প্রতি
বছর ঐতিহাসিক ৭ জুন তথা
‘ছয় দফা দিবস’ আমরা
যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করি। এ
বছর ৭ জুন, তথা
ছয় দফা দিবসের ৫৭তম
বার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তি ও ছয় দফা
দাবির বাস্তবায়নে ১৯৬৬-এর ৭
জুনের কর্মসূচি পালনে মনু মিয়া, মুজিবুল্লাহসহ
অসংখ্য শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছয় দফা। ছয়
দফা ও ৭ জুন
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে বিধায় জাতীয়
মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। পরবর্তীতে ’৬৯-এর গণ
আন্দোলনের সূচনালগ্নে এ ছয় দফা
দাবি দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলনসমেত ১১
দফা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রবল গণ
আন্দোলন-গণ অভ্যুত্থানের মধ্য
দিয়ে তথাকথিত ‘সংখ্যা-সাম্য’ বাতিল করে ‘এক মাথা
এক ভোট’ দাবি ও
জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের হিসসা আদায় করে, জাতির
জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
নেতৃত্বে ’৭০-এর ঐতিহাসিক
নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে এক সাগর
রক্তের বিনিময়ে আমরা এক দফা
তথা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধু বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতা
ছিলেন। তাঁর হৃদয়ের গভীরে
সততই প্রবহমান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছাড়া ভিন্ন কোনো
চিন্তা তাঁর ছিল না।
জেল-জুলম-অত্যাচার-নির্যাতন
সহ্য করে পরাধীনতার নাগপাশ
থেকে বাংলাদেশকে তিনি স্বাধীন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তা। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশ
হবে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের অভিপ্রায় থেকেই তিনি জাতির উদ্দেশে
ছয় দফা কর্মসূচি প্রদান
করেছিলেন। যে কারণে ছয়
দফাকে বলা হয় ‘জাতির
মুক্তিসনদ’।
স্বৈরশাসক
আইয়ুব খান এ দেশের
গণতান্ত্রিক শক্তি নিশ্চিহ্ন করে সংখ্যাগুরু বাঙালি
জাতিকে গোলামির শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করার জন্য ষড়যন্ত্র
করেছিল। এর বিপরীতে বাংলার
প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব ’৬৬-এর ৫
ফেব্রুয়ারি লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দল আহূত কনভেনশনে
সাবজেক্ট কমিটির সভায় ‘ছয় দফা’ উত্থাপন
করে তা বিষয়সূচিতে অন্তর্ভুক্তির
প্রস্তাব করেন। কিন্তু সভার সভাপতি চৌধুরী
মোহাম্মদ আলী ‘ছয় দফা
দাবি’ অন্তর্ভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন
করলে ১১ ফেব্রুয়ারি দেশে
ফিরে ঢাকা বিমানবন্দরে সংবাদ
সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে বিস্তারিত
তুলে ধরেন ও ২০
ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি ‘ছয় দফা’ দলীয়
কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করে। ‘ছয় দফা’ দলীয়
কর্মসূচি হিসেবে গৃহীত হওয়ার পর জনমত সংগঠিত
করতে বঙ্গবন্ধু তাঁর সফরসঙ্গীসহ ’৬৬-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় ‘ছয় দফা’কে
‘নূতন দিগন্তের নূতন মুক্তিসনদ’ হিসেবে
উল্লেখ করে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে
বলেন, ‘একদিন সমগ্র পাক-ভারতের মধ্যে
ব্রিটিশ সরকারের জবরদস্ত শাসনব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে এই চট্টগ্রামের
জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলার বীর
সন্তানরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। আমি চাই যে,
পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবি আদায়ে
সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামবাসীরা চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন।’ চট্টগ্রামের জনসভার পর দলের কাউন্সিল
সামনে রেখে ‘ছয় দফা’র
যৌক্তিকতা তুলে ধরতে তিনি
একের পর এক জনসভা
করেন। এরই অংশ হিসেবে
২৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর মাইজদী, বেগমগঞ্জ, ১০ মার্চ ময়মনসিংহের
মুক্তাগাছা, ১১ মার্চ ময়মনসিংহ
সদর ও ১৪ মার্চ
সিলেটে অনুষ্ঠিত জনসভায় জনতার দরবারে তাঁর বক্তব্য পেশ
করেন।
‘ছয়
দফা’ প্রচার ও প্রকাশের জন্য
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট ‘উপকমিটি’
গঠন এবং তাঁরই নামে
‘আমাদের বাঁচার দাবি : ছয় দফা কর্মসূচি’
শীর্ষক একটি পুস্তিকা মুদ্রিত
ও প্রকাশিত হয়। একই বছরের
১৮, ১৯ ও ২০
মার্চ ছিল আওয়ামী লীগের
কাউন্সিল অধিবেশন। এদিন কাউন্সিল সভায়
পুস্তিকাটি বিলি করা হয়।
দলের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের
সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি’ গীত হয়। সেদিনের
কাউন্সিল সভায় আগত ১
হাজার ৪৪৩ জন কাউন্সিলর
বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ও মিজানুর রহমান
চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করেন।
‘ছয় দফা’র ভিত্তিতে
সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্রের একটি
খসড়াও অনুমোদন করা হয়। ‘ছয়
দফা’ কর্মসূচি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে ‘ছয় দফা’র
ভিত্তিতে দলীয় গঠনতন্ত্র এবং
নেতৃত্ব নির্বাচনে যে পরিবর্তন সাধিত
হয় তা পরবর্তীকালে ‘ছয়
দফা’র চূড়ান্ত পরিণতি
এক দফা তথা স্বাধীন
ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ইঙ্গিতবাহী ছিল। ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি
দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিশেষ করে আমাদের মতো
অপেক্ষাকৃত তরুণ ছাত্রলীগ নেতৃত্বের
মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ‘ছয়
দফা’ এতই জনপ্রিয় হয়ে
উঠেছিল যে, বাংলার প্রতিটি
ঘরে এ পুস্তিকা সযত্নে
রক্ষিত হয়। ‘ছয় দফা’
সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত
হওয়ার জন্য।’ বস্তুত, ‘ছয় দফা’ ছিল
স্বাধীনতা-সংগ্রামের বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর। কাউন্সিল
অধিবেশনের শেষ দিন অর্থাৎ
২০ মার্চ চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার
মধ্যে ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভায় দলীয় নেতা-কর্মী
ও দেশবাসীর উদ্দেশে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘চরম ত্যাগস্বীকারের এই
বাণী লয়ে আপনারা দিকে
দিকে ছড়িয়ে পড়ুন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে জানিয়ে দিন, দেশের জন্য,
দশের জন্য, অনাগতকালের ভাবী বংশধরদের জন্য
সবকিছু জেনেশুনেই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা
এবার সর্বস্ব পণ করে নিয়মতান্ত্রিক
পথে ছয় দফার ভিত্তিতে
দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্য এগিয়ে আসছে।’
আওয়ামী
লীগের এ কাউন্সিল অধিবেশনটি
ছিল বাঙালির ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তন; যা
’৬৯-এর মহান গণ
অভ্যুত্থান, ’৭০-এর ঐতিহাসিক
নির্বাচন ও ’৭১-এর
মহত্তর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিল। কাউন্সিল
সভার সমাপনী জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ছয় দফার প্রশ্নে
কোনো আপস নাই। রাজনীতিতেও
কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নাই। নেতৃবৃন্দের
ঐক্যের মধ্যেও আওয়ামী লীগ আর আস্থাশীল
নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ
বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের
ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে।
আওয়ামী লীগ নেতার দল
নয়- এ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের
প্রতিষ্ঠান। শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের
মাধ্যমে এই ছয় দফা
আদায় করতে হবে। কোনো
হুমকিই ছয় দফা আন্দোলনকে
প্রতিরোধ করতে পারবে না।
ছয় দফা হচ্ছে বাঙালির
মুক্তিসনদ।’ স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, ‘যদি তোর ডাক
শুনে কেউ না আসে,
তবে একলা চলো রে’
উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘এই
আন্দোলনে রাজপথে যদি আমাদের একলা
চলতে হয় চলব। ভবিষ্যৎ
ইতিহাস প্রমাণ করবে বাঙালির মুক্তির
জন্য এটাই সঠিক পথ।’
সফলভাবে সমাপ্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের পর বঙ্গবন্ধু সারা
দেশ চষে বেড়ান। ২৬
মার্চ সন্দ্বীপ এবং ২৭ মার্চ
সাতকানিয়ার বিশাল জনসভায় ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি
ব্যাখ্যা করে বক্তৃতা করেন।
এরপর ৭ এপ্রিল উত্তরাঞ্চল
সফরে পাবনা ও নগরবাড়ীর জনসমাবেশে
বক্তৃতা করেন। এরপর এপ্রিলের ৮
বগুড়া, ৯ রংপুর, ১০
দিনাজপুর, ১১ রাজশাহী, ১৪
ফরিদপুর, ১৫ কুষ্টিয়া, ১৬
যশোর এবং ১৭ তারিখ
খুলনায় বিশাল সব জনসভায় ছয়
দফার বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ বক্তৃতা করেন। এভাবে সারা দেশে ৩৫
দিনে মোট ৩২টি জনসভায়
তিনি বক্তৃতা করেন। বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় ‘ছয় দফা’র
সপক্ষে জনমত প্রবল হয়ে
ওঠে। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ওপর
নেমে আসে স্বৈরশাসক আইয়ুবের
নির্মম গ্রেফতার-নির্যাতন। প্রতি জেলায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রদত্ত বক্তৃতার
প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে
বঙ্গবন্ধুকে প্রতি জেলা থেকে জারিকৃত
ওয়ারেন্ট বলে লাগাতার গ্রেফতার
প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ১৭
এপ্রিল রাত ৪টায় খুলনার
জনসভায় ভাষণদান শেষে ঢাকা ফেরার
পথে রমনা থানার জারিকৃত
ওয়ারেন্ট অনুযায়ী পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৪৭(৫) ধারাবলে
পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। যশোর মহকুমা
হাকিমের এজলাস থেকে তিনি জামিন
পান। ওই দিনই রাত
৯টায় সিলেটে গ্রেফতার, পুনরায় জামিনের আবেদন এবং ২৩ এপ্রিল
জামিন লাভ। ২৪ এপ্রিল
ময়মনসিংহে গ্রেফতার, ২৫ এপ্রিল জামিন।
‘ছয় দফা’ প্রচারকালে তিন
মাসে বঙ্গবন্ধুকে সর্বমোট আটবার গ্রেফতার করা হয়। এভাবেই
আইয়ুবের দমননীতি অব্যাহত থাকে। একই বছরের ৮
মে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ঐতিহাসিক ‘মে দিবস’ স্মরণে
শ্রমিক-জনতার এক বিরাট সমাবেশে
শ্রমিকরা বঙ্গবন্ধুকে বিপুল সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। ভাষণদান শেষে
রাত ১টায় তিনি যখন
বাসায় ফেরেন তখন পাকিস্তান দেশরক্ষা
আইনের ৩২(১) ‘ক’
ধারাবলে তাঁকে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ
রাজনৈতিক সহকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। ‘ছয়
দফা’ দেওয়াকে অপরাধ গণ্য করে স্বৈরশাসক
আইয়ুব বঙ্গবন্ধুকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে দেশরক্ষা আইনের
আওতায় আওয়ামী লীগের ওপর অব্যাহত গ্রেফতার-নির্যাতন চালায়। সামরিক সরকারের এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে
আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে সমগ্র
প্রদেশে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। প্রতিবাদ দিবসের
জনসভায় ‘ছয় দফা’র
প্রতি গণমানুষের বিপুল সমর্থন প্রকাশ পায়। হাজার হাজার
শ্রমিক এদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হরতাল পালন
করে এবং পল্টনে অনুষ্ঠিত
জনসভায় উপস্থিত হয়ে সরকারের দমননীতির
তীব্র প্রতিবাদ করে। দলের নবনির্বাচিত
সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেফতার করা হলে সাংগঠনিক
সম্পাদক মিজান চৌধুরী অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
স্বাধিকারের
দাবিতে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবসহ সব রাজবন্দির মুক্তি
ও নেতৃবন্দের গ্রেফতার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ’৬৬-এর ২০
মে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘৭ জুন’ সর্বব্যাপী
হরতাল আহ্বান করা হয়। বাংলার
গণমানুষ ৭ জুন আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী হরতাল পালন করেছিল। ৭
জুনের হরতালে সমগ্র পূর্ব বাংলা যেন অগ্নিগর্ভ। বিক্ষুব্ধ
মানুষ স্বাধিকার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব
রাজবন্দির মুক্তি দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। আমি তখন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রলীগের সার্বক্ষণিক কর্মী, ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ
সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র
