গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের কাছে ১৪ হাজারের বেশি ভোটে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা আজমত উল্লা পরাজিত হয়েছেন। এই পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগ নানা রকম হিসেব-নিকেশ করছে। যদিও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা আত্মতুষ্টি রয়েছে এবং এটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নিয়ে এই নির্বাচনের পর নতুন হিসেব-নিকেশ করছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ, আতঙ্ক এবং অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচনে মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম এই সংগঠনের অন্যতম নেতা। তিনি কাগজে-কলমে দ্বিতীয় প্রধান নেতা হলেও আসলে দল পরিচালিত হয় তার নেতৃত্বেই।
সাম্প্রতিক সময়ে গত দুই বছরের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামী আন্দোলন একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছে এই দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলটি। সেখানে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা- বরিশালের রাজনীতির হিসেব-নিকেশে নতুন মেরুকরণের সৃষ্টি করেছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
গাজীপুরের মতো বরিশালেও আওয়ামী লীগ বিভক্ত। গাজীপুরের মতো বরিশালেও আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়রকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সাদিক আব্দুল্লাহ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়েছিলেন। সাদিক আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ছেলে। গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে- এ কারণেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড তাকে এবার মনোনয়ন দেয়নি। তার বদলে আবুল হাসান আব্দুল্লাহর ছোট ভাই খোকন সেরনিয়াবাদকে এই নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংসদীয় বোর্ডের এই মনোনয়ন সিদ্ধান্তকে মেনে নেননি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং তার ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ। শুরু থেকেই তারা খোকন আব্দুল্লাহর ব্যাপারে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে- এমন খবর জানা গেছে। সেখানে কিছু কিছু সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এই সমস্ত সহিংসতা এবং বিভক্তির পরও আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই চেষ্টা কতটুকু সফল হবে- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় রয়েছে।
গাজীপুরের নির্বাচনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ বিরোধী সবাই একাট্টা হয়েছিল জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে। বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গাজীপুরে আওয়ামী বিরোধী প্রার্থী হিসেবে জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছে। বরিশালে এমনটি ঘটতে পারে বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, বিএনপি এই নির্বাচনে নাই বটে- তবে তারা শেষ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে গোপনে সমর্থন দিতে পারে এবং আওয়ামী বিরোধী ভোটগুলো মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের পক্ষে যেতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
তাছাড়া এখানে আওয়ামী লীগের বিভক্তি থাকার কারণে আওয়ামী লীগের একটা অংশও গোপনে চাইবেন খোকন সেরনিয়াবাদকে হারাতে। আর সে কারণেই গাজীপুরের মত বরিশালের ফলাফলে যদি চমক সৃষ্টি হয়, তাহলে অবাক হবার কিছু নাই- এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল যে তীব্র আকার ধারণ করেছে- গাজীপুরের নির্বাচন তার প্রমাণ এবং বরিশালেও যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগকে তার কোন্দল মেটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সবার আগে। কারণ আওয়ামী লীগ যতই জনপ্রিয় থাকুক এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য যতই প্রস্তুতি নিক, অভ্যন্তরীণ কোন্দল আওয়ামী লীগের জন্য এক ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
গাজীপুর বরিশাল আতঙ্ক আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।