নানা
ঘটন-অঘটনের মধ্যদিয়ে দ্রুত বদলাচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি। প্রতিনিয়ত নানা ঘটনা উঠে আসছে তার কেন্দ্রে জায়গা করে নিচ্ছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব।
সম্প্রতি ‘গোয়েন্দা বেলুন’ ইস্যুতে গত কয়েক সপ্তাহ
ধরে প্রতিদিনই শিরোনাম হয়েছে দেশ দুটি।
কিছুদিন আগেই একটি চীনা বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে। সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করে ওয়াশিংটন। ওমনি শুরু হয় তোলপাড়, উত্তেজনা। ওয়াশিংটনের দাবি, চীন সামরিক উদ্দেশে বিশ্বজুড়ে নজরদারি প্রকল্প চালিয়ে আসছে। এটা সেই প্রকল্পেরই অংশ। বেইজিং ওয়াশিংটনের এ দাবি নাকচ করে জানায়, বেলুনটি একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ যন্ত্র। ভূলক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।
রাশিয়াকে সহায়তার বিষয়ে চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
বেলুন ইস্যুতে উভয় পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে ইউক্রেন সংঘাত সেই টানাপোড়েনের মাত্রা আরও বাড়াচ্ছে। যার শুরু চলতি সপ্তাহে রাশিয়াকে সহায়তার বিষয়ে চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারির মধ্যদিয়ে।
মিউনিখে গ্লোবাল সিকিউরিটি কনফারেন্সের ফাঁকে গত শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্লিঙ্কেন বলেন, বেইজিং মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে। এতে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন। হুশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন, চীন যদি ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার আগ্রাসনে’ অস্ত্র সহায়তা প্রদান করে তাহলে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে।
চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্তি হচ্ছে। দেশটিতে রাশিয়া সামরিক অভিযানে পশ্চিমারা সমালোচনা করলেও চীন এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছে। সেই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইউক্রেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, রাশিয়ায় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেন সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটা তার প্রথম কিয়েভ সফর। এ সফরকালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে বাইডেনের এ সফরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবশেষ পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে চীন। বাইডেনের সফরের পরদিন মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে ‘আগুনে ঘি ঢালছে’। ইউক্রেন কেন্দ্রিক সংঘাত যেকোনো মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
কিন গ্যাং বলেন, ‘আমরা কয়েকটি দেশের প্রতি আহ্বান জানাই, আগুনে ঘি ঢালা বন্ধ করুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের অবশ্যই আজ ইউক্রেনকে উসকানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং আগামীকাল তাইওয়ানের ক্ষেত্রের একই পদক্ষেপ নিতে হবে।’ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উচ্চারণ করেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশেই যে এ কথা বলেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
চীন শুধু উদ্বেগই নয়, বাইডেনের সফরের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে নিজেদের শীর্ষ কূটনীতিককে রাশিয়া সফরে পাঠিয়েছে। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মস্কোয় পৌঁছান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ওয়াং ই। এদিন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন ওয়াং। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের একটি বৈঠক হয়েছে। তবে সে বৈঠকের বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন মতে, ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াং বলেছেন, রাশিয়া ও চীন একটি ‘মাল্টি পোলার’ বা বহু মেরুর বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর, যেখানে কোনো দেশের একক আধিপত্য থাকবে না। চীনা কূটনীতিক আরও বলেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চেষ্টায় দুই দেশের মধ্যে একটি ‘অত্যন্ত শক্তিশালী’ সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। রাশিয়া ও চীন এমন একটি বহু-মেরুর বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর যেখানে কোনো একটি দেশের আধিপত্য থাকবে না।
রাশিয়া সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শি জিনপিং
মস্কো থেকে এখনও ফেরেননি চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং। এরইমধ্যে খবর এসেছে রাশিয়া সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। খবরে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগামী মাসে রাশিয়া যাবেন তিনি।
চীনা প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য রাশিয়া সফরের পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ খবর জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র যাতে ব্যবহার করা না হয় সে বিষয়েও পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন শি জিনপিং।
ইউক্রেনের হুঁশিয়ারি
বাইডেনের কিয়েভ সফরের পর ইউক্রেনের জোর যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যার দাপটে এবার শক্তিশালী চীনকেও অকপটে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চীনকে সতর্ক করে বলেন, রাশিয়াকে সমর্থন করলেই হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জার্মান দৈনিক পত্রিকা ডাই ওয়েল্টকে জেলেনস্কি জানান, যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল চীন রাশিয়াকে সমর্থন করছে না। বলেন, আমি চাই চীন আমাদের পাশে থাকুক। তবে এই মুহূর্তে আমি মনে করি না এটি সম্ভব। চীন যদি রাশিয়ার সঙ্গে একত্রিত হয়, তাহলে বিশ্বযুদ্ধ হবে। আমি মনে করি যে চীনও সেই ব্যাপারে অবগত আছে।
মন্তব্য করুন
ইরান ইসলামি বিপ্লব ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্ট
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
ইরানের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও বিশ্বাস করছেন যে, ইরানের ভিতর কিছু বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনার পর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার কেন উড়ার সিদ্ধান্ত নিল? এই ব্যাপারে নিরাপত্তা ছাড়পত্র কে দিল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেকোনো বিবেচনায় এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা নয়।
আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গভর্নর এক হেলিকপ্টারে ওঠাটাও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ এর আগে কখনোই ইরানের প্রেসিডেন্ট অন্য কারও সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠেন না। তৃতীয়ত, যেখানে তাদের বহনকারী অন্য হেলিকপ্টারগুলো অন্যদিকে যাচ্ছিল সেখানে এই হেলিকপ্টারটি কেন গতিপথ পরিবর্তন করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সবকিছু একটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
পরিকল্পিত ভাবার পিছনেও কারণ আছে। অতীতেও দেখা গেছে যে, এরকম বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে দমন করেছে পাকিস্তানি জিয়াউল হক নিহত হয়েছিলেন এরকমই একটি বিমান দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি পরিকল্পিত নীল নকশা এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ওই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়।
এবার ইরানের যে ঘটনাটি ঘটল তার পিছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, এর পিছনে মোসাদের হাত রয়েছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে পট পরিবর্তনের জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভিতরে যে হিজাব বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনেও মোসাদের হাত ছিল এবং মোসাদকে সহযোগিতা করেছিল সিআইএ- এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে, ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রতিবেদনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সন্ত্রাসীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়, অস্ত্র সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে যে হামলা হামাস পরিচালনা করেছিল, তার পিছনে ইরানের মদত ছিল। ইরানের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এমন বক্তব্য মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হরহামেশাই করে থাকেন। আর এ কারণে ইরানের পট পরিবর্তনের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ছিল।
এর আগেও ইরানের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করা হয়েছিল। যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের এই ঘটনাটি সেরকমই কোন ঘটনা বলেই অনেকের স্থিরবিশ্বাস। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভিতর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হল বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত কট্টরপন্থী নন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অনেকটাই নমনীয় এবং ইরানের ভিতর এখন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন। বিশেষ করে যদি ভিতরে শত্রু তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা যায়, তাহলে ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। মোসাদ এবং সিআইএ কি সেই পথেই এগোচ্ছে, এর উত্তর সময়ই বলে দিবে।
ইব্রাহিম রাইসি ইরান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা মোসাদ সিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
কাজেম জালালি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন আমাকে বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যা দরকার হবে, তা আমরা করব। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, এ বার্তা ইসলামিক রেভল্যুশনের সর্বোচ্চ নেতার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করুন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব দ্য জয়েন্ট স্টাফ ভ্যালিরি গেরাসিমভ, বেসামরিক সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আলেক্সান্দার কোরেনকোভ, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ইগোর লেভিতিন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
ইরান রাষ্ট্রদূত হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
মন্তব্য করুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে।
এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানায় 'তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ'সহ স্থানীয় আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেটিতে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হেলিকপ্টারে পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের সদস্য মাহদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, সহকারী পাইলট ও ক্রু সদস্য ছিলেন।
ইরান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দাফন মৃত্যু
মন্তব্য করুন
১৯৭৯ সালে ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছিল। রেজা শাহ পাহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে যে ‘ইসলামি বিপ্লব’ ঘটানো হয়েছিল, সেটিকে বলা হয় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর ইতিহাসের তৃতীয় মহা জাগরণ, যেখানে জনগণ এককাট্টা হয়ে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল। এই সময় নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং খোমেনির নেতৃত্বে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপ গ্রহণ করে। কঠোর শরিয়া আইন অনুসারে ইরান পরিচালিত হতে থাকে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে পড়বে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে যে, ইরানের এই ঘটনাটিকে ইরানবাসী কোনভাবেই স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করছে না। তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ঘটছে। এটির পেছনে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িত বলেও তারা ধারণা করছে। আর এই ধারণাকে পুঁজি করে রাইসির মৃত্যুর পরে যে আবেগ এবং ক্ষোভ সেটাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উস্কানি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে আল জাজিরায় কয়েকজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ইরান যদি মনে করে এই ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, তাহলে তারা অবশ্যই পাল্টা প্রতিশোধ নেবে।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন। কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে। এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।