট নির্বাচনে কনজারভেটিভদের ১৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কী হবে, সেটা না বলা গেলেও কনজারভেটিভ পার্টি যে আগামী নির্বাচন নিয়ে ভয়াবহ অস্বস্তি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে, সেটি হলফ করে বলা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ বছর নভেম্বরে। এই নির্বাচনে জো বাইডেনের অবস্থা তথৈবচ। জো বাইডেনকে কোনো জনমত জরিপেই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে না। আইনি মারপ্যাঁচ, যৌন কেলেঙ্কারি ডেমোক্রেটদের নানামুখী বাধা ইত্যাদি নানা সংকট থেকে মুক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে আবার প্রার্থী হওয়া ট্রাম্পের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে কি না সেটি যেমন প্রশ্ন, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো যে, জো বাইডেন এই নির্বাচনে কি দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ এবং ছাত্র আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা আজ ভূলুণ্ঠিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বকে জ্ঞান দেয়, মানবাধিকার চর্চার জন্য শাসন করে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এখন মানবাধিকার সংকটে। গাজায় ইসরায়েলের তাণ্ডবের প্রতিবাদে মার্কিন তারুণ্যের গণবিস্ফোরণ পুরো বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছে। আর এই গণবিস্ফোরণকে ঠেকাতে যেভাবে জো বাইডেন সরকার দমন নীতি গ্রহণ করেছে, তা তাকে সবচেয়ে কোণঠাসা অবস্থায় নিয়ে গেছে। জনগণ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিশ্বাস করছে না, জনপ্রিয়তার দিক থেকেও তিনি এখন তলানিতে অবস্থান করছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিজয়ী হয়েছিলেন অনেক লড়াই করে। বিজয়ের পর জনগণ তার পক্ষে কতটুকু আছে বা জনগণের মনোভাব কী, তা যাচাইয়ের একটি উপায় ছিল গত মার্চের স্থানীয় সরকার নির্বাচন। কিন্তু সে নির্বাচনে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দলের শোচনীয় ভরাডুবি ঘটেছে। তিনি বড় শহরগুলোতে মেয়র পদে যাদের প্রার্থী দিয়েছিলেন, তারা ধরাশায়ী হয়েছেন বিরোধী পক্ষের কাছে।
সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাসীন দলগুলোর অবস্থা ভালো না। নির্বাচনে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জের মুখে। জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অনেক স্থানেই বিকল্প নেতৃত্বের সন্ধান করছে নাগরিকরা। এর একটি বড় কারণ হলো, মানুষের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা। এরকম বাস্তবতায় বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাসীন দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক এবং অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই বিশ্ববাস্তবতায় বাংলাদেশের অবস্থা কী? বাংলাদেশে এখন পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচন চলছে। প্রথম ধাপের উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো গত ৮ মে (বুধবার)। এ উপজেলা নির্বাচনে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চেয়েছে; কিন্তু সে উদ্যোগও সফল হয়নি। নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রথম ধাপে ৩৬ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এটি সর্বনিম্ন ভোটের রেকর্ড। এটি নিঃসন্দেহে ভালো লক্ষণ নয়। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারতে যেমন ক্ষমতাসীন দল চ্যালেঞ্জের মুখে, পুনরায় তাদের ক্ষমতায় আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি তেমনটি নয়।
বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কেউ ক্ষমতাসীন দলের বিপর্যয়ের কথা কল্পনাও করেনি। যে দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল তারা কেউই ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেনি বা ক্ষমতায় আসার মতো জনপ্রিয়তা, নেতৃত্ব বা সাংগঠনিক দক্ষতা তাদের ছিল না। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় ছিল অবধারিত। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে যারা দলের মনোনয়ন পাননি সে বিদ্রোহী প্রার্থীদের। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৮ জন স্বতন্ত্র বিজয়ী হয়ে নির্বাচনের মান বাঁচিয়েছে। নির্বাচনকে ‘জীবন’ দিয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। উপজেলাতেও তাই আওয়ামী লীগ একই কৌশল গ্রহণ করেছে। উপজেলা নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা ছিল দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করলে বিএনপির জন্য নির্বাচনে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে—এমন গুঞ্জনও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি পুরোনো পথে হেঁটেছে। তারা উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শতাধিক বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে তাদের ৭ জন বিজয়ী হয়েছেন বলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। তবে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকূল রাজনীতির পরিবেশে নির্বাচন করে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করা যায় না। তার পরও যে উপজেলা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়ে বিএনপি নেতারা অংশগ্রহণ করেছে সেজন্য তারা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। গণতন্ত্রের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ সুস্থ রাজনীতির জন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু তার পরও উপজেলা নির্বাচন গণতন্ত্রের সংকটের বার্তা। নির্বাচন নিয়ে জনগণের অনীহা ক্ষমতাসীনদের জন্য অস্বস্তির। আওয়ামী লীগের সামনে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নেই। আওয়ামী লীগের এমন কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ নেই যারা জনপ্রিয়তা বা সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। তা ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের তীব্র সংকট চলছে। কদিন আগেই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাকে হটিয়ে তারা ক্ষমতা নিতে চায়, তাদের নেতা কে?’ এই নেতৃত্বের সংকটই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। অনেকেরই ধারণা, নেতৃত্ব সংকটের কারণেই বিএনপি নির্বাচনবিমুখ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে এখন ‘স্বেচ্ছা বন্দি’। তিনি ফিরোজায় বাসভবনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রাজনীতিতে তার কোনো আগ্রহ নেই। তিনি নির্বাচনের অযোগ্য। অন্যদিকে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ একাধিক মামলায় দণ্ডিত। তার দেশে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর এ কারণে বিএনপি এখন নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। বিএনপির লক্ষ্য সুস্পষ্ট। তারা নির্বাচন থেকে দূরে থেকে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়। গণতন্ত্রকে সংকটে ফেলতে চায়। গণতন্ত্রে সংকট দেখা দিলে তৃতীয় কোনো পক্ষের ক্ষমতায় আসার পথ উন্মুক্ত হবে।
তৃতীয় পক্ষ ক্ষমতায় এলে বিএনপি তার রাজনৈতিক পুনর্গঠন নতুন করে শুরু করতে পারবে। অনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করে তারেক জিয়া দেশে ফেরা, খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফের বিষয়গুলো তারা ফয়সালা করতে চায়। এজন্য নির্বাচন বা গণতান্ত্রিক রীতিতে ক্ষমতায় আসা নয়; বরং একটি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোই তাদের প্রধান লক্ষ্য। এ কারণেই তারা যতটা না জনমুখী কর্মসূচি পালন করে তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ধর্ণা দেয়, বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশগুলোকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা বিএনপির রাজনীতির প্রধান কৌশল। ফলে নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের খুশি বা আত্মতুষ্টির কারণ নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪২ শতাংশ। এ নিয়েও সাধারণ জনগণের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় এবং সন্দেহ রয়েছে। তার পরও একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ওই নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতিকে সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছে। তা ছাড়া বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে ভোটার উপস্থিতি কম হবে—এটাই স্বাভাবিক বিষয়। বিএনপি অংশগ্রহণ না করার পরও যে একতরফা নির্বাচন হয়নি, বিশেষ করে ২০১৪-এর মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন প্রবণতা থেকে আওয়ামী লীগ বেরিয়ে আসতে পেরেছে, সেটি নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের বড় অর্জন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন জনগণ আরও ভোটবিমুখ। এটি আওয়ামী লীগের জন্য অবশ্যই অশনিসংকেত। গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ভোটাররা যদি গণতন্ত্রের প্রতি অনাগ্রহী হন, ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে না যান, ভোটাররা যদি তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ না দেখান তাহলে গণতন্ত্র সংকটে পড়বেই। আর গণতন্ত্র দুর্বল হলে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বে আওয়ামী লীগ। এ কারণে অন্য দেশগুলোতে যখন ক্ষমতাসীনরা ভোটে জিতবে কি জিতবে না সেই অনিশ্চয়তায়, সেখানে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বলে আমি মনে করি। নির্বাচনে পরাজয়ের শঙ্কার চেয়ে গণতন্ত্রের মৃত্যুর শঙ্কা বেশি ভয়াবহ।
উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন। এসব নির্বাচনে অতীতে দেখা গেছে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ থাকে জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে উৎসাহী হয়। এ নিয়ে গ্রামাঞ্চলে আলাপ-আলোচনা তর্কবিতর্ক হয় এবং একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এবার উপজেলা নির্বাচনে সেটি হয়নি। কেন হয়নি তার কারণ আওয়ামী লীগকে খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সমর্থক আছে। তারাও কেন ভোট দিতে যাচ্ছেন না? এর উত্তর খুঁজতে হবে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটিকে। দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করেও আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনকে অবাধ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে পারেনি। এই না পারার কারণ হলো আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষমতা লোভ, বাড়াবাড়ি এবং এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদগ্র বাসনা। তারা দমন করার চেষ্টা করেছে পেশি শক্তি প্রয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে নষ্ট করেছে। সাধারণ মানুষ সব জানে, সব বোঝে। তারা এসব ঝুট-ঝামেলার মধ্যে যেতে চায়নি। সে কারণেই তারা ভোট থেকে আগ্রহ ফিরিয়ে নিয়েছে। অনেক জায়গায় নির্বাচনের ফল ছিল পূর্ব অনুমিত। তারা জানত যে, এমপির ভাই দাঁড়িয়েছে, এমপির ছেলে দাঁড়িয়েছে কাজেই তাদের বিজয় ঠেকাবে কে। এই বোধটা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। আওয়ামী লীগকে এ মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না বটে, তবে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না, তা হলফ করে কে বলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে আবার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তিনি এই ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। অতিডান এবং অতিবামরা নতুন করে ষড়যন্ত্র করেছে বলে তিনি নেতাদের সতর্ক করেছেন।
আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ষড়যন্ত্রের কাছেই আওয়ামী লীগ বারবার পরাজিত হয়েছে, হয়েছে বিপর্যস্ত। আর এই ষড়যন্ত্র শুধু বাইরে থেকে হয়নি, দলের ভেতর থেকেও হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র ঠেকানোর একটাই উপায়, তা হলো গণতন্ত্রকে মুক্ত স্রোতের মতো প্রবাহিত হতে দেওয়া, জনগণকে উৎসাহিত করা, ভোটকেন্দ্রে যাতে ভোটাররা যান, তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া। উপজেলা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য প্রচারের নির্দেশ দেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? শেখ হাসিনা মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করার জন্য যে নির্দেশ দেন, তা কেউ মানেনি। যারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তারাও ষড়যন্ত্রের অংশ। বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংকটে। বিরোধী দলহীন গণতন্ত্র মুণ্ডুহীন দেহ। সরকারের কোনো জবাবদিহি থাকে না। এতে ক্ষমতাসীনরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বদের দূরত্ব তৈরি হয়। এভাবেই পল্লবিত হয় বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া। অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দখলের পথ তৈরি হয়। তেমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছেই যেতে হবে।
লেখক:
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল:
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৭ মে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হলো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করলাম। যে যেভাবে পেরেছে ১৭ মে তে নিজেদেরকে জানান দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সংবাদপত্রগুলো ভরে গেছে শেখ হাসিনার স্তুতিতে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে বন্দনা কতটা আসল, কতটা চাটুকারিতা তা নিয়ে গবেষণা হতেই পারে। ১৭ মে ১৯৮১ তে যখন তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, তখন সাধারণ মানুষের ভালবাসা আবেগ ছিলো হৃদয় নিংড়ানো, পুরোটাই নিখাঁদ। ৪৩ বছর পর এই উচ্ছ্বাস কি তেমনি অকৃত্রিম?
বাংলাদেশে সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধি আছেন যাদেরকে মনে করা হয় তারা মার্কিনপন্থী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে তারা গর্ব অনুভব করেন। কথায় কথায় মার্কিন দূতাবাসে যান। সেখানে প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশভোজে মিলিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলে তারা তার চেয়ে তিন ধাপ গলা উঁচিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কোন ভালবাসা নেই, প্রেম নেই, আগ্রহ নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং নীতি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করাই যেন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এই সমস্ত সুশীলদেরকে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোফোন।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো গত ৭ মে। আজ (১৩ মে) চতুর্থ দফায় ৯৬টি আসনে ভোট হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে কারও কোনো সংশয় ছিল না। বিশেষ করে এই নির্বাচনে বিজেপি এবার রেকর্ডসংখ্যক চারশ আসনের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন, এবার বিজেপির লক্ষ্য লোকসভায় ৪০০ আসন পাওয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এখন চারশ আসন তো দূরের কথা, শেষ পর্যন্ত ২৭২ আসনের ‘ম্যাজিক ফিগার’ বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট অর্জন করতে পারবে কি না, তা নিয়েই চিন্তা দেখা দিয়েছে। ভোটার উপস্থিতি কম, মোদির মুসলিম বিদ্বেষনীতি, চাকরির বাজারে হাহাকারের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ক্ষমতাসীনদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভারতের নির্বাচনের ফল কী হবে, সেটি জানা যাবে ৪ জুন। তবে এ নির্বাচন যে মোদির জন্য বা বিজেপির জন্য স্বস্তিদায়ক হচ্ছে না, সেটি এখন থেকেই বলা যায়।
দেশের মানুষের এমনিতেই নাভিশ্বাস অবস্থা। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ সংকটে চেয়েও বড় অস্থিরতা হলো জিনিস পত্রের দাম। অস্থির সময়ে মানুষের জন্য বিনোদনের কোন খোরাক নেই। তবে প্রধান নির্বাচন কাজী হাবিবুল আউয়াল মানুষের জন্য অস্বস্তির তাপদাহে এক পশলা বৃষ্টির মতো, বিনোদনের খোরাক যোগালেন। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ১৩৯ টি উপজেলার নির্বাচনের পর সাংবাদিকদের তিনি বললেন, ‘ধান কাটার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে আসেননি।’ নিষ্প্রাণ উপজেলা নির্বাচনে সিইসির বক্তব্যই একমাত্র চমক।