উদয়ন, নবারুণ, সোভিয়েত নারী- এসব ছিল
কিশোর বয়সের উত্তেজনার কিছু নাম। কিছু আবেগ আর ভালোবাসার নাম। অসাধারণ ছাপা। পরিপাটি
পরিচ্ছন্ন কিছু ম্যাগাজিন। এই ম্যাগাজিনগুলো আসত সুদূর সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া)
থেকে। ছোটবেলায় বিস্ময়ে অবাক হতাম। প্রতিটি ম্যাগাজিনে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় থাকত। ম্যাগাজিনগুলোর
অঙ্গসৌষ্ঠব এতই পরিপাটি ছিল যে, কেউ এসব ম্যাগাজিন উপেক্ষা করতে পারত না। সে সময় ‘উদয়ন’-এর
প্রতিটি সংখ্যায় রুশ উপকথা প্রকাশ পেত। প্রতিটি উপকথার মধ্যে শিক্ষণীয় বক্তব্য থাকত।
এরকমই একটি রুশ উপকথা আজ মনে পড়ে গেল। এক ব্যক্তি ঠিক করলেন তার জীর্ণ বাড়িটা মেরামত
করবেন। বাড়ি মেরামতের জন্য তিনি একজন কারিগরের (মিস্ত্রি) সঙ্গে কথা বললেন। কারিগর
বাড়িটি সরেজমিন দেখলেন। চালটা ফুটো। ওই ফুটো দিয়ে বরফ ঢুকে ঘরের মেঝে জমাট হয়ে যায়।
দেয়ালে চির, জানালা ভাঙা। এসব দিয়ে হিমশীতল বাতাস আসে। কারিগর সব দেখেশুনে ঘর মেরামতের
একটা হিসাব দিলেন। এই হিসাব দেখে তো বাড়ির মালিক রীতিমতো আঁতকে উঠলেন। এত রুবল (রুশ
মুদ্রা) তিনি কোথায় পাবেন? কারিগর পরামর্শ দিলেন, মহাজনের কাছে যাও। ঋণ নাও। তারপর
আস্তে আস্তে শোধ করবে। বাড়িওয়ালা দেখলেন পরামর্শ মন্দ না। গেলেন মহাজনের কাছে। মহাজন
বললেন, ঋণ তো আমি দিতেই পারি। কিন্তু ঋণের গ্যারান্টি দিতে হবে। মহাজন বললেন, তোমার
বাড়ির দলিল আমাকে দাও। ঋণ শোধ হয়ে গেলে নিয়ে যেও। বাড়িওয়ালা রাজি হলেন। জমির দলিল দিয়ে
ঋণ নিলেন। কারিগরকে দিয়ে বাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করলেন। এর মধ্যে কারিগরের খরচের ফর্দ
বাড়ে। নতুন নতুন খরচ যুক্ত হয়। বাড়িওয়ালাও মহাজনের কাছ থেকে আরও ঋণ নেন। একপর্যায়ে
বাড়ি মেরামতের কাজ শেষ হলো। মহাজনও এসে হাজির হলেন। ঋণ শোধ কর। বাড়িওয়ালা বললেন, আমি
এখন কীভাবে ঋণ শোধ করব। আমি তো আস্তে আস্তে ঋণ পরিশোধের কথা বলেছি। মহাজন নাছোড়বান্দা।
একপর্যায়ে জোর করে বাড়িওয়ালাকে উচ্ছেদ করলেন। মেরামত করা বাড়ি দখল করলেন মহাজন। আর
বাড়ির মালিক হলেন উদ্বাস্তু। সর্বহারা। এই গল্পের শিক্ষা হলো, তোমার সাধ্যের বাইরে
গিয়ে কিছু করতে যেও না। সব হারাবে। বহু বছর পর বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা পড়ে
রুশ ওই উপকথা মনে পড়ে গেল। বাংলাদেশ রাষ্ট্র মেরামতের জন্য বিএনপি কোন মহাজনের কাছে
হাত পাতবে? কে হবে এই রাষ্ট্র মেরামতের কারিগর? বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখার
২৭ দফার দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো- এই ২৭ দফাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করবে।
অন্যটি হলো- ২৭ দফায় কী আছে। ‘রাষ্ট্র
মেরামত’ মূলত একটি উপনিবেশিক ধারণা। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পর্তুগাল পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশ অন্যায়ভাবে দখল করেছিল। লুণ্ঠন করেছিল। সভ্যতা এবং মানবতার চরম অবমাননা করেছিল।
আর তাদের এই অপরাধের বৈধতা দেওয়ার জন্য তারা ‘রাষ্ট্র মেরামত’ তত্ত্ব হাজির করেছিল।
বর্বর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের মাধ্যমে ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে ‘সভ্যতা’ শিখিয়েছিল। দক্ষিণ
আফ্রিকায় ভয়ংকর হিংস্রতার পর রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ডাক দিয়েছিল। একালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আফগানিস্তান, ইরাক আক্রমণ করে তছনছ করেছিল। সেই ক্ষত সারানোর জন্য ‘রাষ্ট্র মেরামত’
তত্ত্ব হাজির করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘রাষ্ট্র কাঠামো
উন্নয়নে কৌশলগত সহায়তা প্রকল্পে’ ১২০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। যা মূলত লুণ্ঠন হয়েছে।
হামিদ কারজাইয়ের মতো সুশীল থেকে ভাড়াটে রাজনীতিবিদরা শত শত কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন।
আফগানিস্তানে ‘রাষ্ট্র মেরামত’ তত্ত্ব বুমেরাং হয়েছে। দেশটি থেকে রাষ্ট্র মেরামতের
ঠিকাদার যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো পালিয়ে বেঁচেছে। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে হামিদ
কারজাইয়ের নেতৃত্বে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ গঠিত হয়। এ সময় মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায়
হামিদ কারজাই যে ‘স্ট্রাকচারাল রিফর্ম’ কার্যক্রম শুরু করে সেটিই বিএনপির ‘রাষ্ট্র
মেরামত’ কর্মসূচি। মার্কিন ফর্মুলায় এ রাষ্ট্র মেরামত কর্মসূচির মাধ্যমে ২০০৪ সালে
আফগানিস্তানে একটি নতুন সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। ২০১৪ সালে আরেক সুশীল রাজনীতিবিদ আশরাফ
ঘানি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানে মার্কিন ‘রাষ্ট্র
মেরামত’ ব্যর্থ হয়। আফগানিস্তানে কট্টর মৌলবাদীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ইরাক, লিবিয়াতেও মার্কিন আগ্রাসনের পর ‘রাষ্ট্র মেরামত’ কর্মসূচি বা ‘ডেমোক্রেটিক স্ট্রাকচারাল
রিফর্ম’ সামনে আসে। এসব প্রেসক্রিপশন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্ভাবিত। এসব ‘উদ্ভাবন’
নিরীক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯ ডিসেম্বর
বিএনপির ২৭ দফা রাষ্ট্র মেরামত কর্মসূচি দেখার পর অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর মিলে
যায়। ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ঘটনার পর কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
থেকে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি দেওয়া হলো। ১০ ডিসেম্বরে গোলাপবাগের সাদামাটা সমাবেশের
পর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন কেন পিটার ডি হাস শাহীনবাগে ছুটে গেলেন?
কেন তিনি নিরাপত্তা নিয়ে গোস্সা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। এরপর বিএনপির
রাষ্ট্র মেরামতের ঘোষণা। সেই পুরনো খেলায় কি ফিরে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? আফগানিস্তানে
যা করতে পারেনি, তা কি এখন বাংলাদেশে করতে চায়? এ জন্য বিএনপিকে ব্যবহার করছে? সাজেদুল
নিখোঁজ ১০ বছর ধরে। তিনি গুম হয়েছেন না স্বেচ্ছায় নিখোঁজ তা তদন্তাধীন বিষয়। গত ১০
বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আরও তিনজন রাষ্ট্রদূত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর মধ্যে
ড্যান মজিনার (নভেম্বর ২৪, ২০১১ থেকে জানুয়ারি, ১২, ২০১৫) সময়েই সাজেদুল নিখোঁজ হন।
কিন্তু মজিনা শাহীনবাগে যাননি। সাজেদুলের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে কোনো কথা বলেননি ড্যান
মজিনা। মজিনার পর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন মার্শা বার্নিকাট।
বার্নিকাট খুবই সামাজিক ছিলেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। বিদায়ের
আগে তিনি সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে
অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। ২০১৮
সালের নভেম্বরে বিদায়ের আগে বার্নিকাট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময়ও ওই
ঘটনায় তিনি এতটুকু উদ্বেগ এবং অস্থিরতা দেখাননি। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে
দায়িত্ব পালন করেন বার্নিকাট। তিনি একবারের জন্যও শাহীনবাগে যাননি। বার্নিকাটের পর
২০১৮-এর ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেন আর্ল মিলার। মিলার তিন
বছরের বেশি সময় বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনিও ‘মায়ের ডাকে’ সাড়া দেননি।
হঠাৎ কী এমন ঘটল যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সকালে শাহীনবাগে ছুটে যেতে হলো। গোলাপবাগের
মিশন কাক্সিক্ষত ফলাফল আনতে পারেনি, এ জন্যই কি শাহীনবাগের নাটক সাজানো হয়েছিল। যে
কোনো নিখোঁজ উদ্বেগের। নিখোঁজ ব্যক্তিকে নিয়ে যে কী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয় তা ভুক্তভোগী
পরিবারই বলতে পারে। প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস’ সে
দেশে নিখোঁজ এবং গুম হওয়া মানুষের তালিকা তৈরি করে। ২০২২ সালেও হারিয়ে যাওয়া অজ্ঞাত
ব্যক্তিদের ডাটাবেজ প্রকাশিত হয়েছে। এ তালিকায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৬
লাখের বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়। প্রতিবছর প্রায় ৪ হাজার ৪০০ অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধার
করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি লাখে ছয়জনের বেশি মানুষ বছরে নিখোঁজ হন। যুক্তরাষ্ট্রে
২০২১ সালে নিখোঁজ সংক্রান্ত মামলা নথিভুক্ত হয়েছে ৫ লাখ ২১ হাজার ৭০৫টি। এর মধ্যে
৪ লাখ ৮৫ হাজার নিখোঁজ ঘটনার সুরাহা হয়েছে। প্রায় ৩৬ হাজার নিখোঁজ (গুম) হওয়া ব্যক্তির
কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আমি জানি না, যুক্তরাষ্ট্রের এই দীর্ঘ গুমের তালিকায় রাষ্ট্রদূতের
কোনো স্বজন আছেন কি না। সে জন্যই গুম নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি শাহীনবাগে ছুটে গেছেন
কি না। কিন্তু বাংলাদেশে ‘গুম’ রীতিমতো লুকোচুরি গল্পের মতো। দীর্ঘদিন শুনলাম হারিছ
চৌধুরী গুম হয়েছেন। বিএনপি নেতারা এ নিয়ে কঠোর বিবৃতিও দিলেন। কিন্তু তার স্বাভাবিক
মৃত্যুর পর আবিষ্কার হলো নাম বদলে তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। হারিছ চৌধুরী মরে প্রমাণ
করলেন তিনি গুম হননি। ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামি সাবেক
ওয়ার্ড কমিশনার এবং বিএনপি নেতা কাইয়ুম। তাভেলা সিজার হত্যাকান্ডের পর তিনি দেশ থেকে
পালিয়ে গেলেন। বলা হলো, সাবেক এই ওয়ার্ড কমিশনার গুম হয়েছেন। বাড্ডায় তার কর্মীরা সমাবেশ
করল। ওমা, এখন দেখি তিনি লন্ডন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে ঘুরছেন। তারেক জিয়ার ক্যাশিয়ার
হিসেবে তিনি এই দেশ থেকে ওই দেশে ঘুরছেন বলে কেউ কেউ বলেন। বিএনপির আরেক নেতা সালাউদ্দিন
আহমেদকে নিয়েও কী লঙ্কাকান্ডই না হলো। তারপর তিনি ভারতে ‘আবিষ্কৃত’ হলেন। ফরহাদ মজহার
তো গুম নাটকের প্রধান চরিত্র হতে গিয়ে বুড়ো বয়সে জাতির সামনে তার ‘পরকীয়া’ উন্মোচন
করলেন। এভাবেই গুমের তালিকা ছোট হচ্ছে। ১৩৬ থেকে ৭৬। এখন তা ১৭ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
এ নিয়ে যেভাবে এখন মাতম তোলা হচ্ছে তার পেছনে অবশ্যই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি রয়েছে। ‘মায়ের
ডাক’ সংগঠনটি বিতর্কিত। দুটি রাজনৈতিক দলের মদদে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় এই সংগঠনটি গড়ে উঠেছে।
গুম অনাকাক্সিক্ষত। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে একজন ব্যক্তিরও গুম হওয়া কাম্য নয়। একজন
মানুষেরও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড দুর্ভাগ্যজনক। আবার গুমের নাটক সাজিয়ে রাজনৈতিক
ফায়দা হাসিলের চেষ্টা তার চেয়েও গর্হিত কাজ। ‘মায়ের ডাক’ কথিত গুমের ঘটনার সস্তা রাজনীতিকরণ
করছে। এটি এখন বিএনপি এবং জামায়াতের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এরকম একটি রাজনৈতিক
পক্ষপাতপূর্ণ সংগঠনের আমন্ত্রণে শাহীনবাগে গিয়ে পিটার হাস কূটনৈতিক রীতিনীতি ও শিষ্টাচার
লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা তিনি নিশ্চয়ই একান্তে ভেবে দেখবেন। তবে বিএনপির রাষ্ট্র মেরামত
রূপরেখার পর শাহীনবাগে অভিযানের আসল কারণ আমরা সহজেই বুঝতে পেরেছি। তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র
এ দেশের সুশীল নামধারী হামিদ কারজাইদের শাসন কায়েম করতে চায়? এ জন্য কি এ দেশে গণতন্ত্র,
মানবাধিকার নিয়ে এত আর্তনাদ। ১৯৭৫ সালে এগোনি বুস্টার বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত
ছিলেন। ১৫ আগস্টের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের ঘটনায় তিনি কী করেছেন, তা লরেন্স লিফশুলৎস-এর
‘বাংলাদেশ : দি আনফিনিশড রেভল্যুশন’ এবং অ্যান্থনি ম্যাসকারনহাসের ‘এ লেগেসি অব ব্লাড’
বই দুটোতে ভালোভাবেই আছে। তাই ‘মানবাধিকার’ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একেক দেশে, বিভিন্ন
সময়ে ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়। এর পেছনে তাদের উদ্দেশ্য থাকে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র মেরামত
নিরীক্ষা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণেই তাদের ইদানীং এত মানবাধিকার চর্চা। তবে হাস্যকর
বিষয় হলো, সুশীল এবং পশ্চিমা দেশগুলো প্রণীত এই রাষ্ট্র মেরামত ফর্মুলা এমন একটি রাজনৈতিক
দলকে দিয়ে করানোর চেষ্টা হচ্ছে, যে তা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিএনপিকেই বিলুপ্ত করতে
হবে। কীভাবে? আসুন পাঠক ২৭ দফা এবং বিএনপির অতীত কর্মকান্ড একটু পাশাপাশি মিলিয়ে দেখি।
বিএনপির ২৭ দফার প্রথম দফায় সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে
‘সকল অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনগুলো পর্যালোচনা
করে এসব রহিত বা সংশোধন করা হবে।’ হায় সেলুকাস। কী বিচিত্র। যাদের হাতে ’৭২-এর সংবিধান
ধর্ষিত হয়েছিল, তারাই করবে ‘সংবিধান কমিশন’! জিয়া ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা,
সমাজতন্ত্র উৎপাটন করেছিলেন। এই স্বৈরাচারী একনায়ক ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের
বিধান বাতিল করেছিলেন। দিয়েছিলেন একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ।
এই বিএনপি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল চেতনা ধ্বংস করেছিল।
আজ তারা সংবিধানের অগণতান্ত্রিক বিধান বাতিলের কথা বলে! ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট
ক্ষমতায় এসে এক ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার জন্য সংবিধান সংশোধন করেছিল।
১৯৮১ সালে বিচারপতি সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করতে সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী
করেছিল। তাদের মুখেই আজ সংবিধানের জন্য আর্তনাদ। কী হাস্যকর! বিএনপির ২৭ দফার দ্বিতীয়
হলো- ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা। এতে বলা হয়েছে ‘প্রতিহিংসা’ ও ‘প্রতিশোধ’-এর রাজনীতির
বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। বিএনপি
তাহলে কর্নেল তাহের হত্যাকান্ডের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে? ক্ষমতায় থাকার জন্য
জিয়া যে হাজার হাজার সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিক হত্যা করেছিলেন, তার জন্য দুঃখ প্রকাশ
করবে? বেগম জিয়া ও তারেক জিয়ার নেতৃত্বে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রতিহিংসার
রাজনীতির সবচেয়ে বীভৎস উদাহরণ। রেইনবো নেশনের আগে এ জন্য বিএনপি কি জাতির সামনে কান
ধরে দাঁড়াবে? একবার বলবে ভুল করেছি, আর কখনো করব না? ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের
রাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে যে সন্ত্রাস সহিংসতা, তারই বা কী ব্যাখ্যা
দেবে বিএনপি? বিএনপির রাষ্ট্র মেরামত রূপরেখার তৃতীয় বিষয় হলো- তত্ত্বাবধায়ক সরকার
প্রতিষ্ঠা। তাহলে তো জাতির সামনে বিএনপিকে অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে- কে এম হাসানকে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করতে কেন এমন নির্লজ্জ চেষ্টা করেছিল। কেন তারা রাষ্ট্রপতি
থাকা সত্ত্বেও ড. ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে পুরো ব্যবস্থাকে ধ্বংস
করেছিল। ২৭ দফার চতুর্থ দফায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার
কথা বলা হয়েছে। ’৯১ সালে দেশ যখন সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরে তখন বিএনপি ছিল ক্ষমতায়। তারা
কেন প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য করেনি? বিএনপি নেতারা কেন একজন
মফস্বলের রাজাকারকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে সর্বোচ্চ এই সাংবিধানিক পদের মর্যাদা নষ্ট করেছিল?
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে যে আচরণ বিএনপি করেছিল, তাতে কি
‘রাষ্ট্রপতি’ পদকেই অসম্মান করা হয়নি? রাষ্ট্র মেরামত রূপরেখায় বিএনপি দুবারের বেশি
কেউ রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবে না বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে
কেউ পর পর দুবারের বেশি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী হন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ
দলের নেতা। ভারত এমনকি যুক্তরাজ্যেও দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না,
এরকম বিধান নেই। কারণ এটি সংসদীয় চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশে এই ফর্মুলা প্রথম
আবিষ্কার হয় ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্যই এই তত্ত্ব হাজির করা
হয়েছিল। বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়া আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন
করে ওই সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। এর প্রতিবাদ করে একটি চমৎকার বিবৃতি দিয়েছিলেন
এখনকার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছিলেন, ‘বিরাজনীতিকরণ
এবং মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য এরকম উদ্ভট সংস্কার প্রস্তাব। যারা এই প্রস্তাব
দিয়েছে তারা অগণতান্ত্রিক সরকারের উচ্ছিষ্ট ভোগী, কুলাঙ্গার।’
বিএনপি নেতারা কি মান্নান ভূঁইয়ার ফর্মুলা
গ্রহণ করল? এই রূপরেখা ঘোষণার মাধ্যমে তারা কি আসলে বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে বহিষ্কার
করল? কারণ এই রূপরেখা বাস্তবায়িত হলে বেগম জিয়া আর কোনো দিন প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন
না। রূপরেখার ৬ থেকে ২৭ পর্যন্ত দফাগুলো কোনোটাই বিএনপির নয়। বিএনপির ঘোষণাপত্র, প্রতিষ্ঠাকালে
প্রণীত ১৯ দফার সঙ্গে এর অনেক ধারা সাংঘর্ষিক। যেমন বিএনপির ঘোষণাপত্রে ইসলামী মূল্যবোধ
প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। অথচ রূপরেখার ১৬তম দফায় ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ এই
ধর্মনিরপেক্ষ নীতির কথা বলা হয়েছে। বিএনপির কোনো দলিলে আজ পর্যন্ত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে
রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে স্বীকার করা হয়নি। ১৯তম দফায় বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশের ভূখন্ডের
মধ্যে কোনো রকম সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না।’ স্পষ্টতই ভারতকে খুশি করতে এমন
বক্তব্য আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু এরকম বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতো যদি না দশ ট্রাক অস্ত্রের
ব্যাপারে বিএনপি একটি যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ওই
অস্ত্র ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্যই আনা হয়েছিল। এভাবে রূপরেখার দফাওয়ারি পোস্টমর্টেম
করা যায়। করলেই দেখা যাবে, বিএনপি সুশীল এবং পশ্চিমাদের দেওয়া এক ‘ব্যবস্থাপত্র’ না
দেখেই ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্র মেরামতের ফর্মুলা তাই বিএনপির নয়। মেরামতের কারিগরও বিএনপি
হবে না-এটা নিশ্চিত।
সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে হটাতে যুক্তরাষ্ট্র উগ্র মৌলবাদী তালেবানদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল। তাদের অস্ত্র দিয়েছিল। অর্থ দিয়েছিল। আবার সেই তালেবানদেরই সন্ত্রাসী বলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এখন বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থি আধা মৌলবাদী জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বিএনপি দিয়ে আওয়ামী লীগকে যারা হটাতে চায়, তারা আসলে বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চায়। বাংলাদেশকে বানাতে চায় আফগানিস্তান। রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা সেই খায়েশের এক বার্তা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
সুশীল ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বদিউল আলম মজুমদার আদিলুর রহমান খান
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো গত ৭ মে। আজ (১৩ মে) চতুর্থ দফায় ৯৬টি আসনে ভোট হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে কারও কোনো সংশয় ছিল না। বিশেষ করে এই নির্বাচনে বিজেপি এবার রেকর্ডসংখ্যক চারশ আসনের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন, এবার বিজেপির লক্ষ্য লোকসভায় ৪০০ আসন পাওয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এখন চারশ আসন তো দূরের কথা, শেষ পর্যন্ত ২৭২ আসনের ‘ম্যাজিক ফিগার’ বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট অর্জন করতে পারবে কি না, তা নিয়েই চিন্তা দেখা দিয়েছে। ভোটার উপস্থিতি কম, মোদির মুসলিম বিদ্বেষনীতি, চাকরির বাজারে হাহাকারের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ক্ষমতাসীনদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভারতের নির্বাচনের ফল কী হবে, সেটি জানা যাবে ৪ জুন। তবে এ নির্বাচন যে মোদির জন্য বা বিজেপির জন্য স্বস্তিদায়ক হচ্ছে না, সেটি এখন থেকেই বলা যায়।
গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে। তার আগে একটা রিহার্সাল অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে। এই নির্বাচনে ২ হাজার ৬০০ কাউন্সিলরের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থাকা কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি পেয়েছে ১ হাজার ৬১টি পদ। অন্যদিকে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি মাত্র ৫০৪টি কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়ে দলগতভাবে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। ৪০ বছরের ইতিহাসে এটি কনজারভেটিভ পার্টির সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টির অবস্থা যে ভীষণ নড়বড়ে, তা এই নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে। নির্বাচনের পর পার্লামেন্ট নির্বাচনে কনজারভেটিভদের ১৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কী হবে, সেটা না বলা গেলেও কনজারভেটিভ পার্টি যে আগামী নির্বাচন নিয়ে ভয়াবহ অস্বস্তি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে, সেটি হলফ করে বলা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ বছর নভেম্বরে। এই নির্বাচনে জো বাইডেনের অবস্থা তথৈবচ। জো বাইডেনকে কোনো জনমত জরিপেই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে না। আইনি মারপ্যাঁচ, যৌন কেলেঙ্কারি ডেমোক্রেটদের নানামুখী বাধা ইত্যাদি নানা সংকট থেকে মুক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে আবার প্রার্থী হওয়া ট্রাম্পের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে কি না সেটি যেমন প্রশ্ন, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো যে, জো বাইডেন এই নির্বাচনে কি দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ এবং ছাত্র আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা আজ ভূলুণ্ঠিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বকে জ্ঞান দেয়, মানবাধিকার চর্চার জন্য শাসন করে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এখন মানবাধিকার সংকটে। গাজায় ইসরায়েলের তাণ্ডবের প্রতিবাদে মার্কিন তারুণ্যের গণবিস্ফোরণ পুরো বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছে। আর এই গণবিস্ফোরণকে ঠেকাতে যেভাবে জো বাইডেন সরকার দমন নীতি গ্রহণ করেছে, তা তাকে সবচেয়ে কোণঠাসা অবস্থায় নিয়ে গেছে। জনগণ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিশ্বাস করছে না, জনপ্রিয়তার দিক থেকেও তিনি এখন তলানিতে অবস্থান করছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিজয়ী হয়েছিলেন অনেক লড়াই করে। বিজয়ের পর জনগণ তার পক্ষে কতটুকু আছে বা জনগণের মনোভাব কী, তা যাচাইয়ের একটি উপায় ছিল গত মার্চের স্থানীয় সরকার নির্বাচন। কিন্তু সে নির্বাচনে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দলের শোচনীয় ভরাডুবি ঘটেছে। তিনি বড় শহরগুলোতে মেয়র পদে যাদের প্রার্থী দিয়েছিলেন, তারা ধরাশায়ী হয়েছেন বিরোধী পক্ষের কাছে।
সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাসীন দলগুলোর অবস্থা ভালো না। নির্বাচনে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জের মুখে। জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অনেক স্থানেই বিকল্প নেতৃত্বের সন্ধান করছে নাগরিকরা। এর একটি বড় কারণ হলো, মানুষের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা। এরকম বাস্তবতায় বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাসীন দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক এবং অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই বিশ্ববাস্তবতায় বাংলাদেশের অবস্থা কী? বাংলাদেশে এখন পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচন চলছে। প্রথম ধাপের উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো গত ৮ মে (বুধবার)। এ উপজেলা নির্বাচনে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চেয়েছে; কিন্তু সে উদ্যোগও সফল হয়নি। নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রথম ধাপে ৩৬ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এটি সর্বনিম্ন ভোটের রেকর্ড। এটি নিঃসন্দেহে ভালো লক্ষণ নয়। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারতে যেমন ক্ষমতাসীন দল চ্যালেঞ্জের মুখে, পুনরায় তাদের ক্ষমতায় আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি তেমনটি নয়।
বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কেউ ক্ষমতাসীন দলের বিপর্যয়ের কথা কল্পনাও করেনি। যে দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল তারা কেউই ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেনি বা ক্ষমতায় আসার মতো জনপ্রিয়তা, নেতৃত্ব বা সাংগঠনিক দক্ষতা তাদের ছিল না। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় ছিল অবধারিত। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে যারা দলের মনোনয়ন পাননি সে বিদ্রোহী প্রার্থীদের। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৮ জন স্বতন্ত্র বিজয়ী হয়ে নির্বাচনের মান বাঁচিয়েছে। নির্বাচনকে ‘জীবন’ দিয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। উপজেলাতেও তাই আওয়ামী লীগ একই কৌশল গ্রহণ করেছে। উপজেলা নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা ছিল দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করলে বিএনপির জন্য নির্বাচনে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে—এমন গুঞ্জনও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি পুরোনো পথে হেঁটেছে। তারা উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শতাধিক বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে তাদের ৭ জন বিজয়ী হয়েছেন বলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। তবে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকূল রাজনীতির পরিবেশে নির্বাচন করে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করা যায় না। তার পরও যে উপজেলা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়ে বিএনপি নেতারা অংশগ্রহণ করেছে সেজন্য তারা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। গণতন্ত্রের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ সুস্থ রাজনীতির জন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু তার পরও উপজেলা নির্বাচন গণতন্ত্রের সংকটের বার্তা। নির্বাচন নিয়ে জনগণের অনীহা ক্ষমতাসীনদের জন্য অস্বস্তির। আওয়ামী লীগের সামনে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নেই। আওয়ামী লীগের এমন কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ নেই যারা জনপ্রিয়তা বা সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। তা ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের তীব্র সংকট চলছে। কদিন আগেই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাকে হটিয়ে তারা ক্ষমতা নিতে চায়, তাদের নেতা কে?’ এই নেতৃত্বের সংকটই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। অনেকেরই ধারণা, নেতৃত্ব সংকটের কারণেই বিএনপি নির্বাচনবিমুখ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে এখন ‘স্বেচ্ছা বন্দি’। তিনি ফিরোজায় বাসভবনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রাজনীতিতে তার কোনো আগ্রহ নেই। তিনি নির্বাচনের অযোগ্য। অন্যদিকে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ একাধিক মামলায় দণ্ডিত। তার দেশে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর এ কারণে বিএনপি এখন নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। বিএনপির লক্ষ্য সুস্পষ্ট। তারা নির্বাচন থেকে দূরে থেকে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়। গণতন্ত্রকে সংকটে ফেলতে চায়। গণতন্ত্রে সংকট দেখা দিলে তৃতীয় কোনো পক্ষের ক্ষমতায় আসার পথ উন্মুক্ত হবে।
তৃতীয় পক্ষ ক্ষমতায় এলে বিএনপি তার রাজনৈতিক পুনর্গঠন নতুন করে শুরু করতে পারবে। অনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করে তারেক জিয়া দেশে ফেরা, খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফের বিষয়গুলো তারা ফয়সালা করতে চায়। এজন্য নির্বাচন বা গণতান্ত্রিক রীতিতে ক্ষমতায় আসা নয়; বরং একটি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোই তাদের প্রধান লক্ষ্য। এ কারণেই তারা যতটা না জনমুখী কর্মসূচি পালন করে তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ধর্ণা দেয়, বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশগুলোকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা বিএনপির রাজনীতির প্রধান কৌশল। ফলে নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের খুশি বা আত্মতুষ্টির কারণ নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪২ শতাংশ। এ নিয়েও সাধারণ জনগণের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় এবং সন্দেহ রয়েছে। তার পরও একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ওই নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতিকে সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছে। তা ছাড়া বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে ভোটার উপস্থিতি কম হবে—এটাই স্বাভাবিক বিষয়। বিএনপি অংশগ্রহণ না করার পরও যে একতরফা নির্বাচন হয়নি, বিশেষ করে ২০১৪-এর মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন প্রবণতা থেকে আওয়ামী লীগ বেরিয়ে আসতে পেরেছে, সেটি নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের বড় অর্জন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন জনগণ আরও ভোটবিমুখ। এটি আওয়ামী লীগের জন্য অবশ্যই অশনিসংকেত। গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ভোটাররা যদি গণতন্ত্রের প্রতি অনাগ্রহী হন, ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে না যান, ভোটাররা যদি তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ না দেখান তাহলে গণতন্ত্র সংকটে পড়বেই। আর গণতন্ত্র দুর্বল হলে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বে আওয়ামী লীগ। এ কারণে অন্য দেশগুলোতে যখন ক্ষমতাসীনরা ভোটে জিতবে কি জিতবে না সেই অনিশ্চয়তায়, সেখানে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বলে আমি মনে করি। নির্বাচনে পরাজয়ের শঙ্কার চেয়ে গণতন্ত্রের মৃত্যুর শঙ্কা বেশি ভয়াবহ।
উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন। এসব নির্বাচনে অতীতে দেখা গেছে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ থাকে জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে উৎসাহী হয়। এ নিয়ে গ্রামাঞ্চলে আলাপ-আলোচনা তর্কবিতর্ক হয় এবং একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এবার উপজেলা নির্বাচনে সেটি হয়নি। কেন হয়নি তার কারণ আওয়ামী লীগকে খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সমর্থক আছে। তারাও কেন ভোট দিতে যাচ্ছেন না? এর উত্তর খুঁজতে হবে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটিকে। দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করেও আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনকে অবাধ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে পারেনি। এই না পারার কারণ হলো আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষমতা লোভ, বাড়াবাড়ি এবং এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদগ্র বাসনা। তারা দমন করার চেষ্টা করেছে পেশি শক্তি প্রয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে নষ্ট করেছে। সাধারণ মানুষ সব জানে, সব বোঝে। তারা এসব ঝুট-ঝামেলার মধ্যে যেতে চায়নি। সে কারণেই তারা ভোট থেকে আগ্রহ ফিরিয়ে নিয়েছে। অনেক জায়গায় নির্বাচনের ফল ছিল পূর্ব অনুমিত। তারা জানত যে, এমপির ভাই দাঁড়িয়েছে, এমপির ছেলে দাঁড়িয়েছে কাজেই তাদের বিজয় ঠেকাবে কে। এই বোধটা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। আওয়ামী লীগকে এ মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না বটে, তবে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না, তা হলফ করে কে বলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে আবার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তিনি এই ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। অতিডান এবং অতিবামরা নতুন করে ষড়যন্ত্র করেছে বলে তিনি নেতাদের সতর্ক করেছেন।
আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ষড়যন্ত্রের কাছেই আওয়ামী লীগ বারবার পরাজিত হয়েছে, হয়েছে বিপর্যস্ত। আর এই ষড়যন্ত্র শুধু বাইরে থেকে হয়নি, দলের ভেতর থেকেও হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র ঠেকানোর একটাই উপায়, তা হলো গণতন্ত্রকে মুক্ত স্রোতের মতো প্রবাহিত হতে দেওয়া, জনগণকে উৎসাহিত করা, ভোটকেন্দ্রে যাতে ভোটাররা যান, তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া। উপজেলা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য প্রচারের নির্দেশ দেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? শেখ হাসিনা মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করার জন্য যে নির্দেশ দেন, তা কেউ মানেনি। যারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তারাও ষড়যন্ত্রের অংশ। বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংকটে। বিরোধী দলহীন গণতন্ত্র মুণ্ডুহীন দেহ। সরকারের কোনো জবাবদিহি থাকে না। এতে ক্ষমতাসীনরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বদের দূরত্ব তৈরি হয়। এভাবেই পল্লবিত হয় বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া। অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দখলের পথ তৈরি হয়। তেমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছেই যেতে হবে।
লেখক:
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল:
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৭ মে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হলো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করলাম। যে যেভাবে পেরেছে ১৭ মে তে নিজেদেরকে জানান দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সংবাদপত্রগুলো ভরে গেছে শেখ হাসিনার স্তুতিতে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে বন্দনা কতটা আসল, কতটা চাটুকারিতা তা নিয়ে গবেষণা হতেই পারে। ১৭ মে ১৯৮১ তে যখন তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, তখন সাধারণ মানুষের ভালবাসা আবেগ ছিলো হৃদয় নিংড়ানো, পুরোটাই নিখাঁদ। ৪৩ বছর পর এই উচ্ছ্বাস কি তেমনি অকৃত্রিম?
বাংলাদেশে সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধি আছেন যাদেরকে মনে করা হয় তারা মার্কিনপন্থী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে তারা গর্ব অনুভব করেন। কথায় কথায় মার্কিন দূতাবাসে যান। সেখানে প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশভোজে মিলিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলে তারা তার চেয়ে তিন ধাপ গলা উঁচিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কোন ভালবাসা নেই, প্রেম নেই, আগ্রহ নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং নীতি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করাই যেন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এই সমস্ত সুশীলদেরকে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোফোন।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো গত ৭ মে। আজ (১৩ মে) চতুর্থ দফায় ৯৬টি আসনে ভোট হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে কারও কোনো সংশয় ছিল না। বিশেষ করে এই নির্বাচনে বিজেপি এবার রেকর্ডসংখ্যক চারশ আসনের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন, এবার বিজেপির লক্ষ্য লোকসভায় ৪০০ আসন পাওয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এখন চারশ আসন তো দূরের কথা, শেষ পর্যন্ত ২৭২ আসনের ‘ম্যাজিক ফিগার’ বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট অর্জন করতে পারবে কি না, তা নিয়েই চিন্তা দেখা দিয়েছে। ভোটার উপস্থিতি কম, মোদির মুসলিম বিদ্বেষনীতি, চাকরির বাজারে হাহাকারের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ক্ষমতাসীনদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভারতের নির্বাচনের ফল কী হবে, সেটি জানা যাবে ৪ জুন। তবে এ নির্বাচন যে মোদির জন্য বা বিজেপির জন্য স্বস্তিদায়ক হচ্ছে না, সেটি এখন থেকেই বলা যায়।
দেশের মানুষের এমনিতেই নাভিশ্বাস অবস্থা। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ সংকটে চেয়েও বড় অস্থিরতা হলো জিনিস পত্রের দাম। অস্থির সময়ে মানুষের জন্য বিনোদনের কোন খোরাক নেই। তবে প্রধান নির্বাচন কাজী হাবিবুল আউয়াল মানুষের জন্য অস্বস্তির তাপদাহে এক পশলা বৃষ্টির মতো, বিনোদনের খোরাক যোগালেন। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ১৩৯ টি উপজেলার নির্বাচনের পর সাংবাদিকদের তিনি বললেন, ‘ধান কাটার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে আসেননি।’ নিষ্প্রাণ উপজেলা নির্বাচনে সিইসির বক্তব্যই একমাত্র চমক।