সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে বড ধরণের অগ্রগতি এসেছে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে চির-প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইরানের সাথে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না সৌদি আরবের। আচমকাই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে গত শুক্রবার (১০ মার্চ) একে অপরেরে মধ্যে সদেই পুরনো সেই সম্পর্ক ফের চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করে সৌদি আরব ও ইরান। এরই প্রেক্ষিতে চীনের মধ্যস্ততায় এক বৈঠকে দুই দেশে ফের দূতাবাস স্থাপন করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে রিয়াদ এবং তেহরান। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনের রাজধানী বেইজিংয়ে এক আলোচনায় মিলিত হন দুই দেশের শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা কর্তারা। তারপরই এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চুক্তিপত্রে ইরানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা কর্তা আলি শামখানি এবং সৌদি আরবের পক্ষে স্বাক্ষর করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসায়েদ বিন মহাম্মদ আল-আইবান।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুই দেশই এই চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে চিনের সার্থক ভূমিকার প্রশংসা করেছে। এর আগে ২০২১ এবং ২০২২ সালে যথাক্রমে ইরাক এবং ওমানে ইরান এবং সৌদির কর্তারা আলোচনায় বসেছিলেন। ইরাক এবং ওমানেকেও এর জন্য আলাদা করে ধন্যবাদ জানিয়েছে এই দুই দেশ।
২০০১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তারও আগে বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং বিনিয়োগের বিষয়ে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইরাক ও সৌদি। এদিন সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, এই দুই চুক্তিই কার্যকর করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে তারা।
এক বিবৃতিতে সৌদি প্রেস এজেন্সি বলেছে, “চিনের সমর্থনে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের মাননীয় রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর মহৎ উদ্যোগে সৌদি আরব এবং ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক ইরানের মধ্যে প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য, বেজিংয়ে ৬ থেকে ১০ মার্চের মধ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদল আলোচনায় বসেছিল।”
অন্যদিকে, ইরানের এক উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবারের চুক্তিকে সেই দেশের সর্বময় নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনেই সমর্থন করেছেন। ওই কর্তা বলেছেন, “সেই কারণেই সর্বময় নেতার প্রতিনিধি হিসাবে চিন সফর করেছেন শামখানি। তাঁকে চিনে পাঠিয়ে ইরান সরকার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, এই সিদ্ধান্তে ইরানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সমর্থন আছে।”
উল্লেখ্য, শিয়াপন্থী ইরান এবং সুন্নিপন্থী সৌদি আরবের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। সরাসরি দুই দেশ যুদ্ধে না জড়িয়ে পড়লেও, ইয়েমেন থেকে সিরিয়া – মধ্যপ্রাচ্যের যেখানে যেখানে যুদ্ধ চলছে, সর্বত্রই দুই দেশের ছায়া যুদ্ধ চলছে। সর্বত্রই দুই দেশ বিপরীত পক্ষকে সমর্থন করে চলেছে। ২০১৬ সালে রিয়াদের এক শিয়াপন্থী ধর্মগুরুর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছিল। তেহরানে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে হামলাও হয়েছিল। তারপর সৌদি আরব এবং ইরানের সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই দিক থেকে ২০২৩ সালের ১০ মার্চ এক নতুন যুগের সূচনা করল বলা চলে।
এই সম্পর্ক কতটা টেকসই হয়, সেই বিষয়ে অবশ্য এখনও সন্দিহান কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। সেই সঙ্গে কপালের ভাঁজ বাড়িয়েছে চিনের মধ্যস্থতা। সাম্প্রতিক অতীতে বারবারই দেখা গিয়েছে যে, চিনের যে কোনও পদক্ষেপের পিছনেই নিজস্ব স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। শ্রীলঙ্কা থেকে পাকিস্তান, যখন যে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে চিন, আখেরে লাভ হয়েছে বেজিং-এরই। ইরান সৌদি আরবের সম্পর্কের উন্নয়নের পিছনে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বিরোধী ব্লক তৈরির চৈনিক প্রচেষ্টা বলেও মনে করছেন অনেকে। আবার, চিনের সম্প্রসারণবাদী নীতিরও অংশ হতে পারে।
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেছেন, 'দুর্ঘটনার পেছনে আমরা নেই।' তবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের বিরোধী দল বেতেনু পার্টির চেয়ারম্যান এম কে আভিগদোর লিবারম্যান বলেছেন, রাইসির মৃত্যু এই অঞ্চলে ইরানের নীতিতে কোনও পার্থক্য আনবে বলে ইসরায়েল আশা করে না।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেইটকে তিনি বলেছেন, 'আমাদের জন্য, এটা কোনও বিষয় নয়। এই ঘটনা ইসরায়েলের (ইরানের প্রতি) মনোভাবে কোনও প্রভাব ফেলবে না। ইরানের নীতি দেশটির সর্বোচ্চ নেতার (আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি) মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'ইরানের প্রেসিডেন্ট যে একজন নিষ্ঠুর লোক ছিলেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আমরা তার জন্য একফোঁটা চোখের পানিও ফেলব না।'
ইসরায়েলের অতি-রক্ষণশীল নোয়াম পার্টির নেতা এম কে আভিগদোর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, 'এক মাসেরও কম সময় আগে রাইসি হুমকি দিয়েছিলেন যে, ইসরায়েল আক্রমণ চালালে এর কোনও কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আর এখন তিনিই ইতিহাসের ধূলিকণা।'
উল্লেখ্য, রোববার প্রতিবেশি দেশ আজারবাইজানের সাথে যৌথ অর্থায়নে নির্মিত কিজ কালাসি বাঁধের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। পরে সেখান থেকে ইরানের তাবরিজ শহরে আরেকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাওয়ার সময় ভারজাকান অঞ্চলের দিজামারের পার্বত্য এলাকায় প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ তল্লাশি অভিযানের পর সোমবার দিজামারের উজি ও পীর গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা হয়। সেখান থেকে ইরানের উদ্ধারকারী দলের কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন।
রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবেরের নাম ঘোষণা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করেছেন তিনি।
ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতি ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
রহস্যজনকভাবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে কিনা বা এটার প্রভাব কেমন হতে পারে! এটাই এখন বিশ্বরাজনীতির আলোচিত বিষয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রভাবশালী এই দুই নেতার মৃত্যুতে অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। আর রাইসির মৃত্যু থেকে এখন ইসরায়েলই সবচেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইব্রাহিম রাইসি ও হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান সংঘাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল তেহরান। বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থ ও সমরাস্ত্রের অন্যতম যোগানদাতা ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী।
আর এসব গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ইসরায়েলের স্বার্থের জন্য ক্রামাগত হুমকি তৈরি করে আসছিল।
গত মাসে ইব্রাহিম রাইসির সরকার সরাসরি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলও ইরানের ইস্ফাহান শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই ঘটনার আগে কেউ কখনো কল্পনাই করতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ ইসরায়েলের হামলার সাহস করতে পারে, সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি।
শুধু এ হামলা নয়, কয়েক দশক ধরে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো। এমনকি এ তালিকায় রয়েছে সুন্নি প্রধান দেশ সৌদি আরবও। আর পশ্চিমা শক্তির কোনো তোয়াক্কা না করে পরমাণু কর্মসূচিতে জোরদার ভূমিকা পালন করেছেন ইব্রাহিম রাইসি। এমনকি বেশ কয়েকবার ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন সদ্য নিহত ইরানি প্রেসিডেন্ট। এ কারণে বিশ্লেষকরা বলছে, রাইসির মৃত্যু প্রভাব ফেলতে পারে দেশটির পরমাণু কর্মসূচিতেও।
এছাড়া, রাইসির মৃত্যু শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় বরং মধ্য এশিয়া ও ইউরোপীয় ভূরাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে যে বিপুল পরিমাণ ড্রোন ও সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছিল তেহরান এখন সেই পদক্ষেপ কতটা ধারাবাহিক থাকবে সে প্রশ্ন উঠেতে শুরু করেছে অনেক মহলে। এছাড়াও রাইসির নেতৃত্বে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তেহরান।
ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতি সৌদি আরব
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
ইরান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, 'দুর্ঘটনার পেছনে আমরা নেই।' তবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
রহস্যজনকভাবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে কিনা বা এটার প্রভাব কেমন হতে পারে! এটাই এখন বিশ্বরাজনীতির আলোচিত বিষয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রভাবশালী এই দুই নেতার মৃত্যুতে অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। আর রাইসির মৃত্যু থেকে এখন ইসরায়েলই সবচেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।