সংসদের নির্বাচিত ভিপি। সর্বজনাব শেখ ফজলুল হক
মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর
রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু,
সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আবদুর
রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, নূরে আলম
সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে- আমরা
সেদিন হরতাল কর্মসূচি পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সেদিনের হরতাল
কর্মসূচিতে ধর্মঘটী ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সরকারের
নির্দেশে পুলিশ বাহিনী নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে
তেজগাঁওয়ে শ্রমিক মনু মিয়া, আদমজীতে
মুজিবুল্লাহসহ ১১ জন শহীদ
হন এবং প্রায় ৮০০
লোককে গ্রেফতার করা হয়। তেজগাঁও
শিল্পাঞ্চলে হরতাল সফল করার দায়িত্বে
ছিলেন ছাত্রনেতা খালেদ মোহাম্মদ আলী ও নূরে
আলম সিদ্দিকী। তাঁরা সেখানে বক্তৃতা করেন। প্রকৃতপক্ষে ৭ জুন ছিল
স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথের
আরম্ভস্থল তথা যাত্রাবিন্দু। আর
আমরা যারা ছাত্রলীগের কর্মী
ছিলাম, আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তিও স্থাপিত হয়েছিল এই দিনটিতেই।
১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির
মহান ভাষা আন্দোলন থেকে
শুরু করে ’৬২-এর
১৭ সেপ্টেম্বরের ‘শিক্ষা আন্দোলন’; ’৬৬-এর ৭
জুন ‘ছয় দফা আন্দোলন’;
’৬৯-এর ১৭ থেকে
২৪ জানুয়রির ‘গণ আন্দোলন-গণ
অভ্যুত্থান’; ৯ ফেব্রুয়ারি ১১-দফা বাস্তবায়ন ও
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবিতে ‘শপথ দিবস’ পালন;
স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পদত্যাগ, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব
রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে ১৫, ১৬, ১৭,
১৮, ১৯, ২০ ও
২১ ফেব্রুয়ারি লাগাতার সংগ্রাম শেষে ২৪ ঘণ্টার
আলটিমেটাম প্রদান; এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি
সব রাজবন্দির মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তিলাভ
এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক
রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের
উপস্থিতিতে ‘মুক্তমানব শেখ মুজিব’কে
‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান। পঞ্চাশের দশক থেকে বাঙালির
জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্যে গড়ে তোলা সব
আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। এসব মহিমান্বিত সংগ্রামের
মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ অর্জন
করেছে গণতান্ত্রিক তথা নিয়মতান্ত্রিক আচরণ
ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জয় করেছে
বাংলার মানুষের হৃদয় আর সৃষ্টি
করেছে ইতিহাস। অতীতে আমাদের সময়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন
গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতি বছর ২১ মার্চের
মধ্যে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল।
তা না হলে তিন
সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কাছে নেতৃত্ব তুলে
দিতে হতো। এটাই ছিল
বিধান এবং গঠনতান্ত্রিক বিধিবিধানের
অন্যথা হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল
না। আজ অতীতের সেই
সোনালি দিনগুলোর দিকে যখন ফিরে
তাকাই স্মৃতির পাতায় দেখি, সেদিনের ছাত্রলীগ ছিল বাংলার গণমানুষের
অধিকার আদায় তথা ‘মুজিবাদর্শ’
প্রতিষ্ঠার ভ্যানগার্ড। মূলত বঙ্গবন্ধু মুজিবের
নির্দেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতৃত্বই
সেদিন সারা দেশে ৭
জুনের কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে স্বাধিকারের
পথে এক অনন্য নজির
স্থাপন করে। আর বাংলার
মেহনতি মানুষ আত্মত্যাগের অপার মহিমার দৃষ্টান্ত
স্থাপন করে পাকিস্তান শাসক
গোষ্ঠীসহ সমগ্র বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে, বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব প্রদত্ত ‘ছয় দফা’ই
হচ্ছে বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ।
আজ ৭ জুন অনেক
স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে
ওঠে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি
আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর
স্নেহে আমার জীবন ধন্য।
৭ জুন শহীদের রক্তের
সিঁড়ি বেয়ে জাতির পিতার
সংগ্রামী চেতনার ভিত্তিতে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
আজ আমরা উন্নয়নের নবদিগন্তের
সূচনা করেছি। বর্তমান সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধ ও অনাকাক্সিক্ষত বিভিন্ন
রকম বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দেশের
অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে।
তবে আমি মনে করি
এটি সাময়িক। ধৈর্যসহকারে বাস্তবভিত্তিক কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে এ সংকট
উত্তরণ সম্ভব। বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সফল বাস্তবায়নের
পথ ধরেই এবারের লক্ষ্য
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’
কর্মসূচিতে কী আছে এবং
কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা
নিয়ে সুধীসমাজে আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।’
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর রূপরেখা ঘোষণা
করে তিনি এর চারটি
স্তম্ভের কথা বলেছেন- (১)
স্মার্ট সিটিজেন; (২) স্মার্ট গভর্নমেন্ট;
(৩) স্মার্ট ইকোনমি এবং (৪) স্মার্ট
সোসাইটি। প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেছেন,
‘২০৪১ সালের মধ্যে সারা দেশের সর্বস্তরের
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই,
বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ
গড়ে উঠবে।’ এসব কর্মসূচি সফলভাবে
বাস্তবায়ন করতে হলে ‘স্মার্ট
সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ
বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা,
স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা,
কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।’ এজন্য
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি-
এ চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আওয়ামী
লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে
দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে চারটি ভিত্তির
কথা পুনরুল্লেখ করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের
জনশক্তিকে স্মার্ট হতে হবে, প্রতিটি
কাজ অনলাইনে করতে শিখতে হবে,
ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি
যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল
ডিভাইসে করতে হবে।’
আমি
বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা উদ্দীপনামূলক যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব
নিয়ে উদয়াস্ত কাজ করছেন, তাঁর
নির্দেশমালা যদি আমরা অক্ষরে
অক্ষরে পালন করি, তবে
ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর কর্মসূচিও সফলভাবে
বাস্তবায়ন করতে পারব। আসলে
তিনি তাঁর পিতার মতোই
অন্তর থেকে যা বিশ্বাস
করেন, তা-ই বলেন
এবং বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধু দুটি লক্ষ্য নিয়ে
রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা,
আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা
দিয়েছেন কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি।
সেই কাজটি দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার
সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে
চলেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে
উত্তরণের স্বপ্ন নিয়ে নবপ্রজন্ম আজ
প্রগতির পথে ধাবমান। প্রকৃতপক্ষে
জাতীয় অগ্রগতির এ অভিযাত্রার প্রারম্ভ
বিন্দু ছিল ঐতিহাসিক ৭
জুন। আর তাই স্বাধিকার,
স্বাধীনতা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন
চেতনার প্রারম্ভ বিন্দু ঐতিহাসিক ৭ জুনের শহীদদের
অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন আমার পবিত্র কর্তব্য
বলে মনে করি।
লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।