ইনসাইড থট

ফুলার থেকে সাহাবুদ্দিন, ছোটলাট থেকে রাষ্ট্রপতি!

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

"দিলখুশা" মানে "মনপ্রফল্লু"। ১৮৬৬ সাল। ঢাকার নওয়াব খাজা আবদুল গণি। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র খাজা আহসানউল্লাহ। পিতা পুত্রপ্রেমে এতটাই আবেগাপ্লুত ছিলেন যে, পুত্রের মনোরঞ্জনে একটি বাগানবাড়ি বানাতে চাইলেন। জনৈক স্মিথের কাছ থেকে কিনলেন ঢাকা শহরে ৫৪ একর ৫০ শতাংশ জমি। উর্দুভাষী নওয়াব পুত্রের মনপ্রফুল্ল রাখতে এলাকার নাম দিলেন "দিলখুশা বাগানবাড়ী"। আর সেটাই কালক্রমে হয়ে উঠলো বঙ্গভবন। "রঙমহল" বলেও এর পরিচিতি ছিল। ১৯০৬ নওয়াব সলিমুল্লাহর কাছ থেকে বার্ষিক ১১ হাজার টাকায় লীজ নিলেন ভারত ভাইসরয় বড়লাট লর্ড কার্জন। নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের শাসনকর্তার বাসভবন রূপে গড়ে তোলা হলো। নাম হলো "ছোটলাট ভবন"। ১৯৪৭ সালে "গভর্নর হাউজ"। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারী "বঙ্গভবন" নামকরণ করলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ওদিন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করেন এবং সয়ং প্রধানমন্ত্রী হলেন। "গণভবন"-কে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পরিণত করলেও অফিস হিসেবেই ব্যবহার করতেন বঙ্গবন্ধু। তা়ঁর বাসভবন ছিল বরাবর ধানমন্ডিস্থ বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়িটিই। অপরদিকে দেশের দ্বিতীয়  রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী পরিবারসহ বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন। সেই থেকে এটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন। আলংকারিক রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন হিসাবে বঙ্গভবনের যাত্রা শুরু হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুও ছিল লম্বা সময় ধরে। যখন দুই যুগেরও বেশি সময় দেশ পরিচালিত হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার অধীনে। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তিত হলে ক্ষমতা ও গুরুত্ব হারায় বঙ্গভবন। রাষ্ট্রপতি হয়ে যান নিয়মতান্ত্রিক রাষ্টৃপ্রধান মাত্র। ১৯৯১ সাল থেকে দেশ পরিচালিত হচ্ছে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে।

ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে লেফটেন্যান্ট গর্ভনর বা গর্ভনররাই ছিলেন এ দেশের ক্ষমতার প্রকৃত মালিক। সেই অর্থে ১৯০৬-২০২৩ সময়ের মধ্যে গভর্নর হাউজ বা  বঙ্গভবনই প্রায় নব্বই বছর ক্ষমতার উৎস ছিল। বিগত একশত ষোল বছরে বঙ্গভবনে যাঁরা বাসিন্দারা- তাঁরা ছিলেন বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও গোত্রের। যাদের মধ্যে অবশ্য বিস্ময়করভাবে একজনও নেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। অধিকাংশই খ্রীস্ট ধর্মালম্বী বিভিন্ন গোত্রীয় ইংরেজ। অবশিষ্টরা মুসলিম সূন্নী-ইসলাম ধর্মালম্বী। ১৯৪৭ দেশবিভাগপূর্ব বাংলা ব্রিটিশ শাসিত ভারতের সর্ববৃহত্তম প্রদেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাভাষী বাঙালী অথবা হিন্দি বা অসমীয় ভাষাভাষী কোন অবাঙালী-হিন্দু বাংলার গভর্নর বা রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। যে কারণে ঢাকার গভর্নর হাউজ তথা বঙ্গভবনের বাসিন্দা হননি কোন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বঙ্গভবনের যারা বাসিন্দা হয়েছেন, তারা কেউ ইংরেজ বিট্রনী, কেউ উর্দুভাষী পশ্চিম-পাকিস্তানী, কেউবা পূর্ব পাকিস্তানী বাংলাভাষী বাঙালী এবং স্বাধীনত্তোর যাঁরা হয়েছেন তাঁরা সকলেই বাংলাদেশী বাঙালী মুসলমান।

১৯০৫ সালে থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত  পূর্ববঙ্গ ও আসাম এবং বাংলা প্রাদেশিক সরকারের হয় লেফটেন্যান্ট গভর্নর, নয়তো পূর্ববঙ্গ- তথা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং নয়তো স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।

আজকের যে বঙ্গভবন তা রূপে-রঙে-নামে শুধু নয়, ক্ষমতার উত্থান-পতনের চরিত্রেও তার রঙ বদলেছে। রূপে ও রঙে পরিবর্ধিত হয়েছে অবকাঠামোগত স্থাপত্য। সর্বপ্রথম ১৯০৬ সালের ১৮ জানুয়ারি এই বাসভবনে বাসিন্দা হিসাবে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক সরকারের লেফটেন্যান্ট গভর্নর বামফিল্ড ফুলার সংবর্ধিত হন। সেই থেকে"দিলখুশা বাগানবাড়ি" লোকমুখে পরিচিতিলাভ করে "ছোটলাট ভবন" হিসেবে। এরপর লাটভবনের বাসিন্দা হন স্যার ল্যান্সলট হেয়ার ও চার্লস স্টুয়ার্ট বেইলি। তখন প্রবল আন্দোলন বঙ্গভঙ্গ এর বিরুদ্ধে। এই তিন শাসকের নামে ঢাকার তিনটি রোড এখনও রয়েছে। বৃটিশ পার্লামেন্ট ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করে দুই বাংলাকে আবার একীভূত করে দেয়। ফলে ঢাকা পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী রূপে যে মর্যাদা পেয়েছিল তা লুপ্ত হয়ে যায়। তবে বাংলার রাজধানী আবার কলকাতা হলেও ছোটলাট ঢাকায় এলে এখানেই থাকতেন। ১৯৪৭ সালে আবার বাংলা দ্বিখণ্ডিত হয় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গ নামে। স্বাধীন পাকিস্তানের প্রদেশ হিসেবে অঙ্গীভূত হয় পূর্ববঙ্গ। পশ্চিম বঙ্গ অন্তর্ভুক্ত হয় স্বাধীন ভারতে।

পূর্বপাকিস্তানের প্রথম গর্ভনর হয়ে আসেন স্যার ফ্রেডারিক চার্লমার বোর্ন। ছোটলাট ভবন পরিচিতি লাভ করতে থাকে গর্ভনর হাউজ রূপে। ১৯৫০ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্যার বোর্ন  দায়িত্ব পালন করেন। সেই থেকে গর্ভনর হাউজের বাসিন্দা হন বিচারপতি আবু সালেহ মোহাম্মদ আকরাম, মালিক ফিরোজ খান নুন (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী), চৌধুরী খালেকুজ্জামান, আব্দুর রহমান সিদ্দিকী (অস্থায়ী), মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা (পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি), বিচারপতি স্যার টমাস হার্বার্ট এলিস, বিচারপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন, বিচারপতি আমিরউদ্দিন, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মোহাম্মদ হামিদ আলী (অস্থায়ী), সুলতানউদ্দিন আহমদ, জাকির হোসেন, লেঃ জেনারেল আজম খান, সৈয়দ হাসিম রেজা, গোলাম ফারুক, আব্দুল মোনয়েম খান, ডঃ মীর্জা নূরুল হুদা, মেজর জেনারেল মোজাফফর উদ্দিন, ভাইস এডমিরাল এস এম আহসান, সাহেবজাদা এম ইয়াকুব খান, লেঃ জেনারেল টিক্কা খান ও ডাঃ এ এম মালিক। এ়ঁরা গভর্নর হাউজে বসেই পূর্বপাকিস্তান শাসন বা শোষণ করতেন।

১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর   গভর্নর পদটির অস্তিত্ব লুপ্ত হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের অনুগত  গভর্নর ছিলেন ডাঃ আব্দুল মোত্তালিব মালিক। তিনি গর্ভনর হাউজ থেকে পালিয়ে রেডক্রস ভুক্ত নিরাপদ জোন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং পরবর্তীতে দালাল আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথগ্রহণকারী অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর রাজধানী কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করে গভর্নর হাউজে ওঠেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হবার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হন এবং দেশে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

নতুন রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। কিন্তু তিনি নিজেকে ক্ষমতাহীন মনে করে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন স্পীকার মোহাম্মদ উল্লাহ। এই দুই রাষ্ট্রপতিই বঙ্গভবনে থেকেছেন সপরিবারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী সাংবিধানিক বিপ্লব সংঘটিত করে রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ উল্লাহ দু'জনই মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলেও বঙ্গভবন তাঁর আবাসভূমি হয়ে ওঠেনি। বরং তিনি অরক্ষিত ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কের বাসভবনেই ছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। 

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল অপরাহ্ন দেড়টায় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহাকুমার 'বৈদ্যনাথপুর" গ্রামের আম্রকুঞ্জে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ করে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি (কারাবন্দী) সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ রাষ্ট্রপতি  (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণকারী

সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত অস্থায়ী  রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালন করেন। ১৯২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী সৈয়দ নজরুল ২২ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারী পর্যন্ত বঙ্গভবনেই ছিলেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি থেকে শিল্পমন্ত্রী হন। বাকশাল হলে তিনি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯২১ সালে টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণকারী বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি করলেও তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করে পদত্যাগ করেন ১৯৭৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর। স্পীকার মোহাম্মদ উল্লাহকে তখন  রাষ্ট্রপতি করা হয়। ১৯২১ সালে নোয়াখালীতে  জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদউল্লাহর স্বাক্ষরেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী দেশে জারি করা হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্রপতি হন  ১৯১৯ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী খন্দকার মোশতাক আহমদ। সিজিএস বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন ব্যর্থসামরিক অভ্যুত্থানে ৮১ দিনের মাথায় খন্দকার মোশতাকের পতন ঘটে। এর আগেই খন্দকার মোশতাক তোপের মুখে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন খালেদ মোশাররফকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক সেনাপ্রধান হওয়া জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন গৃহবন্দী। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোশতাকের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনীরাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী, অন্যতম মন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের "চতুর্থস্তম্ভ" বলে অভিহিত এই জাতীয় চারনেতার হত্যার খবরে দৃশ্যপট পাল্টে যায় এবং নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফের পছন্দে ১৯১৬ সালে রংপুরে জন্মগ্রহণকারী দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। খন্দকার মোশতাককে করা হয় পদচ্যুত। ৭ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাস থেকে শুরু হয় আরেকটি পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান- "সিপাহী জনতা ভাই ভাই অফিসারদের রক্ত চাই" হত্যানীতির ভিত্তিতে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের গণবাহিনী এবং জাসদপন্থী কর্নেল (অবঃ) আবু তাহেরের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এ অভ্যুত্থান সংঘটিত করে। খালেদ মোশাররফকে তাঁর কয়েকজন সঙ্গীসহ হত্যা করে জেনারেল জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান জিয়াকে কাঁধে তুলে ট্যাংকবহর সহকারে রাজধানীতে মিছিল করে। তারা রাষ্ট্রপতি পদে বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমকে অধিষ্ঠিত রেখেই জেনারেল জিয়াকে দিয়ে ১২ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে জাসদীয় গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। কিন্তু ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারী বগুড়ায় জন্মনেয়া জেনারেল জিয়া অভ্যুত্থানকারীদের দাবী অগ্রাহ্য করে  উল্টো মুক্তিদাতা কর্নেল তাহেরকেই  ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেন এবং সামরিক আদালতের মাধ্যমে জাসদের প্রবক্তা সিরাজুল আলম খানসহ শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশ দেন। তন্মধ্যে জাসদ সভাপতি মেজর (অবঃ) এম এ জলিলকে যাবজ্জীবন, সাধারণ সম্পাদক আসম আব্দুর রবকে দশ বছর, গণবাহিনী প্রধান হাসানুল হক ইনুকে সাত বছর  দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এভাবেই জাসদের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারী বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি সায়েমকেও হটিয়ে প্রথমে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদটি দখল করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমকে পদচ্যুত করে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদেও আসীন হন। জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাপ্রধান তিন পদে থেকেই। সামরিক শাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীকে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জেনারেল জিয়া।

প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধু হত্যার সপ্তাহের ব্যবধানে সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহর আনুগত্য থাকা সত্ত্বেও খুনীদের পছন্দে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক জেনারেল জিয়াকে সেনাপ্রধান করেন। একই দিন ২৪ আগস্ট পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন জেনারেল ওসমানী। তিনি বঙ্গবন্ধু শাসনামলে নৌ চলাচল মন্ত্রীর পদ হারিয়ে ছিলেন এবং সংবিধান চতুর্থ সংশোধনীর প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বহুল আলোচিত ছিলেন। ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ডের খবরে কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বাধীন পদাতিক বাহিনী বঙ্গভবনে দরজা ভেঙে মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রবেশের পর রাষ্ট্রপতি মোশতাকের দিকে স্টেনগান তাক করে অকথ্য গালিগালাজ করে হত্যায় উদ্যত হলে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জেনারেল ওসমানী তাকে রক্ষা করেন এবং তার অনুরোধেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরও বঙ্গভবন থেকেই বিমানে করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন জেনারেল খালেদ মোশাররফ।

বলা বাহুল্য দ্বিধাবিভক্ত ও দিকভ্রান্ত আব্দুল মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন  আওয়ামী লীগ সেই জেনারেল ওসমানীকেই রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন দিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়ে দেয়। স্পীকার মালেক উকিল মোশতাক সরকারের প্রতি আস্থা রেখেই স্পীকারদের এক আন্তঃমহাদেশীয় সম্মেলনে যোগ দেন এবং যোগদান শেষে লন্ডনে সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রসঙ্গে তোপের মুখে পড়ে বলেন,"দেশ ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।"

বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি হয়ে

৬ নভেম্বর জাতীয় সংসদ বাতিল করেন। খালেদ মোশাররফের সামনে একটি সাংবিধানিক পদ খোলা ছিল - চাইলে তিনি স্পিকার মালেক উকিলকেই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারতেন। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলী ৩ নভেম্বর নিহত হওয়ার পর স্পীকারই ছিলেন রাষ্ট্রপতি পদের দাবিদার। প্রকৃতপক্ষে খালেদ মোশাররফ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফেরাতে চাননি। তার মা বরং জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রতিবাদে বের হওয়া মিছিলে শামিল হওয়ার খবর শুনে নিজের পতনের পদধ্বনিই শুনতে পেয়েছিলেন। 

জেনারেল জিয়া, জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধের তিন বীর উত্তমেরই লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা। তিনজনই পরিচালিত হচ্ছিলেন অবৈধ পন্থায়। জিয়া ক্ষমতার স্বাদ পেলেও ১৯৮১ সালের ৩০ মে মুক্তিযুদ্ধের আরেক বীর উত্তমের হাতেই নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন। ফিরে আসছি মূল বিষয়ে। জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি সায়েমেরই বিশেষ সহকারী বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে উপরাষ্ট্রপতি করেন। জিয়া নিহত হলে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন। জেনারেল জিয়া বঙ্গভবনকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করলেও পরিবার নিয়ে বাস করতেন ক্যান্টনমেন্টেই। ১৯০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে জন্ম নেয়া আব্দুস সাত্তার ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডঃ কামাল হোসেনকে হারিয়ে। তাঁরও সুখ সইলো না। তাঁকেও বঙ্গভবন ছাড়তে হয়। জেনারেল জিয়া কর্তৃক নিযুক্ত সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘুম হারাম করে দিয়ে বঙ্গভবনে নীরব সামরিক অভিযান চালালে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। জেনারেল এরশাদ সামরিক আইন জারি করে ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে দিলেন দূরসম্পর্কের আত্মীয় বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে। ১৯১৫ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী রাষ্ট্রপতি চৌধুরীরও বিদায় ঘটলো অসৌজন্যমূলকভাবে। বঙ্গভবন ত্যাগ করতে হলো তাঁকেও। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ নিজেই রাষ্ট্রপতির পদ দখলে নিলেন। ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী জন্মনেয়া এরশাদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও দিলেন। যে নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হয়। জেনারেল এরশাদও বঙ্গভবন ব্যবহার করলেও পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন ক্যান্টনমেন্টেই। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তা়ঁকে  পদত্যাগ করতে হয় তিনজোটের রূপকথার আলোকে। উপরাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতি এরশাদ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। তারপর এরশাদ পদত্যাগ করলে উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন  অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গভবনে থাকতেন পরিবার নিয়ে। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার পদ্ধতি নিয়ে তিনজোটের ঐতিহাসিক রূপরেখা নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বিএনপি, বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তিনজোটের রূপরেখার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোটদান করে  দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করে। অবসান ঘটে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৯১ সালের ৮ অক্টোবর সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি হন স্পীকার আব্দুর রহমান বিশ্বাস। ১৯২৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম আব্দুর রহমান বিশ্বাস প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করা দেশের রাষ্ট্রপতি। তবে ক্ষমতাসীন বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিল পাস করে আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নিতে হয় ক্ষমতাসীন বিএনপিকে। প্রতিরক্ষা এসময় রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রী) হন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ওই সময় সম্ভাব্য একটি সামরিক অভ্যুত্থান রাষ্ট্রপতি রহমান বিশ্বাস নস্যাৎ করে দেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমসহ কয়েকজন জিওসিকে জেনারেলকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে। প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের অধীনে অনুষ্ঠিত  ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করেন।  ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণকারী  বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তিনি সপরিবারে বঙ্গভবনেই থাকতেন। ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রয়ারি জন্মনেয়া সাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুরত্বের সৃষ্টি হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ "সালসা" নির্বাচন বলে অভিহিত করে। সা- মানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, ল-মানে প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান এবং সা- মানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ সাঈদ। বিএনপি-জামাত টু থার্ট মেজররিটি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি হন অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে কয়েকটি নীতিগত প্রশ্নে বিএনপির মতদ্বৈততার সৃষ্টি হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির মৃত্যুবার্ষিকীর  বানীতে জিয়াউর রহমানকে "স্বাধীনতার ঘোষক" না বলা, জিয়ার মাজার জিয়াররত করতে না যাওয়া  ইত্যাদি এ দ্বন্দ্বের কারণ। শেষ পর্যন্ত যে সংসদ কর্তৃক তিনি নির্বাচিত হন সেই সংসদের সরকারি দলই অভিশংসনের হুমকিপ্রদান করে এবং বিএনপি সংসদীয় দলের সভায় তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০২০ সালের ৬ জুন রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী এরপর বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। ফলে অস্থায়ী বা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন স্পীকার

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি তিনমাস দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গভবনে থাকেননি। বেইলীরোডে স্পিকারের বাসভবনেই থাকতেন।

২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি হন ডঃ ইয়াজউদ্দীন আহমেদকে।

১৯৩১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী মুন্সিগঞ্জে জন্মনেয়া ইয়াজউদ্দিন মহাবিতর্কের অবতারণা করেন। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদগ্রহণে বিচারপতি কেম হাসান অস্বীকৃতি জানালে ডঃ ইয়াজউদ্দিন নিজেই প্রধান উপদেষ্টা পদ গ্রহণ করেন। ২০০৬ সালের ২২ জুলাই একতরফা সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও মতলব আঁটলে মহাজোট তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী মানে ওয়ান ইলেভেন সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি ডঃ ইয়াজউদ্দিনকে বাধ্য করা হয় প্রধান উপদেষ্টা পদ ছাড়তে। সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে প্রধান উপদেষ্টা হন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমেদ। নির্বাচনও বাতিল করা হয়। নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। হঠাৎ করেই সামনে নিয়ে আসা হয় "টু মাইনাস থিউরি।" অর্থাৎ শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। পরে বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নেয়। খেলার মাঠের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের। সঙ্গে আস্থার সংকটে পড়ে সেনাবাহিনী প্রধান মইন ইউ আহমেদ ও  সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন সরকারের। শুরু হয় দুই নেত্রীর পৃথক  মুক্তির আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ একাই টুথার্ট মেজররিটি ছাড়িয়ে যায়।

বিএনপি পায় মোটে ২৯টি আসন।

 ইতিমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ও বাতিল ঘোষিত হয়েছিল, তার আলোকে সংসদে সংবিধান সংশোধন বিলও পাস হয়ে যায়। সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুযায়ী বাহাত্তরের মূলনীতিও পুনঃস্থাপিত হয় সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে দলের প্রবীন নেতা জিল্লুর রহমানকে। ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী জিল্লুর রহমান ২০১৩ সালের ২০ মার্চ লন্ডন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনিও বঙ্গভবনে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্পীকার অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জে  জন্ননেয়া আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি দুই মেয়াদই বঙ্গভবনের বাসিন্দা। তাঁর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নতুন রাষ্ট্রপতি  নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ  সাহাবুদ্দিন। তিনি আগামী ২৪ এপ্রিল তার শপথ নিবেন। ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণকারী সাহাবুদ্দিন দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন হিসাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হোক, আর নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের  আলংকারিক শোভাবর্ধনকারী হোক, বঙ্গভবন আমাদপর অনুভূতির স্থল। যার আষ্টেপৃষ্ঠে লেপ্টে আছে উত্থানপতনের স্মৃতিচিহ্ন আর  বঙ্গভবনের প্রাচীন ইতিহাস।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন