লিট ইনসাইড

পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি (পর্ব-১৪)


Thumbnail

চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের চতুর্দশ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

১৯৭১ সাল। পাকিস্তানের কোয়েটা, খারিয়ান, শিয়ালকোট, পিত্তি প্রভৃতি ক্যান্টমেন্ট। এপ্রিল মাসের দিকে যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে, সে সময় ঐ সকল ক্যান্টনমেন্টে সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত এক পাঞ্জাবি কর্নেল প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টে একজন বাঙালি তরুণ লেফটেন্যান্টকে সঙ্গে নিয়ে গোপন আলোচনায় বসলেন। ঐ সকল বাঙালি অফিসারেরা পাঞ্জাবি কর্নেলের খুব প্রিয় এবং বিশ্বস্ত লোক। তিনি তাদের ব্রিফ দিচ্ছিলেন যে কিভাবে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিশে যেতে হবে।

যে কথা সে কাজ। কিছু দিনের মধ্যে দেখা গেল, কিছু বাঙালি তরুণ সামরিক অফিসার উপস্থিত। সেখানে গিয়ে তারা কি কষ্ট করে পাকিস্তান থেকে পালাতে হল সেসব ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। পাকিস্তান থেকে জীবনকে বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য যেসকল বাঙালি আর্মি অফিসার সত্যি সত্যিই পালিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে আসা এই তরুণ অফিসারদের ঘটনার অনেক মিল খুঁজে পাওয়া গেল। সুতরাং কেউ তাদের কথায় কোনোরকম সন্দেহ পোষণ করল না। স্বাভাবিকভাবেই তাদেরকে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বরণ করে নিল। যুদ্ধের বিশেষ পরিস্থিতির কারণে তখন একবারও খতিয়ে দেখল না যে এইসব সেনা অফিসার তো পাকিস্তানের বর্ডার দিয়ে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে পালিয়ে আসে নি, তাঁরা পাকিস্তানের কেন্দ্রস্থল থেকে একরকম বিনা বাধায় মুজিবনগরে চলে আসতে সক্ষম হয়েছেন। অথচ পাকিস্তানে আটকে পড়া অনেক বাঙালি সেনা অফিসার বারবার চেষ্টা করেও পালাতে পারেননি। ধরা পড়ে তাঁরা পাকিস্তানে এখন প্রায় বন্দির মতো জীবন-যাপন করছেন।

আসলে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দারা তাদের পরিকল্পনা মাফিক তাদের বিশ্বস্ত গুটিকয়েক বাঙালি অফিসারকে বিক্রুট করে। সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এরা তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠায়। এই এজেন্টদের মধ্যে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থেকে শুরু করে মেজর পর্যন্ত ছিল। এরা সংখ্যায় কম হলেও এত সুচতুরভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিশে যেতে সক্ষম হয় যে ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত এদের প্রকৃত পরিচয় জানা বাঙালি জাতির পক্ষে সম্ভব হয়নি। ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর এদের কার্যকলাপই প্রমাণ দেয় যে এরা বাঙালি হলেও আসলে পাকিস্তানি এজেন্ট।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দারা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা তাদের এজেন্টদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলত। মিলিটারি শাসকরাই তখন পাকিস্তানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। বিশ্বস্ত এজেন্ট এবং কয়েকটি বন্ধুরাষ্ট্রের মাধ্যমে তারা মুক্তিযুদ্ধের পিঠে পেছন থেকে চুরিকাঘাতের চেষ্টা চালায়। এ কাজে তারা মুজিবনগর সরকারের একজন মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে সহযোগী হিসেবে পেয়ে যায়। এই রাজনীতিবিদরা উপরে উপরে মুজিবনগর সরকারের হয়ে কাজ করলেও ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের হয়ে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যায়। আলাদা আলাদাভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে। এদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই—পুরো মুক্তিযুদ্ধকে দুর্বল করে ফেলা, যাতে বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। এরা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের মাকে এই প্রচারণা চালতে থাকে যে, মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতি তোয়াক্কা না করে এমনভাবে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা হত্যা করতে বাধ্য হয়। তারা এ বক্তব্য দিতেও দ্বিধা করল না যে জনাব তাজউদ্দিনের বঙ্গবন্ধুর প্রতি মায়া নেই। তিনি চাচ্ছেন পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করুক। এ ধরনের প্রচারণা চালাবার একটিই উদ্দেশ্য ছিল—তা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্ত করা। কেননা, মুক্তিযোদ্ধারা বিভ্রান্ত হলে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দেবে এবং মুক্তিযুদ্ধও কখনও সফল হবে না।

মুজিবনগর সরকারের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ আসে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময়। এই অধিবেশনে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে ষড়যন্ত্রকারীদের হোতা খোন্দকার মোশতাকের যাওয়ার কথা ছিল। তারা ঠিক করেও ফেলে যে জাতিসংঘে গিয়ে তারা পাকিস্তানের কাছে মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ করে দু-দেশকে নিয়ে একটি কনফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব দেবে। আর এ কাজটি করতে পারলেই মুক্তিযোদ্ধারা পুরোপুরি বিভ্রান্ত এবং দ্বিধাবিভক্ত হবে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ব্যর্থতার মধ্য নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যে, তাজউদ্দিন সাহেব সঠিক সময়ে বিষয়টি আঁচ করতে পারলেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কোনোরকম ভুল করলেন না। জাতিসংঘের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থেকে তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বঞ্চিত করলেন। এর ফলে যড়যন্ত্রকারীরা তখনকার মতো পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হল। তবে তাদের এই পরাজয় ছিল সাময়িক। যেহেতু তারা পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নেয়নি কখনোই, তারা নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সেখান থেকে নির্দেশ আসে, তারা যেন ধৈর্য ধরে মুজিবনগর সরকারের ভেতরই অবস্থান করে। ষড়যন্ত্রকারীদের আরও পরামর্শ দেয়া হল, যে-করেই হোক তাদেরকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি দখল করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা তা-ই করল। মুজিবনগর সরকারের অভ্যন্তর থেকে তারা সুযোগের অপেক্ষায় রইল। যদিও তাদের কাছে অপেক্ষা করাটা খুবই খারাপ লাগছিল। কিন্তু তারা জানত ষড়যন্ত্রকে সফল করতে হলে অপেক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই।



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক আর নেই

প্রকাশ: ১১:৩৫ এএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

একুশে পদক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক প্রাবন্ধিক অধ্যাপক . মাহবুবুল হক মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হৃদরোগ কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।

বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মরদেহ রাজধানীর ভাটারার বাসায় আনা হবে। এরপর জানাজা শেষে নেয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

. মাহবুবুল হক প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ছাড়া গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

. মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে: বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, ইতিহাস সাহিত্য, সংস্কৃতি লোক সংস্কৃতি এবং বাংলার লোক সাহিত্য: সমাজ সংস্কৃতি প্রভৃতি।


ভাষাবিদ   অধ্যাপক   মাহবুবুল হক  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা

প্রকাশ: ১১:৫০ এএম, ১৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছোটকাগজ সম্পাদনায় বিশেষ অবদান রাখায় চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ ‘হৃদয়ে চলনথ এর সম্পাদক কবি হাদিউল হৃদয়। হাদিউল হৃদয় তাড়াশ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার তাড়াশ উপজেলা প্রতিনিধি। 

 

শুক্রবার (১২ জুলাই') সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬টায় উপ‌জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রীর হল রু‌মে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি কণ্ঠে কবিতা সংগঠন থেকে প্রধান অতিথি তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মনি এ পুরস্কার স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন।

 

সা‌বিনা ইয়াস‌মিন বিনুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সংগঠ‌নের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হো‌সেন মল্লিকী। আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক রাজুর সভাপ‌তিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তাড়াশ পৌরসভার কাউ‌ন্সিলর রোখসানা খাতুন রুপা, পাব‌লিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মোজ্জামেল হক মাসুদ, সা‌বেক সাধারণ সম্পাদক হোস‌নেয়ারা নাসরিন দোলন, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান, উপ‌জেলা প্রেসক্লা‌বের সাধারণ সম্পাদক ‌সোহেল রানা সোহাগ, প্রভাষক আব্দুল কাদের, প্রভাষক আব্দুল মতিন প্রমূখ।

উল্লেখ্য, হাদিউল হৃদয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের পল্লীর নিভূত অজোপাড়া পাড়িল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত্ব মুসলিম পরিবারে জন্ম। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্য কর্মী। মূলতঃ কবিতা দিয়ে শুরু করলেও প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও ছড়া লিখেন। তার লেখা লিটলম্যাগ ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার সম্পাদনা হৃদয়ে চলন ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে। সম্পাদনার স্বীকৃতিস্বরূপ এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার।'


চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন