২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। বুধবার (৩১ মে) বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ধারা (১) অনুযায়ী প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সংসদের ২৩তম অধিবেশন আহ্বান করেন। আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন। আগামী ২৫ জুন সংসদে প্রস্তাবিত এই বাজেট পাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের বাজেট জুন-জলাই মাসে কেন হয়? কেন জনু-জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশের অর্থ বছর গণনা শুরু হয়?
পৃথিবীতে প্রথম পঞ্জিকার প্রচলন করেন সুমেরীয়রা। তখনকার সময়ে না ছিল সপ্তাহের হিসাব, না ছিল দিনের সঠিক হিসাব। কালের বিবর্তনে সুমেরীয়দের এই পঞ্জিকা ছাড়িয়ে বর্তমানে পৃথিবীতে ৮০ ধরনের পঞ্জিকার প্রচলন রয়েছে। এরমধ্যে অর্থনৈতিক পঞ্জিকা হিসেবে যোগ হয়েছে অর্থবছরের। আমরা বাঙালিরা বঙ্গাব্দ ও খ্রীষ্টাব্দকে সাধারণ পঞ্জিকা হিসেবে মেনে চললেও, আমাদের অর্থবছর শুরু হয় জুলাই মাস থেকে। জুলাই থেকে জুন অবধি চলে আমাদের অর্থবছর। এই অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে প্রস্তুত ও প্রণয়ন হয় বাংলাদেশের বাজেট। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল এবং সেখান থেকে স্বাধীন বাংলা- এই দীর্ঘসময় ধরে আমরা জুলাই মাসকে অর্থবছর ধরে বাজেট প্রস্তুত ও উত্থাপন করে আসছি।
ইতিমধ্যে নানা মহল থেকে অর্থবছর পরিবর্তনের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব থাকলেও সেই ব্রিটিশ আমল কিংবা পাকিস্তান আমল থেকে প্রচলিত অর্থবছরকেই অনুসরণ করে এখনও আমাদের অর্থবছর গণনা করা হচ্ছে। সাধারণ বছর আর অর্থবছর এক নয়। দেশের হিসাব-নিকাশ, রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয় পরিকল্পনা অর্থবছর ধরেই হয়। বছরের শুরু ও শেষ পূর্বনির্ধারিত, কারও পরিবর্তন করার ক্ষমতা নেই, কিন্তু অর্থবছর পরিবর্তন করা যায়। গত কয়েক দশকে বহু দেশ প্রয়োজন অনুযায়ী এর পরিবর্তন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে পাওয়া অর্থবছরই অনুসরণ করা হচ্ছে। জুলাই মাসে অর্থবছর শুরু হয়, শেষ হয় জুন মাসে। সে জন্য প্রতিবছর জুন মাসে সেই অর্থবছরের হিসাব শেষ করে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করা হয়।
প্রশ্ন হলো অর্থবছর কেন জুলাই থেকে জুন? ব্রিটেনের অর্থবছর অনুসরণ করেই জুলাই-জুন হয়েছিল এক সময়; হয়তো পশ্চিমা দেশগুলোর আবহাওয়া বিবেচনাতেই এই সময় ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটেনেও এখন পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে এখন অর্থবছর শুরু হয় এপ্রিল মাসে। যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় অক্টোবর মাসে। ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন অর্থবছর অনুসরণ করা হয় দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে। এর বাইরে আছে শুধু মিসর ও অস্ট্রেলিয়া। জানুয়ারি-ডিসেম্বর অর্থবছর অনুসরণ করা হয় অস্ট্রিয়া, ব্রাজিল, চীন, পর্তুগাল, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন ও সুইডেনে। ইংরেজি মাসের বিভিন্ন তারিখেও কোনো কোনো দেশে অর্থবছর শুরু হয়। যেমন ১৭ জুলাই নেপাল, ইথিওপিয়া ১১ সেপ্টেম্বর এবং ইরান ২১ মার্চ। এ রকম হওয়ার কারণ হতে পারে, এসব দেশের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী অর্থবছর ঠিক করা।
মূলত একটি দেশের শস্যের উৎপাদন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, সরকারি-বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ-সুবিধার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে অর্থবছর ঠিক করা হয়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, জুলাই মাস আমাদের দেশে বর্ষাকাল। এ সময় মাঠে কৃষকদের ফসল থাকে, কয়েক মাস পরেই ফসল ওঠে তাদের ঘরে। এছাড়াও কিছু কিছু অঞ্চলে এরই মধ্যে ফসল উঠে যায়। বছরের এই মধ্যবর্তী সময়টি কৃষিক্ষেত্রে বাজেটের বিভিন্ন দিক ভেবে ব্যবস্থা নেয়ার মোক্ষম সময়। এছাড়াও রাজনৈতিক দিক বিবেচনা করলে- জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতে নতুন কোনো দল ক্ষমতায় আসলে তারা বাজেট প্রণয়নের জন্য বেশকিছু মাস হাতে সময় পান। এ সময় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার নানা প্রতিফলন বাজেটে তুলে আনার যথেষ্ট সুযোগ পায় সরকারি দল। যে কারণেই হয়তো জুন-জুলাইকে অর্থবছর হিসেবে বিবেচনা করে বাজেট পেশ করা হয় বলে মনে করেন কেউ কেউ।
বছরের হিসাবের জন্য বিশ্বে এখন প্রায় ৮০টিরও বেশি দিনপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। এছাড়া হিজরি সন, ভারতীয় পঞ্জিকার ব্যবহারও রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে বাজেটবর্ষ বা অর্থবছর নামে আরও একটি হিসাব চালু রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১৫৪ দেশে অর্থবছর শুরু হয় ইংরেজি ক্যালেন্ডার বছর অনুযায়ী। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে।
এ ছাড়া জুলাই মাসেও অনেক দেশে অর্থবছর শুরু হয়। এরমধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের অর্থবছর শুরু ১ জুলাই, শেষ ৩০ জুন। চীন, ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ, স্পেন, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেনে অর্থবছর শুরু হয় ১ জানুয়ারি আর শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর। ভারত, যুক্তরাজ্য, হংকং, কানাডা এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় অর্থবছর শুরু হয় ১ এপ্রিল, শেষ হয় ৩১ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্র, কোস্টারিকা ও থাইল্যান্ডে অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর, শেষ হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। কোনো কোনো দেশ যেমন নেপাল (১৬ জুলাই-১৫ জুলাই), ইরান (২১ মার্চ-২০ মার্চ), ইথিওপিয়া (৮ জুলাই-৭ জুলাই) মাসের মধ্যবর্তী তারিখ থেকে অর্থবছর শুরু করে থাকে। ইরানের অর্থবছর হিজরি সন অনুসারে হয়ে থাকে। আর নেপালের অর্থবছর বিক্রম ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। সাধারণত সরকারি হিসাব-নিকাশের সুবিধার্থে অর্থবছর নির্ধারণ করা হয়।
আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই-জুন অর্থবছর বাস্তবসম্মত। বাজেট তৈরির সময়কাল ও বাজেট ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এর কারণ হিসেবে নিবিড়ভাবে দেখা যেতে পারে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ১৫০টি উপজেলায় এখন জনগণ ভোটের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫৯টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন গতকাল শেষ হয়েছে। সেখানেও এখন নির্বাচনী প্রচারণার ডামাডোল শুরু হয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে কি না, উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে কি না এবং উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে একদিকে যেমন জনগণের সংকট রয়েছে তেমনই নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
লক্ষ্মীপুর সদরের তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই হামলার শিকার হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নেপথ্যে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ। এঘটনায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী দুই প্রার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৯১১ জনের বিরুদ্ধে দুইটি মামলাও দায়ের করেন। ফলে নির্বাচনের পর আনন্দের বদলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ওই ইউনিয়নে।