ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের লোকজন বিরোধীদল কংগ্রেসের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বলে দাবি করেছেন দলটির নেতা রাহুল গান্ধী।
মঙ্গলবার ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এই দাবি করেন তিনি।
কংগ্রেসের এই নেতার দাবি, একটি ছোটখাটো ঝামেলাও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটকে (এনডিএ)। যে জোট আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করে সরকার গঠন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিবিরেও ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে জানিয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, নতুন জোট সরকারকে খুবই দেখেশুনে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলতে হবে। কারণ, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে মোদি সরকারের ক্ষেত্রে যা সহজ ছিল, এবারের পরিস্থিতি তেমন নয়।
রাহুল মনে করেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। কারণ, এই ভোটের মধ্য দিয়ে মোদির রাজনীতি ও তাঁর ভাবমূর্তি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশের রাজনৈতিক আবহ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা এমনই ভঙ্গুর যে সামান্য গোলমালেই সরকারের পতন ঘটতে পারে।
সাক্ষাৎকারে রাহুল বলেছেন, এবারের ভোটে বিজেপির বিভাজন নীতির বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিয়েছে। মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে ক্রোধের জন্ম দিয়ে রাজনৈতিক লাভ করা যায়, বিজেপির এই ধারণা দেশের মানুষ নস্যাৎ করে দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুসলমান সম্প্রদায়কে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলেছেন। বলেছেন, দরিদ্র ও প্রান্তবাসী মানুষজনের সংরক্ষণ ব্যবস্থা কেড়ে নিয়ে কংগ্রেস তা মুসলমানদের দেবে। অথচ দেখা গেছে, কংগ্রেস প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের ভোট পেয়েছে। তাদের মনে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট এই বিষয় গেঁথে দিতে পেরেছে যে চার শ আসন পেয়ে গেলে বিজেপি সংবিধান বদলে দেবে। গরিবদের সুরাহা কেড়ে নেবে।
রাহুল বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে যে প্রচারকাজ করেছে, এবার তা ব্যর্থ। তাঁর কথায়, যে দলটা ১০ বছর ধরে শুধু অযোধ্যা অযোধ্যা করে গেছে, তারা সেই অযোধ্যাতেই হেরে গেল! কারণ, ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে রাজত্ব করার যে মৌলিক কাঠামো বিজেপি অবলম্বন করে এসেছে, তা চুরচুর করে ভেঙে পড়েছে।
উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ লোকসভা আসনে অযোধ্যার অবস্থান। বিজেপি প্রার্থী লাল্লু সিং সেই আসনে সমাজবাদী পার্টির (এসপি) দলিত প্রার্থী অবধেশ প্রসাদের কাছে হেরেছেন প্রায় ৫৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে। শুধু তা–ই নয়, অযোধ্যার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ৮টি লোকসভা আসনেও এবার বিজেপি হেরেছে।
বিরোধী জোটের ভালো ফলের কৃতিত্বের পেছনে ভারত জোড়ো যাত্রা ও ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার অবদান রয়েছে বলে রাহুল মনে করেন। তিনি বলেন, দেশের বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যম, প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সব দরজা বিরোধীদের কাছে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই তাঁরা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাহুল বলেন, এবারের ভোটে অনেক ধারণা কাজে এসেছে, যেগুলো তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন। চলতে চলতে শিখেছেন। মানুষই তাঁদের শিখিয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে ২৩৪ টি আসন পেয়েছে ইন্ডিয়া জোট। নিজেদের আসন সংখ্যা বাড়িতে কংগ্রেস পেয়েছে মোট ৯৯ টি আসন। অন্যদিকে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ শিবির পেয়েছে ২৯৩ টি আসন। গেরুয়া শিবির এককভাবে পেয়েছে ২৪০ টি সিট। ফলে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেনি বিজেপি। রাহুল এদিন আরও বলেন, এনডিএ শিবিরের পক্ষ থেকে অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাই ভবিষ্যতে কী হবে তা এখন থেকেই বলা যাচ্ছে না।