ইনসাইড থট

একদিনের বাঙালি, বাংলাদেশ: আমার দুঃখ

প্রকাশ: ১২:০১ পিএম, ৩১ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে বছরে কয়েকটি দিন আসে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, স্মরণীয় আর শ্রদ্ধার দিন। ১৯৫২ সালে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করতে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। সেইদিনই বলা যায় শুধু আমাদের পরিচয়, আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করা নয় সাথে সাথে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজ রোপণ করা হয়েছিল। বাঙালি বিভিন্ন নিপীড়ন, প্রতিবন্ধকতা এবং ধ্বংসযজ্ঞ অতিক্রম করে, ভাষার জন্য যারা তাদের জীবন দিয়েছিলেন তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার তৈরি করেছিল। সেই থেকে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী আমরা সবাই শহীদ মিনারে একত্রিত হই, যারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, জীবন দিয়েছিল তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। আজ মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার লড়ায়ে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ এই লড়াইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন সেই বাঙালিদের বিশ্ববাসী জানে এবং শ্রদ্ধা করে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশে এলে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে তারা যাবে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়। স্বাধীনতার অর্জনের ঠিক কয়েকদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বধ্য ভূমিতে ফেলে দিয়েছিল। তাদের শ্রদ্ধা এবং তাদের স্মরণ করার জন্য, আমাদের মুক্তির পরের প্রজন্মের সন্তানরা যাতে স্বাধীনতার মুল্য বুঝতে পারে আর স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন কথা না ভুলে যায় তার জন্য জয়লাভের পর ঢাকায় একটি অপুর্ব বিস্ময়কর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে স্মরণ করা হয়। সেইদিন অনেক নেতা, দল আর মানুষ সেখানে যায়। আমি বিশ্বাস করি যদি জায়গাটি উপযুক্ত করা হয়, তাহলে সেখানে প্রতিদিন দেশী, বিদেশী দর্শনার্থীসহ সব বর্ণের মানুষ যেতে চাইবে।।

পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল সাভারে আমাদের জাতীয় শহীদ সমৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য আমাদের আত্মত্যাগের গল্প বলার তীর্থস্থান। বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ সফরে আসলে সেখানে যান তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। ২৬শে মার্চ এই জায়গাটি হাজার হাজার মানুষের সাথে পূর্ণ হয়ে ওঠে।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দুঃখজনকভাবে তার মৃতদেহ তার প্রাপ্য সম্মান পায়নি। ঘাতক ও সামরিক শক্তি বিদ্রোহের ভয়ে তাকে ঢাকা থেকে অনেক দূরে টঙ্গী পাড়ায় সমাহিত করে। সামরিক স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকাকালে কবরটি অবহেলিত ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও কবরটি অবহেলিত থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার প্রতি সঠিকভাবে অনেক মনোযোগী হয়।মানুষ যাতে আমাদের দেশ, আমাদের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার অবদান, স্বাধীনতা পরবর্তী উন্নয়ন এবং তার আত্মত্যাগ প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং স্মরণ করতে পারে তার জন্য একটি সম্মানজনক সহজ কিন্তু মহিমান্বিত জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ নির্মাণ করে। জাতীর পিতার জন্মদিন ছাড়া অন্য দিনে আমার মত দেশের প্রতিটি কোণ থেকে জাতির পিতার সমাধিতে হাতে গনা কিছু লোক প্রতিদিন সেখানে যান।

আমি এখানে কেবল উদাহরণ স্বরূপ আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের আলোকপাত করছি। আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে যাই। তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমি ছয়টি মহাদেশের ১১৫টি দেশে কাজ করার এবং দেখার অনন্য সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি দেশে আমি ইতিহাসের স্থান এবং স্মৃতিস্তম্ভ, তাৎপর্যপূর্ণ সমাধি দেখার চেষ্টা করি। যা দেখে নাগরিক এবং দর্শনার্থীরা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। আমি দেখেছি সেসব দেশের সরকার সেই জায়গাগুলির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যতাযত বিনিয়োগ করেছে এবং ব্যবস্থা নিয়েছে। এই জায়গাগুলি সপ্তাহ এবং বছরের প্রতিটি দিন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন সেই জায়গাগুলোতে যান। সব সময় কিছু না কিছু উৎসবের আয়োজন করা হয় সেসব জায়গায়। সেই জায়গাগুলো অনেক স্বেচ্ছাসেবক সহ সশস্ত্র বাহিনী পাহারা দেয়। স্কুলের বাচ্চাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে তারা তাদের ইতিহাস এবং সংগ্রাম দেখতে, বুঝতে, শিখতে পারে এবং সম্মান দেখাতে পারে। বিদেশী দর্শনার্থীরাও সেসব স্থান পরিদর্শন করে এবং সেই দেশ, এর মানুষ এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। প্রতিটি পর্যটন বইয়ে সেই স্থানগুলিকে অবশ্যই দর্শনীয় স্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে যাবার পর ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার এবং ২০১৭ সাল থেকে আমি বছরে অন্তত একবার বাংলাদেশ সফর করি (যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজের জন্য আমি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে গিয়েছি)। আমি যখন বাংলাদেশে যাই, আমি সবসময় চেষ্টা করি ওই চারটি এলাকা ঘুরে দেখার জন্য। গত কয়েক দশকে অসাধারণ উন্নয়ন দেখতে আর জানতে আমি প্রতিবার ঢাকার বাইরে আমাদের গ্রামীণ এলাকাতেও যাই। ওই চারটি এলাকা পরিদর্শন করে, অবহেলা দেখে আমার দারুন মন খারাপ হয়। হ্যাঁ, জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে যান, বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নেতাদের শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই কারণেই সেই জায়গাটি সারা বছর ধরে কোনো না কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত রাখা হয়। তবুও আমি এর চেয়ে অনেক বেশি আশা করি।

২১শে ফেব্রুয়ারি, শহীদ মিনার রং করা হবে, পরিষ্কার করা হবে, আল্পনা আঁকা হয় এবং সেইদিন বিভিন্ন দলের নেতা আর হাজার হাজার মানুষের মধ্যে লড়াই হয় কে প্রথমে তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে তাই নিয়ে। ২১শে ফেব্রুয়ারির পরের দিন, জায়গাটি অবহেলিত এলাকা বলে মনে হয়। আমি দেখেছি সেই জায়গাটা ময়লা-আবর্জনায় ভরা, কোন পাহারাদার নেই, রক্ষণাবেক্ষণের কোন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এমন হবে?

বধ্য ভূমি স্মৃতিসৌধ (শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ), একটি চমৎকার জায়গা কিন্তু এটিও একদিনের স্মরণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে - শুধুমাত্র একদিনের সহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। আমি সেখানে গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। জায়গাটা পরিষ্কার করা হয় না। দেখেছি কিছু তরুণ দম্পতি এখানে-সেখানে বসে রোমান্টিক সময় পার করছে। এক কোণায় অলসভাবে বসে আছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করি কেন এমন হবে?

সৌভাগ্যবশত সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ একটি ভাল দর্শনীয় স্থান, তবুও শুধুমাত্র ২৬মার্চ নয় জায়গাটি সারা বছর আরো ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করা যেতে পারে। আমি সেখানে এমন কোনো ট্যুরিস্ট গাইড দেখিনি যিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা স্থাপত্যের অর্থ বর্ণনা করতে পারেন।

 

বাংলাদেশের স্থপতি এবং জাতির পিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন যাতে আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গর্বিত জাতি হতে পারি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি দেশ পুনর্গঠন শুরু করেন। সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের আহ্বানে তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান। অর্থনীতি দ্রুত গতিতে উঠতে শুরু করে। উৎপাদন বাড়াতে শুরু হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমতে থাকে। আশায় উদ্বুদ্ধ, লোকেরা স্বাধীনতার সুবিধাগুলিকে প্রতিটি দরজায় ধাপে প্রসারিত করতে সহায়তা করে। ঠিক তখন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে মিলে মিথ্যা ও নোংরা প্রচারণা ছড়ানো আর কিছু বিশ্বাসঘাতক সামরিক কর্মকর্তা, কিছু বিদেশী শক্তি এবং বাংলাদেশের কিছু মিরজাফরদের সহায়তায় জাতির পিতাকে সপরিবারের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ঘোষণা করা হয় সামরিক আইন। গণতন্ত্র হরণ করে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় হত্যা, অভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সামরিক স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং কয়েক দশক ধরে দেশ শাসন করে। স্বাধীনতা আর মুক্তির সব নিদর্শন কেড়ে নেওয়া হয, জাতির পিতার কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়, যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়। আমাদের অতীত বা জাতির পিতাকে স্মরণ করার মতো কোনো প্রতীক বা স্থান আমাদের কাছে ছিল না। তাই আজ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ একটি চমৎকার স্থান, একটি দুঃখ, শান্তি, শ্রদ্ধা ও প্রশান্তির এলাকা। এটা আমাদের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার জায়গা, আমাদের ভবিষ্যতের জায়গা। সেখানের জাদুঘরটি আমাদের জাতির পিতা এবং সংগ্রামের গল্প বলার চেষ্টা করে। তবুও আমি অনুভব করি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ আরো অনেক বেশি সম্মানের যোগ্য। এটি শুধুমাত্র তার জন্মদিনে দেখার জায়গা হতে পারে না। জাতির পিতার সমাধি হল ইতিহাস, ত্যাগ ও সংগ্রামের স্থান, শুধুমাত্র জন্মদিনে এটি দর্শন হতে পারে না। এটা বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য প্রতিদিন মনে রাখার জায়গা। আমার জন্য এটি একটি তীর্থস্থান। বেড়াতে যেতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে দেশের প্রতিটি কোণ থেকে আসার জন্য কেন ডেডিকেটেড পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস নেই। তাহলে মানুষ সেখানে যাবে কিভাবে? দুর থেকে আশা মানুষের রাত কাটার জায়গা সেখানে নই। সামরিক খুনি ও স্বৈরশাসকরা এটাই চেয়েছিলেন, যাতে মানুষ সেখানে না যেতে পারে এবং দুঃখজনকভাবে আমরা এখনও কোন মনোযোগ দিচ্ছি না। ভবিষ্যত প্রজন্মের সেখানে যাওয়া সহজ করার উপায় খুঁজে পাচ্ছি না! আমরা ভর্তুকি প্রদান করছি, এমনকি লোকসানকারী প্রতিষ্ঠানকেও কিন্তু কেন এই প্রচেষ্টায় বরাদ্দ করতে পারছি না!

আমি একজন গর্বিত বাঙালি এবং বাংলাদেশী হতে চাই, আমি আমাদের গর্বিত ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম এবং আমাদের আত্মত্যাগের কথা প্রতিটি দিন স্মরণ করতে এবং বলতে চাই। জাতির পিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সুযোগ দেওয়া হলে, সক্রিয়ভাবে দেশব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশের জনগণ, বৃদ্ধ এবং যুবক, নারী বা পুরুষ তাদের শ্রদ্ধা জানাতে সেই স্থানগুলিকে স্মরণের জায়গা হিসাবে পরিদর্শন করতে যাবে। তারা ইতিহাসকে আলিঙ্গন করে প্রতিশ্রুতি করবে কখনই কউকে আমাদের দমন করতে, আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে দেব না। বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীরা সে জায়গা দেখার জন্য কৌতুহলী হবে এবং সেখানের যাবার ইচ্ছা করবে এবং আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। যা আমি অন্য অনেক দেশে দেখেছি, তাই ভাবি কেন আমাদের সেনাবাহিনী, নৌ, বিমান বাহিনী এবং বিডিআর বাহিনী তাদের সেনানিবাসের মতো তেমন সুন্দর রক্ষণাবেক্ষণের ধারাতে এই চারটি জায়গায় স্থায়ীভাবে তাদের স্টেশন স্থাপন করে, সরকারী সহায়তায় এই স্থানগুলি পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে না? আমাদের সংগ্রাম ও মুক্তি এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। কথার কথা তারা সেখানে সবচেয়ে অর্থবহ এবং আকর্ষণীয় প্রহরী পরিবর্তনের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারে, লোকেরা তাদের দেখতে যাবে এবং একই সাথে তাদের শ্রদ্ধা জানাবে। কেন আমি বিমান বন্দরে এই চার সৌধের ছবি দেখি না? কেন রাজনৈতিক দল, ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় পর্যায়ক্রমে ছাত্রদের এই জায়গায় যাওয়ার আয়োজন করে না? আমরা কেন ইতিহাসের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছু অর্থ ব্যয় করতে পারি না? কেন যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সেখানে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না? মনে রাখতে হবে, এই জায়গাগুলো আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় আমরা কোথায় ছিলাম এবং আজ কোথায় আছি। আমাদের মনে রাখতে সাহায্য করবে কেন আমাদের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য লড়াই করতে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। বার বার সতর্ক করবে যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আমাদের দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। সাহস দেবে কেন আমাদের জাতি, আমাদের ভাষা এবং আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে গর্ব করা উচিত।

আমি যখন দেখি বাংলাদেশের মানুষের বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরের স্থান পরিদর্শন করার সচেতনতা এবং ইচ্ছা, তখন আমি খুব বিস্মিত এবং গর্ব বোধ করি। সামাজিক মিডিয়াগুলো তাদের দুঃসাহসিক গল্পে পূর্ণ। তারা তাদের বাড়ির চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, তারা এখন আরও মোবাইল, তাদের সামাজিক ও আর্থিক উপায় বাড়ছে, তারা বিভিন্ন জায়গা দেখতে চায়, আমাদের ইতিহাস জানতে চায়। এখন অন্তত সেই চারটি জায়গাগুলিকে দেখার জন্য, সময় কাটানোর জন্য আরও আকর্ষণীয় করার দায়িত্ব আমাদের, সরকারের, সবার।আমি বিশ্বাস করতে চাই শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ শুধুমাত্র একটি দিনের জায়গা নয় বরং প্রতিটি দিনের শ্রদ্ধা ও স্মরণের জায়গা হক। আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মাতৃভাষা, যারা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমাদের জাতির পিতাকে বিশ্বাস করি তবে আমাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে, আপনি যে রাজনৈতিক দলেরই হোন না কেন, সেই বিশ্বাসে আমাদের অবশ্যই একসাথে থাকতে হবে। আমরা একদিনের জন্য বাঙালি/বাংলাদেশী হতে চাই না। আমরা বাঁচতে চাই এবং সমৃদ্ধ হতে চাই, আমাদের ইতিহাস এবং আমাদের অতীত, বর্তমান নিয়ে গর্বিত হতে চাই এবং আমরা আমাদের আরো উন্নত ভবিষ্যতে বিশ্বাস করতে চাই। চিরদিন আমরা সবাই মনে প্রানে বাঙ্গালী, বাংলাদেশী হয়েই বাঁচতে চাই।

Prof Monir Islam, MBBS, FRCOG, MPH
Senior Specialist
International Centre for Migration, Health and Development
Former Senior Specialist, Maternal and Newborn Health
Liverpool School of Tropical Medicine, Liverpool, UK
Former WHO Director and Country Representative to Thailand and Namibia



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন