লিট ইনসাইড

পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি (পর্ব-৫)


Thumbnail

শুরু হলো শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের পঞ্চম পর্বপাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

 

ইউরোপের একটি দেশে বাংলাদেশের হাই কমিশন অফিস। হাই কমিশনারসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক বুদ্ধদার বৈঠকে বসেছেন। তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ-আলোচনা চলছে। তাদের আলোচনার প্রধান বিষয় হল, স্থানীয় পত্রিকায় বাংলাদেশের বার্থতার চিত্র বেশি করে প্রকাশিত হচ্ছে। একজন পেশাদার জুনিয়র কূটনীতিক হাই কমিশনার মহোদয়কে জিজ্ঞাসা করলেন যে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় বঙ্গবন্ধু সরকারের ভাল দিকগুলো কিভাবে তুলে ধরা যায়। হাই কমিশনার জনাব রফিক আহমেদ তেমন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারলেন না। অথচ তিনি আওয়ামী লীগেরই একজন প্রাক্তন নেতা, সেই সুবাদে বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ।

জুনিয়র কূটনীতিক জনাব মোজাম্মেল সেদিন রাতেই ইউরোপের ঐ বিখ্যাত নারীতে অবস্থানরত বাংলাদেশের আরেকজন কূটনীতিকের বাসায় গিয়ে শলাপরামর্শ শুরু করলেন যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটি সঠিকভাবে তুলে ধরতে হলে কি কি করা যায়। গৃহকর্তা, অর্থাৎ কূটনীতিক জনাব মালেক জানান যে, ঢাকার কাছ থেকে যতটুকু সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা প্রত্যাশা করেন, তার প্রায় কিছুই পাচ্ছেন না। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশ আসে, সেগুলো হল-কার কোন আত্মীয়কে কোথায় কোন সাহায্য করতে হবে—এ ধরনের তদ্বির। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরিকারী উল্লেখ করতে ভুল করেন না যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছের লোক। আর সেটা না করলে, তিনি যে অন্ততপক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র সচিবের কাছের লোক একথা বলতে কিছুতেই ভুল করেন না। জনাব মোজাম্মেল দুঃখ করেই বলেন, বিদেশস্থ মিশনের কর্মরত কূটনীতিবিদ হিসেবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা পেতে তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হন। হাই কমিশনকে বিদেশ থেকে সাহায্য ভিক্ষা করার জন্যে বলা হলেও বিদেশিদের কাছে দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্যে পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয় না। এসব কারণে এখন পেশাদার কূটনীতিকরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে নিজের ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করতে হলে পেশাগত দায়িত্ব পালনের চাইতে বরং কর্তাব্যক্তিদের মন যুগিয়ে চলাটাই বেশি বুদ্ধিমানের কাজ—যেহেতু এতেই পদোন্নতি ঘটবে, ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল হবে। এ কারণেই বাংলাদেশ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তি, ইউরোপে বেড়াতে এলে তাঁকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হোটেলের বিল বাচানোর ব্যবস্থা হিসেবে নিজের বাসভবনে নিয়ে যেতে এখন টনীতিকরা সচরাচর ভুল করেন না। প্রত্যেকেই নিজের ক্যারিয়ারকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। দেশ নিয়ে মাথাব্যথা কজনের আছে?

আরেকদিন কূটনীতিক মোজাম্মেল সাহেবের বাসায় রাত ৮টার দিকে এক ডিনার পার্টির আয়োজন করা হল। অবশ্য পার্টির খরচ সরকারিভাবেই বহন করার নীতি ভঙ্গ করা হল না। ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে আয়োজিত এই পার্টিতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অতিথি হিসেবে এসেছেন। এই পার্টিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার আহমেদ সাহেবও যথারীতি উপস্থিত ছিলেন। এ বিদেশি কূটনীতিক তাকে একা পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন--এ ব্যাপারে তাঁর কি ধারণা। কূটনীতিক নিয়ম-কানুন রক্ষা করেই বিদেশি কূটনীতিক খুব ভদ্রভাবেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করলেন। তবে এ প্রশ্ন করার আগে তিনি অবশ্য বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করতে ভুল করলেন। না। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের হাই কমিশনার জনাব আহমেদ বলেন যে, বাংলাদেশের অবস্থা বেশ ভালই চলছে। এ ধরনের উত্তর শুনে বিদেশি কূটনীতিক বুঝতে পারলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির হালচাল সম্পর্কে জনাব আহমেদের সঠিক ধারণা নেই, খেতে খেতে বিদেশি কূটনীতিক পাটিতে উপস্থিত বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূনৰ্ণ কূটনীতিকের সঙ্গে একে একে আলাপ করেন। তবে তিনি বাংলাদেশের সাহায্যের প্রয়োজন শুধুমাত্র এটাই জানতে পারলেন, সেখানকার প্রকৃত অবস্থা আঁচ করতে কোনোমতেই সক্ষম হলেন না। এর ফলে ধরে নিলেন যে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের নৈরাশ্যের যে চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে এটিই হচ্ছে আসল অবস্থা। স্থানীয় পত্রপত্রিকার পেশাদার সাংবাদিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করে আসছিল।

এদিকে ঢাকায় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জনাব মাহবুর একদিন তাঁর বাড়িতে একটি নৈশভোজের ব্যবস্থা করলেন। এ নৈশভোজে বিদেশি কূটনীতিক থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বেশকিছু প্রভাবশালী নেতাও অংশ নেন। নৈশভোজে যোগাদানকারী একজন বিদেশি কূটনীতিক তাঁর পূর্বঅভিজ্ঞতার সুবাদে। আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে একটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করলেন। ক্ষমতাসীন দলের এই রাজনীতিবিদরা তখন পাকিস্তানি ি দখলদার বাহিনী বাংলাদেশের অর্থনীতির কি ক্ষতি করে গেছে, তার একটি ফিরিস্তি দিয়ে বর্তমানে দেশের পুনর্বাসন কাজের জন্যে যে অনেক সাহায্য দরকার—সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তব্য দিতে থাকেন। কিন্তু বিদেশি কূটনীতিকের আগ্রহ ছিল বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানার। কাজেই তাঁর কৌতূহল নিবারিত হল। না। যদিও পরবর্তীকালে তিনি তাঁর নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে প্রদত্ত রিপোর্টে নিজের মনগড়া এমন চিত্র ফুটিয়ে তোলেন, যাতে বাংলাদেশের প্রকৃত রাজনৈতিক অবস্থা প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগই ছিল না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন যথেষ্ট জ্ঞানী ও বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি নিয়ম মাফিক অফিস করা থেকে একটি সুন্দর নিয়ম-কানুন তাঁর দপ্তরে চালু করতে সক্ষম হলেন। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে একটি দেশের জন্য সবচে গুরুত্বপূর্ণ যে রাজনৈতিক বিষয়গুলো বিশ্ববাসীর কাছে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে জানানোর প্রয়োজন, সে ব্যাপারে একটি বিরাট ফাঁক থেকে গেল। এর ফলে দেখা গেল যে, বিদেশে কেনো মিশন পাঠানো হলেও সেই মিশন নিজেদের বুদ্ধির উপরে ভরসা করে টেকনিক্যাল কাজগুলো করতে সক্ষম হলেও বিদেশিদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরতে ব্যর্থ হল।



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক আর নেই

প্রকাশ: ১১:৩৫ এএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

একুশে পদক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক প্রাবন্ধিক অধ্যাপক . মাহবুবুল হক মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হৃদরোগ কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।

বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মরদেহ রাজধানীর ভাটারার বাসায় আনা হবে। এরপর জানাজা শেষে নেয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

. মাহবুবুল হক প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ছাড়া গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

. মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে: বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, ইতিহাস সাহিত্য, সংস্কৃতি লোক সংস্কৃতি এবং বাংলার লোক সাহিত্য: সমাজ সংস্কৃতি প্রভৃতি।


ভাষাবিদ   অধ্যাপক   মাহবুবুল হক  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা

প্রকাশ: ১১:৫০ এএম, ১৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছোটকাগজ সম্পাদনায় বিশেষ অবদান রাখায় চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ ‘হৃদয়ে চলনথ এর সম্পাদক কবি হাদিউল হৃদয়। হাদিউল হৃদয় তাড়াশ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার তাড়াশ উপজেলা প্রতিনিধি। 

 

শুক্রবার (১২ জুলাই') সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬টায় উপ‌জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রীর হল রু‌মে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি কণ্ঠে কবিতা সংগঠন থেকে প্রধান অতিথি তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মনি এ পুরস্কার স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন।

 

সা‌বিনা ইয়াস‌মিন বিনুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সংগঠ‌নের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হো‌সেন মল্লিকী। আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক রাজুর সভাপ‌তিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তাড়াশ পৌরসভার কাউ‌ন্সিলর রোখসানা খাতুন রুপা, পাব‌লিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মোজ্জামেল হক মাসুদ, সা‌বেক সাধারণ সম্পাদক হোস‌নেয়ারা নাসরিন দোলন, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান, উপ‌জেলা প্রেসক্লা‌বের সাধারণ সম্পাদক ‌সোহেল রানা সোহাগ, প্রভাষক আব্দুল কাদের, প্রভাষক আব্দুল মতিন প্রমূখ।

উল্লেখ্য, হাদিউল হৃদয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের পল্লীর নিভূত অজোপাড়া পাড়িল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত্ব মুসলিম পরিবারে জন্ম। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্য কর্মী। মূলতঃ কবিতা দিয়ে শুরু করলেও প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও ছড়া লিখেন। তার লেখা লিটলম্যাগ ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার সম্পাদনা হৃদয়ে চলন ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে। সম্পাদনার স্বীকৃতিস্বরূপ এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার।'


চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন