ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়
দেশের কাছে তীব্র
আকর্ষণের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করছে। যেমন AUKUS জোট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র
অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক চালিত সাবমেরিনের একটি বহর রাখার অনুমতি দিয়েছে। তাইওয়ানের জন্য আমেরিকার ক্রমবর্ধমান সমর্থন রয়েছে, মহাকাশের ডোমেইন মোকাবেলায় মার্কিন-জাপানি জোটের সম্প্রসারণ বেড়েছে, সেইসাথে ফিলিপাইনে সামরিক ঘাঁটিতে আমেরিকান প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বার্লিন-ভিত্তিক মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজের
নির্বাহী পরিচালক মিকো হুওতারি বলেছেন, ''মার্কিন হাইকমান্ড ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে, কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক পরিবর্তন দেখা যাবে। ''কিন্তু ওয়াশিংটন ভিন্ন মাত্রায় কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা ভারতকে কাছাকাছি
আনার কৌশলগত প্রয়াসকে উল্লেখ
করেছেন। হেইন তার নোটে বলেছেন, ''এই শতাব্দীর প্রথম
দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মনোনিবেশ করেছিল। ওবামা ইতিমধ্যেই এটি পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন, যাকে তিনি এশিয়ার প্রতি 'বিশেষ নজর' বলে অভিহিত করেছেন। যেখানে মধ্যপ্রাচ্য ওয়াশিংটনের মনোযোগ পেতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে একটু একটু করে পরিস্থিতি
বদলাচ্ছে। এই ভিশনে ভারতের
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।''
যুক্তিটি সুস্পষ্ট, ভারতের আকার এবং চীনের সাথে সমস্যাগুলি এর প্রধান কারণ।
ওয়াশিংটন বছরের পর বছর ধরে
এই সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে স্পষ্ট সম্পর্ক ছিলো। চতুর্মুখী নিরাপত্তা সংলাপ ফোরাম ( Quadrilateral
Security Dialogue Forum ) থেকে
এবং অতি সম্প্রতি, বাইডেন প্রশাসন ভারতকে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে চিহ্নিত করার পর মার্কিন কোম্পানিগুলি
চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ভারতের ওপর মনোনিবেশ করছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপল এই বিষয়ে কাজ
করছে: ভারত এবং ভিয়েতনামে এর উৎপাদন বেড়েছে।
যাইহোক, হাইনের মতে, এই পরিবর্তনের সীমাবদ্ধতা
রয়েছে। “প্রথমত ভারতীয়
অর্থনীতি চীনা অর্থনীতির তুলনায় অনেক ছোট; দ্বিতীয়ত নয়াদিল্লি আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়ায় একীভূত হয়নি। এছাড়াও চীন অবকাঠামো বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যা অফার করে
ভারতের সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে দেরি আছে। মার্কিন বাজার বন্ধ। চীন থেকে ডিকপলিং দীর্ঘমেয়াদে গতি পেতে পারে তবে স্বল্প মেয়াদে নয়। কর্মীবাহিনী, রসদ প্রস্তুত করা খুবই কঠিন। ''
এই ফাঁকে চীন তার
অংশীদার দেশগুলির সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে, যেমন পাকিস্তান। বেইজিং নিউ সিল্ক রোডের অংশ হিসেবে বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্ককে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এরকম একটি প্রকল্প হলো লাওসে
নির্মিত একটি রেললাইন। ইন্দোনেশিয়ার মতো - স্পষ্টভাবে সংযুক্ত নয় এমন দেশগুলির কাছাকাছি যাওয়ার সংগ্রাম তীব্র হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তারা প্রায়ই জাকার্তায় যান। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির ওপর সিঙ্গাপুরের ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউট দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা এবং চীনের প্রতি সন্দেহ বাড়ছে।
যদি 'আসিয়ান'' বেছে নিতে হয় তাহলে ৬১% নাগরিক বেছে নেবেন ওয়াশিংটন এবং বেইজিংকে বাছবেন ৩৯%। ২০২২
সালে, অনুপাত ছিল ৫৭ % থেকে ৪৩%। কম্বোডিয়া
এবং লাওসও বেইজিং থেকে স্থানান্তর
হবার চেষ্টা করছে ।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন/ন্যাটো
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরে তৃতীয় বৃহত্তম বৈশ্বিক অর্থনৈতিক খেলোয়াড়। ইইউ এবং ন্যাটো উভয় ক্ষেত্রেই ওয়াশিংটন তার ইউরোপীয় অংশীদারদের বেইজিংয়ের প্রতি তার নীতি সমর্থন করার জন্য জোর দিচ্ছে। ইউরোপে এমন অনেক কণ্ঠস্বর রয়েছে যারা চীনের সাথে সুসম্পর্কের পক্ষে। কেউ কেউ - যেমন ইইউ এবং ন্যাটোর পূর্ব প্রান্তে থাকা রাশিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে একমাত্র গ্যারান্টার হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে বিবেচনা করে। এই কারণে, তারা
বেইজিংয়ের প্রতি ওয়াশিংটনের প্রস্তাবিত কঠোর নীতি অনুসরণ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু অন্যরা বিশেষ করে জার্মানি বিষয়টি নিয়ে সতর্ক।
কারণ এই নীতি তাদের
বাণিজ্যিক স্বার্থের উপর খুব গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। জার্মান সরকার স্পষ্টতই একদিকে জি -৭ ব্লক এবং
অন্যদিকে চীন এবং রাশিয়ার আঁতাতকে
এড়ানো উপযুক্ত বলে মনে করে। বেইজিং এই ট্রাম্প কার্ডের
সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।কৌশলগত কাঁচামাল, সেইসাথে সৌর প্যানেলের মতো সবুজ পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের উপর নির্ভর
করে। এই পরিস্থিতির মুখোমুখি
হয়ে, ইউরোপীয় কমিশন তার নিজস্ব পথ তৈরি করতে
চায়। তারা কাঁচামালের
ক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের গ্যারান্টি দেয়ার পরিকল্পনায় কাজ করছে। উপরন্তু, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্ব চীনের সাথে একত্রিত হওয়ার আমেরিকান নীতি পরিহার করে ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির প্রস্তাব করে।
গত গ্রীষ্মে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে প্রথমবারের মতো তার কৌশলগত পদক্ষেপে চীনকে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিরোধের কারণে, রেফারেন্সটি ওয়াশিংটনের প্রত্যাশার চেয়ে কম জোরদার ছিল। হুওতারির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ''আটলান্টিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সংহতি বজায় রাখার চেষ্টা রয়েছে শুধুমাত্র আলংকারিক ক্ষেত্রে নয় , প্রাতিষ্ঠানিক কর্মেও। সেদিকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে তা যথেষ্ট হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতি যে পরিবেশ তৈরি করবে তাকে নেভিগেট করা সহজ হবে না।''
বিশ্লেষক গার্সিয়া হেরেরো মতে, ''দুর্ভাগ্যবশত ইউরোপ এই কৌশলগত প্রতিযোগিতার
পুতুল মাত্র। ইউরোপ অনেক বেশি দুর্বল এবং তাই, দুটি শক্তির মধ্যে
ইউরোপের অবস্থান কোথায় তা পুরোপুরি সিদ্ধান্ত
নেওয়ার জন্য তাদের কাছে বাস্তবিক বিকল্প
নেই।' ' গার্সিয়া মনে করেন ইউরোপ
নিজেদেরকে রক্ষা করার ব্যাপারে এতটাই উদ্বিগ্ন ছিলো যে, তারা একক বাজারের ভারসাম্য রক্ষা, প্রতিযোগিতা, সদস্য দেশগুলির মধ্যে ভারসাম্য ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রায় ভুলতে বসেছে।
বাকি বিশ্বের অবস্থান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সুস্পষ্ট সুবিধা রয়েছে, যা চীনের নেই। আমেরিকার কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা জোটের নেটওয়ার্কের মধ্যে আজ রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলো। এর মধ্যে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো ন্যাটো এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অংশীদার ত্রিশটি দেশ। অন্যদিকে বেইজিং দুটি প্রধান পদক্ষেপের সাথে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে: প্রথমত, রাশিয়ার সাথে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যে নৃশংস যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে রাশিয়াকে সমর্থন করেছে বেইজিং। পরিবর্তে বিপুল পরিমাণ রাশিয়ান তেল এবং গ্যাস কিনেছে। দ্বিতীয়ত: আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েক ডজন দেশ সহ বিশ্বের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বেইজিংয়ের কিছু সুবিধা থাকতে পারে। এগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা অবহেলিত এলাকা - ওয়াশিংটনের অতীত কর্মের কারণে অনেকেই শীর্ষস্থানীয় বিশ্বশক্তির প্রতি সন্দেহ পোষণ করে। এই দেশগুলির অনেকগুলি গণতন্ত্র, আইনের শাসন বা লিঙ্গ সমতার পাঠ গ্রহণে আগ্রহী নয়। পরিবর্তে, এই সরকারগুলি অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন পছন্দ করে। হাইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী - ''চীন দীর্ঘদিন ধরে বুঝতে পেরেছে যে বিশ্বের এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যেখানে উন্নয়নের জন্য অর্থায়নের প্রচুর প্রয়োজন রয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি সেই প্রয়োজনকে পর্যাপ্তভাবে কভার করেনি। রাস্তা, বন্দর এবং রেলপথ নির্মাণের দিকে আগ্রহ দেখায়নি। এই অর্থনৈতিক পথের মাধ্যমে রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে চাইছে চীন। ''চীন তার ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য আরও কূটনৈতিক কৌশলের দিকে মনোনিবেশ করেছে। ডিসেম্বরে শি জিনপিং-এর রিয়াদ সফর ছিল ওয়াশিংটনের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা , যার পুরনো আরব মিত্রের সাথে সম্পর্ক অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর এমন কোনো কোণ খুঁজে পাওয়া কঠিন যেখানে দুই মহাশক্তির ঠান্ডা যুদ্ধের খবর পৌঁছচ্ছে না। বিশেষ করে একটি জায়গা রয়েছে যা এই নতুন শীতল যুদ্ধকে উত্তপ্ত যুদ্ধে পরিণত করার সম্ভাবনা রাখে। সেটি হলো তাইওয়ান। সেখানে কী হয় তা কেবল সময়ই বলবে।
মন্তব্য করুন
ইরান ইসলামি বিপ্লব ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্ট
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
ইরানের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও বিশ্বাস করছেন যে, ইরানের ভিতর কিছু বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনার পর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার কেন উড়ার সিদ্ধান্ত নিল? এই ব্যাপারে নিরাপত্তা ছাড়পত্র কে দিল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেকোনো বিবেচনায় এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা নয়।
আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গভর্নর এক হেলিকপ্টারে ওঠাটাও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ এর আগে কখনোই ইরানের প্রেসিডেন্ট অন্য কারও সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠেন না। তৃতীয়ত, যেখানে তাদের বহনকারী অন্য হেলিকপ্টারগুলো অন্যদিকে যাচ্ছিল সেখানে এই হেলিকপ্টারটি কেন গতিপথ পরিবর্তন করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সবকিছু একটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
