দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর মানুষের স্বাস্থ্যসেবার আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে সাধারণ মানুষও এ সেবায় সন্তুষ্ট। এমনকি চিকিৎসা সেবার গুণগত মানও ভালো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একটি গবেষণা ফলাফলে এমনটাই দাবি করেছেন গবেষকরা।
বুধবার (৩১ মে) বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার অপারেশনাল প্ল্যানের উদ্যোগে ‘এ্যাসেসমেন্ট অব দ্যা কমিউনিটি ক্লিনিকস সাপোর্টেড বাই মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার্স : ইফেক্টস অন সার্ভিস ডেলিভারি, কোয়ালিটি অ্যান্ড ইউটিলাইজেশন অব সার্ভিসেস’- শীর্ষক গবেষণা ফলাফলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে সম্প্রতি জাতিসংঘে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নামে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা প্রস্তাব আকারে গৃহীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক জানান, অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) কেন্দ্রগুলোর অবস্থা সন্তোষজনক ছিল। কন্ট্রোল এলাকার সেবাগ্রহণকারীদের কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা পাওয়ার সুবিধা ভালো ছিল, কিন্তু তাদের এই সেবাগুলোর বিষয়ে সন্তুষ্টি কম ছিল। কেস এলাকার সেবাগুলোর গুণমান ভালো ছিল। তবে কন্ট্রোল এলাকার সেবাগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাগুলোর প্রাপ্যতায় কিছুটা বাধা ছিল।
তিনি বলেন, ‘কন্ট্রোল এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা, উঠান বৈঠক, স্বাস্থ্য শিক্ষা সেশন, বাড়ি কেন্দ্রিক সেবা, রেফার হওয়া রোগীর সংখ্যা, কমিউনিটি গ্রুপ সভা, কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সভা এবং বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার সংখ্যা কম ছিল, যেখানে কেস এলাকায় ইপিআই সেশন এবং রেফার হওয়া রোগীর সংখ্যা কম ছিল। প্রায় ৭০ শতাংশ কমিউনিটির জনগণ এমএইচভি সেবাগুলোর সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। প্রায় ৭০ শতাংশ এমএইচভি অনলাইন এবং অ্যাপ-ভিত্তিক ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন।’
ডা. আতিকুল হক বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা এবং গ্রামীণ মানুষের মধ্যে সংযোগ তৈরি করা অপরিহার্য। সিসি এবং এমএইচন্ডি সেবাগুলোর ব্যবহার। সহজ করার জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সকল নাগরিকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার সারাদেশে প্রতি ৬০০০ মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’
অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘মানবিক গুণাবলীর অধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম রাজনৈতিক দার্শনিক। কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাও একটি দর্শন। আমাদের সকলের দায়িত্ব হলো প্রধানমন্ত্রীর দর্শনকে এগিয়ে নেয়া ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।’
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সম্প্রীতি জাতিসংঘে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নামে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়েছে। বিশ্বের ৭০টি দেশ এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা ও কার্যকারিতা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হওয়ার পথ সুগম হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ ভালো থাকে এবং থাকবে। তবে বিএনপি-জামায়াতের বিষয়ে সতর্ক থাকবে হবে। তারা ক্ষমতায় গিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এটা খুবই দুঃখজনক।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর শাহানা পারভীন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, ইউজিসির অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, ডীন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরফদার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষ আস্থা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।