পরিকল্পিত ভাবার পিছনেও কারণ আছে। অতীতেও দেখা গেছে যে, এরকম বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে দমন করেছে পাকিস্তানি জিয়াউল হক নিহত হয়েছিলেন এরকমই একটি বিমান দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি পরিকল্পিত নীল নকশা এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ওই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়।
এবার ইরানের যে ঘটনাটি ঘটল তার পিছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, এর পিছনে মোসাদের হাত রয়েছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে পট পরিবর্তনের জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভিতরে যে হিজাব বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনেও মোসাদের হাত ছিল এবং মোসাদকে সহযোগিতা করেছিল সিআইএ- এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে, ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রতিবেদনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সন্ত্রাসীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়, অস্ত্র সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে যে হামলা হামাস পরিচালনা করেছিল, তার পিছনে ইরানের মদত ছিল। ইরানের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এমন বক্তব্য মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হরহামেশাই করে থাকেন। আর এ কারণে ইরানের পট পরিবর্তনের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ছিল।
এর আগেও ইরানের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করা হয়েছিল। যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের এই ঘটনাটি সেরকমই কোন ঘটনা বলেই অনেকের স্থিরবিশ্বাস। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভিতর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হল বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত কট্টরপন্থী নন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অনেকটাই নমনীয় এবং ইরানের ভিতর এখন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন। বিশেষ করে যদি ভিতরে শত্রু তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা যায়, তাহলে ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। মোসাদ এবং সিআইএ কি সেই পথেই এগোচ্ছে, এর উত্তর সময়ই বলে দিবে।
ইব্রাহিম রাইসি ইরান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা মোসাদ সিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
কাজেম জালালি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন আমাকে বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যা দরকার হবে, তা আমরা করব। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, এ বার্তা ইসলামিক রেভল্যুশনের সর্বোচ্চ নেতার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করুন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব দ্য জয়েন্ট স্টাফ ভ্যালিরি গেরাসিমভ, বেসামরিক সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আলেক্সান্দার কোরেনকোভ, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ইগোর লেভিতিন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
ইরান রাষ্ট্রদূত হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
মন্তব্য করুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে।
এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানায় 'তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ'সহ স্থানীয় আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেটিতে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হেলিকপ্টারে পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের সদস্য মাহদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, সহকারী পাইলট ও ক্রু সদস্য ছিলেন।
ইরান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দাফন মৃত্যু
মন্তব্য করুন
১৯৭৯ সালে ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছিল। রেজা শাহ পাহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে যে ‘ইসলামি বিপ্লব’ ঘটানো হয়েছিল, সেটিকে বলা হয় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর ইতিহাসের তৃতীয় মহা জাগরণ, যেখানে জনগণ এককাট্টা হয়ে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল। এই সময় নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং খোমেনির নেতৃত্বে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপ গ্রহণ করে। কঠোর শরিয়া আইন অনুসারে ইরান পরিচালিত হতে থাকে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে পড়বে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে যে, ইরানের এই ঘটনাটিকে ইরানবাসী কোনভাবেই স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করছে না। তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ঘটছে। এটির পেছনে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িত বলেও তারা ধারণা করছে। আর এই ধারণাকে পুঁজি করে রাইসির মৃত্যুর পরে যে আবেগ এবং ক্ষোভ সেটাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উস্কানি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে আল জাজিরায় কয়েকজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ইরান যদি মনে করে এই ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, তাহলে তারা অবশ্যই পাল্টা প্রতিশোধ নেবে।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন। কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে। এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।